৭ অক্টোবর ২০২৪, ১:১৮ এম

আগের ম্যাচে ব্যাটিং ও বোলিং, দুটিতেই ছিলেন ব্যর্থ। তবে পরের ম্যাচেই নিজেকে ফিরে পেলেন সাকিব আল হাসান। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্রিকেট লিগ টি-টেন এ রবিবারের ম্যাচে টেক্সাস গ্ল্যাডিয়েটরসের বিপক্ষে ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়েছেন বাংলদেশ অলরাউন্ডার। যদিও জয়ের দেখা পায়নি তার দল লস অ্যাঞ্জেলেস ওয়েভস।
সাকিব ক্রিজে গিয়েছিল ছয় নম্বর ওভারে, দলের রান তখন তিন উইকেটে ৩৯। সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার টিভ ডেভিডকে নিয়ে গড়েন বিধ্বংসী এক জুটি। মাত্র ১১ বলে ২০ রান করেন সাকিব, ইনিংস সাজান তিন চার ও এক ছক্কায়। ২০ বলে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন ডেভিড। চতুর্থ উইকেটে এই দুজন যোগ করেন ৭৭ রান, যা লস অ্যাঞ্জেলেসকে এনে দেয় ১২৬ রানের লড়িয়ে স্কোর।
বল হাতেও ওপেনিং করেন এই দুজন। দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে আসেন সাকিব। নিজের দ্বিতীয় ওভারে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার ফেরান বিপজ্জনক দাভিদ মালানকে। ১৬ বলে ৩৮ রান আসে সাবেক ইংলিশ ওপেনারের ব্যাট থেকে।
সাকিব তার তৃতীয় ও শেষ ওভারে শিকার বানান নিক কেলিকে। তিন ওভারের স্পেল শেষ করেন ২ উইকেটে ৩৭ রানে। ওভার প্রতি রান দেন ১২.৩৩ করে, যা দলের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার।
১০ বলে অপরাজিত ৩৯ রান করে টেক্সাস গ্ল্যাডিয়েটরকে ৮.৫ ওভারেই জয়ের বন্দরে নিয়ে যান জেমস ফুলার। দলটিতে খেলছেন সাবেক পাকিস্তান অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদিও। যদিও ব্যাটে বা বলে ভুলে যাওয়ার মত একটা দিনই কেটেছে তার। ১ ওভারে ২৪ রান দেওয়ার পর ব্যাট হাতে পাঁচ বলে করতে পেরেছে মাত্র ২ রান।
No posts available.

ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার লড়াই সামলে রাওয়ালপিন্ডিতে ৬ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজ শুরু করেছে পাকিস্তান। আর ম্যাচের পরদিন তারা পেয়েছে আইসিসির দুঃসংবাদ। দলের প্রত্যেকের ম্যাচ ফি থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে ২০ শতাংশ অর্থ।
মূলত স্লো ওভার রেটে ধরা পড়েছে পাকিস্তান। প্রায় চার ঘণ্টায় শেষ হওয়া ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৪ ওভার পিছিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। তাই আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি ওভারের জন্য ৫ শতাংশ করে মোট ২০ শতাংশ ম্যাচ কেটে নেওয়ার শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
আইসিসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী অবশ্য ম্যাচ চলাকালেও পেনাল্টি দিতে হয়েছে পাকিস্তানের। শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ৪৬তম ওভার শেষে বাকি ৪ ওভারের জন্য ত্রিশ গজের বৃত্তের ভেতরে একজন বেশি ফিল্ডার রাখতে হয়েছে তাদের।
সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কাকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে যান হাসারাঙ্গা। তবে শেষ পর্যন্ত জয়ের বন্দরে দলকে নিতে পারেননি অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। দুর্দান্ত এক জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় পাকিস্তান।
ম্যাচ শেষে দুই আম্পায়ার অ্যালেক্স ওয়ার্ফ ও আসিফ ইয়াকুবের সঙ্গে থার্ড আম্পায়ার শরফুদৌল্লা ইবনে শহীদ সৈকত এবং চতুর্থ আম্পায়ার রশিদ রিয়াজের অভিযোগের ভিত্তিতে পাকিস্তানকে শাস্তি দেন ম্যাচ রেফারি আলি নাকভি।
পাকিস্তান অধিনায়ক শাহিন শাহ আফ্রিদি নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নেওয়ায় আনুষ্ঠানিক শুনানির প্রয়োজন পড়েনি।

২১ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে অ্যাশেজ সিরিজ। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মর্যাদাপূর্ণ এই লড়াইয়ের আগে বেশ ভালোভাবে প্রস্তুতি সেরেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। চোট কাটিয়ে ফিরেই প্রস্তুতি ম্যাচে তুলে নিলেন ৬ উইকেট।
পার্থের লাইলাক হিলে আজ ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিপক্ষে রীতিমতো বোলিং ঝড় তোলেন স্টোকস। ১৬ ওভার বোলিং করে ৫২ রান খরচায় ৬টি উইকেট তুলে নেন তিনি।
কাঁধের চোট কাটিয়ে চার মাস পর আজ মাঠে নামেন স্টোকস। সবশেষ জুলাইয়ে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে খেলেছিলেন তিনি। ম্যানচেস্টারের চতুর্থ টেস্টে কাঁধে চোট পেয়েছিলেন ৩৪ বছর বয়সি এই অলরাউন্ডার। এরপর আর মাঠে নামা হয়নি।
গত মাসে নেটে অনুশীলনে ফিরেন স্টোকস। ফেরার ম্যাচে গতি, আগ্রাসন ও নিখুঁত লাইন-লেন্থ—দশে দশ ছিল তাঁর। ফিটনেসের দিক থেকেও পূর্ণ সক্ষমতার দেখিয়েছেন তিনি।
২০১১ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাশেজ সিরিজ জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। অ্যাশেজ পুনরুদ্ধারে স্টোকসের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ইংল্যান্ডের জন্য আশার খবর।

জাকজমকপূর্ণ ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট আইপিএলের ১৯তম আসরের খেলোয়াড় নিলাম হবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর। টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের বাইরে হবে খেলোয়াড়দের নিলাম। দুবাই ও জেদ্দার পর এবার আবু ধাবিতে চলবে ক্রিকেটার কেনা-বেচার দর কষাকষি।
২০২৪ সালে প্রথমবার দেশের বাইরে গিয়ে দুবাইয়ে হয় আইপিএলের নিলাম। পরে গত বছরের নভেম্বরে দুই দিনের মেগা নিলাম হয় সৌদি আরবের জেদ্দায়। এবার আবু ধাবিতে বরাবরের মতো মিনি নিলামটি হবে এক দিনের।
ক্রিকেটভিত্তিক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর প্রতিবেদনে জানা গেছে আইপিএলের নিলামের ব্যাপারে সব তথ্য।
আগামী ১৫ নভেম্বরে ভারতীয় সময় দুপুর ৩টার মধ্যে প্রতিটি দলকে তাদের 'রিটেইনড' (ধরে রাখা) ও 'রিলিজড' (ছেড়ে দেওয়া) ক্রিকেটারদের তালিকা জমা দিতে হবে। এরপর তাদের নিলামে নিবন্ধনকৃত ক্রিকেটারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেওয়া হবে।
সেখান থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো নিজেদের পছন্দের ক্রিকেটারদের নাম জানিয়ে তালিকা ফেরত পাঠাবে। পরে সেই ফেরত দেওয়া তালিকা পর্যালোচনা করে মিনি নিলামের জন্য চূড়ান্ত সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করবে আইপিএল কর্তৃপক্ষ।
এখন আপাতত চলছে আইপিএলের ট্রেডিং উইন্ডো। যা চলবে নিলামের এক সপ্তাহ আগপর্যন্ত। এরপর আবার আইপিএল শুরুর এক মাস আগে থেকে ট্রেডিং করতে পারবে দলগুলো। ১৬ ডিসেম্বরের নিলাম থেকে কেনা কোনো ক্রিকেটারকে ট্রেড করা যাবে না।
এরই মধ্যে আইপিএলের দশ দলের মধ্যে পাঁচটি দল ট্রেডিংয়ে অংশ নিয়েছে। রাজস্থান রয়্যালস থেকে সাঞ্জু স্যামসনকে নিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। বিপরীতে রাজস্থানে পাঠানো হয়েছে দুই অলরাউন্ডার স্যাম কারান ও রবীন্দ্র জাদেজাকে।
এছাড়া লখনৌ সুপার জায়ান্টস থেকে শার্দুল ঠাকুর ও গুজরাট টাইটান্স থেকে শেরফান রাদারফোর্ডকে নিয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। আর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স থেকে অর্জুন টেন্ডুলকারকে নিয়েছে লখনৌ।
সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের বিশ্বকাপের পর ১৫ মার্চ শুরু হবে আইপিএলের নতুন আসর। যা চলবে ৩১ মে পর্যন্ত।

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টেস্ট রেকর্ড বাংলাদেশের ভাল নয়। ২ বছর আগে নিউ জিল্যান্ডকে ১৫০ রানে হারিয়ে দিয়ে এই ভেন্যুতে একমাত্র টেস্ট জয় উদযাপন করেছে বাংলাদেশ। এই ভেন্যুতে বাকি তিনটি টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাইরে থাকা জিম্বাবুয়ের কাছে উপর্যুপরি ২ বার হারের তিক্ত স্বাদ আছে বাংলাদেশ দলের। সে কারণে নয়নাভিরাম এই স্টেডিয়ামে টেস্ট নবীশ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অবতীর্ন হওয়ার আগে ছিল দুর্ভাবনা। তবে বিশেষজ্ঞ ব্যাটিং কোচ হিসেবে আশরাফুল দায়িত্ব নিয়ে বদলে দিয়েছেন ব্যাটারদের মানসিকতা। তার যাদুর স্পর্শে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যাটিংয়ে একগাদা রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ দল।
টেস্টে বাংলাদেশের ২টি সর্বোচ্চ স্কোর ৬৩৮ এবং ৫৯৫/৮ডি. দেশের বাইরে। প্রথমটি ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কার গল-এ। দ্বিতীয়টি ২০১৭ সালে নিউ জিল্যান্ডের হ্যামিল্টনে। দেশের মাটিতে গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫৬০/৬ ডি. ছিল এতোদিন সর্বোচ্চ। সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ স্কোর (৫৮৭/৮ডি.) করেছে বাংলাদেশ।
এক ইনিংসে প্রথম ৪ ব্যাটারের সবার ফিফটি ( সাদমান-জয়-মুমিনুল-শান্ত), এমন রেকর্ডও এই প্রথম বাংলাদেশ করেছে চলমান টেস্টে। এই চার ব্যাটারের সবাই ৮০ করেছেন ( জয় ১৭১, সাদমান ৮০, মুমিনুল ৮২, শান্ত ১০০)। টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা আছে ১২টি। তবে এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের প্রথম। ২০০৭ সালে মিরপুরে ভারতের প্রথম চার ব্যাটারের সবার সেঞ্চুরির রেকর্ডটা অবশ্য মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে।
এক দশক পর টেস্টে প্রথম ইনিংসে প্রথম দুই পার্টনারশিপে বাংলাদেশের বড় সংগ্রহ ( ১৬৮ও ১৭৩ ) দেখেছে সিলেট। এমন একটি রেকর্ডবহুল তৃতীয় দিন শেষে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। ইনিংস ব্যবধানে জয় থেকে ৫ উইকেট দূরে বাংলাদেশ। যেখানে ইনিংস হার এড়াতে ২১৬ রান দরকার আয়ারল্যান্ডের। চতুর্থ দিনেই জয়ের আনুষ্ঠানিকতার দিকে তাকিয়ে এখন শান্ত'র দল।
এই তিনটি দিনের আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাটারদের মনোবল ফিরে পাওয়া ব্যাটিংকে রাখতে হবে সামনের কাতারে। টেস্টে ওভারপ্রতি ৪.১৬ হারে রানে ইংল্যান্ডের বাজবল ক্রিকেট উত্তেজনা ফিরিয়ে এনেছে শান্ত'র দল।
তবে টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিংয়েও আক্ষেপ বাড়িয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। দ্বিতীয় দিন শেষে ১৬৯ রানে ব্যাটিংয়ে থাকা জয়-কে ঘিরে ডাবলের স্বপ্ন দেখেছে অনেকে। অথচ, ২ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি জয়। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে নতুন বল হাতে নিয়ে জয়ের সে স্বপ্নভঙ্গ করেছে আইরিশরা। দিনের নবম এবং আইরিশ পেসার ম্যাকার্থির তৃতীয় ডেলিভারিটি ছিল শর্ট অব লেন্থ। সেই বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন জয় ( ২৮৬ বলে ১৪ চার, ৪ ছক্কায় ১৭১)। ১৪তম সেঞ্চুরির পথে থাকা মুমিনুল হাতছাড়া করেছেন সেঞ্চুরি। দিনের চতুর্থ এবং ম্যাকার্থির দ্বিতীয় ওভারে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে থেমেছেন মুমিনুল ( ১৩২ বলে ৫ চার, ২ ছক্কায় ৮২)।
দিনের প্রথম ঘন্টায় স্কোরশিটে ৪৬ রান উঠতে ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টের সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে শিহরিত মুশফিকুর রহিম ৯৯তম টেস্টে স্বস্তিতে ব্যাট করতে পারেননি। বাঁ হাতি স্পিনার হ্যামফ্রিস বলে দিয়েছেন গালিতে ক্যাচ (৫২ বলে ২৩)। দিনের প্রথম সেশনে ১০৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ এই ৩ উইকেট।
ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিংয়ে সুইপ শটে পারদর্শিতা দেখিয়ে লিটন থেমেছেন ৬০ রানে। ৯০.৯০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিংয়ে ৬৬ বলে ৬০ রানের ইনিংসে মেরেছেন ৮ চার, ১ ছক্কা। হ্যামফ্রিসের বলে লং অনে দারুণ এক ডাইভিং ক্যাচে থেমেছেন লিটন। অধিনায়ক শান্ত ঝটটপ সেঞ্চুরি করে থেমেছেন। ক্যারিয়ারে ৮ম এবং সিলেটে ২য় সেঞ্চুরির ইনিংসটা থেমেছে তার ম্যাকব্রিনকে ফ্লিক শট নিতে যেয়ে এলবিডাব্লুউতে ( ১১৪ বলে ১৪ বাউন্ডারিতে ১০০)।
আইরিশ বাঁ হাতি স্পিনার হ্যামফ্রিস প্রথম ২ টেস্টে নিজেকে চেনাতে পারেননি। পেয়েছেন ওই দুই টেস্টে মাত্র ১টি উইকেট। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বুলাওয়ে টেস্টে ২য় ইনিংসে ৬ উইকেট (৬/৫৭) নিয়ে ফিরে পেয়েছেন আত্মবিশ্বাস। বাংলাদেশ সফরের শুরুতেও দেখেছেন ৫ উইকেটের মুখ (৪৩-১-১৭০-৫)। সাদমান, মুশফিক, লিটন, মিরাজ, মুরাদকে শিকারে পূর্ণ হয়েছে তার টানা ২য় ইনিংসে ৫ উইকেট।
সিলেট টেস্টে আলোচনায় দু'দলের তিন বাঁ হাতি স্পিনার। বাংলাদেশের তাইজুল-হাসান মুরাদ জুটির সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের হ্যামফ্রিস। হয়ে যাওয়া তিন দিনে মোট পড়েছে ২৩ উইকেট। তার মধ্যে ১২টি পকেটে পুরেছেন এই তিনজন। প্রথম ইনিংসে ৩০১ রানের লিড নিয়ে ইনিংস জয়ের পথও মসৃন করেছেন বাংলাদেশের দুই স্পিনার হাসান মুরাদ-তাইজুল। হাসান মুরাদ ৩ ওভারের ছোট্ট স্পেলে (৩-০-৮-২) ক্যাম্ফার (৫), টাকার (৯) কে ফিরিয়েছেন। তাইজুল ১১ ওভারের স্পেলে ( ১১-২-২৯-১) ফিরিয়েছেন টেক্টরকে (১৮)। হ্যারি টেক্টরকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫০০ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েছেন তাইজুল।
আয়ারল্যান্ডের ইনিংসে প্রথম আঘাত হেনেছেন পেসার নাহিদ রানা। কারমাইকেলকে (৫) ১৪২.৬ কিলোমিটার ঘন্টার বলে প্লেড অনে ফিরিয়েছেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটির ৪৭ রানে প্রতিরোধের আভাস দিয়েছিলেন স্টার্লিং-টেক্টর। তবে তাইজুলের বলে স্লিপের ফিল্ডার শান্ত'র থ্রো-তে পপিন ক্রিজে ফিরতে পারেননি স্টার্লিং। অন দ্য লাইনে ব্যাট দেখে টিভি আম্পায়ার তাকে দিয়েছেন ফিরিয়ে (৫৯ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৪৩)।এই আউটটাই টার্নিং পয়েন্ট। মাত্র ২৪ রানে ৪ উইকেট পতনে তৃতীয় দিন শেষে আয়ারল্যান্ডের স্কোর ৮৫/৫। দিনের শেষ ঘন্টা বাংলাদেশ বোলাররা ঘুরিয়েছে ছড়ি। এই ঘন্টায় ৩১ রান যোগ করে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড ৪ উইকেট।
প্রথম দিনে ২৭০ রানে ৮ উইকেটের পতন ঘটেছে। দ্বিতীয় দিনে সেখানে দু'দল মিলে ৩ উইকেট হারিয়েছে, যার বিপরীতে রানের যোগফল ৩৮৬। তৃতীয় দিন সেখানে দুদলের ৩৩৫ রানের বিপরীতে উইকেটের সংখ্যা ১২। তবে এই চিত্র দেখে উইকেট বোলারদের একটু বেশি ফেভার করেছে, তা কিন্তু বলার উপায় নেই।

তাইজুল ইসলামের চমৎকার ডেলিভারিতে কিছুই বুঝতে পারলেন না হ্যারি টেক্টর। বল তার প্যাডে লাগতেই আবেদনের সঙ্গে উদযাপনও যেন সেরে নিলেন বাঁহাতি স্পিনার। আম্পায়ারও তাতে সাড়া দিলেন। রিভিউ নিয়েও ফায়দা হলো না টেক্টরের। আর তাইজুল উঠে গেছেন ৫০০ উইকেটের নতুন চূড়ায়।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিনে নিজের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ৫০০ উইকেট পূর্ণ করেছেন তাইজুল। বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে তাইজুলের আগে ৫০০ উইকেট নেওয়া অন্য দুজনও বাঁহাতি স্পিনার। ১৩৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৬৩৪ উইকেট নিয়ে লাল বলের ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন আব্দুর রাজ্জাক। আর এনামুল হক জুনিয়র ১৩৯ ম্যাচে পেয়েছেন ৫১০ উইকেট।
অগ্রজ দুই বাঁহাতি স্পিনারের পথ ধরে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁতে তাইজুলের লেগেছে ১১৪ ম্যাচ ও ২০০ ইনিংস। ইনিংসে ৩৬ বার ৫ উইকেট ও ৭ বার ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন টেস্টে বাংলাদেশের নির্ভরতার আরেক নাম তাইজুল।
প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে তাইজুলের সেরা বোলিং ৩৯ রানে ৮ উইকেট। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে এই সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি। যা এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো বোলারের সেরা বোলিং।
৫০০ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়ার পথে আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে ৫৬ ম্যাচের ৯৬ ইনিংসে ২৪০ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। বাকি ২৬০ উইকেট তিনি পেয়েছেন ৫৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১০৪ ইনিংসে বোলিং করে।
দারুণ এই মাইলফলক থেকে মাত্র ৩ উইকেট দূরে দাঁড়িয়ে সিলেট টেস্ট শুরু করেছিলেন তাইজুল। পরে প্রথম ইনিংসে জর্ডান নিল ও ম্যাথু হামফ্রিজকে ফিরিয়ে ৪৯৯-এ দাঁড়ান তিনি। আর বৃহস্পতিবার ম্যাচের তৃতীয় দিন টেক্টরকে এলবিডব্লিউ করে নাম লেখান দারুণ এই ক্লাবে।
বিশ্ব অঙ্গনে অবশ্য প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪ হাজার উইকেটেরও কীর্তি আছে। প্রায় ৩২ বছরের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ১ হাজার ১১০টি ম্যাচ খেলে ৪ হাজার ২০৪ উইকেট নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার উইলফ্রেড রোডস।
এছাড়া ৩ হাজারের বেশি উইকেট পেয়েছেন ইংল্যান্ডের আরও তিন জন- লেগ স্পিনার টিক ফ্রিম্যান (৫৯২ ম্যাচে ৩ হাজার ৭৭৬ উইকেট), চার্লি পার্কার (৬৩৫ ম্যাচে ৩ হাজার ২৭৮ উইকেট) ও জ্যাক হার্নি (৬৩৯ ম্যাচে ৩ হাজার ৬১ উইকেট)।