
তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। মুয়াজ্জিনের আজান কিংবা পাখির কিচির মিচির ডাক—সবকিছুই যেন নির্মল সতেজ। রাজধানী তখনো নিরব, ঘুমে বিভোর অনেকে। কাজে যাওয়ার তাড়া নেই, জগিংয়ের শুরুটাও খানিক পরে।
কিন্তু, আলো ফুটে ওঠার আগেই একজন মা ঠিকই জেগে ওঠেন। তিনি জানেন, তাঁকে জাগতেই হবে। মাঠ ডাকছে তাঁর সন্তানকে। তাকে প্রস্তুত করে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়াই প্রাথমিক নিস্তার মায়ের।
আদতে মায়ের দায়িত্ব এখানেই শেষ মনে হলেও এর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বিস্তর। সন্তানের সারাদিনের আহারাদি, স্বাস্থ্য, পড়াশোনা, বিশ্রাম-সবকিছু নিয়েও ভাবতে হয় মাকে। পারিবারিক দায়িত্ব বা সন্তানের ভবিষ্যত নিয়েও মধ্যরাত পর্যন্ত ভাবেন মায়েরা। সন্তান ঘুমিয়ে থাকলেও মাকে থাকতে হয় সজাগ। পরের দিনের কর্মপরিকল্পনা সাজাতে হয় তাঁকে। এই মায়েদের ত্যাগ ও যত্নেই এগিয়ে যাচ্ছে সন্তান, এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী।
এই গুণী মায়েদের জন্যই প্রাণ পেয়েছে বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের স্কুল হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা। বৃহস্পতিবার ছিল লিগ ভিত্তিক সুপার সিক্সের ম্যাচ। ছেলেদের বিভাগে ছয়টি এবং মেয়েদের বিভাগে আজ প্রতিটা দল খেলেছে পাঁচটি করে ম্যাচ। পয়েন্টের ভিত্তিতে দুই বিভাগে হয় চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ। দুই বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকার সানিডেইল স্কুল।
মাঠের লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়নরা যখন উচ্ছ্বসিত, তখন সাইডলাইনে ছিল আরেক উৎসবমুখর পরিবেশ। তরুণ এই খেলোয়াড়দের অভিভাবকরা যেন নিজেদের বাচ্চাদের চেয়েও বেশি খুশি।
প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই পল্টনের শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী জাতীয় স্টেডিয়ামে এমন চিত্র। বৃহস্পতিবার দেখা গেল এমন কয়েকজন মাকে, যারা নিজেদের বাচ্চাকে সমর্থনে এসেছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের কেউ গৃহিণী, কেউ ডাক্তার, কেউ বা ব্যবসায়ী। তবে হ্যান্ডবল মাঠে সবারই একটি পরিচয়—তরুণ ক্রীড়াবিদদের মা।
এদিন নারিন্দা গভর্মেন্ট হাই স্কুলকে ৩৬-১৭ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জেতে সানিডেইল। ম্যাচ সেরা হন আরিফ ইহতিরাম খান। তিনি টি-স্পোর্টসের প্রতিবেদককে জানান, ‘অনুভূতি বোঝানোর মতো না, অনেক ভালো লেগেছে। মাকে দেখাতে পেরে খুশি।’ ইহতিরাম যখন ট্রফি হাতে উচ্ছ্বসিত, মা তখন আনন্দে আত্মহারা।
ইহতিরামের মা বলেন,
‘অনেক দিন ধরে ওরা টুর্নামেন্ট খেলছে। প্রতিটা ম্যাচ দেখেছি। খুব ভালো লেগেছে। আসলে ঢাকায় বাচ্চাদের খেলার জন্য খুব একটা জায়গা নেই। খেলার মধ্যে থাকলে ভালো হয়। সব স্কুলে এমন সুযোগ থাকলে ভালো হয়।’
নাজিয়া আক্তার পেশায় একজন ডাক্তার। পাবলিক হেলথে কর্মরত। শত ব্যস্ততার মাঝেও ছুটে আসেন ছেলের সঙ্গে। এদিনও দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলেন হ্যান্ডবল মাঠে। ছেলেকে নিয়ে বলেন,
‘সত্যি বলতে ক্লান্তি লাগে না। আমার সব সময় বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে। ওদের আমি যখন স্কুলে আনতে যাই তখন ভালো লাগে, মনে হয় মা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। পড়াশোনার পাশাপাশি যদি ভালো কাজ করতে পারে তবে খুশি। আমি মনে করি খেলাধুলা থাকলে হার-জিতের মানসিকতা বিকাশ হয়। খেলাধুলা যে শিক্ষা দেয় সেটা অনেক কাজে লাগে।’
নিজের সম্পর্কে মায়ের এমন মন্তব্য শুনে ছেলে ইহতিরাম বলেন,
‘এমন মা সবাই পায় না, আমি খুব খুশি।’
হ্যান্ডবল মাঠে দেখা যায় এক তরুণীকে, খুশিমনে এদিক-সেদিক হাঁটছেন। কিছুক্ষণ পরই এক খুদে হ্যান্ডবল খেলোয়াড়কে জড়িয়ে ধরে উৎসাহ দেন। মূলত ভাইয়ের সঙ্গে এসেছিলেন মাসুরা হোসেন আদিতি। গ্রেগরিজ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে খেলছেন তাঁর ভাই। তিনি বলেন,
‘আমার ভাইকে নিয়ে আমি অনেক গর্ব করি। ও দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। সে বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, ফুটবল—মোট কথা মাল্টি-ট্যালেন্টেড একটা বাচ্চা। আসলে ওর প্রেরণা আমাদের মা-ই।'
এমনই এক মায়ের অদম্য প্রেরণায় আজ শিরোপা হাতে তুলে নিতে পেরেছেন বলে জানান সানিডেইলের আলিজে চৌধুরী। সপ্তম শ্রেণিতে পড়া আলিজে বলেন,
‘আমি সত্যি খুব প্রাউড ফিল করছি। ওনারা (মা-বাবা) আমাকে খুব সাপোর্ট করে, এমনটা সবাই করে না। একদিন জাতীয় দলে খেলে মায়ের মুখ আরও উজ্জ্বল করতে চাই।’
মেয়ের সেই দিনের অপেক্ষায় মা মিতি চৌধুরী। ব্যক্তি জীবনে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। মেয়ের সাফল্য নিয়ে বলেন,
‘আমি অনেক খুশি। কারণ ভিকারুননিসা অনেক ভালো খেলে, সেই টিমকে হারিয়েছে আমার মেয়েরা।’ ক্যারিয়ার গড়েছেন ব্যবসায়, তবে ছোটবেলায় নিজেও খেলতেন হ্যান্ডবল। এখন মেয়েকে হ্যান্ডবলে দেখে খুশি এই মা বলেন, ‘যখন দেখি বাচ্চার খেলার প্রতি এত আগ্রহ, ওদের স্বপ্ন, ওরা খেলতে চায়, এটা দেখে আমি যত ব্যস্ত থাকি তবুও সময় বের করি। ছোটবেলা থেকে আমি নিজেও হ্যান্ডবল খেলতাম। আমার মেয়েরও ছোটবেলা থেকে হ্যান্ডবলের প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল। বাসা থেকে সবার ওর জন্য অনেক সাপোর্ট আছে।’
