১২ নভেম্বর ২০২৪, ৬:৩৩ পিএম
হাতে আছে চার মাসেরও কম সময়। আইসিসির আর দশটা টুর্নামেন্ট হলে এমন সময়ে আয়োজক দেশ ব্যস্ত থাকে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে, সূচিও প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় বা হওয়ার পথে থাকে। ভেন্যুগুলোতে চলে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। তবে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাকিস্তানে হওয়ার এই সময়েও রয়েছে ব্যাপক অনিশ্চয়তা। ভারত কোনোভাবেই যাবে না প্রতিবেশী দেশে খেলতে, আর ছাড় দিতে নারাজ পাকিস্তানও। তাদের দাবি, হয় ভারতকে তাদের দেশে আসতে হবে বা রোহিত-কোহলিকে ছাড়াই আয়োজন হবে এবারের আসরের।
সবকিছু ঠিক থাকলে, গত সোমবার থেকে ১০০ দিনের কাউন্টডাউন শুরু হতো আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫-এর। লাহোরে হত বিশাল আয়োজন। জানানো হতো টুর্নামেন্টের সূচি। কিন্তু তা আর হলো কই। এর পেছনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের অনড় অবস্থানও কম দায়ী নয়।
আরও পড়ুন
‘ভারত-পাকিস্তান আছে বলেই আইসিসি টিকে আছে’ |
![]() |
পাকিস্তানে হিয়ে খেলার ক্ষেত্রে গোড়ামি যে শুধু ভারতেরই নয়। পাকিস্তানও যেন পণ করেছে, একচুল ছাড় ভয় ভারত ক্রিকেট বোর্ডকে। ২০২৩ সালের এশিয়া কাপের হাইব্রিড মডেলকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তারা কিছুতেই মানবে না। গেল বছর এশিয়া কাপে ভারত ছাড়া বাকি দলগুলো খেলেছে পাকিস্তানের মাঠে। শুধু ভারতের জন্যে শ্রীলঙ্কাতেও বসাতে হয়েছিল ভেন্যু। তবে এবার পাকিস্তান তাতেও রাজী না।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) আইসিসিকে ই-মেইলে জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানে খেলতে যেতে অপারগ। ভারত সরকার তাদের পাঠাবেন না। প্রস্তাব দিয়েছে হাইব্রিড মডেলে তাদের ম্যাচগুলো অন্য আরেকটি দেশের রাখার জন্য। সেটা আবার আইসিসি পাকিস্তানকে মেইল করে জানিয়েছে।
পাকিস্তানের বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, ভারত যদি এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে না আসে, তবে মাইনাস ইন্ডিয়া বা বয়কট ইন্ডিয়া নীতিতে এগোতে পারে পাকিস্তান। অর্থাৎ, ভারতকে ছাড়াই টুর্নামেনট আয়োজনের কথা ভাবছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। গণমাধ্যমগুলো এমনও বলছে, ভারত পাকিস্তানে না খেলা অব্দি পাকিস্তানও কোন টুর্নামেন্টেই ভারতের সঙ্গে আর খেলবে না। পিসিবিও নাকি এগোচ্ছে এমন পরিকলল্পনার দিকেই।
আরও পড়ুন
রউফের ফাইফারে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিল পাকিস্তান |
![]() |
ভারত-পাকিস্তানের বৈরিতা তো নতুন কিছু না। তবে এরপরেও দুই দলের মধ্যে সফর ছিল প্রায় নিয়মিত। মাঝে শুধু ১৯৬২ থেকে ১৯৭৭ সাল দুবার যুদ্ধে জড়িয়ে আসা যাওয়া বন্ধ ছিল দুই দেশ। এর আগে-পরেও একাধিকবার সফর বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। তবে একুশ শতকে কোনো যুদ্ধ না লাগলেও এক যুগ ধরে ভারত-পাকিস্তান একে অপরের দেশে সফর করে না।
পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে সবশেষ ভারতে গেছে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। আর ভারতীয় দলের সর্বশেষ পাকিস্তান সফর ২০০৭ সালে। এর পরের বছরও ভারতের একটি দল পাকিস্তানে গেছে, তবে সেটা এশিয়া কাপের জন্য। এর পর থেকে চলছে লম্বা বিরতি। আর গত ৮ বছরে দুই ফরম্যাটের দুটি বিশ্বকাপ খেলতে দুইবার ভারতে গেছে পাকিস্তান।
গত বছর এশিয়া কাপের জন্য ভারতীয় দলের পাকিস্তানে যাওয়া না–যাওয়া নিয়ে যখন তুমুল আলোচনা, তখন জাভেদ মিয়াঁদাদের একটি মন্তব্য ভারতীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। মিয়াঁদাদ বলেছিলেন, “ভারত জানে পাকিস্তানের কাছে হারলে তাদের দেশের মানুষ ছেড়ে কথা বলবে না। এমনকি নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত উধাও হয়ে যাবেন, ভারতের জনগণ তাঁকেও ছাড়বে না। এই ভয়ৈই ভারত আসে না। পাকিস্তানে যদি তারা খেলতে না আসে, তাহলে তারা জাহান্নামে যাক।”
পাকিস্তানে না যাওয়া নিয়ে বিসিসিআই সব সময়ই সরকারের অনুমোদন না থাকার কথা বলে। কিন্তু ভারত সরকারের কেউ কখনোই স্পষ্ট করে বলেন না ঠিক কী কারণে অনুমতি দেওয়া হয় না। আর এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমে ভারতের ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা একটা শব্দই নিয়মিত উচ্চারণ করে থাকেন—‘নিরাপত্তা’।
আরও পড়ুন
ভারতের অংশগ্রহণে পাকিস্তানেই হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, আশা পিসিবির |
![]() |
পাকিস্তানে নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে কিন্তু শঙ্কা কমবেশি সব দেশেরই থাকে। ২০০৯ সালের মার্চে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর হামলার ঘটনায় তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনেই চলে গিয়েছিল পাকিস্তানের ভেন্যু। এমনকি ২০১১ বিশ্বকাপের অন্যতম আয়োজক হলেও পাকিস্তানে শেষ পর্যন্ত কোনো ম্যাচই হয়নি।
পাকিস্তানে ভারত ক্রিকেট দলের সফর বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে লাহোরের ঘটনা ছিল সবার জন্য ‘কমন ফ্যাক্টর’। লাহোর হামলার পরবর্তী ছয় বছর কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশই আর পাকিস্তানে সফর করেনি। তবে ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের মাধ্যমে আবার দরজা খোলার পর গত কয়েক বছরে প্রায সব দেশই পাকিস্তানে খেলতে গেছে। বাকি কেবল ভারতই।
এর পেছনে ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর টানা চার দিন মুম্বাইয়ে দফায় দফায় সন্ত্রাসী হামলার কারণটিও জড়িত। ওই হামলায় প্রায় পৌনে দুই শ মানুষ নিহত হয়। মুম্বাইয়ে সেই সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করে ভারত। এতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ঠেকে তলানিতে । সঙ্গে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর হামলার ঘটনা মিলিয়ে ভারত, পাকিস্তানে ক্রিকেট দল পাঠানো বন্ধ করে দেয়।
২০১৫ সালের শেষে সম্ভাবনা দেখা দেয় পিসিবি আর বিসিসিআইয়ের মধ্যকার এক বৈঠকের আহবানে। বৈঠকের দিন ওয়াংখেড়েতে হানা দেন শিবসেনার কর্মীরা। প্রায় দুই শর মতো শিবসেনা বিসিসিআই প্রধান শশাঙ্ক মনোহরসহ অন্যদের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখলে পিসিবি-বিসিসিআই বৈঠক পণ্ড হয়ে যায়।
বিসিসিআইয়ের তখনকার সচিব অনুরাগ ঠাকুর বলেছিলেন, “আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা নিয়ে আলোচনা করতে পারি তিনটি শর্তে। ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা, ভারতীয় ক্রিকেটারদের স্বার্থ এবং ভারতীয় জনগণের অনুভূতিকে প্রাধান্য দিয়ে।”
তবে সেই শর্ত পূরণ হয়েছে নাকি হয়নি, আজ অব্দি তা নিয়ে কোনো পক্ষ থেকেই আসেনি পরিস্কার কোন বক্তব্য। ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপ ঘিরে দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্ক পুনরায় চালু নিয়ে আবার ব্যাপক মাত্রায় আলোচনা তৈরি হয়েছিল। পাকিস্তান সব ভুলে কিন্তু বিশ্বকাপেও খেলেছে ভারতে গিয়ে। আবার ভারতের ইচ্ছেনুযায়ী হাইব্রিড মডেলও দিয়েছে এশিয়া কাপে। তবে পাকিস্তানে গিয়ে খেলার ব্যাপারে অতীতের অবস্থান পরিবর্তন এখন ও নিকট ভবিষ্যতেও হয়ত করবে না ভারত।
আর সেই কারণেই উঠছে প্রশ্ন, অল্প সময়ের মধ্যে আয়োজক দেশ ও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই - দুই পক্ষকে খুশি রেখে আইসিসি কী পারবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঠিক সময়ে আয়োজনে এগিয়ে যেতে? বাস্তবতা বলছে, খুব জটিল সময় অপেক্ষা করছে ৫০ ওভারের এই টুর্নামেন্টের জন্য।
No posts available.
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১৯ এম
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৩ এম
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৯ এম
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯:৪৬ এম
ভেন্যু বদলেও ফায়দা হলো না। বৃষ্টির বাগড়া এলো রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামেও। যে কারণে ভেসে গেল ঢাকা ও বরিশালের মধ্যকার সোমবার সকালের ম্যাচ।
প্রাথমিক সূচিতে ঢাকা-বরিশাল ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে। কিন্তু বৃষ্টির জন্য আগেভাগেই ম্যাচটি সরিয়ে আনা হয়েছিল রাজশাহীতে।
আরও পড়ুন
‘আমরা হাত মেলানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম, ভারত করল না’ |
![]() |
সেখানেও প্রকৃতির ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তাই মাঠে নামা হয়নি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, জিসান আলম, সালমান হোসেন ইমনদের। দর্শকদের সঙ্গে হাসি-মজা করেই সময় কাটান তারা।
জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) টি-টোয়েন্টির শুরু থেকেই দেখা দিচ্ছে বৃষ্টির বাধা। উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ ওভার করে খেলতে পারে রাজশাহী ও ঢাকা মেট্রো। এরপর বৃষ্টিতে ভেসে যায় সিলেট-রংপুর ম্যাচ।
রাজশাহীর মাঠে সোমবার দুপুর ২টায় হওয়ার কথা খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যকার খেলা। আপাতত বৃষ্টি নেই রাজশাহীতে। তাই ম্যাচটি হওয়ার কিছু হলেও আশা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে ক্রিকেটারদের সঙ্গে নতুন ক্যাজুয়াল চুক্তি করার ঘোষণা দিল নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেসি)। এর অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সামনের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবেন না কেন উইলিয়ামসন। তবে আগামী বছরের বিশ্বকাপের জন্য নিজেকে এভেইলেবল রাখছেন অভিজ্ঞ ব্যাটার।
উইলিয়ামসন ছাড়াও বোর্ডের সঙ্গে ক্যাজুয়াল চুক্তি করেছেন ডেভন কনওয়ে, ফিন অ্যালেন, লকি ফার্গুসন ও টিম সেইফার্ট। তারা কেউই গত জুনে ঘোষিত এনজেসির কেন্দ্রীয় চুক্তির ২০ জনের তালিকায় নেই।
আরও পড়ুন
‘আমরা হাত মেলানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম, ভারত করল না’ |
![]() |
কেন্দ্রীয় চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটাররা মূলত বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী যে কোনো আন্তর্জাতিক সিরিজ ও ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলতে বাধ্য। সেই বেড়াজাল থেকে নিজেদের মুক্ত করে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে আরও বেশি খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উইলিয়ামস-কনওয়েরা।
এই চুক্তির সুফল হিসেবে আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ডের সুপার স্ম্যাশের বদলে অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগে খেলবেন অ্যালেন, সেইফার্ট ও ফার্গুসন।
নারী ক্রিকেটারদের মধ্যে সাবেক অধিনায়ক সোফি ডিভাইনও একই ধরনের চুক্তি করেছেন বোর্ডের সঙ্গে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিউ জিল্যান্ডের সবশেষ টেস্ট সিরিজটি খেলেননি উইলিয়ামসন। ওই সিরিজের পর ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টেও দেখা যায়নি তাকে৷ এর বদলে ইংল্যান্ডের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ, দা হান্ড্রেড ও টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট খেলেছেন উইলিয়ামসন।
তুলনামূলক দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে উইলিয়ামসনের না থাকা তেমন বড় ঘটনা ছিল না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষেও না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরও পড়ুন
হাত মেলায়নি ভারত, প্রেজেন্টেশনে এলেন না পাকিস্তানের অধিনায়ক |
![]() |
তবে বোর্ডের সঙ্গে ক্যাজুয়াল চুক্তির অংশ হিসেবে সামনের বছরের বিশ্বকাপের দলে বিবেচিত হওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে হবে ক্রিকেটারদের। তবে উইলিয়ামসনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রেখেছে এনজেসি। আর পায়ের সার্জারি করানো অ্যালেন এক্ষেত্রে ছাড় পেতে পারেন।
আগামী ১ থেকে ৪ অক্টোবর হবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজটি। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে এই সিরিজের দল ঘোষণা করতে পারে নিউ জিল্যান্ড।
যেকোনো খেলায় ভারত-পাকিস্তান লড়াই মানেই নতুন রোমাঞ্চ, উত্তেজনা আর আলোচনার খোরাক। ব্যতিক্রম নয় এশিয়া কাপও। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের এবারের লড়াইয়ে আলোচনার কেন্দ্রে ক্রিকেটারদের সৌজন্যতা বিনিময় না করা।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববারের ম্যাচের পর এই ঘটনায় ভারত অধিনায়ক সুর্যকুমার যাদব বলছেন, কিছু ক্ষেত্রে খেলাধুলার স্পিরিটের প্রসঙ্গ না আনাই ভালো। আর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হাত মেলাতে প্রস্তুত ছিলেন তারা।
ম্যাচে টসের সময় ন্যুনতম হাসি বিনিময় করেননি সুর্যকুমার ও পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলি আগা। টস করে ফেরার সময় হাতও মেলাননি দুজন। এমনকি পুরো সময় এতটা কাছে থেকেও কোনো কথাবার্তা হয়নি দুই অধিনায়কের মধ্যে।
আরও পড়ুন
‘আমরা হাত মেলানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম, ভারত করল না’ |
![]() |
ম্যাচ জুড়েও দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে কোনো হাসি-মজা বা হালকা মুহূর্ত কাটানোর ঘটনা দেখা যায়নি। আর সবচেয়ে বড় চমকটা দেখা যায়, ম্যাচ শেষ হওয়ার পর। পাকিস্তানকে উড়িয়ে সহজ জয়ের পর প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত না মিলিয়েই মাঠ ছেড়ে চলে যায় ভারতের ক্রিকেটাররা।
সতীর্থদের নিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন সালমান৷ পরে তিনিও বেরিয়ে যান মাঠ থেকে। এরপর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানেও হাজির হননি পাকিস্তান অধিনায়ক। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এটি নিয়ে প্রশ্ন হয় অনেক।
ভারত অধিনায়ক সুর্যকুমার বলেন, সরকারের নির্দেশনা পেয়ে তারা শুধু ম্যাচটি খেলতে মাঠে নেমেছিলেন। তাই কোনো সৌজন্যতার পথে হাঁটেননি।
“আমাদের সরকার ও বিসিসিআই- আজকে আমরা একই সমান্তরালে ছিলাম। বাকিটা আমরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি (হাত না মেলানোর)। আমরা এখানে শুধু ম্যাচটা খেলতে এসেছিলাম। আমরা যথাযথ একটা জবাব দিয়েছি।”
তার কথায় মূলত ইঙ্গিত করা হয়, পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে। গত এপ্রিলে কাশ্মিরের পেহেলগামে ওই হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ২৬ জন। আহত হন আরও অনেকে। শুরু থেকেই এর দায় পাকিস্তানকে দিয়ে আসছে ভারত।
এমনকি পাকিস্তানের বিপক্ষে যে কোনো খেলাধুলাও বয়কটের আওয়াজ ওঠে ভারতে। শেষ পর্যন্ত বয়কট করা হয়নি ম্যাচ। তবে নিজেদের জায়গা থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সৌজন্যতা বিনিময় না করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতের ক্রিকেটাররা।
এমন কাণ্ড খেলাধুলার স্পিরিটের লঙ্ঘন কিনা জানত্ব চাওয়া হয় সুর্যকুমারের কাছে। উত্তরে ভারত অধিনায়ক বলেন, খেলার উর্ধ্বে আছে জীবনের অনেক কিছু।
আরও পড়ুন
‘আমরা হাত মেলানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম, ভারত করল না’ |
![]() |
“জীবনের কিছু জিনিস স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের উর্ধ্বে। আমি এটি পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানেও বলেছি। পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় আক্রান্ত সকলের পাশে আছি আমরা, তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমর্থন আছে। তাদের প্রতি আমরা সংহতি প্রকাশ করছি।”
পরপর দুই জয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে ভারত। কোনো অঘটনা না ঘটলে পাকিস্তানও পাবে সুপার ফোরের টিকেট। ওই রাউন্ডে আবার মুখোমুখি হবে ভারত-পাকিস্তান।
তখন আবার নতুন কোন আলোচনার জন্ম হয়, সেটিই যেন দেখার অপেক্ষা।
এই একটি ম্যাচ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ ছিল না। মাঠের খেলা নিয়ে যতটা না আলোচনা, এরচেয়ে দুই দেশের বৈরি সম্পর্ক, ম্যাচ বর্জন আর প্রতিবাদের মতো বিষয়ই সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।
এশিয়া কাপে ‘এ’ গ্রুপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি শেষ হয়েছে ভারতের ৭ উইকেটের বড় জয়ে। উত্তাপ ছড়ানো ম্যাচটি একপেশে লড়াইয়ে রূপ নেয় ম্যাড়ম্যাড়ে এক ম্যাচে। সূর্যকুমার যাদেবদের বিপক্ষে নূন্যতম লড়াইও করতে পারেনি সালমান আলি আগার দল।
অবশ্য ম্যাচের ফলাফলের চেয়ে দুই দলের নানান কাণ্ডই যেন এখন আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। প্রথমে ম্যাচের আগে টসের সময় সৌজন্য সূচক করমর্দন না করে বিতর্ক উষকে দেন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার। এমনকি ম্যাচ শেষেও পাকিস্তান দলের সঙ্গে হাত মেলায়নি ভারতীয় দল।
ভারতের এমন আচারণে প্রচন্ড ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে পাকিস্তান। সূর্যকুমার যাদবের দলের সঙ্গে নাকি করমর্দনের অপেক্ষায়ও ছিল পাকিস্তান দল। ম্যাচ শেষে পাকিস্তান কোচ মাইক হেসন বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা খেলা শেষে করমর্দনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। প্রতিপক্ষ সেটা করেনি বলে আমরা হতাশ। আমরা হাত মেলাতে এগিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা তখনই ড্রেসিংরুমের পথে ছিল।’
আরও পড়ুন
হাত মেলায়নি ভারত, প্রেজেন্টশনে এলেন না পাকিস্তানের অধিনায়ক |
![]() |
