
প্রথম লেগে বার্সেলোনা তিন গোল হজম করায় রক্ষণভাগ নিয়ে একটা চিন্তা ছিলই। ঘরের মাঠে উজ্জীবিত ইন্তার মিলান কাউন্টার এটাকে শুরুটা করল দুর্দান্ত। বিরতির আগেই দুই গোল খেয়ে কোনঠাসা হয়ে গেল হান্সি ফ্লিকের দল। দারুণ এক কামব্যাকে একে একে তিন গোল দিয়ে এক পর্যায়ে বার্সেলোনাই পাচ্ছিল জয়ের সুবাস। তবে এই ইন্তার যে হার মানার নয়। ইনজুরি ও অতিরিক্ত সময়ের দুই গোলে শেষ হাসি হাসল সিমোনে ইনজাগির দল।
সান সিরোতে বুধবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে বার্সেলোনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়েছে ইন্তার। দুই লেগ মিলিয়ে ইতালিয়ান ক্লাবটি জিতেছে ৭-৬ ব্যবধানে। ২০২৩ সালের পর আবারও দলটি খেলবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ থাকবে আর্সেনাল বা পিএসজি।
ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই গোলের ভালো একটি সুযোগ তৈরি করেছিল বার্সেলোনা। ডান দিক থেকে গতিতে ইন্তার ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে বক্সে প্রবেশ করেন ইয়ামাল, অপেক্ষায় ছিলেন ট্যাপ-ইনের। তবে পাস না বাড়িয়ে গোলের জন্য শট নিয়ে ব্যর্থ হন ফেররান তরেস।
আরও পড়ুন
| পর্তুগাল দলে ডাক পেলেন ছেলে, ‘গর্বিত’ বাবা রোনালদো |
|
ম্যাচের প্রথম দিকে বার্সেলোনার অফসাইড ট্র্যাপ এড়িয়ে আক্রমণে যেতে বেশ সংগ্রাম করতে হচ্ছিল ইন্তারকে। এই ম্যাচের আগে চলতি মৌসুমে এই ম্যাচের আগে ৭৪ বার প্রতিপক্ষকে অফসাইডে ফেলেছে দলটি।
১৭তম মিনিটে আলেসান্দ্রো বাস্তোনি ইন্তারের বক্স থেকে বলের দখল নিয়ে লম্ব ক্রস বাড়ান, বার্সেলোনার হাই লাইন ডিফেন্সকে বিপদে ফেলে বল নিয়ে ফেদেরিকো দিমার্কো পাস দেন লাউতারোকে। তবে তার শট লক্ষ্যে থাকেনি আর, এর আগে ক্লিয়ার হয়ে যায়।
মিনিট তিনেক বাদে ডান দিক থেকে কাট করে বক্সে প্রবেশ করে নিকোলা বারেল্লার নেওয়া জোরাল শট কোনোমতে সেভ করে ওয়েচেজ সেজনি। তবে বার্সেলোনার অফসাইড ট্র্যাপ পার করে শেষ পর্যন্ত ইন্তারের লিড নেওয়ায় ভূমিকা রাখেন প্রথম লেগে জোড়া গোল করা ডেনজেল ডামফ্রিস।
পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পেয়ে তড়িৎ গতিতে বল পেয়ে ডান দিক থেকে বল নিয়ে বক্সে প্রবেশ করেন তিনি। বার্সেলোনার রক্ষণভাগের চেয়ে বক্সে ইন্তারের খেলোয়াড়ই বেশি। সেজনি এগিয়ে এসে ক্লিয়ার করতে গেলে তাকে ফাঁকি দিয়ে ফাঁকায় থাকা লাউতারোকে পাস দেন ডামফ্রিস, যেখান থেকে জাল খুঁজে নিতে ভুল করেননি আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৩ ম্যাচে এটি লাউতারোর ৯ নম্বর গোল। এই গোলটি ইন্তারের জন্য গুরুত্বছিলপূর্ণ ছিল, কারণ এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আগে গোল দিয়ে এই লড়াইয়ের আগে ১০ ম্যাচের একটিতেও হারেনি সেরি আর ক্লাবটি। আর সব মিলিয়ে এই প্রতিযোগিতায় নিজেদের শেষ ৪৯টি হোম ম্যাচে মাত্র একটিতে আগে গোল করে হারের রেকর্ড ছিল ইন্তারের।
আরও পড়ুন
| মিলান কাব্যে ধরাশায়ী বার্সা, ফাইনালে ইন্তার |
|
ওই গোলের খানিক বাদে ইন্তারের বক্সের ভেতর পেদ্রির শট প্রতিপক্ষের একজনের হাতে লাগলে ওঠে পেনাল্টির দাবি। তবে রেফারি তা নাকোচ করে দেন।
