প্রথম তিন দিন যেভাবে দাপট দেখিয়েছেন ব্যাটাররা, তাতে শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল লিডের দিকেই। তবে বাঁধ সাধলেন নাঈম হাসান। তরুণ এই স্পিনারের ফাইফারে শক্ত অবস্থানে থেকেও পাঁচশ ছোঁয়া হলো না স্বাগতিকদের। ক্রমেই স্পিন ধরা উইকেটে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে কিছুটা চ্যালেঞ্জ থাকলেও শাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটিতে লিডটা বেশ বাড়িয়ে নিল বাংলাদেশ।
গল টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ১৭৭ রান, লিড ১৮৭ রানের। এর আগে শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে করতে পারে ৪৮৫ রান।
শ্রীলঙ্কা এই স্কোরে গুটিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় অবদান রেখেছেন নাঈম। ক্যারিয়ারের এর আগে কখনই বিদেশের মাটিতে পাঁচ উইকেট না পাওয়া এই অফ স্পিনার দিনের শুরু থেকেই পেয়েছেন টার্ন। সাথে নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেন্থ বজায় রেখে ব্যাটারদের চাপে রেখেছেন একপ্রান্ত থেকে। আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলাম অবশ্য সেভাবে কাজে লাগাতে পারেননি টার্ন।
এদিন নাঈমের প্রথম উইকেটে অবশ্য কৃতিত্ব বেশি পাবেন লিটন দাসই। লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারি ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ব্যাট ছুঁয়ে চোখের পলকেই চলে যায় তার গ্লাভসে। এরপর কুসাল মেন্ডিসের উইকেটেও দেখান কিপিংয়ের মুন্সিয়ানা।
হাসান মাহমুদের লেগ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়েছিলেন কুসাল, কানায় লেগে তার লেগ সাইড দিয়ে ছিল বাউন্ডারি হওয়ার পথেই। তবে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে দুর্দান্ত এক ক্যাচে তাকে বিদায় করেন লিটন।
এরপর বাংলাদেশের বোলারদের চাপে ফেলে সপ্তম উইকেটে ৮৪ রান যোগ করেন কামিন্দু মেন্দিস ও মিলান রত্নেয়েকে মিলে। ইনিংসে চমৎকার বল করা হাসান শেষ পর্যন্ত ভাঙেন এই জুটি, ৩৯ রানে রত্নেয়েকেকে বোল্ড করে।
এরপর বড় উইকেটটা পান নাঈম। সেঞ্চুরির পথে থাকা কামিন্দু (৮৭ রান) উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান তিনি। ১৫ রানে শেষ চার উইকেট হারিয়ে ৪৮৫ তেই থামে শ্রীলঙ্কার ইনিংস। ১২১ রানে ৫ উইকেট নেন নাঈম।
প্রথম ইনিংসের মত দ্বিতীয় ইনিংসেও দলকে হতাশ করেন এনামুল হক বিজয়। অভিজ্ঞ এই ওপেনার শুরু থেকেই ছিলতা জড়তাগ্রস্ত। প্রবাথ জয়াসুরিয়ার বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে করেন মাত্র ৪ রান। তবে আরেক ওপেনার শাদমান চাপ সরান ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে।
তবে এবারও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি মুমিনুল হক। অভিজ্ঞ এই ওপেনার সুইপ করতে গিয়ে ফেরেন ১৯ রানে। লিড বেশ না হওয়ায় টার্নিং উইকেটে বাংলাদেশের সামনে তখন বিপদের শঙ্গা ছিলই কিছুটা।
তবে সাবলীল ব্যাটিংয়ে সেটা সামাল দেন শাদমান ও শান্ত মিলেন। ফিফটি পারে সেঞ্চুরির পথে থাকা শাদমানকে থামতে হয় ৭৬ রানে। তবে মিলান রত্নানেয়েকের প্রথম শিকার হওয়ার আগে শান্তর সাথে যোগ করেন গুরুত্বপূর্ণ ৬৮ রান।
প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ায়ন শান্ত (৫৬*) ও মুশফিকুর রহিম (২২) মিলে অনায়াসেই পার করেন দিনের বাকি অংশ। পঞ্চম দিনে ম্যাচের ফলাফল কোন দিকে যাবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে এই জুটির ওপর।
১৯ জুন ২০২৫, ৬:৪৭ পিএম
