টি-টোয়েন্টিতে একটা দল যখন আগে ব্যাটিং করে প্রায় ৩০০ ছুঁইছুঁই স্কোর করে ফেলে, এরপর প্রতিপক্ষ দলের আসলে করার থাকে সামান্যই। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের একটিতেও দেড়শ রান করতে ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশের জন্য তাই ভারতের রান পাহাড়ের জবাব দেওয়ার সম্ভাবনা শুরুতেই শেষ হয়ে গেল। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। লিটন দাস দারুণ কিছু শটে ভালো একটা ইনিংস খেললেন। আর শেষের দিকে ফিফটি করলেন তাওহীদ হৃদয়। এই দুজন বাদে বাংলাদেশের বাকি ইনিংসের চিত্রটা ছিল কেবলই ছিল যেন পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর লড়াই। এটাও অবশ্য কাজে দেয়নি। বিশাল হারের পাশাপাশি হতে হয়েছে ধবলধোলাই।
হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ভারতের কাছে ১৩৩ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ভারতের করা রেকর্ড ৬ উইকেটে ২৯৭ রানের জবাবে ২০ ওভারে বাংলাদেশ করতে পারে মোটে ৭ উইকেটে ১৬৪ রান।
এর মধ্য দিয়ে শেষ হল বাংলাদেশের হতাশাজনক ভারত সফর। টেস্টে ২-০ তে হারের পর টি-টোয়েন্টিতে সঙ্গী হল ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হারের তেতো স্বাদ।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়া ভারতের ব্যাটাররা ইনিংসের প্রথম থেকেই যেন পণ করেছিলেন ৩০০ রান করার। সেই লক্ষ্যে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে প্রথম ছয় ওভারেই স্কোর দাঁড়ায় এক উইকেটে ৮৯। বেধড়ক পিটুনি খান আক্রমণে আসা প্রত্যেক বোলার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে সঞ্জু স্যামসনের হাতে টানা চারটি চার খাওয়া তাসকিন আহমেদ নিজের প্রথম দুই ওভারে গুনেন ২৭ রান। ম্যাচের ধারার বিপরীতে মাঝে অভিষেক শর্মাকে ফেরান তানজিম হাসান সাকিব।
আক্রমণে এসে প্রথম ওভারে স্যামসনের হাতে দুই চার ও এক ছক্কায় ১৭ রান হজম করা রিশাদ হোসেন তার পরের ওভারে করে বসেন দিনের সবচেয়ে খরুচে ওভারটি। প্রথম বলটি ডট দেওয়ার টানা পাঁচ বলে তাকে পাঁচটি ছক্কা হাঁকান মারমুখী ব্যাটিং করা স্যামসন। ১০ ওভার শেষে ভারতের রান ১ উইকেটে ১৫২।
ইনিংসের ১২তম ওভারে সুরিয়াকুমার যাদব ও স্যামসনের জুটিতে পূর্ণ হয় ১৫০ রান। মাত্র ৪০ বলে এই ফরম্যাটে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন বাংলাদেশের বোলারদের রীতিমত শাসন করা স্যামসন। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৪৭ বলে ৮ ছক্কা ও ১১ চারে ১১১ রানের ইনিংস খেলে ডানহাতি এই ব্যাটার থামেন মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে।
শেষের দিকে ঝড় তোলার কাজটা সারেন হার্দিক পান্ডিয়া ও রিয়ান পরাগ। দুজনেই খেলেন দলের চাহিদা অনুযায়ী ক্যামিও ইনিংস। তাতে ভারত ভালোভাবেই চোখ রাখছিল দলীয় ৩০০ রানের দিকে। অল্পের জন্য তা আর হয়নি। তবে যা হয়েছে, সেটাও কম নয়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর ভারতের ২৯৭। ৩১৪ রান নিয়ে সবার ওপরে নেপাল।
বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে এই ফরম্যাটে সর্বোচ্চ রান ছিল ২২৪। ফলে ২৯৮ রান তাড়া করার আশা করাটাও ছিল বোকামি। তবে ব্যাটিং স্বর্গে ভালো একটা স্কোর করবে সফরকারীরা, এটা তো আশা করাই যেত। তবে পুরো ভারত সফরের ধারাবাহিকতায় এই ম্যাচেও এক-দুজন বাদে সবাই উপহার দেন আরেকটি ব্যর্থতাময় পারফরম্যান্স।
মানাংক যাদবের করা ইনিংসের প্রথম বলেই বাউন্সারে বিভ্রান্ত হয়ে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক মারেন পারভেজ হোসেন ইমন। শান্ত ও তানজিদ হাসান এরপর আগ্রাসী কিছু শটে ভালোই রান বাড়াচ্ছিলেন। তিন ওভারেই হয়ে যায় ৩৫ রান। যদিও জয়ের জন্য সেটাও ছিল ভীষণ কম রান তোলার গতি। ১৫ রানে ফেরেন তানজিদ।
পঞ্চম ওভারে নিতিশ রেড্ডিকে বাংলাদেশ বোলারদের মতোই পিটুনি দেন ছন্দে থাকা লিটন দাস। একে একে ছয় বলে মেরে দেন চারটি বাউন্ডারি। তবে অন্যপ্রান্তে সিরিজে আরও একবার ব্যর্থ শান্ত উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন ১৪ রান করে।
এরপর জমে উঠেছিল লিটন ও তাওহীদের জুটি। ফিফটির পথে থাকা লিটন দাসকে গুগলিতে থামান রবি বিষ্ণোই। পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ৮ চারে সাজানো ৪২ রানের ইনিংস।
এরপর থেকে বাংলাদেশের ইনিংস কেবল একাই টেনেছেন তাওহীদ। ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টিতে আলো ছড়াতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। ৯ বলে ৮ রান করে আউট হন বরুণ চক্রবর্তীর বলে।
তবে দুর্দান্ত কয়েকটি শটে ৩৫ বলে ফিফটি তুলে নেন তাওহীদ। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৬৩ রানে। ৪২ বলের ইনিংসটি সাজান ৫টি চার ও ৩ ছক্কায়।
৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ভারতের সেরা বোলার বিষ্ণোই।
No posts available.