১১ অক্টোবর ২০২৫, ৩:৫৬ পিএম
লাহোরে কাল থেকে শুরু হচ্ছে পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্ট। এই ম্যাচ দিয়ে দুই দলের শুরু করছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৫-২৭ চক্র। আগের চক্রে প্রোটিয়ারা চ্যাম্পিয়ন হলেও পাকিস্তান সেভাবে সুবিধা করতে পারেনি। নতুন চক্র দুই দলই নিশ্চয়ই শুরুটা উজ্জ্বল করতে চাইবে।
পাকিস্তানের সামা টিভির প্রতিবেদন, পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি দিয়েই ইতিহাসের পাতায় নাম লিখাতে চলেছেন আসিফ আফ্রিদি। মাঠে নামার একদিন আগে আজ স্বাগতিকদের প্রথম টেস্টের একাদশ পেয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। একাদশে আছেন আসিফও। কাল মাঠে নামলেই টেস্টে পাকিস্তানের দ্বিতীয় বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবে নাম লিখাবেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পেশওয়ারে ১৯৮৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর জন্ম আসিফের। কাল অভিষেকের দিন তাঁর বয়স হবে ৩৮ বছর ২৯১ দিন। সবকিছু ঠিক থাকলে গত ৭০ বছরে পাকিস্তানের সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার হবেন তিনি।
আরও পড়ুন
‘প্রিয়’ সংস্করণে কি জিততে ভুলে গেল বাংলাদেশ |
![]() |
টেস্টে পাকিস্তানের সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটারের জায়গা ধরে রেখেছেন মিরন বখশ। ১৯৫৫ সালে এই লাহোরে ভারতের বিপক্ষে ৪৭ বছর ২৪৭ দিন বয়সে টেস্টে অভিষেক হয়েছিল মিরনের। তিনিও ছিলেন একজন অফস্পিনার। টেস্ট ইতিহাসে সব দলের মধ্যেও তালিকায় তিনি দ্বিতীয় বয়স্ক ক্রিকেটার।
মিরনের চেয়ে বেশি বয়স নিয়ে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ইংল্যান্ডের জেমস সাউদারটন। ১৮৭৭ সালে মেলবোর্নে ৪৯ বছর ১১৯ দিনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল এই ব্যাটারের।
একাদশে আসিফের সুযোগ মিলেছে আরেক স্পিনার সাজিদ খান জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায়। নুমান আলির সঙ্গে সাজিদেরই জুটি বাঁধার কথা ছিল। আসিফ ৫৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। শিকার করেছেন ১৯৮ উইকেট। ১৩ বার নিয়েছেন ইনিংসে ৫ উইকেট, ১০ উইকেট নিয়েছেন দুবার।
পেস আক্রমণে ফিরছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। এক বছর পর টেস্টে ফিরছেন এই বাঁহাতি পেসার। তাঁর সঙ্গী হবেন হাসান আলি। তিনি সবশেষ টেস্ট খেলেছেন সিডনিতে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। বাঁহাতি ওপেনার ইমাম-উল-হকও ফিরছেন দলে। তিনি টেস্ট খেলেছিলেন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে।
প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের একাদশ:
ইমাম-উল-হক, আবদুল্লাহ শফিক, শান মাসুদ (অধিনায়ক), বাবর আজম, সৌদ শাকিল, মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটকিপার), সালমান আলি আগা, শাহিন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলি, নুমান আলি ও আসিফ আফ্রিদি।
No posts available.
১৩ অক্টোবর ২০২৫, ৬:৪১ পিএম
১৩ অক্টোবর ২০২৫, ৫:৫৮ পিএম
লাহোরে দ্বিতীয় দিন সকালে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং। সেনুরান মাথুসামির ঘূর্ণি জাদুতে ইনংসের শেষ ১৬ রানে স্বাগতিকেরা হারায় ৫ উইকেট। বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত দিয়েও প্রোটিয়া বাঁহাতি স্পিনারের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস থেমে যায় ৩৭৮ রানে।
প্রথম দিন ইমাম-উল হকের পর আজ সেঞ্চুরির আক্ষেপ পুড়লেন অধিনায়ক সালমান আলি আগাও। ৫ উইকেটে ৩১১ থেকে দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিং শুরু করে পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সালমান ষষ্ঠ উইকেটে যোগ করেন ১৬৩ রান। ৭৫ রানে রিজওয়ানকে ফিরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন মাথুসামি।
লোয়ার অর্ডারে নুমান আলি ও সাজিদ খান রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হন। শাহিন শাহ আফ্রিদি ফেরেন ৭ রানে। একপ্রান্ত আগলে সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন সালমান। তবে অপরপ্রান্ত থেকে পাচ্ছিলেন না সঙ্গ। শেষ উইকেট হিসেবে প্রেনেলান সুব্রায়েনের শিকার হওয়ার আগে ৯৩ রান করেন পাকিস্তান অধিনায়ক। ১৪৫ বলে ৯৩ রান আসে তাঁর ব্যাট থেকে। ইনিংসে ছিল ৩টি ছক্কা ও ৫টি চার।
গতকাল ওপেনার ইমামও আউট হয়েছিলেন ৯৩ রানে। শান মাসুদ করেছিলেন ৭৬ রান। আজ রিজওয়ানও ফেরেন সত্তরের ঘরে। ৩২ ওভার বল করে ১১৭ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন মাথুসামি। টেস্টে এই বাঁহাতি স্পিনারের সেরা বোলিং ফিগার এখন এটি।
তবে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো অবস্থায় নেই দক্ষিণ আফ্রিকাও। ওপেনার রায়ান রিকেলটন (৭১) ও টনি ডি জর্জি ফিফটি করলেও দিন শেষে ২১৬ রান তুলতেই ৬ উইকেট নেই অতিথিদের। ৮১ রানে অপরাজিত আছেন জর্জি, ৬ রানে মাথুসামি। পাকিস্তানের ৯টি উইকেট নিয়েছেন প্রোটিয়া স্পিনাররা। পাল্টা ঘূর্ণি জাদুতে নাকাল হচ্ছে সফরকারীরাও। নুমান এরই মধ্যে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন সাজিদ ও সালমান।
টুমি সেখুখুনের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে পয়েন্টের দিকে খেললেন স্বর্ণা আক্তার। দ্রুত ১ রান নিতে পড়ে গেলেন রান আউটের শঙ্কা। কিন্তু উইকেটরক্ষকের ভুলে উল্টো ওভারথ্রো থেকে তিনি পেয়ে গেলেন ২ রান। পৌঁছে গেলেন ব্যক্তিগত পঞ্চাশে, গড়লেন রেকর্ড।
মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচে সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঝড় তুলেছেন স্বর্ণা আক্তার। মাত্র ৩৫ বলে তিনি খেলেছেন ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস। ৩টি চারের সঙ্গে দুর্দান্ত শটে ৩টি ছক্কা মেরেছেন তরুণ অলরাউন্ডার।
এই ইনিংস খেলার পথে মাত্র ৩৪ বলে ফিফটি করেছেন স্বর্ণা। ওয়ানডেতে এটি বাংলাদেশের ব্যাটারদের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। চলতি বছরের এপ্রিলেই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯ বলে ফিফটি করেছিলেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। ৬ মাসের মধ্যে সেই রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন স্বর্ণা।
সব মিলিয়ে মেয়েদের ওয়ানডেতে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়ান্দ্রা ডটিনের। ২০১৩ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ২০ বলে ফিফটি করেছিলেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি।
এছাড়া ছক্কার রেকর্ডেও বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে নিজেকে সবার ওপরে তুলেছেন ১৮ বছর বয়সী ব্যাটার। তার আগে বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটার ওয়ানডেতে এক ম্যাচে ৩টি ছক্কা মারতে পারেননি।
বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে এত দিন ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড ছিল জ্যোতির। ২০২৩ সালের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫১ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলার পথে ২টি ছক্কা মেরেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তার এই রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন স্বর্ণা।
পাঁচ নম্বরে নামা স্বর্ণার তাণ্ডবে শেষ ৫ ওভারে ৫৭ রান পেয়েছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে তাদের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ২৩২ রান। ওয়ানডে বিশ্বকাপে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। গত বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা করেছিলে ৭ উইকেটে ২৩৪ রান।
ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে রয়েসয়ে মন্থর শুরু করে বাংলাদেশ। একাদশে ফেরা ফারজানা হক পিঙ্কি ৭৬ বলে ৩০ ও আরেক ওপেনার রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক ৫২ বলে করেন ২৫ রান।
পরে দ্বিতীয় উইকেটে ৭৭ রানের জুটি গড়েন জ্যোতি ও শারমিন আক্তার সুপ্তা। জ্যোতির ব্যাট থেকে ৪২ বলে ৩২ রান। সুপ্তা খেলেন ৭৭ বলে ৫০ রানের ইনিংস।
এরপর পাঁচ নম্বরে নেমে তাণ্ডব চালান স্বর্ণা। যার সৌজন্যে এই প্রথম বিশ্বকাপে এক ইনিংসে দুই ফিফটি করার সাফল্য পায় বাংলাদেশ।
গড়পড়তা অন্য অনেকের চেয়ে খানিক দেরিতেই স্বীকৃত ক্রিকেটে পথচলা শুরু মোহাম্মদ রুবেলের। বয়সের কাটা ২৯ পেরোনোর পর এই রহস্য স্পিনার খেললেন এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে। চট্টগ্রামের হয়ে নিজের প্রথম সংস্করণেই করলেন বাজিমাত। চট্টগ্রামের বিভাগের হয়ে ৮ ম্যাচে ৫.২১ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ১০ উইকেট। নজরকাড়া পারফরম্যান্সে হাতে তুলেছেন ‘মোস্ট প্রমিজিং ক্রিকেটার’ পুরস্কার।
এই পর্যায়ে আসতে রুবেলকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বেশ লম্বা সময়। ঢাকার দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলেছেন প্রায় ৭ মৌসুম। তারপর সাধারণ অফ স্পিনার থেকে নিজেকে ভেঙে, গড়েছেন রহস্য স্পিনার হিসেবে। বদলে যাওয়ার ছাপ রেখেছেন এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টেও। অফ স্পিনের সঙ্গে ক্যারম বল, লেগ স্পিনের মিশেলের ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম ফাইনালে জায়গা করতে না পারলেও নিজেকে নিংড়ে দিয়ে রুবেল পেয়েছেন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের খেতাব। এনসিএলে শেষে ব্যক্তিগত সাফল্য, বোলিংয়ে পরিবর্তন, দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগ লিগে সুযোগ তৈরি, সব মিলিয়ে একজন পেশাদার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে টি স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলছেন রুবেল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ।
টি স্পোর্টস: শেষ থেকেই শুরু করি। প্রথমবার স্বীকৃত ক্রিকেট খেললেন। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের পুরস্কারও জিতলেন। সব মিলিয়ে আপনার এই পথচলাটা কেমন ছিল?
মোহাম্মদ রুবেল: এত বড় জায়গায় প্রথমবার খেলব। খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম। একইসঙ্গে আত্মবিশ্বাসীও ছিলাম, যদি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই তাহলে ভালো কিছু করতে পারব।
অধিনায়ক থেকে শুরু করে দলের সবাই আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছে। সিনিয়র ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ, সবার থেকে অনেক সাহস পেয়েছি। আমার যেহেতু প্রথমবার ছিল, এমন সমর্থন পাওয়ায় ভালো কিছু করাটা সহজ হয়ে গেছে। এটাই আমার জন্য বড় পাওয়া ছিল, এমন সহায়ক একটা দল।
টি স্পোর্টস: এনসিএলের জন্য প্রস্তুতিটা কীভাবে নিয়েছেন?
রুবেল: এনসিএলের আগে চট্টগ্রামে এক মাসের ক্যাম্প হয়েছে। তখন থেকেই আমাকে অধিনায়ক বা সিনিয়র ক্রিকেটাররা বলেছেন, আমি শুরু থেকে এনসিএল খেলার সুযোগ পাব। তাই সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছি।
টি স্পোর্টস: চট্টগ্রাম দলে নাঈম হাসানের মতো অফ স্পিনার আছেন। সচরাচর দুজন অফ স্পিনার একসঙ্গে খেলে না। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দলের পক্ষ থেকে কেমন বার্তা পেয়েছিলেন?
রুবেল: আমার ট্যাগটা অফ স্পিনার ঠিক আছে, তবে আমি ভ্যারিয়েশন একটু বেশি ব্যবহার করি। গতানুগতিক অফ স্পিনের মতো করি না। এ কারণে হয়তো সুযোগটা একটু বেশি ছিল। নাঈম অফ স্পিনার হিসেবে খেলবে আর আমি অনেকটা মিস্ট্রি স্পিনারের মতো। সেরকমভাবেই আমাকে বলে রেখেছিল। আমিও সেভাবে প্রস্তুত হয়েছি। সেই হিসেব করেই খেললাম।
প্রথম ম্যাচে উইকেট ১টা পেয়েছি, তবে মাত্র ১৬ রান দিয়েছি। সেই ম্যাচের পরই আসলে আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে গেছে। সেখান থেকে চেষ্টা করেছি যত ভালো করা যায়। রাজশাহীর বিপক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলাম। অধিনায়কও আমার ওপর খুব আস্থা রেখেছেন, যখন প্রয়োজন আমি বল করতে পারব। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। প্রথম বছর খেলতে এসেই এই ভরসাটা দিতে পেরেছি, ভালো কিছু করেছি।
টি স্পোর্টস: একটু পেছনে ফিরি। বছরের শুরুতে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে ১৫ ম্যাচে ৪৩ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন। তারপর চট্টগ্রামের রিজিওনাল টি-টোয়েন্টিতে ১৫ উইকেট নিয়ে আবার টপ হলেন। এবার এনসিএলেও ভালো করলেন। বছরটা কী নিজের মনে হচ্ছে?
রুবেল: ২০২৫ সালটা অবশ্যই সব দিক দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে। শুধু এই বছর বলব না, ২০২৩-২৪ মৌসুমের সেকেন্ড ডিভিশন থেকেই সামনের দিকে আছি। সেবার ১৬ ম্যাচে ৩৭ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে ছিলাম। তারপর ২০২৪-২৫ মৌসুমে ফার্স্ট ডিভিশনেও সর্বোচ্চ উইকেট। চট্টগ্রামের রিজিওনাল টি-টোয়েন্টিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো গেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার এনসিএলও খেললাম।
টি স্পোর্টস: যেটা বলছিলেন, আপনি অনেক বৈচিত্র্য ব্যবহার করেন বোলিংয়ে। এনসিএলেও আমরা দেখলাম ক্যারম বল করছেন, একই অ্যাকশনে লেগ স্পিন করছেন। এসব রপ্ত করলেন কীভাবে?
রুবেল: আমি আগে নরমাল অফ স্পিনই করতাম। কিন্তু ২০২৩-২৪ মৌসুমের সেকেন্ড ডিভিশন শুরুর ২ মাস আগে আমার মনে হলো, যদি নরমাল অফ স্পিনই করি, তাহলে বেশি ওপরে খেলতে পারব না। একটা জায়গায়ই আটকে থাকতে হবে। তাই একটু ভিন্ন চিন্তা করলাম, ভ্যারিয়েশন আনার কথা ভাবলাম।
তো ওই মোটামুটি ২ মাসের মধ্যেই আমি সব রপ্ত করি। ক্যারম বল, লেগ স্পিন, ব্যাক স্পিন- যা কিছুই পারি, ২ মাসের মধ্যেই সব কিছু আয়ত্তে এনেছি। তারপর সেকেন্ড ডিভিশনে গিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হলাম। আর ফার্স্ট ডিভিশনে খেললাম। তারপর থেকে আল্লাহর রহমতে চলছে।
টি স্পোর্টস: রহস্য স্পিনার হওয়াটা তো সবসময়ই ঝুঁকির ব্যাপার...
রুবেল: আমি টানা ৭ বছর সেকেন্ড ডিভিশন লিগ খেলেছি। তেমন খারাপ করতাম না। ভালো ইকোনমি রেটে প্রতি বছর ২০-২১ উইকেট হয়তো নিতাম। তবে কখনও টপে থাকতে পারতাম না। এখন ভালো জায়গায় খেলতে তো ঝুঁকি নিতে হবে।
তাই ভাবলাম, ঝুঁকি নিয়েই দেখি। সফল হলে তো ভালো। নইলে আগের জায়গায়ই ফিরে যাব। এই চিন্তা থেকেই ২ মাসে সব ট্রাই করলাম। এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ সব কিছু আমার নিয়ন্ত্রণে আছে।
টি স্পোর্টস: রহস্য স্পিনারদের ক্ষেত্রে প্রায়ই একটা জিনিস দেখা যায় যে, অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। বাংলাদেশের সঞ্জিত সাহা দ্বীপ, আলিস আল ইসলাম বা বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার সুনিল নারাইনকেও অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। আপনি কখনও এসবের সম্মুখীন হয়েছেন?
রুবেল: এখন পর্যন্ত বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সেভাবে কারো থেকে কিছু শুনতে হয়নি। রহস্য স্পিনার হওয়ায় এই ঝুঁকিটা আছে আমি জানি। সামনে আরো যত বড় জায়গায় খেলব, আরো বেশি খুঁটিয়ে দেখা হবে হয়তো। এ ছাড়া অনেকে আবার ঈর্ষাবশতও অনেক কথা বলে।
তবে আমি সব কিছুর জন্যই আমি প্রস্তুত আছি। কখনো যদি প্রশ্নের মুখে পড়ি, তাহলে পরীক্ষা দিয়ে আবার আসব। যতক্ষণ পর্যন্ত জানি যে, আমার বোলিং অ্যাকশন ঠিক আছে, ততক্ষণ আমার কোনো ভয় বা চিন্তা নেই। সামনে যা আসুক, ওভারকাম করতে পারব।
টি স্পোর্টস: আপনার বয়স এরই মধ্যে ২৯ পেরিয়ে গেছে। তুলনামূলক বেশ দেরিতে স্বীকৃত ক্রিকেটে পথচলা শুরু করলেন। এর আগের পথটা কেমন ছিল?
রুবেল: চট্টগ্রামে শতাব্দী ক্রিকেট একাডেমিতে আবু বকর সিদ্দিক ভাইয়ের কোচিংয়ে আমার শুরু। ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ বয়সভিত্তিক ট্রায়ালে গিয়েছিলাম। তখন বয়সের কারণে বাদ পড়ে যাই। তারপর বকর ভাইয়ের কাছে যাই। তখনও চট্টগ্রামে ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন কিছুই খেলিনি। একদম নতুন ছিলাম। টেপ টেনিস খেলতাম। ক্রিকেট বলে সেভাবে খেলিনি।
শতাব্দী একাডেমিতে যাওয়ার পর বকর ভাই আমার প্রতিভা দেখেই হয়তো সরাসরি চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগে নিয়ে নেন। তখন থেকেই মূলত আমার শুরু। চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার লিগে বড় বড় প্লেয়াররা খেলতেন। তাদের সঙ্গে খেলে সিরিয়াস ক্রিকেটটা শুরু।
টি স্পোর্টস: চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার ক্রিকেটে কবে এলেন?
রুবেল: শুরুতে আমি আসলে ব্যাটার ছিলাম। ২০১৪-১৫ মৌসুমের চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগে আমি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছিলাম। আমার এক বড় ভাই আছেন, তিনি বললেন, ‘তুই তো প্রিমিয়ার লিগে ভালো খেলছিস, তোকে আমি ঢাকায় নিয়ে যাব।’ ২০১৫-১৬ মৌসুমে আমি সেকেন্ড ডিভিশনের ক্লাব মিরপুর বয়েজ ক্রিকেট ক্লাবে যাই। প্রথমে ট্রায়াল নেয়। কিন্তু সেখানে তাদের পছন্দ হয়নি। বেশি বল খেলার সুযোগও পাইনি নেটে।
আমাকে অন্য আরেকটা দল থেকেও বলছিল। তবে মিরপুর বয়েজে চট্টগ্রামের আরো ৫-৬ জন থাকায় সেখানেই যাই। ট্রায়ালে বাদ দেওয়ার পর বড় ভাইরা ক্লাবের কর্মকর্তাদের বললেন, ‘ভাই ওরে বাদ দিয়েন না। প্রয়োজনে একটা প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলান। ভালো খেললে রাখবেন। খারাপ খেললে তো নেই।’ ওনারা সিনিয়র প্লেয়ার ছিলেন সেই দলের, তাই ওনাদের কথা রাখলেন।
তারপর ফতুল্লার আউটার মাঠে একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলি। সেদিন ৬ ওভারে ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিই। আবার ব্যাটিংয়ে সাত নম্বরে নেমে ১৭ বলে করি ৪৫ রান। সেখান থেকেই ঢাকা লিগে শুরু। এখন সম্পর্কটা এমন হয়ে গেছে, মিরপুর বয়েজ দলটা সাজাতে আমার অনেক ইনপুট থাকে। ক্লাবের কর্তারা অনেক ভরসা করে আমার ওপর।
২০২৩-২৪ মৌসুমে যখন সর্বোচ্চ উইকেট নিলাম, তখন ক্লাবের কর্তারাই আমাকে বললেন, তুই যেহেতু সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছিস, সেকেন্ড ডিভিশন আর খেলিস না। এবার ফার্স্ট ডিভিশন খেল। সর্বোচ্চ উইকেট পাইছিস, এখন ফার্স্ট ডিভিশন দলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবি।
টি স্পোর্টস: প্রথম বিভাগে তো শুধু ম্যাচই খেললেন না, আবারও সবার ওপরে ছিলেন...
রুবেল: সেকেন্ড ডিভিশন শেষ হওয়ার পর আমাকে ৫-৬টা দল থেকে কল করেছে। তুলনামূলক দ্বিগুণ টাকাও দেবে বলেছে। তবে দলের পরিবেশ ও বাকি সব কিছু মিলিয়ে অর্ধেক টাকায় গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমিতে খেলতে রাজি হয়ে যাই। দলের পরিবেশই মূল। সেটা ভালো পাওয়ায় পারফরম্যান্সও ভালো হলো। সেখান থেকেই এখন আলহামদুলিল্লাহ চলছে।
টি স্পোর্টস: স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম টুর্নামেন্টে ভালো করলেন। সামনের সময় নিয়ে কী ভাবছেন?
রুবেল: সামনে তো এখন এনসিএলের চার দিনের টুর্নামেন্ট আছে। দলে সুযোগ পেলে অবশ্যই ভালো করার চেষ্টা করব। আর বিপিএল খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে। যদি প্লেয়ার্স ড্রাফটে নাম থাকে, কোনো দলে সুযোগ পাই, তাহলে আত্মবিশ্বাস আছে ভালো করার। নিজের সবটা দিয়েই চেষ্টা করব।
ভারতের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ানোর চেয়েও বরং বলা যেতে পারে দিল্লিতে সম্মান বাঁচানোর কাজটা ভালোভাবে সেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলোঅনে পড়ে উল্টো লিড নিয়েছেন রোস্টন চেজেরা।
আজ দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৯০ রানে অলআউট হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ জিততে তাতে ভারতের প্রয়োজন পড়ে ১২১ রান। চতুর্থ দিনে সিরিজ জয়ের অর্ধেক কাজ সেরে ফেলেছে স্বাগতিকরা। দিন শেষে ভারতের স্কোর ৬৩/১।
ক্রিজে রয়েছেন লোকেশ রাহুল (২৫*) ও সাই সুদর্শন (৩০*)। মঙ্গলবার শেষ দিনে জেতার জন্য ভারতের প্রয়োজন আর মাত্র ৫৮ রান।
চতুর্থ দিনের খেলায় ভারতের প্রথম ইনিংসের চেয়ে ৯৭ রানে পিছিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলকে ইনিংস হার থেকে বাঁচানোর পথে জন ক্যাম্পবেল ও শাই হোপ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন।
এদিন সেঞ্চুরি করে ব্যক্তিগত ১১৫ রানে ফেরেন ক্যাম্পবেল। ১২টি চার ও ৩টি ছয়ে সাজানো তাঁর ইনিংস। ক্যাম্পবেল ফিরলেও আরও বেশ কিছুক্ষণ ক্রিজে ছিলেন হোপ। লিড পাওয়ার পর দলীয় ২৭১ রানে আউট হন এই ব্যাটার। তার আগে খেলেন ১০৩ রানের ইনিংস। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ১২টি চার ও ২টি ছয়।
ক্যাম্পবেল দলীয় ২১২ রানে ফেরার পর হোপ ফেরেন ২৭১ রানে। এরপরই মূলত ওয়েস্ট ইন্ডিজের পতন শুরু হয়। ২৯৩ রান থেকে ৩১১ রান পর্যন্ত ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে, যার তিনটিই ছিল কুলদীপ যাদবের।
প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর ভারতের এই লেগ স্পিনার দ্বিতীয় ইনিংসে নেন আরও তিনটি।
সফরকারীরা যেখানে ৩২০ রানের মধ্যে গুটিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে হাল ধরেন জেইডন সিলস। প্রায় ৮২ মিনিটের মতো টিকে থেকে ৩২ রান করেন এই পেসার। জেইডনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৯০ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাতে ১২১ রানের লিড নিতে পারে তাঁরা।
জবাব দিতে নেমে দলীয় ৯ রানে যশস্বী জয়সওয়ালকে হারায় ভারত। তবে শেষ বিকেলে আর কোনো উইকেট পড়েনি। চতুর্থ দিনের খেলা শেষে ভারতের স্কোর ৬৩/১। ক্রিজে রয়েছেন কে এল রাহুল (২৫*) ও সাই সুদর্শন (৩০*)। আগামীকাল নতুন দিন শুরু করবে স্বাগতিকরা।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে দাপুটে পারফরম্যান্সে আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার পর এবার ওয়ানডেতে ঠিক উল্টো পরিণতির শঙ্কায় বাংলাদেশ। এরই মধ্যে তারা হেরেছে প্রথম দুই ম্যাচ। তৃতীয় ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে মিলবে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা।
সিরিজ হেরে যাওয়ার পর এবার হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর অভিযানে মঙ্গলবার মাঠে নামবে বাংলাদেশ। আবু ধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে ম্যাচ।
ওয়ানডেতে সবশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। সেবার ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এবার তার কাঁধেই পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব।
গত বছরের ওই উইন্ডিজ সফরের সঙ্গে মিল আছে আরও। ওই সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তারা হেরে গিয়েছিল ওয়ানডে সিরিজের সব ম্যাচ।
একইভাবে এবার এরই মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করেছে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জাকের আলি অনিকের নেতৃত্বাধীন দল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ওয়ানডেতে দুই ম্যাচে লড়াই করতেই পারেনি বাংলাদেশ।
আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের মূল হুমকি হয়ে আছেন রশিদ খান। প্রথম দুই ওয়ানডেতে রশিদের ১৮.৩ ওভার খেলেও কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেনি বাংলাদেশ। ওভারপ্রতি তিনের কম রান খরচ করে উল্টো দুই ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছেন তর্কযোগ্যভাবে বিশ্ব সেরা লেগ স্পিনার।
কম যাননি গত বছরের আইসিসি বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের পুরস্কার জেতা আজমতউল্লাহ ওমরজাই। নতুন বলে বাংলাদেশের ব্যাটারদের নাচিয়ে দুই ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়েছেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
ব্যাটিং ব্যর্থতাই মূলত বাংলাদেশের বড় চিন্তার কারণ। দুই ম্যাচেই হতাশ করেন ওপেনাররা। তিন নম্বরে নামা অভিজ্ঞ নাজমুল হোসেন শান্তও বেশ কিছু ম্যাচ ধরে ছন্দে নেই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৭ রান করার পর পাঁচ ইনিংসে তার সংগ্রহ ২৩, ১৪, ০, ২ ও ৭ রান।
শান্তর ব্যর্থতায় মিডল অর্ডার থেকে তেমন সাপোর্ট পাচ্ছে না বাংলাদেশ। অথচ বাঁহাতি ব্যাটার হওয়ায় রশিদের বিপক্ষে তার ওপরই ছিল বড় ভরসা। শেষ ম্যাচে তাই আরেক বাঁহাতি ব্যাটার শামীম হোসেনকে নিতে পারে বাংলাদেশ।
বোলিংয়ে অবশ্য দুর্ভাবনার কারণ নেই। তবে টানা খেলার কারণে বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে কয়েকজনকে। সেটি তেমন প্রভাব ফেলার কথা নয়। কারণ প্রথম দুই ম্যাচে সব বোলাররাই ভালো করেছেন।