গল টেস্টে চতুর্থ দিন বাংলাদেশ দলকে যেমনটা দেখতে চেয়েছেন সমর্থকরা, তেমনটাই দেখতে পেরেছেন। তৃতীয় দিন শেষে ৩৬৪/৪ স্কোর নিয়ে লিডের স্বপ্ন দেখেছে শ্রীলঙ্কা। অফ স্পিনার নাঈম হাসানের ভয়ংকর এক স্পেলে (৩.৩-০-৫-৩) সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ১০ রানের লিড নিয়ে দিনের শেষ দুই সেশন নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেয়ার পরীক্ষাটা ভালই দিয়েছে বাংলাদেশ টপ ও মিডল অর্ডাররা। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ান শান্ত ৫৬ এবং মুশফিক২২ রানে আছেন অবিচ্ছিন্ন। প্রথম ইনিংসে ২৬৪ রানের পার্টনারশিপে উদ্বুদ্ধ এই জুটি ইতোমধ্যে যোগ করেছেন ৪৯ রান। চতুর্থ দিন শেষে ১৮৭ রানের লিড নিয়ে গল টেস্টের চিত্রনাট্য তৈরি করেছে বাংলাদেশ।
অলৌকিক কোনো দুর্ঘটনা না হলে ড্র'র দিকে ধাবিত এখন টেস্টটি।
২০১৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে চট্টগ্রামের ছেলে নিজের হোম গ্রাউন্ডে টেস্ট অভিষেকে করেছিলেন দারুণ কৃতি। টেস্ট অভিষেকে চেনা মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পেয়েছিলেন ৫ উইকেট (৫/৬১)। ২০২০সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ও ৫ উইকেটের (৫/৮২) কৃতি আছে তার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের হোম গ্রাউন্ড চট্টগ্রামে ২০২২ সালে করেছেন ক্যারিয়ারসেরা বোলিং (৬/১০৬)। অথচ, টেস্ট দলে তাইজুল-মিরাজ অপরিহার্য, ব্রাত্য সেখানে নাঈম হাসান। ৭ বছরে টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১৩টি। বিদেশের মাটিতে এর আগে একবারই কেবল সুযোগ পেয়েছেন, ২০১৯ সালে কনকাশন সাব হিসেবে পিঙ্ক বলের টেস্টে খেলার সেই সুযোগ পেলেও বল হাতে নিতে পারেননি।
অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ইনজুরিতে না পড়লে গল টেস্টে নাঈম হাসানের একাদশে থাকার সম্ভাবনা ছিল না। সেই ব্যাক আপ অফ স্পিনারই অসাধ্য সাধন করেছেন। বিদেশের মাটিতে এই প্রথম টেস্টে বল হাতে নিয়ে দেখেছেন ইনিংসে ৫ উইকেটের মুখ। চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে ৯৭ রান যোগ করে শ্রীলঙ্কা যখন লিডের সম্ভাবনা দেখেছে, তখনই নাঈম হাসান সে সম্ভাবনা নাস্যাৎ করে দিয়েছেন। লাঞ্চ ব্রেকের পর মাত্র ২০ রানে শ্রীলঙ্কার শেষ ৪ উইকেট গেছে উড়ে, সেই ৪টি উইকেটের ৩টিই নাঈমের। লাঞ্চের পর চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে সেঞ্চুরির পথে পাঁ বাড়ানো কামিন্দু মেন্ডিজকে মিডল এন্ড অফ স্ট্যাম্পে পিচিং ডেলিভারিতে ফ্লিক শটের ফাঁদে ফেলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন। ৮৭ রানে কামিন্দুকে থামিয়ে দিয়ে ৮৪ রানের পার্টনারশিপ ভেঙ্গে ওই ওভারের শেষ বলে কুইকারে বোল্ড করেছেন থারিন্দু রত্নায়েককে (০)। নিজের এক ওভার বিরতি দিয়ে টেল এন্ডার আসিথা ফার্নান্ডোকে (৪) রিভার্স সুইপের পাতা ফাঁদ ফেলে বোল্ড করেছেন।
তৃতীয় দিন নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কা ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলে চতুর্থ দিন পূর্ণ করেছেন ক্যারিয়ারের ৪র্থ ৫ উইকেট (৪৩.২-৪-১২১-৫)। পেসার হাসান মাহমুদ চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনের গর্জনে পেয়েছেন ২ উইকেট। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (১৯) এবং কুশল মেন্ডিজকে (৫) ফিরিয়ে দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। যে দুটি উইকেটের ভাগীদার উইকেট কিপার লিটন। দুটি ক্যাচই নিয়েছেন লিটন বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে! নাঈম হাসানের ৫ উইকেটের পাশে (৫/১২১) হাসান মাহমুদের ৩ উইকেট (৩/৭৪)। তাতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয়বারের মতো প্রথম ইনিংসে লিড নিতে পেরেছে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে যে ব্যাটাররা ছিলেন অফ ফর্মে, দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের দিকে চোখ ছিল সবার। কিন্তু ওপেনার বিজয় জানিয়ে দিলেন তিনি টেস্ট খেলতে ইচ্ছুক নন। টেস্টে ১ যুগে মাত্র ৭ টেস্ট খেলার সুযোগ নিয়ে এতোদিন নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজমেন্টের উপর বিরক্তিবোধ এখন আর প্রকাশ করার উপায় নেই তার। গল-এ ব্যাটিং স্বর্গে প্রথম ইনিংসে ০'র পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ রানে থেমেছেন। প্রবথ জয়সুরিয়ার আউটসাইড অফ-এ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ। মুমিনুল থেমেছেন ১৪ রানে, থারিন্দুর বলে সুইপ করতে যেয়ে ব্যাট হয়ে হেলমেটে বল লেগে দিক পরিবর্তন করে শর্ট পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসের হতাশা কাটিয়ে সেঞ্চুরির পথে ছিলেন সাদমান। তবে ৬ষ্ঠ ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে পূর্ণ করতে পারেননি এই ওপেনার। শ্রীলংকা পেসার মিলান রত্নায়েকের বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে ব্যাক প্যাডে লেগেছে বলের আঘাত, এলবিডাব্লুউতে থেমেছেন সাদমান ৭৬ রানে। ১২৬ বলের মোকাবেলায় ৭টি বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি এই ইনিংসে।
চতুর্থ দিনে পিচে বল পড়ে খানিকটা নিচু বাউন্স হয়েছে। আনইভেন বাউন্সও দেখা গেছে। ৫ম দিনে স্পিনাররা ছড়াতে পারে আতঙ্ক, তেমন পূর্বাভাসই পাওয়া যাচ্ছে। তবে চতুর্থ ইনিংসে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জের আগে তৃতীয় ইনিংসে নিজেদের ব্যাটিংয়ের দিকে মনোনিবেশ করাটাই উত্তম। পঞ্চম দিনটি হোক আরও উজ্জ্বল। উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরির কৃতি গড়ুক শান্ত-মুশফিক। গল টেস্টের শেষ দিনে সেদিকেই তাকিয়ে এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে চোট নিয়ে খেলেছেন গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। সেই মঞ্চে শেষ হাসি হাসা টেম্বা বাভুমাকে আপাতত অবশ্য থাকতে হবে মাঠের বাইরেই। চোটের কারণে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার আসছে দুই টেস্টের সিরিজ থেকে ছিটকে গেছেন অধিনায়ক বাভুমা।
ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তার পরিবর্তে এই সিরিজে দলের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞ স্পিনার কেশভ মহারাজ।
বাভুমাহীন স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন ৫ নতুন মুখ। এই সিরিজে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়কেও। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে সেঞ্চুরিয়ান এইডেন মার্করাম ও অভিজ্ঞ পেসার কাগিসো রাবাদা। আর প্রথম টেস্ট না খেললেও দ্বিতীয় ম্যাচে দলে থাকবেন ফাস্ট বোলার লুংগি এনগিডি।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে দ্বিতীয় ইনিংসে রান তাড়ায় ইনিংসের শুরুতে এক রান নিতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ে বাভুমার। কয়েক দফায় মাঠেই চিকিৎসা নেওয়ার পর চালিয়ে যান অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। খুঁড়িয়ে খুড়িয়েই দলকে জেতানোর পথে খেলেন ৬৬ রানের দারুণ এক ইনিংস। ম্যাচ শেষে তিনি জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শ অমান্য করে দলের প্রয়োজনে মাঠে থাকতে চেয়েছিলেন।
তবে সেই চোট থেকে এখনও সুস্থ না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ এবার মানতেই হচ্ছে বাভুমাকে। ফলে থাকতে হবে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। আগামী শনিবার থেকে শুরু হবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের টেস্ট সিরিজ।
দক্ষিণ আফ্রিকা স্কোয়াড: ডেভিড বেডিংহ্যাম, ম্যাথু ব্রিটজকে, ডিওয়াল্ড ব্রেভিস, করবিন বোশ, টনি ডি জর্জি, জুবায়ের হামজা, কেশভ মহারাজ (অধিনায়ক), কোয়েনা মাফাকা, উইয়ান মুল্ডার, লুহান্দ্রে প্রিটোরিয়াস, লেসেগো সেনোকোয়ানে, প্রেনেলান সুব্রায়েন, কাইল ভেরেন, কডি ইউসুফ, লুংগি এনগিডি (শুধুমাত্র দ্বিতীয় টেস্ট)।
খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার আগেই নাম লিখিয়েছিলেন কোচিংয়ে। সেই ধারায় সাবেক অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইন তার কোচিং ক্যারিয়ারে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। চলতি বছরের পরের অংশে তিনটি সিরিজে অস্ট্রেলিয়া 'এ' দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।
পেইন বর্তমান বিগ ব্যাশ লিগে অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এবার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) তাকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি অস্ট্রেলিয়া ছেলেদের 'এ' দলের পাশাপাশি নারী দলের সাপোর্ট স্টাফ হিসেবেও কাজ করবেন। সাথে চালিয়ে যাবেন অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের কোচিংয়ের দায়িত্বও চালিয়ে।
আগামী জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে শ্রীলঙ্কা 'এ' দলের বিপক্ষে তিনটি ৫০ ওভারের ম্যাচ এবং দুটি চার দিনের ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দল। এই সিরিজ দিয়েই প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব শুরু করবেন পেইন।
এরপর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ভারত সফরে সাদা ও লাল বলের সিরিজে দায়িত্ব সামলাবেন তিনি। এরপর অক্টোবরের শেষের দিকে ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিপক্ষে একটি চার দিনের ম্যাচেও পেইন অস্ট্রেলিয়ার ‘এ’ দলের কোচ হিসেবে থাকবেন।
কোচিং ক্যারিয়ার ছোট হলেও এরই মধ্যে তা বেশ সমৃদ্ধই পেইনের। ২০২৩ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠের অল ফরম্যাট সিরিজে অ্যাডাম ভোগেসের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেন তিনি।
আরও রয়েছে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে সিরিজে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কোচ লকলান স্টিভেন্সের সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা। এছাড়াও গত বছর ভারত জাতীয় দলের বিপক্ষে প্রাইম মিনিস্টার একাদশের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পেইন।
২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন পেইন। আর ২০২৩ সালে অবসর নেন সব ধরণের ক্রিকেট থেকে। এরপর থেকে সক্রিয় আছেন কোচিংয়ে।
