চলতি বিপিএলে ভালো কয়েকটি ইনিংস খেললেও ধীরগতির ব্যাটিংয়ের জন্য কিছুটা সমালোচনাও পেতে হয়েছে। তনে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে নাঈম শেখ উপহার দিলেন মারকুটে ব্যাটিংই। তার ফিফটির সাথে শেষের দিকে আফিফ-অঙ্কনদের দুটি ক্যামিওতে খুলনা টাইগার্স পেল চ্যালেঞ্জ জানানো এক স্কোর। দাভিদ মালানের ফিফটির পরও এক পর্যায়ে হারের শঙ্কা জাগল বরিশাল শিবিরে। তবে কঠিন ম্যাচ সহজ করে শেষ হাসি হাসল তামিম ইকবালের দলই।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ৩৫তম ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা জিতেছে ৫ উইকেটে। আগে ব্যাট করা খুলনার করা ৫ উইকেটে ১৮৭ রান বরিশাল পাড়ি দিয়েছে ৫ বল হাতে রেখেই।
বড় রান তাড়ায় বরিশালের চাওয়া ছিল ভালো একটা সূচনা। তবে গত কয়েক ম্যাচ ধরে ওপেনার হিসেবে খেলা তাওহীদ হৃদয় আরও একবার ব্যর্থ হন নতুন ভূমিকায় সফল হতে। আবু হায়দার রনিকে ছক্কা মেরে পরের বলেই পড়েন লেগ বিফোরের ফাঁদে। তামিম ইকবাল কিছুটা ধীরলয়ে শুরু করলেও ক্রিজে গিয়েই দুই বাউন্ডারিতে ইতিবাচক ব্যাটিং করেন দাভিদ মালান।
এরপর আবু হায়দার ও হাসান মাহমুদের দুই ওভারে হাঁকান তিনটি চার ও একটি ছক্কা, যা অনেকটাই চাপ কমিয়ে দেয় তামিমের ওপর। বরিশাল অধিনায়কের ধীরগতির ব্যাটিংয়ের পরও তাই পাওয়ার প্লেতে দলীয় ফিফটি হয়ে যায় দলটির।
খুলনার পেস ও স্পিন আক্রমণকে একই তালে সামলানো মালান ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন বড় কিছু শটের মাধ্যমে। রানের চাকাও তাতে বেড়ে যাচ্ছিল বেশ। সালমান ইরশাদের শর্ট পিচ ডেলিভারিতে তামিম পারেননি টাইমিং করতে, ২৭ রানেই থামে তার পথচলা।
নাসুম আহমেদকে ছক্কা মেরে মুশফিকুর রহিম আভাস দেন ছন্দে ফেরার। তবে ঠিক এরপরই খুলনাকে বড় ব্রেকথ্রুটা এনে দেন আফিফ হোসেন। তার অফ স্পিনে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয় ৩৭ বলে ৬৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলা মালানকে।
ম্যাচ যখন খুলনার দিকে কিছুটা ঝুঁকে যাচ্ছিল, তখনই মোহাম্মদ নাওয়াজকে দুই ছক্কা মেরে ম্যাচ জমিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ। তবে পরের ওভারে তিনি রান আউট হওয়ার পর সাজঘরের পথ ধরতে হয় ২ ছক্কায় ২৭ করা মুশফিকুরকেও। আবু হায়দারকে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে চার মারার পর লং অফ দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে ফাহিম দলকে ধরে রাখেন জয়ের লড়াইয়ে।
চাপের মুখে ১৮তম ওভারটা ভালো করলেও শেষ ডেলিভারিতে নবির হাতে ছক্কা হজম করে খুলনাকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন হাসান। এরপর দ্রুতই বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন ফাহিম ও নবি মিলেই।
এর আগে দুপুরে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনার নাঈম শেখ ইনিংসের প্রথম ওভারেই জেমস ফুলারকে ওড়ান ছক্কায়। শুরুতে কিছুটা জড়তা ছিল মিরাজের ব্যাটে, তবে ঘুরে দাঁড়ান মোহাম্মদ নবিকে পরপর দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে। পরের ওভারে চড়াও হন আগের ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়া ফাহিম আশরাফের ওপর। হাঁকান টানা দুই ছক্কা।
শেষ পর্যন্ত মিরাজের বিদায় ঘটে ইবাদত হোসেনের শিকার হয়ে। চোট কাটিয়ে লম্বা বিরতির পর বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচে বোল্ড করেন ১৯ বলে ২৮ করা মিরাজকে। তবে একই ওভারে টানা দুই বাউন্ডারিতে তাকে চাপেফ ফেলে দেন নাঈম।
তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে ইতিবাচক ব্যাটিং উপহার দেন অ্যালেক্স রস। অস্ত্রেলিয়ান এই ব্যাটার তানভির ইসলামের তিন বলে দুই চার ও এক ছক্কা সহ নেন ১৬ রান। তবে তারচেয়েও বেশি আগ্রাসন দেখানো নাঈম এদিন ছিলেন সেরা ছন্দে। একের পর এক বড় শট খেলে ছক্কা মেরে মাত্র ২৬ বলে পূর্ণ হয় ফিফটি।
তবে ফাহিমকে দুই ছক্কা ও এক চার মারার পর অতি আগ্রাসী হতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। খানিক বাদে রসেরও বিদায় ঘটলে ম্যাচে ফিরে আসার আভাস দেয় বরিশাল। তবে আফিফ ও উইলিয়াম বোসিস্টো মিলে গুরুত্বপূর্ণ এক জুটি গড়ে সেটা হতে দেননি।
আফিফ ৩২ রানে আউট হওয়ার পর অবশ্য খুলনার ১৮০ রান পার করার বড় একটা কৃতিত্বের দাবিদার মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। ভীষণ কার্যকর এক ক্যামিও খেলার পথে ২০তম ওভারে ইবাদকে মারেন দুই ছক্কা। শেষ পর্যন্ত তরুণ এই ব্যাটার অপরাজিত থাকেন ১২ বলে ২৭ রানে। বোসিস্টোর নামের পাশে ছিল ২০ রান।
৪ জুন ২০২৫, ১২:২৭ এম
তিন তিনটি ফাইনালের হারের সাথে বছরের পর বছরের খালি হাতে ফেরার হতাশা সঙ্গী ছিল। সাথে ছিল প্রতিপক্ষ সব দলের সমর্থকদের হাসাহাসি। তবে এবার শিরোপা আমাদের - এই দাবিটা চলতি আইপিএলের একদম শুরু থেকেই জোড়াল করেছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। শিরোপার লড়াইয়ে ফর্মের তুঙ্গে থাকা পাঞ্জাব কিংসকে তাড়া ছুড়ে দিল লড়িয়ে এক টার্গেট। আসরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে হতাশ করলেন শ্রেয়ায় আইয়ার। অন্যরা চেষ্টা করলেন বটে, তবে কাজের কাজটা আর কেউই করতে পারলেন না। শেষের দিকে শশাঙ্ক সিংয়ের ঝড় সামলে শেষ হাসি হাসল ব্যাঙ্গালুরুই। প্রথমবারর মত শিরোপা উঁচিয়ে ধরার গৌরব অর্জন করল ফ্যাঞ্চাইজিটি।
আহমেদাবাদের আইপিএলের ফাইনালে ব্যাঙ্গালুরু পেয়েছে ৬ রানের দুর্দান্ত এক জয়। আগের ব্যাটিং করে দলটি করেছিল ৯ উইকেটে ১৯০। জবাবে পাঞ্জাবের ইনিংস থেমেছে ৭ উইকেটে ১৮৪ রানে।
আহমেদাবাদে এবারের আইপিএলে সব ম্যাচেই রান হয়েছে প্রচুর। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে আগে ব্যাটিং মানেই ২০০ প্লাস স্কোর। সেটা মাথায় রেখে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করে ব্যাঙ্গালুরু। আর্শ্বদীপ সিংয়ের করা প্রথম ওভারে চার ও ছক্কা মেরে ফিল সল্ট। তবে পরের ওভারে কাইল জ্যামিসনের বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ১৩ রানের ইনিংসের।
এরপর পাওয়ার প্লের বাকিটা সামলান মায়াংক আগারওয়াল ও বিরাট কোহলি। তবে দুজনের কেউই পারেননি ইনিংস বড় করতে। প্রথমজন ২৪ রানে বিদায় নেওয়ার পর কিছুটা ধীরগতির ইনিংস খেলে কোহলি ৩৫ বলে মাত্র ৪৩ রান করে। তবে মাঝের দিকে সেটা চাপ হয়ে বসতে দেননি অধিনায়ক রজত পাতিদার।
২ চার ও ১ ছক্কায় তার ১৬ বলে ২৬ রানের ক্যামিওতে গতি পায় দলের ইনিংস। জ্যামিসনের করা ইনিংসের ১৭তম ওভারে দুইশ স্কোরের সুবাস পায় ব্যাঙ্গালুরু। খরুচে এক ওভারে উইকেট পেলেও ২১ রান গুনেন নিউজিল্যান্ডের এই পেসার। মাত্র ১০ বলে ২৪ আসে জিতেশ শর্মার ব্যাট থেকে। ২৫ রান করতে ১৫ বল নেন ইংলিশ লিয়াম লিভিংস্টোন।।
শেষের দিকে ৯ বলে ১৭ রানের ছোট এক ক্যামিও খেলেন রোমারিও শেফার্ড। তিনটি করে উইকেয় নেন জ্যামিসন ও আর্শ্বদীপ।
রান তাড়ায় প্রথম দুই ওভারে ২৩ রান তুলে ভালো কিছুরই আভাস দেন পাঞ্জাবের ওপেনার প্রিয়ংশ আরিয়া ও প্রভসিমরান সিং। ১০ রানে জস হ্যাজেলউডের বলে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান প্রভসিমরান। অন্যপ্রান্তে দারুণ ছন্দে ব্যাট করা আরিয়া এরপর অজি পেসারের এক ওভারে টানা দুই চার মারার পর শিকার হন তারই। তবে তার আগে উপহার দেন ২৯ রানের।
ক্রিজে গিয়েই ছক্কায় শুরু করেন ফর্মে থাকা জস ইংলিস। ৮ ওভারে ৭০ রান নিয়ে ভালোভাবেই জয়ের পথে ছিল পাঞ্জাব। তবে এরপরই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া স্পেলটা করেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। দুর্দান্ত কয়েকটি ওভারে চাপ বাড়ান প্রতিপক্ষের ওপর। একে একে শিকার করেন তিন উইকেট, যার মধ্যে ছিল ইংলিসের উইকেটও।
উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে লিভিংস্টোনের ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে অজি ব্যাটার করতে পারেন ৩৯। তবে মূল ধাক্কাটা দেন অন্যপ্রান্তে রোমারিও। আক্রমণে এসেই ক্যাচে ফেরার পাঞ্জাব অধিনায়ক আইয়ারকে।
তবে জয়ের আশা টিকিয়ে রাখছিলেন শশাঙ্ক সিং। একের পর একে বড় শটে চেষ্টা চালিয়ে যান। শেষ দুই ওভারে দরকার পড়ে তবুও ৪১। আর শেষ ওভারে ২৯।
হ্যাজেলউডে সামনে এই রান করাটা প্রায় অসম্ভবই। তবে তিন ছক্কা ও এক চার মেরে জোর চেষ্টা চালালেন শশাঙ্ক। শেষ পর্যন্ত তার কাজে দেয়নি। ৩১ বলে ৬০ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেও পরাজিত শিবিরেই থাকতে হয় শশাঙ্ককে।
বয়স বা ফর্ম, দুটিই রয়েছে পক্ষে। বিস্ময়ের জন্ম দিয়ে এমন সময়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান কিপার-ব্যাটার হাইনরিখ ক্লাসেন। ফলে সাত বছরেই শেষ হল তার জাতীয় দলের অধ্যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড-এর এক বিবৃতিতে ৩৩ বছর বয়সী ক্লাসেন সোমবার জানান, তিনি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছেন। এর আগে ২০২৪ সালে তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন
‘দলের বোঝা হয়ে’ অবসরের সিদ্ধান্ত ম্যাক্সওয়েলের |
![]() |
২০১৮ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অভিষেক ক্লাসেনের। এরপর সময় যত গেছে, তিনি নিজেকে প্রজন্মের অন্যতম সেরা বিধ্বংসী ব্যাটারদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
৬০টি ওয়ানডেতে ২ হাজার ১৪১ রান করেছেন প্রায় ৪৪ গড়ে। এই ফরম্যাটে সেরা ইনিংসটি খেলেন ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। সেই ম্যাচে তার করা ১৭৪ রানের ইনিংসটি ওয়ানডেতে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করে করা ব্যাটারদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর।
৫৮টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ক্লাসেনের স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪১.৮৪, যা জানান দেয় এই ফরম্যাটে তার আগ্রাসী ব্যাটিং শৈলীর প্রমাণ। ২৩.২৫ গড়ে নামের পাশে রান ঠিক ১ হাজার।
বয়স ৩৬ হলেও সাদা বলের ক্রিকেটে এখনও বিবেচনা করা হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পাওয়ার হিটারদের একজন হিসেবে। তবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল নিজেকে সেভাবে দেখছিলেন না বলেই আচমকাই সোমবার ঘোষণা দিয়েছেন ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, দলের জন্য নিজেকে বোঝা বলে মনে হচ্ছিল তার।
অস্ট্রেলিয়ার তারকা অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।
৩৬ বছর বয়সী ম্যাক্সওয়েল সোমবার ‘দ্য ফাইনাল ওয়ার্ড’ পডকাস্টে তার ওয়ানডে থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান। অস্ট্রেলিয়ার তারকা অলরাউন্ডার ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত ২০ ওভারের ফরম্যাটে খেলবেন বলে জানিয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেট থেকে এখনও অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেননি, তবে তার আবার টেস্টে খেলার সম্ভাবনা আর নেই বললেই চলে।
আরও পড়ুন
চোটে সিরিজ শেষ শরিফুলের |
![]() |
হঠাৎ কেন এভাবে অবসর, সেটা উল্লেখ করতে গিয়ে ম্যাক্সওয়েল টেনে আনেন ২০২২ সালে পা ভাঙার পর থেকে ওয়ানডেতে খেলার মত তার শারীরিক সক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি।
“আমার কাছে মনে হচ্ছিল, আমার শরীরের নানা প্রতিক্রিয়ার কারণে ক্রমেই দলের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছি। আমি নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান জর্জ বেইলির সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে ২০২৭ বিশ্বকাপ নিয়ে কথা উঠলে আমি বলি, ‘আমি সেখানে নিজেকে দেখছি না। এখন সময় এসেছে আমার জায়গায় নতুন কাউকে সুযোগ দেওয়ার।’”
দুইবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী ম্যাক্সওয়েল যোগ দিলেন আরেক তারকা ব্যাটার স্টিভেন স্মিথের সাথে, যিনি সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন।
ওয়ানডের পরিসংখ্যান দিয়ে ম্যাক্সওয়েলকে বিচার করতে গেলে তাকে আহামরি কোনো ক্রিকেটার মনে না হওয়ার কথা। ১৪৯ ম্যাচে ৩৩.৮১ গড়ে করেছেন ৩ হাজার ৯৯০ রান, আর বল হাতে ৭৭ উইকেট। তবে ম্যাক্সওয়েল নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা করেছেন স্ট্রাইক রেটের দিক থেকে৷ তার ১২৬.৭০ স্ট্রাইক রেট ওয়ানডে ইতিহাসে ২০০০ রান পার করা ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ম্যাক্সওয়েলের ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তটি আসে ২০২৩ বিশ্বকাপে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে। প্রায় ৩০০ রানের টার্গেটে নেমে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে ৯১ রান থেকে জেতান অপরাজিত ২০১ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংস, যা খেলার পথে তিনি বারবার পড়েন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে।
আরও পড়ুন
ব্যাটিং ব্যর্থতায় সিরিজ হার বাংলাদেশের |
![]() |
