২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আগে ওভাল টেস্ট শেষে অ্যালিস্টার কুক যখন আনুষ্ঠানিক বিদায় নিয়েছেন, তখন কী কেউ ভেবেছে তার ছাঁয়ায় বেড়ে ওঠা আর এক কুককে ছাড়িয়ে যাবেন, এই ইংলিশ ক্রিকেটার একদিন শচিনকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়বেন। ৭ বছর পর সেই অসাধ্য সাধনের গল্পটাই লিখেছেন জো রুট।
টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের রেকর্ডটা গড়েছেন জো রুট ৯ মাস আগে। গত বছরের অক্টোবরে টেস্টে অ্যালিস্টার কুকের ১২৪৭২ রান টপকে গেছেন। ইংল্যান্ডের প্রথম ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ১৩ হাজারী ক্লাবের সদস্যপদও পেয়েছেন জো রুট। ভারতের বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজটি তার এক একটি মাইলস্টোনের। একটার পর একটা হার্ডল পেরিয়েছেন এই সিরিজে। লর্ডসে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরিতে (১০৪) ভারত লিজেন্ডারি রাহুল দ্রাবিড়ের টেস্ট সংগ্রহের (১৬৪ টেস্টে ১৩২৮৮ রান) কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। ম্যানচেষ্টার টেস্টে ৩০ রান করতে পারলে রাহুল দ্রাবিড়কে, ৩১ রান করতে পারলে প্রোটিয়া লিজেন্ডারি জ্যাক ক্যালিসকে ছাড়িয়ে যাবেন-এই দুই লিজেন্ডারিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার হিসেবটা ছিল রুটের মাথায়। অজি লিজেন্ডারি রিকি পন্টিংকে ছাড়িয়ে যেতে তার দরকার ছিল ১২০ রান।
ভারতের বিপক্ষে অতীত রেকর্ডটা তার দারুণ। এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ইনিংস প্রতি ৫৭.৩৮ গড়, ৩৩ টেস্টে ১১ সেঞ্চুরির অতীত থেকে টনিক নিয়ে এবার ম্যানচেষ্টার টেস্টে অবতীর্ন হয়েছেন। তাতেই ম্যানচেষ্টার টেস্টের দর্শকদের অভিবাদন পেয়েছেন।
ভারতের বিপক্ষে ৩৪তম টেস্টটিকে মাইলস্টোন টেস্ট হিসেবে নিয়েছিলেন। ম্যানচেষ্টার টেস্টের তৃতীয় দিন একটা একটা করে হার্ডল পেরিয়ে রাহুল দ্রাবিড়, জ্যাক ক্যালিস, এমনকি পন্টিংয়ের সংগ্রহকে গেছেন ছাড়িয়ে।
দ্বিতীয় দিন শেষে ১১ রানে ব্যাটিংয়ে থাকা রুট তৃতীয় দিনের সকালে ডিপ থার্ডম্যানে সিঙ্গল নিয়ে রাহুল দ্রাবিড়কে, পরের বলে কাভারে সিঙ্গল নিয়ে ক্যালিসকে গেছেন টপকে। ভারতের বিপক্ষে ৩৪তম টেস্টে ১২তম সেঞ্চুরি উদযাপনের পর আনসুল কামবুজকে ডিপ পয়েন্টে সিঙ্গল নিয়ে পন্টিংয়ের রান সংখ্যাকে গেছেন ছাড়িয়ে। জাদেজার বলে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে যেয়ে স্ট্যাম্পিংয়ে থেমেছেন জো রুট। তবে ২৪৮ বলের ইনিংসে ১৫০ রানে মেরেছেন ১৪টি বাউন্ডারি।
১৫০ রানের ক্লাসিক ইনিংস উপহার দিয়ে এখন টেস্ট ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ব্যাটার শচিন টেন্ডুলকারের (২০০ টেস্টে ১৫৯২১ রান) পেছনে এখন জো রুট (১৫৭ টেস্টে ১৩৪০৯ রান)।টেস্টে রানের এভারেস্টে থাকা শচীনকে ছাড়িয়ে যেতে এখন তার দরকার ২৫১২ রান। ৩৪ বছর বয়সী এই ইংলিশ মিডল অর্ডার এখন ফর্মের তুঙ্গে। লর্ডস এবং ম্যানচেষ্টারে সেঞ্চুরি করে সেঞ্চুরির সংখ্যা উন্নীত করেছেন ৩৮-এ। এমন ফর্ম অব্যাহত রাখতে পারলে শচীনের রেকর্ডটা হয়তবা অক্ষত থাকবে না।
এমন উচ্চতায় ওঠার দিনে ম্যানচেষ্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে প্রথম কোনো ব্যাটার হিসেবে টেস্টে হাজার রানের মাইলস্টোনও ছুয়েঁছেন (১২ টেস্টে ১১২৮ রান) জো রুট।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রুটময় দিনে ইংল্যান্ড নিয়েছে ১৮৭ রানের লিড। তৃতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ৫৪৪/৭। বেন ডাকেট ৬ রানের জন্য (৯৪ ১০০ বলে ১৩ বাউন্ডারিতে ৯৪) সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন। ৬৬ রানের মাথায় চোট পেয়ে পুনরায় ব্যাটিংয়ে ফিরে বেন স্টোকস ৭৭ রানে অপরাজিত আছেন। ৫ম উইকেট জুটিতে রুট-স্টোকস ১৪২ রান যোগ করেছেন। ওলে পোপকে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৪৪ রানেও নেতৃত্ব দিয়েছেন রুট।
নিজেকে টপকে যাওয়ায় জো রুটকে অভিনন্দিত করেছেন রিকি পন্টিং-
'অভিনন্দন, জো রুট। অসাধারণ।১৫৭টি টেস্ট ম্যাচে রুট নিজেকে অসাধারণ একজন খেলোয়াড় হিসেবে মেলে ধরেছে। সে সত্যিই ধারাবাহিক খেলোয়াড়। গত চার-পাঁচ বছর ধরে মনে হচ্ছে যখনই সে শুরু করে তখন ফিফটিতে পৌঁছায়, এরপর মনে হয় সে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সেঞ্চুরি করছে।এবং কেবল সেঞ্চুরি নয়, বড় সেঞ্চুরি করছে, যা একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড়ের লক্ষণও।'
No posts available.
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১:৫৩ এম
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১:২৭ এম
ব্যাটিংয়ে শেষ দিকের ব্যর্থতায় প্রত্যাশামাফিক সংগ্রহ পায়নি বাংলাদেশ। তাই বোলিংয়ে প্রয়োজন ছিল বিশেষ কিছুর। টুর্নামেন্টে প্রথমবার খেলতে নেমে প্রথম বলেই সেই বিশেষ কাজ করে দেন নাসুম আহমেদ। দারুণ ডেলিভারিতে তিনি ফিরিয়ে দেন সেদিকউল্লাহ অতলকে।
নিজের স্পেলের বাকি সময়েও চরম কিপটে বোলিং করেন বাঁহাতি স্পিনার। তাই তার হাতেও ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। সেই স্বীকৃতি গ্রহণ করে নাসুম বলেন, প্রথম বলে উইকেট পাওয়াটা তার জন্য ছিল বিশেষ আনন্দের।
আরও পড়ুন
যেভাবে সুপার ফোরে উঠতে পারে বাংলাদেশ |
![]() |
এশিয়া কাপে প্রথম দুই ম্যাচে বেঞ্চে বসে ছিলেন নাসুম। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুযোগ পেয়েই জ্বলে উঠেছেন বাঁহাতি স্পিনার। প্রথম ওভারে সেদিকউল্লাহকে আউট করে মেডেন নেন তিনি।
তিন ওভারের স্পেলে ইব্রাহিম জাদরানকেও আউট করেন নাসুম। নতুন বলে নাসুমের ওই তিন ওভারে মাত্র ৭ রান করতে পারে আফগানিস্তান। ১৫৪ রানের পুঁজি নিয়ে লড়তে থাকা বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে দেয় ওই স্পেল।
পরে ১৮তম ওভারে নাসুমকে আবার আক্রমণে আনেন লিটন। তখন ক্রিজে ছিলেন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা রশিদ খান। ওই চাপের সময়ে মাত্র ৪ রান দেন অভিজ্ঞ স্পিনার। ফলে ১৮ বলে ৩১ থেকে সমীকরণ হয়ে যায় ১২ বলে ২৭ রান।
আরও পড়ুন
শেষ পর্যন্ত আমরা ম্যাচে ছিলাম: রশিদ |
![]() |
সব মিলিয়ে ৪ ওভারে এক মেডেনসহ মাত্র ১১ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন নাসুম। ৩৯ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এটি তার পঞ্চম ম্যান অব দা ম্যাচ।
ম্যাচ সেরার পুরস্কার গ্রহণ করে নতুন বলে বোলিংয়ের আনন্দের কথা বলেন তিনি।
“নতুন বলে বোলিং করতে সবসময় পছন্দ করি। আজকে যখন অধিনায়ক আমাকে বলল যে, আমি প্রথম ওভার বল করব, ওইটাতেই আমি এক্সাইটেড হয়ে গেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ! প্রথম বলেই উইকেটটা নিয়েছি। এটাতে অনেক ভালো লেগেছে।”
আরও পড়ুন
ম্যাচ জিতে লিটন বললেন, ‘ব্যাটিং-বোলিং ভালো করিনি’ |
![]() |
আবু ধাবির অতিরিক্ত গরমের কারণে বোলিং করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল নাসুমের। তাই গ্রিপ বদলে সাফল্যের পথ খুঁজে নেন অভিজ্ঞ স্পিনার।
“রাতে যখন বল করতে যাই, তখন অনেক ঘামাচ্ছিলাম। তাই গ্রিপ করতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। তাই আমি গ্রিপটা বদলে জায়গায় করার চেষ্টা করেছি এবং ক্রস সিমে করার চেষ্টা করেছি।”
জিতলেই নিশ্চিত সুপার ফোরের টিকেট, হারলে পড়তে হবে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে। এমন সমীকরণের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ৮ রানে হেরেছে আফগানিস্তান। ম্যাচ শেষে রশিদ খান বললেন, জয়ের সুযোগ পেয়েও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ফিনিশ করতে পারেননি তারা।
আবু ধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৫৫ রানের লক্ষ্যে শুরুর ব্যাটারদের ব্যর্থতার পর আফগানদের হাল ধরেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। মাত্র ১৬ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলে দলের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন তরুণ পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
আরও পড়ুন
ম্যাচ জিতে লিটন বললেন, ‘ব্যাটিং-বোলিং ভালো করিনি’ |
![]() |
এরপর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন রশিদ। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ছক্কা-চার মেরে সমীকরণ তিনি নামিয়ে আনেন ১৮ বলে ৩১ রানে। সেখান থেকে আর পারেনি আফগানিস্তান। মুস্তাফিজের পরের ওভারে আউট হয়ে যান ১১ বলে ২০ রান করা রশিদ।
শেষ ওভারে নুর আহমেদ দুইটি ছক্কা মারলেও ৮ রান ঘাটতি থেকে যায় আফগানদের। ম্যাচ শেষে তাই অল্পের জন্য জিততে না পারার আক্ষেপ রশিদের কণ্ঠে।
“শেষ পর্যন্ত আমরা ম্যাচে ছিলাম। আমাদের নাগালেই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিনিশ করতে পারিনি। শেষ দিকে ১৮ বলে ৩০ (আসলে ৩১) রান, খুবই নেওয়ার মতো ছিল।”
আরও পড়ুন
যেভাবে সুপার ফোরে উঠতে পারে বাংলাদেশ |
![]() |
ম্যাচ পরবর্তী এই পুরস্কার বিতরণে রশিদ বলেন, নিজেদের চিরচেনা আগ্রাসী ঘরানার ক্রিকেটটা তারা খেলতে পারেননি এই ম্যাচে।
“আপনি যদি দেখেন, শুরুর দিকে আমরা সেই ধরনের ক্রিকেট খেলিনি, যেটার জন্য আমরা পরিচিত। সেই আগ্রাসী ক্রিকেট আমরা খেলতে পারিনি। এটিই আমাদের বিশেষত্ব। আগ্রাসী ক্রিকেট খেলেই আমরা এই পর্যন্ত এসেছি।”
