১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫০ পিএম
দুই দলের জন্যই আসর শুরু হয়নি প্রত্যাশা অনুযায়ী। টানা পাঁচ ম্যাচ হেরে তুলনামূলক বেশি চাপের মুখে থাকা ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে আলো ছড়ালেন লিটন দাস। খেললেন মনোমুগ্ধকর এক ইনিংস। সাথে সাব্বির রহমানের ক্যামিওতে জেগেছিল জয়ের আশা। তবে জাকির হাসানের ফিফটির পর জাকের আলি, রনি তালুকদার ও অধিনায়ক আরিফুল হকের ব্যাটে চড়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স পেল নিজেদের প্রথম জয়।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১৬তম ম্যাচে সিলেট জিতেছে ৩ উইকেটে। ঢাকার করা ৬ উইকেটে ১৯৩ রান দলটি পাড়ি দিয়েছে ৮ বল হাতে রেখেই। ছয় ম্যাচের ছয়টিতেই হেরে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতেই রইল ঢাকা।
আগের ম্যাচের ঢাকা হারলেও ভালো একটি ইনিংস খেলেছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। ইনিংসের প্রথম ওভারে ছক্কা মারে আভাস দিয়েছিলেন এদিনও ভালো কিছুর। তবে রাহকিম কর্নওয়েলের অফস্পিনে ওই ওভারেই বিদায় ঘটে তার। রানের জন্য সংগ্রাম করা লিটন আগের ম্যাচে ছিলেন না একাদশে। এই ম্যাচে ফিরে শুরু থেকেই উপহার দেন ছন্দময় ব্যাটিং।
আরও পড়ুন
নাহিদের গতিতে মুগ্ধ ইফতিখার, প্রশংসায় পঞ্চমুখ সোহানের |
![]() |
তানজিম হাসান সাকিবের করা চতুর্থ ওভারে হাঁকান টানা তিনটি বাউন্ডারি। কিছু বড় শট খেললেও মুনিম সেভাবে তাল মেলাতে পারছিলেন না। তবে চাপ না বাড়িয়ে লিটন এগিয়ে নেন রানের গতি। নাহিদুল ইসলামকে মারেন পরপর দুই বলে চার ছক্কা। ছয় ওভারেই দলীয় ফিফটি হয়ে যায় ঢাকার।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভুলে যাওয়ার মত ২০২৪ কাটানো লিটন সিলেটের দর্শকদের উল্লাসে ভাসিয়ে ৬ চার ও ১ ছয়ে প্রায় ১৭০ স্ট্রাইক রেটে ফিফটির দেখা পান স্রেফ ২৯ বলে। কয়েকটি বড় শট খেললেও অন্যপ্রান্তে ঠিক বিপরীত ব্যাটিং উপহার দেন মুনিম। মাত্র ১১০ স্ট্রাইক রেটে তার ব্যাট থেকে ৪৭ বলে আসে ৫২ রান।
মুনিমের বিদায়ের ঠিক আগে ১২৯ রানের জুটির অবদান ঘটে লিটনের আউটে। দুর্দান্ত কিছু শটে আশা জাগাচ্ছিলেন শতকের। তবে ফিরতি স্পেলে আসা কর্নওয়েলকে সুইপ করতে গিয়ে পড়েন লেগ বিফোরের ফাঁদে। অবশ্য তার আগে উপহার দেন মাত্র ৪৩ বলে ৭৩ রানের উপভোগ্য এক ইনিংসের।
আরও পড়ুন
ডার্বিশায়ারে নতুন দায়িত্ব পেলেন রংপুর রাইডার্স কোচ আর্থার |
![]() |
লিটনের পর মুনিমকেও শিকাত বানান কর্নওয়েল। দীর্ঘদেহী এই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার বল হাতে নিলেই স্টেডিয়ামের দর্শকরা তাকে চিয়ার করে সমর্থন যুগিয়েছেন সেই সময়ে। ব্যাটিং উইকেটে চার ওভারে মাত্র ২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে এর দারুণ প্রতিদানও দেন কর্নওয়েল।
ক্রিজে যেতেই চারে নামা সাব্বিরও পেয়েছেন দর্শকদের অকুন্ঠ সমর্থন। আগের ম্যাচে ঝড়ো ফিফটি করার রেশ ধরে রেখে এই দফায়ও শুরু থেকেই দেখান আগ্রসন। স্রেফ ছক্কায় বাড়ান রানের গতি। টানা তিন ওভারে তানজিম, আল-আমিন হোসেন ও রিস টপলিকে ছক্কায় ওড়ান অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। বড় শট মারতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত থামতে হয় ২৮ রানে, বল খেলেন মাত্র ১০টি।
সাথে থিসারার ক্যামিও ইনিংস ঢাকার স্কোর পার করে ১৯০। এরপর বল হাতে দলটির শুরুটা ছিল স্বপ্নের। প্রথম বলেই কর্নওয়েলকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ওই ওভারেই জাকির হাসানের হাতে হজম করেন ছক্কা। দুই চারে ১১ রানে ইতি ঘটে জর্জ মুন্সির পথচলা।
