১৩ অক্টোবর ২০২৫, ৬:৪১ পিএম

গড়পড়তা অন্য অনেকের চেয়ে খানিক দেরিতেই স্বীকৃত ক্রিকেটে পথচলা শুরু মোহাম্মদ রুবেলের। বয়সের কাটা ২৯ পেরোনোর পর এই রহস্য স্পিনার খেললেন এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে। চট্টগ্রামের হয়ে নিজের প্রথম সংস্করণেই করলেন বাজিমাত। চট্টগ্রামের বিভাগের হয়ে ৮ ম্যাচে ৫.২১ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ১০ উইকেট। নজরকাড়া পারফরম্যান্সে হাতে তুলেছেন ‘মোস্ট প্রমিজিং ক্রিকেটার’ পুরস্কার।
এই পর্যায়ে আসতে রুবেলকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বেশ লম্বা সময়। ঢাকার দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলেছেন প্রায় ৭ মৌসুম। তারপর সাধারণ অফ স্পিনার থেকে নিজেকে ভেঙে, গড়েছেন রহস্য স্পিনার হিসেবে। বদলে যাওয়ার ছাপ রেখেছেন এনসিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টেও। অফ স্পিনের সঙ্গে ক্যারম বল, লেগ স্পিনের মিশেলের ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম ফাইনালে জায়গা করতে না পারলেও নিজেকে নিংড়ে দিয়ে রুবেল পেয়েছেন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের খেতাব। এনসিএলে শেষে ব্যক্তিগত সাফল্য, বোলিংয়ে পরিবর্তন, দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগ লিগে সুযোগ তৈরি, সব মিলিয়ে একজন পেশাদার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে টি স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলছেন রুবেল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদ।
টি স্পোর্টস: শেষ থেকেই শুরু করি। প্রথমবার স্বীকৃত ক্রিকেট খেললেন। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের পুরস্কারও জিতলেন। সব মিলিয়ে আপনার এই পথচলাটা কেমন ছিল?
মোহাম্মদ রুবেল: এত বড় জায়গায় প্রথমবার খেলব। খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম। একইসঙ্গে আত্মবিশ্বাসীও ছিলাম, যদি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই তাহলে ভালো কিছু করতে পারব।
অধিনায়ক থেকে শুরু করে দলের সবাই আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছে। সিনিয়র ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ, সবার থেকে অনেক সাহস পেয়েছি। আমার যেহেতু প্রথমবার ছিল, এমন সমর্থন পাওয়ায় ভালো কিছু করাটা সহজ হয়ে গেছে। এটাই আমার জন্য বড় পাওয়া ছিল, এমন সহায়ক একটা দল।
টি স্পোর্টস: এনসিএলের জন্য প্রস্তুতিটা কীভাবে নিয়েছেন?
রুবেল: এনসিএলের আগে চট্টগ্রামে এক মাসের ক্যাম্প হয়েছে। তখন থেকেই আমাকে অধিনায়ক বা সিনিয়র ক্রিকেটাররা বলেছেন, আমি শুরু থেকে এনসিএল খেলার সুযোগ পাব। তাই সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছি।
টি স্পোর্টস: চট্টগ্রাম দলে নাঈম হাসানের মতো অফ স্পিনার আছেন। সচরাচর দুজন অফ স্পিনার একসঙ্গে খেলে না। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দলের পক্ষ থেকে কেমন বার্তা পেয়েছিলেন?
