যখন নেমেছিলেন, ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যাওয়ার পথেই ছিল ফরচুন বরিশাল। ইনিংসের শুরু থেকেই ছন্দেও ফাহিম আশরাফ। তবে দ্রুতই বদলে যায় চিত্র। তিনি ও মাহমুদউল্লাহ মিলে তাণ্ডব বইয়ে দেন দুর্বার রাজশাহীর বোলারদের ওপর দিয়ে। দুজনেই করেন ফিফটি, যা খাদের কিনারা থেকে বরিশালকে এনে দেয় অবিশ্বাস্য এক জয়। ফাহিম মনে করেন, ক্রিজে মাহমুদউল্লাহর উপস্থিতি তার কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছিল।
১৯৮ রান তাড়ায় ফাহিম নেমেছিলেন যখন, বোর্ডে রান মোটে ৬ উইকেটে ১১২। ওভার প্রতি ১৩-১৪ রান দরকার সেই সময়ে। তবে দুই প্রান্ত থেকে মাহমুদউল্লাহ ও ফাহিমের সম্মিলিত আগ্রাসনে ১১ বল হাতে রেকেই জিতে যায় বরিশাল। জুটিতে আসে অপরাজিত ৮৮ রান। ফাহিম ৭ ছক্কা ১ চারে করেন ৫৪ রান।
আরও পড়ুন
টানা ৩ ফিফটিতে অবিশ্বাস্য গড় নিয়েই সিরিজ শেষ করলেন মাহমুদউল্লাহ |
![]() |
ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে ফাহিম মুগ্ধতা প্রকাশ করলেন মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে। “প্রথমত, মাহমুদ ভাই একটা ম্যাজিক। ক্রিজে যাওয়ার পর আমার সাথে তার প্রথম যখন কথা হল, আমি জিজ্ঞেস করলাম যে, ‘কী হচ্ছে?’ উনি আমাকে বললেন, ‘শুধু টিকে থাকো।’ এই রকম অভিজ্ঞ খেলোয়াড় থাকলে ব্যাপারটা ভালো। অনুপ্রাণিত হওয়া যায়। চাপ সামাল দেওয়া যায়। তখন সব কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়।”
‘শুরুতে আমরা ভেবেছি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। কাজেই খুব সাধারণ পরিকল্পনা ছিল আমাদের। আমরা বড় কিছু চিন্তা না করে ২ ওভার করে ভালো করার চেষ্টা করেছি। সেভাবে এগিয়েই চেয়েছি ম্যাচটা জিততে।’
রাজশাহীর বড় স্কোর গড়ার পথে ভূমিকা রাখেন এনামুল হক বিজয় ও ইয়াসির আলি। এই দুজনও করেন ফিফটি। আর সেটাই দলটিকে এনে দেয় প্রায় ২০০ ছুঁইছুঁই স্কোর। বরিশালের জন্য তাই কাজটা কঠিনই ছিল। কারণ, তাদের ধারণায় ছিল উইকেট আরও বেশ কম রানের। তবে বরিশালের ইনিংসের দ্বিতীয় ভাগে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ সহজ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন
মাহমুদউল্লাহর হ্যাটট্রিক ফিফটি, রান পাহাড়ে বাংলাদেশ |
![]() |
কঠিন ম্যাচ হেসেখেলে জয়ের পেছনে তাই উইকেটের আচরণেরও একটা প্রভাব দেখছেন ফাহিম। “শুরুতে আমি ভেবেছিলাম, এটা হয়ত ১৫০ থেকে ১৬০ রানের উইকেটই হবে। তবে পরে স্লো বল ধরছিল না। মনে হচ্ছিল ১৭০ রানের উইকেট। ইয়াসির এবং এনামুল দারুণ খেলেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট আরও ভালো হয়েছে। প্রথম ইনিংসে উইকেট নরম ছিল, পরে শক্ত এবং শুকনা হয়ে গেছে।”
১৭ জুলাই ২০২৫, ২:৪৯ পিএম
১৭ জুলাই ২০২৫, ১২:০৯ এম
১৬ জুলাই ২০২৫, ১১:২৩ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি) ফাইনালে পাওয়া চোটে মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার গ্লেন ফিলিপস। ফলে মিস করবেন জিম্বাবুয়েতে চলমান ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ এবং এরপর টেস্ট সিরিজও।
গত ১৩ জুলাই ওয়াশিংটন ফ্রিডমের হয়ে ফাইনাল খেলার সময় কুঁচকির চোট পান ফিলিপস। এরপরও রাখা হয়েছিল ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে। জিম্বাবুয়েতে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর তাঁর অবস্থা মূল্যায়ন করে নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। এরপর এক বিবৃতিতে তারা জানায়, সম্পূর্ণ সুস্থ হতে ফিলিপসের অন্তত কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। আর তাই দেশে ফিরে যাচ্ছেন তিনি।
টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে ফিলিপসের পরিবর্তে নিউজিল্যান্ড স্কোয়াডে যুক্ত হওয়া টিম রবিনসন দলের সঙ্গেই থাকবেন ত্রিদেশীয় সিরিজের বাকি অংশে। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের দলে ফিলিপসের বিকল্প কে হবেন, তা পরে জানানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
ফিলিপস ছাড়াও বেন সিয়ার্স (সাইড ইনজুরি) ও ফিন অ্যালেন (পায়ের চোট) এই দুই সিরিজে থাকছেন দলের বাইরে। তবে কিউইদের জন্য স্বস্তির খবর হলো, দীর্ঘদিনের হাঁটুর চোট কাটিয়ে টেস্ট দলে ফিরেছেন বাঁহাতি স্পিনার আজাজ প্যাটেল। তিনি সম্প্রতি গায়ানায় চলমান গ্লোবাল সুপার লিগে সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টসের প্রতিনিধিত্ব করেন।
উল্লেখ্য, ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিউ জিল্যান্ড ২১ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
স্পেশালিষ্ট হিসেবেই তার মূল পরিচিতি। তবে শ্রীলঙ্কা সফরে লম্বা সময় পর জাতীয় দলে ফিরে নাঈম শেখকে ব্যাট করতে হয় চার নম্বরে, যেখানে ব্যাটিং করার অভিজ্ঞতা তার নাই বললেই চলে। একেবারে খারাপ না করলেও খুব যে স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন, সেটা বলা যায় না। ফলে বাদ পড়েন দল থেকেই। সেই অভিজ্ঞতা পেছনে ফেলে পাকিস্তান সিরিজকে সামনে রেখে অনুশীলনে নেমেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। জানালেন, দলে ফেরার ছক কষছেন ওপেনার হিসেবে ফেরার লক্ষ্যে নিয়েই।
প্রায় তিন বছর পর সদ্য শেষ হওয়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ দলে ফেরেন নাঈম। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান করে ডাক পান ওয়ানডে দলেও, তবে মেলেনি সুযোগ। ২০ ওভারের সিরিজের প্রথম ম্যাচে একাদশে জায়গা হলেও খেলতে হয় চারে নেমে। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেও পারেননি আহামরি কিছু করতে। পুরো ইনিংসেই খেলেন মোটে একশ স্ট্রাইক রেটে।
পাকিস্তান সিরিজকে সামনে রেখে শুক্রবার মিরপুরে একাই অনুশীলন করেন নাঈম। এরপর সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় জানান ভিন্ন পজিশনে খেলার বিভ্রাটের কথা।
“হুট করেই চার নম্বরে নামলে কীভাবে খেলতে হয় বা মিডল অর্ডার ব্যাটাররা কোন চ্যালেঞ্জ বেশি মোকাবিলা করে, ওই জিনিসটা স্বাভাবিকভাবেই আমার জানা নেই। বাইরে থেকে অনেক সময় সহজ মনে হয়। এখন খেলে নতুন একটা অভিজ্ঞতা হলো। পুরোপুরি ভিন্ন একটা পজিশন।”
আর এই ভিন্ন পজিশনে ব্যাটিং যে একেবারেই উপভোগ করতে পারেননি, সেটা নাঈমের ইনিংসেই প্রমাণ মিলেছে। নেমেছিলেন চারে, ইনিংসের শুরুতেই। আর ব্যাট করেন শেষ পর্যন্ত। ২৯ বল খেলে অপরাজিত থাকেন মাত্র ৩২ রানে! বড় শট খেলার সহজাত দক্ষতা থাকলেও সেদিন বেশ আড়ষ্টতা ছিল তার ব্যাটিংয়ে। ওই ম্যাচে হেরে যাওয়া বাংলাদেশ পরের দুই ম্যাচে জয় পায় নাঈমকে বাইরে রেখেই।
শুক্রবারের অনুশীলনে তিন থ্রোয়ার নিয়ে অনুশীলন করা নাঈম অনুশীলন করেছেন ওপেনার ব্যাটার হিসেবেই। কারণটাও জানালেন পরে।
“এখন পর্যন্ত যত দিন খেলেছি, ওপেনার হিসেবেই ব্যাটিং করেছি। তো ওই মানসিকতা নিয়েই (অনুশীলন) করলাম। কিন্তু মাথায় এটাও থাকে যে, এমন তো না যে, সেট হওয়ার পর মাঝের ওভারে খেলিনি।”
