২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০১ পিএম

চলতি বছরের এখনও বাকি ২৯ দিন। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য বছর এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। কারণ এই বছরের বাকি দিনগুলোতে আর কোনো খেলা নেই তাদের। আর এই বিদায়ী বছরে নিজেদের সেরা সময়ই কাটিয়েছে বাংলাদেশ।
পরিসংখ্যানের বিচারে, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এত সাফল্যময় বছর আর যায়নি বাংলাদেশ দলের। ম্যাচ জয়ের সংখ্যা কিংবা রানের জোয়ার বা ব্যাটারদের চার-ছক্কার ফুলঝুরি অথবা বোলারদের উইকেট শিকারের উৎসব- সব কিছুতেই আগের যে কোনো বছরকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সংখ্যার খেলায় বাংলাদেশের ২০২৫
জয়ের রেকর্ড
প্রায় ২০ বছরের টি-টোয়েন্টি অধ্যায়ে ২০২৫ সালেই সবচেয়ে বেশি ৩০ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর আগে ২০২১ সালে তারা খেলেছিল ২৭টি কুড়ি ওভারের ম্যাচ।
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার বছরে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতার রেকর্ডও গড়েছে বাংলাদেশ। এই বছর তারা জিতেছে ১৫ ম্যাচ। বিপরীতে হেরেছে ১৪টি। জয়-পরাজয়ের অনুপাত ১.০৭১!
২০২৪ সালে ২৪ ম্যাচ খেলে ১২ ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। হেরেছিলও ১২টি। জয়-পরাজয়ের অনুপাত ছিল ১.০০- গত বছরের রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে ২০২৫ সাল।
রানের জোয়ার
সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলায় স্বাভাবিকভাবেই বছরে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডও গড়েছে বাংলাদেশ। এই বছর ৩০ ম্যাচে বাংলাদেশের ২৩ ব্যাটার মিলে খেলেছেন ২৪৩টি ইনিংস। সব মিলে তারা করেছেন ৪ হাজার ২৩৯ রান।
২০২৫ সালে দলীয় ব্যাটিং গড় ২২.১৮ ও স্ট্রাইক রেট ১২৫.৯৭। অন্তত ১৫শ রান করা বছরগুলোর মধ্যে রান, ব্যাটিং গড় ও স্ট্রাইক রেট- সবই সর্বোচ্চ।
বছরে সর্বোচ্চ রান ছিল ২০২৪ সালে। সেবার ২৪ ম্যাচে ২১ ব্যাটার মিলে ২০৬ ইনিংস খেলে করেছিলেন ৩ হাজার ১৮৬ রান। দলীয় ব্যাটিং গড় ছিল বিশের নিচে আর স্ট্রাইক রেট ছিল ১২০-র নিচে।
ফিফটির মেলা
বছরে সর্বোচ্চ ফিফটির রেকর্ডটিও ২০২৫ সালে গড়েছে বাংলাদেশ। এই বছর ২৩ ফিফটির সঙ্গে একটি সেঞ্চুরিও করেছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তারা ছাড়িয়ে গেছে গত বছর করা ১৪ ফিফটির রেকর্ড।
এই রেকর্ডে সবচেয়ে বড় অবদান তানজিদ হাসান তামিমের। এই বছর ৮টি পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেলেছেন বাঁহাতি ওপেনার। এছাড়া অধিনায়ক লিটন কুমার দাসের ফিফটি ৫টি। আরেক বাঁহাতি ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ৩ ফিফটির সঙ্গে করেছেন বছরের একমাত্র সেঞ্চুরি।
চার-ছক্কার ফুলঝুরি
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ব্যাটাররা মেরেছে মোট ২০৬টি ছক্কা। তারা ভেঙে দিয়েছে গত বছর হাঁকানো ১২২টি ছক্কার রেকর্ড। নির্দিষ্ট পঞ্জিকাবর্ষে অন্তত দুইশ ছক্কা মারা বিশ্বের চতুর্থ দেশ বাংলাদেশ।
তাদের আগে এক বছরে দুইশ বা এর বেশি ছক্কার রেকর্ড আছে শুধু ভারত (২০২২ সালে ২৮৯ ও ২০২৪ সালে ২৩৬), ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০২৪ সালে ২৪৩, ২০২১ সালে ২১৪ ও ২০২৫ সালে ২১৪) ও পাকিস্তানের (২০২৫ সালে ২৩৫)।
ছক্কার রেকর্ডেও সবচেয়ে বড় অবদান তামিমের। বাঁহাতি ওপেনার ২৭ ইনিংসে মেরেছেন ৪১টি ছক্কা। যা এক বছরে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। আরেক ওপেনার ইমনের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৪টি ছক্কা।
