
তিনদিন আগে আবুধাবিতে ১০৯/১০ স্কোর ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বনিম্ন। ৭২ ঘন্টা পর একই মাঠে ৯৩ রানে অল আউট হয়ে লজ্জাটা ভারী হয়েছে। আফগানিস্তানের কাছে দ্বি-পাক্ষিক ওডিআই সিরিজে হ্যাটট্রিক হার। এই প্রথম হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা (০-৩) পেতে হয়েছে।
হারের ব্যবধান ২০০ রান। বাংলাদেশের ওডিআই ক্রিকেট ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ। আফগানিস্তানের কাছে এটাই রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার। আফগানিস্তানের ওডিআই ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় বড় ব্যবধানে জয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই রানের ব্যবধানে তাদের সবচেয়ে বড় জয়।
তিন ম্যাচের সিরিজের কোনোটিতেই ৫০ ওভার পার করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। প্রথম ম্যাচে ৭ বল বাকি থাকতে ২১০ রানে এ অল আউট। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৫ বল বাকি থাকতে ১০৯ রানে অল আউট বাংলাদেশ। সিরিজের শেষ ম্যাচে সেখানে ১৩৭ বল আগেই শেষ বাংলাদেশ ৯৩ রানে!
তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজে হাফ সেঞ্চুরি মাত্র ২টি, হৃদয় এবং মিরাজের।
আবুধাবিতে লজ্জার এই সিরিজ ২০২৭ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সরাসরি কোয়ালিফাই করার সমীকরণটা কঠিন করে দিয়েছে।
ওডিআই র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১০। রেটিং পয়েন্ট ৭৪। বাংলাদেশের এক ধাপ উপরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের রেটিং পয়েন্ট সেখানে ৮০। আসন্ন ওডিআই সিরিজ জিতলে রেটিং পয়েন্ট বেড়ে যাবে, সম্ভাবনা থাকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উপরে উঠে যাওয়ারও। তারপরও কিন্তু ৭ কিংবা ৮ এ র্যাঙ্কিং উঠিয়ে নেয়ার কাজটা দুরূহ।
অন্যদিকে বাংলাদেশকে ওডিআই সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ করে আফগানিস্তান র্যাঙ্কিংয়ে ৭ সুসংহত করে এখন ৬ এ চোখ রেখেছে। ২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি কোয়ালিফাই করার দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেছে আফগানিস্তান। বর্তমানে ওডিআই র্যাঙ্কিংয়ে ৬-এ থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে চোখ রাঙাচ্ছে আফগানিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার রেটিং পয়েন্ট যেখানে ৯৯, সেখানে আফগানিস্তানের ৯৫।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ এই পরিণতি ? এটাই জনমনে প্রশ্ন। যদি ৩ টি ম্যাচের স্কোরকার্ডের দিকে তাকান, তাহলে বিষয়টা স্পষ্ঠ হবে। প্রতিটি ম্যাচে মিডল অর্ডার, লোয়ার অর্ডার এবং টেল এন্ডাররা পড়েছে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দল শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে ৪৬ রানে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সেখানে শেষ ৫ উইকেটের পতন ঘটেছে ১০ রানে। সিরিজের শেষ ম্যাচে ৭ উইকেট পড়েছে ২৩ রানে!
