২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৭:৩৯ পিএম
বল হাতে একজন পেসার তার সেরা সময়ে প্রতিপক্ষের ওপর ঠিক কতোটা ভীতি ছড়াতে পারেন, গত বছর জুড়ে সেটাই যেন বারবার দেখিয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। স্মরণীয় একটি বছর কাটানোর দারুণ এক স্বীকৃতিও পেয়ে গেলেন ভারতের এই তারকা বোলার। আইসিসির ‘মেনস ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার্স’ জিতে মর্যাদাপূর্ণ স্যার গারফিল্ড সোবার্স অ্যাওয়ার্ডে খেতাব জিতেছেন বুমরাহ।
মঙ্গলবার আইসিসি তাদের ওয়েবসাইটে এই ঘোষণা দেয়। সেরার এই লড়াইয়ে বুমরাহ পেছনে ফেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার ট্র্যাভিস হেড ও দুই ইংলিশ জো রুট এবং হ্যারি ব্রুককে।
সব মিলিয়ে ভারতের পঞ্চম খেলোয়ার হিসেবে এই সম্মান পেলেন বুমরাহ। তার আগে এটি পেয়েছেন রাহুল দ্রাবিড় (২০০৪), শচীন টেন্ডুলকার (২০১০), রবিচন্দন আশ্বিন (২০১)) এবং বিরাট কোহলি (বিরাট কোহলির পরে ভারত থেকে এই পুরষ্কারের পঞ্চম প্রাপক ( 2017, 2018)
এক বছরে যখন ক্রিকেট প্রায়শই ব্যাটারদের দিকে ঝুঁকেছিল, জাসপ্রিত বুমরাহ প্রমাণ করেছিলেন যে তিনি কেন সেরা একজন, যদি আধুনিক সময়ের ক্রিকেটের সেরা দ্রুত বোলার না হন।
সেরা ক্রিকেটার হওয়ার আগে আরেকটি পুরষ্কার জিতেছেন বুমরাহ। মাত্র ১৩ টেস্টে ৭১টি উইকেট নিয়ে আইসিসি মেনস টেস্ট ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন ডানহাতি এই পেসার। এবার গেলেন নতুন উচ্চতায়।
আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে বর্তমান এক নম্বর র্যাঙ্কড বোলার বুমরাহ। গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ চলাকালীন ইতিহাসের প্রথম পেসার হিসেবে ২০-এর কম গড়ে ২০০ উইকেট শিকার করেন বুমরাহ। ভারতীয়দের মধ্যে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন সবচেয়ে দ্রুততম বোলার হিসেবে।
দুর্দমনীয় এই পারফরম্যান্সের প্রভাব আইসিসি টেস্ট বোলিং র্যাঙ্কিংয়ে প্রতিফলিত হয়, যেখানে তিনি অর্জন করেছেন রেকর্ড ৯০৭ পয়েন্ট। ভারতের বোলারদের মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট নিয়ে বছর শেষ করার রেকর্ড।
সাদা বলের ক্রিকেটেও কম যাননি বুমরাহ। ২০২৪ সালে ১৭ বছর বাদে ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পথচলায় ভারতকে নেতৃত্ব দেন সামনে থেকে। মাত্র ৮.২৬ গড় ও ৪.১৭ ইকোনমি রেটে নেন ১৫ উইকেট। ফাইনালেও তিন উইকেট নিয়ে গড়ে দেন ব্যবধান। হন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও।
এরপর লাল বলের ক্রিকেটে গত বছরের শেষের দিকে বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ফের সেরা ছন্দে হাজির হন বুমরাহ। পাঁচ টেস্টে ৩২ উইকেট নিয়ে জেতেন সিরিজ সেরার খেতাব। ২০২৩-২৫ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে ৭৭ উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ, যা সবার চেয়ে বেশি।
৪ জুন ২০২৫, ১২:২৭ এম
সেই ২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম আসর থেকে খেলছেন একটা দলের হয়েই। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতি বিরাট কোহলির নিবেদন তাই সবার চেয়ে একটু আলাদাই। তবে অধিনায়ক ও ক্রিকেটার হিসেবে তার একটাই ছিল আক্ষেপ, দলটিকে যে জেতাতে পারেননি একটা শিরোপা। কয়েকবার হৃদয়ভঙ্গের যন্ত্রণায় পুড়েছেন, তবে হাল ছাড়েননি। অবশেষে ভাগ্য বিধাতা সহায় হয়েছেন ভারত তারকার। ১৮ বছরের অপেক্ষার অবসান হওয়ার পর কোহলি তাই বলেই বসলেন, এমন একটা দিন আসবে, সেই আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
