
“সবাই শুধু তোমার রেকর্ড আর মাইলফলকগুলো নিয়েই কথা বলবে - কিন্তু আমি মনে রাখব সেই অশ্রুগুলোর কথা, যা তুমি কখনও কাউকে দেখাওনি; আমি মনে রাখব সেই যুদ্ধগুলো, যা কেউ দেখেনি; আর তোমার সেই নিঃশর্ত ভালোবাসা, যা তুমি এই ফরম্যাটটাকে দিয়েছ। প্রতিটি টেস্ট সিরিজের পর তুমি ফিরে এসেছো আরও একটু বেশি জ্ঞানী হয়ে, একটু বেশি স্থির হয়ে। তোমার এই পুরো যাত্রাটা দেখা ছিল আমার জন্য অনন্য এক সৌভাগ্য। কোনো এক অজানা কারণে আমি সবসময় ভেবেছি তুমি সাদা পোশাকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবে। কিন্তু সবসময়ের মত নিজের হৃদয়ের কথাই শুনেছো।”
- কথাগুলো বিরাট কোহলিকে নিয়ে বলেছেন তার সহধর্মিণী ও বলিউড অভিনেত্রী আনুশকা শর্মা। ক্রিকেটের প্রতি বিরাট কোহলির নিবেদন সবচেয়ে কাছ থেকে যিনি দেখেছেন, তার বলা কথাগুলোই বুঝিয়ে দেয় লাল বলের ক্রিকেটকে কীভাবে ধারণ করতেন ভারতীয় এই ব্যাটিং গ্রেট।
এই করতেন বলার কারণ, গত কয়েকদিনের গুঞ্জনকে সত্যি করে অনেকটা নীরবেই ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন কোহলি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে নাকি জোর চেষ্টাই ছিল অত্যন্ত ইংল্যান্ড সফরে তাকে খেলানোর। মাস দুয়েক আগেও ব্যাপারটি নিয়ে যে আলোচনা হতে পারে, সেটাই তো ছিল বিস্ময়কর। কারণ, টেস্টকেই তো সবচেয়ে বেশি লালন করলেন। তবে আনুশকা শর্মা যেমনটা বলেছেন, মনের কথা শুনেছেন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার।
আরও পড়ুন
| নাহিদ-তাসকিনদের নতুন বোলিং কোচ টেইট |
|
ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসেও কোহলি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বর্ণিল এক চরিত্র হিসেবে। শচীন টেন্ডুলকার ভারতের ক্রিকেট ‘ঈশ্বর’, যিনি ছিলেন ব্যক্তি হিসেবে ধীরস্থির, শান্ত আর নিখুঁত ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী। আর কোহলি তার ঠিক বিপরীত। তিনি বুনো চরিত্রের ভীষণ আগ্রাসী একজন ক্রিকেটার, যিনি ব্যাটসম্যানশিপের চূড়ান্ত স্তরে থাকার পাশাপাশি মাঠে প্রতিপক্ষকে একচুল ছাড় দিতে নারাজ। অধিনায়ক ও খেলোয়াড় হিসেবে ভারতকে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে হয়। আর এই বিষয়গুলো অনেক সময়ই আড়াল হয়ে যায় হাজার হাজার রান বা সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরির স্তুতিগাথায়।
কোহলির অধিনায়কত্বে ভারত প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতে ২০১৮-১৯ মৌসুমে। তার সময়েই ভারত একটা লম্বা সময় ধরে থাকে টেস্টের র্যাংকিংয়ে শীর্ষে।
লাল বলের ক্রিকেটে কোহলির অবসরের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শচীন বলেছেন, ভারতীয় ক্রিকেটের পরের প্রজন্মকে এই ফরম্যাটের প্রতি আগ্রহী করে তোলায় তার উত্তরসূরি রেখেছেন বিশাল এক অবদান। খুব একটা ভুল বলেননি তিনি। তবে টেস্ট ক্রিকেটে যে নিবেদন, আগ্রাসন দেখাতেন কোহলি, তা পুরো বিশ্ব ক্রিকেটেই ছিল উপভোগ্য এক বিষয়।
আর সেই কাজটা করতে গিয়ে অধিনায়ক হিসেবে বড় একটা পরিবর্তন আনেন ভারতীয় ক্রিকেট সংস্কৃতিতে। ফিটনেস ও পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে একটা বিপ্লব এসেছে তার হাত ধরেই। কীভাবে টেস্টের প্রতিটি বলেই সমান একাগ্রতা নিয়ে লড়তে হয়, খাদের কিনারায় থেকেও আশার প্রদীপ জ্বালাতে হয়, সেটা সামনে থেকে দেখিয়েছেন ম্যাচের পর ম্যাচ ধরে।
সবসময়ই স্পিনে শক্তিশালী হওয়ায় ভারতের জন্য দেশের মাটিতে জেতাটা সহজ হলেও বিদেশের মাটিতে টেস্টে বড় সাফল্য পাওয়া ছিল ভীষণ অনিয়মিত ঘটনা। সেটা বুঝতে পেরে কোহলি সবার আগে জোর দেন গতিময়, আগ্রাসী পেসারদের দলে নেওয়ার। সেটার ফলও ভারত পায় হাতেনাতে। ‘সেনা’ দেশগুলোতে তার অধিনায়কত্বেই দলটি পায় নিজেদের ইতিহাসের সেরা সব সাফল্য। এই ফরম্যাটকে বিদায় জানানোর সময় কোহলি যখন দেখছেন দলে পেসারদের আধিপত্য এমনকি ঘরের মাটিতেও, তখন তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেই পারেন তিনি।
এক নজরে কোহলির টেস্ট ক্যারিয়ার :
• ১২৩টি টেস্ট
• ৯ হাজার ২৮৩ রান
• গড় : ৪৬.৮৫
• শতক : ৩০
• ডাবল সেঞ্চুরি : ৭ (ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ)
• ফিফটি ৩১
• সর্বোচ্চ : ২৫৪*
• অধিনায়ক হিসেবে ৬৮ ম্যাচে, ৪০টি জয় - ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
তবে টেস্টের কোহলিকে স্রেফ রান-সেঞ্চুরি দিয়ে মাপতে গেলে ভুলই করবেন আপনি। যে সময়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জোয়ারে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে পাঁচদিনের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ, সেই সময়েই কোহলি এই ফরম্যাটকে দিয়েছেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব। ব্যাটিংয়ে প্রতিটি রানের জন্য তার লড়াই, ফিল্ডিংয়ে প্রতিটি বলেই আগ্রাসন দেখানো, উইকেট পতনে বুনো উল্লাসে মেতে ওঠা, এই জিনিসগুলোর কারণেই তিনি সবার চেয়ে আলাদা হয়ে থাকবেন। এভাবেই এই যুগে এসেও ভারতের তরুণ প্রজন্ম কোহলিকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়, হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট খেলার, রেকর্ড গড়ার, ইতিহাসের অংশ হওয়ার।
আরও পড়ুন
| রোহিতের পর টেস্ট অবসরের পথে কোহলিও? |
|
এই প্রসঙ্গে স্টিভেন স্মিথ একবার বলেছিলেন,
“সে শুধু একজন গ্রেট খেলোয়াড়ই নয়, একজন দুর্দান্ত প্রতিপক্ষও। খেলার মাঠে বিরাট শুধুমাত্র নিজের প্রাণশক্তিই নিয়ে আসে না, পুরো দলের মাঝেও সেটা ছড়িয়ে দেয়।”
খেলোয়াড়দের পাশাপাশি দর্শকদের কাছেও কোহলি ছিলেন এমন একজন, যিনি টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি তৈরি করতে পেরেছিলেন অন্যরকম এক আবেদন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তেমনই একজন যেমনটা বলেছেন,
“আমরা শুধু তাকে খেলতেই দেখতাম না, আমরা তার করা প্রতিটি রান, প্রতিটি চিৎকার, শূন্যে মারা প্রতিটি ঘুষিকেও অনুভব করতাম। সে কেবল ক্রিকেট খেলতই না, সে এটিকে কেন্দ্র করেই চলত।”
একজন স্পোর্টসম্যানের জন্য এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে! কোহলি সেটা করতে পেরেছেন, কারণ টেস্ট ক্রিকেটকে তিনি সত্যিকারের ভালোবাসাই দিয়ে গেছেন শেষ দিন পর্যন্ত। এই কারণেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের বিদায়ী টেস্ট সিরিজে তিনি সংগ্রাম করে একটা সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, ছন্দে না থেকেও ছিলেন সিরিজের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। এতোটাই ছিল টেস্ট ক্রিকেটার কোহলির প্রভাব।
হার না মানা মানসিকতার কারণেই কোহলি ২০২০ সালের পর থেকে এই ফরম্যাটে সেরা ছন্দে না থেকেও লড়াই চালিয়ে যেতে পেরেছেন। আসলে ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের সময়টা বাদ দিলে কোহলির টেস্ট গড়টা থাকতে পারত আরও ইর্ষনীয়। এই মাপের একজন ব্যাটার কেন আর কীভাবে এত লম্বা সময় অফ ফর্মে আটকে থাকলেন, সেটা বড় এক রহস্যই থেকে যাবে। তবে ওয়ানডে গ্রেট কোহলিকে এরপরও আপনাকের টেস্টের সেরাদের কাতারের বিবেচনা করতেই হবে।
সেটা কেন, তা নিয়ে চলতে পারে নানা তর্ক। তবে ২০১৪ সালে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে চতুর্থ ইনিংস রান তাড়ায় যে ইনিংসটি খেলেছিলেন, সেটা ক্রিকেটের প্রিয় একজন ছাত্র সহজে ভুলতে পারবেন না। একটা হেরে যাওয়া ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি কীভাবে দাগ কেটে যেতে পারে, সেটা অনুভব করতে হলে আপনাকে সেই ম্যাচটি দেখতে হবে বারবার।
প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পর ৩৬৪ রানের টার্গেটে নেমে ড্রয়ের আশা বাদ দিয়ে ব্যাট চালান জয়ের লক্ষ্যে, প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যা ছিল অবিশ্বাস্য এক চেষ্টাই। এই দফায়ও সেঞ্চুরি করে ছুটছিলেন জয়ের লক্ষ্যেই। তবে নাথান লায়নের বলে ক্যাচ দিয়ে তার ফেরার পরই পথ হারিয়ে ভারত ম্যাচও হেরে যায়। আউট হওয়ার পর চোখেমুখে যে অবিশ্বাস আর হতাশা ছিল কোহলির, ঠিক সেই কারণেই তিনি টেস্ট গ্রেট হয়ে উঠেছেন। জয়ের জন্য শেষ বিন্দু নিংড়ে দেওয়া কোহলি তাই লাল বলের ক্রিকেটের একজন বড় বিজ্ঞাপন হয়েই প্রাণবন্ত থাকবেন ইতিহাসের পাতায়।
No posts available.
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৬ পিএম
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮:১৪ পিএম
১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:৫০ পিএম

সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্র, দ্বিতীয়টিতে নিরঙ্কুশ জয় নিউ জিল্যান্ডের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ২-০ ব্যবধান করার লক্ষ্য কিউইদের।
আগামী ১৮ ডিসেম্বর অতিথি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাউন্ট মাউঙ্গানুইয়ে ম্যাচের স্কোয়াডে পরিবর্তন এনেছে নিউ জিল্যান্ড। এজাজ প্যাটেল ও টম ব্লান্ডেল দলে ফিরেছেন। চোটের কারণে বাদ পড়েছেন ব্লেয়ার টিকনার। ফেরা হয়নি মিচেল স্যান্টনার ও ম্যাট হেনরির।
এক বছরেরও বেশি সময় পর টেস্ট দলে ডাক পেয়েছেন এজাজ। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে মুম্বাই টেস্টে ভারতের বিপক্ষে তিনি শেষ খেলেছিলেন। সেই ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার খেতাবও জিতেছিলেন এজাজ।
ক্রাইস্টচার্চে প্রথম টেস্টে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়া উইকেটকিপার-ব্যাটার টম ব্লান্ডেল এক ম্যাচ বিরতিতে ফিরেছেন। কাঁধের চোটের কারণে ফার্স্ট বোলার ব্লেয়ার টিকনার দল থেকে ছিটকে গেছেন।
তৃতীয় টেস্টে নিউজিল্যান্ড স্কোয়াড: টম ল্যাথাম (অধিনায়ক), টম ব্লান্ডেল (উইকেটকিপার), মাইকেল ব্রেসওয়েল, ক্রিস্টিয়ান ক্লার্ক, ডেভন কনওয়ে, জ্যাকব ডাফি, জ্যাক ফাউলকস, ড্যারিল মিচেল, এজাজ প্যাটেল, গ্লেন ফিলিপস, মাইকেল রে, রাচিন রবীন্দ্র, কেন উইলিয়ামসন ও উইল ইয়ং।

সিরিজের প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে রান-পাহাড়ে চড়েছিল দু’দল। প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাটিং করা ভারত তুলেছিল ১৭৫ রান, পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছেছিল রেকর্ডের খুব কাছাকাছি— তুলেছিল ২১৩ রান। তবে ধর্মশালায় ফিরতেই ফ্যাকাশে ম্যাচের রঙ।
রবিবার এগিয়ে যাওয়ার ম্যাচে প্রোটিয়াদের ১১৭ রান তাড়া করতে নেমে ২৫ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় পায় ভারত। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২–১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
এদিন টস হেরে আগে ব্যাটিং করে দক্ষিণ আফ্রিকা করে ১১৭ রান, যা ম্যান ইন ব্লুদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর।
টপ অর্ডারের ব্যর্থতার দিনে একমাত্র এইডেন মার্করামের ব্যাটেই সুর ওঠে। একাই দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নেমে ১৮.৩তম ওভারে ড্রেসিংরুমে ফেরেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে দলের সর্বোচ্চ ৬১ রান। ৪৬ বল মোকাবিলায় ২টি ছক্কা ও ৬টি চারে এই ইনিংস খেলেন মার্করাম।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, এদিন প্রোটিয়াদের মাত্র তিন ব্যাটার—মার্করাম, দোনোভান ফেরেইরা ও হেনরিখ নরকিয়া—দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেন। ফেরেইরা ১৫ বলে করেন ২০ রান এবং পেসার নরকিয়ার ব্যাট থেকে আসে ১২ রান।
অতিথিদের সর্বোচ্চ জুটি ছিল মার্কো জেনসন ও মার্করামের। এই জুটি থেকে আসে ৩৬ রান। এ ছাড়া দলীয় ১১৩ রানে ফেরার আগ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ছোট ছোট জুটি গড়ার চেষ্টা দেখা যায়। তবে বেশিরভাগই থিতু হওয়ার আগেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ১১৭ রানেই থামে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।
এদিন বল হাতে দারুণ এক কীর্তি গড়েন হার্দিক পাণ্ডিয়া। দুটি উইকেট নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে নিজের শততম উইকেট পূর্ণ করেন তিনি। এর আগে এই অলরাউন্ডার টি-টোয়েন্টিতে ১ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন।
পাণ্ডিয়ার পাশাপাশি দুটি করে উইকেট নেন হার্ষিত রানা, বরুণ চক্রবর্তী ও কুলদীপ যাদব।
১১৭ রান তাড়া করতে নেমে ধীরস্থির কৌশলেই এগোয় ভারত। মূলত সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য এবং ধর্মশালার কন্ডিশন মাথায় রেখে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ের বদলে স্বাভাবিক খেলাতেই মনোযোগ দেয় তারা। তার ফলও আসে মধুর।
সিরিজে দ্বিতীয় জয়ের দিনে অভিষেক শর্মা ও শুভমান গিলের জুটি ভাঙে দলীয় ৬০ রানে, অভিষেক ৩৫ রানে আউট হলে। কটক ও নিউ চণ্ডীগড়ে ১৭ রান করে আউট হওয়া অভিষেক আজ নিজের সংগ্রহ বাড়াতে সক্ষম হন।
মার্কো জেনসনের বলে বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন শুভমান গিলও। গত দুই ম্যাচে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে না পারা এই ওপেনার আজ করেন ২৮ রান। তবে সূর্যকুমার যাদব ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দি থাকেন। স্বাগতিক অধিনায়ক কটকের মতো আজও ১২ রান করেন। তাকে ফিরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে শীর্ষ উইকেটশিকারির দৌড়ে আরও এগিয়ে যান লুঙ্গি এনগিদি। টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৭৭টি উইকেট নিয়েছেন তিনি।
ভারতের ইনিংস শেষের পথে এগিয়ে নেন তিলক ভার্মা ও শিভাম দুবে। দুবের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ২৬ রান। এর মধ্য দিয়েই স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ৪ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। দু’জনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতেই জয় বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত।

বছরের শেষটা ভারত সফর দিয়ে করার কথা ছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের। তবে সেটি স্থগিত হয়ে গেছে। এই ফাঁকা সময়টা কাজে লাগাতে তাই দেশের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে উইমেন'স ক্রিকেট লিগ (ডব্লিউসিএল) আয়োজন করছে বিসিবি।
রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে সোমবার শুরু হবে ডব্লিউসিএলের খেলা। সেন্ট্রাল জোন, ইস্ট জোন, সাউথ জোন ও নর্থ জোনে ভাগ হয়ে খেলবেন নিগার সুলতানা জ্যোতি, ফাহিমা খাতুন, সোবহানা মোস্তারি, রাবেয়া খানরা।
উদ্বোধনী ম্যাচে সকাল ৯টায় মুখোমুখি হবে সেন্ট্রাল জোন-নর্থ জোন। একই দিন দুপুর দেড়টায় লড়বে ইস্ট জোন ও সাউথ জোন।
ডাবল লেগ পদ্ধতির এই টুর্নামেন্ট শেষ হবে আগামী ২৫ ডিসেম্বর। টুর্নামেন্টের শেষ দিন দুপুর দেড়টায় ফিরতি ম্যাচে লড়বে সেন্ট্রাল জোন ও নর্থ জোন। অর্থাৎ মৌসুমের শুরু ও শেষের ম্যাচ দুইটি খেলবে তারা দুই দল।
একনজরে চার দলের স্কোয়াড
সেন্ট্রাল জোন
নিগার সুলতানা জ্যোতি (অধিনায়ক), ইশমা তানজিম, দিলারা আক্তার, জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা, রিতু মণি, সাবিকুন নাহার জেসমিন, সুমাইয়া আক্তার, ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণা, জান্নাতুল মাওয়া, আনিসা আক্তার সোবা, মোসাম্মত ইভা, সুবর্ণা কর্মকার, লেকি চাকমা ও তমালিকা সুমনা।
ইস্ট জোন
ফাহিমা খাতুন (অধিনায়ক), স্বর্ণা আক্তার, রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক, হাবিবা ইসলাম পিংকি, সাথী রানী, ফাতেমা জাহান সোনিয়া, তাজ নেহার, ফুয়ারা বেগম, উন্নতি আক্তার, মুর্শিদা খাতুন, হালিমাতুল সাদিয়া, আশরাফি ইয়াসমিন আরথি, মুমতাহেনা হাসনাত সিনথিয়া, সুমি আক্তার।
নর্থ জোন
সোবহানা মোস্তারি (অধিনায়ক), শামীমা সুলতানা, সানজিদা আক্তার মেঘলা, শারমিন আক্তার সুপ্তা, ফারজানা ইয়াসমিন, শরিফা খাতুন, শারমিন সুলতানা, আফিয়া আসিমা ইরা, দিশা বিশ্বাস, মেহেরুন নেসা জয়া, লাকি খাতুন, ফারজানা আক্তার লিসা, পূজা চক্রবর্তী, নুসরাত জাহান।
সাউথ জোন
রাবেয়া খান (অধিনায়ক), মারুফা আক্তার, জুয়াইরিয়া ফেরদৌস, সুলতানা খাতুন, লতা মন্ডল, ফারজানা হক, মিষ্টি রানী সাহা, ফাতেমা আক্তার ইতি, ফাহমিদা ছোঁয়া, দীপা খাতুন, হ্যাপি আলম, আয়েশা আক্তার (জুনিয়র), লিমা খাতুন শিবানী রানী।

দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভারতকে বেশি দূর যেতে দিলেন না পাকিস্তানের বোলাররা। মোটামুটি সহজ লক্ষ্য পেয়ে তাই জয়ের স্বপ্ন হয়তো দেখছিল তারা। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় সেই স্বপ্নভঙ্গ! ভারতের কাছে হেরে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ শুরু করেছে পাকিস্তান।
দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমি মাঠে রোববার পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ৯০ রানে হারায় ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল। আগে ব্যাট করে মাত্র ২৪০ রানের পুঁজি নিয়ে চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের ১৫০ রানেই অল আউট করে দেয় ভারত।
পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচ হারের পর অবশেষে জয়ের দেখা পেয়েছে ভারতের যুবারা। এই ম্যাচের শুরুতেও ছিল দুই দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ছাপ। টসের সময় হাত মেলাননি দুই দলের অধিনায়ক।
অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেন কনিষ্ক চৌহান। সাত নম্বরে নেমে ৪৬ বলে ৪৬ রান করেন তিনি। পরে বল হাতে মাত্র ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তরুণ অফ স্পিনারই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে তেমন সুবিধা করতে পারেনি ভারত। আলোচিত মারকুটে ওপেনার বৈভব সুরিয়াবংশী মাত্র ৫ রান করে ফিরে যান। আরেক ওপেনার আয়ুশ মাত্র ঝড় তুলে মাত্র ২৫ বলে ৩৮ রান করে ফিরে যান।
তিন নম্বরে নেমে দুই দল মিলিয়েই ম্যাচের সর্বোচ্চ ৮৮ রানের ইনিংস খেলেন অ্যারন জর্জ। এরপর কনিষ্কের চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংসের সৌজন্যে আড়াইশর কাছে যায় ভারত।
পাকিস্তানের হয়ে ৩টি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ সায়াম ও আব্দুল সুবহান।
রান তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারায় পাকিস্তান। তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেন শুধু তিন ব্যাটার- উসমান খান (৪২ বলে ১৬), ফারহান ইউসুফ (৩৪ বলে ২৩) ও হুজাইফ আহসান (৮৩ বলে ৭০)।
কনিষ্ক ৩৩ রানে নেন ৩ উইকেট। এছাড়া মাত্র ১৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন দিপেশ দেবেন্দ্র।

দেশের প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য ৩২টি সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বরাবরের ন্যায় আবারও আয়োজিত হতে চলেছে রংপুর রাইডার্স বিএসজেএ মিডিয়া কাপ-২০২৫। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচেই মাঠে নামবে দেশের খেলাধুলার একমাত্র চ্যানেল টি স্পোর্টস। তাদের প্রতিপক্ষ জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ।
মাওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে বেলা ১১টায় শুরু হবে টি স্পোর্টস ও কালের কণ্ঠের ম্যাচ। ৩২ দলের টুর্নামেন্টে ‘এফ’ গ্রুপে টি স্পোর্টস ও কালের কণ্ঠের পাশাপাশি রয়েছে এটিএন নিউজ ও বাংলা নিউজ।
টুর্নামেন্টের সব খেলাই হবে হকি স্টেডিয়ামের নীল টার্ফে। সোমবার সকাল ৯টা থেকেই অবশ্য শুরু হয়ে যাবে ব্যাট-বলের লড়াই। তবে টি স্পোর্টসের ম্যাচ দিয়েই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে রংপুর রাইডার্স বিএসজেএ মিডিয়া কাপ-২০২৫ পাওয়ার্ড বাই এইস ডেভেলপার্স।
উদ্বোধনী দিনে সকাল ৯টায় খেলবে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও দৈনিক মানবজমিন এবং সময় টিভি ও দৈনিক নয়া দিগন্ত। এরপর সকাল ১০টায় লড়বে এটিএন বাংলা ও ক্রিকফ্রেঞ্জি এবং জাগো নিউজ ও ডিবিসি।
পরে বেলা ১১টায় টি স্পোর্টস ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সঙ্গে পাশাপাশি মাঠে খেলবে চ্যানেল আই ও দৈনিক কালবেলা। আর দুপুর ১২টায় দিনের শেষ দুই ম্যাচে খেলবে ডেইলি সান ও দৈনিক দেশ রুপান্তর এবং ডেইলি স্টার ও দৈনিক কালবেলা।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক টুর্নামেন্টের গ্রুপিং
গ্রুপ এ: যুগান্তর, বাংলাদেশ টেলিভিশন, সমকাল, ঢাকা পোস্ট
গ্রুপ বি: ডেইলি সান, ডিবিসি, দেশ রুপান্তর, জাগো নিউজ
গ্রুপ সি: ডেইলি স্টার, চ্যানেল ২৪, ইনকিলাব, দেশ টিভি
গ্রুপ ডি: চ্যানেল আই, বৈশাখি টিভি, কালবেলা, জি টিভি
গ্রুপ ই: সময় টিভি, এন টিভি, নয়া দিগন্ত, এখন টিভি
গ্রুপ এফ: টি স্পোর্টস, এটিএন নিউজ, কালের কণ্ঠ, বাংলা নিউজ
গ্রুপ জি: বাংলাদেশ প্রতিদিন, মাছরাঙা, মানবজমিন, আর টিভি
গ্রুপ এইচ: এটিএন বাংলা, বাংলা ভিশন, ক্রিকফ্রেঞ্জি, দীপ্ত টিভি