সিরিজের তিনটি ম্যাচে রশিদ খানের গুগলি ধাঁধায় ফেলেছে বাংলাদেশ ব্যাটারদের। ৩ ম্যাচের ওডিআই সিরিজে ১১ উইকেট শিকারে নিজের এবং আফগান বোলারদের মধ্যে সেরা কৃতিত্ব এই বিশ্বসেরা লেগ স্পিনারের। প্রথম দুই ম্যাচে পেসার আজমতউল্লাহ ওমরজাই দিয়েছিলেন তাকে দারুণ সঙ্গ। সিরিজের শেষ ম্যাচে ২১ বছর বয়সী তরুণ বিলাল সামি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে দিয়েছেন ধসিয়ে (৭.১-০-৩৩-৫)।
সিরিজের শেষ ম্যাচে টিম ম্যানেজমেন্টকে পড়তে হবে প্রশ্নের মুখে। নিয়মিত পেসারদের বিশ্রাম দিয়ে সাইড লাইনের দুই পেসার নাহিদ রানা-হাসান মাহমুদকে একাদশে বিবেচনা করে তারা বড় ভুলই করেছে। ২ উইকেট পেলেও ওভারপ্রতি ৯.৫০ রান খরচা করেছেন হাসান মাহমুদ। উইকেটহীন নাহিদ রানার খরচা সেখানে ওভারপ্রতি ৬.৭২।
প্রতি ম্যাচে বাজে ফিল্ডিং বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে। সিরিজের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তান কীভাবে স্কোর টেনে নিয়েছে ২৯৩/৯ পর্যন্ত ? তার কারণ, খুঁজতে গেলে কেউ কেউ কৃতিত্ব দিবেন উপযুপরি দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৫ রানে থেমে যাওয়া ইব্রাহিম জাদরানকে। ওপেনিং পার্টনারশিপের ৯৯ রানকেও দিতে হবে কৃতিত্ব। তবে এই পার্টনারশিপ থামিয়ে দেয়া যেতো ১৩ রানে, ৯ রানে ফিরিয়ে দেয়া যেতো ইব্রাহিম জাদরানকে। কিন্তু ইনিংসের তৃতীয় ওভারে নাহিদ রানার বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে নাঈম শেখের হাত থেকে বেঁচে গেছেন ইব্রাহিম জাদরান।
শেষ পাওয়ার প্লে'র অনিয়ন্ত্রিত বোলিংও ভুগিয়েছে বাংলাদেশ দলকে। এই ৬০ বলে ৪ উইকেট হারিয়ে ৮৪ রান করেছে আফগানিস্তান। যার মধ্যে শেষ দুই ওভারে ৪১ রান খরচা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে মিরাজ-হাসান মাহমুদকে। বলে কয়ে ফিফটি করেছেন মোহাম্মদ নবী। ৩৫ বলে ফিফটি করে ছিলেন ৩৭ বলে ৪ বাউন্ডারি, ৫ ছক্কায় ৬২ রানে নট আউট নবী।
লজ্জার এই ম্যাচে অলরাউন্ড পারফর্ম করেছেন সাইফ হাসান। অকেশনাল এই অফ স্পিনারের বোলিং (৪-১-৬-৩) ছড়িয়েছে বিস্ময়। ব্যাটিংয়েও ছিলেন বাংলাদেশের অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম (৫৪ বলে ২ চার, ৩ ছক্কায় ৪৩)।
নাঈম শুধু স্লিপে ক্যাচই ছাড়েননি, ওডিআই ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ইনিংসটিও ছিল যাচ্ছেতাই। ২৪ বল খেলে ৭ রান, ওমরজাইয়ের শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে নিজের অফ ফর্মের কথাই প্রকারান্তরে দিয়েছেন জানিয়ে নাঈম। ওডিআই ক্যাপ্টেন্সি হারিয়ে শান্তও এলোমেলো হয়ে গেছেন। বিলাল সামিকে অফ ষ্ট্যাম্পের উপরের বলে কাট করতে যেয়ে প্লেড অন হয়েছেন তিনি (১৬ বলে ৩)। রশিদ খানের গুগলি অনুমান করতে পারেননি হৃদয়, হয়েছেন বোল্ড (১২ বলে ৭)। বিলাল সামির বলে মিরাজ কট বিহাইন্ড (৯ বলে ৬)। পরের বলে শামীমের ক্যাজুয়াল সিঙ্গলের দৌড় ছিল অপেশাদারী ব্যাটারের আদর্শ উদাহরন। ভাগ্যটা খারাপ সোহানের। রশিদ খানের বলে আম্পায়ার্স কলে রান আউট (৬ বলে ২) তিনি। তানভির রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে, রিশাদ মিড উইকেটে ধরা পড়ে এবং হাসান মাহমুদ উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিলালকে প্রথম ৫ উইকেটের ইনিংস দিয়েছেন উপহার।