পাঞ্জাবের বিপক্ষে মঙ্গলবারের ফাইনালের শেষ বলে ছক্কা হজম করেও ৬ রানে জয় পায় ব্যাঙ্গালুরু। পুরো দলের উল্লাসের মাঝেও ক্যামেরা সবার আগে খুঁজে নেয় কোহলিকে, যিনি চোখের জল আর সামলে রাখতে পারেননি। আর পারবেনই বা কীভাবে, তার প্রানের সাথে মিশে যাওয়া এই ফ্র্যাঞ্চাইজির কোটি ভক্তদের একটা শিরোপা দেওয়ার জন্য সম্ভাব্য সব চেষ্টাই যে বছরের পর বছর চালিয়ে গেছেন তিনি। অধিনায়কত্ব করেছেন, আবার ছেড়েছেন দলের জন্যই। বেশি বেতনের হাতছানি থাকলেও থেকে গেছেন এক ফ্র্যাঞ্চাইজিতেই।
সেই ব্যাঙ্গালুরুর প্রথম আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষণে আবেগঘন কোহলি জানালেন উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া। “এই জয়টা যতটা দলের জন্য, ঠিক ততটাই আমাদের সমর্থকদের জন্য। এই দিনটা দেখার জন্য আমাদের ১৮টা বছর লেগে গেল। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য দিয়েছি আমি আমার তারুণ্য, আমার ক্যারিয়ারের সেরা সময়…সব কিছু উজাড় করে দিয়েছি। সত্যি বলতে, কখনো ভাবিনি এই দিনটা আসবে। শেষ বলটা হওয়ার সাথে সাথে তাই আবেগ ছুঁয়ে যায় আমাকে।”
এমন দিকে আবেগ কেবল কোহলিরই নয়, দলটির খেলোয়াড়, সমর্থক ছাড়া আরেকজনকেও প্রবলভাবে ছুঁয়ে যাওয়ারই কথা। তিনি এবি ডি ভিলিয়ার্স। ২০২১ সালে অবসর নেওয়ার আগে একটা লম্বা সময়ে ব্যাঙ্গালুরুর জার্সিতে খেলেছেন অতিমানবীয় সব ইনিংস, হয়েছেন ক্লাব কিংবদন্তি। ভক্তদের মাঝেও তার রয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। তবে তিনিও পারেননি দলকে চূড়ান্ত সাফল্য এনে দিতে। ফাইনালে হাজির ছিলেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান এই ব্যাটারও। ফাইনালের পর তাকে জড়িয়ে ধরেন কোহলি, নিয়ে যান মঞ্চেও।
দীর্ঘদিনের সতীর্থ ডি ভিলিয়ার্সের প্রতিও কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন কোহলি। “এবি এই দলের জন্য যা যা করেছে, সেটা অবিশ্বাস্য। ম্যাচের আগেও ওকে বলেছিলাম, জয় পেলে সেটা আমাদের মত হবে তোমারও। এখন পর্যন্ত সেই আমাদের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছে, অথচ অবসর নিয়েছে চার বছর আগে। তার আজ মঞ্চে আমাদের সাথেই থাকা উচিত ছিল।”
ব্যাঙ্গালুরুতে ২০০৮ সালে কোহলি যখন যোগ দেন, তখন তিনি ছিলেন তরুণ ক্রিকেটার, যিনি ছিলেন সম্ভাবনাময়। এরপর দুটি ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছেন ভারতের হয়ে, পেয়েছেন বিশ্বজুড়ে খ্যাতি। অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজির নজর তার দিকে থাকলেও ১৮টি বছরে একবারও দল পরিবর্তন করেননি তিনি।
নিজেদের ইতিহাস গড়ার দিনে ব্যাঙ্গালুরুর প্রতি চিরন্তন ভালোবাসা আরও একবার প্রকাশ করলেন কোহলির। “আমি সবসময় এই দলের প্রতি অনুগত থেকেছি। তবে হ্যাঁ, অনেক সময়ই মনে হয়েছে যে দল ছেড়ে দেই, কিন্তু সেটা আর করিনি। আমার হৃদয়ে স্থান ব্যাঙ্গালুরুর, আত্মায় মিশে আছে ব্যাঙ্গালুরু। যতদিন আইপিএল খেলব, ততদিন এই দলের হয়েই খেলব। আজ রাতে আমি শিশুদের মত ঘুমাব।”
আইপিএল জয়কে ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদাকে সবার ওপরেই রাখলেন সদ্য লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানানো কোহলি। “এই মুহূর্তটা আমার জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি। এরপরও এটি আমার কাছে টেস্ট ক্রিকেটের চেয়ে পাঁচ ধাপ নিচে থাকবে। যদি কেউ চূড়ান্ত সম্মান পেতে চায়, তাহলে বলব টেস্ট ক্রিকেট বেছে নাও।”
তিন তিনটি ফাইনালের হারের সাথে বছরের পর বছরের খালি হাতে ফেরার হতাশা সঙ্গী ছিল। সাথে ছিল প্রতিপক্ষ সব দলের সমর্থকদের হাসাহাসি। তবে এবার শিরোপা আমাদের - এই দাবিটা চলতি আইপিএলের একদম শুরু থেকেই জোড়াল করেছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। শিরোপার লড়াইয়ে ফর্মের তুঙ্গে থাকা পাঞ্জাব কিংসকে তাড়া ছুড়ে দিল লড়িয়ে এক টার্গেট। আসরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হতাশ করলেন শ্রেয়ায় আইয়ার। অন্যরা চেষ্টা করলেন বটে, তবে কাজের কাজটা আর কেউই করতে পারলেন না। শেষের দিকে শশাঙ্ক সিংয়ের ঝড় সামলে শেষ হাসি হাসল ব্যাঙ্গালুরুই। প্রথমবারর মত শিরোপা উঁচিয়ে ধরার গৌরব অর্জন করল ফ্যাঞ্চাইজিটি।
আহমেদাবাদের আইপিএলের ফাইনালে ব্যাঙ্গালুরু পেয়েছে ৬ রানের দুর্দান্ত এক জয়। আগের ব্যাটিং করে দলটি করেছিল ৯ উইকেটে ১৯০। জবাবে পাঞ্জাবের ইনিংস থেমেছে ৭ উইকেটে ১৮৪ রানে।
আহমেদাবাদে এবারের আইপিএলে সব ম্যাচেই রান হয়েছে প্রচুর। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে আগে ব্যাটিং মানেই ২০০ প্লাস স্কোর। সেটা মাথায় রেখে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করে ব্যাঙ্গালুরু। আর্শ্বদীপ সিংয়ের করা প্রথম ওভারে চার ও ছক্কা মেরে ফিল সল্ট। তবে পরের ওভারে কাইল জ্যামিসনের বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ১৩ রানের ইনিংসের।
এরপর পাওয়ার প্লের বাকিটা সামলান মায়াংক আগারওয়াল ও বিরাট কোহলি। তবে দুজনের কেউই পারেননি ইনিংস বড় করতে। প্রথমজন ২৪ রানে বিদায় নেওয়ার পর কিছুটা ধীরগতির ইনিংস খেলে কোহলি ৩৫ বলে মাত্র ৪৩ রান করে। তবে মাঝের দিকে সেটা চাপ হয়ে বসতে দেননি অধিনায়ক রজত পাতিদার।
২ চার ও ১ ছক্কায় তার ১৬ বলে ২৬ রানের ক্যামিওতে গতি পায় দলের ইনিংস। জ্যামিসনের করা ইনিংসের ১৭তম ওভারে দুইশ স্কোরের সুবাস পায় ব্যাঙ্গালুরু। খরুচে এক ওভারে উইকেট পেলেও ২১ রান গুনেন নিউজিল্যান্ডের এই পেসার। মাত্র ১০ বলে ২৪ আসে জিতেশ শর্মার ব্যাট থেকে। ২৫ রান করতে ১৫ বল নেন ইংলিশ লিয়াম লিভিংস্টোন।।
শেষের দিকে ৯ বলে ১৭ রানের ছোট এক ক্যামিও খেলেন রোমারিও শেফার্ড। তিনটি করে উইকেয় নেন জ্যামিসন ও আর্শ্বদীপ।
রান তাড়ায় প্রথম দুই ওভারে ২৩ রান তুলে ভালো কিছুরই আভাস দেন পাঞ্জাবের ওপেনার প্রিয়ংশ আরিয়া ও প্রভসিমরান সিং। ১০ রানে জস হ্যাজেলউডের বলে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান প্রভসিমরান। অন্যপ্রান্তে দারুণ ছন্দে ব্যাট করা আরিয়া এরপর অজি পেসারের এক ওভারে টানা দুই চার মারার পর শিকার হন তারই। তবে তার আগে উপহার দেন ২৯ রানের।
ক্রিজে গিয়েই ছক্কায় শুরু করেন ফর্মে থাকা জস ইংলিস। ৮ ওভারে ৭০ রান নিয়ে ভালোভাবেই জয়ের পথে ছিল পাঞ্জাব। তবে এরপরই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া স্পেলটা করেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। দুর্দান্ত কয়েকটি ওভারে চাপ বাড়ান প্রতিপক্ষের ওপর। একে একে শিকার করেন তিন উইকেট, যার মধ্যে ছিল ইংলিসের উইকেটও।
উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে লিভিংস্টোনের ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে অজি ব্যাটার করতে পারেন ৩৯। তবে মূল ধাক্কাটা দেন অন্যপ্রান্তে রোমারিও। আক্রমণে এসেই ক্যাচে ফেরার পাঞ্জাব অধিনায়ক আইয়ারকে।
