৩০ অক্টোবর ২০২৪, ৮:২৭ পিএম
চলমান দ্বিতীয় টেস্টে আচমকাই লাল বলের ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে যাওয়া মাহিদুল ইসলামের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চটা এখনও ঘোর লাগানিয়া। প্রতিটি বলে আবিষ্কার করছেন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থক্য। তবে বেশ আগে অভিষেক হওয়া টপ অর্ডারের কয়েকজন ব্যাটার এখনও পায়ের তলা মাটি খুঁজে পেতে হিমসিম খাচ্ছেন। সাদমান-জয়-জাকিররা ঘরোয়ার পাশাপাশি জাতীয় দলেও ভালোই ম্যাচ খেলেছেন। তবে পারছেন না আস্থার প্রতিদান দিতে। স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ তরুণদের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন পাশে। তার দাবি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের হিসেবে এই ক্রিকেটাররা বিচারে এই তিনজন নতুনই এখনও।
সাদমান ইসলাম প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৮৬টি ম্যাচ খেলেছেন ৮৬টি, রান ৫ হাজারের বেশি। আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় যথাক্রমে খেলেছেন ৩৫ ও ১৪টি করে প্রথম শ্রেণির ও টেস্ট ম্যাচ। এই টেস্টে তিনে নামা জাকির হাসানের অভিজ্ঞতা আরও বেশি ঘরোয়াতে। খেলেছেন ১১৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, আর টেস্ট ১৪টি। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষবেলায় তিনজনই আউট হয়েছেন এক ডিজিটে। বেশ সুযোগ পেলেও তারা কেউই থিতু হতে পারছেন না দলে।
আরও পড়ুন
সাকিবকে বিদায়ী টেস্ট খেলাতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি বিসিবি, বললেন ফারুক |
![]() |
দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে মুশতাক শুরুতে এই ব্যাটারদের তরুণ বলে সময় দিতে বলেছিলেন। এরপর তাদের অভিজ্ঞতার দিকটি তুলে পাল্টা প্রশ্ন করা হলে সাবেক পাকিস্তান স্পিনার এর ব্যাখ্যা দেন। “আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যাপারে কথা বলেছি, ঘরোয়া ক্রিকেট নয়। আপনি ২০-৩০ বা ৫০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতেই পারেন, তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচের টেম্পারমেন্ট একেবারেই ভিন্ন ব্যাপার। এমন অনেক উদাহারণ পাবেন যে খেলোয়াড়রা ঘরোয়া তে অনেক অনেক ম্যাচ খেলে আসলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে এসে সেই টেম্পারমেন্ট দেখাতে পারছে না। আমি এই দলের নতুন, তবে আমি তাদের ওপর বিশ্বাস রাখি। আমাদের আস্থা আছে তাদের ওপর। তারা যদি পথ না হারায় আর প্রক্রিয়া ঠিক রাখে, তাহলে আমি মনে করি বাংলাদেশের সামনে খুব ভালো একটা সময় অপেক্ষা করছে।”
এই তিনজন তো বটেই, ভারত সফর থেকে বাংলাদেশের ব্যাটারদের কেউই নেই সেভাবে ফর্মে। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু ইনিংস আসলেও প্রথম ছয় ব্যাটাররা পারছেন না সেভাবে অবদান রাখতে। উত্তরণের উপায় কী? মুশতাক শোনালেন বিশ্বাস রাখার বাণী। “ক্রিকেট খুব পুরনো এবং মজার একটা খেলা। আপনাকে বেসিকটা ঠিক রাখতেই হবে। টেস্ট হোক বা ওয়ানডে, আপনি যদি বেসিক ঠিক রাখেন আর পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলেন, তাহলে যেমনটা একজন বলেছেন যে বিশ্বাসটা রাখুন। আপনাকে বিশ্বাস ধরে রাখতেই হবে।”
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রায় দুই দিন ব্যাটিং করে দাঁড় করিয়েছেন ৬ উইকেটে ৫৭৫ রানের বিশাল স্কোর। অথচ একই উইকেটে মাত্র ৯ উইকেট ব্যাট করেই ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করতে পেরেছে মাত্র ৩৮ রান। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে খাবি খেয়েছেন ব্যাটাররা। এর মধ্যে বাজে শট খেলেছেন সাদমান।
আরও পড়ুন
অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে ২ ধাপ উন্নতি মিরাজের |
![]() |
এর পেছনে কী ক্লান্তি দায়ী? মুশতাক তা মানতে অবশ্য নারাজ। “এটা ক্লান্তিকর, তবে পেশাদার দলগুলো এভাবে ভাবে না। পেশাদার দলকে মাঠে ফিরে আসতে হবে এবং যতোটা সম্ভব কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারানো খুব বড় সমস্যা নয়। কোচ হিসেবে আমি ওভাবে চিন্তা করি না। পরিস্থিতি যাই হোক, আপনাকে লড়াই করতেই হবে আর বিশ্বাস রাখতে হবে।”
ব্যাটারদের এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ দলের এমন ধারাবাহিক বাজে পারফরম্যান্সের কারণটাই বা কী? এই প্রশ্নে যেন দার্শনিক হয়ে গেলেন মুশতাক। আপনি কি একদিনে একটি গাছ বড় করে ফেলতে পারবেন? পানি দিতে থাকুন, বাগানের পরিচর্যাকারীর ওপর বিশ্বাস রাখুন। কখনো কখনো কোচ হিসেবে আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। আপনি একদিনে গাছ বড় করতে পারবেন না। গাছটি কিছুদিন আগে আপনাকে দেখিয়ে দেবে যে সে ছায়া আর ফল দিতে পারবে। আমি এটা বিশ্বাস করি।”
No posts available.
২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৮ এম
২১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৭ পিএম
পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তখন কথা বলছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শাই হোপ। আর প্রেসবক্স প্রান্তের সীমানার কাছে সাবেক স্পিনার সামুয়েল বদ্রির সঙ্গে লম্বা আলোচনায় মাতলেন আকিল হোসেন। এরপর ধীর পায়ে তিনি হাঁটা ধরলেন সংবাদ সম্মেলন কক্ষের দিকে।
কাছে গিয়ে ‘অন্যরকম একটা দিন পার করলে’ বলতেই তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, ‘খুবই ক্লান্তিকর! আমার মধ্যে আর কিছু বাকি নেই। শেষ বিন্দু নিংড়ে দিতে হয়েছে মাঠে৷ আমি এখন শূন্য।’ পরে সংবাদ সম্মেলনেও এটি নিয়ে কথা বলেন তিনি।
আকিলের এমন বলার কারণ, গত ২৪ ঘণ্টায় তার ব্যস্ত সূচি! দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় পৌঁছান তিনি। কোনো রকম বিশ্রাম নিয়ে দুপুরেই নেমে যান ম্যাচ খেলতে। ওয়ানডে ম্যাচের পুরো ১০০ ওভারের ধকল সামলে পরে সুপার ওভারেও নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেন আকিল।
মূল ম্যাচের মতো সুপার ওভারেও সফল আকিল। শুরুতে ‘নো’ বল ও পরে দুইটি ‘ওয়াইড’ বল করলেও তার ওভার থেকে সব মিলিয়ে ৯ রানের বেশি নিতে পারেনি বাংলাদেশ। সুপার ওভারে ১ রানে জিতে সিরিজে সমতা ফেরায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
মূল ম্যাচে বাংলাদেশের ২১৩ রানের জবাবে ৫৩ রানের দারুণ এক ইনিংসের পাশাপাশি ম্যাচজুড়ে চমৎকার অধিনায়কত্ব মিলিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ অন শাই হোপ। তবে আকিলের হাতে এই পুরস্কার উঠলেও ভুল কিছু হতো না! কারণ তিনিও যে শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের বড় নায়ক।
অথচ সিরিজের শুরুতে ওয়ানডে দলেই ছিলেন না আকিল। টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে দলে যোগ দেবেন এমনই ছিল পরিকল্পনা। তবে শামার জোসেফ ও জেডিয়াহ ব্লেডসের চোট এবং মিরপুরের উইকেটের আচরণ- দুই মিলিয়ে আকিলকে প্রায় আড়াই বছর পর ওয়ানডে দলে ডেকে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সোমবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণার পর মাঝ রাতে ঢাকায় নামেন আকিল। সব কাগুজে আনুষ্ঠানিকতা সেরে টিম হোটেলে পৌঁছাতে বেজে যায় ভোর ৪টা।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এমন প্রায়ই দেখা যায়, সকালে পৌঁছে সন্ধ্যায় খেলতে নেমে যান ক্রিকেটাররা। ২০ ওভারের খেলা হওয়ায় তাতে খুব একটা সমস্যাও হয় না তাদের।
তবে আকিলের চ্যালেঞ্জ ছিল ৫০ ওভারের ওয়ানডে ম্যাচের। তাই ধারণা করা হচ্ছিল, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হয়তো তাকে একাদশে নেবে না উইন্ডিজ। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে দুপুরেই দলের সঙ্গে মাঠে চলে আসেন আকিল।
শুধু তাই নয়, টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ওভারও বোলিং করেন ৩২ বছর বয়সী স্পিনার। ২০২৩ সালের জুলাইয়ের পর আবার ওয়ানডে খেলতে নেমে তৃতীয় ওভারে সাইফ হাসানকে আউট করেন তিনি।
সব মিলিয়ে ১০ ওভারে ১ মেডেনসহ ৪১ রানে নেন ২ উইকেট। পরে দশ নম্বরে নেমে ১৭ বলে ১৬ রান করেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার। আর শেষে সুপার ওভারে অতিরিক্ত ৪ রান দেওয়ার পরও ১০ রান ঠেকিয়ে তিনিই তো নায়ক!
সংবাদ সম্মেলনে আকিল জানান, এর আগে দা হান্ড্রেডে এমন চাপের সময়ে দলকে বাঁচানোর অভিজ্ঞতা আছে তার। এবার জাতীয় দলের জার্সিতেও তাই ভালো করা কিছুটা সহজ হয়েছে তার।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট লিগ বর্জনের হুমকি দিয়েছিল ঢাকা ক্লাব ক্রিকেট অর্গানাইজার্স অ্যাসোসিয়েশনের ক'জন সংগঠক। তাদের সেই হুংকারে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিশের ( সিসিডিএম) আঁতকে ওঠার কথা।
তবে গত ৮ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে সব ধরণের ক্রিকেট বর্জনের যে ঘোষণা দিয়েছে ক্লাব ক্রিকেট অর্গানাইজার্স অ্যাসোয়েশন, তাতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তাদের এই ঘোষণায় রুটি-রুজির পথ বন্ধ হওয়ার উপক্রমের শঙ্কায় ক্রিকেটারদের সংগঠন ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) নেতৃবৃন্দ সিসিডিএম এবং ক্লাবসমূহের সাথে যোগাযোগ করেছেন। বিসিবির নির্বাচন বর্জন করা তামিম ইকবাল ক্রিকেটারদের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। তাতেই লিগ বর্জনের অবস্থান থেকে ক্লাবগুলোর অবস্থানের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।
প্রচলিত নিয়ম ভেঙ্গে ২০২৫-২৬ ক্রিকেট মৌসুমে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ দিয়ে সিসিডিএম তাদের ক্যালেন্ডার শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার (২২ অক্টোবর) প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের ক্লাবগুলোকে নিয়ে সিসিডিএম-এর সভা হওয়ার কথা। এই সভাতেই প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যালেন্ডার শুরুর ইতিবাচক আভাস পাচ্ছে সিসিডিএম। মঙ্গলবার এমন সম্ভাবনার কথাই শুনিয়েছেন সিসিডিএম-এর চেয়ারম্যান আদনান রহমান দীপন-
'ইতোমধ্যে প্রথম বিভাগের ২০টি ক্লাবের মধ্যে ১৭টি লিগে অংশ নিবে বলে কথা দিয়েছে। বাকি তিনটিকে রাজি করানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি এই তিনটি ক্লাবকেও রাজি করাতে পারব। তামিম ইকবালকে ধন্যবাদ দিতে হবে। কারণ, তিনি ক্রিকেটারদের স্বার্থকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে ক্লাবগুলোকে রাজি করাতে বিশেষ ভুমিকা নিয়েছেন।'
এদিকে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে অংশগ্রহনে ক্লাবসমূহকে রাজি করাতে লোভনীয় অ্যাপিয়ারেন্স ফি, প্রাইজমানি, জার্সি এবং ট্রান্সপোর্ট অ্যালাউন্স বরাদ্দ রেখেছে এবার সিসিডিএম-এর নব গঠিত কমিটি। অ্যাপিয়ারেন্স ফি বাড়িয়েছে ৫০%। ৯ লাখ টাকা থেকে প্রতিটি দলের অ্যাপিয়ারেন্স ফি বেড়ে উন্নীত হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে ক্লাবসমূহ পয়েন্ট টেবিলের অবস্থান অনুযায়ী পাবে প্রাইজমানি। চ্যাম্পিয়ন দল ৮ লাখ টাকা, সর্বনিম্ন দল ২ লাখ টাকা পাবে। টিম জার্সি খাতে এক একটি দল পাবে আড়াই লাখ টাকা। এর বাইরে প্রতি ম্যাচের জন্য ট্রাভেল অ্যালাউন্স হিসেবে টিম প্রতি ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ রেখেছে সিসিডিএম। এই অর্থ দিয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের ক্লাবসমূহ খরচের বড় একটা অংশ নির্বাহ করতে পারবেন বলে মনে করছেন সিসিডিএম-এর নবগঠিত কমিটির চেয়ারম্যান আদনান রহমান দীপন-
'হিসাব করে দেখেছি, প্রথম বিভাগে যে ক্লাব সবচেয়ে কম অর্থ পাবে, তার পরিমানও ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। চ্যাম্পিয়ন-রানার্স আপ দল তো ২৫ লাখ টাকার উপরে পাবে।'
সিসিডিএম'র এই লোভনীয় অফার এবং বিসিবির সমন্বিত চেষ্টার ফলটা কী হয়, তা জানতে তাকিয়ে থাকতে হবে বুধবার দুপুরে সিসিডিএম সভার দিকে।
হারারে টেস্টে চরম অস্বস্তিতে রয়েছে আফগানিস্তান। অতিথিদের একপ্রকার চেপে ধরেছে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। ২৩২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১ উইকেটে ৩৪ রান করে দিন শেষ করেছে সফরকারীরা। এখনো ১৯৮ রানে পিছিয়ে রয়েছে আফগানিস্তান।
আগের দিনের ২ উইকেটে ১৩০ রান নিয়ে আজ ব্যাটিং শুরু করে জিম্বাবুয়ে। বেন কারান ও ব্রেন্ডন টেইলর দলকে এনে দেন ভালো সূচনা। তবে আফগান পেসার জিয়াউর রহমান শরীফির বলে ৩২ রানে থামেন টেইলর। অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, মাত্র ৫ রানে ফেরেন তিনি।
পঞ্চম উইকেটে সিকান্দার রাজা ও কারান গড়েন ৯৯ রানের দারুণ জুটি। ৬৫ রানে রাজা আউট হলেও কারান তুলে নেন সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ১২১ রানে আউট হন এই ডানহাতি ব্যাটার। ২০১৭ সালের পর এই প্রথম জিম্বাবুইয়ান ওপেনার হিসেবে ঘরের মাঠে টেস্ট সেঞ্চুরি করলেন তিনি। একই সঙ্গে ১৯৯৭ সালের পর হারারে স্পোর্টস ক্লাবে টেস্ট সেঞ্চুরি করা প্রথম জিম্বাবুইয়ান ওপেনারও বেন কারান।
শেষদিকে ব্র্যাড ইভান্সের ৩৫ রানের ইনিংসে ভর করে ৩৫৯ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। আফগানিস্তানের হয়ে জিয়াউর রহমান শরীফি ৯৭ রান দিয়ে শিকার করেন ৭ উইকেট।
জবাবে শুরুতেই বিপদে পড়ে আফগানিস্তান। ওপেনার আবদুল মালিক মাত্র ২ রানে রিচার্ড নাগারাভার বলে ক্যাচ তুলে দেন। ইব্রাহিম জাদরান ২৫ ও রহমানউল্লাহ গুরবাজ ৭ রানে অপরাজিত থেকে দিনের খেলা শেষ করেন।
সুপার ওভারে জিততে প্রয়োজন ১১ রান। প্রথম বলই ওয়াইড করলেন আকিল হোসেন। পরের বল 'নো' করলেন তিনি। ডিপ মিড উইকেটে স্লগ করে ২ রান দিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু ফ্রি হিটে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি তিনি।
পরে আকিলের বৈধ চতুর্থ ডেলিভারিতে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়ে যান অভিজ্ঞ ব্যাটার। ৩ বলে মাত্র ৩ রান করে আউট হন তিনি। এরপর শেষ পর্যন্ত ১ রানে ম্যাচটি হেরে যায় বাংলাদেশ। অথচ বাঁহাতি স্পিনার আকিলের বলে সৌম্যর সামনেই ছিল বাউন্ডারি মেরে ম্যাচটি জেতানোর।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাই নিজের ওপর দায় নিয়ে নেন সৌম্য। কোনো রাখঢাক না রেখে তিনি সোজাসাপটাই বলেন, বাউন্ডারি মারা উচিত ছিল তার।
“হ্যাঁ! এটা বলতে পারেন আমি ব্যর্থ। বাঁহাতি স্পিনার ছিল। আমারও আত্মবিশ্বাস ছিল যে, না আমি একটা বাউন্ডারি এখান থেকে আদায় করতে পারব। কিন্তু হ্যাঁ, এটাও ঠিক যে উইকেটও ওমন ছিল না যে, ছয় বা বাউন্ডারি মারা সহজ। বলটাও অনেক পুরাতন হয়ে গেছে ৫০ ওভারের পরের বল, বল যাচ্ছিল না।”
তবে স্পিন সহায়ক উইকেটে কাজটা যে সহজ ছিল না সেটিও বলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
“মূলত বড় শট করতে গেলে উইকেটের একটা সাহায্য লাগে। বলটা একটু ধীরে আসছিল এবং টার্নও ছিল অনেক বেশি। তো হ্যাঁ! পরবর্তীতে যদি কখনও এরকম উইকেট থাকে, অবশ্যই ঐরকমভাবে অনুশীলন করতে হবে যে এই উইকেটে ছয় মারতে হবে কীভাবে।”
সুপার ওভারের আগে মূল ম্যাচেও ২টি ফ্রি হিট পান সৌম্য। নবম ওভারে প্রথমটিতে কোনো রান নিতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটার। এরপর ২৯তম ওভারে পাওয়া ফ্রি হিটে নেন মাত্র ১ রান।
ফ্রি হিটে ভালো করতে না পারার কথা স্বীকার করে সৌম্য বললেন, সুপার ওভারে সবগুলো বল ফ্রি হিট ভেবেই খেলেছেন তিনি।
“আজকে তিনটা ফ্রি হিট কাজে লাগাতে পারিনি। আগেও অনেকগুলো ফ্রি হিট আছে, সেভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। অমন কিছু (মানসিক সমস্যা) ছিল না। সুপার ওভারে যে বল খেলেছি, প্রায় সবই ফ্রি হিট ছিল। আমার টার্গেটই ছিল ছয় বা বাউন্ডারি মারার। আমি পারিনি। হয়তো এখানে আমার কোনো ল্যাকিং আছে।”
চলতি সিরিজের দুই ম্যাচ মিলিয়েই বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাববিস্তারী ব্যাটার ছিলেন রিশাদ হোসেন। কিন্তু সুপার ওভারে ১১ রানের লক্ষ্য পূরণে তাকে ব্যাটিংয়েই নামায়নি বাংলাদেশ। এর পেছনে কারণ হিসেবে সৌম্য সরকার বললেন, কোচ ও অধিনায়কের সিদ্ধান্ত ছিল এটি।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার নিজেদের দীর্ঘ ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম 'টাই' ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। তিন সংস্করণ মিলিয়েই এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম টাই। পরে সুপার ওভারে মাত্র ১ রানে হেরে যায় তারা।
এর আগে মূল ম্যাচে ৯ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩টি করে চার-ছক্কায় মাত্র ১৪ বলে ২৭৮.৫৭ স্ট্রাইক রেটে ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন রিশাদ। প্রথম ম্যাচেও তার ব্যাট থেকে আসে ১৩ বলে ২৬ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংস।
তবু আকিল হোসেনের করা সুপার ওভারে ১১ রানের সমীকরণে রিশাদকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়নি বাংলাদেশ। শুরুতে নামানো হয় সাইফ হাসান ও সৌম্যকে। পরে সৌম্য আউট হয়ে গেলে বাকি ২ বলের জন্য ক্রিজে যান নাজমুল হোসেন শান্ত।
টপ-অর্ডারের তিন ব্যাটার মিলে আকিলের ওভারে অতিরিক্ত ৪ রান পাওয়ার পরও সব মিলিয়ে ৯ রানের বেশি নিতে পারেননি। ফলে ১ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজে ফেরে সমতা।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সৌম্যর কাছে প্রথম প্রশ্নই করা হয়, সুপার ওভারে কেন নামেননি রিশাদ। উত্তরে কোচ ও অধিনায়কের পরিকল্পনার কথা বলেন বাঁহাতি ওপেনার।
“হ্যাঁ, এটা (রিশাদকে সুপার ওভারে না পাঠানো) কোচ আর অধিনায়ক পরিকল্পনা করেছেন। এটা তাদের পরিকল্পনার একটা অংশ ছিল। তারা চিন্তা করেছে যে, মূল ব্যাটারদের পাঠাবে এই সময়ে।”
আরেক প্রশ্নে কোচ-অধিনায়কের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে কারণটাও বোঝানোর চেষ্টা করেন সৌম্য।
“দেখুন এখানে বাঁহাতি স্পিনার বল করছিল। তাই বাঁহাতি ব্যাটার উইকেটে যাওয়ার চিন্তা করাই সবচেয়ে ভালো। তো এটাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বাঁহাতি ব্যাটার গেলে দলের জন্য ভালো হবে। তাই এটি ভেবেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এমন ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতে সৌম্যর কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাঁহাতি স্পিনারের বিপক্ষে বাঁহাতি ব্যাটারই লাগবে- এমন ম্যাচ আপের পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারত কিনা বাংলাদেশ। উত্তরে আবারও কোচ-অধিনায়কের সিদ্ধান্তের পক্ষে ব্যাট ধরেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
“এটা নিয়ে তো দলের সবাই আমরা চিন্তা করিনি। এটা কোচ-অধিনায়ক চিন্তা করেছে। ওইখানে আমরা জানতাম না আকিল বল করবে। যদি আমরা দুইটা বাঁহাতি ব্যাটার নেমে যেতাম, ওই সময় যদি কোনো অফ-স্পিনার আসত, তখন কিন্তু দুজন বিপদে পড়তাম। তাই ডানহাতি-বাহাতি ছিল। ওদের ক্ষেত্রেও দেখবেন, ওরাও বাঁহাতি-ডানহাতি ব্যাটিং করেছে।”