শুরুটা ভালো পেলেও একই চিত্র ছিল অ্যারন জোন্সেরও। তবে চাপের মুখে একপ্রান্ত আগলে সিলেটকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন জাকির। শুভম রঞ্জনের করা প্রথম ওভারে মারেন চারটি চার, যা পাওয়ার প্লে শেষে তার দলকে এনে দেয় ৭৪ রান।
মোসাদ্দেক হোসেনকে টানা দুই বাউন্ডারি মেরে মাত্র ২৫ বলেই ফিফটি হয়ে যায় জাতীয় দলের এই ব্যাটারের। শুভমকে ছক্কা মেরে এরপরের বলেই থামতে হয় জাকিরকে। তবে তার আগে করেন গুরুত্বপূর্ণ ৫৮ রান (২৭ বল)।
এরপর সিলেট এগিয়ে নিচ্ছিলেন জাকের আলি অনিক ও অভিজ্ঞ রনি তালুকদার। তবে যথাক্রমে ২৪ ও ৩০ রানে পরপর দুই ওভারে তাদের বিদায়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় সিলেট। তখনই ত্রাতার ভূমিকায় হাজির আরিফুল।
আরও পড়ুন
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে রাজশাহীর দ্বিতীয় জয় |
![]() |
আবু জায়ের রাহির এক ওভারে ১৪ রান নিয়ে প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন দলের জয়। এরপর তিনিই সারেন বাকি আনুষ্ঠানিকতা। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার অপরাজিত থাকেন ১৫ বলে ২৮ রানে।
১২ জুলাই ২০২৫, ৫:২০ পিএম
১০ জুলাই ২০২৫, ১১:০৯ পিএম
৯ জুলাই ২০২৫, ৯:১৬ পিএম
চিত্রটা বেশ পুরনোই। বছর দুয়েক ধরেই টেস্ট ক্রিকেটকে প্রাধান্য দিয়ে ওয়ানডে ও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খুব কমই খেলছেন প্যাট কামিন্স। সেই ধারায় অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক আগামী আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজেও খেলবেন না। এর পেছনে অ্যাশেজ সিরিজের প্রস্তুতিকে বড় করে দেখছেন তিনি।
ফলে পেস আক্রমণের তিন মূল বোলারকেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাবে না অস্ট্রেলিয়া। মিচেল স্টার্ক আগে থেকেই পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে বিশ্রামে আছেন। শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের স্কোয়াডে থাকলেও জশ হ্যাজলউডকেও বিশ্রামে দেওয়া হয়েছে। তার জায়গায় দলে এসেছেন জেভিয়ার বার্টলেট। এছাড়া দলের বাইরে আছেন ব্যাটার ট্রাভিস হেডও।
আরও পড়ুন
জয় দিয়েই আসর শুরু চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের |
![]() |
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলবে অস্ট্রেলিয়া। এই দুই সিরিজ না খেলে কামিন্স ফিটনেসের ওপর জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন গত শুক্রবার। “আগামী ছয় সপ্তাহ আমার জন্য ভালো একটা অনুশীলনের সুযোগ হবে। শরীর মোটামুটি ভালোই আছে। তবে সবসময়ই কিছু জায়গা থাকে, যেখানে উন্নতির চেষ্টা থাকে। সেই ধাপ পেরিয়ে এরপর ধীরে ধীরে গ্রীষ্মের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করব।”
২০২৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকে কামিন্সই অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে অধিনায়ক থাকলেও, এরপর থেকে মাত্র দুটি ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। চলতি বছরের শুরুতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও খেলেননি। কারণ এর আগে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে পাওয়া গোড়ালির চোট সামলাচ্ছিলেন। পরে অবশ্য আইপিএল খেলেছেন পুরোটাই। এরপর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজ খেলছেন।