মা-বাবাদের প্রতি আলিজের মায়ের বার্তা,
‘আমি চাই সবাই যেন তাদের বাচ্চাদের খেলাধুলায় পাঠায়। এটা মেন্টাল হেলথে অনেক সহায়ক।’
সানিডেইলের শিরোপা জেতা দলের অন্যতম সদস্য আমানা। তাঁর মা কায়েছমা জামান এসেছিলেন মেয়ের খেলা দেখতে। তিনি একটি হোম কিচেন পরিচালনা করেন। একজন নারী সফল উদ্যোক্তা। ব্যস্ততার মাঝেও মেয়েকে সময় দেন তিনি। বলেছেন সেটিই,
‘কোচদের ভূমিকা অনেক। কারণ আমাদের প্র্যাকটিস শুরু হয় স্কুল ক্লাসের আগে। ৬টায় যেতে হয়, তখন প্র্যাকটিস করে। এরপর স্কুল শেষ করে বিকেল পাঁচটায় বাসায় আসে। ওদের জন্য আমাদের আরও সকালে উঠতে হয়। যেহেতু ওদের একটা ভালো টিফিন দিতে হয়।’
আমানা এরই মধ্যে খেলেছেন ইংল্যান্ড ও সুইডেনে। সেখানে ছিলেন তাঁর মা কায়েছমা জামান। বাংলাদেশের সঙ্গে দুই দেশের সুযোগ-সুবিধায় যে বিস্তর ফারাক সেটি উল্লেখ করে বলেন,
‘যতটুকু দেখেছি, বাংলাদেশে হ্যান্ডবলের সুযোগ-সুবিধা কম। আমার মেয়ে ইংল্যান্ডে ইনডোর স্কুল টুর্নামেন্ট খেলেছে। সেখানে সুযোগ-সুবিধা অনেক। বাইরের দেশে গেলে বোঝা যায় তারা কতটা এগিয়ে। সুইডেনে দেখেছি ওদের কি পরিমাণ সুযোগ। ইনডোর ও আউটডোর মাঠ আছে। আমার মেয়ে দুবার বিদেশে খেলেছে।’
হ্যান্ডবলে ঢাকার এই নতুন জাগরণ দেখে বেশ আশাবাদী নারী জাতীয় হ্যান্ডবল দলের কোচ ডালিয়া আক্তার। তবে আক্ষেপও আছে তাঁর,
‘ঢাকায় হ্যান্ডবল নিয়ে আগ্রহ নতুন করে তৈরি হয়েছে, এটা সত্যি দারুণ। তবে আমার চাওয়া ঢাকার বাইরেও যেন এমনটা হয়।’
ঢাকার স্কুল হ্যান্ডবলে বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই উচ্চবিত্ত পরিবারের। অতীত বলে, তাঁদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই ক্যারিয়ার হিসেবে হ্যান্ডবলকে বেছে নেন। এদের কেউ খেলাটির প্রতি ভালোবাসা থেকেই রয়ে যান। নির্মম বাস্তবতা হলো—দেশের হ্যান্ডবলে সে অর্থে পাওয়ার কিছু নেই। যে কারণে এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন অনেকেই।
হ্যান্ডবল মাঠে মায়েদের আগমন ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় ডালিয়া,
‘এটা ইতিবাচক দিক। ঢাকার ব্যস্ততার মধ্যেও মায়েরা নিজের সন্তানকে সাপোর্ট দিচ্ছেন, তাদের হ্যান্ডবলে উদ্বুদ্ধ করছেন। তাঁদের দ্বারা এই বার্তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীদের যেভাবে বাধাবিপত্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেটির ঢাল হতে পারেন এই মায়েরাই।’
No posts available.
১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৯ পিএম
১ নভেম্বর ২০২৫, ৮:০১ পিএম
১ নভেম্বর ২০২৫, ৩:৪৬ পিএম

চমক দেখালেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মাস্টার মনন রেজা নীড়। দাবা বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে আজ নরওয়ের গ্র্যান্ডমাস্টার আরিয়ান তারিকে রুখে দিয়েছেন তিনি। তবে হেরেছেন আরেক বাংলাদেশি দাবাড়ু ফাহাদ রহমান।
ভারতের গোয়ায় শনিবার থেকে শুরু হয়েছে দাবা বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড। নীড় এদিন খেলতে বসেন সাদা ঘুঁটি নিয়ে। শুরুটা করেন রোসোলোমিও অ্যাটাক (অবস্থানগত আক্রমণ) কৌশলে। মিডল গেমে ভুল করলেও এন্ড গেমে দারুণ প্রতিরোধ দেখান তিনি। ফলে ৪২তম চালে গিয়ে ড্র মেনে নেন নরওয়ের গ্র্যান্ডমাস্টারও।
অন্যদিকে, সাদা ঘুঁটির সুবিধা পেয়েও ফাহাদ ছিলেন ভুলের মধ্যেই। শেষ মুহূর্তে চেষ্টা করেন ম্যাচ ড্র করার। কিন্তু তাঁকে হারাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি ইউক্রেনিয়ান গ্র্যান্ডমাস্টার ভাসিল ইভানচুকের।
আগামীকাল রোববার কালো ঘুঁটি নিয়ে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবেন নীড়-ফাহাদ। জিতলে নীড় পৌঁছে যাবেন দ্বিতীয় রাউন্ডে।
গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবই বাংলাদেশের একমাত্র দাবাড়ু হিসেবে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে পেরেছিলেন। এবার সেই পথে কেউ হাটতে পারেন কি-না দেখার অপেক্ষা।

ঢাকা জেলা প্রশাসক ভলিবলে প্রতিযোগিতায় বালক-বালিকা দুই বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট শিক্ষা থানা দল। আজ বিকেল ৩টায় শহীদ নূর হোসেন জাতীয় ভলিবল স্টেডিয়ামে জেলা পর্যায়ের মেয়েদের ফাইনালে ক্যান্টনমেন্ট শিক্ষা থানা দল ২-০ সেটে হারিয়েছে রমনা শিক্ষা থানা দলকে।
বিকেল ৪টায় ছেলেদের ফাইনালে নবাবগঞ্জ উপজেলা বালক দলকে ২-১ সেটে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় ক্যান্টনমেন্ট শিক্ষা থানা দল। গত ১৮ অক্টোবর থেকে উপজেলা পর্যায়ে শুরু হয় আন্তঃইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। সেখান থেকে ৫টি উপজেলা চ্যাম্পিয়ন দল নিয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হল জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা।
ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় মাহাবুব-উল-আলম। সমাপনী ও বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার প্রদান করেন তিনি। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্টেট তানভীর আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভলিবল ফেডারেশনের সভাপতি ফারুক হাসান।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুল ওয়ারেছ আনসারী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) ও টুর্নামেন্ট কমিটির আহ্বায়ক শামীমা সুলতানা, টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও ঢাকা জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা সুমন কুমার মিত্র।
ঢাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সদস্য ও সাবেক জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম, জপাল শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মজিদ, বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিমল ঘোষ বুলুসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।

টানা তৃতীয়বারের মতো জাতীয় মহিলা দাবায় চ্যাম্পিয়ন হলেন নোশিন আনজুম। ১১ রাউন্ডের মধ্যে ৩ ড্র, একটি হার ও ৭টি জয় নোশিনের। শুক্রবার শেষ রাউন্ডে ড্র করেন ওয়ারশিয়া খুশবুর সঙ্গে। তাতে নিশ্চিত হয় চ্যাম্পিয়নের মর্যাদা। ২০১৬ সাল থেকে জাতীয় মহিলা দাবা খেলা নোশিন পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগে। স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। দাবায় জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুভূতি এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নিয়ে আজ শনিবার কথা বলেছেন টি-স্পোর্টসের সঙ্গে।
টি-স্পোর্টস: জাতীয় নারী দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে আবারও চ্যাম্পিয়ন হলেন, অভিনন্দন
নোশিন আনজুম: ধন্যবাদ। অবশ্যই খুব ভালো লাগছে। এবার অলিম্পিয়াড আছেতো, সেজন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সব কিছু মিলে অনেক খুশি।
টি-স্পোর্টস: প্রতিযোগিতায় কোন ম্যাচটি সবচেয়ে কঠিন মনে হয়েছে?
নোশিন আনজুম: দশম রাউন্ড আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল। কালো ঘুটি নিয়ে ওই রাউন্ডে ড্র করতে হয়েছিল।
টি-স্পোর্টস: দাবায় আপনার এই অর্জনে কার অবদান বেশি?
নোশিন আনজুম: আমার মায়ের। শুরু থেকেই… ১১-১২ বছর বয়স থেকে আম্মু-ই আমাকে দাবা ফেডারেশনে নিয়ে যায়। তিনিই আমাকে অনুপ্রেরণা দেন।
টি-স্পোর্টস: হেরে গেলে কিংবা চাপের মধ্যে পড়লে ওই সময়টা কি করেন?
নোশিন আনজুম: হারলে তো অবশ্যই খারাপ লাগে। তখন জীবনের সেরা সময়গুলোর কথা ভাবি। হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করি। মা আমাকে মোটিভেট করে।
টি-স্পোর্টস: সামনে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় লক্ষ্য কি?
নোশিন আনজুম: আপাতত অলিম্পিয়াডে ভালো করার লক্ষ্য। কারণ অলিম্পিয়াডে যদি ভালো করি তবে দাবা বিশ্বকাপেও ভালো করতে পারব।
টি-স্পোর্টস: দাবাড় ক্যারিয়ারে কোন অর্জনটা পেলে সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন?
নোশিন আনজুম: গ্রান্ডমাস্টার হতে চাই।
টি-স্পোর্টস: আপনার চোখে বাংলাদেশে দাবাড়ুদের ভবিষ্যৎ কি?
নোশিন আনজুম: অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করি বাংলাদেশের অবস্থান খুবই খারাপ। দাবায় পপুলারিটি কম। তাতে কি হয়- আমরা স্পন্সর পাই না। আর এটা তো একটা ইনডোর গেমস। অন্যান্য দেশের গ্রান্ডমাস্টার হলে সরকার থেকে সুযোগ-সুবিধা দেয় কিন্তু আমাদের দেশে তা হয় না। কোচিং করিয়ে কিংবা অন্য উপায় টাকা আয় করতে হয়।
টি-স্পোর্টস: এবার জাতীয় নারী দাবার মান কেমন দেখলেন
নোশিন আনজুম: আমার কাছে এবারে প্রতিযোগিতা কঠিন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মনে হয়েছে। ১২ জনের মধ্যে ৯জনই তো অনেক ইয়াং ছিলাম।
টি-স্পোর্টস: এবার কাকে সবচেয়ে বেশি কঠিন প্রতিপক্ষ মনে হয়েছে
নোশিন আনজুম: আলোর সঙ্গে আমি হেরেছি। এরপর ওয়ারশিয়া খুশবু এবং জান্নাতও অনেক ভালো খেলেছে। তাদের বিপক্ষে খেলা কঠিন ছিল।
টি-স্পোর্টস: দেশের সেরা নারী দাবাড়ু আপনি, তারপরও রেটিং নর্ম কম, এ নিয়ে আক্ষেপ হয় না?
নোশিন আনজুম: হ্যা অবশ্যই, আক্ষেপ তো থাকেই। রেটিং না বাড়লে তো নর্ম পাবো না। দেশে খেললে আসলে হয় না। কারণ দেশে সব খেলোয়াড়ের রেটিং কম। দেশের বাইরে খেলতে হয়, কিন্তু সেটার জন্য আর্থিক সহায়তা বা স্পন্সর নেই।
টি-স্পোর্টস: দাবাড় বাইরে প্রিয় কাজ কি
নোশিন আনজুম: বই পড়া, গান শোনা।
টি-স্পোর্টস: দাবাড়ু না হলে কি হতেন
নোশিন আনজুম: অন্য কোনো স্পোর্টসে থাকতাম। আমার ব্যাডমিন্টন খেলতে ভালো লাগে। এছাড়া আর্চারি আমার অনেক পছন্দের।
টি-স্পোর্টস: বাংলাদেশের কোনো ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়কে চেনেন?