এক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডটিও ২০২৫ সালে গড়েছে বাংলাদেশ। মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ১৯১ রান করার পথে মোট ১৩টি ছক্কা মারে তারা। সেদিন ৯টি ছক্কা মারেন সেঞ্চুরি করা ইমন। যা এক ম্যাচে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ ছক্কা।
ব্যক্তিগত রানেও জোয়ার
২০২৫ সালে ২৭ ম্যাচ খেলে ৮ ফিফটিতে ৭৭৫ রান করেছেন তামিম। এক বছরে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। তিনি ভেঙেছেন ২০২১ সালে মোহাম্মদ নাঈম শেখের গড়া ২৬ ইনিংসে ৫৭৫ রানের রেকর্ড।
চলতি বছরের আগে এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের ব্যাটারদের ৫০০ রান করার ঘটনা ছিল মাত্র তিনটি। নাঈম শেখ ছাড়া ২০২২ সালে ৫৪৪ রান করেছিলেন লিটন কুমার দাস। একই বছর আফিফ হোসেন ধ্রুবর ব্যাট থেকে আসে ৫০০ রান।
আর শুধু ২০২৫ সালেই বাংলাদেশের তিন ব্যাটার পেরিয়েছেন ৫০০ রানের মাইলফলক। তামিম ছাড়াও লিটনের ব্যাট থেকে এসেছে ৬৩৫ রান। আর ইমন করেছেন ৫১৯ রান।
উইকেটের উৎসব
২০২৫ সালে ৩০ ম্যাচে বাংলাদেশের ২৩ বোলার মিলে নিয়েছেন ১৮৮ উইকেট। যা ভেঙে দিয়েছে ২০২১ সালে ২২ ম্যাচে নেওয়া ১৬০ উইকেটের রেকর্ড।
এই বছর বাংলাদেশের সম্মিলিত বোলিং গড় ২৩.২৯ আর ইকোনমি রেট ৭.৮৪ ও স্ট্রাইক রেট মাত্র ১৭.৮!
২০২১ সালে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ম্যাচই ছিল মিরপুরের স্পিনসহায়ক উইকেটে। তাই সহজেই বেশি উইকেট নিতে পেরেছিলেন বোলাররা। তবে চলতি বছর মিরপুরে তারা খেলেছে মাত্র ৩টি ম্যাচ। অর্থাৎ তুলনামূলক ভালো উইকেট-কন্ডিশনেও সাফল্য পেয়েছেন রিশাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমানরা।
আবার ওপরে রিশাদ
গত বছর ৩৫ উইকেট নেওয়া রিশাদ হোসেন এবার পেয়েছেন ৩৩ উইকেট। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে একাধিক পঞ্জিকাবর্ষে ৩০ বা এর বেশি উইকেটের রেকর্ড গড়েছেন তরুণ লেগ স্পিনার।
সব মিলিয়ে বিদায় নেওয়ার পথে থাকা বছরে অন্তত ২০ উইকেট পেয়েছেন বাংলাদেশের পাঁচ বোলার- রিশাদ (৩৩), মোস্তাফিজ (২৬) তাসকিন (২৪), তানজিম হাসান সাকিব (২৩) ও শেখ মেহেদি হাসান (২২)।
এর আগে ২০২১ সালে মিরপুরের স্পিন সহায়ক উইকেটে বেশিরভাগ ম্যাচ খেলা বছরেও অন্তত ২০ উইকেট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের পাঁচ বোলার।
তামিমের বিশ্ব রেকর্ড
ব্যাট হাতে বছরজুড়ে আলো ছড়ানো তামিম বছরের শেষ ম্যাচে গড়েছেন ক্যাচের বিশ্ব রেকর্ড। একের পর এক বল তালুবন্দী করে তিনি নিয়েছেন পাঁচটি ক্যাচ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে নন-উইকেটকিপারদের সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ড এটিই।
চলতি বছর সব মিলিয়ে মোট ২০টি ক্যাচ নিয়েছেন তামিম। এক বছরে এর চেয়ে বেশি ক্যাচ আছে শুধু আরব আমিরাতের মোহাম্মদ ওয়াসিমের, ২০২৪ সালে ২৪টি।
উইকেটকিপারব্যতীত বাংলাদেশের ফিল্ডাররা ২০২৫ সালে নিয়েছেন মোট ১২০টি ক্যাচ। এবারই প্রথম কোনো নির্দিষ্ট বছরের একশর বেশি ক্যাচ নিয়েছেন তারা। এত দিন সর্বোচ্চ ছিল ২০২৪ সালে নেওয়া ৯৫টি ক্যাচ।
বাদ যায়নি জুটির রেকর্ডও
সব কিছুতে নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়া বছরে পার্টনারশিপেও রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। এই বছর খেলা ৩০ ম্যাচে মোট ২৪টি পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়েছে তারা। যা ভেঙে দিয়েছে গত বছর গড়া ১৫টি পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটির রেকর্ড।
এছাড়া ২০২৫ সালে বাংলাদেশের শতরানের জুটি দুইটি। গত বছরও তারা মোট দুইটি শতরানের জুটি গড়েছিল।
No posts available.
৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮:৩৩ পিএম

দীর্ঘ ছয় বছরের প্রতীক্ষা শেষে গত নভেম্বরে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ফিরেছিল টেস্ট। সেই ম্যাচে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল পিচের অসম বাউন্স। তবে কলকাতা টেস্টের পিচকে ‘সন্তোষজনক’ রেটিং দিয়েছেন আইসিসি ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসন।
এই রেটিংয়ের ফলে শাস্তি বা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়েছে ইডেন গার্ডেন্স। আইসিসির চার ধাপের পিচ রেটিং ব্যবস্থায় ‘সন্তোষজনক’ দ্বিতীয় স্তরের মান। এর উপরে রয়েছে ‘ভালো’ ও ‘খুব ভালো’ আর নিচের দুই ধাপ হলো ‘অসন্তোষজনক’ ও সর্বনিম্ন ‘অনুপযুক্ত’।
কলকাতার টেস্টে প্রথম ওভার থেকেই পিচে অসম বাউন্স চোখে পড়ে। ম্যাচ যত এগিয়েছে, ততই বেড়েছে টার্নের মাত্রা। পেসার ও স্পিনার-উভয়ের জন্যই সহায়ক হয়ে ওঠে উইকেটটি। পুরো ম্যাচে কোনো দলই এক ইনিংসে ২০০ রান করতে পারেনি। চতুর্থ ইনিংসে ১২৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারত অলআউট হয়ে যায় মাত্র ৯৩ রানে।
ম্যাচ চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় ইডেন গার্ডেন্সের পিচ। ম্যাচ শেষে ভারতের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর বলেন, ‘আমরা যা চেয়েছিলাম পিচ ঠিক তেমনই ছিল।’
যদিও গোয়াহাটিতে দ্বিতীয় টেস্টের আগে ব্যাটিং কোচ সিতাংশু কোটাক ভিন্ন বক্তব্য দেন। কোটাক জানান, ইডেন গার্ডেন্সের কিউরেটর সুজন মুখার্জিকে রক্ষা করতেই এমন মন্তব্য করেছিলেন গম্ভীর। তাঁর মতে, অসম বাউন্সে ভারতীয় দল বিস্মিত হয়েছিল এবং এমন পিচ তাঁরা আদৌ চায়নি।
গোয়াহাটিতে দ্বিতীয় টেস্ট তুলনামূলক ব্যাটিং-বান্ধব পিচ ছিল। সেখানেও বড় জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ফলে সিরিজ ২-০ ব্যবধানে নিজেদের করে নেয় প্রোটিয়ারা।
সম্প্রতি পিচের রেটিং নিয়ে আলোচনা চলছে জোরেশোরেই। অ্যাশেজের বক্সিং ডে টেস্ট শেষে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) পিচকে ‘অসন্তোষজনক’ ঘোষণা করেছে আইসিসি। এর সঙ্গে মাঠটি পেয়েছে ১ ডিমেরিট পয়েন্টও। আলোচনা হলেও বলা যায় এই যাত্রায় বেঁচে গেল ইডেন গার্ডেন্স।

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
আজ এক শোকবার্তায় বিসিবি সভাপতি বলেন,
‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য এক গভীর ক্ষতি। পাশাপাশি যাঁরা তাঁর নেতৃত্ব ও জনসেবার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন- সবার জন্যই এটি এক বেদনাদায়ক মুহূর্ত।’
শোকবার্তায় ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করে আমিনুল ইসলাম বলেন,
‘তিনি ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি যে উৎসাহ ও সমর্থন যুগিয়েছিলেন সে জন্য তাঁকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর আগ্রহ এবং দেশকে একসূত্রে গাঁথার ক্ষেত্রে এই খেলাটির গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি ছিল আন্তরিক ও দীর্ঘস্থায়ী।’
তিনি বলেন,
‘বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে বাংলাদেশের ক্রিকেট অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়, যা দেশের ক্রিকেটের শক্ত ভিত গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।’
বিসিবি সভাপতি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের আধুনিকায়নের পথে খালেদা জিয়ার প্রয়াত পুত্র আরাফাত রহমানের অবদানও অবিচ্ছেদ্য। তাঁর দূরদর্শী চিন্তা ও উদ্যোগ দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।
শোকবার্তায় বিসিবির পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার, স্বজন এবং দেশ-বিদেশে অবস্থানরত শোকাহত মানুষের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।
খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে আমিনুল ইসলাম বলেন,
‘আল্লাহ যেন বেগম খালেদা জিয়াকে জান্নাত নসিব করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের এই শোক সহ্য করার শক্তি ও ধৈর্য দান করেন।’
উল্লেখ্য, আজ মঙ্গলবার ভোর ৬ টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন খালেদা জিয়া। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেছেন। এর মধ্যে ছিল লিভার সংক্রান্ত জটিলতা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিস ও ইনফেকশনজনিত সমস্যা।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের আবহে আজ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দুটি ম্যাচ স্থগিত রাখা হয়েছে। শোক ও সম্মান জানিয়ে কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নেয়।
ম্যাচ স্থগিত থাকলেও বিকেলে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ও দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
বুলবুল বলেন,
‘১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের পর আমাদের বিভিন্ন জায়গায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে একটি ছিল তৎকালীন বিএনপির পক্ষ থেকে মিন্টু রোডে আয়োজিত সংবর্ধনা। আমি তখন দলের ভাইস ক্যাপ্টেন ছিলাম। বক্তৃতার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে একটি ভুল বলায় পুরো মঞ্চ কিছুক্ষণ নীরব হয়ে যায়। পরে সঙ্গে সঙ্গে ভুল সংশোধন করি। ঘটনাটি আজও আমার মনে গভীরভাবে দাগ কেটে আছে।’
তিনি আরও বলেন,
‘আমরা যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করতাম, তখন তিনি আমাদের দাওয়াত দিতেন। আমার জীবনের অন্যতম গর্বের মুহূর্ত ছিল রাষ্ট্রীয় পুরস্কার গ্রহণ—যে পুরস্কারটি তিনি নিজ হাতে আমার গলায় পরিয়ে দিয়েছিলেন।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন,
‘বিসিবির পক্ষ থেকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে শোক প্রকাশ করেছি। আগামীকাল শোক দিবস উপলক্ষে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এখানে কোনো রাজনৈতিক বিষয় নেই—আমরা সবাই দেশের নাগরিক এবং আমরা সবাই শোকাহত।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় সহায়তার কথা স্মরণ করে বুলবুল বলেন,
‘২০০৪ সালে বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আয়োজন এবং মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন ভেন্যু নির্মাণে যে সহযোগিতা পাওয়া গেছে, তা দেশের ক্রিকেট এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।’

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেটে মঙ্গলবার স্থগিত করা দুই ম্যাচের নতুন সূচি জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সিলেটে আগামী ৪ জানুয়ারি (রোববার) হবে এই ম্যাচ দুইটি।
আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বিসিবি জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকারের ঘোষিত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের অংশ হিসেবে বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর কোনো বিপিএল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে না। এদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতি ও শুক্রবার (১ ও ২ জানুয়ারি) নির্ধারিত ম্যাচগুলো পূর্ব ঘোষিত সূচি অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার দিনের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল সিলেট টাইটান্স ও চট্টগ্রাম রয়্যালসের। পরে সন্ধ্যার ম্যাচে খেলার কথা রংপুর রাইডার্স ও ঢাকা ক্যাপিটালসের। এখন আগামী রোববার খেলবে তারা।
এর আগে বিকেলে বিপিএলের ফেইসবুক পেজে প্রকাশিত এক বার্তায় জানানো হয়েছিল, মঙ্গলবারের ম্যাচগুলো হবে বুধবার। তবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বিসিবি।
এদিকে আগামী সোমবার থেকে বিপিএলের খেলা হওয়ার কথা ছিল চট্টগ্রামে। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ৫ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে পরবর্তী ম্যাচগুলোর সংশোধিত সূচি শিগগিরই প্রকাশ করবে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল।

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ১৫ জনের দল ঘোষণা করেছে ওমান। ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলটির নেতৃত্ব দেবেন ওপেনার জতিন্দর সিং। তবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার আমির কালিমকে দলে না রাখা। এশিয়া কাপে ভালো পারফরম্যান্সের পরও ৪৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার জায়গা পাননি চূড়ান্ত স্কোয়াডে।
ঘোষিত দলে সহ-অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন উইকেটকিপার–ব্যাটার ভিনায়ক শুক্লা। বছরের শুরুতে এশিয়া কাপে যে দল খেলেছিল, সেখান থেকে পাঁচটি পরিবর্তন এনেছে ওমান ক্রিকেট বোর্ড।
নতুন করে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছেন অলরাউন্ডার ওয়াসিম আলি, করণ সোনাভালে ও জে ওডেড্রা। পাশাপাশি পেস আক্রমণ শক্তিশালী করতে দলে যুক্ত করা হয়েছে শফিক জান ও জিতেন রামানন্দিকে। রামানন্দি, ওডেড্রা ও ওয়াসিম আলি টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলেছিলেন। শফিক জান ওমানের হয়ে অভিষেক করেন এশিয়া কাপ রাইজিং স্টারস টুর্নামেন্টে, যেখানে খেলেছিলেন সোনাভালেও।
এশিয়া কাপের দলে থাকা কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে এবার বাদ পড়েছেন আমির কালিম। সেই টুর্নামেন্টে তিনি ওমানের হয়ে দুটি ফিফটি করেছিলেন এবং পরবর্তীতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও খেলেন। অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে চূড়ান্ত বিশ্বকাপ দলে রাখেনি টিম ম্যানেজমেন্ট।
অধিনায়ক জতিন্দর সিং ওমানের টি–টোয়েন্টি ইতিহাসে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এবং সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আগের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি দলে জায়গা পাননি, তবে এবার নেতৃত্বের দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছেন তিনি।
২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘বি’ গ্রুপে খেলবে ওমান। গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ সহ-আয়োজক শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ড। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে ওমান।
ওমানের বিশ্বকাপ দল:
জতিন্দর সিং (অধিনায়ক), ভিনায়ক শুক্লা (সহ-অধিনায়ক), মোহাম্মদ নাদিম, শাকিল আহমদ, হাম্মাদ মির্জা, ওয়াসিম আলি, করণ সোনাভালে, ফয়সাল শাহ, নাদিম খান, সুফিয়ান মেহমুদ, জে ওডেড্রা, শফিক জান, আশিস ওডেডারা, জিতেন রামানন্দি, হাসনাইন আলি শাহ।