৩৬তম মিনিটে বিরতির আগে নিজেদের সেরা সুযোগটা পায় বার্সেলোনা। বক্সের বাইরে থেকে ইন্তারের কয়েকজন খেলোয়াড়কে ড্রিবল করে পেছনে ফেলে ডান দিক থেকে একটা শট নেন, যা শেষ চলে যায় অল্পের জন্য পোষ্টের বাইরে দিয়ে। অল্পের জন্য ট্যাপ-ইন করতে ব্যর্থ হন তরেস।
তবে একের পর এক আক্রমণে ইন্তারকে ব্যতিব্যস্ত রাখেন ইয়ামাল, যাকে নিয়ে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ সতর্ক বার্তা দিয়েছিলেন দলটির কোচ সিমোনে ইনজাগি। ডাবল মার্কিং করে তার পরিকল্পনা ছিল ইয়ামালকে আটকানোর।
তবে কাজটা ক্রমেই কঠিন থেকে কঠিন হয়ে ওঠে। ৩৯তম মিনিটে ফের গতি দিয়ে ডি-বক্সে প্রবেশ করেন ইয়ামাল। তবে ছয় গজের ভেতর শেষ সময়ে দুর্দান্ত এক স্লাইড ট্যাকেল করে সেযাত্রায় দলকে রক্ষা করেন বাস্তোনি।
এরই মাঝে ম্যাচের ধারার বিপরীতে পেনাল্টি হজম করে বসে বার্সেলোনা। লাউতারোকে আটকাতে বক্সের ভেতর ফাউল করেন পাউ কুবার্সি। ঠাণ্ডা মাথায় বাঁদিকে বল জালে পাঠান হাকান কালহানোগলু।
দুই গোল খেয়ে বেশ চাপে পড়ে যাওয়া বার্সেলোনা বিরতির আগে মাত্র ছয়টি শট থেকে একটি রাখতে পারে লক্ষ্যে। ৫১তম মিনিটে ফের ইন্তার বল জালে পাঠালেও এবার আর গোল মেলেনি অফসাইডের কারণে।
এর ঠিক দুই মিনিট পর বার্সেলোনার ক্যামব্যাকের সূচনা করেন এরিক গার্সিয়া। জটলার মধ্যে বল পেয়ে দুর্দান্ত এক ভলিতে সান সিরোতে স্তব্ধতা নিয়ে আসেন তিনি। সেই গোলের রেশ না কাটতেই আরও একটি গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিলেন। তবে ছয় গজ থেকে নেওয়া তার শট পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে ফিরিয়ে দেন ইয়ান সোমের।
তবে আরেকটি রেমোনটাডার স্বপ্নের বিভর বার্সেলোনা আক্রমণের ঢেউয়ে বেসামাল ইন্তার বেশিক্ষণ পারেনি সামাল দিতে। বাঁদিক থেকে জেরার্ড মার্তিনের দারুণ এক ক্রস থেকে ডাইভিং হেডে গোল করেন দানি ওলমো।
ছন্দহীন ইন্তার ৬৮তম মিনিটে বড় বিপদেই পড়তে যাচ্ছিল। আগুয়ান ইয়ামালকে ফাউল করে শুরুতে পেনাল্টি উপহার দিয়ে ফেলেছিলেন হেনরিখ মিখিতারিয়ান। তবে রেফারি পরে নিজের সিদ্ধান্ত বদলান ভিএআরে দেখে, যেখানে দেখা যায় ফাউলটি করা হয়েছিল ঠিক বক্সের বাইরে।
৭৯তম মিনিটে কাট করে বক্সের ভেতর থেকে গতিময় এক শট নেন ইয়ামাল, তবে পোষ্টের নিয়ে আস্থার পরিচয় দেন সোমের। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৫ স্কোরলাইনে লড়াই যখন অতিরিক্ত সময়ে গড়ানোর দিকে, তখনই চিত্রে হাজির পুরো ম্যাচে প্রায় অচেনা ছন্দে থাকা রাফিনিয়া।
৮৭তম মিনিটে মিলান শিবিরকে হতাশায় ভাসিয়ে বার্সেলোনাকে ফের এগিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। বাঁদিক থেকে বল নিয়ে বক্সে প্রবেশ করে তার নেওয়া প্রথম শট ফিরিয়ে দেন সোমের, তবে ফিরতি বল পেয়ে কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠাতে আর ভুল হয়নি তার।
আরও পড়ুন
| অ্যানফিল্ড-রোম ‘ট্র্যাজেডি’ পেছনে ফেলতে পারবে বার্সেলোনা? |
|