এটি ছিল ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়র মধ্যে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, এই ফরম্যাটে রান তাড়ায় প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, এবং ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ছয় নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
প্রথম দুই ম্যাচের মত আরও একবার জ্বলে উঠলেন তানজিদ হাসান তামিম। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন পারভেজ হোসেন ইমন, জুটিতেই এল শতক। আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে এরপর অনায়াসেই দলগুলো এগিয়ে যায় দুইশ প্লাস স্কোরের দিকে। তবে মিডল অর্ডারে সেভাবে কেউই পারলেন না ফিনিশিংটা দিতে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে মোহাম্মদ হারিসের অনবদ্য শতকে পেশাদার রান তাড়ায় সহজেই জয় তুলে নিল পাকিস্তান। তাতে একরাশ হতাশায় শেষ হল বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তান জিতেছে ৭ উইকেটে। বাংলাদেশের করা ৬ উইকেটে ১৯৬ রান দলটি পাড়ি দিয়েছে ১৬ বল হাতে রেখেই। ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল পাকিস্তান।
ব্যাট হাতে ফিনিশিংটা ভালো না হলেও বল হাতে বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভালোই। আগের ম্যাচে মলিন থাকা মেহেদি হাসান মিরাজ প্রথম ওভারেই দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাহিবজাদা ফারহানকে। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচ দেন রিশদ হোসেনকে।
ক্রিজে গিয়েই হাসান মাহমুদকে দুই চার মেরে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে শুরুটা করেন মোহাম্মদ হারিস। টি-টোয়েন্টি অভিষেকের ম্যাচে খালেদ আহমেদ প্রথম ওভারেই ছিলেন খরুচে। টানা দুই বলে হারিস মারেন চার ও ছক্কা। অন্যপ্রান্তে সাইম আইয়ুব অবশ্য ব্যাট চালাচ্ছিলেন ধীরলয়ে, প্রথম ২৪ বলে করেন ২৪ রান!
তবে সেই চাপ বুঝতে না দিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন হারিস। ছয় ওভারেই রান হয়ে যায় ৫৬। নিজের প্রথম ওভারে এসে ১২ রান দেন আগের দুই ম্যাচে ৫০-এর বেশি রান দেওয়া রিশাদ। পার্টটাইমার শামিম হোসেন তার করা প্রথম ওভারে ছক্কা হজম করেন সাইমের কাছে। মাত্র ২৫ বলে ফিফটি তুলে নেন হারিস।
ইনিংস এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ক্রমেই হাত খুলে খেলা সাইম ছিলেন ফিফটির পথেই। তবে ফিরতি স্পেলে এসে স্লোয়ারে তাকে বিভ্রান্ত করেন তানজিম। ২৯ বলে ৪৫ রানে থামেন তরুণ এই ওপেনার।
চার মেরে রানের খাতা খোলেন নাওয়াজ। অন্যপ্রান্তে মিরাজ আক্রমণে এসে নাওয়াজের হাতে ছক্কা ও চার খাওয়ার পর একই ওভারে হাসেন শেষ হাসি। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ২৬ রানে আউট হন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।
ভুলে যাওয়ার মত এক সিরিজে আরও একবার মাঝের ওভারে দলকে হতাশ করেন রিশাদ। তিন বাউন্ডারিতে তৃতীয় ওভারে দেন ১৬ রান। দলের জয় নিশ্চিত করার পথে হারিস তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। অপরাজিত থাকেন মাত্র ৪৬ বলে ১০৭ রানে। আর অধিনায়ক সালমান আগা করেন ১৫।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ পেয়েছিল স্বপ্নের এক শুরু। সাম্প্রতিক সময়ে দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার তানজিদ বজায় রাখেন তার ফর্ম। সিরিজে প্রথমবারের মত রানের দেখা পাওয়া ইমন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ভড়কে দেন পাকিস্তানের বোলারদের। ফলে প্রতি ওভারেই হয় বাজে বল, আর রানও আসতে থাকে চার-ছক্কায় দ্রুততার সাথেই।
দুজনের মধ্যে ইমন ছিলেন বেশি আক্রমণাত্মক। আবরার আহমেদের এক ওভারে দুই চার ও এক ছক্কা মেরে মাত্র ২৭ বলে পা রাখেন পঞ্চাশে। সাথে তানজিদও খেলেন কিছু বড় শট। তাতে ১০ ওভারে ৯৯ রান হয়ে যায়। এরপর অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি কেউই।
৩২ বলে ৪২ করে ফাহিম আশরাফের বলে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তানজিদের ইনিংস। পরের ওভারেই ফের উইকেট। এবার শাদাব খানের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন ইমন, শেষ হয় তার ১৯৪ স্ট্রাইক রেটে খেলা ৬৬ রানের ইনিংস, যা তিনি সাজান ৭ চার ও ৪ ছক্কায়।
তাওহীদ হৃদয় ও লিটন দাস এরপর কিছুটা চেষ্টা করেন রানের গতি ধরে রাখার। তবে এই সময়েই ম্যাচে ফিরে আসে পাকিস্তান। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই দুজনের পাশাপাশি শামিম ও মিরাজের বিদায়ে রানের গতি কমে যায় বাংলাদেশের। ফলে আশা জাগিয়েও আর করা হয়নি ২০০ প্লাস স্কোর, যা শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণিত আর হয়নি।
সিরিজ হার নিশ্চিত হওয়ার পর বাংলাদেশ শিবিরে আসল দুঃসংবাদ। চোটের কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ মিস করবেন পেসার শরিফুল ইসলাম, নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
এক বিবৃতিতে বিসিবি আরও জানিয়েছে, আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে থাকবেন শরিফুল। পাকিস্তানের সাথে প্রথম দুই ম্যাচেই একাদশে ছিলেন এই বাঁহাতি এই পেসার।
আরও পড়ুন
অনুতপ্ত রাবাদা অতিরিক্ত ক্ষমা চাইতে অপারগ |
![]() |
বাংলাদশ জাতীয় দলের ফিজিও দেলোয়ার হোসেন সিভা বিসিবির দেওয়া বলেছেন, দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বোলিং করার সময় চোট পান শরিফুল।
“শরিফুল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি চলাকালীন বোলিংয়ের সময় চোট পেয়েছেন। পরবর্তীতে এমআরআই স্ক্যানে দেখা গেছে, তার ডান পায়ের রেক্টাস ফেমোরিস মাসলে গ্রেড ১ মাত্রার স্ট্রেইন রয়েছে। এই চোটের কারণে শরিফুলকে আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ বিশ্রাম ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। বিসিবি মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে তার রিহ্যাব চলবে।”
শরিফুলের চোট লিটন দাসের দলের জন্য বড় এক ধাক্কাই। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টিতে হারের পর পাকিস্তানের সাথে প্রথম দুই ম্যাচেই পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ম্যাচ গত শুক্রবার নিজের প্রথম ওভারে মাত্র তিন বল করার পর চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন শরিফুল। প্রথম ম্যাচে ৩ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট।