বৈশ্বিক ইভেন্ট বা দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বেশ আগে থেকেই বাংলাদেশ দলে সহ-অধিনায়ক কে, তা নিয়ে চলে আসছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা। কে ডেপুটির দায়িত্বে আছেন, সেটা নিয়ে ধোয়াশায় থাকেন খেলোয়াড়রাও। আসছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলেও দেখা মিলেছে একই চিত্রের। স্কোয়াডে উল্লেখ করা হয়নি সম-অধিনায়কের নাম। দলের সব ব্যাপারে ব্যাখা দিলেও এই প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচক গাজি আশরাফ হোসেন বল ঠেলে দিয়েছেন বোর্ডের কোর্টে।
সহ-অধিনায়ক হতে পারেন যে দুজন, সেই মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদ দুজনই আছেন স্কোয়াডে। জাতীয় দলে এই দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা আছে তাদের। নাজমুল হোসেন শান্ত ক্যারিবিয়ান সফর মিস করলে তার জায়গায় ওয়ানডে নেতৃত্ব দেন মিরাজ। ফলে অনায়াসেই সহ-অধিনায়ক হিসেবে তার বা অন্য একজনের নাম দল ঘোষণার সময়ই দিতে পারত বিসিবি।
আরও পড়ুন
লিটন-তানজিদের রেকর্ড গড়া ম্যাচে ঢাকা পেল প্রথম জয় |
![]() |
সহ-অধিনায়ক কেন নেই, মিরপুরে রোববারের সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্নের জবাবে গাজি আশরাফ শোনালেন নির্বাচকদের সীমাবদ্ধতার কথা।
“আসলে আমাদের কাজের অধীনে রয়েছে শুধু দল নির্বাচন করাটা। আমরা দল দেওয়ার পর এটা বোর্ডের তরফ থেকে ঠিক করা হয় যে কে অধিনায়ক থাকবেন আর কে সহ-অধিনায়ক হবেন। শান্ত তো আগে থেকেই অধিনায়কত্ব করছে। সহ-অধিনায়ক কেন নেই, আমার মনে হয় এটা ক্রিকেট অপারেশন্স বা বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো ভালো। কারণ, সঠিক উত্তরটা তারাই দিতে পারবেন।”
অধিনায়কের ডেপুটি কে থাকবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার না থাকলেও খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়ে সতর্ক থাকার কাজটা করতেই পারেন নির্বাচক। এই কারণেই সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে গতিময় পেসার নাহিদ রানার প্রসঙ্গ। কারণটা স্পষ্ট, জাতীয় দলে তিন ফরম্যাটেই খেলা এই তরুণ ক্রিকেটার বিপিএলেও খেলছেন টানা ক্রিকেট। ফলে তার চোটে পড়ার চিন্তা পেয়ে বসছে অনেককেই।
আরও পড়ুন
সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ নেই সাইফের, আরও ভালো করার প্রত্যয় |
![]() |
প্রধান নির্বাচক অবশ্য জানিয়েছেন, নাহিদকে নিয়ে তারা সচেতনতা অবলম্বন করছেন।
“আমার ১০ মাসের চাকরির সময়ে আমি দেখেছি যে কোচিং প্যানেলের এটা একটা চিন্তার জায়গা হল বোলারদের ওয়ার্কলোড, যা নিয়ে তারা যথেষ্ট কাজ করেন। বিশেষ করে নাহিদ রানার দিকে তাদের বাড়তি নজর আছে। আমরা চাই না যাতে তার ওপর বাড়তি চাপ পড়ুক। এই ব্যাপারে ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে আমাদের যোগাযোগ আছে।”
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪:৫১ পিএম
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩:৩১ পিএম
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৭ পিএম
৩০ ডিসেম্বর সাত দল নিয়ে যে ক্রিকেট উৎসব শুরু হয়েছিল ৪৫ ম্যাচ শেষে, ৭ ফেব্রুয়ারির অপেক্ষা এখন কেবলই ফাইনালের। পুরো টুর্নামেন্টে দাপুটে ক্রিকেট খেলা ফরচুন বরিশালের ফাইনালের প্রতিপক্ষ চিটাগং কিংস।
সেরা দুই দলই ৭ তারিখের সন্ধ্যা সাতটার ম্যাচে নামবে মিরপুরের শেরে-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। গ্রুপ পর্বে ১২ ম্যাচের ৯টায় জিতে ১৮ পয়েন্টে টেবিলের এক নম্বরে ছিল বরিশাল। দুইয়ে ছিল ৮ ম্যাচ জেতা কিংস। ফাইনালে আসার পথে প্রথম কোয়ালিফায়ারে কিংসকেই ৯ উইকেটে হারিয়েছিল তামিমের দল। পরে শেষ বলের ডিসাইডারে কোয়ালিফায়ার টুয়ে ২ উইকেটে জিতে ফাইনালে মোহাম্মদ মিথুনের কিংস।
মাঠের বাইরের সমালোচনা সেই শুরু থেকেই। কিটব্যাগ-হেলমেট স্বল্পতা, পেমেন্ট ইস্যু নিয়ে কথা উঠেছে রোজ, শেষের দিকে ফিক্সিং সন্দেহের কালো মেঘ ভারি করেছে বিপিএলের আকাশ। মাঠের ক্রিকেটে রান উঠলেও নিম্ন মানের বিদেশিরাও ছিলেন আলোচনায়।
এক ছক্কায় হয়ে যাবে এই বিপিএলের ৭০০ ছক্কা। এর আগে বিপিএলের এক আসর কখনো দেখেনি ৬৫০ ছক্কাও। ২৯৪ রানে হবে বিপিএল ইতিহাসের এক আসরে সর্বোচ্চ রানও। এই বিপিএলে মাঠের ক্রিকেটে হয়েছে রান আর মাঠের বাইরে সমালোচনা।
সর্বোচ্চ রানে সেরা বিদায় হয়ে যাওয়া খুলনার মোহাম্মদ নাঈম শেখের। সেরা পাঁচে নেই বরিশালের কেউ। বিপিএল ইতিহাসের তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ৫০০ রানও পেরিয়েছেন নাঈম, টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন ৫১১ রানে। সর্বোচ্চ উইকেটে তাসকিন আহমেদই আপাতত এক নাম্বারে, বিপিএল ইতিহাসেই এক আসরে সর্বোচ্চ ২৫ উইকেটে শেষ তাজিমের এই বিপিএল।
আগের আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বরিশাল। কিংসের নজর নিজেদের প্রথম শিরোপার দিকে। জমে ওঠা এক ফাইনালের অপেক্ষায় ক্রিকেট দর্শকরা। এই বিপিএলেই রেকর্ড ১০ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। ফাইনালেও থাকবে গ্যালারি ভর্তি দর্শক।
বিপিএল ফাইনাল : বরিশাল – চিটাগং
শুরু : ৭ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যা সাতটা
ভেন্যু : শেরে-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম
দেখা যাবে টি স্পোর্টস টেলিভিশন ও অ্যাপে
একেতো চোট-আঘাত সমস্যায় জর্জরিত অস্ট্রেলিয়া দল, এর ওপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে মরার উপর খাড়ার ঘা। এবার নতুন সমস্যায় পড়ল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। হঠাৎ করেই ওয়ানডে ছাড়ার ঘোষণা দিলেন তারকা অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিস। অথচ তিনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াডে ছিলেন।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও খেলবেন না তিনি, যেকারণে ঘোর বিপাকে অস্ট্রেলিয়া। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী অজি দলের সদস্য ছিলেন স্টয়নিস। এখন তিনি অবসর নেওয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চূড়ান্ত স্কোয়াডে আরও একটি পরিবর্তন করতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু হতে দুই সপ্তাহও বাকি নেই। এমন সময় ওয়ানডে থেকে হঠাৎ অবসরের ঘোষণা দিলেন ৩৫ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। অথচ স্টয়নিসকে রেখেই গত ১৩ জানুয়ারি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রস্তুতি হিসেবে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি ওয়ানডে খেলবে দেশটি। সেই স্কোয়াডেও ছিলেন তিনি।
