
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ হতে ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ ঘোষণা করার প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী চলছে নানা আয়োজন। তারই একটি হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডাররেশনের ব্যবস্থাপনায় এবং সিরাজগঞ্জ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায়।
গত ৩১ জানুয়ারি 'সিরাজগঞ্জ ফুটবল উৎসব' অনুষ্ঠিত হয়। সেই ফুটবল উৎসবে যমুনার চর একাদশ ও কাওয়াকোলা চর একাদশের মধ্যে একটি প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ২-১ গোলে জয় লাভ করে যমুনার চর একাদশ।
ফাইনালের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ও সভাপতি, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি রুমানা মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জনাব সাইদূর রহমান বাচ্চু, সদস্য বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ও সাধারণ সম্পাদক, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি।
উৎসবের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন-এর কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিরাজগঞ্জ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি কামরুল হাসান হিলটন।
No posts available.
২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২২ এম

ফুটবলে লিওনেল মেসির প্রভাব নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আর্জেন্টাইন মহাতারকার পা যেখানেই পড়েছে সোনা ফলেছে সেখানেই। এই যেমন এমএলএস (মেজর লিগ সকার) আর ইন্টার মায়ামির কথাই ধরুন, ফুটবল বিশ্বে কজনই আর এই লিগ কিংবা ক্লাবটির খোঁজ-খবর নিত ? মেসির আগমনেই তো যত প্রচার-প্রসার হয়েছে এই লিগ আর ক্লাবের।
এমএলএসকে বিশ্বফুটবলে নতুন করে চেনানোর জন্য তো তেমন পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন মেসি। ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর শুধু ক্লাব নয় লিগটিরও সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া খেলোয়াড় ছিলেন মেসিই। তবে সব হিসেব নিকেশ বদলে দিলেন টটেনহ্যামের সাবেক ফুটবলার সন হিউং-মিন।
লস অ্যাঞ্জেলেস এফসির ফরোয়ার্ড সন এখন এমএলএসের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত খেলোয়াড়। বেতনে মায়ামির মহাতারকা মেসিকেও পেছনে ফেলেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার এই ফুটবলার।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘গিভমি স্পোর্টস’ জানিয়েছে, ‘আমরা ২০২৫ মৌসুমের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) সর্বাধিক পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত ২১ জন খেলোয়াড়ের তালিকা প্রকাশ করছি। তালিকায় সন হিউং-মিন প্রথম, আর মেসি দ্বিতীয়।’
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী সন হিউং-মিনের বার্ষিক বেতন আনুমানিক ৯.৫ মিলিয়ন পাউন্ড। যেখানে মায়ামি থেকে মেসি পান ৮.৮ মিলিয়ন পাউন্ড। এমএলএসের ইতিহাসেই সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া ফুটবলার এখন সন।
অবশ্য বড় অঙ্কের এই বেতন তো এমনি এমনি নিচ্ছেন না সন। টটেনহ্যামের সাবেক তারকা পারফরম্যান্সে কড়ায়-গণ্ডায় সব শোধই করে দিচ্ছেন। এলএএফসিতে যোগ দেওয়ার পর মাত্র ১০টি ম্যাচ খেলেই তিনি ৯ গোল ও ২টি অ্যাসিস্ট করেছেন। পয়েন্ট টেবিলে ওস্টার্ন কনফারেন্স শীর্ষে থেকে শেষ করেছে তার ক্লাবও।
মাঠের বাইরে তাঁর প্রভাব আরও ব্যাপক। সন হিউং-মিনের জার্সির চাহিদাও ব্যাপক। বাজারে আসার পরই বিশ্বব্যাপী ক্রীড়া পোশাক বিক্রিতে এক নম্বরে উঠে এসেছে সনের জার্সি। লস অ্যাঞ্জেলেস এফসিতে সন যোগ দেওয়ার পর ক্লাবটির অফিসিয়াল সামাজিক মাধ্যম অনুসারীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
যদিও বেতনে মেসিকে ছাড়িয়ে গেলেও রেকর্ড আটবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মহাতারকাই যে এমএলএস–এর প্রতীকী ব্যক্তিত্ব। মাঠের পারফরম্যান্স তো আছেই। ইন্টার মায়ামির হয়ে এই আসরে ২৮ ম্যাচে ২৯ গোলের পাশাপাশি ১৭টি অ্যাসিস্ট করেছেন ৩৮ বছর বয়সী ফুটবলার। সবশেষ আজও এমএলএসের প্লে–অফে ন্যাশভিলের বিপক্ষে জোড়া গোল করেছেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি।

শুক্রবার রাতে আরও একটি পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেড। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এবার তারা ১-২ গোলে হেরেছে লিডস ইউনাইটেডের কাছে। তাতে নতুন মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে শোচনীয় হারের ধারা অব্যহত রাখল পূর্ব লন্ডনের ক্লাবটি।
প্রিমিয়ার লিগের এই সপ্তাহে শুরু হয়েছে নবম রাউন্ডের খেলা। শুক্রবার রাতের আরেকটি হারে ৯ খেলায় ৭ ম্যাচেই পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়ে ওয়েস্টহ্যাম। বাকি দুই ম্যাচের একটিতে জয়, অন্যটিতে হার। ৩০ সেপ্টেম্বর এভারটনের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর টানা তিন ম্যাচে হার দেখল দ্য হ্যামার্সরা।
তিনটি পরাজয়ই এসেছে ওয়েস্টহ্যামের নতুন কোচ নুনো এস্পিরিটো সান্তোর সময়ে। গত সেপ্টেম্বরে গ্রাহাম পর্টারের বদলি হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয় ক্লাবটি।
এই মুহূর্তে লিগের রেলিগেশন অঞ্চলে আছে ওয়েস্টহ্যাম। চার পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান ১৯-এ। নিচে আছে কেবল উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্স। উপরে নটিংহ্যাম ফরেস্ট। লিগে হ্যামার্সদের একমাত্র জয়টি আবার সেই নটিংহ্যামের বিপক্ষেই। মজার ব্যাপার হল ৩১ আগস্টের সেই ম্যাচে নটিংহ্যামের ডাগআউটে ছিলেন ওয়েস্টহ্যামের নুনো সান্তো।
লিগের প্রথম ৯ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে এত বাজে শুরু সর্বশেষ ৫২ বছর আগে করেছিল ওয়েস্টহ্যাম। এর আগের দুটি ঘটনা দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল স্তরে। একটি ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে, অন্যটি ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে। এবার প্রিমিয়ার লিগে সেই হতাশাজনক অধ্যায় যেন টেনে আনল আগের মৌসুমে টেবিলের ১৪ নম্বরে থেকে লিগ শেষ করা ক্লাবটি।
সর্বশেষ ২০১১-১২ মৌসুমের মতো ইংল্যান্ডের টপ লিগ থেকে যাতে ওয়েস্টহ্যামের অবনমন না হয় সেজন্যই নুনো সান্তোর সঙ্গে সাইন করে ক্লাবটির নীতি-নির্ধারকেরা। তবে জয়ে ফেরার পথ এখনও খুজে পাননি এভারটনের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পয়েন্ট নিয়ে শুরু করা পর্তুগিজ কোচ,
‘দুর্ভাগ্যবশত আমাদের ক্লাবে অনেক সমস্যা রয়েছে। তবে সমস্যার আড়ালে লুকিয়ে থাকা আমাদের কাজ নয়। সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আরও অনেক কিছু করতে হবে এবং সঠিক অবস্থানে থাকতে হবে।’
শুক্রবার রাতে লিডসের বিপক্ষে হারের পর আরও একটি অপ্রত্যাশিত রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন নুনো সান্তো। ২০১৮ সালের পর ওয়েস্টহ্যামের কোচ হিসেবে শুরুর ৪ ম্যাচে জয় না পাওয়া প্রথম কোচ তিনি। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ম্যানুয়েল পেলেগিরিনির সময়ে প্রথম টানা ৪ ম্যাচ জয়হীন থেকেছিল হ্যামার্সরা।
অধরা জয় পেতে ওয়েস্টহ্যামের নতুন কোচ বার্তা দিয়েছেন,
‘জয়ের জন্য আমাদের সেই পর্যায়ের মান আছে। হাতে সময় আছে, তবে কোনো কিছুই পরিবর্তন হবে না, যদি না আমরা পরিবর্তন হই। অবশ্যই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে। খেলার মাঠে অ্যাপ্রোচ ঠিক করতে হবে। যা ঘটছে সব কিছুই আমাদের জন্য কঠিন বাস্তবতা, এটি আমাদের স্বীকার করতে হবে এবং আবারও বলি কোনো কিছু নিজে থেকে বদলাবে না।’
কোচের কথা মেনে মাঠের জয়ই এখন চাওয়া লুকাস পাকেতা, ফ্যাবিয়ানস্কি ও জ্যারোড বোয়েনদের। আগামী রোববার রাতে অধরা জয় কি আসবে? পয়েন্ট টেবিলের ১৫-তে থাকা নিউক্যাসল ইউনাইটেডকে সেদিন মোকাবিলা করবে নুনো সান্তোর দল।

এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের গ্রুপ পর্বের খেলায় আজ মাঠে নামছে বসুন্ধরা কিংস। ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ওমানের লিগ চ্যাম্পিয়ন আল সিব। কুয়েতের আল সাবাহ স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায়।
সিরিয়ান ক্লাব আল কারামাহকে ইমানুয়েল সানডের একমাত্র গোলে হারিয়ে গ্রুপ পর্বে ওঠে বসুন্ধরা কিংস। ঘরোয়া ফুটবল মৌসুম শুরুর আগেই হয় এএফসির চ্যালেঞ্জ লিগের প্রিলিমিনারি রাউন্ডের খেলা। এরপর বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ কাপে মোহামেডানকে ৪-১ গোলে হারায় পাঁচবারের লিগ চ্যাম্পিয়নরা। এবার লক্ষ্যটা চ্যালেঞ্জ লিগের গ্রুপ পর্বের বাধা টপকানো।
কেননা এএফসিতে অতীত ইতিহাস সুখকর নয় বসুন্ধরা কিংসের। আগেরবার গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের সবকটিতে হেরে বিদায় নেয় বাংলাদেশের জায়ান্ট ক্লাবটি। কুয়েতে এবার জয় দিয়ে শুরু করতে চায় বসুন্ধরা কিংস। দলটির কোচ মারিও গোমেজ গতকাল ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন,
‘প্রথম ম্যাচটি আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজিদের শতভাগ ঢেলে লড়াই করব, জয়ের জন্যই মাঠে নামব।’
প্রথম ম্যাচ যে কোনো টুর্নামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ। চার দলের গ্রুপ থেকে সরাসরি পয়েন্টের ভিত্তিতে সেরা দলটি যাবে পরের রাউন্ডে। গ্রুপ রানার্সআপ হলেও থাকবে পরের রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ। পাঁচ গ্রুপকে আবার দুটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের তিন গ্রুপ থেকে একটি সেরা রানার্সআপ দল পাবে সেই সুযোগ। বাংলাদেশের ক্লাবটি পড়েছে পশ্চিমাঞ্চল অঞ্চলে। তবে পূর্বাঞ্চলের দুই গ্রুপ সেরা চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দল; এখান থেকে মোট ৪ দল কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে সেখান থেকে।
ওমানের ক্লাবকে হারিয়ে গ্রুপ পর্বে শুভ সূচনা করতে চায় বসুন্ধরা কিংস। দলটির অধিনায়ক তপু বর্মণ বলেন,
‘আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি এই টুর্নামেন্ট এবং সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিযোগিতা সামনে রেখে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা কালকের (আজ) ম্যাচে জয়ের জন্য মাঠে নামব।’
প্রতিপক্ষ আল সিবকে হারানো বসুন্ধরা কিংসের জন্য মোটেও সহজ হবে না। নিজেদের ঘরোয়া লিগে দারুণ ছন্দে আছে ক্লাবটি। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত তারা ৪টি ম্যাচ খেলেছে; ৩ জয়ের সঙ্গে এক ম্যাচে ড্রয়ের সুবাদে ১০ পয়েন্ট তাদের। তারপরও বাংলাদেশের ক্লাবটিকে সমীহ করেছেন সিবের কোচ নিকোলা দুরভিচ,
‘ম্যাচটি সহজ হবে না। আমরা তিন পয়েন্টের জন্য মাঠে নামব। প্রতিটি ম্যাচে আলাদাভাবে মনোযোগ দিচ্ছি এবং টুর্নামেন্টে ধাপে ধাপে এগুতে চাই।’
গ্রুপ পর্বের পরের ম্যাচে ২৮ অক্টোবর লেবাননের আল আনসার এবং ৩১ অক্টোবর স্বাগতিক দেশের ক্লাব আল কুয়েতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল লিগের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।

ঠিক এক সপ্তাহ আগে ন্যাশভিল এসসির বিপক্ষে হ্যাটট্রিক ও এক অ্যাসিস্ট করে সুখবর পান লিওনেল মেসি; নিশ্চিত করেন মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) সর্বোচ্চ গোল এবং গোল্ডেন বুটের পুরস্কার। একই সঙ্গে ইন্টার মায়ামির হয়ে মেজর লিগ সকারে প্রথম কোনো ফুটবলার হিসেবে জেতেন গোল্ডেন বুট। এক সপ্তাহ পরে সেই ন্যাশভিলের বিপক্ষে আরও একবার মাঠে নেমে আলো ছড়ালেন বিশ্বকাপজয়ী এই আর্জেন্টাইন।
শনিবার ভোরে মেজর লিগ সকারের প্লে-অফ ম্যাচে নিজেদের হোম ম্যাচে ন্যাশভিলেকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়েছে ইন্টার মায়ামি। ১৯ মিনিটে দলের লিড এনে দেন মেসি। ৬২ মিনিটে সেটি দ্বিগুণ করেন মেসিরই স্বদেশী তাদেয় আলেন্দে। ইনজুরি সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে আরও একবার প্রতিপক্ষের জাল কাঁপান মেসি। যোগ করা সময়ের ১১ মিনিটের মাথায় ন্যাশভিলের জার্মান স্ট্রাইকার হ্যান মুখতার এক গোল পরিশোধ করলে কেবল ব্যবধানই কমিয়েছে।
এই জয়ের আগে বৃহস্পতিবার ক্লাবের সঙ্গে আরও তিন বছর চুক্তি নবায়ন করেন মেসি। ৩৮ বছর বয়সি এই ফুটবল জাদুকরের সঙ্গে কেন ইন্টার মায়ামি চুক্তি বাড়ালো তার প্রমাণ পরের ম্যাচেই দিলেন। গোল্ডেন বুট পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে সেদিন এমএলএসের কমিশনার ডন গার্বার মেসিকে নিয়ে বলেন,
‘আমার মনে হয় এটা আমরা কল্পনাও করিনি- মেসি যা করছে তার ক্লাবের জন্য, এই শহরের জন্য এবং এই লিগের জন্য… সে (মেসি) যেভাবে পারফর্ম করছে সেটি অবিশ্বাস্য। আপনি জানেন সে মেজর লিগ সকারের গতিপথই পরিবর্তন করে দিয়েছে। সে এখানে আরও তিন বছর থাকছে, এটি আমাদের জন্য আরেকটি উপহার।’
নিজেকে নিয়ে ডন গার্বারের কাছ থেকে অমন প্রশংসা শোনার পরের দিনই জোড়া গোল উপহার দিলেন মেসি। মৌসুমে মোট ২৯ গোল করেছেন। গোল ও অ্যাসিস্ট মিলিয়ে সংখ্যাটি ৪৮। মেজর লিগে এক মৌসুমে এর আগে ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ৪৯ গোলে অবদান আছে কার্লস ভিলার। আর এক গোল কিংবা গোলে সহায়তা করলেই মেক্সিকান ফুটবলারের রেকর্ড ছুয়ে ফেলবেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার মেসি।
লিখতে বসলেন, আইডিয়া সব হাওয়াই মিঠাই—চুপসে গেল, এ ও ভাবতে গিয়ে মিলিয়ে গেল। আর্টিকেল জমা দেওয়ার শেষ সময় আজই, অথচ কিচ্ছুটি লেখা হয়নি আপনার। সাংবাদিকতায় ‘রাইটার্স ব্লক’-এর কুৎসিত রোষানলে যাঁরা পড়েছেন বা পড়েন, তাঁরা জানেন—বোঝেন কত ধানে কত চাল।
ক্রীড়ায় নিয়তি বোঝা আরও কঠিন—আজ ফর্মে তো কাল বেঞ্চে। লেখার জীবনের চেয়েও ক্রীড়ার জগৎ অনেক বেশি নির্মম। গত বছরের সর্বোচ্চ স্কোরার, অথচ নতুন মৌসুমে ডালপালা গজানোর বদলে আপনি যেন হতচ্ছাড়া পুরোনো পাতা। যা কেবল পথিকের বিরক্তিই বাড়ায়। গ্রীষ্ম শেষে যখন নতুন ফুল-কলি ফুটে ওঠে, তখন কারই বা পছন্দ পড়ে থাকা পুরোনো ডাল-পাতায়!