কামিন্স সংবাদ সম্মেলনে আরো জানিয়েছেন, তিনি আগামী অক্টোবরে নিউজিল্যান্ড সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলতে পারেন। এরপর ভারতের বিপক্ষে কিছু সাদা বলের ম্যাচ এবং সম্ভাব্য একটি শেফিল্ড শিল্ড ম্যাচ খেলে মাঠে নামবেন অ্যাশেজে।
পাকিস্তানের আসছে বাংলাদেশ সফরের সম্প্রচার স্বত্ত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তার ইতি ঘটেছে। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি সরাসরি দেখা যাবে দেশের প্রথম ও একমাত্র স্পোর্টস চ্যানেল টি স্পোর্টসের পর্দায়।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ক্রিকেট দলের মধ্যকার তিন ম্যাচের টি‑টোয়েন্টি সিরিজটি মাঠে গড়াবে আর কদিন বাদেই। তবে কিছুদিন আগেও সিরিজটি বাংলাদেশে কীভাবে দেখা যাবে, তা নিয়ে ছিল অনিশ্চিয়তা। শেষ পর্যন্ত সবসময়ের মত এবারও টি স্পোর্টসেই দেখা যাবে বাংলাদেশের খেলা।
আরও পড়ুন
জয় দিয়েই আসর শুরু চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের |
![]() |
টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হবে আগামী ২০ জুলাই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচ হবে যথাক্রমে ২২ ও ২৪ জুলাই। সবগুলো ম্যাচই হবে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ম্যাচ শুরু সন্ধ্যা ৬টা থেকে।
এই সিরিজ দিয়ে দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করবেন লিটন দাস। তিনি ও বাংলাদেশ দল এখন ব্যস্ত শ্রীলঙ্কা সফরে, টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিয়ে। প্রথম ম্যাচে অবশ্য হেরে গেছে সফরকারীরা। এই সিরিজ শেষ করে দেশে ফিরে পাকিস্তান সিরিজের প্রস্তুতি শুরু করবেন লিটন-মুস্তাফিজরা।
সৌম্য সরকারের চেষ্টা ছিল যেখানে তিনি শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই শুরুটা করার। রানের খাতাটা চার মেরে খুলে সেটাই হয়তো জানান দিয়েছিলেন। আগের বার ফাইনালের মঞ্চে ৫৪ বলে অপরাজিত ৮৬ রানের ইনিংস ছিল তাঁর। এবারের গ্লোবাল সুপার লিগের শুরুটাও জমকালো। টানা তিন ওভারেই তাঁর ব্যাট থেকে আসে বাউন্ডারি।
এক প্রান্তে সৌম্যের ব্যাট চললেও অপরপ্রান্তে সাইফ হাসান ধরে খেলছিলেন। শুরুটা দারুণ করলেও রংপুর রাইডার্সের ম্যাচের গতি কমে আসে ধীরে ধীরে। পাওয়ারপ্লেতে ৪০ রান আসে সৌম্য-সাইফের ব্যাট থেকে। এর মাঝে ডেভিড উইজার বলে আউট হতে হতে সৌম্য সরকার বেঁচে যান রিভিউ নিয়ে।
গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সের প্রথম ব্রেকথ্রু আসে ৮ম ওভারে সাইফের উইকেটের মাধ্যমে। ১৮ বল খেলে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ১ চারে সমান ১৮ রান। এরপর আর মাত্র ১ ওভার টিকতে পারেন সৌম্য। ভালো শুরু করলেও সৌম্যের ইনিংস থামে ৩৬ বলে ৩৫ করে।
আরও পড়ুন
‘৪০০ রানের সুযোগ একবারই আসে, কিংবদন্তি হতে হলে রেকর্ড ভাঙতেই হবে’ |
![]() |
এর ঠিক পরের ওভারেই আগুনে মেজাজে ৪৬ বছর বয়সী ইমরান তাহির। পরপর দুই বলে ফেরান রংপুরের ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসা আফগান স্টার আজমাতুল্লাহ ওমারজাই ও ইয়াসির আলি রাব্বিকে। হ্যাট্রিক চান্স থাকলেও বেঁচে যান ক্যাপ্টেন নুরুল হাসান সোহান। ১০ ওভারে রংপুর তখন খেলছে প্রায় ১০০ স্ট্রাইকরেটে।
১০ বলে ১৮ করে নুরুল হাসান সোহান ফিরলে রংপুরের হাল ধরেন দুই বিদেশী কাইল মায়ার্স ও ইফতিখার আহমেদ। দলের সর্বোচ্চ রান ছিল এই জুটির। ৪৩ বলে ৭৬ রান আসে মায়ার্স ও ইফতিখারের ব্যাট থেকে। তবে তাঁদের এই ইনিংসে অনেকটা অবদান প্রতিপক্ষেরও। প্রচুর মিসফিল্ড ও ক্যাচ মিসের মহড়া ছিল গায়ানার। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬২ রান তোলে রংপুর রাইডার্স।