যদিও দেশের হয়ে টি-২০ খেলা চালিয়ে যাবেন মার্কাস। ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, টি-টোয়েন্টিতে মনোযোগী হতে ওয়ানডে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্টয়নিস। সবশেষ ডারবানস সুপার জায়ান্টসের হয়ে এসএ-20'তে মাঠে নামেন। টুর্নামেন্টে বল করার সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে হালকা চোটও পান তিনি। ওয়ানডর ছাড়ার ঘোষণায় স্টয়নিস বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলা ছিল আমার জন্য একটি অবিশ্বাস্য যাত্রা, দলের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তের জন্য কৃতজ্ঞ ও ধন্য।‘ ওয়ানডে ছাড়লেও দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলবেন তিনি।
মার্কাস স্টয়নিস অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৭১টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নামেন। ৬৪টি ইনিংসে ব্যাট করে ২৬.৬৯ গড়ে ১৪৯৫ রান সংগ্রহ করেছেন। সেঞ্চুরি করেছেন ১টি ও হাফ-সেঞ্চুরি করেছেন ৬টি। পেয়েছেন ৪৮টি উইকেট। অস্ট্রেলিয়া দলের প্রধান কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ডের সাথে কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্টয়নিস। ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী স্টয়নিস সম্পর্কে দারুণ বলেছেন কোচ ম্যাকডোনাল্ড, ‘সে শুধু দারুণ একজন খেলোয়াড়ই নয়, ব্যক্তি হিসেবেও অসাধারণ। সে একজন ব্যতিক্রমী জনপ্রিয় খেলোয়াড় এবং বড় মাপের মানুষ।‘
স্টয়নিসের আকস্মিক অবসরে জর্জ বেইলির নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচক কমিটির কাজ আরও কঠিন করে দিয়েছে। পিঠের চোটে ইতিমধ্যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে ছিটকে পড়েছেন মিচেল মার্শ। চোটের শিকার হয়েছেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ও অভিজ্ঞ পেসার জশ হ্যাজলউড, তাদের খেলা নিয়েও আছে সংশয়। কামিন্স, মার্শ ও হ্যাজলউডের জায়গায় স্পেনসার জনসন, ফ্রেজার-ম্যাগার্ক ও শন অ্যাবট দলে ঢুকতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। আর স্টয়নিস অবসর নেওয়ায় প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পেতে পারেন মিচেল ওয়েন। ২২ বছর বয়সী ওয়েন সম্প্রতি বিগ ব্যাশ ফাইনালে বিস্ফোরক সেঞ্চুরি করেছেন, আসরের সর্বোচ্চ রানও এই ওপেনারের।
ক্রিজে দুই টেল এন্ডার ব্যাটার থাকায় শেষ ওভারে মুসফিক হাসান ১৫ রান ডিফেন্ড করে ফেলবেন, এই আশায় নিশ্চয়ই করেছিলেন খুলনা টাইগার্স অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে নাটকীয়ভাবে আলিস-সানি বীরত্বে ম্যাচটি জিতে গেছে চিটাগং কিংস। আসর থেকে বিদায় নিয়ে হতাশ মিরাজ অবশ্য হারের পেছনে মুসফিক নয়, দায়ী করলেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার জেসন হোল্ডারের বোলিংকেই।
মিরাজের হতাশার জায়গা মূলত হোল্ডারের করা ইনিংসের ১৮তম ওভারটি। প্রথম তিন বল ভালোভাবে করলেও শেষ তিন বলে ‘আনাড়ি’ ব্যাটার আলিস আল ইসলামের কাছে হজম করেন চার ও ছক্কা। সাত বলের ওভারে সব মিলিয়ে আসে ১৩ রান।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে মিরাজ হারের জন্য সরাসরি দায়টা তাই দিলেন হোল্ডারের সেই ওভারটিকেই। “আমাদের পরাজয়ের আসল কারণ জেসন হোল্ডারের তিন নম্বর ওভারটাই। ওই ওভারে যে ১৩টা রান হল, ওটাই ম্যাচটা একদম ঘুরিয়ে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অভিজ্ঞ হোল্ডারের মতো বোলারের কাছ থেকে এমন বোলিং আশা করিনি আমরা।”
হোল্ডারের ওই ওভারের পরও শেষ ওভারের আগে এগিয়ে ছিল খুলনাই। তিন ওভারে ২৩ রান দেওয়া এই ডানহাতি পেসারকে সুযোগ থাকলেও আর বল করাননি মিরাজ। আক্রমণে আনেন অনভিজ্ঞ মুসফিককে, যিনি শেষ ওভারে এলোমেলো বোলিংয়ে পারেননি ১৫ রান ডিফেন্ড করতে।
তবে তরুণ এই পেসারের কোনো ভুল দেখছেন না মিরাজ। “দেখেন, শেষ ওভারে মুশফিক হাসান ১৫ রান খাওয়ার কারণেই আমরা হেরেছি, এটা ঠিক আছে। কিন্তু আমার কাছে যেটা মনে হয়, ম্যাচটা আমাদের কাছ থেকে হাতছাড়া হয়ে গেছে হোল্ডার ওই ওভারটাতে ১৩ রান দেওয়াতেই।”
১৬৪ রান তাড়ায় ১৩০ রানে ৭ উইকেট হারানো চিটাগং ম্যাচ জিতে গেছে আরাফাত সানি ও আলিস আল ইসলামের ব্যাটে চড়ে। এমন কিছুর ভয়টা বেশ আগে নাকি ছিল মিরাজের মনে। “আমার মনে হচ্ছিল যে, যেকোনো সময় একটা না একটা কিছু অঘটন ঘটে যাবে। সেই ভয়ই আমার মনকে পুরোপুরি ঘিরে ধরেছিল।”
রহস্য স্পিনার হিসেবেই মূলত তার পরিচিতি। এই বিপিএলেও বল হাতে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন বেশ। তবে ব্যাট হাতে আলিস আল ইসলাম বরাবরই নবিশ। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এই ম্যাচের আগে স্ট্রাইক রেট যার ৩৬, তার কাছ থেকে আর কীইবা আশা করতে পারে দল। তবে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে সবার চোখ কপালে তুলে সেই আলিসই চিটাগংকে জিতিয়েছেন অবিশ্বাস্য এক ক্যামিওতে। সেই সময়ে কী চলছিল তার মনে, তা জানলে যেন আরও অবাক হতে হবে।
কারণ, শেষ বলে চার প্রয়োজন - এই সমীকরণে মুসফিক হাসানকে নাকি ছক্কা মেরেই দলকে জেতানোর পরিকল্পনা ছিল আলিসের! যদিও তিনি সেদিকে আর হাটেননি, মিড অফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মেরে বাউন্ডারিতে জিতিয়েছেন ম্যাচ। ২ উইকেটের জয়ে তার অবদান ৭ বলে ১৭ রানের ছোট, তবে বিশাল তাৎপর্যপূর্ণ এক ইনিংস, যা তার দলকে নিয়ে গেছে বিপিএলের ফাইনালে। আর একপ্রান্ত আগলে তাকে কার্যকর সমর্থন যোগান আরেক স্পিনার আরাফাত সানি।
ম্যাচ সেরা হয়ে আলিস শোনান শেষ বলের আগে তার ও সানির কথোপকথনের গল্প। “এক রান নিতে গিয়ে যখন চোট পেলাম, তখন সানি ভাল বলল বাইরে যাওয়াটাই বেটার, কারণ আমি দৌড়াতে পারছিলাম না। এরপর শেষ বলে আমি যখন ফিরলাম, তখন আমি সানি ভাইকে বললাম যদি কপালে থাকে তাহলে আমি ছয় মেরে দিব। তো সানি ভাই বলল, ‘ছয় মারার দরকার নাই, তুই চারই মার।’”
১৬৪ রান তাড়া করতে গিয়ে ভালো অবস্থানে থেকেও ২৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল চিটাগং। তবে অষ্টম উইকেটে দুই টেল এন্ডার সানি ও আলিস মিলে ফিরিয়ে আনেন দলের জয়ের আশা। তবে শেষ ওভারে তৃতীয়ে বলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল আলিসকে। তবে দুই বল বাদে ফেরেন আবার আর এবার মাঠ ছাড়েন বিজয়ীর বেশেই।
আলিস জানালেন, তাকে ক্রমাগত সাহস যুগিয়ে গেছেন সানি। “সানি ভাইয়ের সাথে আমার যখন জুটি হচ্ছিল, তখন সানি ভাই শুধু আমাকে বলছিলেন, ‘আলিস তোর ব্যাটিং দেখছি আমি। তুই পারবি।’ আমি অনেকদিন ধরে চেষ্টা করতেছিলাম ব্যাটিং করার জন্য বা ব্যাটসম্যান হওয়ার জন্য। তবে হচ্ছিল না। আমি পারছিলাম না। তবে সানি ভাইয়া বলছিলেন, ‘বিশ্বাস রাখ, যেকোনো কিছুই হতে পারে।’”
এলিমিনেটর ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে চমকে দেওয়া নাসুম আহমেদ ফিরতি স্পেলে যখন ফিরলেন, ততক্ষণে খাওয়াজা নাফায় ও হোসেন তালাত ক্রিজে পুরোপুরি সেট। হাতে উইকেট থাকায় ম্যাচ অনেকটাই হেলে পড়ল চিটাগং কিংসের দিকেই। তবে বাঁহাতি স্পিনের ভেল্কিকে দারুণ এক স্পেলে খুলনা টাইগার্সকে ম্যাচে ফেরালেন নাসুম। ইনিংসের মাঝপথে দিক হারানো চিটাগংকে জয়ের সুবাস দিলেন টেল এন্ডাররা। সেখান থেকে শেষ বলে চার মেরে চিটগংকে ফাইনালে নিয়ে গেলেন আলিস আল ইসলাম। তাতে বিফলেই গেল শিমরন হেটমায়ারের বিধ্বংসী এক।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চিটাগং জিতেছে ২ উইকেটে। মেহেদি হাসান মিরাজের দল আগে ব্যাটিং করে দাঁড় করিয়েছিল ৬ উইকেটে ১৬৩ রানের স্কোর। আশা জাগিয়েও চিটাগং সেই রান তাড়া করেছে ম্যাচের শেষ বলে।
