
হার-জয়-ড্র। কার্লো আনচেলোত্তির কোচিংয়ে বদলে যাওয়ার আভাস দিয়েও ধারাবাহিক হতে পারছে না ব্রাজিল। জাপানের বিপক্ষে হারের পর সেনেগালের বিপক্ষে দারুণ জয়, এরপর তিউনিসিয়ার বিপক্ষে হোঁচট খেল সেলেসাওরা।
ফ্রান্সের লিলেতে গতকাল রাতে তিউনিসিয়ার বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছে ব্রাজিল। ম্যাচে পিছিয়ে পড়ার পর জোড়া পেনাল্টি পেয়েও জয় বঞ্চিত হলো ব্রাজিল। দক্ষিণ আমেরিকার জায়ান্টদের তরুণ তারকা এস্তেভাও স্পট কিক থেকে দলকে সমতায় ফেরালেও, পেনাল্টি থেকে জয়সূচক গোল করতে ব্যর্থ হন লুকাস পাকেতা।
শুরু থেকে আক্রমণ ও বল দখলে এগিয়ে ছিল ব্রাজিলই। পুরো ম্যাচে ৭৪ শতাংশ বল নিজেদের কাছে রেখেছে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র-রদ্রিগোরা। তবে ২২টি শট নিয়ে মাত্র তিনটি লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে তারা। ধারহীন আক্রমণ আর সমন্বয়ের অভাব ছিল স্পষ্ট।
একটু পরপর আক্রমণে উঠেও সুবিধা করতে পারছিল না ব্রাজিল। আর সেই সুযোগে দারুণ এক প্রতি-আক্রমণ থেকে ব্রাজিলকে চমকে দেয় তিউনিসিয়া। ম্যাচের ২৩ মিনিটে আফ্রিকার দেশটিকে এগিয়ে দেন হাজেম মাসতৌরি।
পিছিয়ে পড়ার পর আক্রমণের বেগ বাড়ায় ব্রাজিল। ৩৮ মিনিটে রদ্রিগো প্রায় গোল পেয়েই যাচ্ছিলেন। রিয়াল মাদ্রিদ তারকার দারুণ একটি ফ্রি কিক অসাধারণ নৈপুণ্যে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলকিপার।
বিরতির আগে সমতায় ফেরে আনচেলত্তির দল। তিউনিসিয়ার ডি-বক্সে তাদের ডিফেন্ডার ব্রুনের হাতে বল লাগলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টি দেন রেফারি। ৪৪তম মিনিটে স্পট কিকে গোলটি করেন দারুণ ছন্দে থাকা এস্তেভাও। এটি ব্রাজিলের জার্সিতে চার ম্যাচে চেলসি ফরোয়ার্ডের চতুর্থ গোল।
বিরতির পরও তিউনিসিয়ার রক্ষণভাগের উপর চাপ ধরে রাখেন ব্রাজিল। তবে গোলটাই শুধু আদায় করে নিতে পারছিল না পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। মাঝে বিপদ হয়ে আসে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওয়ের চোট।
৭৬ মিনিটে ডি-বক্সে ভিতো হকে ফাউলের শিকার হলে আবার পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। কিন্তু উড়িয়ে মেরে দলকে লিড এনে দিতে ব্যর্থ হন পাকেতা। শেষ পর্যন্ত আর জয়সূচক গোলের দেখা পায়নি ব্রাজিল।
No posts available.
