২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:২৮ এম

ক্যারিয়ারের ৬৭ নম্বর হ্যাটট্রিকের খুব কাছে ছিলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। আল আখদৌদের বিপক্ষে তিনবার বলও জালে জড়ান। তবে ভিএআরে কাটা পড়ে ‘সিআর সেভেনের’ তৃতীয় গোল।
হ্যাটট্রিক না পেলেও জোড়া গোল করে আজ সৌদি প্রো লিগে আল নাসরের ৩-০ গোলের জয়ের নায়ক রোনালদো। ক্লাবটির বাকি গোলটি করেন রোনালদোর পর্তুগিজ সতীর্থ জোয়াও ফিলিক্স।
এক মাসেরও বেশি সময় পর লিগের ম্যাচে মাঠে নেমে জোড়া গোল করে ৬৫ বছরের পুরোনো রেকর্ডে ভাগ বসালেন রোনালদো। রোনলাদোর কাছে যে বয়স কেবলই সংখ্যা সেটা প্রতিনিয়তই প্রমাণ করে যাচ্ছেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ৩০ পেরোনোর পর পর্তুগিজ মহাতারকা যত গোল করেছেন, সেটা ৩০’এর আগের চেয়ে বেশি। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৩০ বছরে পা রাখা সিআর সেভেন খেলেছিলেন মোট ৭১৮ ম্যাচ, গোল সংখ্যা ৪৬৩। গড়ে প্রতি ১২২ মিনিটে একটি করে গোল করেন ৪০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।
৩০ পেরোনোর পর যেন তারুণ হয়েছেন রোনালদো। এই ১০ বছরে তিনি করেছেন ৪৯৩ গোল, যা তাকে নিয়ে গেছে ইতিহাসের পাতায়—রনি রুকের পাশে। ফুটবলের পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা রেক.স্পোর্ট.সকার স্ট্যাটিস্টিকস ফাউন্ডেশনের (আরএসএসএসএফ) এর তথ্য অনুযায়ী, ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ৩০ বছর বয়সের পর সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি এককভাবে ধরে রেখেছিলেন রনি রুক—তার গোলসংখ্যাও ছিল ৪৯৩।
১৯৪১ সালে ৩০ বছরে পা রাখার পর ২০ বছর পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন স্তরে ফুটবল খেলেছেন রনি ব্রুক। ৩০–এর পর আর্সেনাল ও ক্রিস্টাল প্যালেসের মতো ক্লাবে খেললেও, তার সবচেয়ে গোলসমৃদ্ধ সময়টা কেটেছে ফুলহামে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে ফুলহ্যামের হয়ে লিগে ৮৭ ম্যাচে ৫৭ গোল করেছিলেন তিনি।
যুদ্ধকালীন সময়েও রনি রুক ফুটবল খেলা চালিয়ে যান। একই সঙ্গে তিনি রয়্যাল এয়ার ফোর্স (আরএএফ)-এ দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে ফুলহামের হয়ে যুদ্ধকালীন ম্যাচে তিনি মোট ১৯৯টি ম্যাচ খেলেন এবং ২১২টি গোল করেন।
তারপর রনি রুক আর্সেনাল ও ক্রিস্টাল প্যালেসে খেলেন। পরবর্তী সময়ে লিগের নিচের স্তরে নেমে বেডফোর্ড টাউন, হেওয়ার্ডস হিথ টাউন ও অ্যাডলস্টোনের মতো ক্লাবের হয়েও মাঠে নামেন। সব মিলিয়ে, ৩০ বছর বয়স পার করার পর তিনি করেছিলেন ৪৯৩ গোল—যে রেকর্ডটি তার ১৯৬১ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন অটুট ছিল।
আজ আল আখদৌদের বিপক্ষে ৩১ মিনিটে প্রথম গোলের পর প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে দ্বিতীয় গোল করেই রনি রুকের রেকর্ডে ভাগ বসান রোনালদো। রোনালদোর যে ফিটনেস তাতে ৬৫ বছরের পুরোনো এই রেকর্ড ভেঙে যাওয়া কেবলই সময়ের ব্যাপার। আগামী ৩০ ডিসেম্বর আল ইত্তিফাকের বিপক্ষে ম্যাচেই হয়তো এই রেকর্ডের মালিক হয়ে যাবেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। ক্যারিয়ারে রোনালদোর গোলসংখ্যা এখন ৯৫৬টি। হাজার গোলের অসাধারণ মাইলফলকের আরও কাছে সিআরসেভেন।
No posts available.