তবে জয়ের আশা টিকিয়ে রাখছিলেন শশাঙ্ক সিং। একের পর একে বড় শটে চেষ্টা চালিয়ে যান। শেষ দুই ওভারে দরকার পড়ে তবুও ৪১। আর শেষ ওভারে ২৯।
হ্যাজেলউডে সামনে এই রান করাটা প্রায় অসম্ভবই। তবে তিন ছক্কা ও এক চার মেরে জোর চেষ্টা চালালেন শশাঙ্ক। শেষ পর্যন্ত তার কাজে দেয়নি। ৩১ বলে ৬০ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেও পরাজিত শিবিরেই থাকতে হয় শশাঙ্ককে।
বয়স বা ফর্ম, দুটিই রয়েছে পক্ষে। বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে এমন সময়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান কিপার-ব্যাটার হাইনরিখ ক্লাসেন। ফলে সাত বছরেই শেষ হল তার জাতীয় দলের অধ্যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড-এর এক বিবৃতিতে ৩৩ বছর বয়সী ক্লাসেন সোমবার জানান, তিনি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছেন। এর আগে ২০২৪ সালে তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন
‘দলের বোঝা হয়ে’ অবসরের সিদ্ধান্ত ম্যাক্সওয়েলের |
![]() |
২০১৮ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অভিষেক ক্লাসেনের। এরপর সময় যত গেছে, তিনি নিজেকে প্রজন্মের অন্যতম সেরা বিধ্বংসী ব্যাটারদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
৬০টি ওয়ানডেতে ২ হাজার ১৪১ রান করেছেন প্রায় ৪৪ গড়ে। এই ফরম্যাটে সেরা ইনিংসটি খেলেন ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। সেই ম্যাচে তার করা ১৭৪ রানের ইনিংসটি ওয়ানডেতে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করে করা ব্যাটারদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর।
৫৮টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ক্লাসেনের স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪১.৮৪, যা জানান দেয় এই ফরম্যাটে তার আগ্রাসী ব্যাটিং শৈলীর প্রমাণ। ২৩.২৫ গড়ে নামের পাশে রান ঠিক ১ হাজার।
বয়স ৩৬ হলেও সাদা বলের ক্রিকেটে এখনও বিবেচনা করা হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পাওয়ার হিটারদের একজন হিসেবে। তবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল নিজেকে সেভাবে দেখছিলেন না বলেই আচমকাই সোমবার ঘোষণা দিয়েছেন ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, দলের জন্য নিজেকে বোঝা বলে মনে হচ্ছিল তার।
অস্ট্রেলিয়ার তারকা অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।
৩৬ বছর বয়সী ম্যাক্সওয়েল সোমবার ‘দ্য ফাইনাল ওয়ার্ড’ পডকাস্টে তার ওয়ানডে থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান। অস্ট্রেলিয়ার তারকা অলরাউন্ডার ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত ২০ ওভারের ফরম্যাটে খেলবেন বলে জানিয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেট থেকে এখনও অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেননি, তবে তার আবার টেস্টে খেলার সম্ভাবনা আর নেই বললেই চলে।
আরও পড়ুন
চোটে সিরিজ শেষ শরিফুলের |
![]() |
হঠাৎ কেন এভাবে অবসর, সেটা উল্লেখ করতে গিয়ে ম্যাক্সওয়েল টেনে আনেন ২০২২ সালে পা ভাঙার পর থেকে ওয়ানডেতে খেলার মত তার শারীরিক সক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি।
