চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাওয়া চোট কাটিয়ে দ্রুতই ফেরার কথা ছিল জাতীয় দলে। তবে ম্যাট হেনরিকে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুটা সময়। স্কোয়াডে থাকলেও তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকেও ছিটকে গেছেন এই নিউজিল্যান্ড পেসার।
ক্রিকেট নিউজিল্যান্ডে এক বিবৃতিতে শনিবার জানিয়েছে, পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ ও পঞ্চম টি-টোয়েন্টির স্কোয়াডে থাকা হেনরিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞ এই পেসার তার চোট পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবেন।
চলতি মাসের শুরুর দিকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল ক্যাচ নেওয়ার সময় হেনরি তার ডান কাঁধে চোট পান, যা তাকে ছিটকে দেয় ভারতের বিপক্ষে ফাইনালের থেকে।
আরও পড়ুন
আইপিএলে স্লো-ওভার রেটের শাস্তি থেকে অধিনায়কের মুক্তি |
![]() |
চলমান সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচের স্কোয়াডে থাকা জাকারি ফৌলকসকে হেনরির বদলি শেষ দুই ম্যাচের জন্য তাই রাখা হয়েছে দলে। প্রথম ম্যাচে ১১ রানে ১ উইকেট (তিন ওভারে) দ্বিতীয় ম্যাচে ৩২ রান দিয়ে উইকেট শূন্য (তিন ওভারে) থাকেন তিনি। দুটি ম্যাচেই নিউজিল্যান্ড জিতেছিল।
স্কোয়াডে আনা হয়েছে আরেকটি পরিবর্তন। কাইল জেমিসন বাদ পড়েছেন শেষ দুই ম্যাচ থেকে। দীর্ঘজায় এই পেসার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচ সেরা। পরের ম্যাচে পাননি উইকেট, গুনেন ৫৪ রান। তার জায়গায় স্কোয়াডে যুক্ত করা হয়েছে পেসার উইল ও'রউর্ককে।
আগামী রোববার (মাউন্ট মুনগানুই) এবং বুধবার (ওয়েলিংটন) হবে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে। নিউজিল্যান্ড এগিয়ে আছে ২-১ ব্যবধানে।
No posts available.
২১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৭ পিএম
২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৫ পিএম
চলতি সিরিজের দুই ম্যাচ মিলিয়েই বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাববিস্তারী ব্যাটার ছিলেন রিশাদ হোসেন। কিন্তু সুপার ওভারে ১১ রানের লক্ষ্য পূরণে তাকে ব্যাটিংয়েই নামায়নি বাংলাদেশ। এর পেছনে কারণ হিসেবে সৌম্য সরকার বললেন, কোচ ও অধিনায়কের সিদ্ধান্ত ছিল এটি।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার নিজেদের দীর্ঘ ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম 'টাই' ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। তিন সংস্করণ মিলিয়েই এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম টাই। পরে সুপার ওভারে মাত্র ১ রানে হেরে যায় তারা।
এর আগে মূল ম্যাচে ৯ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩টি করে চার-ছক্কায় মাত্র ১৪ বলে ২৭৮.৫৭ স্ট্রাইক রেটে ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন রিশাদ। প্রথম ম্যাচেও তার ব্যাট থেকে আসে ১৩ বলে ২৬ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংস।
তবু আকিল হোসেনের করা সুপার ওভারে ১১ রানের সমীকরণে রিশাদকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়নি বাংলাদেশ। শুরুতে নামানো হয় সাইফ হাসান ও সৌম্যকে। পরে সৌম্য আউট হয়ে গেলে বাকি ২ বলের জন্য ক্রিজে যান নাজমুল হোসেন শান্ত।
টপ-অর্ডারের তিন ব্যাটার মিলে আকিলের ওভারে অতিরিক্ত ৪ রান পাওয়ার পরও সব মিলিয়ে ৯ রানের বেশি নিতে পারেননি। ফলে ১ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজে ফেরে সমতা।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সৌম্যর কাছে প্রথম প্রশ্নই করা হয়, সুপার ওভারে কেন নামেননি রিশাদ। উত্তরে কোচ ও অধিনায়কের পরিকল্পনার কথা বলেন বাঁহাতি ওপেনার।
“হ্যাঁ, এটা (রিশাদকে সুপার ওভারে না পাঠানো) কোচ আর অধিনায়ক পরিকল্পনা করেছেন। এটা তাদের পরিকল্পনার একটা অংশ ছিল। তারা চিন্তা করেছে যে, মূল ব্যাটারদের পাঠাবে এই সময়ে।”
আরেক প্রশ্নে কোচ-অধিনায়কের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে কারণটাও বোঝানোর চেষ্টা করেন সৌম্য।
“দেখুন এখানে বাঁহাতি স্পিনার বল করছিল। তাই বাঁহাতি ব্যাটার উইকেটে যাওয়ার চিন্তা করাই সবচেয়ে ভালো। তো এটাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বাঁহাতি ব্যাটার গেলে দলের জন্য ভালো হবে। তাই এটি ভেবেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এমন ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতে সৌম্যর কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাঁহাতি স্পিনারের বিপক্ষে বাঁহাতি ব্যাটারই লাগবে- এমন ম্যাচ আপের পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারত কিনা বাংলাদেশ। উত্তরে আবারও কোচ-অধিনায়কের সিদ্ধান্তের পক্ষে ব্যাট ধরেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
“এটা নিয়ে তো দলের সবাই আমরা চিন্তা করিনি। এটা কোচ-অধিনায়ক চিন্তা করেছে। ওইখানে আমরা জানতাম না আকিল বল করবে। যদি আমরা দুইটা বাঁহাতি ব্যাটার নেমে যেতাম, ওই সময় যদি কোনো অফ-স্পিনার আসত, তখন কিন্তু দুজন বিপদে পড়তাম। তাই ডানহাতি-বাহাতি ছিল। ওদের ক্ষেত্রেও দেখবেন, ওরাও বাঁহাতি-ডানহাতি ব্যাটিং করেছে।”
নাটকের চেয়েও নাটকীয় বলতে যা বোঝায়, ঠিক সেটাই ঘটেছে আজ হোম অব ক্রিকেট মিরপুরে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০০ ওভারের পরও শেষ হয়নি ম্যাচ। খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। আর বাংলাদেশ হারল তাদের ইতিহাসের প্রথম সুপার ওভারের ম্যাচে।
ঘটনাবহুল এই ম্যাচে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল। পুরো ইনিংস স্পিনারদের দিয়ে করানোর সিদ্ধান্ত ছাড়াও সিরিজে ১–১ সমতায় ফিরেছে সফরকারী দল। তার চেয়েও বড় ঘটনা — ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সুপার ওভারে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজদের।
ম্যাচ শেষে সম্প্রচারকারী চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক মিরাজ বলেন,
‘এটা আমাদের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা ছিল। আমরা প্রথমবার সুপার ওভারে খেলেছি। ব্যাট করার জন্য উইকেটটা সহজ ছিল না। রিশাদ এই মুহূর্তে দারুণ ছন্দে আছে। যখন বাকি ব্যাটসম্যানরা সংগ্রাম করছিল, সে আত্মবিশ্বাস নিয়ে দারুণ ব্যাটিং করেছে।’
ইনিংসের শেষ ওভারে অলরাউন্ডার সাইফ হাসানকে বোলিংয়ে আনার বিষয়ে মিরাজ বলেন,
‘শেষ ওভারে সাইফকে বোলিং করানো ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না। আমি ভাবছিলাম, যদি আরেকটা উইকেট নিতে পারতাম... কিন্তু সেটা হয়নি। সুপার ওভারে আমাদের দরকার ছিল ১০ (আসলে ১১) রান, একটা বাউন্ডারি পেলেই হয়তো ফলাফলটা অন্যরকম হতে পারত।’
প্রথম ম্যাচে ১৩ বলে ২৬ রান। পরেরটিতে তাণ্ডব আরও বাড়িয়ে ১৪ বলে রিশাদ হোসেন করলেন ১৪ বলে ৩৯ রান। দুই ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের সবচেয়ে ভালো খেলেছেন তিনি। কিন্তু সুপার ওভারে রিশাদকে ব্যবহারই করেনি বাংলাদেশ।
যা দেখে অবাক হয়েছে ক্যারিবিয়ানরাও। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে আকিল হোসেন বলেই দিলেন, সুপার ওভারে রিশাদ না থাকায় তাদের কাজ সহজ হয়ে গেছে।
মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মঙ্গলবার 'টাই' হয় বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের লড়াই। সুপার ওভারে ১০ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরে সেই লক্ষ্য তাড়ায় সাইফ হাসান, সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্তকে নামায় বাংলাদেশ।
স্বাগতিকদের কাজ সহজ করে একটি 'নো' বল ও দুইটি 'ওয়াইড' বল দেন আকিল হোসেন। তবুও তিন ব্যাটার মিলে ১১ রান নিতে পারেননি। সৌম্যর উইকেট হারিয়ে মাত্র ৯ রান করতে পারে বাংলাদেশ। সুপার ওভারে হেরে যায় ১ রানে।
মঙ্গলবার ভোর ৪টায় টিম হোটেলে ঢুকে দুপুরে মাঠে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের নায়ক হয়ে যান আকিল। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রিশাদকে সুপার ওভারে না দেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবাই অবাক হয়েছিল।
“হ্যাঁ! আমি অবাক হয়েছি (রিশাদকে না দেখে)। আমি বলতে চাচ্ছি, ম্যাচে সে-ই তো সবচেয়ে বেশি ঝড় তুলেছে। মাত্র ১৪ বলে ৩৯ রান করেছে এবং অপরাজিত ছিল। কিন্তু সে আপনার সুপার ওভারে নেই। যেখানে সে কিনা মাঠের ছোট প্রান্তে মারার সুযোগ পেত। মূল ম্যাচেও ২টি ছক্কা মেরেছে সেদিকে।”
“অবশ্যই আমরা অবাক হয়েছিলাম যে সে (রিশাদ) সুপার ওভারে একদমই নামল না। এটি অবশ্যই আমাদের পক্ষে কাজ করেছে। সে অল্প কয়েকজন ব্যাটারদের মধ্যে একজন ছিল যে কিনা পাওয়ার হিটিং করতে পারছিল। লম্বা হওয়ায় তার কাজটাও সহজ ছিল। কিন্তু তারা তাকে নামায়নি। আমাদের জন্যই ভালো (হাসি)।”
সুপার ওভারে জিতে সিরিজে সমতা ফিরিয়ে সফরকারীরা। এখন শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে বৃহস্পতিবার লড়বে দুই দল।