এই গোলের মধ্য দিয়ে দুর্দান্ত এক রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন রাফিনিয়া। এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৩টি গোলের সাথে তার নামের পাশে রয়েছে ৮টি অ্যাসিস্ট। এক মৌসুমে গোলে অবদান রাখার ক্ষেত্রে তার সমান (২১টি) রয়েছে কেবল সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর, ২০১৩-১৪ মৌসুমে।
এই গোলের পর বার্সেলোনার জয় যখন ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র, তখন মিলান শিবিরে আশার আলো নিয়ে আসেন ফ্রান্সেস্কো এসেরবি। ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় নিজের ২০তম মৌসুমে একটি গোলও না করা অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডার প্রথম গোলের জন্য বেছে নেন সেরা উপলক্ষ্য।
ডান দিক থেকে স্কিলের প্রদর্শনী দেখিয়ে বক্সের ভেতর ক্রস বাড়ান ডামফ্রিস। রক্ষণ ছেড়ে স্ট্রাইকার বনে যাওয়া এসেরবি বল রিসিভ করে কিছুটা সময় নিয়ে জায়গা বানিয়ে কোনাকুনি এক শটে বল পাঠান জালে, যা চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না সেজনির।
ম্যাচের এমন সময়ে গোল, স্বাভাবিকভাবে বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে দলের সাথে মেতে ওঠেন এসেরবিও। উদযাপন করার সময় তিনি জার্সি খুলে ফেলেন এবং এজন্য তাকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়। তবে তাতে আর কীইবা আসে যায়!
এই গোলের মধ্য দিয়ে ২০১১ সালের এপ্রিলে শালকের বিপক্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে রায়ান গিগসের পর এসেরবি (৩৭ বছর ৮৫ দিন) চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে দ্বিতীয় বয়স্ক খেলোয়াড় (৩৭ বছর ১৪৮ দিন) হিসেবে জালের দেখে পেয়েছেন।
জয়ের সুবাস পেতে পেতে এমন একটা গোল খেয়ে বসলে একটা দলের মানসিকতায় তাতে আসতে পারে বড়সড় আঘাত। বার্সেলোনার ক্ষেত্রেও হয় ঠিক তাই। তার ফলশ্রুতিতে অতিরিক্ত সময়ের নবম মিনিটে ফের গোল পেয়ে যায় ইন্তার।
ডান দিক থেকে উঠে মার্কাস থুরাম দাভিদ ফ্রাত্তেসিকে পাস বাড়ান। ২৫ বছর বয়সী এই ফুটবলার বক্সের ভেতরে মেহেদি তারেমির সাথে ওয়ান-টু খেলে এরপর প্লেসিং শটে খুঁজে নেন ঠিকানা।
এটি ছিল এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বার্সেলোনার হজম করা ২৪তম গোল, যা এক আসরে ক্লাবটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোল খাওয়ার রেকর্ড।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোলের জন্য মরিয়া বার্সেলোনা খেলে অল আউট ফুটবল। ইয়ামালের ক্রস থেকে বদলি নামা রবার্ট লেভানদভস্কির হেড অল্পের জন্য থাকেনি লক্ষ্যে।
পাল্টা আক্রমণ থেকে ক্লোজ রেঞ্জ থেকে ফ্রাত্তেসির শট ঠেকান সেজনি। ১১৪তম মিনিটে গোলের সেরা সুযোগটা নষ্ট করেন ইয়ামাল। অনেকটা নিচে নেমে বলের দখল নিয়ে লেভানদভস্কি পাস দেন ইয়ামালকে। গতিতে সবাইকে পেছনে ফেলে তরুণ এই উইঙ্গার নেন শট, যা এক হাতে কোনোমতে আটকে ইন্তার শিবিরে প্রাণ ফিরিয়ে আনেন সমের।
বাকি সময়ে বার্সেলোনার একের পর আক্রমণ সামাল দেওয়ার মাঝে সুযোগ তৈরি করে ইন্তারও। তবে লক্ষ্যে রাখতে পারেনি শট কোনো দলই। তাতে দুই বছরে মধ্যে নিজেদের দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে জায়গা করে নেয় ইন্তার।
No posts available.
২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৩ এম

থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ফিফা প্রীতি ম্যাচে বিকেল ৫টায় মাঠে নামছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এই ম্যাচে শুরুর একাদশে সুযোগ পেয়েছেন নবিরন খাতুন। আগের ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন মিডফিল্ডার মুনকি আক্তার।
গত শুক্রবার থাই মেয়েদের বিপক্ষে ৩-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে যে কারণে রক্ষণে একজন বেশি নিয়েছেন কোচ পিটার বাটলার। কেননা নবিরন রক্ষণে খেলেন। যেখানে নেতৃত্ব অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারের কাছে। তার সঙ্গে রক্ষণে আছেন শামসুন্নাহার সিনিয়র, কোহাতি কিসকু ও শিউলি আজিমরা।
মিডফিল্ডে অভিজ্ঞ মারিয়া মান্ডার সঙ্গে থাকবেন মনিকা চাকমা। ফরোয়ার্ডে ঋতুপর্ণা চাকমা, তহুরা খাতুন ও শামসুন্নার জুনিয়র খেলছেন। ম্যাচটি সরাসরি দেখা যাবে ইউটিউব লাইভে।
তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে আজকের ম্যাচে সাত পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামছে থাইল্যান্ড। আগের ম্যাচের পরই বাংলাদেশ কোচ আভাস দিয়েছিলেন তাদের বেঞ্চের শক্তি নিয়ে। তাদের আরেকটি দল যে বেঞ্চে বসে আছে তাও জানিয়েছিলেন। সতর্ক বাটলার যে কারণে ফাইভ ব্যাকলাইন নিয়ে একাদশ সাজিয়েছেন।
বাংলাদেশ একাদশ:
রূপনা চাকমা (গোলকিপার), শিউলি আজিম, শামসুন্নাহার (সিনিয়র), আফঈদা খন্দকার (অধিনায়ক), কোহাতি কিসকু, মনিকা চাকমা, মারিয়া মান্ডা, তহুরা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা, শামসুন্নাহার (জুনিয়র), নবিরন খাতুন।

মাঠে প্রতিপক্ষকে একচুলও ছাড় দিতে রাজি নন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। শুধু কি মাঠের পারফরম্যান্স? রিয়াল মাদ্রিদের ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারকে উষকে দিলে পরিণতিটাও যে ভালো হয়না সেটা প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের ভালো করেই জানা। মেজাজ হারিয়ে বিপদেও পড়েছেন মাঝেমধ্যে।
সবশেষ গতকাল রাতে এল ক্লাসিকোয় ভিনির রুদ্ররূপ দেখেন বার্সেলোনার তারকা ফুটবলার লামিনে ইয়ামাল। রিয়ালকে নিয়ে ম্যাচের আগে ১৮ বছর বয়সী উইঙ্গারের মন্তব্যে এমনিতেই তেঁতে ছিল ক্লাবটির ফুটবলাররা। ২-১ ব্যবধানে জয়ের পর ইয়ামালের ওপর ক্ষোভ উগরে দেওয়ার অপেক্ষাতেই যেন ছিলেন ভিনি।
ম্যাচ শেষে ইয়ামাল মাঠ ছাড়ার সময় তেড়ে যান ভিনিসিয়ুস। তাকে আটকাতে রীতিমতো হিমশিম খায় সতীর্থ আর দলের স্টাফরা। ইয়ামালকে উদ্দেশ্য করে রিয়াল তারকা নাকি বলেছিলেন, ‘কী ব্যাপার! ব্যাক পাস দেওয়া ছাড়া আর কিছুই তো করলে না।! শুধুই ডিফেন্ডারদের কাছে বল দিলে।’
আরও পড়ুন
| ‘ফিফা আসিয়ান কাপ’ শুরুর ঘোষণা ফিফা সভাপতির |
|
অবশ্য গোলমাল শেষে ‘শান্তির বার্তা’ দিলেন ভিনিসিয়ুস। সমর্থকদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান দেখানোর কথা বলেন তিনি, ‘সব মাদ্রিদিস্তাদের জন্য, বিশেষ করে যারা বার্নাব্যুয়ে এসে প্রাণভরে আমাদের সমর্থন করেছেন। এটাই এল ক্লাসিকো, যেখানে মাঠে ও মাঠের বাইরে অনেক কিছুই ঘটে। আমরা সব সময় ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করি, কিন্তু অনেক সময় সম্ভব হয় না।’
ভিনিসিয়ুস আরও যোগ করেন, ‘আমাদের কারও প্রতি অসম্মান দেখানোর কোনো ইচ্ছা নেই—না তরুণ খেলোয়াড়দের, না সমর্থকদের প্রতি। আমরা জানি, যখন মাঠে নামি, তখন নিজের ভূমিকা ঠিকভাবে পালন করতে হয়, আর আজ সেটাই করেছি।’
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিদের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে দারুণ পারফরম্যান্স ছিল ভিনিসিয়ুসের। গোল বা অ্যাসিস্ট পেলেও আক্রমণভাগের বাঁ প্রান্তে থেকে বার্সার রক্ষণভাগের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন ২৫ বছর বয়সী উইঙ্গার। কাতালান ক্লাবের রাইট ব্যাক জুলেস কুন্দেকে নাচিয়ে ছাড়েন তিনি। কোচ জাবি আলোনসো তাকে তুলে নিয়ে রদ্রিগোকে নামানোর সময় অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় ভিনিকে।

গ্রীষ্মকালীয় দল বদলে সবচেয়ে বেশি খরুচে ক্লাব ছিল লিভারপুল। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে তারকা ফুটবলারদের দলে ভেড়ানোয় অল রেডদের ধারে-কাছে ছিল কম ক্লাবই। তবে এতো এতো তারকার ছাপ পড়ছে না মাঠের খেলায়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ আসরের চ্যাম্পিয়নদের অবস্থা এখন এককথায় শোচনীয়।
সবশেষ ব্রেন্টফোর্ডের কাছে ২-৩ গোলে হারে লিভারপুল। ২০২১ সালের পর আরেকবার প্রিমিয়ার লিগ টানা চার ম্যাচ হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় অ্যান ফিল্ডের ক্লাবটির। একের পর এক হারে পয়েন্ট টেবিলেও নিম্নমুখী যাত্রা অব্যহত রেখেছে আর্নে স্লটের দল। শীর্ষে থাকা আর্সেনাল থেকে ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে থাকা লিভারপুল সাত নম্বরে অবস্থান করছে।
লিগের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের এমন দুর্দশার কারণ কি হতে পারে ? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজছে অনেকেই। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ইংলিশ ফরোয়ার্ড ওয়েইন রুনির মতে লিভারপুলের অনেক সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা নেতৃত্ব। স্লটের দলে নেতার ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না কাউকে।
আরও পড়ুন
| রিয়াল খেলোয়াড়দের কথার আক্রমণে জর্জরিত ইয়ামাল, বার্নাব্যুতে 'ভিনিসিয়ুস আগ্নেয়গিরি’ |
|
সম্প্রতি ‘দ্য ওয়েইন রুনি শো’ এর একটি এপিসোডে রুনি বলেন, “নেতৃত্বের অভাব সবচেয়ে বড় সমস্যা। বিশেষ করে অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক এবং দলের প্রধান ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহর শরীরী ভাষা এই সময়ে উদ্বেগের কারণ।’
তিনি আরও যোগ করেন,‘কেউই এই পরিস্থিতি আশা করেনি। এটি খুব দ্রুত এসেছে এবং খুব শক্তভাবে আঘাত করেছে। এখন তারা সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হিমশিম খাচ্ছে।’
দলের দুই সিনিয়র ফুটবলারের মধ্যে নেতার আচারণ দেখছেন না রুনি, ‘শরীরী ভাষা অনেক কিছুই বলে। আমরা দুজনের শরীরী ভাষায় মধ্যেই পার্থক্য লক্ষ্য করেছি। তারা দলের শীর্ষ দুই খেলোয়াড়। তাদের শরীরী ভাষা যদি ঠিক না থাকে, তা বাকি সবার ওপর প্রভাব ফেলে।’
লিভারপুলের পরের ম্যাচ ক্রিস্টল প্যালেসের বিপক্ষে। কারাবাও কাপের চতুর্থ রাউন্ডে ক্লাবটির মুখোমুখি হবে তারা। ক্রিস্টল প্যালেসের বিপক্ষে সবশেষ দেখায় ১-২ গোলে হেরেছে সালাহরা।

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শুরু হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোটের (আসিয়ান) ৪৭তম শীর্ষ সম্মেলন। গতকাল থেকে শুরু হওয়া সম্মেলনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশের জন্য নতুন একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের ঘোষণা দিয়েছেন ফিফা সভাপতি জিয়ানি ইনফান্তিনো। এই প্রতিযোগিতার নাম হবে ‘ফিফা আসিয়ান কাপ’।
নতুন টুর্নামেন্টের ঘোষণা দিয়ে ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো বলেন, ‘ফিফা আসিয়ান কাপের মাধ্যমে আমরা দেশগুলোকে একত্রিত করছি। এই প্রতিযোগিতা বিশাল সাফল্য বয়ে আনবে। এটি আসিয়ান অঞ্চলের জাতীয় দলের ফুটবলকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমাদের খেলাধুলার বিকাশে সহায়ক হবে।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইতোমধ্যেই আয়োজিত হচ্ছে আসিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। দুই বছর পরপর অনুষ্ঠিত হওয়া এই টুর্নামেন্টের সবশেষ আসরের চ্যাম্পিয়ন ভিয়েতনাম। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে থাইল্যান্ডকে হারিয়ে এই প্রতিযোগিতার তৃতীয় শিরোপা জেতে ভিয়েতনাম।
ইনফান্তিনো জানান, নতুন এই টুর্নামেন্টটি ফিফার আন্তর্জাতিক ম্যাচ উইন্ডোর সময় অনুষ্ঠিত হবে, যাতে বিশ্বের বিভিন্ন লিগের খেলোয়াড়রা তাদের জাতীয় দলের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
সবশেষ পূর্ব তিমোর আনুষ্ঠানিকভাবে আসিয়ানের ১১তম সদস্য হিসেবে যোগদান করেছে। ইনফান্তিনো বলেন, ‘ফুটবলবিশ্বে ১১ একটি প্রতীকী সংখ্যা, কারণ প্রতিটি দলের ১১ জন খেলোয়াড় থাকে।’
২০২৬ সালের বিশ্বকাপের মহাদেশীয় বাছাইপর্বে তৃতীয় রাউন্ডের পর একমাত্র আসিয়ান দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া এগিয়ে ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করতে পারেনি দেশটি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নতুন এই টুর্নামেন্টটি আরব কাপের ফরম্যাটে আয়োজিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফিফা জানিয়েছে, এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সবকিছু চূড়ান্ত করবে তারা।

ম্যাচের আগেই আভাস ছিল এমন কিছুর। শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো। দুই দলের ফুটবলারদের তেড়েফুঁড়ে আসা, বিবাদে জড়ানোর মতো ঘটনা এল-ক্লাসিকোর পুরোনো দিনের আমেজই যেন ফিরিয়ে এনেছে।
বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ দ্বৈরথে এবার আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়ানোর কাজটা করেন লামিনে ইয়ামাল। ‘রিয়াল মাদ্রিদ চুরি করে এরপর অভিযোগও করে’ তাঁর এমন মন্তব্যে তেতে ওঠে মাদ্রিদ শিবির। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে বার্সা উইঙ্গার ইয়ামালের দিকে তেড়ে গিয়ে সেই ক্ষোভই বুঝি উগরে দিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র-দানি কার্ভাহালরা।
বিবাদে জড়িয়ে পড়েন রিয়াল মাদ্রিদের গোলকিপার কোর্তোয়াও
