
২৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩:৩৫ পিএম

লক্ষ্যটা ছিল পাহাড়সম। তবু লড়াইয়ে কমতি রাখল না রাজশাহী বিভাগ। তবে শেষ পর্যন্ত পেরে উঠল না তারা। অনায়াস জয়েই জাতীয় ক্রিকেট লিগে (এনসিএল) যাত্রা শুরু করল চট্টগ্রাম বিভাগ।
রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ম্যাচের শেষ দিনে স্থানীয় দলকে ১১২ রানে হারিয়েছে চট্টগ্রাম। ৪৮২ রানের বিশাল লক্ষ্যে সব উইকেট হারিয়ে ৩৭০ রানের বেশি করতে পারেনি রাজশাহী।
৪২ ওভারে ৪ উইকেটে ২১৯ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল রাজশাহী। শেষ দিনে ৪৪.৫ ওভারের বেশি খেলতে পারেনি তারা। স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারে ১৫১ রান।
আগের দিন ৫৪ রানে অপরাজিত থাকা এসএম মেহেরব হাসান দিনের শুরুতেই ফিরে যান ৬০ রানে। আর ৫৬ রান নিয়ে খেলতে নামা প্রীতম কুমার শেষ পর্যন্ত খেলেন ৮৩ রানের ইনিংস।
আরও পড়ুন
    
| আজই তাহলে টি-টোয়েন্টির ‘রাজা’ হচ্ছেন বাবর |   | 
সপ্তম উইকেটে তাইজুল ইসলাম ও শাকির হোসেন শুভ্র মিলে গড়েন ৫৭ রানের জুটি। ৩০ বলে ৩০ রান করে আউট হন তাইজুল শাকিরের ব্যাট থেকে আসে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৯৬ বলে ৫২ রান।
চট্টগ্রামের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন হাসান মুরাদ। এছাড়া আহমেদ শরীফ ও নাঈম হাসানের শিকার ২টি করে উইকেট।
দলের বড় জয়ের নায়ক ইয়াসির আলি রাব্বি। প্রথম ইনিংসে ১২৯ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান অভিজ্ঞ মিডল-অর্ডার ব্যাটার। তবে ৯২ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। ম্যাচ সেরার পুরস্কার অবশ্য তিনিই জেতেন।
প্রথম ইনিংসে রাব্বির সঙ্গে জয়ের সেঞ্চুরিতে ৪০১ রান করে চট্টগ্রাম। জবাবে সাব্বির হোসেন ও সাব্বির রহমান ফিফটি করলেও ১৯৬ রানে গুটিয়ে যায় রাজশাহী।
পরে দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ২৭৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে চট্টগ্রাম। বাকি কাজ সারেন বোলাররা।
No posts available.



৩১ অক্টোবর ২০২৫, ৮:০২ পিএম



৩১ অক্টোবর ২০২৫, ৬:০৮ পিএম


৩১ অক্টোবর ২০২৫, ৫:১৪ পিএম


২০২১ সালে ১০০ বলের নতুন ফরম্যাটের টুর্নামেন্ট ‘দ্য হান্ড্রেড’ চালু করে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। শুরু থেকেই ড্রাফট পদ্ধতিতে খেলোয়াড় বেছে নিত দলগুলো। তবে আগামী মৌসুমে আসছে বড় পরিবর্তন। ২০২৬ সাল থেকে ড্রাফটের বদলে নিলাম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে দ্য হান্ড্রেড।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) আদলে আগামী বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত হবে নিলাম। এবার বাড়ানো হয়েছে পুরুষ ও নারী ক্রিকেটারদের বেতন কাঠামো। পুরুষ দলের মোট বেতন তহবিল ১.২ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ২.০৫ মিলিয়ন করা হয়েছে। নারী দলের বাজেট ৪ লক্ষ ৪০ হাজার থেকে বেড়ে ৮ লক্ষ ৮০ হাজার পাউন্ডে উন্নীত হয়েছে। সবচেয়ে কম পারিশ্রমিক পাওয়া নারী খেলোয়াড়দের বেতন ১০ হাজার থেকে বেড়ে ১৫ হাজার পাউন্ড করা হয়েছে।
প্রতিটি দলে থাকবে ১৬ থেকে ১৮ জন খেলোয়াড়। বিদেশি খেলোয়াড়ের সংখ্যা তিন থেকে বাড়িয়ে চারজন করা হয়েছে। নিলামের আগে সর্বোচ্চ চারজন খেলোয়াড় সরাসরি সাইন করাতে পারবে প্রতিটি দল। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দুই জন বিদেশি ও দুই জন ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সরাসরি সাইনিং করাতে পারবে দলগুলো।
ষষ্ঠ মৌসুমে থাকবে না কোনো রাইট টু ম্যাচ সুবিধা। তবে দলগুলো টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট থেকে ওয়াইল্ডকার্ড পদ্ধতিতে আরও দুইজন খেলোয়াড় নিতে পারবে। নিলামের আগে সরাসরি সাইনিং করালে প্রতিটি দলের বেতন তহবিল থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেটে নেওয়া হবে। পুরুষ দলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯৫০ হাজার এবং নারী দলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩৬০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত কাটা যাবে।

ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আবারও ফিফটি করলেন তানজিদ হাসান তামিম। ক্যারিয়ারের দশম পঞ্চাশ করার পথে রেকর্ড গড়ে ১ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন বাঁহাতি ওপেনার। এছাড়া বাকি ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেলেন রোমারিও শেফার্ড।
চট্টগ্রামে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৫১ রানে অল আউট হয়ে গেল বাংলাদেশ। তামিম ছাড়া আর কেউই কিছু করতে পারেননি।
ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৬২ বলে ৮৯ রানের ইনিংস খেলেন তামিম। এছাড়া সাইফের ব্যাট থেকে আসে ২৩ রান। বাকি ৯ ব্যাটারের কেউই দুই অঙ্কও ছুঁতে পারেননি।
টানা দ্বিতীয় ফিফটি করার পথে ৩৩তম রান নিয়ে হাজারি ক্লাবে প্রবেশ করেছেন তামিম। বাংলাদেশের নবম ব্যাটার হিসেবে এই ফরম্যাটে ১ হাজার রান করলেন তিনি। ক্যারিয়ারের দেড় বছরের মাথায় ৪২ ইনিংসে হাজার রান করে তামিমই বাংলাদেশের দ্রুততম।
এত দিন রেকর্ডটি ছিল তাওহিদ হৃদয়ের। তিনি ১ হাজার রান করতে খেলেছিলেন ৪৫ ইনিংস। এছাড়া পঞ্চাশের কম ইনিংসে হাজার রান করতে পেরেছেন শুধু তামিম ইকবাল, ৪৯ ইনিংসে।
দ্রুততম হাজার রানের বিশ্ব রেকর্ড অবশ্য ইংল্যান্ডের দাভিদ মালান ও চেক রিপাবলিকের সাবাউন দাভিজির। দুজনই মাত্র ২৪ ইনিংসে ১ হাজার রান করেছেন।
এছাড়া দলের ১৫১ রানের মধ্যে একা ৮৯ রান করে আরেকটি রেকর্ডও গড়েছেন তামিম। দলীয় সংগ্রহের মোট ৫৮.৯৪ শতাংশ রান একাই করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে ওমানের বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংস খেলার পথে দলের ৫৭.২২ শতাংশ রান একা করেছিলেন তামিম ইকবাল।
তামিমের মাইলফলক ছোঁয়ার দিন ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক করেছেন শেফার্ড। ১৬তম ওভারের শেষ বলে নুরুল হাসান সোহান ও শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে তানজিদ হাসান তামিম এবং শরিফুল ইসলামকে বোল্ড করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন শেফার্ড।
এটিই তার ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম।
বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ১ হাজার রান
তানজিদ হাসান তামিম - ৪২ ইনিংস
তাওহিদ হৃদয় - ৪৫ ইনিংস
তামিম ইকবাল - ৪৯ ইনিংস
লিটন কুমার দাস - ৫১ ইনিংস
সাকিব আল হাসান - ৫১ ইনিংস
সৌম্য সরকার - ৫৪ ইনিংস
আফিফ হোসেন - ৫৫ ইনিংস
মুশফিকুর রহিম - ৫৯ ইনিংস
মাহমুদউল্লাহ - ৬০ ইনিংস