উইকেট যেন তার কাছে ডাল-ভাত। হাত ঘুরালেন, মুহূর্তেই সাজঘরে ফিরল পাকিস্তানের বাঘা কোনো ব্যাটার। এক, দুই তিন-ঠিক এভাবে সাতটি উইকেট ভরেছেন নিজ জুলিতে। তাতেই দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার কেশব মহারাজ গড়েছেন কীর্তি, দলকে দিয়েছেন স্বস্তি।
মহারাজের কীর্তির দিনেও রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৩৩ রান সংগ্রহ করেছে পাকিস্তান। জবাব দিতে নেমে আজ দ্বিতীয় দিন শেষে ৪ উইকেটে ১৮৫ রান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংসের ১৪৮ রানে পিছিয়ে প্রোটিয়ারা।
৫ উইকেটে ২৫৯ রান নিয়ে আজ দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে পাকিস্তান। প্রথম সেশনের খেলা বেশ ভালো ভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন সাউদ শাকিল ও সালমান আলি আগা। দলীয় ৩১৬ রানে সালমান ফিরে গেলে ভাঙে ৭০ রানের জুটি। এরপরই ছন্দপতন। কেশব মহারাজের বোলিং ঘূর্ণিতে ৩৩৩ রানে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা। ৪২ ওভারে ১০৭ রান দিয়ে একাই ৭ উইকেট নেন মহারাজ।
টেস্টে পাকিস্তানে পাকিস্তানের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলিং এখন মহারাজের। আগের রেকর্ড পল অ্যাডামসের ৭/১২৮, ২০০৩ সালে লাহোরে।
প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ে নেমে দ্রুত আউট হয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার রায়ান রিকেলটন। শাহীন শাহ আফ্রিদির বলে মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১৪ রান করে ফেরেন তিনি। আরেক ওপেনার এইডেন মার্করাম ভালো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৩২ রান করে সাজঘরে ফেরেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন ট্রিস্টান স্টাবস ও টনি ডি জর্জি। দুজনে মিলে গড়েন ১১৩ রানের জুটি।
আউট হওয়ার আগে ৫৫ রান করেন জর্জি। তাঁকে ফেরান আসিফ আফ্রিদি, ৩৮ বছর বয়সী স্পিনারের টেস্টে এটিই প্রথম উইকেট। এরপর শূন্যরানে ডেওয়াল্ড ব্রেভিসকেও ফেরান আফ্রিদি। ফিরে গেলে দিনের শেষভাগে ম্যাচে ফেরে পাকিস্তান।
দিন শেষে ৬৮ রানে অপরাজিত আছেন স্টাবস, তার সঙ্গী কাইল ভেরেইন ১০ রানে অপরাজিত।
নির্ধারিত ৫০ ওভারের ম্যাচে শেষ ৬ বলে ৫ রানের টার্গেট দিয়ে জয়ের আশা ছেড়ে দেয়ারই কথা। অকেশনাল অফ স্পিনার সাইফ হাসানের হাতে বল তুলে দিয়ে জুয়াটাই কেবল খেলতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মিরাজ। সেই ম্যাচ অবিশ্বাস্যভাবে 'টাই'। বাংলাদেশের ওডিআই ক্রিকেট ইতিহাসে এটাই প্রথম দৃষ্টান্ত। সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১০/১-এর জবাবে বাংলাদেশ পেয়েছে বোনাস ৩টি বল। আকিল হুসেইন শুরু করেছেন ওয়াইড ডেলিভারি দিয়ে, বোনাস বলটি 'নো'। ১ বলে ৪। ডাগ আউট থেকে উইন্ডিজ কোচ ড্যারেন স্যামির সাজিয়ে দেয়া ফিল্ডিংয়ে সৌম্য ডিপ স্কোয়ার লেগে মোতির হাতে ক্যাচ দিলে শেষ বলে টার্গেট দাঁড়ায় ৪। শেষ বলটি আকিল হুসেইন ওয়াইড করলে এক বলে ৩ রানের টার্গেটের মুখে পড়ে বাংলাদেশ।কিন্তু ১ রানের বেশি নিতে পারেননি সাইফ হাসান। ৯/১-এ থেমেছে বাংলাদেশ। অবিশ্বাস্য সুপার ওভারের ১ রানে জিতে সিরিজে সমতায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ম্যাচে ম্যাচ উইনার উইন্ডিজ অধিনায়ক সাই হোপ। তার ৬৭ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৫৩ রানের হার না মানা ইনিংসে 'টাই' করতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সুপার ওভারের মোস্তাফিজের শেষ বলে হোপের বাউন্ডারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়েছে অক্সিজেন।
এমন একটি শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ম্লান হয়েছে রিশাদের অলরাউন্ড পারফরমেন্স ( ২৭৮.৫৭ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিংয়ে ১৪ বলে ৩৯ নট আউট এবং বোলিংয়ে ৩ উইকেট, ১০-০-৪২-৩)।
পর পর দুই ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের চিত্র প্রায় অভিন্ন। প্রথম ম্যাচে টেল এন্ডার রিশাদ ঝড়ে দুইশ পেরিয়ে থেমেছে বাংলাদেশ ২০৭/১০-এ। দ্বিতীয় ম্যাচে ও রিশাদ ঝড়। তার ১৪ বলে ৩৯ রানের হার না মানা ইনিংসে আর একবার দুইশ'র মুখ দেখেছে বাংলাদেশ (২১৩/৭)।
ব্যাটাররা কেনো ধুঁকছেন ? উইকেটের বৈশিষ্ঠ্যের দায় কতোটা ? এ প্রশ্ন দুটি উঠতেই পারে। তবে বাংলাদেশের ইনিংসে ব্যাটারদের অতিমাত্রায় নেতিবাচক ব্যাটিংয়ের চিত্রই বেরিয়ে আসবে। প্রথম ম্যাচে ২৯৮ বলের মধ্যে ১৮৩টি ডট করেছে বাংলাদেশ ব্যাটাররা। দ্বিতীয় ম্যাচে ৩০০ ডেলিভারির মধ্যে ১৯৩টি ডট!
অকেশনাল অফ স্পিনার অ্যালেক আথানজে ক্যারিয়ারের প্রথম ১৪ ম্যাচে ২ ইনিংসে মোট ৩ ওভার বোলিং করার সুযোগ পেয়েছেন। ১৫তম ম্যাচে এসে পুরো ১০ ওভার বোলিং করেছেন। দেখেছেন প্রথম উইকেটের মুখ। ১০-৩-১৪-২! ওভারপ্রতি ১.৪০ রান খরচায় বাংলাদেশ ব্যাটারদের কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছেন। তার দ্বিতীয় ওভারে শান্ত দিয়েছেন মিড অনে লো ক্যাচ (২১ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৫)। তার আর একটি ওভারে অঙ্কন ডিপ স্কোয়ার লেগের উপর দিয়ে ছক্কা মারতে যেয়ে বাউন্ডারি রোপের ঠিক সামনে দিয়েছেন ক্যাচ (৩৫ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৭ রান)। ২৭ এবং ২৮ রানের ওই দুটি পার্টনারশিপ ভেঙ্গে দেয়া আথানজে একটি মাত্র বাউন্ডারি খেয়েছেন। ৬০টি বলের মধ্যে দিয়েছেন ৫০টি ডট!
শেষ ওভারে ১৬ রান খরচ করেও বাঁ হাতি স্পিনার আকিল হুসেইন ছিলেন সফল (১০-১-৪২-২)। ৬০টি ডেলিভারির মধ্যে ৪২টি ডট দিয়েছেন তিনি। উইকেটহীন রোস্টন চেজ (০/৪৪) দিয়েছেন ৩৭টি ডট। উইকেটহীন থেরি পেরি (১০-০-৪৩-০) দিয়েছেন ৩২টি ডট। বাঁ হাতি স্পিনার গুদাকেশ মোতি ছিলেন খরুচে বোলার (১০-০-৬৫-৩)। তারপরও তার ৩২টি বল ছিল ডট।
টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যাটে সুপার গ্লু লেগে যাওয়ার মধ্যে কিছুটা ব্যাতিক্রম ছিলেন সৌম্য সরকার। সুইপ-রিভার্স সুইপ শটে ফিফটির পথে ছিলেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। তবে ফিফটি থেকে যখন ৫ রান দূরে, তখন আকিল হুসেইনকে সুইপ করতে যেয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে এসেছেন তিনি (৮৯ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৪৫)।
রানের যে গতি ছিল, তাতে ২০০'র পক্ষে বাজি ধরার সাহস না পাওয়ারই কথা। তবে টেল এন্ডার রিশাদ ছিলেন বলেই সেই জুয়ায় জিতেছে বাংলাদেশ দল। ৭ম উইকেট জুটির ৪৪ বলে ৩৪ রান টপকে অবিচ্ছিন্ন ৮ম উইকেট জুটিতে মিরাজ-রিশাদ যোগ করেছেন ২৪ বলে ৫০ রান। যার মধ্যে রিশাদের সংগ্রহ ১৪ বলে ৩ চার, ৩ ছক্কায় ৩৯! বাকি ১০ বলে মিরাজের অবদান ১১। শেষ ২ ওভারে ঝড় বইয়ে দিয়েছেন রিশাদ। ৪৯তম ওভারে খেরি পেরির খরচ ১৮।৫০ তম ওভারে আকিল হুসেইনের খরচ ১৬।
এক পেসার নিয়ে বাংলাদেশের একাদশ সাজানো নিয়ে কপালে চোখ উঠে যাওয়ার কথা যাদের, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজই স্পিন স্বর্গ মিরপুরে করেছে রেকর্ড! ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশে ছিলেন পেস বোলার জাস্টিন গ্রেভস। তার হাতে একটা ওভারও তুলে দিতে ভরসা পাননি উইন্ডিজ অধিনায়ক সাই হোপ। পুরো ৫০ ওভার স্পিনারদের দিয়ে বোলিং করিয়েছেন হোপ!
নতুন ইতিহাস লেখা হলো মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। স্পিন ট্র্যাকে নতুন বিশ্ব রেকর্ড। ৫৪ বছরের ওয়ানডে ইতিহাসে এই প্রথম অল স্পিন অ্যাটাকের বিশ্বরেকর্ড দেখল বিশ্ব।
ওয়ানডেতে এক ইনিংসে স্পিনারদের সবচেয়ে বেশি বোলিং করার আগের রেকর্ডটি ছিল শ্রীলঙ্কার। তিনবার ইনিংসে ৪৪ ওভার বোলিং করেছে এই দলটির স্পিনাররা।১৯৯৬ সালে ত্রিনিদাদে, ১৯৯৮ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রেমাদাসায় এবং ২০০৪ সালে ডাম্বুলায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শ্রীলঙ্কা। ২৪ বছর পর সেই রেকর্ড ভেঙেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এর আগে ওয়ানডেতে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩৪ ওভার বোলিং করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনারদের দিয়ে। ২০০১ সালে সেই দৃষ্টান্তটি ছিল গ্রেনাডায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
মিরপুরে স্পিনারদের সবচেয়ে বেশি বোলিং করার আগের রেকর্ডটি ছিল বাংলাদেশের। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের স্পিনারদের বোলিংয়ের সমষ্টি ছিল ৪০ ওভার। এক ইনিংসে আর একবার ৪০ ওভার বোলিং করেছে বাংলাদেশ। সেটি ২০০৯ সালে, চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেখানে ৫০ ওভারের পুরোটা করেছে স্পিনারদের দিয়ে, সেখানে বাংলাদেশ স্পিনারদের দিয়ে বল করিয়েছে ৪২ ওভার। একমাত্র পেসার মোস্তাফিজ বল করেছেন ৮ ওভার। তবে অপেক্ষাকৃত কম ডট করেছে উইন্ডিজ ব্যাটাররা। বাংলাদেশ ব্যাটাররা যেখানে ১৯৩টি বল ডট করেছে, সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডট বলের সংখ্যা ১৭৩টি। নাসুম সর্বোচ্চ ৪১টি ডট দিয়েছেন। ৮ম উইকেট জুটিতে হোপ-গ্রিভসের ৬৫ বলে ৪৪ রানও ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলেছে বাংলাদেশকে। শেষ পাওয়ার প্লে-এর ৬০ বলে ৬৩ রান করে ম্যাচটা সুপার ওভারে টেনে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।