১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২৯ এম
১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৭ এম

নিজেদের মাঠে খেলার অনুভূতি এতদিনে ভুলে বসার কথা তাদের। ঘরের মাঠে সবশেষ ২০২১ সালে খেলার স্বাদ পাওয়া দেশটি নিরপেক্ষ ভেন্যুতেই খেলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে স্বপ্ন ছুঁতে কোনো অজুহাতের ধার ধারেনি তারা। বিদেশের মাটিতে খেলেই দীর্ঘ ৫২ বছর পর বিশ্বকাপে উঠল হাইতি।
কুরাসাও এর স্টেডিওন এরজিলো হাতোতে আজ হন্ডুরাসের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে বিশ্বকাপের টিকিট কাটে হাইতি। ১৯৭৪ সালের পর প্রথমবারের মতো ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ নামের টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশটি। হাইতির হয়ে গোল করেন রুবেন প্রভিডেন্স এবং লুইসিয়াস ডিডসন।
কনক্যাকাফ অঞ্চলে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে গ্রুপ ‘সি’ থেকে ছয় ম্যাচে ৩ জয়, ২ ড্র ও এক হারে ১১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে শেষ করেছে হাইতি। পয়েন্ট তালিকার দুই নম্বরে থাকা হন্ডুরাস দুই পয়েন্ট কম নিয়ে দুই নম্বরে অবস্থান করছে।
গ্যাং সহিংসতা ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ক্ষতিগ্রস্ত এই ফুটবলপ্রিয় দেশ হাইতি। গ্যাং সহিংসতায় অনিরাপদ এক দেশ হয়ে উঠেছে উত্তর আমেরিকার দেশটি। তাতে ঘরের মাঠের সব ম্যাচই তাদের খেলতে হয়েছে নিরপেক্ষ কোনো ভেন্যুতে। তবে ফুটবলকে হৃদয়ে ধারণ করেসব প্রতিকূলতাকে শেষ পর্যন্ত জয় করেছে হাইতি।
হাইতির ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ড. জোসেফ ডুরানডিস ঐতিহাসিক দিনে মাঠেই উপস্থিত ছিলেন। তাঁর চোখে মুখে তখন অবিশ্বাসের ছাপ,
‘বায়ান্ন বছর! আমরা ফিরে এসেছি। আপনি কি বিশ্বাস করতে পারেন? কঠিন দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া একটি দেশ, আমরা বিশ্ব মঞ্চে ফিরে আসার শক্তি খুঁজে পেয়েছি… সব প্রতিকূলতার পর, হাইতি আবারও বিশ্বকাপের মঞ্চে।’
ঠিক একদিন আগেই ছিল হাইতির স্বাধীনতা দিবস। সেই ঐতিহাসিক তাৎপর্যও স্মরণ করিয়ে ডুরাসডিস বলেন,
‘নভেম্বর ১৮, ভার্টিয়ার্স যুদ্ধের ২২০ বছর পরে, হাইতি ফিরে এসেছে। আমরা আরেকটি যুদ্ধ জিতেছি, এবার ফুটবল মাঠে… এই দেশ মরতে পারে না, এই দেশ কখনো মরতে পারবে না। হাইতি ফিরে এসেছে!’
হাইতির গ্রুপে ছিল শক্তিশালি সব দল। তবে ‘লেস গ্রেনেডিয়াররা’ পরোয়া করেননি। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালিস্ট কোস্টারিকা, বিশ্বকাপে তিনবারের অংশগ্রহণকারী হন্ডুরাস, এবং দারুণ ফুটবল খেলা নিকারাগুয়েকে পেছনে ফেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হাইতি।

বিশ্বকাপে দল সংখ্যা বাড়ার বদৌলতেই কিনা একের পর এক ইতিহাসের স্বাক্ষী হচ্ছে ফুটবলবিশ্ব। কদিন আগেই জনসংখ্যার হিসাবে দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের টিকিট কেটেছে কেপ ভার্দে। এবার ৪৮ দলের বিশ্বকাপে ইতিহাস লিখল কুরাসাও। বিশ্বের সবচেয়ে ছোটো দেশ হিসেবে বিশ্বসেরার মঞ্চে দেখা যাবে উত্তর আমেরিকার এই দেশকে।
গত শুক্রবার রাতে হ্যামিল্টনে বারমুডাকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপে এক পা দিয়েই রেখেছিল কুরাসাও। আজ জ্যামাইকার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে পৌঁছে যায় কনক্যাকাফ অঞ্চলের দেশটি।
কুরাসাওয়ের জনসংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৫৬ হাজার এবং আয়তন মাত্র ৪৪৪ বর্গকিলোমিটার। এর আগে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে ছোট দেশের স্বীকৃতি নিজেদের করে নিয়েছিল কেপ ভার্দে (৪০০০ বর্গকিলোমিটার)।
কনক্যাকাফ অঞ্চলে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে গ্রুপ ‘এইচ’ থেকে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে শেষ করেছে কুরাসাও। ছয় ম্যাচে ৩ জয় ও ৩ ড্রয়ে ১২ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে তারা। দুই নম্বরে থাকা জ্যামাকার পয়েন্ট ১১।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কুরাসাও প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোর বিপক্ষে। ম্যাচটি ছিল গোলশূন্য ড্র। দ্বিতীয় ম্যাচে তারা বারমুডার বিপক্ষে ৩-২ এবং তৃতীয় ম্যাচে জ্যামাইকার বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জয় পায়।
চতুর্থ ম্যাচে ২-২ গোলে ড্র করে কুরাসাও। এরপর বারমুডাকে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করার পর জ্যামাইকার বিপক্ষে ড্রয়ে স্বপ্ন স্পর্শ করে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশটি।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার ঠিক উত্তরে, ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত কুরাসাও। অবশ্য ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণ আমেরিকার পাশে হলেও তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কনক্যাকাফ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে। দেশটি মূলত দুটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। একটি হলো কুরাসাও মূল দ্বীপ এবং অন্যটি জনবসতিহীন ‘লিটল কুরাসাও’।
কুরাসাওকে বিশ্বকাপে পৌঁছে দেওয়ার প্রধান দুই নায়ক কোচ ডিক অ্যাডভোকাট ও ফরোয়ার্ড জেরভেন কাস্টনিয়ার। এর আগে নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম রেঞ্জার্স ও সান্ডারল্যান্ডের মতো ক্লাবের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন কোচ অ্যাডভোকেট। আর ২৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড বাছাইপর্বের পাঁচটি ম্যাচে ৫ গোল করেছেন।

সবশেষ যখন স্কটল্যান্ড বিশ্বকাপ খেলেছে, দলের বর্তমান ফুটবলারদের অধিকাংশের জন্মই হয়নি তখন। ১৯৯৮ সালের পর আবারও বিশ্বসেরার মঞ্চে জায়গা করে নিল তারা। ঐতিহাসিক এক রাতে ডেনামার্ককে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট কাটল স্কটিশরা।
নিজেদের মাঠ হ্যাম্পডন পার্কে গতকাল রাতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ডেনমার্ককে ৪-২ গোলে হারিয়েছে স্কটল্যান্ড। উত্থান-পতনের ম্যাচে ড্র করলেই সরাসরি বিশ্বকাপের টিকিট কাটল ডেনমার্ক। নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে সমতাও ছিল। তবে যোগ করা সময়ে দুই গোল করে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপে ফেরার আনন্দে ভাসে স্কটল্যান্ড।
গ্রুপ ‘সি’ থেকে ছয় ম্যাচে ৪ জয়, এক ড্র ও এক হারে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপসেরা স্কটল্যান্ড। আর ১১ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে থেকে বিশ্বকাপের প্লে-অফ খেলবে ডেনামার্ক।
স্কটল্যান্ড শেষবার ১৯৯৮ সালের ফ্রান্স বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল। ব্রাজিল ও মরক্কোর কাছে হেরে এবং নরওয়ের বিপক্ষে ড্র করে তারা গ্রুপ পর্বেই ছিটকে যায়। এর পরে টানা দুই দশক বড় টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে থাকার ইতিহাস—একটানা ছয় বিশ্বকাপ ও পাঁচ ইউরোতে দর্শক হয়ে থাকা।
স্টিভ ক্লার্কের অধীনে স্কটল্যান্ড ইউরো ২০২০-এ ফেরে। এরপর ইউরোপ সেরার সবশেষ আসরে যোগ্যতা অর্জন করে। এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তারা ডেনমার্কের সঙ্গে ড্র, বেলারুশের বিপক্ষে দুই জয়, এবং গ্রিসের বিপক্ষে একটি জয় তুলে নেয়। যদিও গত সপ্তায় গ্রীসের কাছে ৩-২ গোলে হারে ক্লার্কের দল। তবে স্বপ্ন বেঁচে ছিল তখনও। ডেনমার্ককে হারালেই সরাসরি কোয়ালিফাই করার সুযোগ আসে। আর শেষ পর্যন্ত সেই সুযোগটাই কাজে লাগায় স্কটল্যান্ড।
ম্যাচে অবশ্য গোল ছাড়া ম্যাচের সব পরিসংখ্যানেই স্কটল্যান্ড থেকে এগিয়ে ছিল ডেনমার্ক। ৬৩ শতাংশ বল দখলে রেখে ২০টি শট নিয়ে চারটি গোলমুখে রেখেছে ডেনিশরা। তবে লক্ষ্যে মাত্র পাঁচটি শট নিয়ে চারবারই সফল হয় স্বাগতিক স্কটল্যান্ড।
ম্যাচের তিন মিনিটেই অসাধারণ এক মুহূর্তের জন্ম দেন স্কট ম্যাকটমিনে। নাপোলির এই ফরোয়ার্ড দুর্দান্ত বাইসাইকেল কিকে স্কটল্যান্ডকে এগিয়ে নেন। পিছিয়ে পড়ে প্রথামার্ধে ১০টি শট নেয় ডেনমার্ক, তবে কাঙ্খিত ফল মেলেনি।
বিরতির পর ডেনমার্ক সমতায় ফেরে রাসমুস হয়লুন্দের পেনাল্টি থেকে। নাপোলিতে ধারে খেলা এই ফরোয়ার্ড ৫৭ মিনিটে স্পট কিক থেকে গোল করে ব্যবধান ১-১ করেন। ৭৮ মিনিটে আবার এগিয়ে যায় স্কটল্যান্ড। বদলি নামা লরেন্স শাঙ্কলান্ডের সেই গোলের চার মিনিট পরই ফের সমতায় ফিরে ডেনমার্ক। সফরকারীদের হয়ে গোল করেন প্যাট্রিক ডর্গু।
প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে মাত্র এক পয়েন্ট পেলেই চলত ডেনমার্কের। তবে তিন দশক পর বিশ্বকাপে ফেরার স্বপ্নে বুদ হয়ে থাকা স্কটিশরা জয় নিয়েই যেন মাঠ ছাড়ার শপথ করে। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শটে স্কটল্যান্ডকে আবার এগিয়ে নেন কিয়েরান টিয়েরনি। মিনিট পাঁচেক পর ম্যাকলিনের দৃষ্টিনন্দন গোলে ডেনমার্কের ফেরার পথ শেষ হয়। আর উল্লাসে ফেটে পড়ে স্কটল্যান্ডের খেলোয়াড়রা।
ম্যাচ শেষে উচ্ছসিত স্কটল্যান্ডের অধিনায়ক অ্যান্ডি রবার্টসন বিবিসিকে বলেন, ‘এটা আমার জীবনের সেরা রাতগুলোর একটি হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা দেশের মানুষকে ভীষণ উদ্বেগে রেখেছিলাম, কিন্তু এটা সার্থক হয়েছে। আমরা বিশ্বকাপে যাচ্ছি।’
সমর্থকদের উচ্ছাসও ছিল বাঁধভাঙা। হ্যাম্পডেন পার্কের বাইরে চিৎকার করে গল বসে যাওয়া এক সমর্থক বলেন, ‘এটা আমার জীবনের সবকিছু। আমি মাত্র সাত বছর বয়সে শেষবার আমরা বিশ্বকাপে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয় আর তৃতীয় গোলটা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম, কিন্তু চতুর্থটা না! অবিশ্বাস্য ছিল।’
এদিন গ্রুপ সেরা হয়ে সরাসরি বিশ্বকাপের টিকেট পেয়েছে আরও চারটি দল- স্পেন, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড। তুরস্কের বিপক্ষে ২-২ ড্র করে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘ই’ গ্রুপের সেরা হয়ে লক্ষ্য পূরণ করেছে স্পেন। ১৩ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ হওয়া তুরস্ক খেলবে প্লে-অফে।
লিখটেনস্টাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে, ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ‘জে’ গ্রুপের সেরা হয়েছে বেলজিয়াম। নর্থ মেসিডোনিয়াকে ৭-১ গোলে হারিয়ে এই গ্রুপের রানার্সআপ ওয়েলস, ১৬ পয়েন্ট। এছাড়া ১৯ পয়েন্ট নিয়ে ‘এইচ’ গ্রুপের সেরা হয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের জায়গা পোক্ত করেছে অস্ট্রিয়া।
কসোভোর সঙ্গে ১-১ ড্র করে, ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপের সেরা হয়েছে সুইজারল্যান্ড। ১১ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ কসোভো। ইউরোপ অঞ্চলের বাছাইয়ে প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দল সরাসরি ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকেট পেয়েছে। রানার্সআপ হওয়া দলগুলো খেলবে প্লে-অফে।

ম্যাচ শেষ হয়েছে প্রায় আধা ঘণ্টা আগে। বাংলাদেশ জাতীয় স্টেডিয়ামের আকাশ তখনও উৎসবের রঙে রঙিন। বাতাসে পটকা-আতশির গন্ধ, দূর থেকে থেমে থেমে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ স্লোগান। সবাই খুশি মনে বাড়ি ফিরছে। এই আনন্দ যেন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতোই। মুহূর্তেই ৫৭ হাজার বর্গমাইলে ছড়িয়ে পড়ার যোগাড়।
হামজা চৌধুরী-জামাল ভূঁইয়ারা ততক্ষণে মাঠ প্রদক্ষিণ করে ক্লান্তশ্রান্ত শরীর নিয়ে কেক পার্টিতে ব্যস্ত। তখনও ভিআইপি গ্যালারির পাশে ছোট্ট এক জটলায় গল্পে মাতোয়ারা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) গুটিকয়েক সদস্য—মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, গোলাম গাউস, মোহাম্মদ মঞ্জুর করিম, জাকির হোসেন চৌধুরী, কামরুল হাসান হিল্টন, সত্যজিত দাস রুপু, ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ।
আজ তাঁদের আড্ডার একমাত্র বিষয়—বাংলাদেশ দলের ঐতিহাসিক জয়। ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে জেতা সেই মুহূর্ত, যা বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। এই মুহূর্তে, তাঁরা যেন বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষদের মতোই দেখাচ্ছিলেন।
'হামজা যদি ওই হেডটা (সেভ) না করত, তাহলে আজকের দিনটা হয়ত অন্যরকম হতো'
” ইমতিয়াজ হামিদের কথাটি টেনে হিল্টন বললেন, “মোরছালিন (শেখ মোরাছালিন) সময় মতো গোলটা করে দিল।”
তাতে সায় দিয়ে কেউ সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালেন, কেউ-বা স্মরণে আনলেন ম্যাচের অন্যান্য দৃশ্যপট। গল্প চলতেই থাকে, যেন শেষ হওয়ার নয়।
এমন দিন বাংলাদেশের ফুটবলে খুবই বিরল। ভারতের বিপক্ষে জয় পেতে উৎসবের ডেডলক ভাঙতে হয়েছে দীর্ঘ ২২ বছর। ২০০৩ সালের সাফ ফাইনালে জাতীয় স্টেডিয়ামে (তৎকালীন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) জিতেছিল লাল-সবুজের দল, তারপর থেকে জয় ছিল অধরা।
প্রতিবেশিদের বিপক্ষে জয়ের সুযোগ আগে আসছিল। বেশির ভাগই শেষ মুহূর্তে ফসকে গেছে। সর্বশেষ শিলংয়ে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ একাধিক সুযোগ পেলেও বের হতে পারেনি খোলস থেকে। সেই সময় মাঠে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের কার্যনির্বাহী সদস্য সত্যজিত দাস রুপু। আজও মাঠে বসে বাংলাদেশের জয়ের সাক্ষী ছিলেন তিনি। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে একটা শব্দই কেবল উচ্চারণ করলেন—“অবশেষে।”
অবশ্য খানিকটা সময় নিয়ে তিনি আরও বলেন,
“২২ বছর পর অবশেষে আমরা ভারতকে হারিয়েছি। এটা আমাদের ফুটবলের জন্য দারুণ এক মুহূর্ত। আমরা দেখিয়েছি ভারতকে হারাতে পারি।”
রুপুর কথা শেষ না হতেই বাফুফের আরেক সদস্য ইমতিয়াজ হামিদ বলেন, “হ্যাঁ, আমরা অবশেষে ওদের (ভারত) হারালাম।”
তিনি যোগ করেন,
“সত্যি খুব ভালো লাগছে। এমন একটা জয়ের অপেক্ষাই করছিলাম। আমার মতো পুরো বাংলাদেশের মানুষ এই জয়ের অপেক্ষায় ছিল।”
ফেডারেশন কর্মকতারাও আনন্দে ভাসছিলেন। পাশেই টি-স্পোর্টসের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বলেন,
“আমরা একটি নতুন শুরু করেছিলাম। বাংলাদেশি জনগণও আশা দেখিয়েছিল। এখন বিদেশ থেকে খেলোয়াড়রা দেশে আসছে। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, আজ সেই বিশ্বাস বাস্তবে রূপ নিয়েছে।”

বছরজুড়ে বাজে সময় পার করেছেন হামজা চৌধুরী। লেস্টার সিটি কিংবা জাতীয় দল—গল্প প্রায়ই একই ছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইংল্যান্ড প্রবাসী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের। তবে লাল-সবুজের হয়ে বছরের শেষ ম্যাচে জয় রাঙালেন তিনি।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে প্রতিবেশি ভারতের বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে একমাত্র গোল করেন ফরোয়ার্ড শেখ মোরছালিন। রাকিব হোসেনের কাটব্যাকের সূত্র ধরে লক্ষ্যবেধ করেন তিনি।
প্রীতি ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে ওভারহেড ও পেনাল্টি মিলিয়ে দুটি গোল পেলেও আজ হামজার পা জালের দেখা পায়নি। তবে ঠিকই একটি নিশ্চিতপ্রায় গোল সেভ করেছেন লেস্টার সিটি ডিফেন্ডার।
ম্যাচের ৩১ মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণের ভুলে বল পায় ভারতের লালিয়ানজুয়ালা চাংতে। স্বাগতিক গোলকিপার মিতুল মারমা তখন পর্যন্ত গোলপোস্টের বাইরে ছিলেন। তাতে ফাঁকা হয়ে পড়ে পোস্ট। চাংতের দূরপাল্লার শট প্রায় পোস্টে ঢুকে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হন হামজা। হেড করে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন তিনি।
এদিন ম্যাচ শেষে সম্প্রচার চ্যানেল টি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হামজা বলেন,
“আমরা ওদের সঙ্গে জিতিনি। ট্রেনিংয়ে ও রুমে কোচের সঙ্গে কথা বলেছি, জেনেছি এটা বড় গেইম। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা জিতেছি।”
সংবাদ সম্মেলনে হামজা জানান, এই মুহূর্তে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল,
“এ বছর আপনার যেভাবে সময় কেটেছে, আজ কি আপনি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ? আর এই জয় কি আপনার লেস্টারের এফএ কাপ জয়ের থেকেও বড়?”
উত্তরে হামজা বলেন,
“হ্যাঁ। এখানে আমরা আজ ১৮ কোটি মানুষকে খুশি করেছি। পৃথিবীর আর কোথাও এটা সম্ভব নয়। তাই এটি অবশ্যই আমার ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্যের মধ্যে থাকবে।”
তিনি আরও বলেন,
“আমি আর সমিত একটু দেরিতে যোগ দিয়েছি। শেষ চার ম্যাচে আমরা দারুণ পজিশন খেলেছি, ট্যাকটিক্যালি খুব ভালো ছিলাম, কিন্তু শেষ ধাপে হোঁচট খাচ্ছিলাম। আজ উল্টোটা হলো—হয়তো বল পায়ে ততটা ভালো ছিলাম না, কিন্তু দেখিয়েছি আমরা কতটা স্থিতিশীল হতে পারি। এবার সময় এসেছে দুই দিকই একত্র করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার, ইনশাআল্লাহ।”