“আমার কাছে মনে হচ্ছিল, আমার শরীরের নানা প্রতিক্রিয়ার কারণে ক্রমেই দলের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছি। আমি নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান জর্জ বেইলির সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে ২০২৭ বিশ্বকাপ নিয়ে কথা উঠলে আমি বলি, ‘আমি সেখানে নিজেকে দেখছি না। এখন সময় এসেছে আমার জায়গায় নতুন কাউকে সুযোগ দেওয়ার।’”
দুইবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী ম্যাক্সওয়েল যোগ দিলেন আরেক তারকা ব্যাটার স্টিভেন স্মিথের সাথে, যিনি সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন।
ওয়ানডের পরিসংখ্যান দিয়ে ম্যাক্সওয়েলকে বিচার করতে গেলে তাকে আহামরি কোনো ক্রিকেটার মনে না হওয়ার কথা। ১৪৯ ম্যাচে ৩৩.৮১ গড়ে করেছেন ৩ হাজার ৯৯০ রান, আর বল হাতে ৭৭ উইকেট। তবে ম্যাক্সওয়েল নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা করেছেন স্ট্রাইক রেটের দিক থেকে৷ তার ১২৬.৭০ স্ট্রাইক রেট ওয়ানডে ইতিহাসে ২০০০ রান পার করা ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ম্যাক্সওয়েলের ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তটি আসে ২০২৩ বিশ্বকাপে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে। প্রায় ৩০০ রানের টার্গেটে নেমে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে ৯১ রান থেকে জেতান অপরাজিত ২০১ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংস, যা খেলার পথে তিনি বারবার পড়েন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে।
আরও পড়ুন
ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিরিজ হার বাংলাদেশের |
![]() |
এটি ছিল ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়র মধ্যে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, এই ফরম্যাটে রান তাড়ায় প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, এবং ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ছয় নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
প্রথম দুই ম্যাচের মত আরও একবার জ্বলে উঠলেন তানজিদ হাসান তামিম। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন পারভেজ হোসেন ইমন, জুটিতেই এল শতক। আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে এরপর অনায়াসেই দলগুলো এগিয়ে যায় দুইশ প্লাস স্কোরের দিকে। তবে মিডল অর্ডারে সেভাবে কেউই পারলেন না ফিনিশিংটা দিতে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে মোহাম্মদ হারিসের অনবদ্য শতকে পেশাদার রান তাড়ায় সহজেই জয় তুলে নিল পাকিস্তান। তাতে একরাশ হতাশায় শেষ হল বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান জিতেছে ৭ উইকেটে। বাংলাদেশের করা ৬ উইকেটে ১৯৬ রান দলটি পাড়ি দিয়েছে ১৬ বল হাতে রেখেই। ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল পাকিস্তান।
ব্যাট হাতে ফিনিশিংটা ভালো না হলেও বল হাতে বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভালোই। আগের ম্যাচে মলিন থাকা মেহেদি হাসান মিরাজ প্রথম ওভারেই দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাহিবজাদা ফারহানকে। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ দেন রিশদ হোসেনকে।
ক্রিজে গিয়েই হাসান মাহমুদকে দুই চার মেরে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে শুরুটা করেন মোহাম্মদ হারিস। টি-টোয়েন্টি অভিষেকের ম্যাচে খালেদ আহমেদ প্রথম ওভারেই ছিলেন খরুচে। টানা দুই বলে হারিস মারেন চার ও ছক্কা। অন্যপ্রান্তে সাইম আইয়ুব অবশ্য ব্যাট চালাচ্ছিলেন ধীরলয়ে, প্রথম ২৪ বলে করেন ২৪ রান!
তবে সেই চাপ বুঝতে না দিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন হারিস। ছয় ওভারেই রান হয়ে যায় ৫৬। নিজের প্রথম ওভারে এসে ১২ রান দেন আগের দুই ম্যাচে ৫০-এর বেশি রান দেওয়া রিশাদ। পার্টটাইমার শামিম হোসেন তার করা প্রথম ওভারে ছক্কা হজম করেন সাইমের কাছে। মাত্র ২৫ বলে ফিফটি তুলে নেন হারিস।
ইনিংস এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ক্রমেই হাত খুলে খেলা সাইম ছিলেন ফিফটির পথেই। তবে ফিরতি স্পেলে এসে স্লোয়ারে তাকে বিভ্রান্ত করেন তানজিম। ২৯ বলে ৪৫ রানে থামেন তরুণ এই ওপেনার।
চার মেরে রানের খাতা খোলেন নাওয়াজ। অন্যপ্রান্তে মিরাজ আক্রমণে এসে নাওয়াজের হাতে ছক্কা ও চার খাওয়ার পর একই ওভারে হাসেন শেষ হাসি। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ২৬ রানে আউট হন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।
ভুলে যাওয়ার মত এক সিরিজে আরও একবার মাঝের ওভারে দলকে হতাশ করেন রিশাদ। তিন বাউন্ডারিতে তৃতীয় ওভারে দেন ১৬ রান। দলের জয় নিশ্চিত করার পথে হারিস তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। অপরাজিত থাকেন মাত্র ৪৬ বলে ১০৭ রানে। আর অধিনায়ক সালমান আগা করেন ১৫।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ পেয়েছিল স্বপ্নের এক শুরু। সাম্প্রতিক সময়ে দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার তানজিদ বজায় রাখেন তার ফর্ম। সিরিজে প্রথমবারের মত রানের দেখা পাওয়া ইমন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ভড়কে দেন পাকিস্তানের বোলারদের। ফলে প্রতি ওভারেই হয় বাজে বল, আর রানও আসতে থাকে চার-ছক্কায় দ্রুততার সাথেই।
দুজনের মধ্যে ইমন ছিলেন বেশি আক্রমণাত্মক। আবরার আহমেদের এক ওভারে দুই চার ও এক ছক্কা মেরে মাত্র ২৭ বলে পা রাখেন পঞ্চাশে। সাথে তানজিদও খেলেন কিছু বড় শট। তাতে ১০ ওভারে ৯৯ রান হয়ে যায়। এরপর অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি কেউই।
৩২ বলে ৪২ করে ফাহিম আশরাফের বলে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তানজিদের ইনিংস। পরের ওভারেই ফের উইকেট। এবার শাদাব খানের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন ইমন, শেষ হয় তার ১৯৪ স্ট্রাইক রেটে খেলা ৬৬ রানের ইনিংস, যা তিনি সাজান ৭ চার ও ৪ ছক্কায়।
তাওহীদ হৃদয় ও লিটন দাস এরপর কিছুটা চেষ্টা করেন রানের গতি ধরে রাখার। তবে এই সময়েই ম্যাচে ফিরে আসে পাকিস্তান। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই দুজনের পাশাপাশি শামিম ও মিরাজের বিদায়ে রানের গতি কমে যায় বাংলাদেশের। ফলে আশা জাগিয়েও আর করা হয়নি ২০০ প্লাস স্কোর, যা শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণিত আর হয়নি।