লম্বা সময় ধরে ব্যাটে নেই রানের দেখা। অভিজ্ঞতার বিচারে তবুও বারবার দলে ধরে রাখছিলেন জায়গা। শেষ পর্যন্ত খেলেছেন ওপেনার হিসেবেও। তাতেও আর শেষ রক্ষা হলো না মার্নাস লাবুশেনের। ফর্মহীনতার কারণে ডানহাতি এই ব্যাটারকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রথম টেস্টে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া পাবে না আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার স্টিভেন স্মিথকেও। চোটের কারণে খেলতে পারবেন না এই তারকা ব্যাটার। তাদের দুজনের জায়গায় প্রথম ম্যাচের দলে এসেছেন স্যাম কনস্টাস ও জশ ইংলিশ।
বার্বাডোজে আগামী ২৫ জুন শুরু হবে প্রথম টেস্ট। তার পাঁচদিন আগেই এই ঘোষণা এসেছে, যা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপে বড় পরিবর্তনেরই আভাস দিচ্ছে। সবশেষ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা ব্যাটিং অর্ডারে আসতে যাচ্ছে রদবদল।
সেই ফাইনালে অনেকটা সময় ধরেই রানের জন্য ধুঁকতে থাকা লাবুশেনকে দলে রাখা নিয়ে ছিল প্রশ্ন। তবে শেষ অবধি টিকে যান ওপেনার হিসেবে। তবে সেই ভূমিকাতেও ছন্দ ফিরে পাননি তিনি। দুই ইনিংসে করেন ১৭ ও ২২ রান। লাল বলের ক্রিকেটে গেল দুই বছর ধরেই ফর্মহীনতার মধ্যে আছেন তিনি, যা তাকে এবার দল থেকেই ছিটকে দিয়েছে।
আর স্মিথ সেই ফাইনালের তৃতীয় দিন স্লিপে টেম্বা বাভুমার একটি ক্যাচ ধরতে গিয়ে ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে আঘাত পান। সার্জারির প্রয়োজন না হলেও তাকে অন্তত ৮ সপ্তাহের জন্য স্প্লিন্ট পরতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকরা আশাবাদী, টেস্ট সিরিজের পরবর্তী অংশে তিনি দলে ফিরতে পারবেন।
লাবুশেন বাদ পড়ায় ওপেনার হিসেবে আবার দলে ফিরছেন কনস্টাস। এই ফরম্যাটে তার অভিজ্ঞতা ভারতের বিপক্ষে দুটি টেস্টে, যার প্রথমটিই ছিল তার অভিষেক। আর শুরুটা করেন ৬৫ বলে ৬০ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস দিয়ে। এরপর আর মাঠে নামা হয়নি তার।
আর মিডল স্মিথের পজিশনে চারে খেলবেন ইংলিস। কিপার-ব্যাটার হলেও এই টেস্টে তাকে দেখা যাবে স্পেশালিষ্ট ব্যাটার হিসেবেই। চলতি বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে টেস্ট অভিষেকেই করেন সেঞ্চুরি। এবার চোট সমস্যার জন্য নিজেকে প্রমাণের আরেকটি সুযোগ পাচ্ছেন ইংলিস।
খেলা যতোই গড়িয়েছে, ততোই ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি হয়ে উঠেছে গল-এর উইকেট। তৃতীয় দিনের শেষ বেলাতেও উইকেটে ধরেনি ফাটল। স্লো উইকেটের ফাঁদেও পড়তে হয়নি ব্যাটারদের। বল পিচ করে আনইভেন বাউন্স হয়েছে, এমনটাও যায়নি দেখা। যেমনটা চেয়েছেন, সেভাবেই বল এসেছে ব্যাটে। এমন সুন্দর পিচ বোলারদের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। শান্ত-মুশফিকুরের জোড়া সেঞ্চুরির ইনিংসে ৪৯৫-কে অনেক মনে করেছেন যারা, তারাই এখন দেখছেন স্বাগতিক দলের লিড নেয়ার পূর্বাভাস। তৃতীয় দিন শেষে শ্রীলঙ্কার স্কোর ৩৬৮/৪ সে আভাসই দিচ্ছে। তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে ১২৭ রান। প্রথম ইনিংসে লিড নিতে তাই চতুর্থ দিনের শুরুটা তাই বাংলাদেশ বোলারদের কাছে এসিড টেস্ট।
টেস্ট ক্রিকেট এখন আর সংযমী ব্যাটিংয়ের পরীক্ষা নয়, বোলারদের উপর প্রতি আক্রমন করে স্ট্রাইক রেট বাড়িয়ে নেয়ারও খেলা। বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে সেই ফর্মুলাই বেছে নিয়েছেন লংকান ব্যাটাররা। তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ১ উইকেট হারিয়ে ১৩৩, শেষ সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রান তুলে প্রকারান্তরে তা জানিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ যেখানে ওভারপ্রতি ৩.২২ রান উঠিয়েছে স্কোরশিটে, সেখানে তৃতীয় দিন শেষে শ্রীলঙ্কার রান রেট ৩.৯৫।
চার বোলার নিয়ে একাদশ সাজানোটা যে ভুল ছিল, তা এদিন ভালই টের পেয়েছেন কোচ ফিল সিমন্স। অনবরত ১৪০ প্লাস কিলোমিটার গতিতে বল করে, শর্ট বলের ছড়াছড়ি দিয়ে বরং প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের স্বাচ্ছন্দে রান করার পথ প্রশস্ত করেছেন পেসার নাহিদ রানা। ওভারপ্রতি ৫.০০ রান খরচ করেছেন নাহিদ রানা। বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুলের বোলিং নির্বিষ করে দিয়েছে লঙ্কান ব্যাটাররা। লাহিরু উদানাকে শিকারের বিপরীতে তার খরচা ১২৬-কে একটু বেশিই খরুচে মনে হচ্ছে। অফ স্পিনার নাঈম হাসান প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ফাঁদে ফেলতে কম চেষ্টা করেননি। নিশাঙ্কাকে শর্ট ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে ফিরিয়ে দেয়ার সম্ভাবনাও তৈরি করে দিয়েছিলেন। তবে মুমিনুলের হাত থেকে ফসকে পড়েছে সেই ক্যাচ। যে পার্টনারশিপ থেমে যেতে পারতো ৩৪ রানে, ক্যাচ ড্রপে সেই পার্টনারশিপ থেমেছে ১৫৭-তে। ৩৬ রানের মাথায় জীবন ফিরে পাওয়া পাথুম নিশাঙ্কা ঘরের মাঠে প্রথম এবং ক্যারিয়ারসেরা ১৮৭ রানের ইনিংস দিয়েছেন উপহার। তবে নিশাঙ্কাকে শিকার করতে না পারলেও পাহাড় হয়ে দাঁড়ানো দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভেঙেছেন নাঈম হাসান। কুইকার ডেলিভারিতে লেগ স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি ৫৪ রানের মাথায়।
ফেয়ারওয়েল টেস্টে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে ৪ নম্বরে নেমে ম্যাথুউজ পেয়েছেন বাংলাদেশ দলের বোলার ফিল্ডারদের গার্ড অব অনার। তবে ফেয়ারওয়েল টেস্টের আবেগ ভালই স্পর্শ করেছে এই অলরাউন্ডারকে। অকেশনাল স্পিনার মুমিনুলের টার্নিং ডেলিভারিতে ফ্রন্টফুটে ডিফেন্স করতে যেয়ে উইসকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন ম্যাথুউজ। ৩৯ রানে থেমে গেছেন ম্যাথুউজ। দ্বিতীয় স্পেলের চতুর্থ বলে মুমিনুল দিয়েছেন ব্রেক থ্রু, ভেঙেছেন ৮৯ রানের পার্টনারশিপ।
দিনের সেরা ডেলিভারিটি অবশ্য দিয়েছেন হাসান মাহমুদ। দ্বিতীয় নতুন বল হাতে পেয়ে তৃতীয় ডেলিভারিতে বোকা বানিয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখা পাথুম নিশাঙ্কাকে। জোড়া পায়ে ডিফেন্স করতে চেয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। মিডল স্ট্যাম্পে আঘাত হেনেছে হাসান মাহমুদের অ্যাঙ্গেল ডেলিভারি। ৩৬ এবং ১৬৫ রানে বেঁচে যাওয়া পাথুম থেমেছেন ১৮৭ রানে। ২৫৬ বল মোকাবেলার যে ইনিংসে ২৩ টি বাউন্ডারির পাশে মেরেছেন ১টি ছক্কা।
গল টেস্টে ৫শ থেকে ৫ রান দূরে থেমেছে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। তৃতীয় দিন সকালে ১৬ বল টিকেছে বাংলাদেষের ইনিংস। যোগ করেছে ১১ রান। আসিথার বলে নাহিদ রানা উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলে বাংলাদেশ থেমেছে ৪৯৫-তে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে সফল বোলার আসিথা পেয়েছেন ৪ উইকেট (৪/৮৬)।
ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচে শ্রীলঙ্কার দুই পেসার মিলান রত্নায়েক (৩/৩৯)-আসিথা ফার্নান্দো (৪/৮৬) ছড়ি ঘুরিয়েছেন। এখন তার জবাব দেয়ার পালা বাংলাদেশের দুই পেসারের। দ্বিতীয় নতুন বলে তৃতীয় দিনের শেষ ৮ ওভার হয়েছে। এখনো নতুন চকচকে দেখাচ্ছে বলটা। চতুর্থ দিনের সকালে বলের সীম- সুইং কতোটা আদায় করতে পারে নাহিদ রানা-হাসান মাহমুদ, তার উপর নির্ভর করছে গল টেস্টের ভাগ্য।