এর ফলে ২০১৩ সালের পর প্রথমবারের মত বিপিএলে ফিরেই ফাইনালের টিকিট পেয়েছে চিটাগং। আগামী শুক্রবার শিরোপার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল।
নিজেদের শেষ তিন ম্যাচ ধরেই খুলনার জন্য প্রতিটি ম্যাচই ছিল ফাইনালের মতোই। সেই পরীক্ষায় তারা ভালোভাবেই উতরে যায়। এলিমিনেটর ম্যাচে তো স্রেফ উড়িয়ে দেয় তারকায় ঠাসা রংপুরকে। তবে চিটাগংয়ের বিপক্ষে ব্যাট হাতে দিনের শুরুটা ভুলে যাওয়ার মতোই ছিল খুলনার।
এই ম্যাচ দিয়ে বিপিএলের ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ৫০০ রান করেন নাঈম। ৫১১ রান নিয়ে এই আসরের সর্বোচ্চ রানও তার। তবে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলকে হতাশই করেন তিনি। চারটি চার মারলেও ডট বল খেলে ফেলেন বেশ কিছুই। ফলে বাড়ে চাপ, আর সেটা সরাতে গিয়েই আউট হওয়ার আগে ২২ বলে করতে পারেন মাত্র ১৯ রান।
আরেক ওপেনার মিরাজ, অ্যালেক্স রস বা আফিফ হোসেনদের কেউই পারেননি হাল ধরতে। ফলে নয় ওভারের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে দলীয় ফিফটিও (৪২) করতে পারেনি খুলনা।
ওই অবস্থা থেকে পঞ্চম উইকেটে পাল্টা লড়াইয়ের সূচনা করেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও হেটমায়ার। দুজনেই জুটিতে গুরুত্বপূর্ণ রান যোগ করলেও, দ্রুত রান বের করতে পারছিলেন না। বিশেষ করে হেটমায়ার, প্রথম ২২ বলে করেন মাত্র ২৯ রান।
তবে এরপরই চেনা ছন্দে দেখা যায় এই ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে। চার-ছক্কার ফুলঝুড়িতে ঝড় তোলেন শেষ চার ওভারে। সাথে অঙ্কন দেন যোগ্য সঙ্গ। এই দুজনের প্রয়াসে ১৬০ রান পার করে ফেলে খুলনা।
৩৩ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৩ রান করেন হেটমায়ার। ৪১ রান করেন অঙ্কন।
এই রান তাড়ায় চিটাগংয়ের শুরুটাও হয়নি আদর্শ। অল্পেই ফেরেন দুই ফর্মে থাকা ব্যাটার পারভজ হোসেন ইমন ও গ্রাহাম ক্লার্ক। এরপরই ওই জুটি গড়েন নাফায় ও তালাত। দেখেশুনে খেলেই ম্যাচটা ক্রমেই খুলনার হাত থেকে বের করে নিচ্ছিলেন দুজন।
নাফায় তুলে নেন ফিফটি। তালাতও এগিয়ে যাচ্ছিলেন ভালোভাবেই। তবে আক্রমণে এসেই নাসুম দেখান তার ভেল্কি। লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের টার্ন করা ডেলিভারিতে সীমানা পার করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে বিদায় ডেকে আনেন ৫৭ করা নাফায়। এরপরই নামে একটা ছোটখাটো ধস।
১২ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে জয়ের সম্ভাবনা জোরাল করে খুলনা। তবে অষ্টম উইকেটে নাসুম আহমেদ ও আলিস আল ইসলাম মিলে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন কার্যকর এক জুটিতে, যা ম্যাচকে নিয়ে যায় শেষ ওভারে।
শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৫ রান। মুসফিক হাসানের করা প্রথম বলে চার মেরে দেন আরাফাত সানি। তিন বলে ৮ রানে নেমে আসা সমীকরণে ক্রিজে নেমেই চার মারেন শরিফুল ইসলাম। তবে পরের বলেই তাকে ক্যাচ আউটে ফেরান মুসফিক। এক বলে চার রান প্রয়োজন, এমন টানটান উত্তেজনার মুহূর্তে উড়িয়ে মেরে চার হাঁকান আলিস, উল্লাসে ফেটে পড়ে চিটাগং শিবির। আর একরাশ হতাশায় নিমজ্জিত হতে হয় খুলনাকে।
ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলা আলিস খেলেন মাত্র ৮ বলে ২১ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস।