৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭:৪৯ পিএম
নির্দিষ্ট একজন ব্যাটার বা বোলারের বিপক্ষে কোনো ক্রিকেটারের বিশেষভাবে ভালো পারফর্ম করার অসংখ্য নজির রয়েছে ইতিহাসে। আবার কিছু খেলোয়াড় রয়েছেন, যারা গোটা দলকেই বানিয়ে ফেলেন ‘প্রিয় প্রতিপক্ষ’। ফর্ম, ম্যাচের পরিস্থিতি যেমনই হোক, সেই দলটির বিপক্ষে তার ব্যাট বা বল হাতে জ্বলে ওঠাটা যেন অনিবার্য। গত দেড় বছর ধরে ভারতের বিপক্ষে ঠিক সেই কাজটাই সব ফরম্যাটে বারবার করে অজি ব্যাটার তাই হয়ে উঠেছেন দলটির মাথাব্যথার কারণ। প্রিয় প্রতিপক্ষক ভারতকে পেলেই যেন একটু বেশি হাসছে হেডের ব্যাট।
হেডের এই ‘ভারতপ্রেমের’ শুরুটা সেই গত বছর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল দিয়ে। প্রথম ইনিংসে খেলেন ১৭৪ বলে ১৬৩ রানের এমন ইনিংসে, যা প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবেও একদম গুঁড়িয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত অনায়াস জয় পায় অস্ট্রেলিয়ার। ম্যাচ সেরাও হন হেড। এরপরের মঞ্চ গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল। তবে এখানে বাড়তি কিছু তথ্য যোগ করে নেওয়া যেতেই পারে।
আর সেটা হল, চোটের কারণে বিশ্বকাপের অর্ধেক মিস করা হেড প্রথম ম্যাচ খেলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আর মাঠে নেমেই হাঁকান শতক। মানে, বাঁহাতি এই ব্যাটার স্রেফ ভারতই নন, অন্য দলের বিপক্ষেও বড় রান করতে জানেন। তবে সেটা যে রোহিত-বুমরাহদের তুলনায় একেবারেই যৎসামান্য, সেটা স্পষ্ট এক পরিসংখ্যানেই। যেখানে দেখা যাচ্ছে ২০২৩ সাল থেকে সব ফরম্যাটে ভারতের বিপক্ষে ১৯ ইনিংসে ৪টি সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে ১ হাজার ৫২ রান করেছেন হেড। গড় অবিশ্বাস্য ৬১.৯০!
আরও পড়ুন
আইপিএলে তান্ডবে চালানো হেড চ্যালেঞ্জ দেখছেন বিশ্বকাপে |
![]() |
একজন ব্যাটারের এমন গড় অবিশ্বাস্য এমনিতেই বলা যায়। তবে হেডের অন্য দলের বিপক্ষে একই সময়ের পরিসংখ্যান দেখলে আপনিও মানতে বাধ্য হবেন তার অসামান্য কীর্তি। ভারত বাদে বাকি দলের বিপক্ষে গত বছর থেকে ৫৪ ম্যাচে এখন পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ৮৭৫ রান করেছেন হেড। গড়? মোটে ৩৬.৮০! ফিফটি ১০টি, আর সেঞ্চুরি ভারতের সমান ৩টিই। জার্সি সাদা হোক বা রঙ্গিন প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতকে পেলেই হেডের এই দানবীয় ব্যাটিংয়ের দেখা মিলছে বারবার।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালেই যেমন। ২৪১ রানের টার্গেটে জাসপ্রিত বুমরাহ তোপে মাত্র ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে রীতিমত ত্রাহিত্রাহি অবস্থা অস্ট্রেলিয়ার। ইনিংসের শুরুর দিকে ভারতের তারকা পেসাদের কয়েকটি ডেলিভারিতে পুরোপুরি পরাস্ত হন হেড, অল্পের জন্য হননি বোল্ড বা ক্যাচ আউট। তবে একটু সেট হওয়ার পর ক্রমেই ভারতের মুঠো থেকে ম্যাচ বের করে নেন নান্দনিক সব শটের পসরা সাজিয়ে। স্বাগতিক দর্শকদের স্তব্ধ করে খেলেন ১২০ বলে ১৩৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। আসরে প্রথমবার ভারত পায় হারের দেখা। উল্লেখ্য, গ্রুপ পর্বে দুই দলের মুখোমুখি ম্যাচটি খেলেননি হেড।
তবে ফাইনালে নেমেই হয়ে যান আরও একবার ম্যাচ সেরা। ১২ বছর বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ, তাও ঘরের মাটিতে - এমন মেলবন্ধনের পথে কাঁটা হয়ে যাওয়ায় আজও ভারতের কাছে হেড এক দুঃখ, আক্ষেপ ও বিভীষিকার নামই বটে। বুমরাহর ওই স্পেলেই যদি তার বিদায় হত, কে জানে হয়ত কাপটা উঠত রোহিত শর্মার হাতেই!
আরও পড়ুন
কীভাবে এমন তাণ্ডব চালাচ্ছেন ট্রাভিস হেড? |
![]() |
হেড এরপর চলতি বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটের ম্যাচে আরও একবার জ্বলে ওঠেন ভারতের বিপক্ষে। মাত্র ৪৩ বলে খেলেন ৭৬ রানের দারুণ এক ইনিংস। এবার অবশ্য দলকে জেতাতে পারেননি। তবে চলমান ভারত-অস্ট্রেলিয়ার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে যা করেছেন, সেটা হয়ত গড়ে দিতে পারে ম্যাচের ভাগ্য।
গোলাপি বলের এই ম্যাচে ভারতের বোলারদের আর একবার বেধড়ক পিটিয়ে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী মেলে ধরেন তিনি। ১৭ চার ও ৪ ছক্কায় ১৪১ বলে হেডের ব্যাট থেকে এসেছে ১৪০ রান। দ্বিতীয় দিন শেষে হাতে পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারত পিছিয়ে আছে ২৯ রানে। দলটি যদি এখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে না পেরে হেরে যায়, তাহলে সম্ভবত আরও একবার ভারতের হারের মূল কারণ হওয়ার পাশাপাশি ম্যাচ সেরাও হয়ে যাবেন হেডই। এমন প্রিয় প্রতিপক্ষ কে না চায়!
৫ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৯ পিএম
প্রথম ম্যাচে প্রায় একই স্কোর নিয়ে বিশাল জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহীদ হৃদয়ের সাথে তানজিম হাসান সাকিবের ক্যামিওতে আড়াইশ ছুঁইছুঁই স্কোর যখন পেল বাংলাদেশ, জয়ের আশা কিছুটা হলেও বেড়ে গেল। তবে কুসাল মেন্ডিসের ঝড়ো ফিফটিতে সফরকারীদের চাপে ফেলে দিল লঙ্কানরা। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলা তানভীর ইসলাম এলেন ত্রাতা হয়ে, পাঁচ উইকেট নিয়ে ধস নামালেন ব্যাটিং অর্ডারে। সেই চাপ সামলে একাই লড়লেন জানিথ লিয়ানাগে। তার দারুণ এক ফিফটিতে জয়ের খুব কাছাকাছিও গেলেও শেষ রক্ষা আর হলো না শ্রীলঙ্কার। সিরিজে সমতা টানল বাংলাদেশ।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জিতেছে ১৬ রানে। টস জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল ২৪৮ রানে। রান তাড়ায় ৪৮.৫ ওভারে ২৩২ রানে থামে শ্রীলঙ্কার ইনিংস।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে ওয়ানডেতে জয় খরা কাটল বাংলাদেশের। আর অধিনায়ক হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচেই জয়ের দেখা পেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আগামী ৮ জুলাই তার দল মাঠে নামবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে, সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে।
ব্যাট হাতে শেষের দিকে নেমে দারুণ এক ক্যামিও খেলা তানজিম দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশের এনে দেন সাফল্য। এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে ফেরেন ওপেনার পথুম নিশাঙ্কা। ব্যাটার রিভিউ নিলেও ‘আম্পায়ার্স কল’-এ বজায় থাকে আউটের সিদ্ধান্ত।
এরপর ধীরে ধীরে ম্যাচে ফেরে শ্রীলঙ্কা। নিশান মাদুশকাকে নিয়ে কুসল শুরু করেন আগ্রাসী ব্যাটিং, যা পাল্টা চাপে ফেলে দেয় বাংলাদেশকে। অষ্টম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামকে দুই চার ও এক ছক্কায় ওড়ান। এরপরের ওভারে ঝড় বয়ে যায় মুস্তাফিজুরের ওপর দিয়ে। বাঁহাতি এই পেসারকে টানা চারটি চার মেরে কুসল স্রেফ ২০ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। মাত্র ৩৫ বলে দ্বিতীয় উইকেটে হয় ৫০ রানের জুটি।
কুসল ও মাদুশকার ব্যাটে চড়ে এক পর্যায়ে শ্রীলঙ্কার স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৭৫। প্রথম ওভারে ১৭ রান দেওয়ার পরও তানভীরের ওপর আস্থা রাখেন মিরাজ, যার প্রতিদান তিনি দেন দুহাতে। আক্রমণে এসেই ফিরিয়ে দেন মাদুশকাকে (২৫ বলে ১৭), ভাঙেন ৬৯ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি।
এরপর বড় উইকেটটাও আসে বাঁহাতি এই স্পিনারের হাত ধরেই। বিপজ্জনক কুসলকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মাত্র ৩১ বলে ৫৬ রান করার পর। এই উইকেটে স্পিন ধরায় এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে আসা শামীম হোসেনকে আক্রমণে আনেন মিরাজ। আর পার্ট টাইম স্পিনে চমকে দেখান তিনি। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা যখন তিনি শিকার বানান, তখন লঙ্কানদের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে মাত্র ৯৯।
পরের ওভারেই ফের উইকেট পেতে পারতেন শামীম। তবে কামিন্দু মেন্ডিসের ব্যাট ছুয়ে ক্যাচ উঠলেও তা গ্লাভসে জমাতে পারেননি জাকের আলী অনিক। বেশিক্ষণ অবশ্য টিকতে পারেননি। অন্যপ্রান্তে দারুণ বোলিং করা তানভীর খানিক বাদেই ৩৩ রান করা কামিন্দুকে ফিরিয়ে দেখা পান নিজের তৃতীয় শিকারের।
এরপর আবারও আঘাত হানেন তানভীর। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাড হয়ে ক্যাচ তুলে দেন দুনিথ ভেলালাগে। এবার সহজ ক্যাচ নেন জাকের আলী। ১৩২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
সপ্তম উইকেটে ২৪ রান যোগ করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন জানিথ লিয়ানাগে ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, যার ইতি টানেন মিরাজ। ওয়ানডেতে পাঁচ ম্যাচ পর উইকেটের দেখা পান ১৩ রান করা হাসারাঙ্গাকে ফিরিয়ে।
চাপ বজায় রেখে সুযোগ তৈরি করেছিলেন মুস্তাফিজুর। তবে ব্যাটে লেগে লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া লিয়ানাগের ক্যাচ ফেলে দেন জাকের আলি। সেই সময়ে তার রান ছিল ২৮।
নিজের স্পেলের শেষ ওভারে বাংলাদেশকে আরও একবার উল্লাসে ভাসান তানভীর। মাহেশ থিকসানাকে আউট করে পূর্ণ করেন ফাইফার। দুর্দান্ত বোলিং ফিগারে ইনিংস শেষ করেন তিনি ১০ ওভারে ২ মেডেন সহ ৩৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে।
তবে বাংলাদেশ শিবিরে ভীতি ছড়িয়ে শুরুতে জীবন পাওয়া লিয়ানাগে ম্যাচ হেলে দেন শ্রীলঙ্কার দিকে। তার একের পর এক বড় শটের সাথে যোগ হয় মিরাজদের ক্যাচ আর ফিল্ডিং মিসের মিছিল। তাতে বাড়তে থাকে রান, আর কমতে থাকে বাংলাদেশের জয়ের আশা।
ফিফটি পেরিয়ে লিয়ানাগে যখন ম্যাচ বাংলাদেশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবেন বলেই মনে হচ্ছিল, ঠিক সেই সময়েই মহাআকাঙ্ক্ষিত উইকেটটা এনে দেন মুস্তাফিজুর। আগের বলে ছক্কা হজমের পর রিটার্ন ক্যাচে লিয়ানাগেকে থামান ৭৮ রানে।
৪৯তম ওভারে আসিথার ক্যাচ নিজের বলে নিতে ব্যর্থ হন তানজিম। তবে পরের বলেই বোল্ড করেন দুসমান্থ চামিরাকে। বাংলাদেশ পায় রোমাঞ্চকর এক জয়।
এর আগে দিনের শুরুতে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। একাদশে শামীম ছাড়াও আসেন হাসান মাহমুদ। বাদ পড়েন লিটন দাস ও তাসকিন আহমেদ। শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। আগের ম্যাচে ফিফটি করা তানজিদ হাসান তামিম সাজঘরের পথ ধরেন এক ডিজিটেই।
তিনে নামা শান্ত সেট হয়েও পারেননি ইনিংস বড় করতে। তবে দারুণ গতিতে এগিয়ে যাওয়া ইমন এগিয়ে নেন বাংলাদেশের ইনিংস। তুলনায় তাওহীদ ছিলেন বেশ ধীরগতির। চল্লিশ থেকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে ফিফটিতে পা রাখেন ইমন, যা তার ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক।
তবে এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি। থামেন ৬৭ রানে। প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নামা মিরাজ দলকে হতাশ করেন আউট হন অল্পেও। ২৩ বলে ২২ রানের ইনিংসে সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন শামীম, তবে বড় শট হাঁকাতে গিয়ে ইতি ঘটে তার পথচলার।
জাকের আলী ও তাওহীদ মিলে এরপর কিছুটা ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। দলকে দুইশ পার করে তাওহীদ দেখা পান ফিফটির। তবে তিনিও বেশিক্ষণ আর টিকতে পারেননি। ৯ উইকেটে ২১৮ থেকে ২৪৮ রান পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোর টেনে নেওয়ার একক কৃতিত্ব কেবল তানজিমের। অপরাজিত থাকেন মাত্র ২১ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৩ রানে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে বলেছিলেন অনিশ্চয়তার কথা। শেষ পর্যন্ত এক বছরের জন্য স্থগিতই হয়ে গেল ভারতের সাথে বাংলাদেশের সাদা বলের সিরিজ। আগামী আগস্টে তাই বাংলাদেশে আসছেন না কোহলি-রোহিতরা।
শনিবার বিসিবি ও ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বাংলাদেশ-ভারতের সাদা বলের দুটি সিরিজ নতুন সূচি অনুযায়ী হবে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
আইসিসির ফিউচার ট্যুরস প্রোগ্রামে (এফটিপি) থাকা ভারতের এই সাদা বলের সিরিজের সফরে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা দুই দেশের। ঠিক কী কারণে এই বছর সিরিজটি হচ্ছে না, সেই ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি দুই দেশের বোর্ড।
বিসিসিআই এক অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, দুই বোর্ডের মধ্যে আলোচনার পর এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সময়সূচির সুবিধাজনক দিকগুলো বিবেচনা করে সিরিজটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আর বিসিবি বিবৃতিতে জানিয়েছে,
“প্রতীক্ষিত এই সিরিজের জন্য ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় থাকবে বিসিবি। এই সফরের সংশোধিত সূচি যথাসময়ে জানানো হবে।”
৫ জুলাই ২০২৫, ৬:৫১ পিএম
শুরুটা আদর্শ না হলেও পারভেজ হোসেন ইমনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ইনিংসের প্রথম অংশটা ভালোই কাটল বাংলাদেশের। তবে তরুণ এই ব্যাটার পারলেন না ইনিংস বড় করতে। তাওহীদ হৃদয় কিছুটা লড়লেও অন্য ব্যাটারদের কেউই পারলেন সেভাবে অবদান রাখতে। শেষের দিকে দারুণ এক ক্যামিও খেললেন তানজিম হাসান সাকিব। আর এতে ভর করে সিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে মোটামুটি একটা টার্গেট দিতে পারল সফরকারীরা।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ২৪৮ রানে। সর্বোচ্চ ৬৭ রান এসেছেন ইমনের ব্যাট থেকে।
বাংলাদেশের জন্য শুরুটা মোটেও সুখকর হয়নি। তৃতীয় ওভারেই সাজঘরের পথ ধরেন আগের ম্যাচে ফিফটি করা তানজিদ হাসান তামিম। আসিথা ফার্নান্দোর অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারি তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে করেন মাত্র ৭ রান।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ইমন মিলে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। দ্বিতীয় উইকেটে একশ’র বেশি স্ট্রাইক রেটে ৬৩ রানের জুটি গড়েন এই দুজন, যেখানে বেশি ইতিবাচক ছিলেন ইমনই। জুটি যখন জমে উঠছিল, তখন অফ স্পিনার চারিথ আসালাঙ্কাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত, তার আগে ১৪ রান করেন ১৯ বলে।
তবে ছন্দময় ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার বোলারদের চাপে রাখেন ইমন৷ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশে পা রাখেন পরপর দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির পর অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি। ভানিন্দু হাসারাঙ্গার গুগলিতে বোল্ড হয়ে থামে তার ইনিংস। তবে তার আগে তরুণ এই ওপেনার উপহার দেন ৬৯ বলে ৬৭ রানের দারুণ এক ইনিংস।
লিটন দাস একাদশের বাইরে থাকায় প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নামেন অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে পারেননি পরিস্থিতির চাহিদা মেটাতে। ৯ রানে দুশমন্থ চামিরার শর্ট বল পুল করতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ধরা পড়েন ডানহাতি এই ব্যাটার।
তাওহীদ একপ্রান্ত আগলে ব্যাট করেন খোলসবন্দী হয়েই। অনেকদিজ পর ওয়ানডে দলে ফেরা শামীম হোসেন অবশ্য ছিলেন ইতিবাচক। ব্যাট করেন ১০০ স্ট্রাইট রেটে। তবে শর্ট বলের ট্র্যাপে তাকে ফেলেন আসিথা ফার্নান্দো। ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান ২ চার ও ১ ছক্কায় ২২ রান করে।
শামীমের আউটে চাপ আরও বাড়ে বাংলাদেশের ওপর। জাকের আলি অনিককে নিয়ে সেটা মোকাবেলা করার পথে তাওহীদ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ২৫তম ব্যাটার হিসেবে ১ হাজার রানের ক্লাবে পা রাখেন। এই মাইলফলক স্পর্শ করতে তার লেগেছে ৩৩ ইনিংস। তার চেয়ে চেয়ে কম ইনিংসে এই কীর্তি গড়েছেন কেবল দুই ব্যাটার, শাহরিয়ার নাফিস ও এনামুল হক বিজয়। দুজনেরই লেগেছিল ২৯ ইনিংস।
রয়েসয়ে খেলা জাকেরকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে আসিথা ফের চাপে ফেলেন বাংলাদেশকে। তাওহীদের ওপর তাতে দায়িত্ব বর্তায় দলকে ভালো একটা স্কোর এনে দেওয়ার। তবে তিনিও হন ব্যর্থ, যদিও ভাগ্যকে দুষতেই পারেন তিনি।
আসিথার বলে ডিপ মিড উইকেটে ঠেলে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন তাওহীদ। শুরুটা সাড়া দিলেও পরে ফিরে যান তানজিম হাসান সাকিব। মাঝপথে গিয়েই আর ক্রিজে ফেরার সুযোগই পাননি তাওহীদ। রান আউটে শেষ হয় তার ২ বাউন্ডারিতে সাজানো ৫১ রানের ইনিংস।
সেই সময়ে মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যাবে ২২০ রানের মধ্যেই। তবে সেটা হতে দেননি তানজিম। চোখজুড়ানো সব চার-ছক্কার বাহারে ভড়কে দেন প্রতিপক্ষকে। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার এক ওভারে দুই চারের পর এক লেগ স্পিনারের স্পেলের শেষ ওভারে হাঁকান দুই ছক্কা। তবে ৪৯তম ওভারেই মুস্তাফিজুরকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের ইতি টানেন হাসারাঙ্গা। ২১ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থেকে যান তানজিম।
ফর্মে না থেকেই জায়গা মিলেছিল প্রথম ওয়ানডের দলে। তবে সেটা কাজে লাগাতে পারেননি লিটন দাস। ফলে দ্বিতীয় ওয়ানডের দল থেকে বাদ পড়েছেন কিপার-ব্যাটার লিটন দাস। তার জায়গায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচের দলে এসেছেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার শামীম হোসেন। টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়েছে বাংলাদেশ।
এছাড়া একাদশে এসেছে আরেকটি পরিবর্তন। চার মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে ৪৭ রানে চার উইকেট পাওয়া তাসকিন আহমেদ নেই এই ম্যাচে। দলে ফিরেছেন ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদ।
ম্যাচটি শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায়, সরাসরি দেখতে চোখ রাখুন টি স্পোর্টসের পর্দায়।
বাংলাদেশের একাদশ :
পারভেজ হোসেন ইমন, তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), জাকের আলী অনিক, তানজিম হাসান সাকিব, তানভীর ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ।
অনেকটা সময় ধরেই ছিলেন জাতীয় দলের বাইরে। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে বল হাতে ছিলেন ভালো ছন্দে। সেই সূত্রে এবার জাতীয় দলেও ফিরলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে রাখা হয়েছে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে।
চলতি মাসের তিন ম্যাচের সিরিজের জন্য শুক্রবার স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত সাইফউদ্দিন গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ দলে হয়ে পড়েছেন অনিয়মিয়। শেষবার জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করেন ২০২৪ সালের মে মাসে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে সেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার পর থেকেই ছিলেন দলের বাইরে।
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রধান কোচ সিমন্সকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ |
![]() |
এখন পর্যন্ত ৩৮টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৮.৭১ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ৪২ উইকেট। আর ব্যাট হাতে প্রায় ১১৫ স্ট্রাইক রেটে রান ২০৬।
সাইফউদ্দিনের চেয়েও দীর্ঘ বিরতি দিয়ে দলে ফিরেছেন নাঈম শেখ। ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াডে থাকা এই বাঁহাতি ওপেনার শেষবার এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছিলেন ২০২২ সালে। ৩৫ ম্যাচে ১০৩.৪৫ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ৮১৫।
এছাড়াও চোট কাটিয়ে ২০ ওভারের দলে ফিরেছেন অভিজ্ঞ পেসার তাসকিন আহমেদ। নেতৃত্বে যথারীতি থাকছেন লিটন দাস।
আগামী ১০ জুলাই ক্যান্ডিতে শুরু হবে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ। এরপর ১৩ জুলাই দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ডাম্বুলায়। আর ১৬ জুলাই সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ হবে কলম্বোতে। প্রতিটি ম্যাচই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭:৩০ টায়।
বাংলাদেশ স্কোয়াড:
লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, নাইম শেখ, তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলি অনিক, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, রিশাদ হোসেন, শেখ মাহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরীফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।