দেশের মাটিতে তো বটেই, দেশের বাইরেও ভারতের অনেক স্মরণীয় জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলারদের একজন রবিচন্দন অশ্বিন ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায়ও প্রায়ই দেখিয়েছেন স্পিন ভেল্কি। অস্ট্রেলিয়ার সাথে চলমান সিরিজের তৃতীয় টেস্টের পর আচমকাই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন অভিজ্ঞ এই অফ স্পিনার। অধিনায়ক রোহিত শর্মা তার সিদ্ধান্তকে জানিয়েছেন পূর্ণ সম্মান। তার কাছে দেশটির ইতিহাসের সেরা ম্যাচ উইনারদের একজন অশ্বিন।
সাদা বলের ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব হলেও অশ্বিন নিজের সেরাটা দিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটেই। হরভজন সিংয়ের অবসরের পর লম্বা সময় সামলেছেন দলের মূল স্পিনারের দায়িত্ব। ভারতের ইতিহাসের দ্রুততম ৫০ থেকে শুরু করে ৫০০ উইকেট শিকারের সব রেকর্ডের ৩৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের দখলে। অবসর নিয়েছেন ভারতের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লাল বলের উইকেটশিকারী হিসেবে।
আরও পড়ুন
বেরসিক বৃষ্টি জমতে দিল না ব্রিসবেন টেস্ট |
বয়সভিত্তিক দল থেকে অশ্বিনের সাথে খেলা রোহিত মনে করেন, ভারতের জার্সিতে সামর্থ্যের শেষ বিন্দু দিয়ে লড়ে গেছেন এই কিংবদন্তি স্পিনার।
“তিনি এই দলের জন্য কী করেছেন, সেটা আমরা সবাই জানি, তাই আমার বারবার তা বলার দরকার নেই। তবে তিনি একজন সত্যিকারের ম্যাচ উইনার, যা ভারত আগে কখনও দেখেনি।”
১০৬ টেস্টে ২৪ গড়ে ৫৩৭ উইকেট নিয়ে অশ্বিন তার টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করেছেন। এই ফরম্যাটে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় তার ওপরে আছেন শুধুমাত্র অনিল কুম্বলে, যিনি ১৩২ টেস্টে ৬১৯টি উইকেট নিয়েছেন।
বল হাতে অবদান ছাড়াও অশ্বিন ব্যাট হাতে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, ব্যাট হাতেও খেলেছেন গুরুত্বপূর্ণ সব ইনিংস। পুরো ক্যারিয়ারের ৮,৯ নম্বরে ব্যাটিং করেও তার নামের পাশে রয়েছে ছয়টি সেঞ্চুরি এবং ১৪টি অর্ধশতক। রান করেছে ৩ হাজার ৫০৩। টেস্ট ক্রিকেটে ৩ হাজার রান ও ৩০০ উইকেট নেওয়া মাত্র ১১ জন ক্রিকেটারদের একজন অশ্বিন। এছাড়াও রয়েছে সাবেক শ্রীলঙ্কান গ্রেট মুত্তিয়া মুরালিধরনের সাথে যৌথভাবে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ১১ বার সিরিজ সেরা হওয়ার রেকর্ড।
আরও পড়ুন
সিরিজ জয়ের দিনে র্যাঙ্কিংয়েও বড় উন্নতি তাসকিন-মাহেদি-হাসানদের |
রোহিত তাই বাড়তি প্রশংসায় ভাসিয়েছেন অশ্বিনকে।
“যখনই সংকট ছিল, আমাদের অ্যাশের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল। আর সবসময়ই তিনি আমাদের ত্রাতা হওয়ার জন্য সেখানে হাজির ছিলেন। তাই, হ্যাঁ, রেকর্ডও তার হয়েই কথা বলে। তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের এমন একজন সেবক ছিলেন, যিনি দলের জন্য কোনো কিছু করাই বাদ রাখেননি।”
২০১০ সালে শুরু হওয়া একটি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অশ্বিন ওয়ানডে খেলেছেন ১১৬টি, আর টি-টোয়েন্টি ৬৫টি। দুই ফরম্যাট মিলিয়ে উইকেট নিয়েছেন ১৫৬টি। সেরা অর্জনের মধ্যে রয়েছে ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়।
১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ৩:২৭ পিএম
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) বা বিশ্বের যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সবচেয়ে কঠিন কাজের একটি। সেখানে ৮ টানা ম্যাচে জয় নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত এক অর্জন। এবারের বিপিএলে ঠিক সেই কাজটাই করে সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করে ফেলেছে রংপুর রাইডার্স। দেশি-বিদেশী ক্রিকেটাররা সবাই রাখছেন সমান অবদান, যা দলটিকে অন্যদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে। এই সাফল্যের রহস্য কী? রংপুরের টিম ডিরেক্টর শাহনিয়ান তানিম মনে করেন, পেশাদারভাবে দল পরিচালনা করাটাই তাদের মূল শক্তি।
একটা লম্বা সময় ধরেই বিপিএলের অন্যতম গোছানো ফ্র্যাঞ্চাইজি রংপুর। দলটিতে বিভিন্ন সময়ে খেলে গেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইল, শোয়েব মাকিক, বাবর আজম, সাকিব আল হাসান ছাড়া দেশের ও দেশের বাইরে অনেক বড় বড় তারকা। এবারের আসরেও দলটিতে আছেন পাকিস্তানের কয়েকজন পরীক্ষিত খেলোয়াড়। সাথে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান, মাহেদি হাসান, নাহিদ রানারা তো আছেনই। দলগতভাবে উড়ন্ত ফর্মে থাকা দলটিকে এবারের বিপিএলে কেউই আটকাতে পারছে না।
চিটাগং কিংসের বিপক্ষে জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে আসা শাহনিয়ান তানিমের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল এমন পারফরম্যান্সের পেছনের কারণ। সেখানে তার কণ্ঠে ফুটে উঠেছে পরিকল্পনা করে দল সাজানো থেকে শুরু করে সব বিষয়ের কথাই।
“আমরা প্রথম থেকেই যখন বিদেশী ক্রিকেটার নিয়েছি এবং প্লেয়ার ড্রাফট থেকে খেলোয়াড় সাইন করিয়েছি, চেষ্টা করেছি যাতে আমাদের সব খেলোয়াড় যেন পুরো সিজনেই খেলতে পারে। আপনারা দেখেছেন অ্যালেক্স হেলস কিছু ম্যাচ খেলে গিয়েছে, তবে আমরা কিন্তু চেষ্টা করেছি হেলসের সেই বিকল্পটা রাখার। স্টিভেন টেলর এরই মধ্যে খেলছে, জিএসএলে অনেক ভালো খেলে এসেছে। তাই আমরা আশা করছি সেও জ্বলে উঠবে। তারপরও আমরা নজর রাখছি। আমাদের দলের শক্তি বাড়াতে যদি কোনো খেলোয়াড় আনা লাগে, আমরা সেটা করব। আর যারা এখন আছে, তারা পুরো সিজনেই খেলবে।”
এবারের আসরের শুরু থেকেই রংপুর একাদশে নিয়মিতভাবেই খেলছেন পাকিস্তানের দুই অলরাইন্ডার খুশদিল শাহ ও ইফিতখার আহমেদ এবং তরুণ পেসার আকিফ জাভেদ। প্রথম ৬ ম্যাচ খেলা অ্যালেক্স হেলস চলে গেলেও আগে থেকেই তার বিকল্প হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটার স্টিভেন টেলরকে স্কোয়াডেই রেখেছে রংপুর, যিনি আগে আবার দলটির হয়ে খেলেছেন জিএসএলেও। ফলে চার বিদেশী খেলোয়াড় অনেকটা আগে থেকেই ঠিক করেই মাঠে নেমেছে রংপুর। ফলাফলেও নির্ভার ক্রিকেটে মিলছে এর প্রতিফলন।
রংপুরের টিম ডিরেক্টর শাহনিয়ান তুলে ধরেছেন পেশাদারিত্বের সাথে ফ্র্যাঞ্চাইজি পরিচালনা করার ইতিবাচক দিকগুলো, যা তাদের কাজে দিয়েছে বেশ।
“অনেকে মনে করে যে ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট একটা মৌসুমি কাজ। টুর্নামেন্টের বা ড্রাফটের ১০-১৫ দিন আগে থেকে কাজ করলেই হয়ত দল দাঁড়িয়ে যাবে। তবে আমরা টিম ম্যানেজম্যান্ট সারা বছর চেষ্টা করি সব ধরণের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ দেখার, ঘরোয়া ক্রিকেটে নজর রাখার। কারণ, পাকিস্তানে অনেক ভালো ভালো খেলোয়াড় আছে, যারা হয়ত ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে আসার সুযোগ পায় না। আলিফ জাভেদ গত বছর বরিশালে খেলেছিল, তখনই আমাদের মনে হয়েছিল তার মাঝে সম্ভাবনা আছে। পাকিস্তানের এজেন্টদের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে। তাই ওরাও আমাদের জানায় যে খেলোয়াড়রা কেমন করছে।”
রংপুরের বিদেশী খেলোয়াড়রা দেশীদের সাথে যেভাবে মিশে যান, তাতে স্পষ্ট যে অল্প সময়েই তারা একটা পরিবার হিসেবেই সবার মাঝে একতার তৈরি করতে সমর্থ হন। এতে যে দলই উপকৃত হয়, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন শাহনিয়ান।
“ঘরোয়া ক্রিকেটটা আমরা নিয়মিত অনুসরণ করেছি। তারপর এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা ওদেরকে আনার আগেও কথা বলেছি। কারণ, আপনি ভালো খেলোয়াড় হতেই পারেন, তবে আপনার যদি সঠিক মানসিকতাও থাকে, রংপুর রাইডার্সে যেটা আমরা চাই। ওরা ব্যক্তিগত নয়, দলের জন্য, রংপুরের জন্য ভালো করার চেষ্টা করে। সাফল্যের জন্য ওরা ক্ষুধার্ত।”
টানা সাত জয়ে প্রায় নিশ্চিত হয়েই গিয়েছিল রংপুর রাইডার্সের প্লে-অফ খেলাটা। তবে সেখানে ছিল কিছু যদি-কিন্তুর সমীকরণ। তবে যে দুরন্ত ফর্ম নুরুল হাসান সোহানের দলের, তাতে এক ম্যাচ বাদেই নিশ্চিত হয়ে গেল সেটাও। চার ম্যাচ হাতে রেখেই সবার আগে প্লে-অফের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলেছে একবারের বিপিএল চ্যাম্পিয়নরা।
চট্টগ্রাম পর্বে পা রাখার আগেই টানা সাত জয়ের রেকর্ড গড়া রংপুর শুক্রবার মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক চিটাগং কিংসের। খুশদিল শাহর দারুণ এক ফিফটির পর বোলারদের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে রংপুর পেয়েছে ৩৩ রানের সহজ জয়৷ আর এটাই নিশ্চিত করেছে তাদের প্লে-অফ।
আরও পড়ুন
রংপুরের উড়ন্ত ফর্ম অব্যাহত, টানা ৮ জয়ের রেকর্ড |
আট ম্যাচে শতভাগ জয় নিয়ে ১৬ পয়েন্টে থাকা রংপুরের ধারেকাছেও কেউ নেই টেবিলে। ৬ ম্যাচে সমান ৮ পয়েন্টে নিয়ে যথাক্রমে দুই ও তিন নম্বর স্থানে আছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল ও চিটাগং।
৭ ম্যাচে ৬ পয়েন্টে তিনে দুর্বার রাজশাহী। সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে পরের দুটি অবস্থান খুলনা টাইগার্স (৬ ম্যাচ) ও সিলেট স্ট্রাইকার্সের (৭ ম্যাচ)। ৮ ম্যাচে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থাকা ঢাকা ক্যাপিটালসের প্লে-অফের আশা আগেই শেষ।
ফলে পাঁচটি দল এখন লড়বে শেষ চারে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইয়ে। আর রংপুর বাকি চার ম্যাচে নিশ্চিত করতে চাইবে শীর্ষ দুইয়ে থাকাটা। উল্লেখ্য, গত আসরে পয়েন্ট টেবিলে সেরা দুইয়ে থেকেই শেষ করেছিল রংপুর।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দশ আসরে বিভিন্ন সময়ে কিছু দল পার করেছে চূড়ান্ত ধারাবাহিক সময়। পেয়েছে টানা জয়। তবে চলতি আসরে রংপুর রাইডার্স যা করে চলেছে, তা আগে করতে পারেনি কেউই। চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ব্যাট হাতে অবশ্য কিছুটা সংগ্রামই করল দলটি। আরও একবার হাল ধরলেন খুশদিল শাহ। মোটামুটি একটা রান বোর্ডে নিয়েই রংপুর বোলাররা উপহার দিলেন লড়িয়ে পারফরম্যান্স। তাতে মিলল টানা ৮ জয়, যা বিপিএলের ইতিহাসের রেকর্ড।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ২৪তম ম্যাচে ৩৩ রানের জয় পেয়েছে অবিশ্বাস্য ছন্দে থাকা রংপুর। ৭ উইকেটে ১৬৪ রান করার পর প্রতিপক্ষকে আটকে দিয়েছে ৮ উইকেটে ১৩১ রানে।
বল হাতে ইনিংসের প্রথম বলেই রংপুরের আরেকটি জয়ের সুরটাই যেন বেধে দেন রাকিবুল হাসান। প্রথম বলেই শিকার বানাম উসমান খানকে। তবে ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে রংপুরকে চাপে ফেলে ফেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা গ্রাহাম ক্লার্ক ও পাতভেজ হোসেন ইমন।
আরও পড়ুন
সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ নেই সাইফের, আরও ভালো করার প্রত্যয় |
ফর্মে থাকা পাকিস্তান পেসার আকিফ জাভেদকে দুই চার ও এক ছক্কা মেরে জ্বলে ওঠার আভাস ছিল ইমনের ব্যাটে। তবে আকিফের বলেই বিদায় নিতে হয় উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। ১৪ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ২৬ রান।
নিজের করা পরের ওভারে রংপুরকে ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন আকিফ। জোড়া আঘাতে সাজঘরের পথ দেখান ক্লার্ক (২৩ রান) ও মোহাম্মদ মিঠুনকে। ৭ থেকে ১২ ওভারের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে চিটাগং ব্যাটারদের ওপর চাপ অব্যাহত রাখে রংপুর।
একপ্রান্তে শামিম ইতিবাচক ব্যাটিং করলেও অভিজ্ঞ নাইম ইসলামের ওয়ানডে গতির ব্যাটিং ক্রমেই চাপ বাড়ায় তার দলের ওপর। খুশদিলের বলে আউট হওয়ার আগে ২৪ বলে খেলেন ১৯ রানের মন্থর এক ইনিংস।
চার মেরে রানের খাতা খোলেন ওয়াসিম। তবে তিনি বা শামিম কেউই পারেননি দলকে আশা দেখাতে। বাংলাদেশ ব্যাটারের ৩৮ রানের ইনিংস কেবলই কমায় চিটাগংয়ের পরাজয়ের ব্যবধান। ৩২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন আকিফ।
এর আগে আগে ব্যাট করা রংপুরের ইনিংসের শুরুর দিকটা ছিল কিছুটা সংগ্রামময়। তৌফিক খান প্রথম দুই ওভারে স্রেফ চার রান আসার পর আলিস আল ইসলামের বিপক্ষে অতি আগ্রাসী হতে গিয়ে বিদায় ঘটে তৌফিক খানের। প্রথম ৯ বলে তিন রান করা স্টিভেন টেলর খোলস ছেড়ে বের হন আলিসকেই চার ও ছক্কা মেরে।
আরও পড়ুন
ইফতেখার-সোহানের দৃঢ়তায় রংপুরের ১৫৩ |
তবে তাতেও কাজের কাজটা হয়নি পাওয়ার প্লেতে। মোটে রান হয় ৩১। টেলর ও সাইফ হাসান কয়েকটি বড় শট খেললেও দুজনের কেউই পারেননি দ্রুত রান তুলতে। ফলে দশ ওভার শেষে রংপুরের রান রেট ছিল ছয়ের একটু বেশি।
টেলরের ৩৯ রানে বিদায়ের পর ইফতিখার আহমেদও অল্পে ফিরলে চাপেই পড়ে যায় একবারের বিপিএল চ্যাম্পিয়নরা। ১৫তম ওভারে মারুফ মৃধাকে টানা তিন ছক্কা মেরে ইনিংসে গতির সঞ্চার করেন ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত এক বিপিএল পার করা খুশদিল।
স্বদেশী মোহাম্মদ ওয়াসিমকে ছক্কা মেরে মাত্র ২৬ বলে ফিফটির পরের বলেই ফের সীমানা পার করনে খুশদিল। তবে শেষ হাসি হাসেন ওয়াসিমই। নিজের বলে ক্যাচ নিয়ে ফেরান ৫৯ রান করা খুশদিলকে। শেষের দিকে মাহেদি হাসানের ১৭ রানের ক্যামিওতে রংপুরের স্কোর পার করে ১৫০ রান।
ওয়াসিম ছাড়াও চিটাগংয়ের হয়ে দুটি উইকেট যায় আলিসের ঝুলিতে।
দুই দলই মাঠে নেমেছিল আসরে দুই জয় নিয়ে। এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে দুর্বার রাজশাহীর টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটারদের সবাই রাখলেন কমবেশি অবদান, যা এনে দিল চ্যালেঞ্জিং একটা স্কোর। ছন্দে থাকা জাকির হাসানের ব্যাটে জয়ের আশা জাগল সিলেট স্ট্রাইকার্স শিবিরে। তবে তার বিদায়ের পর ব্যাটিং বিপর্যয়ের শিকার হল দলটি। বোলারদের সম্মিলিতে নৈপুণ্যে রাজশাহী দেখা পেল বিশাল জয়ের।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ২৩তম ম্যাচে রাজশাহী পেয়েছে ৬৫ রানের জয়। আগে ব্যাটিং করে দলটি দাঁড় করিয়েছিল ৭ উইকেটে ১৮৪ রানের পুঁজি। লড়াই জমাতে ব্যর্থ সিলেট গুটিয়ে গেছে ১৭.৩ ওভারে ১১৯ রানেই।
উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো হলেও সিলেটের দরকার ছিল শুরুটা ভালো করা। তবে প্রথম ওভারেই পল স্টার্লিংকে হারায় দলটি। তবে পাওয়ার প্লেতে সিলেটকে শক্ত অবস্থানে রাখেন এই বিপিএলে দারুণ ছন্দে থাকা জাকির হাসান। জিসান আলমকে হাঁকান টানা দুই ছক্কা।
আরও পড়ুন
স্কোয়াডে দুই নতুন বিদেশী যোগ করল দুর্বার রাজশাহী |
তবে অন্যপ্রান্তে সেভাবে ব্যাটারা অবদান না রাখায় বেড়ে যায় দ্রুত রান তোলার চাপ। সেই চাপ সরাতে গিয়ে এবারের বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মার্ক ডেয়ালকে উইকেট দিয়ে আসেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। এর আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৯ রান।
বিপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচেই উইকেটের দেখা পান আফগান পেসার আফতাব আলমও। তিনি পান জর্জ মুন্সির উইকেট। মুহূর্তের মধ্যেই ২ উইকেটে ৭১ থেকে সিলেটের স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ৮৪। ম্যাচ মূলত সেখানেই শেষ হয়ে যায়।
পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর একক লড়াই চালিয়ে যান জাকের আলি অনিক। ৩ ছক্কায় ১৫৫ স্ট্রাইক রেটে জাতীয় দলের এই ব্যাটার খেলেন ৩১ রানের ইনিংস। চার ওভারে ২৫ রানে দলীয় সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেছেন বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলাম।
আগের কয়েকটি ম্যাচে ভালো শুরু পেয়েও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ মোহাম্মদ হারিস এবারও পান ইতিবাচক সূচনা। প্রথম ওভারেই রিস টপলিকে ফাইন লেগ দিয়ে হাঁকান ছক্কা। পরের ওভারে ছক্কায় ওড়ান নাহিদুল ইসলামকেও। তবে পারেননি সেটা টেনে নিতে। ১৯ রানেই থামে তার ইনিংস।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত পাওয়ার প্লেতে ছিলেন খোলসবন্দী হয়ে। ১৩ বলে করেন মাত্র ৬ রান। এরপর কিছুটা ছন্দ ফিরে পান নাহিদুজ্জামানকে দুই ছক্কা মেরে। তবে তিনিও ব্যর্থ হন বড় ইনিংস খেলতে। নাহিদুলের শিকার হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২০ রান।
আরও পড়ুন
জয় দিয়েই চট্টগ্রাম পর্বের শুভসূচনা চিটাগং কিংসের |
শুরু থেকেই রানের চাকা সচল রাখার কাজটা করে যাওয়া এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটে ছিল ভালো কিছুর আভাস। স্টার্লিংয়ের এক ওভারে দুই ছক্কার পাশাপাশি একটি চারে আদায় করেন ১৯ রান।
ফিরতি স্পেলে এসে রাজশাহী শিবিরে আনন্দ বয়ে আনেন রুয়েল মিয়া। ফিরিয়ে দেন ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩২ রান করা বিজয়কে। ধীরগতিতে ইনিংসের শুরুতে ব্যাটিং করা বার্ল বড় কিছু শটে দলকে বড় স্কোর গড়ার ভিতটা ভালোভাবেই গড়ে দেন। এর মধ্যে আরিফুল হককে উপহার দেন হ্যাটট্রিক ছক্কা হজমের তেতো অভিজ্ঞতা।
সাথে শেষের দিকে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ও আকবর আলির ক্যামিতেও ১৮০ প্লাস স্কোর পায় রাজশাহী। ৩২ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে সিলেটের সেরা বোলার ছিলেন রুয়েল।
টুর্নামেন্টের মাঝপথে এসেংলাদেশ ও দলের শক্তি বাড়িয়ে চলেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দলগুলো। সেই ধারায় এবার দুজন নতুন বিদেশী ক্রিকেটার যুক্ত করল দুর্বার রাজশাহী। টুর্নামেন্টের বাকি অংশের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলরাউন্ডার মার্ক স্টিফেন ডেয়াল এবং আফগানিস্তানের পেসার আফতাব আলমের সাথে চুক্তি করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
শুক্রবারের প্রথম ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে এখন খেলছে রাজশাহী। এর মধ্যেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুজন নতুন খেলোয়াড় দলে টানার কথা জানায় দলটি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলে হয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচ না খেলা ডেয়াল ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে বেশ পরিচিত এক নাম। তবে এই ফরম্যাটের তারকা খেলোয়াড়দের মধ্যে নেই তিনি। ভিন্ন ভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলেছেন গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স, ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স, শারজাহ ওয়ারিয়র্স, নিউ ইয়র্ক স্ট্রাইকার্স ও উইনিপেগ হকসের মত দলের হয়ে। বিপিএলেও খেলেছেন একবার, সেবার তার দল ছিল খুলনা টাইগার্স।
আরও পড়ুন
ম্যাচ শেষে খালেদ জানলেন মায়ের মৃত্যুর খবর, শোকাহত চিটাগং-সিলেট |
৩৪ বছর বয়সী ডেয়াল ৪৬টি টি-টোয়েন্টিতে ৬৯৯ রান করার পাশাপাশি নিয়েছেন ১৪টি উইকেট।
অভিজ্ঞতার দিক থেকে তার থেকে এগিয়ে আফতাব। ৩২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আফগানিস্তান জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। খেলেছেন ২৭টি ওয়ানডে ও ১২টি টি-টোয়েন্টি। শ্রীলঙ্কার লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ ও আফগানিস্তানের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিপিএলে এবারই প্রথম পেলেন দল।
আজকের ম্যাচের পর চট্টগ্রাম পর্বে আরও তিনটি ম্যাচ খেলবে রাজশাহী। আগামী ১৯, ২০ ও ২৩ জানুয়ারির সেই ম্যাচগুলোতে তাদের প্রতিপক্ষ যথাক্রমে খুলনা টাইগার্স, চিটাগং কিংস ও রংপুর রাইডার্স।