প্রচলিত ফরম্যাট ভেঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ এশিয়া কাপ। সে সময়ে এশিয়া মহাদেশে থাকা আইসিসির পূর্ণ ৪ সদস্য দেশকে নিয়ে এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলে সেই নিয়ম ভেঙ্গেছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। নিরাপত্তা শঙ্কায় বাংলাদেশে পূর্ব নির্ধারিত এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবে না বলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) অবস্থান জেনে যাওয়ায় চতুর্থ দল হিসেবে আফগানিস্তানকে নেয়া হয়েছিল সেই আসরে। যদিও পরবর্তীতে অবস্থান পরিবর্তন করে পাকিস্তান খেলেছে এশিয়া কাপে।
ভাগ্যক্রমে সুযোগ পাওয়া সেই আসরটিই আফগানিস্তানের টার্নিং পয়েন্ট। ফতুল্লায় বাংলাদেশকে ৩২ রানে হারিয়ে আইসিসির প্রথম কোনো পূর্ণ শক্তির দেশের বিপক্ষে জয় উদযাপন করেছে আফগানিস্তান। সেই জয়ে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে উৎসব হয়েছে হাজার হাজার গুলির শব্দে।
এখন সেই আফগানিস্তান বাংলাদেশের সামনে আতঙ্কের নাম। উপর্যুপরি ৩টি ওডিআই সিরিজ হেরে, প্রথমবারের মতো ১০০'র নীচে স্কোর করে, হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা পেয়ে এখন প্রিয় ফরম্যাটে অস্তিত্ব বিপন্নের মুখে বাংলাদেশ।
No posts available.
১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৯ পিএম
১ নভেম্বর ২০২৫, ৭:২৬ পিএম
১ নভেম্বর ২০২৫, ৭:১৭ পিএম

জেতা ম্যাচ হেরে যাওয়ার কিংবা সহজ জয়কে কঠিন করে জেতা পুরোনো অভ্যাস পাকিস্তানের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আজও তেমনটাই করার পথে ছিল তারা। তবে টপ অর্ডারের ব্যাটাররা আসল কাজ করে দেওয়ায় পথ হারায়নি পাকিস্তান।
শেষের সেই শঙ্কা বাদ দিলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে শেষ হেসেখেলেই জিতেছে সালমান আলি আগার দল।
আজ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকে চার উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। প্রোটিয়াদের ১৩৯ রানে বেধে ফেলার পর বাবর আজমের ফিফটিতে এক ওভার বাকি রেখেই জিতেছে পাকিস্তান। তাতে প্রথম ম্যাচ হারের পরও দারুণ প্রত্যাবর্তনে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিল স্বাগতিকরা। ৪৭ বলে ৬৮ রান করা বাবর আজম হন ম্যাচসেরা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ের নায়ক বাবর আগের ম্যাচে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের মালিক হয়েছিলেন রোহিত শর্মাকে ছাড়িয়ে। আজ আরেক ভারতীয় ব্যাটার বিরাট কোহলিকে ছাড়িয়ে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ফিফটি প্লাস ইনিংসের রেকর্ড গড়লেন বাবর। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের অভিজ্ঞ ব্যাটার আজ করেছেন ৩৭তম ফিফটি। এই সংস্করণে ৩টি সেঞ্চুরিও রয়েছে তাঁর। সব মিলিয়ে ৪০টি ফিফটি কিংবা তার বেশি ইনিংস খেলেছেন তিনি। ছাড়িয়ে গেছেন বিরাটনকোহলির ৩৯ ফিফটি প্লাস ইনিংস। তিনে থাকা রোহিত শর্মার ৩৭টি।
লাহোরে ছোটো লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতে হোঁচট খায় পাকিস্তান। ‘ডাক’ মেরে ফেরেন সায়েম আইয়ুব। পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ডাকের মালিক এখন এই ওপেনার। ৪৯ ইনিংসে ১০ ম্যাচে শূন্য রান করা সায়েম বিব্রতকর এই রেকর্ডে ছুঁয়েছেন উমর আকমলকে। পাশাপাশি আইসিসির পূর্ণ সদস্য দলের ব্যাটারদের মধ্যে এক বছরে সর্বোচ্চ ডাকও এখন সায়েম আয়ুবের। ২০২৫ সালে সাতবার শূন্য রানে আউট হয়ে পাকিস্তানের ব্যাটার ছাড়িয়ে গেছেন জিম্বাবুয়ের রিচার্ড এনগারাভাকে।