অক্টোবর সদ্য বিদায় নিয়েছে। নভেম্বরের শুরু—শীতের নিঃশ্বাসে জমে গেছে শহর। মাসের প্রথম সপ্তাহ। ছেলেটার ঠিক মনে নেই দিন-তারিখ, এমনকি বারও। শুধু এটুকু জানে—সেদিনের রাতটা ছিল হিমশীতল, নিঃশব্দ, জমে যাওয়া এক শহরের বুকের মতো নিস্তব্ধ।
পায়রা, সীগাল, রবিন—সবাই ঘুমিয়ে গভীর শীতনিদ্রায়। কাতালানদের এই নগর এখন বরফে মোড়া স্বপ্নপুরী।
হঠাৎ একটুখানি শব্দ—একটা ছোট্ট ইঁদুরের পায়চারি। ছেলেটার ঘুম ভাঙে তাতে। অন্ধকার ঘরের কোণে তাকিয়ে ভাবতে থাকে—ও ইঁদুরটাও কি তার মতোই বাঁচার লড়াইয়ে, খাবারের খোঁজে, টিকে থাকার সংগ্রামে? ভাবতে ভাবতে কেমন যেন ভারী হয়ে ওঠে বুকটা।
রাতের এই নিস্তব্ধতায় জেগে ওঠা মানেই এক অনিবার্য বিপদ—চিন্তা। চিন্তার দল মিছিল নামায় ধ্যানের রাজপথে। কৈফিয়ত চায়—আজ কোথায় দাঁড়িয়ে তুমি? কেন এসেছে এত দূরে? কোথায় হারিয়েছে পুরোনো পরিচিত মুখগুলো? অতীত আর বর্তমানের হিসাব মিলাতে মিলাতে হারিয়ে যায় সে এক অদ্ভুত মোহে।
জীবনের এ ধারা-ওধারা ভাবতে ছেলেটার চোখ পড়ে দূরের পাইন গাছে। পাতায় জমেছে বরফ, ভারে নুয়ে পড়েছে শাখা। একসময় যে পাতাগুলো ছিল চিরসবুজ, আজ তারা হারিয়েছে প্রাকৃতিক রূপ। ছেলেটা ভাবে—তার জীবনও কি এমনই হয়ে গেছে? বরফে ঢেকে যাওয়া, রঙহীন, পরিচয়হীন এক অস্তিত্ব?
 
                        নতুন দেশ। অচেনা ভাষা। অপরিচিত মানুষ। দিনের শেষে একাকীত্ব তাকে চেপে ধরে। সুযোগ পেলেই সে আড়াল খোঁজে—ওয়াশরুমে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে কাঁদে। চোখের জল যেন ভাষাহীন যন্ত্রণা। রাতের ঘুমও আজকাল বড় অপরিচিত।
আর আজ—যে ইঁদুরটা হঠাৎ ঘুম ভাঙিয়ে দিল, যে পাইন পাতায় বরফ জমেছে—তারা যেন টাইম ট্রাভেলের দরজা খুলে দিল তার সামনে।
শান্ত ছবির মতো রোজারিও শহরটা কেমন আছে? মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিটিনি এখনও তার জন্য প্রিয় ‘এমপানাদা’ নিয়ে অপেক্ষা করেন। কেমন আছে আন্তোনেলা রোকুজ্জো। ড্রিভলিং কিংবা গোলের পর উচ্ছ্বাসে হারিয়ে যাওয়া মানুষটাকে যে তার ভীষণ মনে পড়ে।
চিন্তার জগত অস্তমিত হতেই চোখের পাতাজোড়া এক হয়। শুরু হয় নতুন ভোর, নতুন জীবন। তিনি জানেন, যে কাতালুনিয়া শহরে তার আগমন, সেখানে ফুটবল শুধু খেলা নয়, জীবনযাপন। বার্সেলোনার লা মাসিয়া নামের এক জাদুঘরে ঠাঁই হয়েছে তার, যেখানে স্বপ্নকে বাস্তবে গড়া হয়।
সেই স্বপ্নের পথে পা বাড়িয়ে, লিওনেল মেসি হয়ে ওঠেন বিশ্ব সমাধৃত। লা মাসিয়া থেকে মূল দলে, লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ—আরও কতশত শিরোপা ট্রফি ধরা দিয়েছে তার হাতে। আর্জেন্টিনার জার্সিতেও হয়েছে দুঃখ মোচন। ২০০৬ থেকে ২০১৮-এ সময়ে চারটি বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমু আঁকেন মেসি। ৮ বার ব্যালন ডি’অর, ক্লাব ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ৮৭২ গোল—সবকিছু মিলিয়ে লিওনেল মেসি যেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি, ফুটবলের দূত।
মেসির মতো যাপিত জীবন বয়ে বেড়ানো একজন আছেন ক্রিকেটে। যার গল্পটা একই রকম না হলেও একপ্রান্তে গিয়ে ঠেকেছেন দু’জন। তিনি ভারত নারী দলের ব্যাটসম্যান জেমিমাহ রদ্রিগেজ। পরিশ্রমের বিপরীতে হতাশা-গ্লানি হয়ে ওঠেছিল সম্ভল। কান্নায় ভিজে যেত তার বালিশ। একেকটি রাত হয়ে ওঠেছিল হাজার রজনীর সমান। সেই জেমিমাহ সফল হয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা যেভাবে মেসিকে ভাঙ্গা-গড়া থেকে উঠিয়ে সম্মান দিয়েছেন, ভারতীয় ব্যাটারও তাঁরই দেখানো পথে।
 
                        বৃহস্পতিবার নাভি মুম্বাইয়ে অনিন্দ্য সুন্দর ইনিংস উপহার দিয়েছেন জেমিমাহ। অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। পুরো বিশ্বকাপে জোয়ার-ভাটার মধ্য দিয়ে থাকা জেমিমাহ বুঝিয়ে দিয়েছেন, পরিশ্রম, একাগ্রতা, নিবেদন, সততা থাকলে সৃষ্টিকর্তা একদিন মুখ তুলে তাকাবেন, বিজয় মালা পরাবেন।
সেটি হয়েছে গতকাল। ২২ গজে সুনিপুণ দক্ষতায় তুলির আঁচড় চালিয়েছেন। একটু দ্রুতই চলেছে তাঁর তুলিটি। তবে জেমিমাহকে চিনতে মোটেও ভুল করেননি দর্শকরা। তিনি মাঠে নামলেন, খেললেন, হাসলেন, ভুল করলেন। আবার জেগে উঠলেন। চক্রের মতো ঘুরতে থাকলেন। শেষপর্যন্ত শিরদাঁড়া উচু করে মাঠ ছাড়লেন।
জেমিমাহর এই গল্পের আদোপ্রান্তে রয়েছে নিরবতা, রয়েছে দুঃখ, গ্লানি, হতাশা ও বাদ পড়ার বিচ্ছিরি কাহিনি। তবে তিনি দমে যাননি। নিরবে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন মেসির মতো।
মেসির যেখানে শেষ, জেমিমাহর সেখানে শুরু:
আর্জেন্টাইন মহাতারকা ক্যারিয়ারের অন্তিমলগ্নে। বয়স ৩৮। হয়তো ২০২৬ বিশ্বকাপের পর বুট জোড়া তুলে রাখবেন। সেখানে ভারতের নারী দলের ব্যাটসম্যান জেমিমাহর কেবল শুরু। বয়স সবে ২৫। ক্যারিয়ারের দাপুটে সকাল। ভারতকে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলেছেন মিডল-অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। বৃহস্পতিবার তাঁর ইনিংসে ফাইনালে ভারত।
এদিন রদ্রিগেজ তিনে ব্যাটিংয়ে নেমে টিকে থাকেন শেষ পর্যন্ত। বার দুয়েক বিপদে পড়লেও শান্ত-ক্ষুরদার মেধায় সবই সামাল দেন। দলকে নিয়ে যান জয় বন্দরে। তার ব্যাটে ভর করে ছেলে-মেয়েদের ওয়ানডের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে ভারত। ওয়ানডেতে ৩৩৮ রান তাড়া করে জয় তোলার কথা বিশ্বের কেউ যেখানে কল্পনা করতে পারতো না, সেটা করে দেখান জেমিমাহ।
 