জবাবে কাইল মায়ার্সের প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান নিয়ে শুরু করেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও জনসন চার্লস। এরপর ঝড়ো ব্যাটিং শুরু করলেও ৪র্থ ওভারে স্বদেশী আজমাতুল্লাহর বলে সোহানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন গুরবাজ। গায়ানার ওপেনিং জুটি ভাঙে ২৯ রানে।
এরপর মঈন আলি ও জনসন মিলে এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। দুজনে মিলে ৮ ওভারে ৭০ পার করান দলের রান। চার্লস ২৮ বলে ৪০ ও মঈন করেন ১৮ বলে ২৭। এরপর পরপর দু ওভারে এই দুই ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে পাঠান হারমিত সিং ও তাবরাইজ শামসি।
আরও পড়ুন
৪ বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরছেন আর্চার |
![]() |
বোলারদের কল্যাণে ম্যাচ কখনও হেলেছে রংপুরের দিকে আবার কখনও অ্যামাজন নিয়ে গেছে তাঁদের ডেরায়। তবে হেটমায়ার আর রাদারফোর্ডের ক্যামিওতে শেষ ৬ ওভারে ৩৮ রান প্রয়োজন হয় স্বাগতিকদের। কিন্তু এই দুইজনকে আউট করে রংপুরকে দারুণ ভাবে ম্যাচে ফেরান খালেদ আহমেদ।
এমনকি ম্যাচের ক্রুশাল সময়ে আরো দুই উইকেট নিয়ে ৪ উইকেট পূরণ করেন খালেদ। আর তাবরাইজ শামসি ও ওমাজাইয়ের শিকার ৩টি। সেই সঙ্গে গ্লাভস হাতে উইকেটের পেছনে অসাধারণ নুরুল হাসান সোহান ছিলেন দুর্দান্ত। ৩ টি ক্যাচ ও ১টি স্টাম্পিং করে রংপুরকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন দারুণভাবে। ম্যাচ শেষ ওভারে গড়ালেও শেষমেশ গায়ানাকে অলআউট করে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের শুরুটা হলো জয় দিয়েই।
ভেন্যু সেই পাল্লেকেলে। এবং যথারীতি হতাশার গল্প। ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচের ব্যাটিং ব্যর্থতাই সংক্রমিত হয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে। টি-টোয়েন্টিতে এখন দুইশ স্কোর হরহামেশায় হচ্ছে। সেখানে প্রথমে ব্যাট করে ১৫৪/৪ স্কোর মোটেও যথেষ্ট নয়, তা জেনে গেছে লিটনের দল স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার ওপেনিং পার্টনারশিপের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটে হেরে। উইকেটের ব্যবধানে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের বড় জয় ছিল দুটি, ৬ উইকেটে। ২০১৭ সালে ১৫৬ রান তাড়া করে পাল্লেকেলেতে, ২০১৮ সালে ১৯৪ রান তাড়া করে মিরপুরে।
টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং রসায়নটা আদৌ কতোটা রপ্ত করতে পেরেছে বাংলাদেশ ব্যাটাররা, সেটাই প্রশ্ন। ১২০ টি বৈধ ডেলিভারি ফেস করতে এসে ৩৯টি ডট। তা না হয় মেনে নিলেন। কিন্তু পুরো ইনিংসের অবশিষ্ঠ ৮১ বলের মধ্যে ১২টি বাউন্ডারির পাশে ৪টি ছক্কা! চার-ছক্কার ধুন্দুমার ফরম্যাটের খেলায় এই সংখ্যাটা নেহায়েতই অসামঞ্জম্যপূর্ণ। ইনিংসের মাঝপথে একবার ২৭ বল, অন্যবার ২৮ বল বিরতি দিয়ে বাউন্ডারি মারতে পেরেছে। দৃষ্টিকটু এই পরিসংখ্যানটাও আনতে হচ্ছে সামনে।
ব্যবধানটা হয়েছে এখানেই। বাংলাদেশের চেয়ে একটি বেশি বল ডট (৪০টি) করেছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের সমান ১২টি বাউন্ডারি ছিল তাদের ইনিংসে। তবে ৬ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয়ে সহায়ক হয়েছে জয়সুরিয়ার শিষ্যদের ছক্কার প্রদর্শনী। বাংলাদেশ যেখানে মারতে পেরেছে ইনিংসে ৪টি ছক্কা, সেখানে শ্রীলঙ্কা মেরেছে ১২টি ছক্কা!