মোহাম্মদ সালাহ কি নতুন মৌসুমেও লিভারপুলের পুরোনো পাতা নন? হলে মন্দ হতো না। ২০২৪–২৫ মৌসুমে অ্যানফিল্ডের রক্ত লাল জার্সিতে ২৯টি গোল ও ১৮টি অ্যাসিস্টের দেখা পেয়েছিলেন মিশরীয় ফরোয়ার্ড। কিন্তু ২০২৫–২৬ মৌসুমে কিনা ‘গোল ড্রায়’-এ ভুগছেন তিনি।
নতুন মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সালাহর গোল মাত্র তিনটি। তার দলও চরম হ্যাপিত্যেশে। অথচ আক্রমণভাগ শক্ত করতে গ্রীষ্মের দলবদলে প্রায় ৪১৯ মিলিয়ন পাউন্ড খরচা হয়েছে লিভারপুলের। সালাহর পাশে যুক্ত করা হয়েছে হুগো একিতিকে, আলেক্সান্ডার ইসাক ও ফ্লোরিয়ান ভির্টজের মতো তারকাদের। তারপরও শিরোপার দৌড়ে বেশ পিছিয়ে গত মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নরা।
সবশেষে অবশ্য আইন্ট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে বড় জয়ে সম্মান রক্ষা করেছে লিভারপুল। তা না হলে ৭২ বছর আগের এক লজ্জার সামনে পড়তে হতো অল রেডসদের। এক মৌসুমে টানা পঞ্চম হার এড়ানোর সেই ম্যাচে শুরুর একাদশে ছিলেন না ৩৩ বর্ষী সালাহ—গত মৌসুমের রাজা, এই মৌসুমে কিনা বদলি!
সালাহর এমন ‘গোল ড্রায়’ নিয়ে চিন্তিত অনেকেই। লিভারপুলের ব্যর্থতার দায়ভারও অনেক সময় তার ওপরই চাপানো হচ্ছে। যদিও দুঃসময়ে পাশে পেয়েছেন কোচ আর্নে স্লট। কোচ বলেছেন,
“সে সব সময় লিভারপুলের হয়ে গোল করে।”
লিভারপুলের ডাচ ম্যানেজার আশাবাদী—নিজেকে আবারও জাগিয়ে তুলবেন তার ছাত্র,
“যে জিনিস নিয়ে আমি চিন্তিত, সেটা হলো মোহাম্মদ সালাহ আবার গোল করবেন কি না। তিনি তার পুরো জীবনজুড়েই গোল করেছেন, এবং আমি আশা করি আগামী সপ্তাহ ও মাসগুলোতে তিনি আবারও তা করবেন।”
২০১৭ সালে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর এটিই মোহাম্মদ সালাহর সবচেয়ে দীর্ঘ গোলখরা। স্লট বলেছেন,
“সাধারণভাবে ফুটবলে খেলোয়াড়রা সুযোগ নষ্ট করেই থাকে—সেও মানুষ। আমরা কেবল অভ্যস্ত নই তাকে এত সুযোগ মিস করতে দেখতে।”
সালাহ পারছেন না, সালাহকে দিয়ে হচ্ছে না—এই নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কেন, কী কারণে—এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিয়েছেন ৪৭ বছর বয়সী কোচ স্লট।
তার মতে, গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে নতুন খেলোয়াড় আসা এবং ডানপাশের ডিফেন্ডার ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ডের রিয়াল মাদ্রিদে চলে যাওয়া—এই দুই বিষয়ই সালাহর তুলনামূলক ধীর শুরুর পেছনের কারণ।
স্লট বলেছেন,
“এটা একটা কারণ হতে পারে (আর্নল্ডের অনুপস্থিতি), কারণ সালাহ তার পুরো লিভারপুল ক্যারিয়ারে তার সঙ্গে খেলেছে। তবে সালাহ গোল করার মতো অনেক ভালো অবস্থানে থেকেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।”
তিনি আরও যোগ করেছেন,
“গ্রীষ্মে দলে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে, ফলে সবার নতুন করে পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়া তৈরি করতে হচ্ছে। হয়তো এর সঙ্গেও সালাহর পারফরম্যান্সের সম্পর্ক আছে।”
গত মৌসুমের একই পর্যায়ে সালাহর নামের পাশে ছিল ৭টি গোল ও ৭টি অ্যাসিস্ট। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত তার রয়েছে মাত্র ৩টি গোল ও ৩টি অ্যাসিস্ট। গত মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগের গোল্ডেন বুটজয়ী এই খেলোয়াড় এখন ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ডের চেয়ে আট গোল পিছিয়ে।
তবে ‘রাইটার্স ব্লক’ কাটিয়ে পাওলো কোয়েলহো, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে কিংবা হুমায়ূন আহমেদ যেমন লিখেছেন কালজয়ী সব লেখা, ঠিক তেমনি ‘গোল ড্রায়’ কাটিয়ে নিশ্চিত গোলবন্যা বয়ে দেবেন মিশরীয় তারকা মোহাম্মদ সালাহ!