আরও পড়ুন
আফগান বধেও কৃতিত্ব বোলারদের |
![]() |
“এছাড়া কিছু কিছু সময় আমরা নিজেদের ওপর চাপ নিয়ে এসেছি এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আমার মতে, ওই মুহুর্তগুলোতেই আমরা পিছিয়ে পড়েছি।”
গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান। ওই ম্যাচ জিতলে সুপার ফোরে যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে তাদের। কারণ নেট রান রেট এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষেই আছে। আর তারা হারলে কপাল খুলে যাবে বাংলাদেশের।
আফগানিস্তানকে ৮ রানে হারে সুপার ফোরে খেলার স্বপ্ন জিইয়ে রাখল বাংলাদেশ। মঙ্গলবার আবু ধাবিতে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে ১৫৩ রান সংগ্রহ করে লিটন দাসরা। জবাবে ১৪৬ রানে থামে আফগানদের যাত্রা। এই জয়ে তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম পর্ব শেষ করল বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানকে টপকে আপাতত পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে উঠল লাল সবুজ দল। দুই ম্যাচে দুটি জয় পাওয়া শ্রীলঙ্কার পয়েন্টও ৪। তবে শ্রীলঙ্কা নেট রান রেটের হিসেবে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। শ্রীলঙ্কার নেট রাট রেট +১.৫৪৬, বাংলাদেশের –০.২৭০।
আরও পড়ুন
ম্যাচ জিতে লিটন বললেন, ‘ব্যাটিং-বোলিং ভালো করিনি’ |
![]() |
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সুপার ফোরে ওঠার চাবিকাঠি শ্রীলঙ্কার হাতে। বৃহস্পতিবার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে লঙ্কানদের প্রতিপক্ষ রশিদ খানরা। সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা আফগানিস্তানকে হারালেই সুপার ফোরে যাবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলেও বাংলাদেশই উঠবে সুপার ফোরে। তবে আফগানিস্তান জিতে গেলে আফগানরা উঠে যাবে সুপার ফোরে।
সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ভাগ্য নির্ধারিত হবে নেট রান রেটের হিসাবে। শ্রীলঙ্কা এই হিসাবে এগিয়ে। শ্রীলঙ্কা শেষ ম্যাচে পরে ব্যাট করে ৭০–৭৫ রানে হেরে গেলে অথবা শ্রীলঙ্কার রান আফগানরা ১১–১২ ওভারে মধ্যে পেরিয়ে গেলেই সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার ওপরে থাকবে বাংলাদেশ।
উড়ন্ত শুরুর পর হঠাৎ পতন। বড় সংগ্রহের ভিত গড়েও মিলল না তেমন বড় পুঁজি। বোলিংয়েও ভালো শুরুর পর মাঝপথে খেই হারিয়ে পরাজয়ের খানিক শঙ্কায় পড়ল বাংলাদেশ। তাই শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতলেও, দলের ব্যাটিং-বোলিংয়ে পুরোপুরি খুশি নন লিটন কুমার দাস।
আবু ধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার আফগানিস্তানকে ৮ রানে হারায় বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৫৪ রান করে তারা। জবাবে ১৪৬ রানে অলআউট হয় রশিদ খানের নেতৃত্বাধীন দল।
অথচ টস জিতে ব্যাট করতে নেমে তানজিদ হাসান তামিমের কল্যাণে ১০ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৮৭ রান করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে ১৭০ রান মনে হচ্ছিল হেসেখেলেই করে ফেলবে তারা।
আরও পড়ুন
আফগান বধেও কৃতিত্ব বোলারদের |
![]() |
কিন্তু ৩১ বলে ৫২ রান করা তামিমের বিদায়ের পর আর কেউই দলকে এগিয়ে নিতে পারেননি। যে কারণে হাতে ৭ উইকেট থাকলেও শেষ ৫ ওভারে ৩৫ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
পরে বল হাতে শুরুতেই ২ উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানকে চাপে ফেলে দেয় লিটন কুমার দাসের দল। কিন্তু পার্ট টাইমার দুই স্পিনার শামীম হোসেন পাটোয়ারী ও সাইফ হাসানের খরুচে বোলিংয়ে কিছুটা চাপে পড়ে তারা।
শেষ পর্যন্ত নাসুম ও রিশাদ হোসেনের দারুণ বোলিংয়ের সৌজন্যে ম্যাচ জিতেই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। এই জয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে খেলার আশাও বাঁচিয়ে রাখে তারা।
আরও পড়ুন
ভারতের বিপক্ষে উইন্ডিজ দলে চন্দরপল-আলিক |
![]() |
তাই ম্যাচ জেতার স্বস্তি থাকলেও পুরোপুরি তৃপ্ত নন লিটন। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সেই কথাই বলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
“অবশ্যই জয় পাওয়া স্বস্তির ব্যাপার। তবে একইসঙ্গে বলতে চাই, আমরা শেষ ৪-৫ ওভারে ভালো ব্যাটিং করিনি। পরে মাঝের ওভারে বোলিংও ভালো করতে পারিনি। আমরা জানতাম, জয়ের জন্য যথেষ্ট রান হয়েছে।”
“উইকেট দেখার পরই মনে হয়েছিল ১৬০ রান করতে পারলে হবে। তবু আমরা ব্যাটিংয়ে ১৫-২০ রান কম করেছিলাম। তবে আমাদের বোলাররা যেভাবে বোলিং করেছে। বিশেষ করে নাসুম, অনেক দিন পর খেলে নিজের স্কিল দেখিয়েছে এবং রিশাদও ভালো করেছে।”
তবে ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু এনে দেওয়া তামিম ও বোলিংয়ে ভালো শুরু করা নাসুমের প্রশংসা করতেও ভুল করেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক।
আরও পড়ুন
৩৯ ম্যাচে ৫ বার সেরা, সাকিবের পরেই নাসুম |
![]() |
“দুই দিকেই আমাদের শুরুটা ভালো ছিল। (তানজিদ হাসান) তামিম ভালো ব্যাটিং করেছে। উদ্বোধনী জুটিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একইভাবে বোলিংয়েও নাসুম যখন শুরুতে উইকেট নিয়ে দিলো, প্রতিপক্ষ দলের ওপর এটি চাপ সৃষ্টি করেছে।”
গ্রুপে তিন ম্যাচে দুই জয় ও এক পরাজয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে বাংলাদেশ। এখনও সুপার ফোরের টিকেট নিশ্চিত নয় তাদের।
‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে লড়বে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। শ্রীলঙ্কা জিতলে সরাসরি সুপার ফোরে উঠে যাবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। আর আফগানিস্তান জয় পেলে। তিন দলের হবে সমান ৪ পয়েন্ট। তখন নেট রান রেটের বিবেচনায় পরের রাউন্ডে যাবে দুই দল।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইতোপূর্বে ১২টি টি-টোয়েন্টি মুখোমুখি লড়াইয়ে ৫টি জয়ের বিপরীতে হার ৭টি। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে বাংলাদেশের ৫টি জয়ের প্রতিটিই দেশের মাটিতে। যদি এশিয়া কাপের প্রসঙ্গ ওঠে, তাহলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে সাফল্যাঙ্ক ভাল আফগানদের। ২০২২ সালে সারজায় বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে আসর থেকে বিদায় করে দিয়েছে আফগানিস্তান। গত বছর কিংসটাউনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচেও বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮ রানে হারের অতীত আছে বাংলাদেশের। সে কারণেই আবুধাবিতে এশিয়া কাপের 'ডু অর ডাই' ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার আগে এসব পরিসংখ্যান আনতে হয়েছে সামনে।
অতীতের এইসব দু:সহ স্মৃতি মুছে ফেলেছে বাংলাদেশ দল। বিদেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয়, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো মেগা আসরে আফগানদের কাছে হারের বদলা নিয়েছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন
৩৯ ম্যাচে ৫ বার সেরা, সাকিবের পরেই নাসুম |
![]() |
৪ পরিবর্তন নিয়ে খেলার সুফল পেয়েছে এদিন বাংলাদেশ দল। টস ভাগ্যটাও হয়েছে সুপ্রসন্ন। শ্রীলঙ্কা বোলারদের মাত্রারিক্ত সমীহ করে ৬৩টি ডট ব্যাটারদের মানসিকতা নিয়ে উঠিয়েছিল প্রশ্ন। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-কে কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতাও সেই ম্যাচে ছিল স্পষ্ট। ৭২ ঘন্টার মধ্যে ওইসব ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজে নিয়েছে ব্যাটাররা। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে উইকেটহীন ৫৯ বাংলাদেশকে দেখিয়েছে বড় স্কোরের স্বপ্ন। যদিও সেই স্বপ্নটা শেষ পাওয়ার প্লে-তে পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। শামীম (১১ বলে ১১) এবং জাকের আলী অনিকের (১৩ বলে ১২) ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটিংয়ের কারণে শেষ ৩০ বলে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৫ বাংলাদেশের বড় স্কোরের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ইনিংস ১৮০ ছুঁই ছুঁই হলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারতেন ফিল সিমন্স-সালাউদ্দিনরা, সেই ইনিংসটা থেমেছে ১৫৪/৫-এ।
এই ম্যাচে ওপেনিং পার্টনারশিপের ৪০ বলে ৬৩ ছিল বাংলাদেশের টার্নিং পয়েন্ট। স্বভাব বিরোধী ব্যাটিং করেছেন এদিন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম (৩১ বলে ৪ চার, ৩ ছক্কায় ১৬৭.৭৪ স্ট্রাইক রেটে ৫২)। এশিয়া কাপের প্রথম দুই ম্যাচে ১৪ এবং ০-এর পর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এই ওপেনার ফিফটি উদযাপন করেছেন ২৮ বলে। প্রত্যাবর্তন ম্যাচে সাইফ হাসানের ১০৭.১৪ স্ট্রাইক রেটে ২৮ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ৩০ রানের ইনিংসে অনেকে সন্তুষ্ট হতে না পারলেও তানজিদ তামিমকে সঙ্গ দেয়ার জন্য এমন ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই।
আরও পড়ুন
আফগানিস্তানকে হারিয়ে টিকে রইল বাংলাদেশ |
![]() |
আফগান বাঁ হাতি স্পিনার নূর আহমেদের ২৪টি ডেলিভারির মধ্যে ১৩টি ডট করেছে বাংলাদেশ ব্যাটাররা।
আফগান স্পিনারদের এদিন তেমন একটা সমীহ করেনি বাংলাদেশ ব্যাটাররা। এদিন ৪৮টি ডট করেছে বাংলাদেশ ব্যাটাররা। যার মধ্যে শেষ ১২ বলে ৫টি ডট একটু বেশিই মনে হয়েছে। যার মধ্যে তার একটি লুপ ডেলিভারিতে তানজিদ হাসান তামিম লং অনে দিয়েছেন ক্যাচ, অন্যটিতে প্যাডেল সুইপ করতে যেয়ে লিটন (১১ বলে ৯) এলবিডাব্লু।
বাংলাদেশ-আফগান ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে। এই পর্বে বাংলাদেশের ৫৯/০ এর বিপরীতে আফগানিস্তানের স্কোর ছিল ২৭/২। বাংলাদেশের চেয়ে ৯টি বেশি ডটও গড়ে দিয়েছে ব্যবধান (বাংলাদেশ ৪৮টি ডট, আফগানিস্তান ৫৫টি ডট)।
আফগানিস্তানকে শুরুতে ব্যাকফুটে নামিয়ে আনার কৃতিত্ব বাঁ হাতি স্পিনার নাসুমের।
আরও পড়ুন
রশিদদের ১৫৫ রানের লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ |
![]() |
সুযোগ পেলেই যে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারেন বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম, মঙ্গলবার রাতেও তা জানিয়ে দিয়েছেন। তার প্রথম স্পেলই (৩-১-৭-২) গড়ে দিয়েছে ব্যবধান। শুধু তা-ই নয়, ১৮তম ওভারে বল হাতে নিয়ে ৪ রানের বেশি খরচ করেননি এই কিপ্টে বোলার।
ইনিংসের প্রথম বলে ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে আফগান ওপেনার সাদিকুল্লাহ অটলকে এলবিডাব্লুউতে ফিরিয়ে দিয়ে যে উৎসবের আবহ দিয়েছিলেন নাসুম, তৃতীয় ওভারে ইব্রাহিম জাদরানকেও এলবিডাব্লুউতে আগাম উৎসবের বার্তা দিয়েছেন এই স্পিনার। ৪-১-১১-২, ২৪টি ডেলিভারির মধ্যে ১৬টি ডট! ভাবুন তো!
লেগ স্পিনার রিশাদও (৪-০-১৮-২) অনুসরণ করেছেন নাসুমকে। ফ্লাইটেড ফুলার ডেলিভারিতে গুলবাদিনকে রিটার্ন ক্যাচে (১৪ বলে ১৬) এবং প্যাডেল সুইপে প্রলুব্ধ করে গুরবাজকে (৩১ বলে ৩৫) ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচটা হাতের মুঠোয় এনেছেন রিশাদ।
আরও পড়ুন
দাবি না মানায় সংবাদ সম্মেলন বর্জন পাকিস্তানের |
![]() |
তাসকিন একটু খরুচে বোলিং করেও পেয়েছেন ২ উইকেট (৪-০-৩৪-২)। ব্যাটকে তলোয়ার বানানো ওমরজাইকে (১৬ বলে ১ চার, ৩ ছক্কায় ৩০) ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে ক্যাচ দিতে বাধ্য করাটাও ছিল টার্নিং পয়েন্ট।
বাকি দায়িত্বটা পালন করেছেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ (৪-০-২৮-৩)। নবীকে (১৫ বলে ১৫) প্লেড অনে ফিরিয়ে দেয়া মোস্তাফিজের প্রথম স্পেলটি ২-০-৯-১। পরের স্পেলটি ২-০-১৯-২। যে স্পেলে পর পর ২ ডেলিভারিতে রশিদ খান (১১ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ২০) এবং গজনফরকে আউট করে বাংলাদেশকে দিয়েছেন জয়ের সুবাস। এই জয়ে সুপার ফোর এর আশা বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। নেট রান রেটে এখনও মাইনাস (-০.২৭০)। আফগানরা সেখানে বাংলাদেশের কাছে ৮ রানে হেরেও নেট রান রেটে +২.১৫০। আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কার পরের ম্যাচেই নিষ্পত্তি হবে 'বি' গ্রুপ থেকে সুপার ফোর এর লাইন আপ।