নোশিন আনজুম: খেলা দেখা হয় না। শীতকাল আসলে খেলা হয়। আসলে খেলতে ভালো লাগে, দেখতে না।
টি-স্পোর্টস: গান শুনতে পছন্দ করেন, শিল্পী হওয়ার ইচ্ছে ছিল কখনও?
নোশিন আনজুম: একদম না।
টি-স্পোর্টস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুষ্টি বিজ্ঞানে পড়ছেন, অন্য কোনো সাবজেক্ট না নিয়ে এটাই কেন
নোশিন আনজুম: ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্সের অন্য কোনো সাবজেক্ট নিলে… আমার আসলে ম্যাথমেটিক অনেক পছন্দের, ভালো লাগার সাবজেক্ট। কিন্তু সেটা নিলে খেলাটা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হতো। আমি দুইটাই (খেলা এবং পড়াশোনা) এক সঙ্গে চালাতে চেয়েছিলাম।
টি-স্পোর্টস: দাবা এবং পড়াশোনার মধ্যে কোনটিকে প্রায়োরিটি বেশি দেন?
নোশিন আনজুম: অবশ্যই দাবা। এটা আমার প্যাশনের জায়গা। এটা আমি নিজে অনুধাবন করি যখন জোনাল চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে গিয়েছিলাম। পড়ালেখায় খারাপ করলে অতটা খারাপ লাগে না, কিন্তু দাবায় খারাপ করলে নিতে পারি না। এই জন্য আমার কাছে মনে হয় যে যদি দুইটার মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হয় তাহলে অবশ্যই দাবাকে নিব।
টি-স্পোর্টস: দাবা খেলা শুরু করেন কখন থেকে
নোশিন আনজুম: ক্লাস ফোরে থাকতে, আমার ৯ বছর বয়স থেকে। ২০১৩ সালে ঢাকায় আসি। পরের বছর ভিকারুননিসায় ভর্তি হই। ওখানে একটা টুর্নামেন্টে সিনিয়র একজনকে হারাই। তখন আম্মুও আমাকে এই খেলাটায় অনুপ্রাণিত করেন। দাবাড় প্রতি ঝোকটাও তখন থেকে বেড়ে যায়।

কারাবাও কাপের চতুর্থ রাউন্ডে গত বুধবার রাতে উলভসের বিপক্ষে ৪-৩ গোলে জয় পায় চেলসি। তবে এই ম্যাচে লাল কার্ড দেখেন লিয়াম ডেলাপ। এ নিয়ে এবারের মৌসুমে পঞ্চমবার লাল কার্ড দেখলেন চেলসির খেলোয়াড়েরা। যার সবকটি এসেছে সর্বশেষ ৪০ দিনের ব্যবধানে।
চেলসির লাল কার্ড দেখার তালিকায় আছেন- গোলকিপার রবার্ট সানচেজ, ডিফেন্ডার ট্রেভোহ চালোবাহ, স্ট্রাইকার জোয়াও পেদ্রো, ডিফেন্ডার মালো গুস্তো, স্ট্রাইকার লিয়াম ডেলাপ।
মৌসুমে চেলসি কতটা বিশৃঙ্খল ছিল?
ডেলাপকে লাল কার্ড দেখার পর চেলসি কোচ এনজো মারেস্কা নিজের রাগ অনুভূতি লুকাননি, ‘এটি বোকামি ছিল। লাল কার্ড দেখাটা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ছিল, যদিও এটি একেবারেই প্রাপ্য ছিল। আমরা এই ধরণের লাল কার্ড দেখা এড়াতে পারি এবং আমাদের সেটা করতে হবে। আজ যেভাবে লাল কার্ড দেখা গেল, এটি লজ্জাজনক। ৭ মিনিটের মধ্যে দুটি হলুদ কার্ড ছিল। অথচ দুটিই এড়ানো যেত। এভাবে লাল কার্ড দেখা কোনও ভালো লক্ষণ নয়।’
চেলসির জন্য লাল কার্ড এখনও যেন কোনও আশ্চর্যের বিষয় না। ইএসপিএন গ্লোবাল রিসার্চের মতে, এই মৌসুমে সকল প্রতিযোগিতায় চেলসির পাঁচটি লাল কার্ড ইউরোপের শীর্ষ পাঁচটি প্রধান লিগের মধ্যে সর্বাধিক।

চেলসি কি রেকর্ডের পথে?
আপাতদৃষ্টিতে লাল কার্ড দেখার দিক থেকে চেলসির ‘খারাপ ছেলে’ হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রিমিয়ার লিগের এক মৌসুমে সর্বাধিক লাল কার্ড দেখার রেকর্ড ৯টি। সেটি ২০০৯-১০ মৌসুমে সান্ডারল্যান্ড এবং ২০১১-১২ মৌসুমে কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্স এর দখলে। আর চেলসির হয়ে এখন পর্যন্ত তিনটি লিগ ম্যাচে লাল কার্ড দেখেছেন তাদের ফুটবলাররা।
তবে, ইউরোপের শীর্ষ পাঁচটি প্রধান লিগে সমস্ত প্রতিযোগিতায় রেকর্ডটি অনেকটাই নাগালের বাইরে। ২০১২-১৩ মৌসুমে সেভিয়াকে ১৭টি লাল কার্ড দেখানো হয়েছিল।
চেলসির তরুণ দল কি দায়ী
চেলসির শৃঙ্খলার অভাবের পেছনে একটা নির্দিষ্ট কারণ থাকতে পারে। যদিও মারেস্কা ইতিমধ্যেই সমস্যাটি চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে দলে খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতার অভাবে এমনটা বেশি হচ্ছে, ‘এটি আমাদের খেলার একটা অংশ। আমাদের আরও বড় হতে হবে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।’ প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে কম বয়সীদের দল চেলসি। স্কোয়াডে থাকা ফুটবলারদের গড় বয়স ২৪ বছর ১১২ দিন।

৪৩তম জাতীয় মহিলা দাবায় আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফিদে মাস্টার নোশিন আনজুম। ১১ খেলায় সাড়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তিনি শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছেন। মহিলা দাবায় এটি নোশিনের হ্যাটট্রিক শিরোপা। শুক্রবার শেষ রাউন্ডে নোশিনের প্রয়োজন ছিল ড্র। প্রতিপক্ষ ওয়ারসিয়া খুশবুর সঙ্গে ৬ চালেই ড্র হয়েছে।
নোশিন এবার ৬ রাউন্ড পর্যন্ত পিছিয়ে ছিলেন কুমিল্লা জেলার নুসরাত জাহান আলোর কাছে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জেতেন পরের ম্যাচগুলো। সব মিলিয়ে ১১ রাউন্ডের মধ্যে ৩ ড্র, একটি হার ও ৭টি জয় নোশিনের।
২০১৬ সাল থেকে জাতীয় মহিলা দাবা খেলছেন নোশিন। ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো হন চ্যাম্পিয়ন। পরের বছর খেলা হয়নি। গত বছরের পর এবারও চ্যাম্পিয়ন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী।
নোশিন এখনো ফিদে মাস্টার। দুটি আন্তর্জাতিক মাস্টার নর্ম রয়েছে তাঁর। মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার হতে এখনো আরেকটি নর্ম ও ২২০০ রেটিং প্রয়োজন। তাঁর বর্তমান রেটিং ১৯৯০। রেটিং কম ও টাইটেল নিম্ন হলেও এই মুহূর্তে নোশিনই বাংলাদেশের সেরা নারী দাবাড়ু।