১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪১ পিএম

“ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের জন্য আমরা উপহার বাংলাদেশ থেকেই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলাম, সেটা তাঁর হাতে পৌঁছে দিতে পেরে এখনও মনে হচ্ছে ঘোরেই আছি”, ফোনের অন্যপ্রান্তে জানাচ্ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থক সিফাত জসীম। রিয়াল মাদ্রিদের আয়োজনে সমর্থকদের এক বিশেষ আয়োজনে বাংলাদেশের ৪ জন ছিলেন আমন্ত্রিত। পেনিয়া মাদ্রিদিস্তা বাংলাদেশ গ্রুপের প্রতিনিধিরা যেন স্বপ্নের মতোই দিনি কাটাচ্ছেন সৌদি আরবে।
সুপার কোপা এস্পানিয়া খেলতে সৌদি আরবে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। সেমিফাইনালে রিয়াল মায়োর্কাকে হারিয়ে উঠেছে ফাইনালে। সেখানে প্রতিপক্ষ বার্সেলোনা। দুইটি ম্যাচ দেখার জন্য রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের ওই সমর্থকেরা। ম্যাচের দিন সকালে রিয়াল মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ বিশেষ আয়োজনে মুগ্ধতা আরও বেড়েছে সমর্থকদের।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের আরও ২৩টি দেশের পেনিয়া-দের (রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের অফিসিয়াল গ্রুপ) নিয়ে রবিবার সকালে জেদ্দার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই মিলনমেলা। সেখানেই প্রেসিডেন্ট পেরেজের কাছ থেকে বিশেষ একটি জার্সি উপহারও পেয়েছে পেনিয়া মাদ্রিদিস্তার বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।
রিয়াল মাদ্রিদ প্রেসিডেন্টের জন্যও ছিল উপহার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রিয়াল মাদ্রিদের লোগো সম্বলিত একটি নকশীকাঁথা ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের একটি জার্সি উপহার দেওয়া হয় পেরেজকে।
“রিয়ালের আমন্ত্রণে খেলা দেখতে যাওয়াই ছিল বিশেষ কিছু। তারওপর এমন আয়োজনের কথা যখন জানতে পারলাম, তখন আমরা বাংলাদেশ থেকেই পরিকল্পনা করে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের জন্য উপহার সঙ্গে করে নিয়ে গেছি। দারুণ খুশি লাগছে তাঁর হাতে এই উপহার তুলে দিতে পেরে। তিনি সাদরে সেসব গ্রহণ করেছেন, একইসঙ্গে বার্সেলনার বিপক্ষে ম্যাচের জন্য সমর্থন চেয়েছেন।“ -বাংলাদেশে পেনিয়াদের সমর্থকগোষ্ঠীর সেক্রেটারী সিফাত জানিয়েছেন টি স্পোর্টসকে।
আরেক রিয়াল ভক্ত নাজিম রাসেল বলছেন, এমন কিছু ঘটবে স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি, “সত্যি বলতে গতরাতেও বিশ্বাস হচ্ছিল না এমন কিছু ঘটবে। ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সঙ্গে দেখা করতে পেরে অবিশ্বাস্য লাগছে। বাংলাদেশের রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকেরাও যে কত অন্তঃপ্রাণ সেটা সবাই বুঝতে পেরেছে।“
২০১১ সালে একদল রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তরা নিজ উদ্যোগে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশে পেনিয়াদের পথচলা। পরে ২০১৯ সালে গ্রুপটি রিয়াল মাদ্রিদের স্বীকৃতি অর্জন করে। বাংলাদেশে রিয়াল ছাড়াও বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল, বায়ার্ন মিউনিখের মতো ক্লাবগুলোর অফিসিয়াল গ্রুপ রয়েছে।
No posts available.
