
লিওনেল মেসি-ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর যুগ এখন প্রায় শেষের দিকে। ফুটবলবিশ্বে এখন রাজত্ব করছেন কিলিয়ান এমবাপে-আর্লিং হলান্ডরা। ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়েজিয়ান ফরোয়ার্ড হলান্ডকে তো অনেকে বর্তমানে সেরাও মনে করেন। ‘গোলমেশিন’ নাম পাওয়া এই স্ট্রাইকার প্রতিনিয়তই মাঠে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ত্রাস সৃষ্টি করেন। অথচ এই হলান্ডই কিনা ফুটবলার নয়, হতে পারতেন একজন পেশাদার গলফার!
হলান্ডকে তাঁর বাবা কয়েকটি খেলায় বাজিয়ে দেখেছিলেন। এমনকি ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড নামক খেলাতেও ভবিষ্যত গড়তে পারতেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই বাকি পাঁচ-দশ জন কিশোরের চেয়ে দীর্ঘদেহী হওয়ায় লং জাম্পেও বেশ এগিয়ে ছিলেন। এমনকি মাত্র পাঁচ বছর বয়সে নরওয়েজিয়ান এই তারকা তার বয়সের দীর্ঘতম স্ট্যান্ডিং লং জাম্পে বিশ্বরেকর্ড ভেঙেছিলেন, অবিশ্বাস্য ১.৬৩ মিটার লাফ দিয়ে।
হালান্ডের পিতা আলফ-ইঞ্জে একবার ম্যানচেস্টার সিটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটকে বলেছিলেন, ‘নরওয়ের হ্যান্ডবল ম্যানেজার চাইতেন সে হ্যান্ডবল খেলুক। আমি মনে করতাম পাশের বাড়িতে টেনিস আর হ্যান্ডবল খেলা বেশ ভালো।’
আরও পড়ুন
| রিয়ালে ড্রেসিংরুমের অস্থিরতার গুঞ্জন নিয়ে মুখ খুললেন বেলিংহাম |
|
তিনি আরও যোগ করেন, ‘বহুমুখিতা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরের একেবারে ভিন্ন দিকগুলো বিকাশের সুযোগ দেয়, এবং আপনি যা কিছু করেন, তাতে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।’
ছোটবেলাতেই অ্যাথলেটিকসে দারুণ দক্ষতায় মুগ্ধতা ছড়িয়েছিলেন হলান্ড। কিন্তু এক জায়গায় বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছে তাকে। তবে, গলফ খেলতে বেগ পোহাতে হচ্ছিল ছোট্ট হলান্ডকে। আর এই তাঁর বাবা চেয়েছিলেন নাকি ক্রীড়ার এই বিভাগেই ছেলের ক্যারিয়ার হোক। হলান্ডের বাবার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল না ছেলেকে পেশাদার গলফে দেখা।
সম্প্রতি ‘দ্যা রেস্ট ইজ ফুটবল’ নামক পডকাস্টে গ্যারি লিনেকার ও অ্যালান শিয়ারের সঙ্গে কথা বলার সময় নিজের ছোটবেলা নিয়ে কথা বলেন হালান্ড। হালান্ড বলেন, ‘আপনি বুঝতে পারছেন, এটি আসলেই মজার—কারণ তার (হলান্ডের বাবা) সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল আমি পেশাদার গলফার হই। সেটাই তার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।’
এরপর হলান্ড যোগ করেন, ‘তাই যখন আমি ১০ বছর বয়সী ছিলাম, সে আমাকে গলফ শুরুর জন্য বাধ্য করেছিল। আমি ১০ থেকে ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে গলফ খেলতাম।’
খেলার কোচ হিসেবে বাবা নাকি বেশ কড়া ছিলেন। পডকাস্টে হলান্ড বলেছেন , ‘আপনি আমাকে কখনো গ্লাভস পরে খেলতে দেখবেন না। কারণ আমার বাবা মারতেন যদি আমি তা করতাম।’
আরও পড়ুন
| দাপট দেখিয়েও সিটির কাছে হেরে খাদের কিনারায় রিয়াল |
|
হলান্ড এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার। তাঁর বাবা নিশ্চয়ই এখন ফুটবলার ছেলের ক্যারিয়ার দেখে আফসোস করবেন না। ম্যান সিটির এই ফুটবলার মাঠে নামলেই গোলের পর গোল করে মুড়ি-মুড়কির মতো রেকর্ড ভাঙছেন।
এই মাসের শুরুতে ২৫ বছর বয়সী তারকা প্রিমিয়ার লিগে দ্রুততম সময়ে গোলের সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙেছেন। এছাড়া ইংলিশ লিগটির ইতিহাসে ১০, ২৫ এবং ৫০ গোলের দ্রুততম রেকর্ডও তাঁর। এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৫ ম্যাচে ২৩ গোলের সঙ্গে সাতটি অ্যাসিস্ট করেছেন হলান্ড।
No posts available.
১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪১ পিএম
১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩৯ এম

প্রিয় দলের ব্যর্থতায় সবার মনই তো কাঁদে। কেউ হয়তো প্রচণ্ড ক্ষুদ্ধ হয়ে সাময়িক সময়ের জন্য খেলা দেখায় বিরতি দেন। কেউবা মনের ঝাল মেটান কড়া সমালোচনা করে। তবে কোনো সমর্থক যদি ক্লাবের বাজে পারফরম্যান্সে ক্ষিপ্ত হয়ে স্টেডিয়ামে অগ্নিসংযোগ করে বসেন! এমন ঘটনারই জন্ম দিল ফিনল্যান্ডের অন্যতম সফল এক ক্লাবের কিশোর সমর্থক।
ঘটনা গত রোববারের। ফিনল্যান্ডের শীর্ষ স্তরের লিগ ভেইক্কাউসলীগার ক্লাব এফসি হাকার একটি স্ট্যান্ড আগুন পুরো ধংসস্তুপে রূপ নেয়। ফিনল্যান্ডের সিসা-সুমোই পুলিশ জানিয়েছে, রোববার সন্ধ্যায় ভ্যালকেয়াকোস্কির টেহটান কেন্ট্টা স্টেডিয়ামে অগ্নিকাণ্ডের সময় তিনজন কিশোর উপস্থিত ছিলেন, যাদের প্রত্যেকের বয়স ১৫ বছরের নিচে। হেলসিঙ্কি থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে এই ঘটনা ঘটেছে।
ওই তিন কিশোরের মধ্যে একজন স্বীকার করেছেন সে এমন একটি বস্তু জ্বালিয়েছে, যা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। সন্ধ্যা আটটার দিকে আগুন ধরে এবং দ্রুত কাঠের অবকাঠামোতে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৩২ সালে নির্মিত ৩,২০০ আসনের স্টেডিয়ামের ৪০০ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্ট্যান্ড পুড়ে যায়।
ফিনল্যান্ডের লিগের অন্যতম সফল ক্লাব এফসি হাকা। ১৯৩৪ সালের প্রতিষ্ঠার পর থেকে ন’টি ফিনিশ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ১২টি কাপ জিতেছে ক্লাবটি। তবে চলতি মৌসুমে হাকার পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। আগুনের ঘটনা ঘটে কিছু সপ্তাহ পর, যখন ক্লাবটি—যা ১৯৩৪ সালের প্রতিষ্ঠার ক্লাবটি ফিনল্যান্ডের শীর্ষ স্তরের ভেইককাউসলীগা থেকে অবনমিত হয়ে দ্বিতীয় ডিভিশনে নেমে যায়।
অবশ্য অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েও বয়সের কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে ওই তিন কিশোর। এই ঘটনার তদন্ত চলমান, তবে ফিনিশ আইনে ১৫ বছরের নিচের কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।
যদিও ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর মাইজাস্টিনা টামমিস্তো বলেছেন,
‘দোষমুক্তির অর্থ মানে ক্ষতির দায় থেকে মুক্তি নয়। ফিনল্যান্ডে ক্ষতিপূরণের জন্য কোনো ন্যূনতম বয়স নেই।’
এফসি হাকার চেয়ারম্যান মার্কো ল্যাকসোনেন বলেছেন, ক্ষতির খরচ এখনও হিসাব করা হয়নি, তবে তা ব্যাপক হবে। ভ্যালকেয়াকোস্কি শহরের মালিকানাধীন এই ভেন্যুর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন যে তারা যত দ্রুত সম্ভব পিচটি মেরামতের পরিকল্পনা করবেন।

ইউরোপীয় ফুটবলে সবচেয়ে সফল ক্লাবটি কালেভদ্রেই এমন সংকটের মুখে পড়ে। বিশ্বের সেরা কোচ আর সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে সাফল্য পেতেই অভ্যস্ত রিয়াল মাদ্রিদ। তবে সম্প্রতি খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। তারার হাঁট বসিয়েও মাঠে ছন্নছাড়া লস ব্লাঙ্কোসরা।
নতুন কোচ জাবি আলোনসো সমস্যার সমধান খুঁজে পেতে মরিয়া। কিন্তু অন্ধকার টানেলের আলো কতদূর সেটাই এখনও ধরতে পারছেন না রিয়াল কোচ। স্প্যানিশ এই কোচ হয়তো মনে মনে বলছেন, ‘বলুন দেখি কোথায় যায়, কোথায় গেলে সমাধান পাই!’
জাবি হয়তো সমাধান পেতে পারেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক ফরোয়ার্ড করিম বেনজেমা থেকেও। না, আল ইত্তিহাদের ফরাসি তারকা ফরোয়ার্ডকে মাঠে নয়, তাঁর পরামর্শ থেকে প্রতিকার পেলেও পেতে পারেন রিয়াল কোচ।
সম্প্রতি ফরাসি সংবাদমাধ্যম লেকিপ’ কে দেওয়া দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন বিষয়ে মন খুলে কথা বলেন বেনজেমা। আলোচনার বিষয় ফ্রান্স জাতীয় দলে সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন থেকে শুরু করে রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যন্ত।
রিয়ালের বর্তমান সংকট নিয়ে কী ভাবছেন বেনজেমা? শোনা যাক ৩৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের মুখ থেকেই, রিয়াল মাদ্রিদের যে জিনিসটার অভাস সেটা হলো, সরাসরি সংযোগ। এমবাপ্পে, ভিনিসিয়াস, বেলিংহাম এবং রোদ্রিগো প্রত্যেককে মাঠে কী করতে হবে তা জানা উচিত। বেলিংহামকে বুঝতে হবে, তিনি প্লেমেকার, গোলদাতা নয়। এমবাপ্পে গোলস্কোরার, প্লেমেকার নয়। ভিনিসিয়াস ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নয়, তিনি বাঁ পাশের উইঙ্গার। যতক্ষণ সবাই মাঠে কী করতে হবে তা জানবে, ততক্ষণ সব ঠিক থাকবে। কারণ আমরা এমন খেলোয়াড়দের কথা বলছি যারা বিশ্বের শীর্ষ ১০-এ, এবং তারা সবাই একই দলে। কোচ কিছু করতে পারবে না, সবকিছু খেলোয়াড়দের উপর নির্ভর করে।’
রিয়ালের এই দলে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতার ঘাটতি দেখছেন বেনজেমা। এছাড়া তাঁর মতে পরিবর্তিত ফুটবলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না স্প্যানিশ ক্লাবটির খেলেযাড়রা। আল ইত্তিহাদের স্ট্রাইকার যোগ করেন, ‘বর্তমানে রিয়াল মাদ্রিদে সেই ধরনের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আর নেই, যারা বেলিংহাম, এমবাপ্পে বা ভিনিসিয়াসকে বলতে পারে তারা কোথায় ভুল করছে। তাই পরিস্থিতি জটিল… কোচ হয়তো বলে, কিন্তু ভিন্নভাবে। কারণ আজকাল ফুটবল… সত্যি বলতে, খুব জটিল। খেলোয়াড়রা একে অপরের সঙ্গে আর কথা বলে না। দেখা যাচ্ছে, আমি আমার কাজ করেছি, আমার গোল করেছি—আজকের ফুটবল এমন।’
রিয়ালের এই দলকে অনেকে ‘গ্যালাক্টিকো’ বলে থাকেন। বেলিংহাম, এমবাপে, ভিনিনিয়ুসরা বর্তমানে ফুটবলবিশ্বের অন্যতম সেরা। তবে দলের বড় তারকা থাকার নেতিবাচক দিকও আছে। ইগো বা অহংবোধের কারণে মাঠে একটি দল হয়ে খেলা সম্ভব হয় না। বেনজেমা সেই কথাটাই মনে করিয়ে দিলেন, ‘যদি তোমার সতীর্থ তোমার চেয়ে ভালো হয়, সেটা মেনে নিতে হবে। সমস্যা হলো তা মানা নয় যে তোমার সামনে যে খেলোয়াড় গোল করছে সে বেশি স্কোর করছে।
এই কারণেই সমস্যা হয়, যখন পাঁচ বা ছয়জন বড় খেলোয়াড় একসঙ্গে থাকে। প্রত্যেকের কিছু না কিছু অবদান থাকে। এবং শেষ পর্যন্ত, গোলদাতা খেলোয়াড় একটু বেশি মনোযোগ পায় অন্যদের তুলনায়। কিন্তু তারও সব সময় অন্যদের প্রয়োজন! সে একা সব কিছু করতে পারবে না।’
সমালোচনা হজম করারও মতো দৃঢ় মানসিকতার বিকল্প দেখছেন না বেনজেমা, ‘সমালোচনা সবসময় মেনে নেওয়া কঠিন। তবে এটি প্রকৃতপক্ষে এক ধাপ এগোনোর সুযোগ। যদি তুমি এটাকে ভালোভাবে গ্রহণ করো, তুমি উন্নতি করবে। এটা তোমার জন্য এবং সবার জন্যই ভালো।
কিন্তু সত্যি বলতে, মাদ্রিদটা বিষয়টা জটিল; এখানে অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে।’
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সবশেষ আট ম্যাচে মাত্র দু’টিতে জয় পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। লা লিগায় এল ক্লাসিকো জিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা থেকে এগিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ পথ হারিয়েছে রিয়াল। এখন পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা কাতালান জায়ান্টদের চেয়ে ৪ পয়েন্ট পিছিয়ে তারা। আগামী রোববার লিগে তাদের প্রতিপক্ষ দিপোর্তিভো আলাভেস।

মাস ছয়েক পরই বিশ্বকাপ। নিজ নিজ দেশকে বিশ্বসেরার মঞ্চে সমর্থন জানাতে ফুটবল সমর্থকরা উঠে পড়ে লেগেছেন টিকিট সংগ্রহে। আর এই টিকিট নিয়েই শুরু হয়েছে বিপত্তি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোর যৌথভাবে আয়োজিত বিশ্বকাপের তৃতীয় ধাপে টিকিট বিক্রি শুরু করেছে ফিফা। আর টিকিটের আকশচুম্বি দামেই চটেছে ফুটবল সমর্থকরা। ইউরোপের ফুটবল সমর্থকরা তো রীতিমতো ফিফাকে ‘চরম বিশ্বাসঘাতক’ বলছে।
গতকাল থেকে শুরু হয়েছে তৃতীয় ও শেষ দফার টিকিট বিক্রি। এটিকে বলা হচ্ছে ‘র্যান্ডম সিলেকশন ড্র’য়ের তৃতীয় পর্ব। যা ২০২৬ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। আগ্রহীদের ফিফার টিকিটিং ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘ফিফা আইডি’তে সাইন আপ করতে হবে। এরপর ‘সাইন ইন’ করে নির্দিষ্ট ম্যাচগুলোর টিকিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারীদের নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে লটারি করবে ফিফা। কেউ তাদের চাহিদা অনুযায়ী পাবেন, কেউ কম পাবেন। যারা টিকিট পাবেন, তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে তখন টাকা কেটে নেওয়া হবে।
তবে যত ঝামেলা টিকিটের দাম নিয়ে। অনেকের মতোই ইউরোপের ফুটবল সমর্থকদের আশঙ্কা আগামী বিশ্বকাপের টিকিটের উচ্চ মূল্যের কারণে প্রবেশাধিকার হারাতে পারেন অনেকে। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের টিকিটের দাম অতীতের সব আসরের তুলনায় ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ফিফা তাদের নিয়ম অনুযায়ী টিকিটের ৮ শতাংশ জাতীয় সংস্থার জন্য বরাদ্দ রাখে। যাতে তারা তাদের দলের সবচেয়ে নিবেদিত ভক্তদের কাছে বিক্রি করতে পারে। জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের প্রকাশিত একটি তালিকায় দেখা গেছে, গ্রুপ পর্বের বিভিন্ন ম্যাচের টিকিটের দাম ১৮০ ডলার থেকে ৭০০ ডলার পর্যন্ত। ফাইনালের জন্য সর্বনিম্ন দাম ছিল ৪১৮৫ ডলার আর সর্বোচ্চ ৮৬৮০ ডলার।
বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের টিকিটের এই মূল্য ফিফার পূর্ববর্তী দাবীর সঙ্গে একেবারেই সাংঘর্ষিক।। যেখানে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছিল ৬০ ডলারেও টিকিট পাওয়া যাবে। আর ৭ বছর আগে টুর্নামেন্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল কর্মকর্তাদের লক্ষ্য ছিল, শুরুর দিকের ম্যাচগুলোর জন্য ২১ ডলারের মূল্যের সাত লাখেরও বেশি টিকিট থাকবে।
ইউরোপের ফুটবল সমর্থকদের সংগঠন (এফএসই) বর্তমান দামকে ‘মাত্রাতিরিক্ত’ বলে বর্ণনা করেছে। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘এটি বিশ্বকাপের ঐতিহ্যের প্রতি এক বড় বিশ্বাসঘাতকতা, যা সেই ভক্তদের অবদানকে পুরোপুরি উপেক্ষা করছে, যারা এই মহা উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলে।’
ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘ইংল্যান্ড সাপোর্টাস ট্রাভেল ক্লাব’কে টিকিটের তথ্য জানিয়েছে। যদি কোনো সমর্থক প্রতি ম্যাচের টিকিট থেকে শুরু করে ফাইনাল পর্যন্ত সব ম্যাচ দেখেন, তাহলে খরচ হবে মাত্র ৭ হাজারেরও বেশি ডলার। যা ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
ফুটবল সমর্থক সংগঠন এফএসই ফিফাকে অনুরোধ করেছে, ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি অবিলম্বে বন্ধ করতে, যতক্ষণ না এমন একটি সমাধান পাওয়া যায় যা বিশ্বকাপের ঐতিহ্য, সর্বজনীনতা এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে সম্মান করে।

বহু জল্পনা-কল্পনা পর অবশেষে। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে নিজেদের দেশে আতিথেয়তা দেওয়ার সুযোগ না পেলেও ফুটবলের আরেক মহাতারকা লিওনেল মেসিকে বরণ করতে প্রস্তুত ভারত। আর্জেন্টাইন মহাতারকার বহুল প্রতীক্ষিত ‘গোট ইন্ডিয়া ট্যুর ২০২৫’ ভারতজুড়ে অভূতপূর্ব উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে।
আগামীকাল ভারতে পা রাখবেন মেসি। বিশ্বকাপজয়ী এই কিংবদন্তি আগামী ১৩, ১৪ এবং ১৫ ডিসেম্বর তিন দিনে চারটি শহর জুড়ে সফর করবেন। ২০১১ সালের পর এটাই হবে মেসির প্রথম ভারত সফর। আর ‘এলএম টেনের’ সফল সূচিতে রয়েছে এমন সব আয়োজন আছে,যার স্বপ্ন ভারতের ফুটবল ভক্তরা বছরের পর বছর ধরে দেখে আসছেন।
বহু আয়োজনের ভীড়ে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ মেসির ভাষ্কর্য উন্মোচন। কলকাতায় ৭০ ফুট উচ্চতার বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়কের ভাষ্কর্য উন্মোচিত হবে। এখন পর্যন্ত ফুটবল ইতিহাসে কোনো ফুটবলারের এত উচ্চতার ভাস্কর্যের নজির নেই।
মেসি ভ্রমণ করবেন কলকাতা, হায়দ্রাবাদ, মুম্বাই ও নয়াদিল্লিতে। প্রতিটি শহরেই থাকছে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন। সফর শেষ হবে রাজধানী দিল্লিতে, যেখানে মেসি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
সফরের বেশ কয়েকটি অংশে মেসির সঙ্গে যোগ দেবেন তাঁর ইন্টার মায়ামি সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ এবং আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার রদ্রিগো ডি পল।
‘গোট ইন্ডিয়া ট্যুর ২০২৫’ এর একমাত্র প্রমোটর শতদ্রু দত্ত সফরের তারিখ নিশ্চিত করেছেন। মেসির ১২ ডিসেম্বর ভারতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সফরটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ১৩ ডিসেম্বর কলকাতায়, সেদিন সন্ধ্যায়ই মেসি যাবেন হায়দ্রাবাদ। পরের দিন আটবারের রেকর্ড ব্যালন ডি’অর জয়ী থাকবেন মুম্বাইয়ে। আর সফরের শেষ দিন সোমবার তিনি পৌঁছাবেন নয়াদিল্লিতে।
লিওনেল মেসির ভারত সফর – পুরো সূচি
কলকাতা পর্ব:
মেসি শনিবার ভোররাতে ১টা ৩০ মিনিটে কলকাতায় অবতরণ করবেন এবং ইএম বাইপাসের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে উঠবেন। পরের দিন সকালেই ৯:৩০ থেকে ১০:৩০–এর মধ্যে তিনি অংশ নেবেন স্পনসরদের জন্য রাখা এক বিশেষ ‘মিট-অ্যান্ড-গ্রিট’ অনুষ্ঠানে। যেখানে আয়োজন করা হয়েছে আর্জেন্টিনা–ভারতের সংমিশ্রণের এক অনন্য খাদ্য উৎসব। মেনুতে থাকবে আসামের স্বাদে মেশানো আর্জেন্টাইন হার্বাল চা ‘মাতে’, পাশাপাশি ইলিশ মাছ এবং নানা ধরনের বাংলার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। কলাকাতায় ভাষ্কয্য উন্মোচনের সময় অবশ্য সরাসরি উপস্থিত থাকবেন না মেসি। নিরাপত্তাজনিত কারণে এই প্রতিমূর্তি হোটেল থেকেই ভার্চুয়ালি উন্মোচন করবেন তিনি। এ প্রসঙ্গে প্রমোটর শতদ্রু দত্ত, ‘শুধু তার (মেসি) সবচেয়ে বড় ভাষ্কর্যই নয়, আমরা একটি বিশাল মুরালও উন্মোচন করব, যা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দুর্গাপূজা প্যান্ডেলে রাখা হবে। যাতে সব ভক্তরা সুযোগ পান সেখানে রঙ করে যেতে এবং পাশে থাকা মেসেজ বক্সে বার্তা লিখে রাখতে।’
স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে ৭০ হাজারেরও বেশি দর্শক সমাগমের আশা করা হচ্ছে। ৭৫ হাজার আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে, আর বিপুল চাহিদার কারণে আয়োজকরা মঙ্গলবার থেকেই কাউন্টার সেল চালু করেছেন। কলকাতায় নির্ধারিত সব কর্মসূচি শেষ করে মেসি সল্ট লেক স্টেডিয়ামে যাবেন এবং সেখান থেকে দুপুর ২টায় হায়দরাবাদের উদ্দেশে রওনা দেবেন।
হায়দ্রাবাদ পর্ব:
প্রথমে মেসিকে ১৭ নভেম্বর কোচিতে একটি প্রীতি ম্যাচের জন্য পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল, তবে সেই অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় হায়দ্রাবাদকে যুক্ত করা হয়েছে, যাতে একটি প্রকৃত সর্বভারতীয় সফর নিশ্চিত হয়।
হায়দ্রাবাদে মেসি যোগ দিবেন রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম, উপ্পালে সন্ধ্যা ৭টা থেকে হায়দ্রাবাদ ‘গোট কাপে’-এ। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভন্ত রেড্ডিও সেখানে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে থাকবে ৭ বনাম ৭ সেলিব্রিটি ম্যাচ। স্কাউট করা যুব ফুটবল খেলোয়াড়দের জন্য মাস্টারক্লাস। পেনাল্টি শুটআউট প্রতিযোগিতা এবং মেসির কীর্তিময় ক্যারিয়ারের উদযাপনে এক সঙ্গীতানুষ্ঠান।
মুম্বাই পর্ব:
আয়োজকরা মেসিকে অনুরোধ করেছেন আর্জেন্টিনার ২০২২ সালের বিশ্বকাপ জয় সম্পর্কিত নির্বাচিত স্মারকস চ্যারিটি নিলামে আনার জন্য।
মুম্বাইয়ে তিনি অংশ নেবেন ‘একটি সমাজসেবামূলক ফ্যাশন শো’-তে। এই ফ্যাশন শোতে মেসি তার বন্ধু ও সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ এবং আর্জেন্টিনা মিডফিল্ডার রদ্রিগো ডে পল–এর সঙ্গে ৪৫ মিনিটের ফ্যাশন সেগমেন্টে অংশগ্রহণ করবেন।
দিল্লি পর্ব:
সোমবার মেসি প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দেখা করবেন, এরপর মিনারভা অ্যাকাডেমির যুব দলকে বিশেষ সম্মান জানাবেন। এই দল ইতিমধ্যেই ইউরোপের তিনটি বড় টুর্নামেন্ট জিতেছে এবং হেলসিঙ্কি কাপের ফাইনাল খেলেছে। সফরের সময় দিল্লিতে একটি নয়জনের সেলিব্রিটি ম্যাচও হবে।

লিভারপুলে ঠিকমতো গেম টাইম পাচ্ছেন না মোহাম্মদ সালাহ। সর্বশেষ ইন্তার মিলানের বিপক্ষে কোচ আর্নে স্লটের পরিকল্পনার বাইরে ছিলেন এই মিশরীয় তারকা। প্রিমিয়ার লিগে ব্রাইটনের বিপক্ষেও তাঁর খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
দুই দুই চার মিলিয়ে ক্লাবের প্রতি ক্ষোভ জমেছে সালাহর। তার মতে, অ্যানফিল্ডের ক্লাব তাঁকে স্রেফ ‘বাসের নিচে ফেলে দিয়েছে’। কোচের সঙ্গে সম্পর্ক এত দিনে গুরু-শিষ্যের পর্যায় থেকে ফাটলের দিকেই যাচ্ছে। এর জন্য তৃতীয়পক্ষকে দায়ী করেন ৩৩ বছর রাইট উইঙ্গার।
মিশরীয় ফরোয়ার্ড প্রায় বুঝেই গেছেন—লিভারপুলে হয়তো তার আর থাকা হচ্ছে না তাঁর। এটিই সুযোগ হিসেবে নিতে চাইছে সৌদি প্রো লিগের কয়েকটি দল। বিশেষ করে আল হিলাল ও আল ইত্তিহাদ সালাহর জন্য বিশাল অঙ্কের প্রস্তাব প্রস্তুত করে রেখেছে।
বুধবার বিবিসি স্পোর্টসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সালাহকে পেতে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত খরচ করতে রাজি আল হিলাল। গত দুই বছর ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি লিগের জায়ান্ট ক্লাবটি। আল ইত্তিহাদও বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছে সালাহর এজেন্টের সঙ্গে। সবুজ সংকেত না পাওয়ায় তারা আপাতত চুপ রয়েছে।
সৌদি লিগের এই প্রতিযোগিতার মাঝে এবার নতুন উত্তাপ যোগ করলেন মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) কমিশনার ডন গারবার। তিনি জানিয়েছেন, সালাহ যদি আগ্রহী হন, তবে এমএলএস তাকে সাদরে স্বাগত জানাবে।
সালাহর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে গারবার বলেন,
“অবশ্যই, যদি সালাহ কখনো এমএলএসে আসার সিদ্ধান্ত নেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাব।”
মেসি-সুয়ারেজদের আগমনে এমএলএস এখন বেশ জনপ্রিয়। সে প্রসঙ্গ টেনেই গারবার বলেন,
“আমি বলব, তিনি লিও (মেসি) এবং টমাস মুলারকে জিজ্ঞেস করতে পারেন—তাঁরা এখানে কতটা খুশি, কতটা সফল হয়েছেন এবং এমএলএসকে কতটা আপন করে নিয়েছেন।”
গারবার স্পষ্ট করে আরও বলেন,
“মো সালাহকে নিয়ে কিছু গুজব দেখেছি। আমরা চুক্তির পবিত্রতায় বিশ্বাস করি—এটি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক নীতি। সালাহ এখনও লিভারপুলের সঙ্গে চুক্তির অধীনে, যাদের আমরা ভালোভাবে চিনি। এটি একটি দারুণ দল।”
সালাহ কোথায় যাবেন বা কী করবেন—সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ তাঁর নিজের। তবে বিষয়টি পরিষ্কার: লিভারপুলে তিনি ভালো নেই। তাঁর অভিযোগের মতোই স্পষ্ট—যথেষ্ট প্রতিশ্রুতি পেলেও বাস্তবে তা ধোপে টিকছে না।
তদুপরি, পারফরম্যান্সও আগের মতো নেই। ২০২৫–২৬ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে ১৩ ম্যাচে মাত্র ৪টি গোল করেছেন সালাহ, যেখানে গত মৌসুমে একই সংখ্যক ম্যাচে তিনি এর দ্বিগুণেরও বেশি গোল করেছিলেন। সবমিলিয়ে দোটানায় তিনি।