
অক্টোবর সদ্য বিদায় নিয়েছে। নভেম্বরের শুরু—শীতের নিঃশ্বাসে জমে গেছে শহর। মাসের প্রথম সপ্তাহ। ছেলেটার ঠিক মনে নেই দিন-তারিখ, এমনকি বারও। শুধু এটুকু জানে—সেদিনের রাতটা ছিল হিমশীতল, নিঃশব্দ, জমে যাওয়া এক শহরের বুকের মতো নিস্তব্ধ।
পায়রা, সীগাল, রবিন—সবাই ঘুমিয়ে গভীর শীতনিদ্রায়। কাতালানদের এই নগর এখন বরফে মোড়া স্বপ্নপুরী।
হঠাৎ একটুখানি শব্দ—একটা ছোট্ট ইঁদুরের পায়চারি। ছেলেটার ঘুম ভাঙে তাতে। অন্ধকার ঘরের কোণে তাকিয়ে ভাবতে থাকে—ও ইঁদুরটাও কি তার মতোই বাঁচার লড়াইয়ে, খাবারের খোঁজে, টিকে থাকার সংগ্রামে? ভাবতে ভাবতে কেমন যেন ভারী হয়ে ওঠে বুকটা।
রাতের এই নিস্তব্ধতায় জেগে ওঠা মানেই এক অনিবার্য বিপদ—চিন্তা। চিন্তার দল মিছিল নামায় ধ্যানের রাজপথে। কৈফিয়ত চায়—আজ কোথায় দাঁড়িয়ে তুমি? কেন এসেছে এত দূরে? কোথায় হারিয়েছে পুরোনো পরিচিত মুখগুলো? অতীত আর বর্তমানের হিসাব মিলাতে মিলাতে হারিয়ে যায় সে এক অদ্ভুত মোহে।
জীবনের এ ধারা-ওধারা ভাবতে ছেলেটার চোখ পড়ে দূরের পাইন গাছে। পাতায় জমেছে বরফ, ভারে নুয়ে পড়েছে শাখা। একসময় যে পাতাগুলো ছিল চিরসবুজ, আজ তারা হারিয়েছে প্রাকৃতিক রূপ। ছেলেটা ভাবে—তার জীবনও কি এমনই হয়ে গেছে? বরফে ঢেকে যাওয়া, রঙহীন, পরিচয়হীন এক অস্তিত্ব?
নতুন দেশ। অচেনা ভাষা। অপরিচিত মানুষ। দিনের শেষে একাকীত্ব তাকে চেপে ধরে। সুযোগ পেলেই সে আড়াল খোঁজে—ওয়াশরুমে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে কাঁদে। চোখের জল যেন ভাষাহীন যন্ত্রণা। রাতের ঘুমও আজকাল বড় অপরিচিত।
আর আজ—যে ইঁদুরটা হঠাৎ ঘুম ভাঙিয়ে দিল, যে পাইন পাতায় বরফ জমেছে—তারা যেন টাইম ট্রাভেলের দরজা খুলে দিল তার সামনে।
শান্ত ছবির মতো রোজারিও শহরটা কেমন আছে? মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিটিনি এখনও তার জন্য প্রিয় ‘এমপানাদা’ নিয়ে অপেক্ষা করেন। কেমন আছে আন্তোনেলা রোকুজ্জো। ড্রিভলিং কিংবা গোলের পর উচ্ছ্বাসে হারিয়ে যাওয়া মানুষটাকে যে তার ভীষণ মনে পড়ে।
চিন্তার জগত অস্তমিত হতেই চোখের পাতাজোড়া এক হয়। শুরু হয় নতুন ভোর, নতুন জীবন। তিনি জানেন, যে কাতালুনিয়া শহরে তার আগমন, সেখানে ফুটবল শুধু খেলা নয়, জীবনযাপন। বার্সেলোনার লা মাসিয়া নামের এক জাদুঘরে ঠাঁই হয়েছে তার, যেখানে স্বপ্নকে বাস্তবে গড়া হয়।
সেই স্বপ্নের পথে পা বাড়িয়ে, লিওনেল মেসি হয়ে ওঠেন বিশ্ব সমাধৃত। লা মাসিয়া থেকে মূল দলে, লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ—আরও কতশত শিরোপা ট্রফি ধরা দিয়েছে তার হাতে। আর্জেন্টিনার জার্সিতেও হয়েছে দুঃখ মোচন। ২০০৬ থেকে ২০১৮-এ সময়ে চারটি বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমু আঁকেন মেসি। ৮ বার ব্যালন ডি’অর, ক্লাব ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ৮৭২ গোল—সবকিছু মিলিয়ে লিওনেল মেসি যেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি, ফুটবলের দূত।
মেসির মতো যাপিত জীবন বয়ে বেড়ানো একজন আছেন ক্রিকেটে। যার গল্পটা একই রকম না হলেও একপ্রান্তে গিয়ে ঠেকেছেন দু’জন। তিনি ভারত নারী দলের ব্যাটসম্যান জেমিমাহ রদ্রিগেজ। পরিশ্রমের বিপরীতে হতাশা-গ্লানি হয়ে ওঠেছিল সম্ভল। কান্নায় ভিজে যেত তার বালিশ। একেকটি রাত হয়ে ওঠেছিল হাজার রজনীর সমান। সেই জেমিমাহ সফল হয়েছেন। সৃষ্টিকর্তা যেভাবে মেসিকে ভাঙ্গা-গড়া থেকে উঠিয়ে সম্মান দিয়েছেন, ভারতীয় ব্যাটারও তাঁরই দেখানো পথে।
বৃহস্পতিবার নাভি মুম্বাইয়ে অনিন্দ্য সুন্দর ইনিংস উপহার দিয়েছেন জেমিমাহ। অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। পুরো বিশ্বকাপে জোয়ার-ভাটার মধ্য দিয়ে থাকা জেমিমাহ বুঝিয়ে দিয়েছেন, পরিশ্রম, একাগ্রতা, নিবেদন, সততা থাকলে সৃষ্টিকর্তা একদিন মুখ তুলে তাকাবেন, বিজয় মালা পরাবেন।
সেটি হয়েছে গতকাল। ২২ গজে সুনিপুণ দক্ষতায় তুলির আঁচড় চালিয়েছেন। একটু দ্রুতই চলেছে তাঁর তুলিটি। তবে জেমিমাহকে চিনতে মোটেও ভুল করেননি দর্শকরা। তিনি মাঠে নামলেন, খেললেন, হাসলেন, ভুল করলেন। আবার জেগে উঠলেন। চক্রের মতো ঘুরতে থাকলেন। শেষপর্যন্ত শিরদাঁড়া উচু করে মাঠ ছাড়লেন।
জেমিমাহর এই গল্পের আদোপ্রান্তে রয়েছে নিরবতা, রয়েছে দুঃখ, গ্লানি, হতাশা ও বাদ পড়ার বিচ্ছিরি কাহিনি। তবে তিনি দমে যাননি। নিরবে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন মেসির মতো।
মেসির যেখানে শেষ, জেমিমাহর সেখানে শুরু:
আর্জেন্টাইন মহাতারকা ক্যারিয়ারের অন্তিমলগ্নে। বয়স ৩৮। হয়তো ২০২৬ বিশ্বকাপের পর বুট জোড়া তুলে রাখবেন। সেখানে ভারতের নারী দলের ব্যাটসম্যান জেমিমাহর কেবল শুরু। বয়স সবে ২৫। ক্যারিয়ারের দাপুটে সকাল। ভারতকে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলেছেন মিডল-অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। বৃহস্পতিবার তাঁর ইনিংসে ফাইনালে ভারত।
এদিন রদ্রিগেজ তিনে ব্যাটিংয়ে নেমে টিকে থাকেন শেষ পর্যন্ত। বার দুয়েক বিপদে পড়লেও শান্ত-ক্ষুরদার মেধায় সবই সামাল দেন। দলকে নিয়ে যান জয় বন্দরে। তার ব্যাটে ভর করে ছেলে-মেয়েদের ওয়ানডের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে ভারত। ওয়ানডেতে ৩৩৮ রান তাড়া করে জয় তোলার কথা বিশ্বের কেউ যেখানে কল্পনা করতে পারতো না, সেটা করে দেখান জেমিমাহ।
নীরব প্রার্থনা:
পুরো পৃথিবী একদিকে রেখে স্পেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন মেসি। শারীরিক অসুস্থতা—গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি—যা আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে চ্যালেঞ্জে ফেলেছিল। সেখান থেকে উৎরাতে প্রতিরাতে ঈশ্বরের শরনাপন্ন হতেন মেসি। কান্নাভেজা কন্ঠে ফরিয়াদ করতেন—“ঈশ্বর, সব সহজ করে দাও।” চুপ থেকে চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। একা থাকা, সবার চেয়ে আলাদা থাকা ছেলেটা একদিন মন জয় করলেন বিশ্বের।
জেমিমাহর জীবনে যেমনটা হয়েছে, তার কণ্ঠে—
‘আমি প্রতিদিন কেঁদেছি, উদ্বেগে ভুগেছি। প্রতিদিন নিজেকে সামলাতে হয়েছে, ঈশ্বরই আমাকে এগিয়ে নিয়েছেন। গত বছর আমাকে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তখনো আমি ফর্মে ছিলাম, কিন্তু নানা কিছু ঘটছিল। আমার চারপাশে অসাধারণ মানুষ ছিল, যারা আমাকে সহায়তা করেছে।’
স্থির থাকো, ঈশ্বর তোমাকে সাহায্য করবেন:
লিওনেল মেসি যেমন বলেছিলেন, ‘সফলতা সহজে আসে না। প্রতিদিন ছোট ছোট কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই বড় লক্ষ্য অর্জন করা যায়।’ যে আর্জেন্টাইন জাদুকর হেঁটেছিলেন, তা ছিল কন্টকময়। পা ফসকালেই ছিল হারিয়ে যাওয়ার ভয়। জীবনের প্রতিটি সিঁড়ি তিনি ডিঙিয়েছেন সতর্কতার সঙ্গে। ঈশ্বরও তার সঙ্গে ছিলেন।
গতকাল নিজের ইনিংসের সময় বাইবেলের একটি বাণী মনে করে সাহস পেয়েছেন জেমিমাহ।
‘শেষের দিকে আমি শুধু একটি বাণী বলছিলাম—“স্থির থাকো, ঈশ্বর তোমাকে সাহায্য করবেন।” আমি শান্ত থাকার চেষ্টা করছিলাম।’
জেমিমাহ স্থির থেকেছেন। আঙুলের কড়ায় গুণে খারাপ সময় পার করেছেন। কখনও বাসে-ট্রামে-ট্রেনে, গভীর রাতে ধ্যানে বসেছেন। একাগ্রতা তাঁকে সাফল্য দিয়েছে।
পরিবার, প্রিয়জন, আস্থাভাজন:
ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির পর নভি মুম্বাইয়ের ভিআইপি স্ট্যান্ডে বসে থাকা পরিবারের দিকে একটি উড়ন্ত চুম্বন ছুঁড়ে বাবা এবং কোচ ইভানকে ধন্যবাদ জানাতে দেখা যায় জেমিমাহকে। যারা তাঁর পথপ্রদর্শক ও শক্তি। জেমিমাহ বলেছিলেন,
‘আমি আমার মা, বাবা, কোচ এবং আমার উপর বিশ্বাসকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। গত মাসে এটি সত্যিই কঠিন ছিল, এটি একটি স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’
লিওনেল মেসির জীবন বদলে দেওয়ার পেছনে পরিবারের ভূমিকা ছিল অনন্য। তড়িৎ এক সিদ্ধান্তে বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তি। বাবা জর্জ মেসি, মা কুচ্চিটিনি থেকে শুরু করে স্ত্রী রোকুজ্জো—সবাই তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ অংশ। তিনি প্রায়শঃ বলেন, পরিবার ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব হতো না।
পারিবারিক পাশে থাকায় মেসি ফুটবল বিশ্বের আইডল, জেমিমাহ হারিয়ে যাওয়ার পর নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন।
মেসির স্বপ্ন পূরণ, জেমিমাহর অপেক্ষা:
চারবার স্বপ্নভঙ্গ। অপেক্ষা যে কত দীর্ঘ তা লিওনেল মেসির চেয়ে বেশি কে জানে। একটি সময় মনে হচ্ছিল, চাঁদের নিখুঁত দাগ হারিয়েছিল মেসির জীবনে—বিশ্বকাপ না পাওয়া।
সেটি পূরণ হয়েছে ২০২২ সালে। ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ ট্রফি উপহার দেন মেসি। স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়েছে। এক জীবনে নিশ্চয়ই তার আর কিছু পাওয়ার থাকার কথা নয়।
জেমিমাহও এমন একটি স্বপ্ন উপাখ্যানের অপেক্ষায়। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে ভারত। আগের দু’বার কূলে গিয়ে ডুবে গিয়েছিল। এবার দারুণ ছন্দে থাকা দলটির প্রতিপক্ষ চোকার্স দক্ষিণ আফ্রিকা। দেখার বিষয়, স্বপ্নের পথে নিজেকে কতটা জলাঞ্জলি দিতে পারেন জেমিমাহ। তবেই দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানো যাবে, সার্থক হবে মেসির পথ ধরে হাঁটা।
No posts available.
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:২৩ পিএম
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫:২৫ পিএম

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক ঝাঁক ঘটনার সাক্ষী হয়ে শেষ হলো ২০২৫ সাল। ক্রিকেটের জন্য বছরটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে ব্যক্তিগত ও দলীয় কীর্তি আর নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের আবির্ভাবে। বিপরীতে ভারত–পাকিস্তানের দ্বৈরথ ও বিতর্কিত কিছু ঘটনা হয়ে থাকবে নেতিবাচক স্মৃতি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি দুই দেশের রাজনীতির উত্তাপ মাঠে ছড়িয়ে পড়া থেকে ট্রফি নিয়ে নজীরবিহীন ঘটনা, হাসির খোরকের সঙ্গে বিরক্তির কারণ হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তানের আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা একপাশে রাখলে বেশ দারুণ একটি বছরই দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। প্রথমবারের মতো বিশ্বসেরার তকমা জুটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার। আইসিসির দুটি টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতে দেশটির পুরুষ দল আর প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ভারতের নারী দল।
ব্যাক্তিগত পারফরম্যান্সে দূত্যি ছড়িয়েছেন জো রুট, শুবমান গিল, জ্যাকব ডাফি ও শাই হোপের মতো অনেকেই। কোনো রথী-মহারথী সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন, কেউবা নির্দিষ্ট কোনো সংস্করণ থেকে অবসর নিয়েছেন। বছরের একেবারে শেষ দিকে অ্যাশেজের লড়াইকে আরও একবার একপেশে বানিয়ে ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ১১ দিনেই ইংলিশদের তুলোধুনো করে অ্যাশেজের ছাইদানি নিজেদের কাছে রেখে দেওয়া নিশ্চিত করে স্বাগতিক অজি।
ভারত-পাকিস্তান বৈরিতার চূড়ান্ত রূপ: ক্রিকেটে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি দুই দেশের রেষারেষি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখে আসছে সমর্থকরা। তবে ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পরই মাত্রাটা বেড়ে যায়। এশিয়া কাপে তিনবার মুখোমুখি হয়ে প্রতিবারই হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানায় ভারতীয় খেলোয়াড়রা। ফাইনালে এসিসি চেয়ারম্যান পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভির হাত থেকে ট্রফি না নিয়ে অদৃশ্য ট্রফির অদ্ভুত উদযাপন করে সূর্যকুমার যাদবের দল। অনেক তর্ক-বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত এই ট্রফির ঠিকানা হয় এসিসির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে।
সাফল্যের শীর্ষে ভারত : ভারতের পুরুষ দল জিতে দুটি বড় শিরোপা। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের অধরা স্বাদ পায় ভারতের নারী দল। মার্চে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতা ভারত সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানকে হারিয়ে জেতে টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ। এরপর নভেম্বরে ঘরের মাঠে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসে হারমানপ্রিত কৌরের ভারত।
অবশেষে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা: তীরে এসে তরি ডোবাতে সিদ্ধহস্ত দক্ষিণ আফ্রিকা অবশেষে নিজেদের নামের পাশ থেকে ‘চোকার’ তকমা সরায়। জুনে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বসেরা হয় প্রোটিয়ারা। এইডেন মার্করামের ১৩৬ রানের অসাধারণ ইনিংসের নৈপুণ্যে চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রান তাড়া করে টেম্বা বাভুমার দল।
ইতালির ইতিহাস, নেপালের প্রথম: ফুটবলের চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা চমক দেখায় ক্রিকেটে। গত জুলাইয়ে ইউরোপের দেশটি প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ভারত-শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২০ দলের কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে দেখা যাবে আইসিসির সহযোগী সদস্য দল ইতালিকে।
টি-টোয়েন্টি সিরিজ অনেবারই জিতেছে নেপাল। তবে এ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হওয়ার আগে আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের বিপক্ষে এ অর্জন ছিল না দক্ষিণ এশিযার দেশটির। টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে নেমেই বাজিমাত করে নেপাল। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে তারা। গত সেপ্টেম্বরে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিবিয়ানদের স্রেফ ৮৩ রানে ধসিয়ে দেয় নেপাল। ৯০ রানের ঐতিহাসিক এক জয়ে সিরিজ নিশ্চিতের বাঁধনহারা উদযাপনে মাতে তারা।
অ্যাশেজের রাজত্ব অস্ট্রেলিয়ারই: অপেক্ষা বাড়ল ইংল্যান্ডের। ঐতিহ্যের অ্যাশেজে আবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার মানতে হয়েছে ইংলিশদের। ২০১৫ সালের পর ছাইদানি উদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইংল্যান্ড এবার অজিদের পরাস্থ করার ঘোষণা দিয়েই আসে। তবে মাঠের খেলায় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বেন স্টোকসের দল। প্রথম তিন ম্যাচেই রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়ে অ্যাশেজ খোয়ানোর পর চতুর্থ টেস্টে জয়ের দেখা পায় সফরকারীরা।
কোহলির দেড় যুগের অপেক্ষার সমাপ্তি: ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএলের) ট্রফির সঙ্গে যেন শত্রুতা ছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর। প্রতিবারই দুর্দান্ত দল নিয়েও খালি হাতে টুর্নামেন্ট শেষ করতে হতো বিরাট কোহলিদের। অনেক প্রথমের বছরে ক্রিকেট বিধাতা মুখ তুলে তাকায় এই ফ্রাঞ্চাইজিটির দিকেও। জুনে আহমেদাবাদে পাঞ্জাব কিংসকে হারিয়ে আইপিএল-২০২৫ জেতে আরসিবি। আইপিএলের ১৮ বছরের মধ্যে এটি আরসিবির প্রথম শিরোপা। তবে উদযাপনের মধ্যেই ঘটে হৃদয়বিদারক ঘটনা। পরদিন কোহলির দল বেঙ্গালুরু পৌঁছালে এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে পদদলিত হয়ে ১১ জন প্রাণ হারান, আহত হন অনেকে।
বিস্ময়বালক বৈভব সূর্যবংশীর উত্থান: ক্রিকেটবিশ্বে হঠাৎ হইচই ফেলে দেন ভারতের ১৪ বছর বয়সী এক ক্রিকেটার। এই বছরই বৈভবের আইপিএলে অভিষেক হয় বৈভব সূর্যবংশীর। ২৮ এপ্রিল রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে একটি ঐতিহাসিক ইনিংস খেলে আলোচনায় আসেন তিনি। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে বৈভব ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে, যা আইপিএলের ইতিহাসে ভারতীয় কোনো ব্যাটারদের মধ্যে দ্রুততম শতকের রেকর্ড। টি-টোয়েন্টিতে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়া বৈভব পুরো বছরজুড়েই তাণ্ডব চালিয়ে আলোচনায় ছিলেন।
উইয়ান মুল্ডার ৩৬৭*: বুলাওয়েতে উইয়ান মুল্ডারের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো ক্রিকেটবিশ্ব। বিশ্বরেকর্ডের স্বাক্ষী হওয়ার অপেক্ষায় ছিরেন সবাই। ২০০৪ সালের এপ্রিলে অ্যান্টিগায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ৪০০ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলা ব্রায়ান লারাও অধির অপেক্ষায় ছিরেন। তবে মুল্ডারের মনে ছিল অন্য পরিকল্পনা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকে মধ্যাহ্নবিরতিতে গিয়েছিলেন মুল্ডার। অবিশ্বাস্যভাবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় সেশনে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ব্যাটিংয়ে নামেনি! ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন অধিনায়ক মুল্ডার! ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তির রেকর্ড থাকল অক্ষত। পরে বলেছিলেন, কিংবদন্তির সম্মানেই নাকি রেকর্ড ভাঙেননি ২৭ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটার। ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এই স্মৃতি অম্লান থাকবে অনেকদিন।
ছক্কার সেঞ্চুরি, বোলিং ম্যাজিক : অস্ট্রিয়ার হয়ে খেলা ভারতীয় বংশোদ্ভূত করণবীর সিং ছক্কার বৃষ্টি নামিয়ে এনে রেকর্ড গড়েন। টি-টোয়েন্টিতে অবিশ্বাস্য ১২২টি ছক্কা হাঁকান, যা এক পঞ্জিকাবর্ষে বিশ্বরেকর্ড। এ বছর খেলা ৩২টি টি-টোয়েন্টিতে ১২২টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম এক পঞ্জিকাবর্ষে ছক্কার সেঞ্চুরি পেলেন কেউ। আগের রেকর্ডটা ছিল ২০২২ সালে সূর্যকুমার যাদবের।
৭ রানে ৮ উইকেট: ভুটানের এক তরুণ গড়েন ইতিহাস। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো এক ম্যাচে ৮ উইকেট শিকার করে বিশ্বরেকর্ডে নাম লেখান ভুটানের বাঁহাতি স্পিনার সোনাম ইয়েশে। ৬ ডিসেম্বর মায়ানমারের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ইয়েশে ৪ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে নেন ৮ উইকেট।
সবচেয়ে উজ্জ্বল গিল: বছরের শেষ দিকে চোটের কারণে জাতীয় দলের কয়েকটি ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়ার মতো কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে শুভমন গিলকে। তবে ব্যাট হাতে পুরো বছর সবার থেকে উজ্জ্বল ছিলেন ভারতীয় ব্যাটারই। ২০২৫ সালে ৩৫ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৪২ ইনিংসে ১৭৬৪ রান করেছেন গিল। সর্বোচ্চ সাতটি সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে তিনটি ফিফটি। টেস্টে সর্বোচ্চ ৯৮৩ রান করেছেন ২৬ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটার।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন শাই হোপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা এই ব্যাটার সব সংস্করণ মিলিয়ে ৫০ ইনিংসে ১৭৬০ রান করেছেন। সেঞ্চুরি পাঁচটি, ফিফটি ৯। ২০২৫ সালে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকের তালিকায় তিনে থাকা জো রুটের মোট রান ১৬৩১। ইংলিশ তারকা ব্যাটার গিলের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ সাতটি সেঞ্চুরি করেছেন, সঙ্গে পাঁচটি অর্ধশতক। এ বছরই দুই কিংবদন্তি জ্যাক ক্যালিস ও রিকি পন্টিংকে ছাপিয়ে টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক হন রুট। ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে ১৩৭৭৭ রান করা রুটের সামনে এখন শুধুই ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচিন টেন্ডুলকার।
স্টার স্টার্ক: টেস্টে এ বছরের সফলতম বোলার অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক। সাদা পোশাকে তিনি নিয়েছেন সবচেয়ে বেশি উইকেট। এক পঞ্জিকা বর্ষে ন্যূনতম ৫০ উইকেট পাওয়া বোলারদের মধ্যে এই ফাস্ট বোলার সর্বনিম্ন স্ট্রাইকরেটের বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ২০২৫ সালে ১১টি টেস্ট খেলা অজি পেসার ২৯.৫ স্ট্রাইকরেটে ৫৫ উইকেট নিয়েছেন স্টার্ক। ৫০ ওভারের ফরম্যাটে এই বছরের সেরা বোলার নিউজিল্যান্ডের ম্যাট হেনরি। ২০২৫ সালে তিনি পেয়েছেন ৩১ উইকেট। টি-টোয়েন্টি’তে ৬৩ উইকেট নিয়ে এই সংস্করণের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বাহরাইনের আলি দাউদ।
২২ গজকে বিদায় বলেছেন যাঁরা: ২০২৫ সালে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছে বেশকয়েকজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার। অবসর নেওয়ার এ তালিকায় আছেন ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের তারকারা। এক একজনের বিদায়ের সঙ্গে অবসান ঘটে সফল যুগের।
হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অধ্যায়ের ইতি টানেন তামিম ইকবাল। ১০ জানুয়ারি সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে পেশাদার ক্রিকেট জীবনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন বাংলাদেশি ক্রিকেটার। বাংলাদেশের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজারের-এর বেশি রান করেছেন এই ব্যাটার। ২০২৫ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২০২১ সালে টেস্ট ছাড়ার পর সীমিত ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেও বিদায় বলেন তিনি।
ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা দুই ক্রিকেটার রোহিত শর্মা ও বিরাটে কোহলি টেস্ট থেকে অবসরের জন্য বছরটিকে বেছে নেন। ২০২৫ সালের মে’তে আইপিএলের মাঝপথে এবং ইংল্যান্ড সফরের ঠিক আগে টেস্ট ক্রিকেট ক্যারিয়ারে দাঁড়ি টানেন। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার ভারতের হয়ে ১২৩টি টেস্টে ৯,২৩০ রান করেন। গড় ৪৬.৮৫, সেঞ্চুরি ৩০টি ও অর্ধশতক ৩১টি। ক্রিকেটের দীর্ঘতম সংস্করণে ৬৮ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে ভারতকে ৪০টি জয় এনে দিয়েছেন কোহলি। টি-টোয়েন্টিকেও বিদায় বলে দেওয়া ৩৭ বছর বয়সী এখন শুধু ওয়ানডে খেলছেন।
কোহলির মতো একই সময়ে টেস্ট ছেড়েছেন রোহিতও। তিনি ৬৭ টেস্টে ৪,৩০১ রান করেন, গড় ৪০.৫৭, শতক ১২টি, অর্ধশতক ১৮টি। কোহলির মতো এই অভিজ্ঞ ব্যাটারও কেবল ওযানডে খেলছেন। এছাড়া ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে ২০২৫ সালে অবসরের ঘোষণা দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, চেতেশ্বর পূজারা, ঋদ্ধিমান সাহা ও মোহিত শর্মা।
২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন মার্টিন গাপটিল। নিউজিল্যান্ডের হয়ে এই ব্যাটার ১৯৮টি ওয়ানডে ও ১২২টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি রান আছে কিউই ব্যাটারের। নিজের ১০০তম টেস্ট খেলার পর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়েন শ্রীলঙ্কার ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে।

দুই দিনের জন্য স্থগিত হওয়ার পর এবার কমে গেল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেটের দ্বাদস সংস্করণের ভেন্যু। চট্টগ্রামের মাঠে গওয়ার অপেক্ষায় থাকা সবগুলো ম্যাচ এখন সিলেটের মাঠেই হবে।
বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিপিএলের পরিবর্তিত সূচি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। নতুন সূচি অনুযায়ী, সিলেটের মাঠে ১২টির বদলে হবে ২৪টি ম্যাচ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিপিএলের মঙ্গলবারের দুই ম্যাচ স্থগিত করে নেওয়া হয়েছে ৪ জানুয়ারিতে। পূর্ব নির্ধারিত সূচিতে ৫ তারিখ থেকে চট্টগ্রামে হওয়ার কথা ছিল বিপিএল।
কিন্তু বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেটি আর সম্ভব হবে না। তাই ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বিপিএলের সব ম্যাচ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই হবে।
এরপর ১৫ জানুয়ারি থেকে শেষ পর্বের জন্য ঢাকায় ফিরবে বিপিএল। লিগ পর্বের শেষ ৬টি ম্যাচ হবে শের-ই বাংংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। পরে প্লে-অফের ৪ ম্যাচও হোম অব ক্রিকেটেই অনুষ্ঠিত হবে।
পূর্ব ঘোষিত সূচি ঠিক রেখে ২৩ জানুয়ারিই হবে বিপিএলের ফাইনাল।

চলতি অ্যাশেজ সিরিজের মেলবোর্ন টেস্টে ছিল পেসারদের দাপট। মাত্র দুই দিনে শেষ হওয়া বক্সিং ডে টেস্টের পর আইসিসির হালনাগাদকৃত র্যাঙ্কিংয়েও বড় উন্নতি করেছেন বেশ পেসাররা।
মেলবোর্নে টেস্টে দুই দলের ৩৬টি উইকেটের সবকটিই নিয়েছেন পেস বোলাররা। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন ইংলিশ পেসার জশ টাং। এই পারফরম্যান্সের সুবাদে বোলিং র্যাঙ্কিংয়ে ১৩ ধাপ এগিয়ে তিনি উঠে এসেছেন ৩০ নম্বরে (৫৭৩ রেটিং পয়েন্ট)।
র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করেছেন টাংয়ের সতীর্থরাও। চোট কাটিয়ে মেলবোর্ন টেস্টে ফেরা গাস অ্যাটকিনসন তিন উইকেট নিয়ে চার ধাপ এগিয়ে যৌথভাবে ১৩ নম্বরে উঠেছেন (৬৯৮)। পাঁচ উইকেট নিয়ে ছয় ধাপ উন্নতি করে ২৩ নম্বরে উঠে এসেছেন ব্রাইডন কার্স (৬৩৮)।
অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক গত সপ্তাহের তুলনায় রেটিং পয়েন্ট কমলেও এক ধাপ এগিয়ে নোমান আলির সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন (৮৪৩)। স্কট বোল্যান্ড দুই ধাপ এগিয়ে ক্যারিয়ার সেরা ৮১০ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে উঠেছেন।
মেলবোর্নে ব্যাট হাতে ২৮ রান করা অ্যাটকিনসন অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছেন (২৩৮)। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস ধরে রেখেছেন তৃতীয় স্থান (৩১৬)।
মেলবোর্ন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪১ ও রান তাড়ায় অপরাজিত ১৮ রানের সুবাদে হ্যারি ব্রুক তিন ধাপ এগিয়ে টেস্ট ব্যাটিং র্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠেছেন (৮৪৬)। শীর্ষে রয়েছেন জো রুট।
দুই ধাপ পিছিয়ে পাঁচ নম্বরে নেমেছেন স্টিভ স্মিথ, আর এক ধাপ নেমে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন ট্রাভিস হেড।

তারকা পেসার ফজলহক ফারুকি ও অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার গুলবদিন নাইবকে ফিরিয়ে সামনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। দলের নেতৃত্বে আছেন রশিদ খান।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে আফগানিস্তান। ওই সিরিজেও এই একই দল নিয়ে নামবে তারা।
বাঁহাতি পেসার ফারুকি, পেস অলরাউন্ডার নাইব ছাড়াও আফগানিস্তানের স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন রহস্য স্পিনার মুজিব উর রহমান ও ডানহাতি পেসার নবীন উল হক। গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরের দলের ছিলেন না ফারুকি ও নাইব।
বিশ্বকাপের দলে মুজিব জায়গা পাওয়ায় আরেক রহস্য স্পিনার আল্লাহ্ মোহাম্মদ গজনফারের জায়গা হয়নি। তবে রিজার্ভে আছেন তরুণ স্পিনার। যেখানে তার সঙ্গী ইজাজ আহমেদজাই ও জিয়াউর রহমান শরিফি।
২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবশেষ সংস্করণে সেমি-ফাইনাল খেলেছিল আফগানিস্তান। যে কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে এটিই তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য।
আগামী ১৯ থেকে ২২ জানুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ খেলবে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রথম প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড। ডি গ্রুপে তাদের অন্য তিন সঙ্গী দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কানাডা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ ও বিশ্বকাপের জন্য আফগানিস্তান স্কোয়াড
রশিদ খান (অধিনায়ক), ইব্রাহিম জাদরান (সহ-অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ (উইকেটরক্ষক), মোহাম্মদ ইশহাক (উইকেটরক্ষক), সেদিকউল্লাহ অতল, দারউইশ রসুলি, শহিদউল্লাহ কামাল, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, গুলবদিন নাইব, মোহাম্মদ নবী, নুর আহমেদ, মুজিব উর রহমান, নবীন উল হক, ফজলহক ফারুকি, আব্দুল্লাহ ওমরজাই।
রিজার্ভ: আল্লাহ্ মোহাম্মদ গজনফার, ইজাজ আহমেদজাই ও জিয়াউর রহমান শরিফি

২০২৫ সালে ক্রিকেট এমন কিছু সংখ্যার জন্ম দিয়েছে, যেগুলো অস্বাভাবিক, অসম্ভবপ্রায় বা নিছকই চমকপ্রদ। পরিসংখ্যানগত ব্যতিক্রম থেকে শুরু করে প্রত্যাশা ছাপিয়ে দেওয়া রেকর্ড- এমন ২৫টি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো বছরের শেষ দিনে।
১০ লাখে ১ বার!
গাণিতিক হিসেবে টানা ২০টি টস হারের সম্ভাবনা প্রতি ১০ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৬ বারের মধ্যে একবার। সেটিই করে দেখিয়েছে ভারত। এই ধারা শুরু হয়েছিল ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনাল (আহমেদাবাদ) থেকে এবং শেষ হয়েছে বছরের শেষ ওয়ানডে ম্যাচে, বিশাখাপত্তমে।
ওয়ানডেতে এর পরের সবচেয়ে খারাপ টস-হারার রেকর্ডটি নেদারল্যান্ডসের- ২০১১ সালের মার্চ থেকে ২০১৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত টানা ১১টি।
২
চলতি অ্যাশেজ সিরিজে দুটি টেস্ট দুই দিনের মধ্যে শেষ হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো সিরিজে দুই বা তার বেশি টেস্ট দুই দিনে শেষ হলো।
শেষবার এমন ঘটনা ঘটেছিল ১৯১২ সালের ত্রিদেশীয় সিরিজে। যেখানে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড অংশ নিয়েছিল- যা ছিল ইতিহাসের প্রথম বহুজাতিক টেস্ট টুর্নামেন্ট।
চলতি অ্যাশেজ শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়ায় খেলা ৪৫০টি টেস্টের মধ্যে মাত্র দুটি ম্যাচ দুই দিনের মধ্যে শেষ হয়েছিল, আর চলতি মৌসুমেই সেই সংখ্যার সমান দেখা গেছে।
৩
২০২৫ সালের নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। যদিও তারা টুর্নামেন্টে তিনটি ম্যাচ হেরেছিল। এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এই প্রথম তিন ম্যাচ হেরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কোনো দল। পুরুষদের বিশ্বকাপে এমন ঘটনা ঘটেছে দুইবার- পাকিস্তান (১৯৯২) ও ইংল্যান্ড (২০১৯)।
৪
গত ২৫ এপ্রিল, সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে ঘরের মাঠের ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসের একাদশে ছিলেন ২২ বছরের নিচের চারজন খেলোয়াড়- আয়ুশ মাত্রে, শাইখ রশিদ, নূর আহমেদ ও দেওয়াল্ড ব্রেভিস।
এর আগে চেন্নাই কখনও এত কম বয়সের ৪ জন ক্রিকেটার একই ম্যাচে নামায়নি। আইপিএল ২০২৫ শুরুর আগে তারা কখনও এক ম্যাচে দু’জনের বেশি এমন খেলোয়াড় খেলায়নি।
৫
ইন্দোনেশিয়ার অলরাউন্ডার গেদে প্রিয়ান্দানা গত ২৩ ডিসেম্বর বালিতে কাম্বোডিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে (পুরুষ বা নারী) এক ওভারে পাঁচ উইকেট নেওয়া প্রথম বোলার হন।
তিনি ছিলেন ইনিংসে ব্যবহৃত সপ্তম বোলার। একমাত্র ওভারে তার বোলিং ফিগার ১-০-১-৫! যা পুরুষদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে কম খরচে পাঁচ উইকেট। ৬৯ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার ২৮ উইকেটের মধ্যে পাঁচটিই এসেছে ওই এক ওভারে।
৬
দ্য ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ রানে জিতেছিল ভারত। যা ছিল বছরের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর টেস্ট সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ। শেষ দিনে ৫২ মিনিটের নাটকীয় লড়াইয়ে শেষ হয় সিরিজ।
এটি টেস্টে ভারতের সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয় এবং একই সঙ্গে ৩০০-এর বেশি রান ডিফেন্ড করে ১০ রানের কম ব্যবধানে জয়ের ইতিহাসে প্রথম উদাহরণ।
৭
২০২৫ সালের মেজর লিগ ক্রিকেটের লিগ পর্বে ১০ ম্যাচের মধ্যে ৭টি হেরেও শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এমআই নিউ ইয়র্ক। ন্যূনতম ১০টি লিগ ম্যাচ থাকা পাঁচ বা তার বেশি দলের কোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে এত কম জয়-হারের অনুপাত (০.৪৩) নিয়ে কেউ কখনও চ্যাম্পিয়ন হয়নি।
৮
গত ২৬ ডিসেম্বর মায়ানমারের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছেন ভুটানের সোনাম ইয়েশে। যা কোনো পেশাদার পুরুষ বা নারী টি-টোয়েন্টি ম্যাচে (গ্লোবাল লিগ বা আন্তর্জাতিক) সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড।
৯
২০২৫ সালের আইপিএলে কোয়ালিফায়ার-১ ও ফাইনালসহ নিজেদের ঘরের বাইরে ৯ ম্যাচের সবকটি জিতেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। আইপিএলের ১৮ মৌসুমের ইতিহাসে এটিই প্রথম ঘটনা।
১০
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত টানা ১০টি টেস্ট জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যা টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় দীর্ঘতম। এই ধারার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিল লর্ডসে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো।
প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা এখন তার প্রথম ১২টি টেস্টের মধ্যে ১১টিতেই জয় পেয়েছেন। যা আলাদা রেকর্ড।
১১
চলতি পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজ সিরিজ নিশ্চিত করতে অস্ট্রেলিয়ার লেগেছে মাত্র ১১ দিন। যা যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। এর আগে তাদের জন্য একই সময় লেগেছিল ১৯৫০/৫১ (দেশে), ২০০১ (বাইরে) ও ২০০২/০৩ (দেশে)।
সর্বনিম্ন রেকর্ডটি ১৯২১ সালের ইংল্যান্ড সফরে- মাত্র ৮ দিন।
১২ বছর ২ মাস ২৬ দিন
দিল্লির হয়ে বিরাট কোহলির দুই লিস্ট-এ ম্যাচের মধ্যবর্তী সময় ১২ বছর ২ মাস ২৬ দিন। বিজয় হাজারে ট্রফিতে খেলার আগে তিনি শেষ খেলেছিলেন ২০১৩ সালের এনকেপি সালভে চ্যালেঞ্জার ট্রফি ফাইনালে। সেই একাদশে ছিলেন গৌতম গম্ভীর, ভিরেন্দর শেবাগ ও আশিস নেহরার মতো খেলোয়াড়রা।
দুই সপ্তাহের একটু বেশি সময় পরে তিনি জয়পুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের হয়ে দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরি (৫২ বলে) করেছিলেন।
১৩
নেপিয়ারে গত নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০৯* করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩টি ভিন্ন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটার হন শাই হোপ। এর মাধ্যমে তিনি প্রথম ব্যাটার হিসেবে বাকি ১১টি পূর্ণ সদস্য দেশের বিপক্ষে শতক করেন।
সবচেয়ে বেশি দেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরির তালিকায় যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে মাহেলা জয়বর্ধনে ও ক্রিস গেইল- ১২টি করে। শচীন টেন্ডুলকার, গ্যারি কার্স্টেন, রাহুল দ্রাবিড়, রিকি পন্টিং, কুমার সাঙ্গাকারা, হাশিম আমলা, মার্টিন গাপটিল, শিখর ধাওয়ান ও পল স্টার্লিং করেছেন ১১টি দলের বিপক্ষে।
১৪ বছর ২৭২ দিন
চলতি বিজয় হাজারে ট্রফিতে মাত্র ১৪ বছর ২৭২ দিন বয়সে ৮৪ বলে ১৯০ রানের ইনিংস খেলে লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করা কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হয়ে যান বৈভব সূর্যবংশী। আগের রেকর্ডটি ছিল জহুর এলাহির- ১৫ বছর ২০৯ দিন
এর আগে গত আইপিএলে তিনি টি-টোয়েন্টিতে কনিষ্ঠতম সেঞ্চুরিয়ান হয়েছিলেন। পরে ইন্ডিয়া ‘এ’ ও বিহারের হয়েও শতক করেছেন। ১৮ বছর হওয়ার আগে পুরুষদের টি-টোয়েন্টিতে আর কোনো ক্রিকেটারের শতক নেই।
১৫
গত জুলাইয়ে ইউরোপিয়ান বাছাইপর্বে রানার্স-আপ হয়ে ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত করেছে ইতালি। তারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা ১৫তম সহযোগী সদস্য দল (আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডসহ)।
ইউরোপিয়ান বাছাই থেকে বাদ পড়া তিন দলের মধ্যে ছিল স্কটল্যান্ড। যারা আগের নয়টি আসরের ছয়টি খেলেছিল।
১৬
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ভারতের প্রতি উইকেটে গড় রান ছিল ১৬.৩৯ (অতিরিক্তসহ)। যা ভারতের কোনো হোম টেস্ট সিরিজে সর্বনিম্ন এবং সামগ্রিকভাবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। সর্বনিম্ন গড়ের রেকর্ড ২০০২-০৩ নিউজিল্যান্ড সফরে- মাত্র ১৩.৩৭।
এর আগের বছর ভারত ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ০-৩ ব্যবধানে হেরেছিল। টানা দুই বছরে ঘরের মাঠে দুটি টেস্ট সিরিজ হারার ঘটনা এর আগে ঘটেছিল চার দশকেরও বেশি আগে- ১৯৮৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবং ১৯৮৪-৮৫তে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
১৭–০
২০২৩ সাল থেকে পুরুষদের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ভারতের নিখুঁত রেকর্ড- ১৭-০। যা শুরু হয় ২০২৩ এশিয়ান গেমস (চীন) দিয়ে। যেখানে ফাইনাল বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও সিডিংয়ের কারণে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়।
এরপর ২০২৪ সালে ক্যারিবিয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। গত সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এশিয়া কাপেও অপরাজিত থাকে তারা।
১৮
মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ছাড়া আইপিএলে টানা দুটি ফাইনালের জন্য লেগেছে ১৮টি আসর। এই টুর্নামেন্টের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক ২০২৩ পর্যন্ত ১১টি ফাইনালে খেলেছেন। যার একটি ছিল ২০১৭ সালে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টের হয়ে, স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বে।
১৯
২০২৫ সালের মেজর লিগ ক্রিকেটে ওয়াশিংটন ফ্রিডমের বিপক্ষে সান ফ্রান্সিসকো ইউনিকর্নসের হয়ে এক ম্যাচে ১৯টি ছক্কা মেরেছিলেন ফিন অ্যালেন। যে কোনো টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ। এর আগে ক্রিস গেইল ২০১৭ বিপিএল ফাইনালে এবং এস্তোনিয়ার সাহিল চৌহান গত বছর সাইপ্রাসের বিপক্ষে ১৮টি করে ছক্কা মেরেছিলেন।
২০
টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের ৩০ নম্বরে থাকা স্পেন টানা ২০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছে (ফেব্রুয়ারি ২০২৩ থেকে), যা যে কোনো দলের জন্য সর্বোচ্চ। অদ্ভুতভাবে, এটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেকোনো দলের যৌথভাবে দীর্ঘতম জয়রখ, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। যারা সব ফরম্যাট মিলিয়ে টানা ২০ ম্যাচ জিতেছিল।
২১ বছর ২৭৯ দিন
নাভি মুম্বাইয়ে নারী বিশ্বকাপ ফাইনালে ম্যাচসেরা হওয়ার সময় শেফালি বর্মার বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর ২৭৯ দিন। যা তাকে পুরুষ ও নারী মিলিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বকনিষ্ঠ ম্যাচসেরা বানিয়েছে।
তিনি চোট পাওয়া প্রাতিক রাওয়ালের বদলি হিসেবে দলে এসেছিলেন। সেমি-ফাইনালের আগে এক বছর তিনি কোনো ওয়ানডে খেলেননি। অন্যদিকে ৩৬ বছর ২৩৯ দিনে হারমনপ্রীত কৌর নারী বিশ্বকাপ জেতা বয়োজ্যেষ্ঠ অধিনায়ক হন।
২২
চলতি অ্যাশেজ সিরিজে জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেটের ওপেনিং জুটি গড়ে ২১.৭৫ বল টিকেছে। যা অন্তত সাতবার ওপেন করা কোনো জুটির জন্য টেস্ট সিরিজ ইতিহাসে সর্বনিম্ন। এর আগে এতদিন সবচেয়ে খারাপ গড় ছিল ৩১ বল।
সিরিজে ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটির গড় মাত্র ১৯, যেখানে অস্ট্রেলিয়ার ৩৪.৮৭। আট ইনিংসের মধ্যে তিনটিতে প্রথম উইকেট পড়েছে প্রথম ওভারে এবং কখনও আট ওভারের বেশি টেকেনি এই জুটি।
২৩
টেস্ট ক্রিকেটে ২৩ ইনিংসে প্রথম ওভারে মোট ২৬টি উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্টার্ক। বল বাই বল তথ্য অনুযায়ী, এই দুই সংখ্যায় তার ওপরে আছেন শুধু জিমি অ্যান্ডারসন- ২৯ ইনিংসে ২৯ উইকেট।
২০২৫ সালে স্টার্ক প্রথম ওভারে নিয়েছেন ৮ উইকেট, যা এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ।
চলতি বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংস্টনে তার প্রথম ওভারের তিন উইকেট তাকে টেস্ট ইতিহাসের দ্রুততম পাঁচ উইকেট এনে দেয়- মাত্র ১৫ বলে।
২০২৫ সালে স্টার্কের স্ট্রাইক রেট ২৮.৩ (উইকেট ৫৫টি )। এক পঞ্জিকাবর্ষে অন্তত ৫০ উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে সেরা। ওয়াসিম আকরামের ৪১৪ উইকেট ছাড়িয়ে তিনি এখন বাহাতি বোলারদের মধ্যে শুধু রঙ্গনা হেরাথের (৪৩৩) পেছনে।
২৪
টেস্টে ১৫০ বা তার বেশি রান পাঁচবার করেছেন যশস্বী জয়সওয়াল। যার সবশেষটি গত নভেম্বরে দিল্লিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ২৪ বছর বয়সের আগে সবচেয়ে দেড়শ রানের তালিকায় টেস্ট ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আটটি দেড়শ নিয়ে সবার ওপরে ডন ব্র্যাডম্যান।
২৫
২০২৫ সালে নারী ওয়ানডেতে ৩০০ বা তার বেশি রান হয়েছে ২৫ বার, যা এই ফরম্যাটে এক বছরের রেকর্ড। আগের সর্বোচ্চ ১০ (২০২২) থেকে আড়াই গুণ বেশি।
এর মধ্যে ভারত করেছে ৯টি, দক্ষিণ আফ্রিকা ৬টি ও অস্ট্রেলিয়া ৫টি। এর আগে কোনো দল এক বছরে পাঁচটির বেশি ৩০০ রান করেনি।
তথ্যসূত্রঃ ক্রিকবাজ