লা লিগায় গতকালের ম্যাচটি কিলিয়ান এমবাপে ও জুড বেলিংহামের গোলে ২-১ ব্যবধানে জয় পায় রিয়াল। ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে অরেলিয়েঁ চুয়ামেনিকে ট্যাকল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন পেদ্রি। আর তাতেই ডাগ-আউটে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা।
রেফারির ম্যাচ শেষ হওয়ার বাঁশি বাজতেই সেই উত্তেজনা রূপ নেয় বাক-বিতণ্ডা, হাতাহাতি, আর ধাক্কাধাক্কিতে। রিয়ালের ফুটবলারদের ক্ষোভটা ছিল মূলত ইয়ামালের ওপর। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় ইয়ামাল যখন হেঁটে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন তখন তাঁকে হাত দিয়ে ইশারা করে কিছু বলছেন কার্ভাহাল। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা জানিয়েছে, রিয়ালের রাইট ব্যাক কার্ভাহাল ইয়ামালকে বলেন, ‘তুমি অনেক কথা বলো। এখন বলো দেখি!’ তখন ইয়ামাল কার্ভাহালের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁকে থামিয়ে দেন রিয়াল মিডফিল্ডার এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা।
আক্রমণাত্মক আর মারমুখি ভঙ্গিতে দেখা যায় ভিনিসিয়ুসকে। সতীর্থ সহ অনেকেও আটকাতে পারছিলেন না ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারকে। নিজের জাতীয় দলের সতীর্থ রাফিনিয়ার দিকেও তেড়ে যান ভিনি। ওই সময় ভিনিসিয়ুস নাকি ইয়ামালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কী ব্যাপার! ব্যাক পাস দেওয়া ছাড়া আর কিছুই তো করলে না।! শুধুই ডিফেন্ডারদের কাছে বল দিলে।’
ম্যাচ শেষে এমন উত্তেজনা নিয়ে বার্সার মিডফিল্ডার ফ্রেংকি ডি ইয়ং বলেন, ‘আমি মাঠে ছিলাম, হঠাৎ দেখলাম অনেক খেলোয়াড় এবং স্টাফ জড়ো হয়েছে। ম্যাচ যখন শেষ হলো তখন মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা লামিনের দিকে দৌড়ে গেল। আমার কাছে এটা কিছুটা অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে।’
ব্রাজিলের জাতীয় দলের সতীর্থকে থামাতে নেমে পড়েন রাফিনিয়াও
ডাচ মিডফিল্ডার কারভাহাল ও ইয়ামালের মধ্যে কথার লড়াই নিয়ে বলেন, ‘যেহেতু তুমি (কারভাহাল) লামিনের সতীর্থ (স্পেন দলের), তুমি তো তাকে চেন এবং যদি মনে করো তাঁর এমন মন্তব্য করা উচিত হয়নি, তাহলে তুমি তাকে কল করতে পারতে, মাঠে এমনটা করার বদলে।’
অবশ্য রিয়াল মাদ্রিদের কোচ জাবি আলোনসোর কাছে এসব স্বাভাবিকই মনে হয়েছে, ‘যা ঘটেছে তা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। আমার মনে হয় না আমাদের এখান থেকে বেশি অর্থ খুঁজে বের করা উচিত। এটা ফুটবল। আর এল-ক্লাসিকোর মতো ম্যাচে এসব হবেই।’
বিপরীতে বার্সেলোনার সহকারী কোচ মার্কাস সর্গ মাঠের খেলাতেই মনোযোগ দিতে বলছেন, ‘সত্যি বলতে, আমি বুঝতে পারিনি কি ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত বেঞ্চের মধ্যে অনেক লোক চিৎকার করছিল, তবে আমার মনে হয় আমাদের খেলার দিকে মনোযোগ দেওয়াই উচিত।’
ম্যাচ পরবর্তী দুই দলের বাক-বিতণ্ডায় জড়ানোর ঘটনায় ৬ জনকে হলুদ কার্ড এবং একজনকে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে। রিয়ালের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগো এবং এদার মিলিতাও আর বার্সেলোনার ফেরান তোরেস, আলেহান্দ্রো বালদে, ফারমিন লোপেজকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে । সরাসরি লাল কার্ড দেখেছেন রিয়াল মাদ্রিদের গোলকিপার আন্দ্রে লুনিন।