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭:১৭ পিএম

চলতি মৌসুমে চরম কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া লিভারপুল লিগে পেল টানা তৃতীয় জয়। প্রিমিয়ার লিগের এই মৌসুমে একটি জয়ও না পাওয়া উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে অল রেডরা জিতেছে ২-১ ব্যবধানে।
লিগে প্রথম গোল পেলেন ট্রান্সফার মার্কেটে ঝড় তুলে লিভারপুলে যোগ দেওয়া ফ্লোরিয়ান ভার্টজ। বায়ার লেভারকুসেন থেকে জার্মান মিডফিল্ডারকে দলে ভেড়াতে রেকর্ড ১৩৬৬ কোটি টাকা (১১৬ মিলিয়ন পাউন্ড) খরচ করেছে লিভারপুল। তবে অ্যান ফিল্ডের ক্লাবটিতে থিতু হতে পারছিলেন না ভার্টজ। লিগে মোট ১৭ ম্যাচ খেলে অবশেষে জালের দেখা পেলেন ২২ বছর বয়সী মিডফিল্ডার।
লিভারপুলের প্রথম গোলটি করেন রায়ান গ্রাভেনবার্গ। সেই গোলের উদযাপন করতে না করতেই দ্বিতীয় গোলের উদযাপনে মেতে উঠে লিভারপুল। এক মিনিটের মধ্যে ব্যবধান ২-১ করেন গোল খরা কাটানো ভার্টজ। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে সান্তিয়াগো বুয়েনোর গোলে ব্যবধান কমায় উলভারহ্যাম্পটন।
এ জয়ে পয়েন্ট টেবিলের চারে উঠে এলো লিভারপুল। ১৮ ম্যাচে ১০ জয় , ২ ড্র ও ছয় হারে আর্নে স্লটের দলের পয়েন্ট ৩২। শীর্ষে থাকা আর্সেনাল থেকে ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে তারা। বিপরীতে লিগে নিজেদের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ মৌসুম কাটানো উলভারহ্যাম্পটন মাত্র দুই পয়েন্ট সংগ্রহ করে একেবারে তলানীতে অবস্থান করছে।

এই ম্যানচেস্টার সিটি এক নম্বরে উঠে তো পরের ম্যাচেই আবার জিতে শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করে আর্সেনাল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে শিরোপার লড়াই বেশ জমে উঠেছে। লিগটির সবশেষ দুই রাউন্ডে দু’দফা চূড়ায় উত্থান-পতন হলো সিটি-আর্সেনালের।
আজ নটিংহ্যাম ফরেস্টের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয় ম্যানচেস্টার সিটিকে নিয়ে যায় শীর্ষে। এরপর সিটিজেনদের চাপ সামলে একই ব্যবধানে ব্রাইটনকে হারিয়ে আবার এক নম্বরে উঠে যায় আর্সেনাল।
ঘরের মাঠ এমিরেটস স্টেডিয়ামে প্রথমে মার্টিন ওডেগার্ডের গোলে ব্যবধান ১-০ করে আর্সেনাল। তারপর প্রতিপক্ষ থেকে উপহার পাওয়া আত্মঘাতি এক গোলে ব্যবধান হয়ে যায় দ্বিগুণ। ব্রাইটনের হয়ে ব্যবধান কমানো গোলটি আসে দিয়েগো গোমেজের পা থেকে।
বল দখলে খুব একটা আধিপত্য না থাকলেও শট নেওয়ায় প্রতিপক্ষ থেকে বেশ এগিয়ে ছিল আর্সেনাল। ৫৩ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখে ২৪টি শট নেয় স্বাগতিকরা। এরমধ্যে গোলমুখে ছিল ছয়টি। বিপরীতে মোট আটটি শট নিয়ে তিনটি লক্ষ্যে রাখে ব্রাইটন।
ম্যাচের শুরু থেকেই ব্রাইটনের রক্ষণভাগকে তটস্থ রাখা আর্সেনাল প্রথম গোল পায় ১৪ মিনিটে। ডান দিক দিয়ে নিজের চেনা ভঙ্গিতেই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের কেটে ভেতরে ঢুকে বল বাড়ান ওডেগার্ডের কাছে। এরপর ঠাণ্ডা মাথায় বল ডান পাশের নিচের কোণে পাঠিয়ে দেন আর্সেনাল অধিনায়ক।
৫২ মিনিটে পরের গোলটি পায় আর্সেনাল। সেট পিসে ভয়ংকর গানানরা কর্নার থেকে দ্বিতীয় গোলটি আদায় করে নেয়। ডেকলান রাইসের নেওয়া নিখুঁত কর্নার হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে পাঠিয়ে দেন ব্রাইটনের ফরোয়ার্ড জর্জিনো রুটার। ১২ মিনিট পর ব্যবধান ২-১ করা গোল পায় ব্রাইটন। তবে সফরকারীদের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার গোমেজের ওই গোলের পর আর বিপতে পড়তে হয়নি আর্সেনালকে। পুরো তিন পয়েন্ট নিয়ে সিটিকে টপকে যাওয়ার স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্তেতার দল।

পয়েন্ট টেবিলে ইদুঁর-বিড়াল খেলা চলছেই। আরও একবার আর্সেনালকে হটিয়ে লিগের চূড়ায় চড়ে বসল ম্যানচেস্টার সিটি। ওয়েস্ট হ্যামকে হারিয়ে শীর্ষে ওঠার পরে ফের রাজত্ব দখল করে গানাররা। এবার ঘাম ঝরানো জয়ে মিকেল আর্তেতার দলের ওপর আবার চাপ বাড়াল পেপ গার্দিওলার দল।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আজ নটিংহ্যাম ফরেস্টের বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে ম্যানচেস্টার সিটি। প্রতিপক্ষের মাঠ সিটি গ্রাউন্ডে তিজানি রেইন্ডার্সের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর স্বাগতিকরা সমতায় ফিরে ওমারি হাচিনসনের গোলে। এরপর ম্যাচের শেষদিকে সিটিজেনরা জয়সূচক গোলটি পায় রায়ান চেরকির নৈপুণ্যে।
এ জয়ে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত পয়েন্ট ম্যান সিটি। ১৮ ম্যাচে ইতিহাদের ক্লাবটির জয় ১৩, ড্র এক ও হার চারটি। এক ম্যাচ কম খেলে এক পয়েন্ট কম নিয়ে দুইয়ে আর্সেনাল। শীর্ষস্থান দখলে নিতে আজ ব্রাইটনের বিপক্ষে জিততেই হবে আর্সেনালকে। লিগে ২০২৫-২৬ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১০ ম্যাচে হার দেখা নটিংহ্যাম আছে অবনমন অঞ্চলের কাছে। ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ১৭ নম্বরে শন ডাইশের ক্লাব।
প্রিমিয়ার লিগে টানা পাঁচ ম্যাচ আর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা আট ম্যাচে জয় পাওয়া ম্যানচেস্টার সিটি আজ নটিংহ্যামের বিপক্ষে সব পরিসংখ্যানেই এগিয়ে ছিল। ৬৬ শতাংশ বল দখলে রেখে ১৬টি শট নিয়ে পাঁচটি লক্ষ্যে রেখেছে তারা। যেখানে সাতটি শট নিয়ে মাত্র দুটি লক্ষ্যে রাখে স্বাগতিক নটিংহ্যাম ফরেস্ট।
গোলশূন্য থেকে প্রথামার্ধ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লিড নেয় সিটি। ৪৮ মিনিটে নটিংহ্যামের বক্সের বাঁ পাশ থেকে দারুণ এক পাস দেন চেরকি। ডাচ মিডফিল্ডার রেইজিন্ডারস তাঁর বাড়ানো বল জন ভিক্টরের নিচ দিয়ে নিখুঁত শটে জালে পাঠান। এই মৌসুমে এটি তাঁর চতুর্থ গোল।
অবশ্য এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি ম্যান সিটির। মিনিট ছয়েক পরই সমতায় ফিরে নটিংহ্যাম। দুর্দান্ত এক প্রতি-আক্রমণে সিটির রক্ষণভাগকে ফাঁকি দেয় স্বাগতিকরা। ইগর জেসুসের বাড়ানো বল থেকে গোল করেন হাচিনসন।
তারপর জয়সূচক গোল পেতে বেশ অপেক্ষা করতে হয় সিটিকে। শেষ পর্যন্ত ৮৩ মিনিটে ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলটি করেন আগের গোলে সহায়তা করা চেরকি। গাভার্দিওলের নেওয়া কর্নার থেকে দারুণ ফিনিশিংয়ে ব্যবধান ২-১ করেন ডাচ উইঙ্গার।

বয়স নামক প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখনও ছুটে চলা ৪০ বছর বয়সী পর্তুগিজ মহাতারকার ফিটনেস নিয়ে নতুন করে কিছু বলারও নেই। ফিটনেস নিয়ে প্রচণ্ড ‘সিরিয়াস’ রোনালদো যে বাকি পাঁচ-দশ জনের মতো নয়।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৪১’ এ পা রাখবেন আল নাসরের তারকা। তবে ‘সিআর সেভেন’ এর বয়স নাকি মোটেও এত নয়। সংখ্যায় এখন সেটা ৪০ হলেও, রোনালদোর জৈবিক বয়স নাকি মাত্র ২৮ বছর। অর্থাৎ প্রকৃত বয়সের তুলনায় এই মহাতারকার বয়স ১২ বছর কম!
জৈবিক বয়স হচ্ছে মানুষের শরীরের কোষ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও শারীরিক কার্যক্ষমতা বাস্তবে কতটা তরুণ বা কতটা বয়স্ক অবস্থায় আছে, সেটি বোঝায়। এটি জন্মসালভিত্তিক বা প্রকৃত বয়সের সঙ্গে সব সময় মেলে না। খাদ্যাভ্যাস, অনুশীলন, ঘুমের মান, মানসিক চাপ, রিকভারি এবং সামগ্রিক জীবনযাত্রার ধরণ জৈবিক বয়সকে প্রভাবিত করে।
হার্ট রেট, ফিটনেস ডেটা, ঘুম ও রিকভারির মতো বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘হুপ’-এর মতো ডিভাইস একটি অনুমানভিত্তিক জৈবিক বয়স নির্ধারণ করে। আর এই ডিভাইস বলছে রোনালদোর বয়স এখন কেবল ২৮। যদিও বয়স নির্ধারণের চিকিৎসাগত কোনো পদ্ধতি নয় এটি। একজন ক্রীড়াবিদের ফিটনেস ও দীর্ঘমেয়াদি পারফরম্যান্স বোঝাতে সহায়ক এই ডিভাইস।
২০২৫ সালে রোনালদো এক বছর মোট ৫০১টি ওয়ার্কআউট করেন। এর মধ্যে ছিল ফুটবল, ভারোত্তলন, প্যাডলবোর্ড টেনিস, ফাংশনাল ফিটনেস ও সাঁতারের মতো বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও ব্যায়াম। ফুটবলে তাঁর গড় ওয়ার্কআউট ইনটেনসিটি ছিল ১২.০, গড় সময়কাল ৯১ মিনিট, আর গড় হার্ট রেট ছিল প্রতি মিনিটে ১২২ বিট।
ফিটনেস ঠিক রাখতে ৪০টির মতো কার্যক্রম রুটিনে রাখেন। এর মধ্যে শীর্ষ ১০টি ছিল—
মাংস গ্রহণ, ক্রায়োথেরাপি, সাউনা, ফল ও সবজি গ্রহণ, আইস বাথ, ফিশ অয়েল গ্রহণ, ক্রিয়েটিন গ্রহণ, কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ, ক্যাফেইন গ্রহণ এবং ভিটামিন বি১২ গ্রহণ। এরমধ্যে কার্যকর শীর্ষ পাঁচটি বিষয় ছিল— ক্যাফেইন গ্রহণ, মেডিটেশন, ঘুমের মান নিশ্চিত করা, মাংস গ্রহণ এবং স্ট্রেচিং।
টগবগে যুবকের মতো ফিটনেসের অধিকারী রোনালদো নিয়মিত গোলে অবদান রেখে চলছেন। সৌদি প্রো লিগে চলতি মৌসুমে আল নাসরের হয়ে ৯ ম্যাচে ১০ গোলের সঙ্গে একটি অ্যাসিস্ট করেছেন। লিগে আজ আল-আখদৌদের মুখোমুখি হবে রোনালদোর দল।

বাংলাদেশ ফুটবলের প্রাণ হামজা চৌধুরীর ক্লাব ইংল্যান্ডের লেস্টার সিটি। সোমিত সোম খেলেন কানাডা প্রিমিয়ার লিগে ক্যাভালরি এফসিতে। ইতালির ফোর্থ টায়ারের ক্লাব অলিবিয়াতে ফাহমিদুল ইসলাম। সেখানে তাঁরা কোন পরিবেশে খেলেন সেটি আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু লাল-সবুজের জার্সিতে তাঁদেরই সতীর্থ রাকিব হোসেন, শেখ মোরসালিন, জামাল ভূঁইয়াদের লিগের মাঠের পরিবেশই বা কেমন? বাংলাদেশ ফুটবল লিগের (বিএফএল) ভেন্যু নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ থাকছে প্রথম পর্ব, মানিকগঞ্জের শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়াম নিয়ে।
মানিকগঞ্জ শহরের খালপাড়ে এখন চায়ের ব্যবসা মোহাম্মদ রাসেলের, ফুলের ব্যবসায় পেরে না উঠে এই অবস্থা তাঁর। ধোয়া ওঠা রং চা হাতে শুনছিলাম সেই গল্প— চীনের আর্টিফিশিয়াল ফুলের আমদানি কিভাবে মন্দা নিয়ে এলো দেশীয় ফুলের ব্যবসায়! শীতের দুপুরের সূর্যটা হেলে পড়েছে পশ্চিম দিকে। এমন সময় বাংলাদেশ ফুটবল লিগের টিকিট বিক্রির মাইকিংয়ের আওয়াজ। দোকানে থাকা একজন ডাকলেন— 'ওই একটা টিকিট দিয়ে যা।' পকেট থেকে বের করে দিলেন ৫০ টাকা। এক হাতে টিকিট, আর পায়ের ওপর পা তুলে ফের চায়ে চুমুক। আগ্রহ জন্মাল টিকিট কেনা ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলার।
-আজ কার কার খেলা জানেন? 'জানি না, ফকিরেরপুল, আর কার জানি।' না, আজ তো আরামবাগ-ফর্টিসের ম্যাচ। 'ওহ ফর্টিস? তাইলে খেলা ভাল হবে। নতুন দলটা ভাল খেলে।’
মানিকগঞ্জ শহরের সিটি ব্যাংকের অ্যাটেনডেন্সের কাজ করেন টিকিট কেনা বিল্টু মিয়া। এদিন ফর্টিস-আরামবাগের খেলা দেখলেও ৪৯ বছর বয়সি বিল্টু মিয়া মূলত মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সমর্থক। ততক্ষণে আমার এখানে থাকার কারণটাও জানা শহরের শেওতা পাড়ার এই বাসিন্দার। চা শেষ করে রওনা দিই মাঠের উদ্দেশ্যে; পেছন থেকে বিল্টু মিয়ার ডাক, 'কাল আইসেন মোহামেডানের ম্যাচ আছে।'
মানিকগঞ্জে দাঁড়িয়ে ঢাকার মতিঝিল পাড়ার একটি দলের ম্যাচ দেখার দাওয়াত আর টিকিট বিক্রির মাইকিংয়ের আবহ কানে নিয়ে এগুতে শুরু করি শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামের দিকে।
যতটা আগ্রহ নিয়ে এসেছি, মাঠের আশপাশে তেমন কোনো উন্মাদনা চোখে পড়েনি এই ম্যাচ নিয়ে। গেটের সামনে পুলিশের টহল, তার একটু সামনে টেবিল ফেলে কয়েকজন মিলে টিকিট বিক্রির কাজ করছেন। যাদের মধ্যে একজনের নাম মাজেদ। আছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। টিকিট কেমন বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, 'তেমন না, দুই-একজন করে আসতেছে।'
খেলা শুরু হতে তখনও বাকি মিনিট ১৫। ততক্ষণে ২৫০-৩০০ টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে জানান। জানা গেল সমর্থক কম থাকার কারণ নাকি পাশের স্কুলে হওয়া একটি অনুষ্ঠান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনুমানিক ৭০০-৮০০ সমর্থক খেলা দেখতে ঢোকেন স্টেডিয়ামে।
২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ফুটবল লিগের উদ্বোধনী ম্যাচে এই মাঠে খেলে দুই স্বাগতিক আরামবাগ ক্রীড়া চক্র ও ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব। ২৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় বাংলাদেশ ফুটবল লিগের চতুর্থ রাউন্ড। এর আগে মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে খেলা হয়েছে আরও চারটি। ২৪ নভেম্বর আরামবাগের এই হোম ভেন্যুতে তাদের বিপক্ষে মাঠে নামে বসুন্ধরা কিংস। ওই ম্যাচে ছিল গ্যালারি ভরা দর্শক। টিভি পর্দায় সেটি দেখে অনেকেই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। মানিকগঞ্জ স্টেডিয়াম নিয়ে কৌতুহল শুরু হয় বাংলাদেশের ফুটবলের খোঁজ-খবর রাখা সমর্থকদের মধ্যে।
মানিকগঞ্জ স্টেডিয়ামটি মূলত জেলা পর্যায়ের স্টেডিয়াম। ১৯৬৩ সালে নির্মিত স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা- এ কে এম মিরাজ উদ্দিন ও তপন চৌধুরীর নামে স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা হয়। যেখানে এবারই প্রথমবারের মতো হচ্ছে পেশাদার ফুটবল লিগের ম্যাচ। প্রথমবারের মতো দেশের সর্বোচ্চ স্তরের ফুটবলের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করছে মানিকগঞ্জের মানুষ। স্থানীয় দর্শকদের কাছে লিগের ম্যাচগুলো বিনোদনের খোরাক। এখানে কোন দল খেলছে বা কারা কার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেসবের চেয়ে ফুটবলটাই তাঁরা উপভোগ করেন বেশি। এ যেন নিরপেক্ষ দর্শকের মাঠ।
ফুটবলীয় আকৃতির মাঠ, গুরুত্ব পায় না দর্শকরা
মানিকগঞ্জ স্টেডিয়ামের আকার আকৃতি দেখে যে কারো মনে হতে পারে গ্রাম বাংলার বড় কোনো গৃহস্থালি বাড়ি। যেখানে চারিদিক দিয়ে ঘেরা ছোট ছোট ঘর আর মাঝখানে উঠোন। আসলেই তাই, উঠোনটাই এখানে মাঠ। মূল ভবন দোতলা বিশিষ্ট। তার পাশে ছোট দুটি ভবন। এই দুই ভবনই ম্যাচের সময় দুই দল তাদের ড্রেসিংরুম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। মাঠের দক্ষিণ দিকে গ্রামের ছোট্ট কাচারি ঘরের মতো করে বানানো একটি ভিআইপি গ্যালারি। পেছনে বড় দীঘি আর তার সামনেই গোলপোস্ট। পশ্চিম ও উত্তর দিকে ইংরেজি ‘এল’ শেপে একটি লম্বা বারান্দার মতো। সেখানেই ৪ তলা বিশিষ্ট সিমেন্টের বেঞ্চ। উপরে টিন। তাতে বসেই খেলা দেখেন দর্শকেরা। ছবি কিংবা টিভি পর্দায় যা দেখতে বেশ লাগে।
এই মাঠের সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো মাঠের আকৃতি। একটি আদর্শ ফুটবলীয় আকৃতির মাঠ এটি। সাধারণত বাংলাদেশের অধিকাংশ মাঠই মাল্টি ডিসিপ্লিন মাথায় রেখে ডিজাইন করা। তবে মিরাজ-তপন স্টেডিয়াম কেবল ফুটবলীয় স্ট্রাকচারের মাঠ। ৪ কোনাবিশিষ্ট এই মাঠের সাইড লাইনের সঙ্গেই দর্শকদের স্থান। একদম কাছ থেকে খেলা দেখতে পান দর্শকেরা; এটিই এই মাঠের সৌন্দর্য। এছাড়া দর্শকদের সঙ্গে খেলোয়াড়দের কানেকশনটা হয় দারুণ এমনটাই জানিয়েছেন একাধিক ফুটবলার।
তবে ভিন্ন অভিজ্ঞতাও আছে। পুরো মাঠে ৩৫০০-৪০০০ মানুষ এক সঙ্গে বসে খেলা দেখতে পারেন। কিন্তু পশ্চিম ও উত্তর গ্যালারির বেশিরভাগ বেঞ্চই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বেঞ্চের নিচে ঘাস, গাছের ঝরা পাতা আর ময়লা আবর্জনায় ভরা। অনেক জায়গায় বেঞ্চও ভেঙ্গে গেছে। সেসব যেন দেখার কেউ নেই।
মাঠটি ফকিরেরপুল এবং আরামবাগের হোম ভেন্যু কিন্তু নিয়ন্ত্রণ জেলা প্রশাসনের হাতে। টিকিট বিক্রির টাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থা নেয় বলে জানা গেছে। যদিও সেই টাকার পরিমাণ আহামরি কিছু নয়। তারপরও প্রশ্ন থাকে ওই টাকা যদি দর্শকদের গ্যালারির জন্যও খরচ করা হতো তবে অন্তত বেঞ্চের নিচে ময়লা-আবর্জনা থাকত না।
গ্যালারি এখানে মিলেমিশে একাকার
এই স্টেডিয়াম ফকিরেরপুল ও আরামবাগের হোম ভেন্যু। ভাগ্যিস আবাহনী, মোহামেডান নেয়নি। তবে তো বিরাট অঘটনই হয়ত ঘটে যেতো এখানে। কেননা সাধারণ গ্যালারি (আদতে ছাউনি বা বারান্দা) বলতে এখানে একটিই। মানে পুরো পশ্চিম আর উত্তর গ্যালারি মিলেমিশে একাকার। মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ হলে ঘটতো অন্য ঘটনা। অন্য মাঠগুলোয় এই দুই দলের সমর্থকদের আলাদা দুই গ্যালারিতে রাখা হয়, তারপরও সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যায় অনেক সময়। তবে ম্যাচ চলাকালীন মাঠের গেটে পুলিশের টহল দেখা গেছে।
টেকনিক্যাল সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে
এই মাঠে ব্রডকাস্টিং সবচেয়ে বড় সমস্যা। চার বা তার অধিক ক্যামেরা ব্যবহার করতে চাইলেও সেটি সম্ভব নয়। মূল ভবনের দোতলা থেকে দুটি ক্যামেরা আর মাঠের মধ্যে একটি ক্যামেরা বসিয়ে দেখানো হয় খেলা। সেটি করতেও অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়। মাঠে সাংবাদিকদের জন্য নেই আলাদা কোনো প্রেসবক্স। দোতলার বেলকনির পাশে ছোট একটি জায়গা আছে বটে, তবে সেখানে তিন-চারজনের বেশি বসে খেলা কাভার করার সুযোগ নেই। ম্যাচ কমিশনার এবং রেফারিদের জন্য নীচ তলায় একটি রুম আছে। সেখানে ব্যবস্থা আহামরি কিছু নয়!
খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে পানি সঙ্কট চরমে
এছাড়া খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমের অবস্থাও খুব একটা ভালো না। পুরো একটা দলের জন্য ড্রেসিংরুমে কেবল দু’টি টয়লেট। পানি সঙ্কটও চরমে। সেখানে খেলোয়াড়দের কেমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা জানিয়েছেন মোহামেডানের মিডফিল্ডার মিনহাজুর আবেদীন বাল্লু, ‘ডেসিংরুমের বিষয়টি কি বলব। সমালোচনা করছি না, তবে এটা এক কথায় বিলো স্ট্যান্ডার্ড (মানের নিচে)। ড্রেসিংরুমে পানি থাকে না নিয়মিত। খেলার শুরুতে এবং শেষেও আমরা সাধারণত গোসল করি, বা আরও অনেক কারণে পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু দেখা গেলো সময় মতো পানিই নেই।’
সব ধরনের দর্শক উপস্থিতি, অন্যরকম অভিজ্ঞতা
ফর্টিস-আরামবাগ ম্যাচ চলাকালীন কিছু সময় খেলা দেখেছি পশ্চিম ও উত্তর গ্যালারিতে বসে। ওই ম্যাচে আলাদা কোনো দলের সমর্থক সেভাবে পাওয়া যায়নি। তবে কেউ কেউ বলেছেন ফর্টিসের খেলোয়াড়দের মান ভালো, যে কারণে তাদের সমর্থন দিচ্ছেন তাঁরা। এক গোলে পিছিয়ে পড়ায় কেউ আবার পক্ষ নিয়েছেন আরামবাগের। তবে বল পায়ে দৌড় দিলে এখানে একসঙ্গে সবাই উল্লাস করেন, গোল করলেও তাই- সেটি যে দলের খেলোয়াড়ই হোক।
মাঠের বেশিরভাগ দর্শকদের দেখে মনে হলো মধ্য বয়স্ক বা তার চেয়ে বেশি। তবে নারী দর্শকের উপস্থিতিও ছিল বেশ। এছাড়া খুদে দর্শকের দেখাও মিলেছে। এমন চার-পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছি যারা স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়েন, বয়সও কেবল ৭ কিংবা ৮। পকেটের ৫০ টাকা খরচ করে খেলা দেখতে আসা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো খারাপ লাগা নেই।
মানিকগঞ্জের ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসায় ডিগ্রি চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম। থাকেন নিজ বাড়ি টাঙ্গাইলে। সেখান থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন ম্যাচ দেখতে। জানালেন নিজের অনুভূতির কথা,
‘বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ম্যাচ দেখি। ইচ্ছে আছে ঢাকাতে গিয়ে হামজা চৌধুরীর খেলা দেখবো। তবে এখানে খেলা পড়ায় ভালো হয়েছে। কারণ আগের ম্যাচটি ছিল বসুন্ধরা কিংসের, তাদের দলে তো অনেক জাতীয় দলের খোলায়াড় আছে- রাকিব, তপু বর্মণদের দেখতে এসেছিলাম। সব মিলে ভালোই লাগে মাঠে এসে খেলা দেখতে।’
তবে এই মাঠে খেলা দেখতে আসা সমর্থকদের ঢোকা এবং বের হওয়ার পথ একটাই, যেহেতু সাধারণ গ্যালারিও একমুখী। নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা রাখার পক্ষে অনেকেই। মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের গ্যালারিতে যেতে হলে দুই দলের ডাগআউটের পেছন দিয়েই যেতে হবে। কোনো দর্শক ম্যাচ শুরুর পর ঢুকলে তাকে যেতে হবে ওই ডাগআউটের একদম পেছন দিয়েই। এছাড়া প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হলে সাধারণ গ্যালারির দর্শকদের পড়তে হবে বিড়ম্বনায়। কেননা মাঠের ভেতরে তেমন উন্নত ব্যবস্থা নেই।
উঁচু-নিচু মাঠে ঘাসও কম
বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। পাড়া-মহল্লা কিংবা স্কুল কলেজের মাঠের মতোই হাল। নতুনত্ব বলতে একটু পানি দেওয়া হয় ম্যাচের আগে। খেলা শেষে ফর্টিসের শ্রীলঙ্কান গোলকিপার সুজান পেরেইরাকে জিজ্ঞেস করি এই মাঠের পিচ কেমন? খুব বেশি কথায় বলেননি, অল্প পরিসরে তার চোখে পড়েছে কেবল মাঠের গঠনটাই,
‘মাঠ নিয়ে কি বলব, এমনই তো এখানকার (বাংলাদেশ) বেশিরভাগ মাঠ। তবে পাশে একটু ছোট মনে হলো আর ঘাস কম, এটাই অসুবিধা।’
জেলা পর্যায়ের মাঠ হিসেবে এতটুকু অসুবিধাকে বড় করে দেখার পক্ষে নন ফর্টিসের মিডিয়া ম্যানেজার ও সাবেক ক্রীড়া সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম। তিনি বলেন,
‘আমার কাছে মাঠটা খারাপ মনে হয়নি। জেলা স্টেডিয়ামের মাঠ হিসেবে ভালোই মনে হয়েছে। তবে অনেক জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে। বিশেষ করে নিয়মিত মাঠে পানি দিতে হবে এবং রোলার দিলে মাঠের যে উঁচু-নিচু জায়গা আছে সেটি ঠিক হয়ে যাবে।’
এই মাঠের দেখভালের জন্য সার্বক্ষণিক দুজন লোক রাখা আছে বলে জানিয়েছেন আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াকুব আলী। তিনি বলেন,
‘আমরা দুজন লোক রেখেছি মাঠ দেখভালের জন্য। তবে শুনেছি আমাদের খেলার আগে-পরে এই মাঠ স্থানীয় খেলার জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে। যদিও এমনটা কথা ছিল না। কারণ লোকাল খেলা হলে তো মাঠ ঠিক রাখা কঠিন হবে।’
জেলা ক্রীড়া সংস্থার কথা
মানিকগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার অফিসার ফেরদৌসী আক্তার বন্যা বলেন,
‘স্টেডিয়ামে অনেক কাজের বা সংস্কারের জায়গা আছে। এটা হচ্ছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠ। জেলা ক্রীড়া সংস্থাই এটার দেখভাল করে এবং মানিকগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার আসলে নিজস্ব তেমন কোন আয়ের উৎস নেই। এই মাঠের গ্রাউন্ড ভালো বলতে হবে। তবে বাকি সবকিছু বেশ পুরনো। সেসব জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে। সংস্কার করতে হবে। কিন্তু আমাদের কাছে এর জন্য তেমন কোনো অর্থ আসলে নেই।’
গ্রীষ্মকালীন, শীতকালীন খেলার পাশাপাশি কাবাডি, অ্যাথলেটিক্স, ভলিবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলা এই মাঠেই হয়। ফুটবলের জন্য ক্রিকেটটা এখানে করা সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি জেলার একটি ক্রিকেট টিমের প্রাকটিস পাশের জেলা টাঙ্গাইলে নিয়ে করা হয়েছে। চাইলেও শুধু ফুটবলের জন্য মাঠ ছেড়ে দেওয়া যে কারণে সম্ভব নয় বলে জানান ফেরদৌসী আক্তার,
‘শুধু ফুটবলের জন্য ছেড়ে দিলে অন্যান্য খেলা নিয়ে আমরা কোথায় যাবো সেক্ষেত্রে? আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি আমাদের জেলার খেলা আয়োজনে বিকল্প ভেন্যু নেই। পাশেই একটা আউটার মাঠ আছে, সেটা এখন পরিত্যক্ত প্রায়। যদি সরকার ওটাকে ঠিকঠাক করে দিতো তবে আমরা এই মাঠটা শুধু ফুটবলের জন্য ছেড়ে দিতে পারতাম। আর ব্যক্তিগতভাবে আমারও মনে হয় এই মাঠটা ফুটবলের জন্য আদর্শ ভেন্যু। আলাদা একটা ক্রিকেট মাঠ তৈরি করে দিলে ওখানে পাশাপাশি অন্যান্য খেলাও আয়োজন করা যেতো।’