৫ নভেম্বর ২০২৫, ৪:২৬ এম
৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২১ পিএম

এক-দুইটা নয়, অ্যানফিল্ডে রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সময় থিবো কোর্তোয়ার নামের পাশে তখন সেভ ৮টি। বল দখলে ৬৩ শতাংশে পিছিয়ে থেকে লিভারপুলের একের পর এক শট ঠেকিয়ে ক্লান্ত–অভিশ্রান্ত বেলজিয়ান গোলকিপার। প্রথমার্ধে ক্লিনশিট ধরে রাখতে পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে ভুল করে বসেন তিনি। অ্যালেক্সিস ম্যাক-অ্যালিস্টারের অ্যাক্রোবেটিক এক হেডে চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম মুখোমুখিতে ১-০ গোলে পথ হারায় রিয়াল মাদ্রিদ।
অ্যানফিল্ডে বাংলাদেশ সময় রাত দুইটার ম্যাচে লিভারপুল-রিয়াল মাদ্রিদ রাইভালের চেয়েও বেশি ফুটে ওঠেছে সোসোস্লাই ও কোর্তোয়ার লড়াই। প্রথমার্ধেই চারটি দারুণ সেভ করেন লস ব্লাঙ্কোস গোলকিপার। দুই অর্ধ মিলিয়ে লিভারপুল মিডফিল্ডারের একাধিক শট ফেরান তিনি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নিশ্চিত গোলমুখো শট।
এ জয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে ষষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে লিভারপুল। সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে এগিয়ে পঞ্চম স্থানে রিয়াল মাদ্রিদ। গত মৌসুমে সর্বশেষ দেখাতেও জয় পেয়েছিল আর্নে স্লটের দল। গতবারের জয় ছিল ২-০, এবার ১-০।
টোটাল আটটি সেভ করেছেন থিবো কোর্তোয়া। রিয়ালকে টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি
কিক-অফের পরই বল দখলের চেষ্টা, আক্রমণ-প্রতি-আক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচ। বিশেষ করে ম্যাচ ঘড়ির ২০তম মিনিটে বাঁ প্রান্ত বেয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ড্রিবলিং করতে গিয়ে লুটিয়ে পড়েন। রেফারির উদ্দেশে ‘ফাউল’ চিৎকার করলেও ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারের আবেদন নাকচ করে দেন রেফারি।
পরের মিনিটেই এমবাপেকে ট্যাকল করে বসেন লিভারপুল ক্যাপ্টেন ভার্জিল ভ্যান ডাইক। স্পট কিক থেকে শট নেন ডিন হুইসেন, সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
২৬ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে লিভারপুল। ফ্লোরিয়ান ভির্টজের আড়াআড়ি শট বারের সামনে নিয়ন্ত্রণে নেন ডমিনিক সোবোস্লাই। ওয়ান-টু পজিশনে ছিলেন তিনি। তাঁর সামনে ছিলেন কেবল কোর্তুয়া। সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন হাঙ্গেরিয়ান মিডফিল্ডার।
পরের মিনিটেই আবার সুযোগ এনে দেন সোবোস্লাই। তাঁর বুলেট গতির শট লাগে চুয়ামেনির বাঁ হাতে। ডি-বক্স লাইনে ছিলেন ফরাসি মিডফিল্ডার। অবস্থা বেগতিক দেখে চেকের সিদ্ধান্ত নেন রেফারি।
জুড বেলিংহাম বরং দলের বিপদ বাড়ান। হলুদ কার্ড দেখেছেন, দলকেও ডুবিয়েছেন।
পেনাল্টি চেকে দীর্ঘ যাচাই–বাছাই শেষে সিদ্ধান্ত যায় রিয়ালের পক্ষে। রেফারির বক্তব্য, শরীর দিয়েই বল ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন চুয়ামেনি, উদ্দেশ্যহীনভাবে বল লেগেছে তাঁর গায়ে। এ যাত্রায় বেঁচে যায় অতিথি দল।
৪১ মিনিটে মিডফিল্ড থেকে স্পট কিক পায় লিভারপুল। নিজেদের অর্ধ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত বল আসে সোবোস্লাইয়ের পায়ে। বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ে শট নেন তিনি, যদিও তা বারের ডান পাশ দিয়ে বাইরে চলে যায়।
৪৪ মিনিটে জুড বেলিংহামের জোরাল শট ঠেকিয়ে দেন গিওর্গি মামারদাশভিলি। কয়েক গজ দূর থেকে নেওয়া শট তাঁর পায়ে লেগে বাইরে যায়।
যোগ করা সময়ে অহেতুক হলুদ কার্ড দেখেন ডিন হুইসেন। মিডফিল্ডে কড়া ট্যাকল করেন হুগো একিতিকের ওপর। প্রথমার্ধের বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে আরও একবার চেষ্টা চালায় লিভারপুল, তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দূরপাল্লার শট গ্লাভসবন্দী করেন কোর্তোয়া। এই অর্ধে মোট ৪টি সেভ করেন তিনি। ফলে গোলশূন্যই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
বিরতির পর শুরুতেই ফাউল করে বসেন জুড বেলিংহাম। গ্রাভেনবার্চকে ডি-বক্সের বাইরে ট্যাকল করে হলুদ কার্ড দেখেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড। সেখান থেকে স্পট কিক নেন সোবোস্লাই। তাঁর বুলেটগতির শট দারুণ হেডে লক্ষ্যভেদ করেন ম্যাক অ্যালিস্টার।
অ্যাক্রোবেটিক গোলে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পরও স্বস্তিতে থাকতে পারেননি আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার, কারণ অফসাইড চেকের সিদ্ধান্ত নেয় রেফারি। যদিও শেষ পর্যন্ত রায় যায় অল রেডসদের পক্ষেই।
পরের মিনিটে ফ্লোরিয়ান ভির্টজকে ফাউল করেন এমবাপে। মৌসুমজুড়ে প্রতিপক্ষকে কাঁপিয়ে দেওয়া ফরাসি স্ট্রাইকার এদিন খুব একটা সুযোগ তৈরি করতে পারেননি; বরং দুর্ভাগ্য বাড়িয়েছেন।
৮৭তম মিনিটে আরেকটি দারুণ সেভে ব্যবধান বাড়তে দেননি কোর্তোয়া; কোডি গাকপোর কাছ থেকে নেওয়া শট আটকান তিনি। পরমুহূর্তে সালাহর প্রচেষ্টা প্রতিহত করেন এদের মিলিতাও।
ম্যাচে বল দখলে বেশ পিছিয়ে থাকলেও আক্রমণে আধিপত্য দেখায় লিভারপুল। গোলের জন্য ১৭টি শট নিয়ে তারা লক্ষ্যে রাখতে পারে ৯টি। আর নিজেদের খুঁজে ফেরা রিয়ালের আট শটের কেবল দুটিই লক্ষ্যে ছিল। তাতে ফল যা হবার-তাই হলো।

ম্যাচের পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা আর রোমাঞ্চে ঠাসা। তার চেয়েও বড়—আজ ঘরের মাঠ পার্ক দে প্রিন্সে বায়ার্ন মিউনিখের উত্থান থামানোর চ্যালেঞ্জে নেমেছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন পিএসজি। সে যাত্রায় মোটাদাগে ব্যর্থ লুইস এনরিকের দল। প্যারিস সেন্ট জার্মেইনকে ২–১ গোলে হারিয়ে ২০২৫–২৬ মৌসুমে (সব লিগ মিলিয়ে) টানা ১৬তম জয়ের সাক্ষী জার্মান জায়ান্টরা।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ২টার মহারণে বল দখল, অন–টার্গেট শট ও বিগ চ্যান্স তৈরিতে এগিয়ে থেকেও নির্মম ভাগ্য মেনে নিতে হয়েছে পিএসজিকে। এই হারে পয়েন্ট টেবিলে তিনে (৯ পয়েন্ট) নেমে গেছে প্যারিস সেন্ট–জার্মেইন। শীর্ষস্থান দখলে নিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ।
পার্ক দে প্রিন্সে আগত দর্শকেরা জমিয়ে বসার আগেই ম্যাচ ঘড়ির চার মিনিটে গোল হজম করে বসে পিএসজি। গোলমুখে প্রথমে শট নিয়েছিলেন মাইকেল ওলিসে, যা লুকাহ শুভালিয়ে প্রথম প্রচেষ্টায় ঠেকিয়ে দেন। রিবাউন্ডে বল পেয়ে আলতো স্পর্শে জালে পাঠান লুইস দিয়াস।
১৮তম মিনিটে জোশুয়া কিমিখ শট নিতে গিয়ে থেমে যান—সম্ভবত বল পজিশন নিয়ে রেফারি আপত্তি করে বসেন। পুনরায় বল বসিয়ে শট নেন। সেখান থেকে বিপদ হতে পারত, তা সামলে নেন শুভালিয়ে।
২১তম মিনিটে সমতার সুযোগ হাতছাড়া করে পিএসজি। ফাবিয়ান রুইজের পাস বুক দিয়ে রিসিভ করে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে লক্ষ্যভেদ করেন ওসমান দেম্বেলে। কিন্তু কপাল পোড়া ফরাসি ফরোয়ার্ডের, সে গোল ভিএআরে চেকে অফসাইড হিসেবে গণ্য হয়।
মাত্র চার মিনিট পরই দেম্বেলেকে তুলে নেন কোচ। চোটের সঙ্গে লড়াই করা এই খেলোয়াড়ের বদলে মাঠে নামেন লি কাং–ইন। সাউথ কোরিয়ান এই ফুটবলার পরবর্তীতে দলের একমাত্র গোলে অ্যাসিস্ট করেন।
৩১তম মিনিটে লিড দ্বিগুণ করে বায়ার্ন। মার্কিনিয়োসের ভুলে সুযোগ পান লুইস দিয়াস। আনমার্ক অবস্থায় থেকে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন কলম্বিয়ান উইঙ্গার।
অ্যানফিল্ড থেকে জয় ছিনিয়ে উচ্ছ্বসিত বায়ার্ন ফুটবলাররা
দুই মিনিট পর আরও একটি সুযোগ হাতছাড়া হয় বায়ার্নের। বারে লেগে ফিরে আসায় তৃতীয় গোল থেকে রক্ষা পায় প্যারিসের জায়ান্টরা।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে লাল কার্ড দেখেন দিয়াস। আশরাফ হাকিমির সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ের এক পর্যায়ে কড়া ট্যাকেল করে বসেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে কাঁধে ভর করে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়তে হয় হাকিমিকে, আর দিয়াসকে ছাড়তে হয় লাল কার্ড দেখে।
২–০ গোলে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হলেও আরও এক শঙ্কা ঘিরে ধরে বায়ার্নকে। শুরুতেই হলুদ কার্ড দেখেন টম বিশফ। পরের মিনিটে (৪৮তম) হলুদ কার্ড দেখেন গোলকিপার মানুয়েল ন্যয়ারও।
১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে ওঠে স্বাগতিকরা। ৬৩ মিনিটে ওয়ান–টু পজিশনে বক্সের সামনে বল পান খিচা কাভারাস্কেইয়া, সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি জর্জিয়ান ফরোয়ার্ড।
৬৫ মিনিটে জোড়া পরিবর্তন আনে পিএসজি। বারকোলা ও রুইজকে উঠিয়ে গনজালো রামোস ও জোয়াও নেভেসকে নামান কোচ এনরিকে।
নতুন উদ্যমে খেলায় ফিরে আসে পিএসজি। একের পর এক আক্রমণ শুরু করে স্বাগতিকরা। কিন্তু সমস্যা একটাই—গোল। মহেন্দ্রক্ষণের নাগাল পাচ্ছিল না ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।
শেষ পর্যন্ত মহেন্দ্রক্ষণ আসে বদলি নেভেসের পা থেকে। ৭৪তম মিনিটে আচমকা আক্রমণ থেকে পিএসজির হয়ে ব্যবধান কমান পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। কোরিয়ান মিডফিল্ডারের শট মাটিতে পড়ার আগেই অনেকটা সামনে কাত হয়ে বারের ছয়-সাত গজ দূর থেকে শট নেন তিনি। শটটি খুব শক্তিশালী না হলেও নিখুঁত ছিল। এক বাউন্সে বল জড়ায় বায়ার্নের জালে।