১৩ মাস ৩ দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে যে প্রতিপক্ষকে ২ উইকেটে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় করে দিয়েছে বাংলাদেশ, সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিরতি টি-২০তে বাংলাদেশ ব্যাটারদের ব্যাটিং ছিল বড্ড বেমানান। ওভারপ্রতি ৭.৭০ হারে বাংলাদেশের স্কোর ১৫৪/৫।
টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে তানজিদ হাসান তামিম-পারভেজ ইমনের ব্যাট ঠিকই কথা বলেছে। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে ৫৪/১ স্কোরকে সন্তোষজনক মনে হয়েছে। তবে ইনিংসের মাঝের ৯ ওভারের (৭ম থেকে ১৫তম) ব্যাটিংটা হয়েছে ওয়ানডে মেজাজে। দ্বিতীয় পাওয়ার প্লে'র ওই ৫৪ বলে ৫৪'র বেশি রান ওঠেনি। হারাতে হয়েছে ওই সময়ে ৩ উইকেট। শেষ ৩০ বলকেও শ্লগে পরিণত করতে পারেনি বাংলাদেশ। ওই ৩০ বলে অধিনায়ক মিরাজকে হারিয়ে বাংলাদেশ যোগ করতে পেরেছে ৪৬ রান।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলে চামিকা করুণারত্নেকে মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে পারভেজ হোসেন ইমন দিয়েছিলেন বড় স্কোরেরর আভাস। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বিনুরু ফার্নান্দোকে ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কায় পাল্লেকেলে ভর্তি দর্শকদের হতভম্ব করেছেন তিনি। থিকসানাকে এক ওভারে ৩টি বাউন্ডারিতে এই ফরম্যাটের যথার্থ ব্যাটার হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তবে তুষারার লো ফুলটসে পার্টনার তানজিদ হাসান তামিম মিড উইকেটে ক্যাচ দিলে (১৭ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৬) পারভেজ ইমনের ব্যাটিংয়ে ছন্দপতন হয়। ৩০ বলে ৪৬ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ থামার পর রানের গতি হয়ে পড়ে শ্লো। জেফরির বলে সুইপ করতে যেয়ে অধিনায়ক লিটন এলবিডাব্লুউতে কাটা পড়েন মাত্র ৬ রানে (১১ বল)। পরের ওভারে থিকসানাকে ডাউন দ্য উইকেটে ছক্কা মারতে চেয়ে লং অনে দিয়েছেন ক্যাচ (২২ বলে ৫ চার, ১ ছক্কায় ৩৮)। হৃদয় জিততে পারেননি তাওহিদ। সানাকার গুড লেন্থ বল খেলতে যেয়ে উইকেটের পেছনে দিয়েছেন ক্যাচ (১৩ বলে ১০)।
১১ মাস পর টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফেরা অপরাজিত থেকেছেন নাঈম শেখ। চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে রানের জন্য ধুঁকতে থাকা নাঈম শেখ জেফরিকে দর্শণীয় সুইপ শটে ছক্কা মেরে পেয়েছেন স্পন্দন। তবে স্লগে হাসেনি তার ব্যাট। ফলে ২৯ বলে ১ বাউন্ডারি, ১ ছক্কায় ৩২ রানের হার না মানা ইনিংসে তৃপ্ত হওয়ার কথা নয় তার।
এদিন মিরাজ শুরু করেছিলেন দারুণ। সানাকার পর পর দুটি শর্ট বলে হুক, পুল শটে বাউন্ডারি মেরে পেয়েছেন ছন্দ। ১৯তম ওভারে থিকসানাকে এক্সট্রা কভারর দিয়ে বাউন্ডারি মারতে যেয়ে ক্যাচ দিয়ে এসেছেন ফিরে (২৩ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৯)। শামীম পাটোয়ারী মাত্র ৫টি ডেলিভারি ফেস করতে পেরেছেন। ওই ৫টি ডেলিভারির মধ্যে থিকসানা এবং তুষারাকে মেরেছেন একটি করে ছক্কা। ৫ বলে ২৮০.০০ স্ট্রাইক রেটে ওই ১৪টি মূল্যবান রান না আসলে বাংলাদেশের স্কোর দেড়শ স্পর্শ করতো না।
বাংলাদেশের ইনিংসে সফল ছিলেন অফ স্পিনার থিকসানা (২/৩৭)। তবে মিডিয়াম পেসার সানাকা (১/২২) ছিলেন মিতব্যয়ী বোলার।
শ্রীলঙ্কাকে ১৫৫ রানের চ্যালেঞ্জ দিয়ে বাংলাদেশের পেস বোলারদের যে গর্জনের প্রত্যাশা ছিল, তা দেখেনি এদিন বাংলাদেশ সমর্থকরা। ১৪ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাটা সুখকর হয়নি পেস বোলার সাইফউদ্দিনের। ১ ওভারের প্র্র্রথম স্পেলে তার খরচা ১৪ রান। তাসকিন প্রথম ২ ওভারের স্পেলে খরচ করেছেন উইকেটহীন ৩৪ রান। দলের তৃতীয় পেসার তানজিম হাসান সাকিবও প্রথম স্পেলে খেয়েছেন মার (১-০-১৫-০)। তাদের অমিতব্যয়ী বোলিংয়ে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে শ্রীলঙ্কার স্কোর উঠেছে ৮৩/১।
জয়ের জন্য ১৫৫ রানের লক্ষ্যটা সহজ করেছেন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা-কুশল মেন্ডিজ। এই সফরের শুরু থেকে ইনফর্ম এই দুই লঙ্কান ওপেনার ২৮ বলে ৭৮ রান যোগ করে দলের বড় জয়ের পথ করেছেন প্রশস্ত। ফিফটি পেয়েছেন কুশল মেন্ডিজ। ১৮তম ওভারে সাইফউদ্দিনের বলে শর্ট এক্সট্রা কভারে শামীমের দারুণ ফ্লাইং ক্যাচে বন্দি হওয়ার আগে করেছেন ৫১ বলে ৫ চার, ৩ ছক্কায় ৭৩। তার এই ক্যাপ্টন নক-ই গড়ে দিয়েছে দু'দলের মধ্যে ব্যবধান।
ফিফটি পেতে পারতেন পাথুম নিশাঙ্কাও। মিরাজকে ওয়েলকাম ছক্কা মেরে, ওই ওভারের পথম তিন বলে ২ ছক্কায় সে আভাসই দিয়েছিলেন পাথুম। তবে মিরাজের সেই ওভারের চতুর্থ বলে একই শট নিতে যেয়ে দিয়ে এসেছেন লং অফে ক্যাচ (১৬ বলে ৫ চার, ৩ ছক্কায় ৪২)।
এই ম্যাচে লেগ স্পিনার রিশাদ করেছেন দারুণ বোলিং। কুশল পেরেরাকে (২৫ বলে ২৪) উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করা রিশাদের বোলিং স্পেলটা (৪-০-২৪-১) ছিল দারুন। অফ স্পিনার মিরাজ প্রথম ওভারে মার খেয়ে (১৪ রান খরচ)ও পরের তিন ওভারে দারুণভাবে ফিরেছেন। শেষ ৩ ওভারে তার খরচা মাত্র ১০ রান। তবে তাসকিন এই ম্যাচে হতাশ করেছেন (৩-০-৪৩-০)।
জিম্বাবুয়ের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় টেস্ট শেষ হয়ে গেছে দুই দিন হয়েছে। তবে এখনও আলোচনা চলছে ভিয়ান মুল্ডারের এক সিদ্ধান্ত নিয়ে, যেখানে সুযোগ পেয়েও তিনি টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোর নিজের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেননি। দক্ষিণ আফ্রিকা অলরাউন্ডার এর পেছনে তুলে ধরেন রেকর্ডটির মালিক ব্রায়ান লারার প্রতি শ্রদ্ধার কথা, যা একেবারেই ভালো লাগেনি ক্রিস গেইলের। সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা বরং সমালোচনা করে বলেছেন, এমন সুযোগ মুল্ডার আর কখনই হয়ত পাবেন না।
চলতি সপ্তাহে জিম্বাবুয়ের সাথে ক্যারিয়ারের ২১তম টেস্ট খেলতে নামা মুল্ডার ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করে প্রথম দিন শেষে ২৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। পরদিন হাশিম আমলাকে পেছনে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর নিজের করে নেন ট্রিপল সেঞ্চুরিতে। ৩৩৪ বলে ৪৯টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকে ভালোভাবেই ছিলেন লারার করা ৪০০ রানের রেকর্ড ভাঙার পথে। তবে বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে ওই স্কোরেই ইনিংস ঘোষণা করে দেন মুল্ডার, যা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ক্রিকেট বিশ্ব।
আরও পড়ুন
৪ বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরছেন আর্চার |
![]() |
টকস্পোর্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সরাসরি মুল্ডারের ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন গেইল।
“এমন একটা সুযোগ জীবনে একবারই আসে। সে সেটাই পেয়েছিল। সে হয়তো ঘাবড়ে গিয়েছিল, তাই ঠিক কী করা উচিত ওই অবস্থায়, সেটা বুঝতে পারেনি। আমি যদি ৪০০ রানের কাছাকাছি যেতে পারতাম, আমি রেকর্ড নিজের করেই মাঠ ছাড়তাম। আবার কবে ৪০০ রান করার সুযোগ পাবেন, সেটা কিন্তু আপনি জানেন না।”
সেই ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লারা করেন অপরাজিত ৪০০ রান, যা আজও রয়ে গেছে টেস্টের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর। মুল্ডারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকেই হতাশ ম্যাচের প্রেক্ষাপটের কারণে। মাত্র চলছিল দ্বিতীয় দিন, বিশাল লিড হয়ে গেছে। ফলে তিন দিন হাতে রেখে অনায়াসেই জয় ধরা দিত তিনি লারার রেকর্ডের পেছনে ছুটলেও।
আরও পড়ুন
ইতিহাস গড়া ইনিংসের পর ব্যাটিং-অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে বড় লাফ মুল্ডারের |
![]() |
মুল্ডার অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই লারার রেকর্ডের প্রতি সম্মান জানিয়ে ৩৬৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছেন। গেইলের কাছে অবশ্য এটি যৌক্তিক নয়।
“আপনি যখন ৩৬৭ রানে অপরাজিত আছেন, তখন আপনাকে চেষ্টা করতেই হবে ৪০০ করার। আপনি যদি কিংবদন্তি হতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই রেকর্ডের পেছনে ছুটতে হবে।”
অনেকেই মনে করেন, প্রতিপক্ষ দুর্বল জিম্বাবুয়ে বলেই হয়ত মুল্ডার রেকর্ডটা নিজের দখলে নিতে চাননি। তবে টেস্ট ক্রিকেটে একটি ট্রিপল সেঞ্চুরি করা গেইলের কাছে এটিও খোঁড়া যুক্তি।
“সে বড় ধরনের ভুল করেছে। এমন একটা সুযোগ কিন্তু বারবার আসে না। আপনি জানেন না যে, শেষ পর্যন্ত ৪০০ করতে পারতেন কিনা। কিন্তু ৩৬৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়া… এটা একেবারে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। আর টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিপক্ষ বড় কথা না। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও কিন্তু আপনি এক রান করতে হিমশিম খেতে পারেন। এটা টেস্ট ক্রিকেট, এখানে সেঞ্চুরি, ডাবল, ট্রিপল সেঞ্চুরি বা ৪০০ রান - সবই সমান গুরুত্বপূর্ণ।”
৬ দিন আগে
৭ দিন আগে
৭ দিন আগে
১৮ দিন আগে
১৮ দিন আগে
২১ দিন আগে
২১ দিন আগে
২৮ দিন আগে