
সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের আবহ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। ইনিংস হার এড়াতে শেষ ৫ উইকেটে ২১৬ রানের দুরূহ টার্গেটের মুখে পড়া আয়ারল্যান্ডও বেশি কিছু স্বপ্ন দেখেনি। চতুর্থ দিন জয়ের আনুষ্ঠানিকতায় লেগেছে বাংলাদেশের ২ ঘন্টা ৪০ মিনিট।
টেস্টের প্রথম ২৫ বছরে বাংলাদেশ দলের পারফরমেন্স ছিল না বলার মতো। ১৫৪ টেস্টে ২২ টি জয়ের মধ্যে ৩টি ছিল ইনিংস ব্যবধানে। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরে ইনিংস ও ১৮৪ রানের ব্যবধানে জয়টি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড। ২০২০ সালে সেই মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস এবং ১০৬ রানে জয়ের রেকর্ড আছে বাংলাদেশ দলের। এ বছরের এপ্রিলে বাগে পাওয়া জিম্বাবুয়েকে চট্টগ্রামে একই ব্যবধানে হারানোর অতীত আছে বাংলাদেশের।
গত ১০ নভেম্বর ছিল টেস্টে বাংলাদেশের রজত জয়ন্তী উৎসব। হোটেল সোনারগাঁয়ে ক্রিকেট কনফারেন্স চলাকালে কেক কেটে টেস্টের রজত জয়ন্তীর উৎসবে নতুন রজত জয়ন্তীকে স্বাগত জানিয়েছে বিসিবি। সিলেটে বসে সেই বার্তাটা পেয়ে চাঙ্গা নাজমুল হাসান শান্ত'র দল বিসিবিকে দারুণ কিছু উপহার দিতে চেয়েছিল। ক্রিকেটারদের তরফ থেকে সেই উপহারটাই পেলো নব নির্বাচিত ক্রিকেট বোর্ড। আয়ারল্যান্ডকে ইনিংস এবং ৪৬ রানে হারিয়ে ক্রিকেটের এলিট এরিনায় নুতন দিনের শুরু করে প্রকারান্তরে টেস্টের রজত জয়ন্তী উদযাপন করেছে বাংলাদেশ দল।
এক টেস্টে অনেক রেকর্ড দেখেছে সিলেটের দর্শক। দেশের মাটিতে গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫৬০/৬ ডি. ছিল এতোদিন সর্বোচ্চ। সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ স্কোর (৫৮৭/৮ডি.) করেছে বাংলাদেশ।
এক ইনিংসে প্রথম ৪ ব্যাটারের সবার ফিফটি ( সাদমান-জয়-মুমিনুল-শান্ত), এমন রেকর্ডও এই প্রথম বাংলাদেশ করেছে চলমান টেস্টে। এই চার ব্যাটারের সবাই ৮০ করেছেন ( জয় ১৭১, সাদমান ৮০, মুমিনুল ৮২, শান্ত ১০০)। টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা আছে ১২টি। তবে এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের প্রথম। ২০০৭ সালে মিরপুরে ভারতের প্রথম চার ব্যাটারের সবার সেঞ্চুরির রেকর্ডটা অবশ্য মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে।
এক দশক পর টেস্টে প্রথম ইনিংসে প্রথম দুই পার্টনারশিপে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহ ( ১৬৮ও ১৭৩ ) দেখেছে সিলেট।