শেষ সময় পর্যন্ত দম ধরে রাখে পিএসজি। একের পর এক আক্রমণ চলতে থাকে—কখনও ভিতিনিয়া, কখনও খিচা কাভারাস্কেইয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২–১ ব্যবধানে হার মেনে মাঠ ছাড়তে হয় লুইস এনরিকের দলকে।
ম্যাচে বল দখল ও আক্রমণে দাপট দেখায় পিএসজি। ৭১ শতাংশ সময় পজেশন রেখে গোলের জন্য ২৫টি শট নিয়ে ৯টি লক্ষ্যে রাখতে পারে তারা। বায়ার্নের ৯ শটের ৫টি লক্ষ্যে ছিল।

পার্ক দে প্রিন্সে আগত দর্শকেরা তখনো আসন গুছিয়ে বসেননি। ম্যাচের মাত্র চার মিনিট। এ সময়েই কিনা নাটক, লিভারপুলের জালে বল জড়িয়ে উপস্থিত সবাইকে ভটকে দেন লুইস দিয়াস। কলম্বিয়ার এই লেফট উইঙ্গার ৩২তম মিনিটে আরও একটি গোল উপহার দেন বায়ার্ন মিউনিখকে। তাতেই চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় জার্মান জায়ান্টরা।
দলকে জোড়া গোল উপহার দেওয়ার পর অবশ্য লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে সাবেক লিভারপুল ফরোয়ার্ডকে। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে আশরাফ হাকিমিকে কড়া ট্যাকেল করে বসেন তিনি। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মরক্কোর ডিফেন্ডার। কাঁধে ভর করে মাঠ ছাড়তে হয় হাকিমিকে।
এ ঘটনায় প্রথমে হলুদ কার্ড দেখেন দিয়াস। পরে অবশ্য ভিএআর চেকের মাধ্যমে সেই কার্ডটি লাল কার্ডে পরিবর্তিত হয়।
এদিন ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে গোল করেন দিয়াস। গোলমুখে প্রথমে শট নেন ওলিসে। তাঁর শট পিএসজি গোলকিপার প্রথম চেষ্টায় ঠেকিয়ে দেন। ছুটে আসা দিয়াস রিবাউন্ডে সুযোগ পেয়ে আলতোভাবে ঠেলে দেন বলটা জালে।
১৮তম মিনিটে জোশুয়া কিমিখ শট নিতে গিয়ে থেমে যান। হয়তো রেফারির আপত্তি ছিল। বল পুনরায় বসিয়ে শট নেন তিনি। সেখান থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারত, তবে তা ক্লিয়ার করেন পিএসজি গোলরক্ষক।
২১তম মিনিটে সমতার সুযোগ পায় পিএসজি। ফাবিয়ান রুইজের বল বুক দিয়ে নামিয়ে নিখুঁত ফিনিশে গোল করেন ওসমান দেম্বেলে। কিন্তু ফরাসি ফরোয়ার্ডের কপালটাই পোড়া—অল্প পরেই ভিএআর চেকে তাঁর সে গোল অফসাইডে বাতিল হয়।
চার মিনিট পরই দেম্বেলেকে তুলে নেন কোচ। চোটের সঙ্গে লড়াই করা এই খেলোয়াড়ের বদলে মাঠে নামানো হয় লি কাং-ইনকে।
৩১তম মিনিটে লিড দ্বিগুণ করে বায়ার্ন। মার্কিনিয়োসের ভুলে সুযোগ পেয়ে যান লুইস দিয়াস। একদম আনমার্ক অবস্থায় ছিলেন কলম্বিয়ান লেফট উইঙ্গার। সেখান থেকেই নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন তিনি।
দুই মিনিট পর আরও একটি সুযোগ হাতছাড়া হয় বায়ার্নের। বারে লেগে বল ফিরে আসায় তৃতীয় গোল থেকে রক্ষা পায় প্যারিসের জায়ান্টরা।
যোগ করা সময়ে দিয়াস লাল কার্ড দেখেন। আশরাফ হাকিমির সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ের এক পর্যায়ে মরক্কোর ডিফেন্ডারকে পা দিয়ে ট্যাকেল করে বসেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে কাঁধে ভর করে মাঠ ছাড়তে হয় হাকিমিকে। আর দিয়াসকে মাঠ ছাড়তে হয় লাল কার্ড দেখে।

একটু পরই চ্যাম্পিয়নস লিগে মুখোমুখি হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল। অ্যানফিল্ডে বাংলাদেশ সময় রাত দুইটায় শুরু হওয়া শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের আগে অতিথিদের দুঃস্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন অল রেডস ক্যাপ্টেন ভার্জিল ভ্যান ডাইক।
গত বছরের নভেম্বরের অ্যানফিল্ডে মুখোমুখি হয়েছিল লিভারপুল ও রিয়াল মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়নস লিগের সে ম্যাচে লস ব্লাঙ্কোসদের ২-০ গোলে হারায় লিভারপুল। নতুন মৌসুমে ফের মুখোমুখির আগে ভ্যান ডাইক বলেন,
"চ্যাম্পিয়নস লিগে অ্যানফিল্ডে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। এমন রাতগুলোর জন্যই আমরা খেলি। গতবার যেমনটা করেছিলাম, এবারও তেমন কিছু করতে চাই।"
২০২৫-২৬ মৌসুমে খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই লিভারপুল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে হারের পর অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ায় আর্নে স্লটের দল। ভ্যান ডাইক বলেন,
"অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে সমর্থকদের দারুণ সমর্থন পেয়েছি। ফলাফল আমাদের পক্ষে না থাকলে অনেক সমালোচনা হয়, কিন্তু সেদিন সবাই প্রথম মিনিট থেকেই সমর্থকরা আমাদের পাশে ছিল। এটা দলের জন্য অনেক বড় প্রেরণা।"
ভিলার বিপক্ষে গোল করে লিভারপুলের হয়ে নিজের ২৫০তম গোল পূর্ণ করেছেন মোহাম্মদ সালাহ। এ নিয়ে ভ্যান ডাইক বলেন,
"২৫০ গোল এক কথায় অবিশ্বাস্য অর্জন। লিভারপুলের মতো ক্লাবে এটা করা বিশাল ব্যাপার। সালাহর নিবেদন ও পেশাদারিত্ব সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। আশা করি, আজ রাতেও সে স্কোরশিটে নাম তুলবে।"

বিখ্যাত সাংবাদিক পিয়ার্স মর্গ্যানকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সাক্ষাৎকারে ‘কে সেরা’ প্রশ্ন টানা হয়। লিওনেল মেসির সঙ্গে নিজের তুলনা প্রসঙ্গে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড স্পষ্ট জানালেন,
‘মেসি আমার চেয়ে ভালো, এই মতের সঙ্গে আমি একমত নই। এখানে আমি বিনয়ী হতে চাই না।’
প্রায় একই সময়ে মেসি-রোনালদোর সঙ্গে তুলনা করে প্রশ্ন করা হয়েছিল নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার আর্লিং হলান্ডকে। ম্যানচেস্টার সিটি তারকা জানালেন, ফুটবল বিশ্বের দুই তারকার রেকর্ডের ধারে কেউ যেতে পারবে না। তার মতে, মেসি-রোনালদো কিংবদন্তিতুল্য।
চলতি মৌসুমের (নভেম্বর থেকে) এখন পর্যন্ত ম্যানচেস্টার সিটি ও নরওয়ের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মোট ২৬ গোল করেছেন হলান্ড। এ নিয়ে তার ক্যারিয়ারের মোট গোলসংখ্যা ৩২৭। এতসবের পরও মেসি-রোনালদোর চেয়ে অনেক পিছিয়ে তিনি।
৩৮ বছর বয়সি মেসির জাতীয় ও ক্লাবের হয়ে গোল সংখ্যা ৮৯২। ৪০ বছর বয়সী রোনালদোর ৯৫২। অর্থাৎ ১ হাজার গোলের মাইলফলক স্পর্শ করতে খুব বেশি দূরে নেই দুজনই।
হলান্ডকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি আদৌ নিজেকে দুই কিংবদন্তীর কাতারে দেখেন কিনা। উত্তরে হলান্ড বলেন,
‘আমি তাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। কেউই তাদের কাছাকাছি যেতে পারবে না।’