রুবেল: আমার ট্যাগটা অফ স্পিনার ঠিক আছে, তবে আমি ভ্যারিয়েশন একটু বেশি ব্যবহার করি। গতানুগতিক অফ স্পিনের মতো করি না। এ কারণে হয়তো সুযোগটা একটু বেশি ছিল। নাঈম অফ স্পিনার হিসেবে খেলবে আর আমি অনেকটা মিস্ট্রি স্পিনারের মতো। সেরকমভাবেই আমাকে বলে রেখেছিল। আমিও সেভাবে প্রস্তুত হয়েছি। সেই হিসেব করেই খেললাম।
প্রথম ম্যাচে উইকেট ১টা পেয়েছি, তবে মাত্র ১৬ রান দিয়েছি। সেই ম্যাচের পরই আসলে আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে গেছে। সেখান থেকে চেষ্টা করেছি যত ভালো করা যায়। রাজশাহীর বিপক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলাম। অধিনায়কও আমার ওপর খুব আস্থা রেখেছেন, যখন প্রয়োজন আমি বল করতে পারব। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। প্রথম বছর খেলতে এসেই এই ভরসাটা দিতে পেরেছি, ভালো কিছু করেছি।
টি স্পোর্টস: একটু পেছনে ফিরি। বছরের শুরুতে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে ১৫ ম্যাচে ৪৩ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন। তারপর চট্টগ্রামের রিজিওনাল টি-টোয়েন্টিতে ১৫ উইকেট নিয়ে আবার টপ হলেন। এবার এনসিএলেও ভালো করলেন। বছরটা কী নিজের মনে হচ্ছে?
রুবেল: ২০২৫ সালটা অবশ্যই সব দিক দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে। শুধু এই বছর বলব না, ২০২৩-২৪ মৌসুমের সেকেন্ড ডিভিশন থেকেই সামনের দিকে আছি। সেবার ১৬ ম্যাচে ৩৭ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে ছিলাম। তারপর ২০২৪-২৫ মৌসুমে ফার্স্ট ডিভিশনেও সর্বোচ্চ উইকেট। চট্টগ্রামের রিজিওনাল টি-টোয়েন্টিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো গেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার এনসিএলও খেললাম।
টি স্পোর্টস: যেটা বলছিলেন, আপনি অনেক বৈচিত্র্য ব্যবহার করেন বোলিংয়ে। এনসিএলেও আমরা দেখলাম ক্যারম বল করছেন, একই অ্যাকশনে লেগ স্পিন করছেন। এসব রপ্ত করলেন কীভাবে?
রুবেল: আমি আগে নরমাল অফ স্পিনই করতাম। কিন্তু ২০২৩-২৪ মৌসুমের সেকেন্ড ডিভিশন শুরুর ২ মাস আগে আমার মনে হলো, যদি নরমাল অফ স্পিনই করি, তাহলে বেশি ওপরে খেলতে পারব না। একটা জায়গায়ই আটকে থাকতে হবে। তাই একটু ভিন্ন চিন্তা করলাম, ভ্যারিয়েশন আনার কথা ভাবলাম।
তো ওই মোটামুটি ২ মাসের মধ্যেই আমি সব রপ্ত করি। ক্যারম বল, লেগ স্পিন, ব্যাক স্পিন- যা কিছুই পারি, ২ মাসের মধ্যেই সব কিছু আয়ত্তে এনেছি। তারপর সেকেন্ড ডিভিশনে গিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হলাম। আর ফার্স্ট ডিভিশনে খেললাম। তারপর থেকে আল্লাহর রহমতে চলছে।
টি স্পোর্টস: রহস্য স্পিনার হওয়াটা তো সবসময়ই ঝুঁকির ব্যাপার...
রুবেল: আমি টানা ৭ বছর সেকেন্ড ডিভিশন লিগ খেলেছি। তেমন খারাপ করতাম না। ভালো ইকোনমি রেটে প্রতি বছর ২০-২১ উইকেট হয়তো নিতাম। তবে কখনও টপে থাকতে পারতাম না। এখন ভালো জায়গায় খেলতে তো ঝুঁকি নিতে হবে।
তাই ভাবলাম, ঝুঁকি নিয়েই দেখি। সফল হলে তো ভালো। নইলে আগের জায়গায়ই ফিরে যাব। এই চিন্তা থেকেই ২ মাসে সব ট্রাই করলাম। এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ সব কিছু আমার নিয়ন্ত্রণে আছে।
টি স্পোর্টস: রহস্য স্পিনারদের ক্ষেত্রে প্রায়ই একটা জিনিস দেখা যায় যে, অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। বাংলাদেশের সঞ্জিত সাহা দ্বীপ, আলিস আল ইসলাম বা বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার সুনিল নারাইনকেও অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। আপনি কখনও এসবের সম্মুখীন হয়েছেন?
রুবেল: এখন পর্যন্ত বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সেভাবে কারো থেকে কিছু শুনতে হয়নি। রহস্য স্পিনার হওয়ায় এই ঝুঁকিটা আছে আমি জানি। সামনে আরো যত বড় জায়গায় খেলব, আরো বেশি খুঁটিয়ে দেখা হবে হয়তো। এ ছাড়া অনেকে আবার ঈর্ষাবশতও অনেক কথা বলে।
তবে আমি সব কিছুর জন্যই আমি প্রস্তুত আছি। কখনো যদি প্রশ্নের মুখে পড়ি, তাহলে পরীক্ষা দিয়ে আবার আসব। যতক্ষণ পর্যন্ত জানি যে, আমার বোলিং অ্যাকশন ঠিক আছে, ততক্ষণ আমার কোনো ভয় বা চিন্তা নেই। সামনে যা আসুক, ওভারকাম করতে পারব।
টি স্পোর্টস: আপনার বয়স এরই মধ্যে ২৯ পেরিয়ে গেছে। তুলনামূলক বেশ দেরিতে স্বীকৃত ক্রিকেটে পথচলা শুরু করলেন। এর আগের পথটা কেমন ছিল?
রুবেল: চট্টগ্রামে শতাব্দী ক্রিকেট একাডেমিতে আবু বকর সিদ্দিক ভাইয়ের কোচিংয়ে আমার শুরু। ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ বয়সভিত্তিক ট্রায়ালে গিয়েছিলাম। তখন বয়সের কারণে বাদ পড়ে যাই। তারপর বকর ভাইয়ের কাছে যাই। তখনও চট্টগ্রামে ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন কিছুই খেলিনি। একদম নতুন ছিলাম। টেপ টেনিস খেলতাম। ক্রিকেট বলে সেভাবে খেলিনি।
শতাব্দী একাডেমিতে যাওয়ার পর বকর ভাই আমার প্রতিভা দেখেই হয়তো সরাসরি চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগে নিয়ে নেন। তখন থেকেই মূলত আমার শুরু। চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার লিগে বড় বড় প্লেয়াররা খেলতেন। তাদের সঙ্গে খেলে সিরিয়াস ক্রিকেটটা শুরু।
টি স্পোর্টস: চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার ক্রিকেটে কবে এলেন?
রুবেল: শুরুতে আমি আসলে ব্যাটার ছিলাম। ২০১৪-১৫ মৌসুমের চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগে আমি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছিলাম। আমার এক বড় ভাই আছেন, তিনি বললেন, ‘তুই তো প্রিমিয়ার লিগে ভালো খেলছিস, তোকে আমি ঢাকায় নিয়ে যাব।’ ২০১৫-১৬ মৌসুমে আমি সেকেন্ড ডিভিশনের ক্লাব মিরপুর বয়েজ ক্রিকেট ক্লাবে যাই। প্রথমে ট্রায়াল নেয়। কিন্তু সেখানে তাদের পছন্দ হয়নি। বেশি বল খেলার সুযোগও পাইনি নেটে।
আমাকে অন্য আরেকটা দল থেকেও বলছিল। তবে মিরপুর বয়েজে চট্টগ্রামের আরো ৫-৬ জন থাকায় সেখানেই যাই। ট্রায়ালে বাদ দেওয়ার পর বড় ভাইরা ক্লাবের কর্মকর্তাদের বললেন, ‘ভাই ওরে বাদ দিয়েন না। প্রয়োজনে একটা প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলান। ভালো খেললে রাখবেন। খারাপ খেললে তো নেই।’ ওনারা সিনিয়র প্লেয়ার ছিলেন সেই দলের, তাই ওনাদের কথা রাখলেন।
তারপর ফতুল্লার আউটার মাঠে একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলি। সেদিন ৬ ওভারে ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিই। আবার ব্যাটিংয়ে সাত নম্বরে নেমে ১৭ বলে করি ৪৫ রান। সেখান থেকেই ঢাকা লিগে শুরু। এখন সম্পর্কটা এমন হয়ে গেছে, মিরপুর বয়েজ দলটা সাজাতে আমার অনেক ইনপুট থাকে। ক্লাবের কর্তারা অনেক ভরসা করে আমার ওপর।