প্রথমবারের মত শ্রীলঙ্কার মাটিতে সিরিজ জেতা টাইগাররা ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই দেশের মাটি স্পর্শ করেছে। আজ(বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় ঢাকায় পৌঁছে লিটন দাসের দল।
তিন ফরম্যাটে এই সফরে ৮টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজ ১-০, ওয়ানডে ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় টাইগাররা। তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ হেরেও টানা দুই জয়ে সিরিজ পকেটে পোরে কোচ ফিল সিমন্স শিষ্যরা। সবমিলে এই সিরিজে শ্রীলঙ্কা জিতেছে চারটি ম্যাচ, আর বাংলাদেশ জেতে তিন ম্যাচ, গল টেস্ট ড্র হয়েছিল। আর তাই সাফল্যের নিরিখে এটা একটা মিশ্র সিরিজই টাইগারদের জন্য। টি-টোয়েন্টি সিরিজের মাধ্যমে ব্যাডপ্যাচ কাটিয়েছেন লিটন দাস। অফ-ফর্মের কারণে দীর্ঘ সময় ট্রলের শিকার হচ্ছিলেন, সেই চাপ উপেক্ষা করে পারফর্ম করাটা মোটেও সহজ ছিল না, সেটা মনে করিয়ে দিয়েছেন দলের ম্যানেজার নাফীস ইকবাল খান, “কাজটা সহজ ছিল না লিটনের জন্য, কারণ ব্যাড প্যাচটা ছিল দীর্ঘ! আমরা জানি খারাপ খেললে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রল হয়, আমরা খুব আবেগী জাতি! ওর ফিরে আসাটা দারুণ হয়েছে, অধিনায়কত্বও করেছে খুব ভাল”।
এয়ারপোর্টে সিরিজ জয়ের ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম করা তানজিদ তামিম ও শেখ মেহেদী সহ বাকি সব খেলোয়াড়কে দেখা গেছে প্রাণবন্ত। দেশে ফিরলেও বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেন না ক্রিকেটাররা, কাল থেকেই নেমে পড়তে হবে অনুশীলনে। দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হবে ২০ জুলাই থেকে, সবগুলো ম্যাচই হবে মিরপুর শেরে-বাংলা স্টেডিয়ামে।
ইতিমধ্যে সালমান আলী আগা’র নেতৃত্বে পাকিস্তান দল ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। সদ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামবে টাইগাররা। গত মে মাসে পাকিস্তান সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে হেরেছিল টাইগাররা, এবার দেশের মাটিতে বদলা নেয়ার লক্ষ্য লিটন দাসের দলের।
শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় ভেন্যু প্রেমাদাসায় সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে অতীত রেকর্ডটা বাংলাদেশের দারুণ। কলম্বোর এই ভেন্যুতে এবারের টি-টোয়েন্টি সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে অবতীর্ন হওয়ার আগে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ ম্যাচের ৩টিতে জয়ের সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। ৭ বছর আগে এই মাঠে নিদাহাস কাপে দুই লড়াইয়ের দুটিতে জিতে নাগিন নৃত্য উৎসব করেছে বাংলাদেশ। সেই অতীত থেকে টনিক নিয়ে প্রেমাদাসায় নতুন ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের এতোদিন ছিল না কোনো দ্বি-পাক্ষিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের অতীত। ২০১৭ সালে ১-১ এ সিরিজ ড্র-ই ছিল বাংলাদেশের সান্ত্বনা।
শেখ মেহেদীর ভয়ংকর ছোবল (৪/১১) এবং তানজিদ হাসান তামিমের ব্যাটিং ঝড়ে ( ৪৭ বলে ৭৩*) ২১ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটে জিতে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, শ্রীলঙ্কার মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের উৎসব করেছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে উইকেটহীন কাটিয়েছেন ঠিকই,তবে অস্ট্রেলিয়া-ভারতের বিপক্ষে অফ স্পিনার শেখ মেহেদীর বোলিং ছিল মিতব্যয়ী। এন্টিগায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪-০-২২-০, ভারতের বিপক্ষে ৪-০-২৮-০, এমন মিতব্যয়ী বোলিংয়ে হাততালি পাওয়ারই কথা এই অফ স্পিনারের। স্লো উইকেটে এই অফ স্পিনার কতোটা কার্যকর, তা জানিয়ে দিয়েছেন প্রেমাদাসায়। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে করেছেন টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং (৪-১-১১-৪)। তার স্পিন বিষে নীল শ্রীলঙ্কা ধুঁকেছে রানে। স্কোর টেনে নিতে পেরেছে ১৩২/৭ পর্যন্ত।
গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে এই অফ স্পিনার নিজেকে একটু বেশিই চিনিয়েছিলেন। তিন ম্যাচের ওই সিরিজে ৮ উইকেটে উড়েছেন হাওয়ায়। জ্যামাইকায় ওই সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪-০-১৩-৪ ছিল তাঁর এতোদিন সেরা বোলিং। সেই বোলিং ছাপিয়ে এদিন প্রেমাদাসায় বিস্ময়কর বোলিং করেছেন। ২৪টি ডেলিভারির মধ্যে ১৭টি দিয়েছেন ডট! একটিও বাউন্ডারি মারতে পারেনি তাকে কেউ। ১ ওভারের শেষ স্পেলটি আবার মেডেন উইকেট (১-০-০-১)। নিজের প্রথম ওভারে কুশল পেরেরাকে (০) স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে উইকেটের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করার দিনে শ্রীলঙ্কার কোমর ভেঙ্গে দিয়েছেন শেখ মেহেদী আউটসাইড অফ ডেলিভারিতে চান্দিমালকে (৪) পয়েন্টে ক্যাচের পাতা ফাঁদে ফেলে। শেখ মেহেদীর বলে আসালাঙ্কা (৩) ব্যাক ফুটে ডিফেন্স করতে যেয়ে হয়েছেন বোল্ড। শ্রীলঙ্কার ইনফর্ম ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কাকে (৩৯ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৪৬) হাফ সেঞ্চুরির আগে ফিরিয়ে দিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং শেষ করেছেন শেখ মেহেদী।
অকেশনাল স্পিনার শামীম পাটোয়ারি বল হাতে নিয়ে নির্ভরতা দিয়ে চলেছেন। এদিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাঁর দ্বিতীয় ওভারে কামিন্দু মেন্ডিজ রিভার্স সুইপ করতে যেয়ে পয়েন্টে দিয়েছেন ক্যাচ (১৫ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ২১)। এদিন বাঁ হাতি পেসার মোস্তাফিজ করেছেন মিতব্যয়ী বোলিং (৪-০-১৭-১)। ২৪টি ডেলিভারির মধ্যে ১১টি ডট দিয়েছেন তিনি। ডেথ ওভারে দারুণ বোলিং করেছেন। তাঁর শেষ স্পেলটি (২-০-৬-১) এক কথায় অসাধারণ। ইনিংসের ৫ম বলে কুশল মেন্ডিজকে (৪ বলে ৬) স্কোয়ার লেগে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে প্রথম ব্রেক থ্রু দিয়েছিলেন বাঁ হাতি পেসার শরিফুল। তবে খরুচে বোলিংয়ের (৪-০-৫০-১) অপবাদ গায়ে মাখাতে হয়েছে তাকে। তাঁর শেষ স্পেলটি ছিল খরুচে। ২০তম ওভারে খরচ তাঁর ২২ রান। শানাকার হাতে ওই ওভারে খেয়েছেন ২ ছক্কা,২ বাউন্ডারি।
ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কাকে ৮৩ রানে হারিয়ে সিরিজে ভালভাবে ফেরাটা ছিল সিরিজের শেষ ম্যাচে আত্মবিশ্বাসের রসদ। বোলারদের অসামান্য বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে ১৩২/৭ এ আটকে ফেলে ১৩৩ রানের চ্যালেঞ্জটা সহজ করেছেন দুই টপ অর্ডার তানজিদ হাসান তামিম-লিটন দাস।
ইনিংসের প্রথম বলে তুষারার লো বাউন্সি ডেলিভারি ব্যাক প্যাডে আঘাত হানায় গোল্ডেন ডাক-এ ফিরতে হয় ওপেনার পারভেজ হাসান ইমনকে (১ বলে ০)। তবে স্কোর কার্ডে রান ওঠার আগে ওপেনিং পার্টনারশিপ ভেঙ্গে যাওয়ায় দুর্ভাবনায় পড়তে দেননি তানজিদ হাসান তামিম-লিটন দাস। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তাদের ৫০ বলে ৭৪ রান বড় জয়ের পথ করেছে প্রশস্ত। বাকি দায়িত্বটা পালন করেছেন অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেট জুটিতে তানজিদ হাসান তামিম-তাওহিদ হৃদয় (৪৮ বলে ৫৯*)। এই দুটি পার্টনারশিপের কল্যানে ২১ বল হাতে রেখে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ব্যবধানে (৮ উইকেটে ) জিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের উৎসব করেছে। এটি উইকেটের ব্যবধানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। এর আগে গত বছর সিলেটে ১১ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটে জয়ের অতীত আছে বাংলাদেশের।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে লিটনের বিপক্ষে এলবিডাব্লুর সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন লঙ্কান আম্পায়ার। ওই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে রিভিউ আপীলে লিটন জিতে ইনিংস টেনে নিয়েছেন ৩২ রান পর্যন্ত। ২৮ বলের যে ইনিংসে ছিল ২ চার ১ ছক্কা। চারের চেয়ে ছক্কার আধিক্যে নিজেকে একটু বেশিই চিনিয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস এতোদিন ছিল তার ৬৩। গত বছর চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছেন ওই স্কোর। সেই স্কোরকে ছাপিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে করেছেন হার না মানা ৭৩ রান। ৪৭ বলের যে ইনিংসে ১ টি চারের পাশে মেরেছেন ৬টি ছক্কা। উইনিং রান নিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরা হৃদয় ছিলেন ২৫ বলে ২৭ রানে অপরাজিত।
কোনো ফরম্যাটেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে আগে ছিল না সিরিজ জয়ের কীর্তি। দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ে জাগে সেই আশা। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে শেষের ওভার বাদে বোলার তাদের কাজটা করলেন দারুণভাবেই। ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপ তৈরি হল এরপরও। তবে তানজিদ হাসান তামিমের ফিফটির সাথে অন্য ব্যাটারদের পেশাদার ব্যাটিংয়ে বিশাল জয়ে সিরিজ জয়ও হল লিটন দাসের দলের।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কাকে অনায়াসেই ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ১৩৩ রানের টার্গেট সফরকারীরা স্পর্শ করেছে ১৬.৩ ওভারেই।
কলম্বোয় প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সবশেষ ১০ ম্যাচে ৯টি জিতেছে রান তাড়া করা দল। ১৩৩ রান তাড়া করা বাংলাদেশের জন্য তাই খুব কঠিন হওয়ার কথা ছিল না। সেটাও হয়নিও।
ইনিংসের প্রথম বলেই অবশ্য বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। নুয়ান থুসারার ইনসুইংয়ে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন পারভেজ হোসেন ইমন। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি তরুণ এই ওপেনারের। আম্পায়ার্স কলে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। এটি ইমনের ক্যারিয়ারের ১৫তম ম্যাচে তৃতীয় গোল্ডেন ডাক।
এরপরই পাল্টা আক্রমণে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলে দেন লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম মিলে। অবশ্য লিটন ৮ রানে থাকা অবস্থায় একবার বিনুরা ফার্নান্দোর এক ইয়র্কারে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েছিলেন। বেঁচে যান রিভিউ নিয়ে। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৪৭।
তানজিদ এদিন শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী মেজাজে। চারিথ আসালাঙ্কার প্রথম বলেই ছক্কার পর আর দুটি বড় শটে পূর্ণ করেন লিটনের সাথে জুটির পঞ্চাশ, বল প্রয়োজন হয় মাত্র ৩৬টি।
আগের ম্যাচে ৭৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা লিটন ফর্ম ধরে রেখে এগিয়ে যাচ্ছিলেন আরেকটি ফিফটির দিকে। তবে এবার আর পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। কামিন্দু মেন্দিসের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে কুসাল মেন্ডিসের হাতে ধরা পড়ার আগে ২৬ বলে করেন ৩২ রান। জুটিতে রান হয় ৭৪ রান।
তবে তানজিদ ঠিকই ফিফটি তুলে নেন। জেফ্রি ভ্যান্ডারসেকে প্রথমে ছক্কা, পরের বলে চার মেরে মাত্র ২৭ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন তরুণ এই ওপেনার। এতে ভর করে ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৮৯ রান, যা গড়ে দেয় সহজ জয়ের ভিত।
তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে এরপর বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন তানজিদ। তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে তারা যোগ করেন ৬৯ রান। তানজিদ অপরাজিত থাকেন ৪৭ বলে ৬ ছক্কা ও এক চারে ৭৩ রানে। আর তাওহীদ করেন ২৫ বলে ২৭।
এর আগে টস হেরে আগে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশ তৃতীয় ম্যাচেও দুইটি পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজায়। মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জায়গায় দলে ফেরেন শেখ মাহেদি হাসান ও তানজিম হাসান সাকিব।
সিরিজে প্রথমবার মাঠে নেমেই বাজিমাত করেন মাহেদি। ম্যাচের প্রথম বলেই কুসাল পেরেরাকে স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ডানহাতি এই স্পিনার। লম্বা সময় ফর এই ফরম্যাটে দলে ফেরা দিনেশ চান্দিমালও সুবিধা করতে পারেননি। ৫ বলে মাত্র ৪ রান করে মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।
প্রথম তিন ওভারের মধ্যেই তিন উইকেটের দেখা পেতে পারত বাংলাদেশ, তবে কঠিন দুটি সুযোগ হাতছাড়া হয় ফিল্ডারদের ব্যর্থতায়।
দারুণ এক স্পেল করা মাহেদি তার তৃতীয় ওভারে ফের আঘাত হানেন। এবার বোল্ড করেন চারিথ আসালাঙ্কাকে। একপ্রান্ত আগলে পাওয়ার প্লেতে কিছু আগ্রাসী শট খেলেন পথুম নিসাঙ্কা। তবে শেষ পর্যন্ত তাকেও থামান সেই মাহেদি। কয়েকবার জীবন পাওয়া এই ব্যাটারকে ফেরান রিটার্ন ক্যাচে। চার ওভার শেষ করেন মাত্র ১১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে, যা এই ফরম্যাটে তার তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংও।
অন্যদিকে শুরুতে একটি ক্যাচ ফেলা তানজিম কিছুটা ক্ষতিপূরণ করেন কামিন্দু মেন্ডিসকে দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফিরিয়ে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার স্কোর একসময় দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ৮৮ রান।
ওই সময়ে শ্রীলঙ্কার জন্য ১২০ রানই অনেক বড় মনে হচ্ছিল। তবে দলের ত্রাতা হিসেবে হাজির হন দাসুন শানাকা। শরিফুল ইসলামের করা শেষ ওভারে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় আদায় করে নেন ২২ রান। আর সেটাই শেষ পর্যন্ত দলটিকে নিয়ে যায় ১৩২ রান পর্যন্ত।
২ দিন আগে
৩ দিন আগে
১২ দিন আগে
১৩ দিন আগে
১৩ দিন আগে
২৪ দিন আগে
২৪ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৭ দিন আগে
২৭ দিন আগে