ভারতের এমন অবস্থানের পর পাকিস্তানও প্রতিবাদ হিসেবে ম্যাচ শেষে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করে। ম্যাচ-পরবর্তী অনুষ্ঠানে পাকিস্তান অধিনায়কের অনুপস্থিত থাকার কারণ সম্পর্কেও কথা বলেন পাকিস্তান কোচ। এই সিদ্ধান্তকে হাত না মেলানোর ঘটনারই প্রতিক্রিয়া বলেন তিনি, ‘আমার মনে হয় এটা পুরো ঘটনারই একটি ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়া। আমরা খেলা শেষে হাত মেলাতে চেয়েছিলাম, সেটা হয়নি এবং ঘটনাটা সেখানেই শেষ হয়ে যায়।’
ভারতের করর্মদন বর্জনের মতো আচারণকে ‘খেলোয়াড়সুলভের বিরুদ্ধে’ বলে বিবৃতি দিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্ট নাকি টসের সময় দুই অধিনায়ককে করমর্দন না করতে অনুরোধ করেছিলেন। এ কারণে ম্যাচ রেফরির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছে পিসিবি।
ম্যাচ শেষে পিসিবি এক বিবৃতিতে জানায়, পাকিস্তান দলের ম্যানেজার নাভিদ আকরাম চিমা ম্যাচ রেফারির আচরণের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছেন।
মহারণের আগেই আভাস দিয়ে রেখেছিল ভারত। পাকিস্তানের বিপক্ষে ‘প্রতীকী প্রতিবাদ’ করবে সূর্যকুমার যাদবের দল। গতকাল এশিয়া কাপের নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে সেটাই দেখা গেল।
দুবাইয়ে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ম্যাচে দুই দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েন মাঠেও গড়ায়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের সহজ জয়ের ম্যাচের আগে ও পরে হাত মেলানোর ‘সৌজন্যতা’ দেখায়নি ভারত। টসের পর ও ম্যাচ শেষে দুই দলের অধিনায়কের চোখাচোখি পর্যন্ত হয়নি।
আরও পড়ুন
পাকিস্তানকে উড়িয়ে সেনাবাহিনীকে জয় উৎসর্গ করল ভারত |
![]() |
ভারতীয় দলের এমন অবস্থানের পর পাকিস্তান দলও প্রতিবাদ জানায় ম্যাচ শেষে প্রেজেন্টেশনে অনুপস্থিত থেকে। ভারতের অধিনায়কের হাত না মেলানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলি আগা নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ-পরবর্তী সাক্ষাৎকারেও হাজির হননি।
অবশ্য ভারতীয় দলের পাকিস্তানের সঙ্গে করর্মদন না করার যে পূর্ব নির্ধারিত ছিল সেটাই নিশ্চিত করেন সূর্যকুমার। ম্যাচ শেষে ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার বলেন, ‘ম্যাচ শুরুর আগেই বিসিসিআই ও ভারত সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে ভারতীয় দল ঠিক করেছিল প্রতিপক্ষের সঙ্গে করমর্দন করা হবে না।’
পাকিস্তানের ক্ষোভের মাত্রা দ্বিগুন হয় যখন ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্ট নাকি টসের সময় দুই অধিনায়ককে করমর্দন না করতে অনুরোধ করেছিলেন। এই সিদ্ধান্তে পাকিস্তান দল দৃশ্যতই হতাশ হয়।
এই ম্যাচের আগে গত এপ্রিলে কাশ্মিরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই এশিয়া কাপে দু’দল মুখোমুখি হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এমনকি ভারতের ম্যাচ বর্জনের দাবিও ওঠে।
আরও পড়ুন
হাত মেলালেন না ভারত-পাকিস্তান অধিনায়ক |
![]() |
শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার আনুষ্ঠানিক নীতি জানায়, দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলবে না, তবে বহুপাক্ষিক টুর্নামেন্টে অংশ নেবে। সেই নীতিতেই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়।
ঘটনাবহুল এই ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তান। শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে ১২৭ রানেই গুটিয়ে যায় তারা। জবাবে ৭ উইকেট ও ২৫ বল হাতে রেখে হেসেখেলে জয় পায় ভারত।