                        নীরব প্রার্থনা:
পুরো পৃথিবী একদিকে রেখে স্পেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন মেসি। শারীরিক অসুস্থতা—গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি—যা আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে চ্যালেঞ্জে ফেলেছিল। সেখান থেকে উৎরাতে প্রতিরাতে ঈশ্বরের শরনাপন্ন হতেন মেসি। কান্নাভেজা কন্ঠে ফরিয়াদ করতেন—“ঈশ্বর, সব সহজ করে দাও।” চুপ থেকে চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। একা থাকা, সবার চেয়ে আলাদা থাকা ছেলেটা একদিন মন জয় করলেন বিশ্বের।
জেমিমাহর জীবনে যেমনটা হয়েছে, তার কণ্ঠে—
‘আমি প্রতিদিন কেঁদেছি, উদ্বেগে ভুগেছি। প্রতিদিন নিজেকে সামলাতে হয়েছে, ঈশ্বরই আমাকে এগিয়ে নিয়েছেন। গত বছর আমাকে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তখনো আমি ফর্মে ছিলাম, কিন্তু নানা কিছু ঘটছিল। আমার চারপাশে অসাধারণ মানুষ ছিল, যারা আমাকে সহায়তা করেছে।’
স্থির থাকো, ঈশ্বর তোমাকে সাহায্য করবেন:
লিওনেল মেসি যেমন বলেছিলেন, ‘সফলতা সহজে আসে না। প্রতিদিন ছোট ছোট কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই বড় লক্ষ্য অর্জন করা যায়।’ যে আর্জেন্টাইন জাদুকর হেঁটেছিলেন, তা ছিল কন্টকময়। পা ফসকালেই ছিল হারিয়ে যাওয়ার ভয়। জীবনের প্রতিটি সিঁড়ি তিনি ডিঙিয়েছেন সতর্কতার সঙ্গে। ঈশ্বরও তার সঙ্গে ছিলেন।
গতকাল নিজের ইনিংসের সময় বাইবেলের একটি বাণী মনে করে সাহস পেয়েছেন জেমিমাহ।
‘শেষের দিকে আমি শুধু একটি বাণী বলছিলাম—“স্থির থাকো, ঈশ্বর তোমাকে সাহায্য করবেন।” আমি শান্ত থাকার চেষ্টা করছিলাম।’
জেমিমাহ স্থির থেকেছেন। আঙুলের কড়ায় গুণে খারাপ সময় পার করেছেন। কখনও বাসে-ট্রামে-ট্রেনে, গভীর রাতে ধ্যানে বসেছেন। একাগ্রতা তাঁকে সাফল্য দিয়েছে।
পরিবার, প্রিয়জন, আস্থাভাজন:
ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির পর নভি মুম্বাইয়ের ভিআইপি স্ট্যান্ডে বসে থাকা পরিবারের দিকে একটি উড়ন্ত চুম্বন ছুঁড়ে বাবা এবং কোচ ইভানকে ধন্যবাদ জানাতে দেখা যায় জেমিমাহকে। যারা তাঁর পথপ্রদর্শক ও শক্তি। জেমিমাহ বলেছিলেন,
‘আমি আমার মা, বাবা, কোচ এবং আমার উপর বিশ্বাসকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। গত মাসে এটি সত্যিই কঠিন ছিল, এটি একটি স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’
 
                        লিওনেল মেসির জীবন বদলে দেওয়ার পেছনে পরিবারের ভূমিকা ছিল অনন্য। তড়িৎ এক সিদ্ধান্তে বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তি। বাবা জর্জ মেসি, মা কুচ্চিটিনি থেকে শুরু করে স্ত্রী রোকুজ্জো—সবাই তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ অংশ। তিনি প্রায়শঃ বলেন, পরিবার ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব হতো না।
পারিবারিক পাশে থাকায় মেসি ফুটবল বিশ্বের আইডল, জেমিমাহ হারিয়ে যাওয়ার পর নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন।
মেসির স্বপ্ন পূরণ, জেমিমাহর অপেক্ষা:
চারবার স্বপ্নভঙ্গ। অপেক্ষা যে কত দীর্ঘ তা লিওনেল মেসির চেয়ে বেশি কে জানে। একটি সময় মনে হচ্ছিল, চাঁদের নিখুঁত দাগ হারিয়েছিল মেসির জীবনে—বিশ্বকাপ না পাওয়া।
সেটি পূরণ হয়েছে ২০২২ সালে। ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ ট্রফি উপহার দেন মেসি। স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়েছে। এক জীবনে নিশ্চয়ই তার আর কিছু পাওয়ার থাকার কথা নয়।
জেমিমাহও এমন একটি স্বপ্ন উপাখ্যানের অপেক্ষায়। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে ভারত। আগের দু’বার কূলে গিয়ে ডুবে গিয়েছিল। এবার দারুণ ছন্দে থাকা দলটির প্রতিপক্ষ চোকার্স দক্ষিণ আফ্রিকা। দেখার বিষয়, স্বপ্নের পথে নিজেকে কতটা জলাঞ্জলি দিতে পারেন জেমিমাহ। তবেই দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানো যাবে, সার্থক হবে মেসির পথ ধরে হাঁটা।