শুরুতে উইকেট হারালেও পথ হারায়নি পাকিস্তান। দলীয় ৪৪ রানে শাহিবজাদা ফারহান আউট হওয়ার পর বাবর আজম-সালমান আলি আগার ৭৬ রানের জুটিতে সহজ জয়ের দিকে ছুটে স্বাগতিকরা।
দলের রান যখন ১২০ অধিনায়ক আগা তখন লিজাড উইলিয়ামসের বলে আউট হন। সাজঘরে ফেরার আগে ২৬ বলে ৩৩ রান করেন পাকিস্তানের অধিনায়ক। স্কোরবোর্ডে ৫ রান যোগ হতে অধিনায়কের পথ ধরেন দারুণ এক ফিফটি করা বাবর। বশের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ৯ চারে ৪৭ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের মালিক।
দ্রুত দুই উইকেট হারালেও জয় থেকে তখন অল্প দূরত্বে পাকিস্তান। দলীয় ১৩৩ ও ১৩৪ রানে পাকিস্তানের আরও দুটি উইকেট তুলে ম্যাচ খানিকটা জমিয়ে তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে ততক্ষণে যে অনেক দেরি হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আর কোনো ভুল না করে জয়ের বন্দরে নোঙর করে স্বাগতিকরা।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে স্কোরবোর্ডে শূন্য রান থাকতেই ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ব্যাটার। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে কুইন্টন ডি ককের স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। পাকিস্তানের পেসারের পরের ডেলিভারিতেই উসমান তারিকের ক্যাচ হয়ে ফেরেন লুহান ড্রে প্রেটোরিয়াস।
তৃতীয় উইকেটে ডিওয়াল্ড ব্রিভিসকে নিয়ে ৩৬ রানের জুটি গড়েন রেজা হেনড্রিকস। এই জুটি ভাঙতেই আবার ব্যাটিং ধসের শঙ্কায় পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২২ বলে ২১ রান করা ব্রিভিস আউট হওয়ার পর এক রান করে ফেরেন ম্যাথু ব্রিটজ।
এরপর ৩৪ রানের আরেকটি জুটির পর আবারও পরপর দুই উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। অধিনায়ক ডোনোভান ফেরেইরার পর আউট হন র্জজ লিন্ডা। ১৪ বলে ২৯ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে ফাহিম আশরাফের বলে ক্যাচ তুলেন ফেরেইরা।
৭৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর করবিন বশের ২৩ বলে ৩০ ও আন্দিলে সিমিলেনের ১৩ রানে ধুঁকতে ধুঁকতে ১৩৯ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বল হাতে পাকিস্তানের সবচেয়ে সফল ছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। দুটি করে শিকার ফাহিম আশরাফ ও উসমান তারিকের। এক উইকেট নিয়েছেন সালমান মির্যা ও মোহাম্মদ নেওয়াজ।

ঘরের মাঠে গ্যালারিভর্তি সমর্থকদের সামনে বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন কে না দেখে? এমন মুহূর্তের জন্য হাজার রাত অপেক্ষা করতেও তো কারও দ্বিধা থাকার কথা নয়। কত চড়াই-উতরাই পার হয়েই যে বিশ্বসেরার সেরার তকমা মেলে, সেটা কার না জানা।
নারী বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইতিহাস গড়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় পাওয়া ভারত এখন বিশ্বসেরা হতে মাত্র এক কদম দূরে আছে। আগামীকাল নভে মুম্বাইয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারালেই প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে হারমানপ্রীত কৌরের দল। বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ফাইনাল।
ফাইনালের মহারণের আগে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের অধিনায়কের কণ্ঠে ছিল আবেগ, উত্তেজনা আর রোমাঞ্চের মিশ্রণ। তবে সবকিছু একপাশে রেখে উপভোগের মন্ত্রকেই বেছে নিলেন হারমানপ্রীত কৌর,
‘আমার মনে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা এই মুহূর্তটা উপভোগ করি। একজন ক্রিকেটার এবং একজন অধিনায়ক হিসেবে জীবনে এর চেয়ে বড় আর কিছু নেই। তাই আমাদের ফোকাস হলো এই মুহূর্তটা উপভোগ করা এবং বড় লক্ষ্য নিয়ে চিন্তা করার পরিবর্তে ছোট ছোট লক্ষ্য অর্জনের দিকে মন দেওয়া। কারণ ছোট লক্ষ্যগুলো পূরণ করলে বড় লক্ষ্যও সম্ভব।’
নারী বিশ্বকাপে তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলছে ভারত। বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এটি প্রথম অভিজ্ঞতা। ফাইনাল হারের তেতো অভিজ্ঞতা কেমন সেটা ভালো করেই জানা আছে ভারতের অধিনায়কের। তবে এবার শিরোপা তুলে ধরতে মুখিয়ে আছেন ভারতের অধিনায়ক,
‘আমরা ভালোভাবেই জানি যে ( বিশ্বকাপ ফাইনাল হারার) অনুভূতি কেমন। আমরা সত্যিই ফাইনাল জেতার অনুভূতির জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। আশা করি আগামীকাল আমাদের জন্য বিশেষ দিন হবে। আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি, এবং এখন শুধু সবকিছু এক করে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।’
লিগ পর্বটা অবশ্য ভালো যায়নি ভারতের। সেমিফাইনালও হয়ে পড়েছিল অনিশ্চিত। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হার শঙ্কার মুখে ফেলে দিয়েছিল ভারতের শেষ চারে যাওয়ার সুযোগ। তবে হারপ্রীতের দল সবসময় ইতিবাচক থেকেই শেষ পর্যন্ত ফাইনালে পৌঁছে গেছে,
‘তিনটি বড় হারের কারণে আমাদের দল একবারও চাপে পড়েনি। সবাই একসঙ্গে ছিল এবং ফাইনালে পৌঁছানোর উপায় নিয়ে কথা বলছিল। আমাদের ইতিবাচক মনোভাব ছিল, যা সত্যিই সাহায্য করেছে। যখন দলের সবাই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে থাকে এবং অন্তর থেকে দেশের জন্য খেলার আবেগ অনুভব করে…।’
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জয়ের জন্য গত দুই বছর কঠোর পরিশ্রম আর পরিকল্পনা করেছে ভারত। এখন শুধু সেটার ফসল ঘরে তোলার কথা বললেন হারমানপ্রীত,
‘পুরো দল এখন রোমাঞ্চিত, আমরা একে অপরের পাশে আছি এবং একে অপরের জন্য প্রার্থনা করছি। এটা দেখায় এই দল কতটা ঘনিষ্ঠ এবং আমরা কতটা প্রস্তুত। শেষ দুই বছরে সমস্ত কৌশল ও পরিকল্পনার পর এখন শুধু নিজেদের সর্বোচ্চ দেওয়া বাকি। আমরা ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের জন্য পরিকল্পনা করছিলাম, কী ধরনের কন্ডিশন পাবো, তাই এখন শুধু শতভাগ দেওয়ার সময়।’

হংকং সিক্সেসের জন্য দল ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। সাত সদস্যের অজি দলের অধিনায়কত্ব করবেন অ্যালেক্স রস। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক না হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বেশ পরিচিত তিনি। ২০২৪ বিপিএলে দুর্দান্ত ঢাকা এবং ২০২৫ বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের হয়ে খেলেছেন রস।
আগামী ৭ থেকে ৯ নভেম্বর হংকংয়ের টিন কুয়ং রোড রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ডে হবে হংকং সিক্সেস। ৩৩ বছর বয়সী অ্যালেস মিডল-অর্ডার ব্যাটার পাশাপাশি, অফস্পিনে সহায়তা করবেন দলকে। তিনি দলের অভিজ্ঞতা ও স্থিতিশীলতা যোগ করবেন। স্কোয়াডে আছেন টপ-অর্ডার ব্যাটার ও উইকেটকিপার বেন ম্যাকডারমট, স্পিন অলরাউন্ডার ক্রিস গ্রিন, ডেথ বোলিংয়ে দারুণ দক্ষ অ্যান্ড্রু টাই, টপ-অর্ডার ব্যাটার নিক হবসন।
আরিভা স্পোর্টসের কো-ফাউন্ডার রাজনিশ চোপড়া বলেছেন,
‘অস্ট্রেলিয়ার অংশগ্রহণ হংকং সিক্সেসকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে। তাদের জয়ের মানসিকতা এবং খেলাধুলার দৃষ্টিভঙ্গি এই ফরম্যাটের সঠিক চিত্র।’
টুর্নামেন্টে অংশ নেবে ১২টি দল। যার মধ্যে আছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও হংকং। তিন দিনে মোট ২৯টি ম্যাচ হবে। প্রতিটি ম্যাচে ৬ জন খেলবে, ৬ ওভার খেলা হবে, এবং একজন বোলার সর্বোচ্চ দুই ওভার করতে পারবেন।
অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াড: অ্যালেক্স রস (অধিনায়ক), বেন ম্যাকডারমট, জ্যাক উড, নিক হবসন, ক্রিস গ্রিন, উইল বোসিস্টো ও অ্যান্ড্রু টাই।

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর্দা নামছে কাল। ইতিমধ্যে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। সাত ম্যাচে এক জয়ে সাত নম্বরে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এবারের বিশ্বকাপ প্রাইজমানির দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছে আগের সব টুর্নামেন্টকে।
আগামীকাল নতুন চ্যাম্পিয়নের হাতে উঠবে নারী বিশ্বকাপ। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে যে দল জিতবে, তারাই প্রথমবারের মতো বিশ্বসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করবে। পাশাপাশি প্রাইজমানি হিসেবে হাতে উঠবে রেকর্ড অর্থ।
এবারের টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দল পাবে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা, আর রানার্স-আপ দল পাবে প্রায় ২৪ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল আইসিসির সমান পারিশ্রমিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই রেকর্ড পুরস্কার অর্থ নারী ক্রিকেটে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।
আরও পড়ুন
| আবারও টেস্ট অধিনায়ক শান্ত |
|
২০২৫ বিশ্বকাপের পুরস্কারের অর্থ ২০২২ সালের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। তিন বছর আগে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া পেয়েছিল প্রায় ১৩ কোটি টাকা, এবারের আসরে যেখানে ৩৬ কোটি টাকা বেশি পাচ্ছে শিরোপা জয়ী দল। বিশাল অঙ্কের প্রাইজমানি পাচ্ছে ফাইনালে হেরে যাওয়া দলও। সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড পাবে প্রায় ১২ কোটি টাকার মতো করে।
বিশ্বকাপের মোট প্রাইজমানি ১৪০ কোটি টাকার কাছাকাছি, যা ২০২২ সালের নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের চারগুন বেশি। এমনকি ২০২৩ সালের পুরুষদের বিশ্বকাপের মোট পুরস্কার ১০০ কোটি টাকাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই প্রথমবার নারী ও পুরুষ বিশ্বকাপে সমান পুরস্কার অর্থ ঘোষণা করল আইসিসি।
অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দল পাবে প্রায় ২ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে থাকা দল পাবে ৭ কোটি টাকার মতো করে।
আরও পড়ুন
| ৪ নভেম্বর আইসিসি সভায় উঠছে এশিয়া কাপের ট্রফি বিতর্ক |
|
এবারের বিশ্বকাপে মাত্র এক ম্যাচই জিতেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে নিগার সুলতানা জ্যোতিদের এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলে সপ্তম স্থানে থেকে শেষ করেছে তারা। সপ্তম ও অষ্টম দল পাবে প্রায় ৩ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার টাকা। গ্রুপ পর্বে প্রতিটি জয়ের জন্য বরাদ্দ ৩৫ লাখ টাকার পুরস্কার। এছাড়া বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের জন্য প্রতিটি দল পাবে ২ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ দল মোট পাচ্ছে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ৬০ হাজার।
ভারত ও শ্রীলঙ্কার পাঁচটি ভেন্যুতে হচ্ছে এবারের ১৩তম নারী বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টের সাত বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে তারা ভারত। ৩৩৯ রানের রেকর্ড তাড়া করে জয় পেয়েছে দলটি। তার আগে প্রথম সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ১২৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে দক্ষিণ আফ্রিকা।

গত জুনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বো টেস্টে হারের পর বাংলাদেশ টেস্ট দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান নাজমুল হোসেন শান্ত। চার মাস পর আবারও তাঁর কাঁধেই উঠল টেস্ট সংস্করণের নেতৃত্ব।
আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিশ্চিত করেছে, চলমান ২০২৫–২০২৭ আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্র শেষ হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন শান্ত।
২৭ বছর বয়সী শান্ত প্রথম মেয়াদে ২০২৩ সালে টেস্ট দলের অধিনায়ক হন ১৪ টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিসিবি সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন,
‘এই সিদ্ধান্ত বোর্ডের তরফ থেকে ২৭ বছর বয়সী ব্যাটারের নেতৃত্ব ও বাংলাদেশের লাল-বল ক্রিকেটের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আস্থা প্রদর্শন করে। শান্ত ধৈর্য, প্রতিশ্রুতি এবং টেস্ট ক্রিকেটের গভীর বোঝাপড়া প্রদর্শন করেছেন।’
শান্তর নেতৃত্বে দলের উন্নতি দেখছে বিসিবি। বুলবুল বলেন,
‘তার নেতৃত্বে আমরা দলের উন্নয়ন এবং বিশ্বাসের দৃশ্য দেখেছি। বোর্ড মনে করছে, নেতৃত্বে ধারাবাহিকতা আমাদের নতুন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ সাইকেলে ভালো ফল দেবে।’
আবারও নেতৃত্ব পেয়ে উচ্ছ্বসিত শান্ত,
‘বাংলাদেশ টেস্ট দলের নেতৃত্ব চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত। আমার অধিনায়কত্বে বোর্ড যে আস্থা ও বিশ্বাস দেখিয়েছে, তার জন্য আমি খুবই কৃতজ্ঞ। আমার দেশের টেস্ট ক্রিকেটে নেতৃত্ব দেওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব। আমাকে যেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা যথাসাধ্যভাবে পালন করব।’
আয়ারল্যান্ড সিরিজ দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে আবারও অধিনায়কত্ব শুরু করবেন শান্ত। বললেন,
‘এটি একটি আনন্দের বিষয়, আমি এমন একটি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছি যার অনেক প্রতিভা ও সম্ভাবনা আছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সামনে একটি উত্তেজনাপূর্ণ ও ইতিবাচক মৌসুম অপেক্ষা করছে। আমরা এই মাসের শেষের দিকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের জন্য অপেক্ষা করছি, যা বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের জন্য একটি ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সূচনা চিহ্নিত করে।’
শান্ত প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব ছাড়ার পর অবশ্য বাংলাদেশ দল আর কোনো টেস্ট খেলেনি। ৩৭টি টেস্ট খেলেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। করেছেন ২১৮৯ রান, ব্যাটিং গড় ৩২.১৯। ৭টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে ৫ ফিফটি।