২০২৩-২৪ মৌসুমে যখন সর্বোচ্চ উইকেট নিলাম, তখন ক্লাবের কর্তারাই আমাকে বললেন, তুই যেহেতু সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছিস, সেকেন্ড ডিভিশন আর খেলিস না। এবার ফার্স্ট ডিভিশন খেল। সর্বোচ্চ উইকেট পাইছিস, এখন ফার্স্ট ডিভিশন দলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবি।
টি স্পোর্টস: প্রথম বিভাগে তো শুধু ম্যাচই খেললেন না, আবারও সবার ওপরে ছিলেন...
রুবেল: সেকেন্ড ডিভিশন শেষ হওয়ার পর আমাকে ৫-৬টা দল থেকে কল করেছে। তুলনামূলক দ্বিগুণ টাকাও দেবে বলেছে। তবে দলের পরিবেশ ও বাকি সব কিছু মিলিয়ে অর্ধেক টাকায় গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমিতে খেলতে রাজি হয়ে যাই। দলের পরিবেশই মূল। সেটা ভালো পাওয়ায় পারফরম্যান্সও ভালো হলো। সেখান থেকেই এখন আলহামদুলিল্লাহ চলছে।
টি স্পোর্টস: স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথম টুর্নামেন্টে ভালো করলেন। সামনের সময় নিয়ে কী ভাবছেন?
রুবেল: সামনে তো এখন এনসিএলের চার দিনের টুর্নামেন্ট আছে। দলে সুযোগ পেলে অবশ্যই ভালো করার চেষ্টা করব। আর বিপিএল খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে। যদি প্লেয়ার্স ড্রাফটে নাম থাকে, কোনো দলে সুযোগ পাই, তাহলে আত্মবিশ্বাস আছে ভালো করার। নিজের সবটা দিয়েই চেষ্টা করব।
No posts available.
২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৩ এম
২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩০ পিএম

আইপিএলের নতুন মৌসুমে স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সাইরাজ বাহুতুলেকে নিয়োগ দিয়েছে পাঞ্জাব কিংস। তিনি সুনীল জোশির স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন বাহুতুলে। ঘরোয়া পর্যায়ে কেরালা, গুজরাট, বিদর্ভ ও বেঙ্গলসহ বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
ভারতের হয়ে দুইটি টেস্ট ও আটটি ওয়ানডে খেলেছেন বাহুতুলে। পাঞ্জাবে যোগ দিতে পেরে আনন্দিত তিনি,
'আইপিএল মৌসুমে পাঞ্জাব কিংসের স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে যোগ দিতে পেরে ভীষণ রোমাঞ্চিত আমি। এটি এমন একটি দল যারা ভিন্নধর্মী ক্রিকেট খেলে। এখানে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে, আমি তাদের সঙ্গে কাজ করতে এবং তাদের দক্ষতা আরও শানিত করতে মুখিয়ে রয়েছি।'

বাংলাদেশ জাতীয় দলে সৌম্য সরকারের সিটটা একদমই নড়বড়ে। আসা-যাওয়ার মধ্যেই কাটছে সময়। প্রতিভার সাক্ষর রেখে বছর পাঁচেক আগে অভিষেকে হওয়া এই ব্যাটার খুব একটা থিতু হতে পারেননি দলে। এর জন্য সৌম্যর অপ্রত্যাশিত পারফরম্যান্স অনেকটা দায়ী।
আসা যাওয়ার মধ্যে থাকা বাঁ-হাতি এই ব্যাটার আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ হওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের সবকটি ম্যাচ খেলেছেন। যার প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ৪৫ এবং শেষ ম্যাচে ৯১ রান করেছেন। ম্যাচ শেষে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার নিতে এসে সৌম্য জানালেন আক্ষেপের কথা।
সৌম্য বলেন,
'ম্যাচে পজিটিভ ইনটেন্ট রাখার চেষ্টা করেছি। অনেকদিন পর বলতে, অনেক দিন পর জাতীয় দলে খেলছি, ওয়ানডেতে। এটা কঠিন আমার জন্য। যখন হঠাৎ করে অনেক দিন পরে এসে ম্যাচ খেলা লাগে, মানিয়ে নেওয়া লাগে। এটা সব খেলোয়াড়ের জন্যই কঠিন।'
৮৬ বলে ৯১ রানের ইনিংসের জন্য সৌম্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে সৃষ্টিকর্তা ও পরিবারের প্রতি,
'ধন্যবাদ দিতে চাই সৃষ্টিকর্তাকে এবং আমার পরিবারকে, আমার স্ত্রীকে। তারা সবসময় যেভাবে আমাকে সমর্থন করেছে। যত কঠিন সময় আসুক, যে-কোনো পরিস্থিতিতে তারা আমাকে বলেছে কষ্ট করলে ফল অবশ্যই আসবে।'

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জিতে সিরিজে লিড নিয়েছিল বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে সুপার ওভারে হেরে যায় স্বাগতিকরা। তাতেই শেষ ম্যাচ দুদলের জন্য হয়ে ওঠে বাঁচা-মরার।
আজ তৃতীয় ম্যাচে পাত্তাই পেল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে ১৭৯ রানের বড় জয় পেয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল। এই জয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতল স্বাগতিকরা।
অনেকের মতে, হোম অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগিয়ে কালো মাটির পিচ তৈরি করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও অধিনায়ক মিরাজ বলছেন ভিন্ন কথা। তার দাবি বিশ্বের সব দেশ হোম অ্যাডভান্টেজ নেয়।
আজ ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
‘আপনি পৃথিবীর যে জায়গায় খেলতে চান না কেন, যাদের সাথে আমরা খেলি না কেন, তারা কিন্তু হোম অ্যাডভান্টেজটা নেয়। আমরা নিউজিল্যান্ডে খেলেছি, ওখানে তারা হোম অ্যাডভান্টেজটা নিয়েছে। তাই কোনো টিম যদি বাংলাদেশে আসে, আমরা তো অবশ্যই হোম অ্যাডভান্টেজ নিবো।'
তিনি আরও বলেন,
‘দিন শেষে সবাই রেজাল্টটাই চায়। হয়তো বিশ্বকাপে গিয়ে আমরা অনেক ভালো কিছু করতে পারিনি, সেটার জন্য আলাদা একটা প্রসেস এবং সেটার জন্য আলাদা একটা প্ল্যানিং করতে হবে। আমার কাছে মনে হয় যে সেই প্ল্যানিংটা হওয়া উচিত দুই থেকে তিন মাস আগে থেকে।’
মিরাজ বলেন,
‘বিশ্বকাপের আগে আমরা কীভাবে খেলবো, কীভাবে আমরা স্কিল ক্যাম্প করবো, কীভাবে আমাদের প্রিপারেশন থাকবে, সেটার জন্য আলাদাভাবে কোথায় আমরা প্র্যাকটিস করবো। সে জিনিসগুলো আগে থেকেই করা উচিত। আমার কাছে মনে হয় হোম অ্যাডভান্টেজ খুবই ইম্পর্ট্যান্ট।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে থেকেই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল উইকেট। সিরিজ শেষ হওয়ার পরও বন্ধ নেই পিচ বিষয়ক প্রশ্ন। তবে ক্যারিবিয়ান প্রধান কোচ ড্যারেন স্যামির মতে, বাংলাদেশের নিজেদের পছন্দমতো উইকেট বানানোয় দোষের কিছু নেই।
ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচেই স্পিন সহায়ক উইকেট নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে স্বাভাবিকভাবেই দাপট ছিল স্পিনারদের। শেষ ওয়ানডেতেই যেমন সফরকারীদের ১০ উইকেটের সবকটিই নেন বাংলাদেশের স্পিনাররা।
তৃতীয় ম্যাচে ১৭৯ রানে হেরে শেষ হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ। পরে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্যামির কাছে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশের ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়ার ব্যাপারে।
উত্তরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক এই অধিনায়ক নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতা মেনে নেন।
“আমি সবসময়ই ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’ নেওয়ার পক্ষে। আমি তো বাংলাদেশ দল বা কর্তৃপক্ষকে বলতে পারি না, কী ধরনের উইকেট তৈরি করতে হবে। আমার দল যেন দেশের বাইরে খেলতে গেলে যেকোনো পরিস্থিতি সামলানোর মতো দক্ষতা অর্জন করে, সেদিকেই আমার মনোযোগ থাকে।”
তার কাছে প্রশ্ন করা হয়, দেশের মাটিতে স্পিন সহায়ক পিচে খেলে বিদেশের মাঠে খেলতে অসুবিধায় পড়বে কিনা বাংলাদেশ। দলের উন্নতিতেও বাধা হতে পারে কিনা এমন হোম অ্যাডভান্টেজ।
স্যামির ভাবনা এক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন।
“আমি আগেও বলেছি, এই সিরিজটা দুই দলের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নিজের মাঠে জয়ের জন্য যা করা দরকার, সেটাই করা উচিত- এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।”
“এতে যদি তাদের বিদেশে খেলতে যাওয়ার পর পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ে, সেটা তাদের বিষয়। বাইরে গিয়ে ভালো খেলবে কি না, সেটা তাদের দায়িত্ব। আমি হোম এডভান্টেজের বিপক্ষে নই, ক্ষোভও নেই। আমি শুধু মনে করি, আমার খেলোয়াড়রা এই সিরিজে নিজেদের সেরাটা দিতে পারেনি।”

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৭৯ রানে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় জয়। উইন্ডিজের বিপক্ষে আগের বড় জয়টি ছিল ১৬০ রানের, ২০১২ সালে খুলনায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখির আগে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে টানা চারটি সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। সেই ধারা ভাঙলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার ক্যাপ্টেন্সিতে প্রায় ১৯ মাস পর ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। এর আগে সর্বশেষ ২০২৪ সালের মার্চে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল লাল সবুজ দল।
আজ ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ জানান, জয়ের সাফল্য দলীয় হয়ে যায়। আর হারলে দায় অধিনায়কের ওপরই পড়ে।
মিরাজ বলেন,
‘আমাকে যখন অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তখন আমাদের টিমের অবস্থান ছিল দশ নম্বরে। এখনো দশেই আছি। মাঝপথে অনেক ম্যাচ হেরেছি। কিন্তু দিনের শেষে যদি টিম ফলাফল না করতে পারে, স্পষ্টতই ক্যাপ্টেনের ওপরেই আসে। আর টিম যখন ভালো খেলে, তখন অবশ্যই দল একত্রিত হয়ে খেলেছে বলে পারফরম্যান্স হচ্ছে।’
বাংলাদেশ অধিনায়ক আরও বলেন,
‘অধিনায়ক হিসেবে অনেক দূর এগোতে হবে, অনেক বেশি দায়িত্ব পালন করতে হবে। হয়তো এখন আমি অধিনায়ক, ভবিষ্যতে অন্য কেউ আসবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করি এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’