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে গতকাল নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ভারত। তবে পুরুষ দল জয়ের পুনরাবৃত্তি করতে পারল না। মেলবোর্নে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে দাপুটে জয় পেয়েছে অজিরা। ৮০ বল বাকি থাকতে ভারতকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পায় ভারত। তবে শুরু থেকে জশ হ্যাজলউডের বোলিং তোপে ১৮.৪ ওভারে ১২৫ রানে অলআউট হয়ে যায় অতিথিরা। দলের বিপর্যয়ে একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ঝোড়ো ফিফটি করেন অভিষেক। ১৩.২ ওভারে ১২৬ রানের লক্ষ্য অনায়াসে তাড়া করেছে অজিরা।
এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছিল।
ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে ভারত। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে সফরকারীরা। শুভমান গিল, সঞ্জু স্যামসন, সূর্যকুমার যাদব, তিলক ভার্মা, অক্ষর প্যাটেল দ্রুত ফিরে যান। প্রথম ছয় ব্যাটারের মধ্যে অভিষেক ছাড়া বাকিরা দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন।
আরেকপ্রান্তে ২০০-এর ওপরে স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করতে থাকেন অভিষেক। ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ভারত। সেখান থেকে হার্ষিত রানাকে সঙ্গে নিয়ে ৫৬ রানের জুটি গড়েন অভিষেক। ২২ বলে তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি । রানা ৩৩ বলে ৩৫ রান করে আউট হন। নবম ব্যাটার হিসেবে ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে ৩৭ বলে ৬৮ রান করেন অভিষেক। তার ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ২টি ছক্কা। ১৮.৪ ওভারে ১২৫ রানে গুটিয়ে যায় ভারত।
অভিষেক ও রানা ছাড়া ভারতের আর কেউই দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। এই দুজন বাদে ভারতের বাকি ৮ ব্যাটার মিলে তোলেন মাত্র ১৯ রান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে হ্যাজেলউড ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট।
১২৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে পঞ্চম ওভারেই দলীয় পঞ্চাশ পেরিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ৪.৩ ওভারে বরুণ চক্রবর্তীর বলে দলের ৫১ রানে আউট হন হেড। ১৫ বলে ২৮ রান করেন এই ওপেনার। এরপর মিচেল মার্শ ২৬ বলে ৪৬ রানের দাপুটে ইনিংস খেলে আউট হন। তার ইনিংসে ছিল দুইটি চার ও চারটি ছক্কা। তারপর জশ ইংলিসের ২০, মিচেল ওয়েনের ১৪ রানে সহজ জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। আগামী রোববার হোবার্টে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে দুই দল।

সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাগতিকের ১৫১ রানের জবাবে মাত্র ১৬.৫ ওভারেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে সফরকারীরা।
ক্যারিবিয়ানদের সহজ জয়ে মাত্র ২৫ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলেন আকিম অগাস্ত। আর রস্টোন চেজের ব্যাট থেকে আসে ২৯ বলে ৫০ রান। দুজন মিলে চতুর্থ উইকেটে গড়েন ৪৬ বলে ৯৩ রানের জুটি।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ৩ উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। ৪ ওভারে খরচ করেন ৪৩ রান। তাসকিন আহমেদ ৩.৫ ওভারে দেন ৫০ রান।
একাদশে ফেরা শেখ মেহেদি হাসান ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান খরচ করে নেন ১ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫১ (তামিম ৮৯, ইমন ৯, লিটন ৬, সাইফ ২৩, রিশাদ ৩, সোহান ১, নাসুম ১, জাকের ৫, মেহেদি ০*, শরিফুল ০, তাসকিন ৯; হোল্ডার ৪-০-৩২-২, আকিল ৪-০-২৬-১, শেফার্ড ৪-০-৩৬-৩, চেজ ৪-০-২৩-১, পিয়ের ৩-০-২৩-২, মোটি ১-০-১১-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৬.৫ ওভারে ১৫২/৫ (আথানেজ ১, জাঙ্গু ৩৪, কিং ৮, চেজ ৫০, অগাস্ত ৫০, পাওয়েল ৫, মোতি ৩; মেহেদি ৪-০-১৮-১, শরিফুল ২-০-১২-০, তাসকিন ৩.৫-০-৫০-০, নাসুম ৩-০-২৯-১, রিশাদ ৪-০-৪৩-৩)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী