
একই রাতে বেশ কিছু বড় ম্যাচের দেখাই মিলেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। আবার দেখা মিলেছে গোল উৎসবেরও। বড় দলগুলো এদিন যেন রীতিমত গোলের খেলায় মেতেছে। বড় জয় পেয়েছে বার্সেলোনা, ডর্টমুন্ড, ইন্তার মিলান ও ম্যানচেস্টার সিটি।
বার্সার ৫-০ গোলের জয়ে ফ্লিকের প্রথম
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথম ম্যাচে মোনাকোর সাথে বড় ব্যবধানে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ঠিকই বড় জয় তুলে নিয়েছে বার্সেলোনা। তাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হান্সি ফ্লিকের অধীনে বার্সার ডাগআউটে দেখা মিলেছে প্রথম জয়। এদিন ঘরের মাঠে ইয়াং বয়েজের জালে বার্সেলোনা দিয়েছে ৫ গোল। বিপরীতে হজম করেনি একটাও।
জোড়া গোল করে ম্যাচের নায়ক রবার্ট লেভানডফস্কি। এছাড়া একটা করে গোল করেছেন রাফিনিয়া ও ইনিগো মার্তিনেজ। বার্সার অন্য গোলটি এসেছে আত্মঘাতী থেকে।
পিএসজিকে হারিয়ে আর্সেনালের বাজিমাত
মঙ্গলবার রাতে সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচ ছিল আর্সেনাল-পিএসজির লড়াই। যেখানে বাজিমাত করেছে মিকেল আর্তেতার আর্সেনাল। ঘরের মাঠে তারা লুইস এনরিকের দলকে হারিয়েছে ২-০ গোলে। প্রথম ম্যাচে আতালান্তার সাথে ড্র করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ঠিকই জয় তুলে নিয়েছে গানাররা। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে জিরোনার সাথে শেষ মূহর্তে জয় পেলেও এদিন আর তেমন কিছু ঘটাতে পারেনি পিএসজি।
আর্সেনালের গোল দুটি আসে প্রথমার্ধে। ম্যাচের ২০ মিনিটের মাথায় আর্সেনালকে প্রথম গোল এনে দেন কাই হাভার্টজ। ৩৫ মিনিটে বুকায়ো সাকা দারুণ এক ফ্রি কিক থেকে ব্যবধান বাড়ান। অন্যদিকে পিএসজির জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় গোলপোস্ট। বেশ কয়েকবারই তাদের বল আটকে যায় বারপোস্টে। তাতে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় লুইস এনরিকের দলকে।
বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের গোলবন্যা
টানা দুই ম্যাচেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জয় তুলে নিয়েছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। প্রথম ম্যাচের তুলনায় এদিন আরও দাপুটে জয় মিলেছে জার্মান ক্লাবটির। স্কটিশ ক্লাব সেলটিকের জালে তারা গুণে গুণে দিয়েছে সাত গোল। তাতে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টেবিল টপার ডর্টমুন্ড।
হ্যাটট্রিক করে জয়ের মূল নায়ক আদেয়ামি। দু'টি গোল করেছেন গুইরাসি আর একটি করে গোল করেছেন এমরি চান ও এনমেচা।
এছাড়া জাবি আলোনসোর লেভারকুসেন জয় তুলে নিয়েছে এসি মিলানের বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচে ড্র করা ইন্তার মিলান ও ম্যানচেস্টার সিটি দ্বিতীয় ম্যাচে তুলে নিয়েছে দাপুটে জয়। মজার ব্যাপার দু'দুলই জয় পেয়েছে সমান ৪-০ গোলে।
No posts available.
২৭ নভেম্বর ২০২৫, ২:২১ পিএম
২৭ নভেম্বর ২০২৫, ৯:১৯ এম

গতকাল রাতে মাঠে নামার আগ পর্যন্ত চলতি মৌসুমে ইউরোপিয় ফুটবলে অপরাজিত ছিল বায়ার্ন মিউনিখ। দুর্বার গতিতে ছুটে চলছিল বাভারিয়ানরা। দারুণ সেই যাত্রায় ছেদ ঘটে আর্সেনালের কাছে হার মেনে। গতকাল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গানারদের কাছে ১-৩ গোলে হারে বায়ার্ন মিউনিখ।
আর্সেনালের মাঠ এমিরেটস স্টেডিয়ামে স্বাগতিক দলের হয়ে গোল করেন জুরিয়েন টিমবার, ননি মাদুয়েকে ও গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলি। আর ভিনসেন্ট কোম্পানির বায়ার্নের তরুণ মিডফিল্ডার লেনার্ট কার্ল ব্যবধান কমানো একমাত্র গোলটি করেন।
এই হারে ঘাবড়ানোর কিছু দেখছেন না বায়ার্নের তারকা ফরোয়ার্ড হ্যারি কেইন। অপরাজিত ধারার ইতি ঘটলেও, কেইন মনে করেন এতে তাদের লক্ষ্যচ্যুত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ম্যাচ শেষে টিএনটি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেইন বলেছেন, ‘এটা আমাদের মৌসুমের প্রথম হার, আর এটা নিয়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানোর দরকার নেই। অবশ্যই আমরা এটা থেখে শিখব।’
আরও পড়ুন
| ফিফার যে নিয়মে শাস্তি থেকে বেঁচে গেলেন রোনালদো |
|
১-১ গোলে সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় আর্সেনাল-বায়ার্ন। তবে দ্বিতীয়ার্ধে খেই হারায় জার্মান জায়ান্টরা। ৬৯ ও ৭৭ মিনিটে দুই গোল হজম করার পর আর গোল শোধ করতে পারেনি তাঁরা।
ইংল্যান্ড অধিনায়ক কেইন স্বীকার করেন, দ্বিতীয়ার্ধে আর্সেনালের তীব্রতার সঙ্গে তাল না মেলাতে পারার কারণেই বায়ার্ন ম্যাচ হেরেছে। তাঁর ভাষায়, ‘ম্যাচটা কঠিন হবে—এটাই প্রত্যাশিত ছিল। প্রথামার্ধটা সমান তালে লড়াই হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আমরা আগের মতো শক্তি বা তীব্রতা ধরে রাখতে পারিনি। অনেক বেশি দ্বৈত লড়াইয়ে হেরেছি।’
আর্সেনালের বক্সে মাত্র দুইবার বল স্পর্শ করেছেন কেইন । অবিশ্বাস্য হলেও, তিনি একটি শটও নিতে পারেননি মিকেল আর্তেতার দলের বিপক্ষে। যে ফরোয়ার্ড ওই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই ২১ ম্যাচে করেছেন ১৫ গোল। এটাই তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচ যেখানে আর্সেনালের বিপক্ষে পুরো ৯০ মিনিট খেলে একটাও শট নিতে পারেননি।
তবে ৩২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড ইতিমধ্যেই প্রতিশোধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সাবেক টটেনহ্যাম তারকা এবার নকআউট পর্বে আর্সেনালের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায়, আমি নিশ্চিত, প্রতিযোগিতার শেষ দিকে আবারও আমাদের দেখা হবে। আমরা সে ম্যাচটার জন্য অপেক্ষা করছি।’

গত সোমবার এস্তুডিয়ান্টেস-রোসারিও সেন্ট্রালের ম্যাচের আগে যা ঘটল তা আর্জেন্টিনার ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা হয়ে থাকল। লা প্লাতার দলটি প্রফেশনাল ফুটবল লিগের নির্দেশনা মেনে লিগ চ্যাম্পিয়নস অ্যাঞ্জেল দি মারিয়ার দলকে সম্মান জানাতে গার্ড অব অনার দিতে তৈরি হয়ে ছিল। তবে যখনই দি মারিয়া সহ রোসারিওর ফুটবলাররা মাঠে হেঁটে আসতে শুরু করল, এস্তুডিয়ান্টেসের খেলোয়াড়রা হঠাৎই উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
এমন অদ্ভুত ঘটনার নৈপথ্যে ছিল রোজারিও সেন্ট্রালকে ‘লিগ চ্যাম্পিয়ন’ ঘোষণা করা। ক’দিন আগে একেবারে হঠাৎই আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) রোজারিও সেন্ট্রালকে লি জয়ী ঘোষণা করে যা দেশটির ফুটবলে বেশ চমক সৃষ্টি করে। নতুন নিয়ম তৈরি করে ডি মারিয়ার ক্লাবের হাতে লিগ শিরোপা তুলে দেওয়া হয়।
আর্জেন্টিনায় ঐতিহ্যগতভাবে কেবল দুটি চ্যাম্পিয়নশিপ আছে—অ্যাপার্টুরা ও ক্লাসুরা। যেখানে শিরোপাজয়ী নির্ধারণে প্লে-অফ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তবে এএফএ এবার বার্ষিক টেবিলে সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারী দলকে লিগ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার নতুন নীতি চালু করেছে। এই নিয়ম অনুযায়ী, অ্যাপার্টুরা ও ক্লাসুরা—দুই পর্বের মোট পয়েন্ট যোগ করে যে দল বছরজুড়ে সবার ওপরে থাকবে, তারা পাবে নতুন এই মর্যাদাপূর্ণ উপাধি।
আরও পড়ুন
| ৭ মিনিটে হ্যাটট্রিক এমবাপের, দ্রুততম রেকর্ডটি কার |
|
২০২৫ মৌসুমে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে রোজারিও সেন্ট্রাল শীর্ষে অবস্থান করায় এক বৈঠকে এএফএর নির্বাহী কমিটি তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বছরের ‘পেশাদার লিগ চ্যাম্পিয়ন’ ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার ক্লাব ফুটবলে প্রথম ট্রফি জয়ের স্বাদ পান কিংবদন্তি আনহেল দি মারিয়া।
তবে বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে নেয়নি অনেকেই। এএফএ’ এর এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হিসেবে গার্ড অব অনারের সময় পিঠ দেখিয়ে একটি স্পষ্ট, প্রতীকী এবং শক্তিশালী বার্তা দেয় এস্তুডিয়ান্টেসের ফুটবলাররা।
অবশ্য এএফএ দাবি করেছিল, এই সিদ্ধান্তটি সব ক্লাব নির্বাহীদের সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছে, কিন্তু এস্তুডিয়ান্টেস প্রকাশ্যে অস্বীকার করেছে যে কখনো কোনো ভোট হয়নি। ম্যাচের আগে, জুয়ান সেবাস্তিয়ান ভেরন খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেন এবং মতভেদ প্রকাশের একটি উপায় প্রস্তাব করেন। দলটি এই অপ্রত্যাশিত অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে এমন প্রতিক্রিয়া জানায়, যা পুরো দেশজুড়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে।

২০২৬ বিশ্বকাপের শুরুতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর অনুপস্থিতি অনেকটা নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের ফুটবলারকে কনুই দিয়ে গুঁতো মেরে লাল কার্ড দেখেন পর্তুগিজ মহাতারকা। পর্তুগালের পরের ম্যাচে আর্মেনিয়ার বিপক্ষে নিষিদ্ধ ছিলেন রোনালদো। এ ছাড়া আরও দুটি প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক ম্যাচে নিষেধাজ্ঞার শঙ্কায় ছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত এক ম্যাচেই সীমাবদ্ধ থাকে সেই শাস্তি।
ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা দু’দিন আগে অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানায়, আয়ারল্যান্ড ম্যাচে রোনালদোর কনুই মারাকে ‘সহিংস আচরণ’ বা ‘গুরুতর ফাউল’ হিসেবে বিবেচনা করে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই তিন ম্যাচের মধ্যে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা এক বছরের জন্য পর্যবেক্ষণমূলকভাবে স্থগিত রাখা হয়।
যেকোনো ফুটবলপ্রেমীর কৌতূহলী মনে প্রশ্ন উদয় হতেই পারে, কোন নিয়মে ফিফা রোনালদোর শাস্তি স্থগিত করল। ফিফার হিংস্র আচরণ সংক্রান্ত শৃঙ্খলা কোড অনুযায়ী, রোনালদোকে এই তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত ছিল। রোনালদোর তাঁর ২২৫ ম্যাচের দীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কখনো লাল কার্ড দেখেননি। আর ঠিক এই বিষয়টিই বিবেচনায় রেখেছে ফিফার শৃঙ্খলা কমিটি।
আর্মেনিয়ার বিপক্ষে নিষিদ্ধ থেকে ইতিমধ্যেই এক ম্যাচের শাস্তি ভোগ করেছেন রোনালদো। বাকি দুই ম্যাচ শুধুমাত্র তখনই কার্যকর হবে যদি ‘সিআর সেভেন’ আগামী এক বছরের মধ্যে একই ধরনের কোনো অপরাধ করেন।
অবশ্য এরপরও মনে হতে পারে ফিফা কি রোনালদোকে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ করে দিতে কোনো বিশেষ সুবিধা দিয়েছে ? নাকি এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে? রোনালদোর শাস্তি স্থগিতের এখতিয়ার কি আছে ফিফার?
আরও পড়ুন
| ৭ মিনিটে হ্যাটট্রিক এমবাপের, দ্রুততম রেকর্ডটি কার |
|
উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। ফিফার শৃঙ্খলা কোডে এমন একটি ধারা রয়েছে যা কার্যত ফিফাকে যেকোনো নিষেধাজ্ঞা কাটছাঁট বা বাতিল করার অধিকার দেয়। ধারা ২৭ অনুযায়ী, ফিফা শৃঙ্খলাজনিত কোনো পদক্ষেপকে পূর্ণ বা আংশিকভাবে স্থগিত করতে পারে, যা এক থেকে চার বছরের জন্য স্থগিত করা সম্ভব। ধারা ২৫ বলছে, ‘প্রাসঙ্গিক ফিফা বিচারিক সংস্থা শৃঙ্খলাজনিত পদক্ষেপকে হ্রাস করতে পারে বা এমনকি সম্পূর্ণভাবে বাতিলও করতে পারে।’
এর আগে কোনও অন্য খেলোয়াড়ের জন্যও বিশ্বকাপে খেলার সুযোগে শাস্তি স্থগিত করা হয়েছে কি? রোনালদোর মতো তিন ম্যাচের শাস্তি স্থগিত রেখে আংশিকভাবে কার্যকর রাখা বিশ্বকাপে এর আগে দেখা যায়নি। তবে ফিফা অতীতে কিছু খেলোয়াড়ের শাস্তি হ্রাস করেছে বা তাদের সুবিধা দিয়েছে।
২০১৪ সালেফরাসি ডিফেন্ডার লরাঁ কসচেলনি ইউক্রেনের ওলেক্সান্ডার কুচার-কে চড় দেওয়ায় নিষিদ্ধ হন। রোনালদোর মতোই কসচেলনিকে বিশ্বকাপের শেষ বাছাইপর্বের ম্যাচে নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ফিফা সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন, শাস্তি এক ম্যাচে সীমাবদ্ধ রাখার মাধ্যমে।
এছাড়া ক্রোয়েশিয়ার মারিও মানজুকিচকে ২০১৪ বিশ্বকাপের জন্য আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্লে-অফে বরখাস্ত করা হয়। ফিফা তাকে এক ম্যাচের শাস্তি দেন, তাতে তিনি দ্বিতীয় ম্যাচে ক্যামেরুনের বিপক্ষে খেলেন এবং দুটি গোলও করেন।

সবশেষ তিন ম্যাচে জয়হীন দলকে অনেকটা একাই তো টেনে তুললেন। রিয়াল মাদ্রিদের ত্রাতা বলাই যায় কিলিয়ান এমবাপেকে। ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ হয়ে রিয়ালকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুললেন গুনে গুনে চারবার বল জালে জড়িয়ে। প্রতিপক্ষের মাঠে কঠিন পরীক্ষা স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাবটি উতরে গেল ফরাসি তারকা ফরোয়ার্ডের নৈপুণ্যেই।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গতকাল গ্রিসের ক্লাব অলিম্পিয়াকোস দারুণ লড়াই করে রিয়ালকে প্রায় ঠেকিয়ে দিয়েছিল। তবে লস ব্লাঙ্কোসদের যে আছে একজন এমবাপে। ২৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের চার গোলেই হাঁফ ছেড়ে বেচে ৪-৩ গোলে জয় পেয়েছে রিয়াল। মাত্র ৭ মিনিটেই তিনবার বল জালে জড়িয়ে এমবাপে এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দ্বিতীয় দ্রুততম হ্যাটট্রিকের মালিক।
অলিম্পিয়াকোসের মাঠে ৮ মিনিটে পিছিয়ে পড়ার পর এমবাপের তাণ্ডব শুরু হয় ২২ মিনিটে। এরপর ২৪ ও ২৯ মিনিটে দু’বার স্বাগতিকদের জাল কাপিয়ে আপাতত ঝড়ে বিরতি দেন রিয়াল মাদ্রিদের স্টাইকার।
ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্তক সংস্থা ইউয়েফার বলছে, ২০২২ সালে রেঞ্জার্সের বিপক্ষে লিভারপুলের ফরোয়ার্ড মোহামেদ সালাহর হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম রেকর্ড গড়ে। সেই রেকর্ড অক্ষত আছে এখনো। সেই ম্যাচে মিশরীয় তারকা ফরোয়ার্ড হ্যাটট্রিক করার জন্য সময় নিয়েছিলেন ছয় মিনিট ১২ সেকেন্ড।
আরও পড়ুন
| অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের ওপর ছড়ি ঘোরাল পিএসভি |
|
চার গোল করে গোল দলকে জিতিয়ে উচ্ছসিত এমবাপে বলেন, ‘আমি খুবই খুশি—গোল করা সবসময়ই আনন্দের। আমার সতীর্থরা আমাকে চমৎকার অ্যাসিস্ট দিয়েছে। আমি ভাগ্যবান যে এমন খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলছি। আমি সবসময় চেষ্টা করি গোল করার, আর কখনও তা হয়, কখনও হয় না।’
ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্যের প্রতিযোগিমায় এ নিয়ে নিয়ে পঞ্চম হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেলেন এমবোপে। চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটি তাঁর দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। এর আগে কাজাখস্তানের ক্লাব কাইরাত আলমাতির বিপক্ষে তিন গোল করেছিলেন ২৬ বছর বয়সী। এই প্রতিযোগিতায় এমবাপের দুটি হ্যাটট্রিক এসেছে পিএসজির হয়ে। চ্যাম্পিয়নস লিগে যৌথভাবে সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকের মালিক লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই দুই ফুটবলার আটটি করে হ্যাটট্রিক করেছেন। এই তালিকায় দুইয়ে থাকা রবার্ট লেভানডোভস্কি-র আছে ছয়টি।
ছন্দের তুঙ্গে থাকা এমবাপে অলিম্পিয়াকোর বিপক্ষে এই হ্যাটট্রিকে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে উঠে এলেন। ছয় ম্যাচে তাঁর মোট গোল এখন নয়টি। দুইয়ে থাকা গালাতাসারের ফরোয়ার্ড ভিক্টর ওসিমেনের গোল ছয়টি।

পিএসজিকে তাদের মাঠেই প্রায় ধরাশায়ী করার পথে ছিল টটেনহ্যাম হটস্পার। ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে দু দফা এগিয়েও যায় ইংলিশ ক্লাবটি। তাতেও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি তারা। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ভিতিনহার হ্যাটট্রিকে দারুণ এক জয়ই পেয়েছে পিএসজি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গতকাল রাতে ঘরের মাঠ পার্ক দে প্রিন্সেসে টটেনহ্যামের বিপক্ষে ৫-৩ গোলে জয় পেয়েছে পিএসজি। ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিকে প্রতিযোগিতার বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের নায়ক পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ভিতিনহা।
রোমাঞ্চকর এই জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পয়েন্ট টেবিলে দুই নম্বরে আছে পিএসজিল। পাঁচ ম্যাচে চার জয় ও এক হারে লুইস এনরিকের দলের সংগ্রহ ১২ পয়েন্ট। পাঁচ ম্যাচের সবক’টিতে জয় পাওয়া আর্সেনাল ৩ পয়েন্ট বেশি নিয়ে শীর্ষে। আর দুই জয়, দুই ড্র ও এক হারে ৮ পয়েন্ট অর্জন করা টটেনহ্যামের অবস্থান ১৬।
গত মৌসুমের ইউরোপা লিগ জয়ী বনাম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী ক্লাবের লড়াইয়ে প্রথমে এগিয়ে যায় টটেনহ্যাম। ৩৫ মিনিটে সফরকারীদের এগিয়ে নেন রিচার্লিসন। রন্দাল কোলো মুয়ানির হেড পাস পেয়ে হেড থেকেই জালে বল জড়ান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
আরও পড়ুন
| অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের ওপর ছড়ি ঘোরাল পিএসভি |
|
১০ মিনিট পর দৃষ্টিনন্দন এক গোলে পিএসজিকে সমতায় ফেরান ভিতিনহা। ডি-বক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির শটে লক্ষ্যভেদ করেন ২৫ বছর বয়সী পর্তুগিজ মিডফিল্ডার। ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয় প্রথামার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটে কোলো মুয়ানির দুর্দান্ত ভলিতে আবার এগিয়ে যায় টটেনহ্যাম। তবে এবারও লিড ধরে রাখতে পারেনি তারা। মিনিট তিনেক পরই ডি-বক্সের ঢুকে জোরাল শটে পিএসজিকে সমতায় ফেরান সেই ভিতিনহাই। পরের ১২ মিনিটে আরও দুই গোল করে ব্যবধান ৪-২ করে স্বাগতিকরা।
৫৯ মিনিটে জোয়াও নেভেসের থ্রু বল ডি-বক্সে পেয়ে জোরাল শটে দলকে এগিয়ে নেন ফাবিয়ান রুইস। আর ছয় মিনিট পর জটলার মধ্যে শটে ব্যবধান বাড়ান ইকুয়েডরের ফরোয়ার্ড উইলিয়ান পাচো।
৭৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে ভিতিনহা। ম্যাচে শেষে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক পাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমার ক্যারিয়ারে প্রথম হ্যাটট্রিক, এর আগে এক ম্যাচে দুই গোলও করিনি। তাই এটা সত্যিই বিশেষ এক অনুভূতি।’
দুইবার পিছিয়ে পড়া ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ৫-৩ গোলের জয়ে পুরো তিন পয়েন্ট আদায় করে নেয় পিএসজি। শেষ দিকে তাদের ডিফেন্ডার লুকাঁ এরনঁদেজ সরাসরি লাল কার্ড দেখলেও, তাতে ম্যাচের ফলে কোনো পরিবর্তন আসেনি।