টেস্টের তৃতীয় দিন হামফ্রিসকে শিকারে প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে ৫০০ উইকেটের মাইলস্টোন ছুঁয়েছেন বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল। চতুর্থ দিন আরও ২টি উইকেট শিকার করে টেস্টে সাকিবের অনেক কাছে চলে এসেছেন এই বাঁ হাতি স্পিনার। ৭১ ম্যাচে ২৪৬ উইকেট শিকারে সাকিবের টেস্ট ক্যারিয়ার গেছে থমকে। তাকে আইডল মেনে পেছনে ছুটতে ছুটতে তাইজুলের শিকার সংখ্যা এখন ৫৬ টেস্টে ২৪২ উইকেট। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে আড়াইশ উইকেটের মাইলফলকের হাতছানি দিচ্ছে এখন তার সামনে।
চতুর্থ দিনে উইকেট যতোটা ভেঙ্গে স্পিনারদের ফেভার করবে বলে ধারণা করেছেন যারা, তাদের সেই ধারণা ভুল প্রমানিত হয়েছে। বরং এই দিনটিও ছিল ব্যাটারদের জন্য স্বস্তির। আয়ারল্যান্ড এদিন শেষ ৫ উইকেটে যোগ করতে পেরেছে ১৬৯ রান সে কারণেই। ঘন্টায় ১৪৮ কিলোমিটার গতির বল করে আয়ারল্যান্ড ব্যাটারদের কাঁপিয়ে দিতে পারেননি বাংলাদেশ পেসার নাহিদ রানা। ৬ষ্ঠ উইকেট জুটির ৩৩, ৭ম জুটির ৬৬ এবং নবম জুটির ৫৪ রানের কল্যানে দ্বিতীয় ইনিংসে স্কোর আড়াইশ (২৫৪/১০) পেরুতে পেরেছে আয়ারল্যান্ড।
অভিষিক্ত বাঁ হাতি স্পিনার হাসান মুরাদ প্রথম ইনিংসে পেয়েছেন ২ টি উইকেট ( ২০-৫-৪৭-২)। দ্বিতীয় ইনিংসে শিকার সংখ্যা দ্বিগুনে উন্নীত করেছেন (১১-১-৬০-৪)। তৃতীয় দিনের পড়ন্ত বেলায় তার ৩ ওভারের স্পেলে ( ৩-০-৮-২) ইনিংস জয়ের আবহ পেয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনে তার একটি স্পেলে (১১-২-৫২-২) ইনিংস ব্যবধানে হার মানতে বাধ্য হয়েছে আয়ারল্যান্ড। অন্য এন্ডে অভিজ্ঞ তাইজুলের (২৩.২-৩-৮৪-৩) সঙ্গে লড়াইটা ভালই জমিয়ে দিয়েছিলেন হাসান মুরাদ।
চতুর্থ দিনে শুরুটা ভালোই করেছিল আয়ারল্যান্ড। তবে তাইজুলের বলে সুইপ খেলতে যেয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন হামফ্রিস (১৬)। ৭ম জুটি ইনিংস হার এড়ানোর যুদ্ধ করেছে। তবে বালবার্নি-ম্যাকার্থির পার্টনারশিপ ৬৬-তে থামিয়ে দিয়েছেন হাসান মুরাদ। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়েছেন ৩৮ রান করা বলবার্নি।
লাঞ্চ থেকে ফিরে ফিফটি করে নাহিদ রানার বাউন্সারে পুল খেলতে চেয়েছিলেন ম্যাকব্রিন। কিন্তু টাইমিংটা সেভাবে হয়নি। শর্ট মিড উইকেটে থাকা ফিল্ডার হাসান মুরাদের হাতে ক্যাচ দেন ম্যাকব্রিন ( ১০৬ বলে ৫২)। নবম উইকেট জুটি ৫৪ রানে বিচ্ছিন্ন করেছেন হাসান মুরাদ। ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা মারতে চেয়ে লং অফে ক্যাচ দিয়েছেন নিল (৫৩ বলে ৩৬)। ক্যাচটি তৃতীয় প্রচেষ্ঠায় নিয়েছেন সাদমান।
রেকর্ডগাঁথা এই টেস্ট থেকে প্রেরণা নিয়ে মিরপুরে আরও ভাল কিছু'র প্রত্যাশা এখন ক্রিকেটারদের কাছে। শেষ টেস্টেও কর্তৃত্ব নিয়ে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইট ওয়াশের স্বপ্ন এখন দেখছে বাংলাদেশ সমর্থকরা।
No posts available.
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৮ পিএম
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫:৩৭ পিএম
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪:৩২ পিএম

মাউন্ট মঙ্গানুইতে চলছে রান উৎসব। প্রথম দিন রেকর্ডের পসরা সাজিয়ে সেই উৎসব শুরু করে নিউ জিল্যান্ড। আজ দ্বিতীয় দিনেও কিউইদের রান বন্যার জবাব দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজও।
এক উইকেটে ৩৩৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা নিউ জিল্যান্ড আজ ইনিংস ঘোষণা করেছে আরো ২৪১ রান যোগ করে। ১৫৫ ওভার ব্যাট করে ৮ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ৫৭৫ রান তুলে ক্ষান্ত হয় স্বাগতিকরা। ১৭৮ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা ডেভন কনওয়ে করেন ডাবল সেঞ্চুরি।
এরপর প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত দৃঢ়তায় কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৩ ওভারে ১১০ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অবশ্য এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে সফরকারীদের। ক্যারিবিয়রা পিছিয়ে এখনো ৪৬৫ রানে। ফিফটি করেছেন ব্র্যান্ডন কিং (৫৫), জন ক্যাম্পেবেলের রান ৪৫।
প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনটা বেশ ভালোয় শেষ করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাটিং সহায়ক পিচ আর কন্ডিশনের সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি দুই ক্যারিবিয় ওপেনার। এর আগে দিনের শুরুতে বোলাররাও নিউ জিল্যান্ডের রান তোলার গতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
নিউ জিল্যান্ডের বড় ইনিংসের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন দুই ওপেনারই। প্রথম দিনে টম লেথামের শতক আর দ্বিতীয় দিনে কনওয়ের দ্বি-শতক। ৩১ চারে ৩৬৭ বলে ২২৭ করা কনওয়ের এটি টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। এর আগেও অবশ্য একবার ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছিলেন ৩৪ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটার।
বাকি ব্যাটারদের মধ্যে ফিফটি করেন রাচিন রবীন্দ্র। ১০৬ বলে ৭২ রানে অপরাজিত ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটার। এছাড়া কেইন উইলিয়ামসনের ৩১ গ্লেন ফিলিপসের ২৯ আর এজাজা প্যাটেল করেন ৩০।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন জায়ডিন সিলস, অ্যাডারসন ফিলিপ ও জাস্টিন গ্রিভস। কেমার রোচ ও রোস্টন চেজের শিকার একটি।

অ্যাশেজে চলছে স্নিকো বিতর্ক। অ্যাডিলেড টেস্টে স্নিকোর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং এই প্রযুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক।
তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনের ঘটনা— গতকাল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটার অ্যালেক্স ক্যারি ৭২ রানে ব্যাট করছিলেন। জশ টাংয়ের বলে তাঁর ব্যাটে হালকা ছোঁয়া লেগে বল উইকেটরক্ষকের হাতে ধরা পড়ে। আউটের জোরাল আবেদন উঠলেও মাঠের আম্পায়ার নট আউট দেন।
ইংল্যান্ড রিভিউ নিলে তৃতীয় আম্পায়ার স্নিকোমিটারে একটি শব্দের স্পাইক লক্ষ্য করেন। তবে সেটি বল ব্যাটের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ের সঙ্গে মেলেনি। শব্দটি কয়েক ফ্রেম আগেই এসেছিল। অডিও-ভিডিওর এই অসামঞ্জস্যতার কারণে নট আউটের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।
আজ স্নিকোমিটার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিবিজি স্পোর্টস পুরো দায়ভার স্বীকার করে জানায়, অপারেটরের ভুলে বোলারের প্রান্তের মাইক্রোফোন নির্বাচন করা হয়েছিল। এর ফলেই অডিও ও ভিডিওর মধ্যে মিল পাওয়া যায়নি। এই ত্রুটি স্বীকারের পর আইসিসি ইংল্যান্ডকে তাদের হারানো একটি রিভিউ ফেরত দেয়।
স্নিকো নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়রা। প্যাট কামিন্সের বলে উসমান খাজা প্রথম স্লিপে সম্ভাব্য ক্যাচ ধরেছেন কি না সিদ্ধান্তে জেমি স্মিথকে নট আউট দেওয়া হয়। তৃতীয় আম্পায়ার স্নিকো দেখে জানান, বলটি স্মিথের হেলমেটে লেগেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের দাবি বলটি গ্লাভসে লেগেছিল।
স্টাম্প মাইক্রোফোনের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে স্টার্ক বলেন,
‘স্নিকোকে বাদ দেওয়া উচিত। এটাই সবচেয়ে খারাপ প্রযুক্তি। ওরা আগের দিন ভুল করেছে, আজও আরেকটা ভুল করল।’
দুই ওভার পরে কামিন্সের বলে স্মিথ ক্যাচ আউট হন, যা নিয়ে মাঠে হতাশা প্রকাশ করেন স্মিথ ও বেন স্টোকস। স্নিকোতে দেখা যায়, বল ব্যাট পেরোনোর এক ফ্রেম পর স্পাইক এসেছে।
স্নিকো নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক রিকি পন্টিংও। চ্যানেল সেভেনকে তিনি বলেন,
‘এখানে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অন্য দেশগুলোর প্রযুক্তির মতো ভালো নয়। আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বললে তারাও একই কথা বলবেন। তাঁরা এটা বিশ্বাস করতে পারেন না।’
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কোচ মার্কাস ট্রেস্কোথিক স্নিকো নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সমাধানের আহ্বান জানান,
‘গতকাল আমরা একটি খারাপ সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছি, আর আজও কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিষয়টি ঠিক করতে হবে।’

বোলিংয়ে এসে তৃতীয় বলেই সাফল্য পেলেন রিশাদ হোসেন। পরের ওভারে তৃতীয় বলে নিলেন আরেকটি উইকেট। তবে তৃতীয় ওভারটি আর ভালো গেল না বাংলাদেশের লেগ স্পিনারের। বিগ ব্যাশে বৃহস্পতিবার তাই মিশ্র দিন কাটল তার।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) মেলবোর্ন স্টারসের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে রিশাদের হোবার্ট হারিকেন্স। আগে ব্যাট করে ১৫৮ রানের বেশি করতে পারেনি হোবার্ট। ৪ ওভার বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে যায় মেলবোর্ন।
৩ ওভারে ৩৩ রান খরচ করে ২ উইকেট নিয়েছেন রিশাদ। তৃতীয় ওভারে খরুচে বোলিংয়ের পর তাকে আর আক্রমণে আনেননি হোবার্ট অধিনায়ক নাথান এলিস।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৯ নম্বরে নেমে ৩ বলে এক বাউন্ডারিতে ৫ রানে অপরাজিত থাকেন রিশাদ। বেন ম্যাকডারমট ৫২ বলে ৬৯, টিম ডেভিড ৩১ বলে ৩১ রান করলে কোনোমতে দেড়শ পার করে হোবার্ট হারিকেন্স।
পরে ষষ্ঠ ওভারে প্রথম আক্রমণে আসেন রিশাদ। তৃতীয় বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন থমাস রয়েস। পরের ওভারে আরেক ওপেনার জো ক্লার্ককে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচে পরিণত করেন রিশাদ হোসেন।
দুই ওভার শেষে রিশাদের নামের পাশে দাঁড়ায় ১৪ রানে ২ উইকেট। এরপর দশম ওভারে আবার বোলিং করতে এলে তার শেষ তিন বলে দুই ছক্কার সঙ্গে একটি ছক্কা মারেন মার্কাস স্টয়নিস। ওভারে খরচ হয় মোট ১৯ রান।
বাকি সময়ে বোলিং পাননি রিশাদ। হোবার্টের বাকি বোলাররাও আর কোনো উইকেট নিতে পারেননি।
৭ চার ও ২ ছক্কায় ৩১ বলে ৬২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন স্টয়নিস। আরেক অপরাজিত ব্যাটার ক্যাম্পবেল কেলাওয়ে ২৭ বলে করেন ৪১ রান।

আইপিএল নিলামে ১৪ কোটি ২০ লাখ রুপিতে কার্তিক শর্মাকে দলে ভেড়ায় চেন্নাই সুপার কিংস। রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া ১৯ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার ব্যাটারের যাত্রাটা ছিল বন্ধুর-কন্টকময়।
কার্তিকের পরিবার রাজস্থানের ভরতপুরের বাহনেরা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ক্রিকেট প্রশিক্ষণের খরচ জোগাতে পৈতৃক জমি বিক্রি করতে হয়েছিল পরিবারকে। মা নিজের গয়না বিক্রি করেন ছেলের স্বপ্নপূরণে।
কার্তিকের ক্রিকেট যাত্রা সম্পর্কে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিসকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কার্তিকের বাবা মনোজ শর্মা। যেখানে উঠে এসেছে দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই ও তাঁর পরিবারের অদম্য ইচ্ছাশক্তির গল্প।
গোয়ালিয়র এক টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে অর্থের অভাবে না খেয়ে থাকতে হয়েছিল কার্তিক ও তাঁর বাবাকে। মনোজ ছেলের সঙ্গে গিয়েছিলেন, ধরে নিয়েছিলেন চার-পাঁচ ম্যাচেই দল বাদ পড়বে- এতদিন থাকার সামর্থ্যই তাঁদের ছিল।
কিন্তু কার্তিকের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে দল ফাইনালে উঠে যায়। তখন হাতে আর টাকা না থাকায় বাবা-ছেলেকে থাকতে হয় আশ্রয়কেন্দ্রে। সেই স্মৃতির স্মরণ করে কার্তিকের বাবা মনোজ আইএএনএসকে বলেন,
‘একদিন তো আমাদের না খেয়েই ঘুমোতে হয়েছিল। ফাইনাল জিতে পুরস্কারের টাকা পাওয়ার পরেই আমরা বাড়ি ফিরতে পেরেছিলাম।’
জমি ও গহণা বিক্রি করার কথা স্বরণ করে মনোজ বলেন,
‘ওটা আমাদের জীবনের খুব কঠিন সময় ছিল, কিন্তু আমরা কখনও কার্তিকের স্বপ্ন ভাঙতে দিইনি। আমার স্ত্রী রাধা ও আমি একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম- যেভাবেই হোক কার্তিককে ক্রিকেটার বানাব।’
কার্তিকের ক্রিকেটীয় প্রতিভা ধরা পড়ে খুব ছোটবেলাতেই। মাত্র আড়াই বছর বয়সে ব্যাট হাতে বল মেরে বাড়ির দু’টি ফটোফ্রেম ভেঙে ফেলেন কার্তিক।
মনোজ নিজেও একসময় ক্রিকেটার ছিলেন, কিন্তু চোটের কারণে তাঁর খেলোয়াড়ি জীবন থেমে যায়। তিনি বলেন,
‘আমি নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি, তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার সন্তান করবে। আজ যা কল্পনারও ঊর্ধ্বে।’
প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও কার্তিকের পথ মসৃণ ছিল না। অনূর্ধ্ব-১৪ ও অনূর্ধ্ব-১৬ দলে খেলার পর টানা চার বছর দলে জায়গা পাননি। তবুও হাল ছাড়েননি কার্তিক। আইএএনএসকে তিনি বলেন,
‘আমি শুধু খেলে গেছি। বাবা আমাকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতেন। শেষে অনূর্ধ্ব-১৯, তারপর রঞ্জি ট্রফিতে সুযোগ পাই।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্সই শেষ পর্যন্ত আইপিএলের দরজা খুলে দেয় কার্তিকের। হঠাৎ খ্যাতি পেলেও মাটিতেই পা রাখছেন তিনি।

বছরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) দিয়ে শুরু। এরপর টানা ব্যস্ত সূচির মধ্যে ঢুকে যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তাই সামনের বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বিপিএলেও জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের পথে হাঁটবে বিসিবি।
সিলেটে আগামী ২৬ ডিসেম্বর শুরু হবে বিপিএলের দ্বাদশ আসর। প্রায় এক মাসের ব্যাট-বলের লড়াই শেষে টুর্নামেন্টের পর্দা নামবে আগামী বছরের ২৩ জানুয়ারি। এর দুই সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নতুন আসর।
মূল পর্বের খেলা শুরুর আগে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে হবে বাংলাদেশের। তাই বিপিএলে কোনো ক্রিকেটার চোট পেলে বা অত্যধিক ক্লান্ত হয়ে গেলে তার পক্ষে বিশ্বকাপে স্বাভাবিক পারফরম্যান্স করা একদমই সহজ হবে না।
তাই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট হলেও, এর শুরু থেকেই ক্রিকেটারদের ফিটনেস ও ওয়ার্কলোডের দেখভাল করবে বিসিবি। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানিয়েছেন বোর্ডের ক্রিকেট অপ্সের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
“আমাদের সবদিকে খেয়াল থাকবে। বিপিএলে যাদের খেলা আগে শেষ হয়ে যাবে তাদেরকে নিয়ে কাজ শুরু হয়ে যাবে কিন্তু বিপিএল ফাইনাল খেলার অনেক আগে থেকেই। আমরা হয়তো দেখবো যে, যারা প্লে অফে ওঠেনি, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছে যারা জাতীয় দলের সম্ভাব্য খেলোয়াড় তাদের নিয়ে আমরা কাজ করা শুরু করে দেব।”
এসময় তার পাশে থাকা অপ্সের ইনচার্জ শাহরিয়ার নাফীস পুরো প্রক্রিয়াটা ব্যাখ্যা করেন।
“আমরা গত বছরও এই পদক্ষেপটা নিয়েছিলাম, এবারও থাকছে। বোর্ডের একজন ট্রেনার পুরো বিপিএল কাভার করবেন। জিপিএসের মাধ্যমে জাতীয় দলের সম্ভাব্য ক্রিকেটারদের টুর্নামেন্টজুড়ে ওয়ার্কলোড ম্যানেজ হবে। ওই ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে যদি কোন প্লেয়ার রেড জোনে থাকে, সেইটা ওই ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে কমিউনিকেটেড করে দেওয়া হবে, এই ক্রিকেটারকে বিশ্রাম দিতে হবে।”
আরও পড়ুন
| রংপুর রাইডার্স-বিএসজেএ মিডিয়া কাপের সেমিফাইনালে কালের কণ্ঠ |
|
ফাহিম জানান, বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ দুটো খেলার জন্য জানুয়ারির ২৮ তারিখেই ভারতে চলে যাবে বাংলাদেশ দল।
“বিপিএল শেষ হওয়ার পরপরই কিন্তু ছোট্ট করে ঘরেই ঘরের মাটিতেই কিছু ট্রেনিং প্রোগ্রাম হবে দুই তিন দিনের জন্য। কারণ সময় খুব কম। দল খুব সম্ভবত যদি ভুল না করে থাকি... এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে হয়তো দলটা ২৮ তারিখে চলে যাবে বেঙ্গালুরুতে।”
“ওখানে আমরা দুটো প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলব বিশ্বকাপের ঠিক আগে। একটা নামিবিয়ার সঙ্গে, অন্যটা আফগানিস্তানের বিপক্ষে। তাই ব্যাঙ্গালুরুতে আমরা ২৮ তারিখে চলে যাব, আইসিসির মূল টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে।”
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপের শুরু হবে বাংলাদেশের পথচলা।