
নারী কাবাডি বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার জার্মানিকে ৫৭-২৭ পয়েন্টে হারিয়েছেন রূপালী আক্তাররা।
এদিন শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে কাবু করে একের পর এক রেইডে পয়েন্ট সংগ্রহ করতে থাকেন শ্রাবণী মল্লিক, বৃষ্টি বিশ্বাস ও স্মৃতি আক্তাররা। ম্যাচ ঘড়ির পাঁচ মিনিটেই জার্মানিদের প্রথমবার অল আউট করে স্বাগতিকরা।
একচেটিয়া এই ম্যাচে প্রায় সব খেলোয়াড়কেই পরখ করে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে কাবাডি শুরু করা জার্মানি মেয়েরা এক পর্যায়ে ভালোই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শারীরিক গঠনে ইউরোপের প্রতিনিধিরা শক্তপোক্ত হলেও কৌশলে এগিয়ে ছিল দেশের মেয়েরা।
দশম মিনিটে দ্বিতীয়বার অলআউট হয় জার্মানি নন্দিনীরা, তখন ম্যাচের ব্যবধান দাঁড়ায় ২২-৫ পয়েন্টে। প্রথমার্ধ শেষে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ২৮-৯ পয়েন্টে।
দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিকদের গা ছাড়া ভাবের কারণেই জার্মানি বেশ কিছু পয়েন্ট আদায় করে নেয়। ম্যাচের শেষ ছয় মিনিট বাকি থাকতে জার্মানি তৃতীয়বার অলআউট হয়। তখন স্কোর ছিল ৪৩-২১। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচ শেষ করে ৫৭-২৭ ব্যবধানে। এর মধ্যে জার্মানদের আরও একবার অলআউট করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক রূপালি আক্তার বলেন, ‘সামনে ভারতের সাথে খেলা, আমরা ভালো খেলার চেষ্টা করব। কেননা, ওরা এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ভালো দল। টানা দুই জয় পাওয়ায় আত্মবিশ্বাস ও মনোবল অনেক বেড়েছে।’
No posts available.
১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩:৩০ পিএম
১৬ নভেম্বর ২০২৫, ৩:২০ পিএম

নারী কাবাডি বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করেছে বাংলাদেশ। মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে আজ উদ্বোধনী ম্যাচে আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন উগান্ডাকে ৪২–২২ পয়েন্টে হারিয়েছে লাল সবুজের মেয়েরা।
এদিন ধীরে-ধরে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে স্মৃতি আক্তার ছিলেন ব্যতিক্রম—ম্যাচজুড়ে দাপট দেখিয়েছেন তিনি। ডিফেন্ডারের ভূমিকায় থাকলেও রেইডে গিয়ে পয়েন্ট তুলতে দেখা গেছে স্মৃতিকে।
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া উগান্ডা শারীরিক দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল। তবে লাল–সবুজের মেয়েদের অভিজ্ঞতা ও ট্যাকটিকসের কাছে পেরে ওঠেনি তারা। তারপরও প্রথমার্ধে বেশ লড়াই করেছে আফ্রিকান অঞ্চলের প্রতিনিধিরা। এই অর্ধে বাংলাদেশ মাত্র দুই পয়েন্টে (১৪–১২) এগিয়ে ছিল।
বিরতির পরও উগান্ডা বেশ কিছুক্ষণ খেলায় ছিল। এক সময় বাংলাদেশের অর্ধে ছিলেন কেবল স্মৃতি আক্তার। পয়েন্টেও ছিল সমতা, এমনকি এগিয়েও গিয়েছিল তারা। তবে ডু–অর–ডাই রেইডে দুইজনকে আউট করে দলকে ম্যাচে ফেরান স্মৃতি। এরপর আর থামানো যায়নি স্বাগতিকদের।
দ্বিতীয়ার্ধে দুবার উগান্ডাকে অল–আউট করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ৪২–২২ পয়েন্টে ম্যাচ জিতে নেয় স্বাগতিক দল।
ম্যাচসেরা স্মৃতি আক্তার বলেন,
‘শুরুর দিকে কিছুটা চাপ অনুভব করছিলাম। যেহেতু কখনোই উগান্ডার সঙ্গে খেলিনি, এই প্রথমবার খেলছি। ওদের বুঝতে একটু সময় লেগেছে। এ কারণেই শুরুতে একটু অগোছালো মনে হয়েছে। ওদের বুঝে নেওয়ার পরে আমরা অনেক ভালো খেলেছি।’
দারুণ জয়ে আসর শুরু করা বাংলাদেশ আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ‘এ’ গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে জার্মানির। বুধবার উগান্ডা তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে।

অস্ট্রেলিয়ান রাগবি লিগে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ‘আর-থ্রিসিক্সটি’। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ নিয়ে কঠোর অবস্থানে ন্যাশনাল রাগবি লিগ (এনআরএল)। লিগ কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার জানিয়েছে— অননুমোদিত এই প্রতিযোগিতায় যে–ই খেলোয়াড় যোগ দেবে, সরাসরি হোক বা অন্য কোনো লিগ ঘুরে, এনআরএলে তার ফেরার পথে ১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা থাকবেই।
অস্ট্রেলিয়াসহ বেশিরভাগ রাগবি ইউনিয়নখেলা দেশ ঘোষণা করেছে— কেউ আরথ্রিসিক্সটিতে স্বাক্ষর করলে তাঁকে জাতীয় দলে আর ডাকবে না। রাগবি-থ্রিসিক্সটি হলো একটি প্রস্তাবিত ব্রেকঅ্যাওয়ে (উদ্বিগ্ন) রাগবি ইউনিয়ন লিগ। এনআরএলের মতো রাগবি লিগ নয়, ইউনিয়ন কোডে একটি নতুন প্রতিযোগিতা। ন্যাশনাল রাগবি লিগের কাছে একটি বিদ্রোহী লিগ। যেমনটা ফুটবলে চ্যাম্পিয়নস লিগের বিপরীতে আলোচনায় থাকা সুপার লিগ।
গতকাল অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহ্যবাহী রাগবি ক্লাব প্যারামাটা ইলস জ্যাক লোম্যাক্সের সঙ্গে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চুক্তি শেষ করেছে। তখনই আলোচনার কেন্দ্রে আসে এই বিষয়টি। নিউ সাউথ ওয়েলস স্টেট অব অরিজিন উইঙ্গার এখনো নিজের পরবর্তী গন্তব্য জানায়নি। তবে আগামী অক্টোবর শুরুর অপেক্ষায় থাকা ব্রেকঅ্যাওয়ে লিগ আরথ্রিসিক্সটিতে তাঁর যোগ দেওয়ার জোরালো আভাস মিলছে।
একই পথ ধরে এগোতে পারেন রায়ান পাপেনহুইজনও। গত মাসে মেলবোর্ন স্টর্ম তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার পর জাপানি রাগবির লোভনীয় প্রস্তাব ও পরবর্তীতে আরথ্রিসিক্সটিতে যাওয়ার গুঞ্জন জোরালো হয়। জাপান রাগবি ফুটবল ইউনিয়নও এই প্রতিযোগিতা নিয়ে প্রকাশ্য আপত্তি জানায়নি, ফলে খেলোয়াড়দের সামনে তৈরি হয়েছে বিকল্প পথের সুযোগ। আগামী মৌসুমে জাপানে খেলে পরে অনেক খেলোয়াড় আরথ্রিসিক্সটিতে পা রাখতে পারে।
আরও পড়ুন
| ২৮ বছর বয়সে প্যারালিম্পিক সোনাজয়ীর মৃত্যু |
|
এমন সম্ভাবনা মাথায় রেখে এনআরএল গত মাসেই ঘোষণা দেয়, অননুমোদিত প্রতিযোগিতায় যোগ দিলে যে–ই খেলোয়াড় হোন না কেন, এনআরএলে ফিরে আসতে চাইলে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে পুরো ১০ বছর। কেউ কেউ ভেবেছিলেন, অন্য কোনো লিগ ঘুরে গেলে হয়তো এই বিধিনিষেধ এড়ানো যাবে। সংবাদ সংস্থা এএপিকে এনআরএল’র উচ্চ পর্যায়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে— কোনো ফাঁকফোকর নেই। আরথ্রিসিক্সটিতে নাম লিখালে নিষেধাজ্ঞা অবধারিত।
যদিও এ নিয়ে আইনি প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে। খেলোয়াড়দের এজেন্টদের সাম্প্রতিক বৈঠকেও মত উঠেছে— এ নিষেধাজ্ঞা আদালতে টেকসই নাও হতে পারে। তবে এনআরএলের দাবি, খেলার স্বার্থ রক্ষায় আনা এই নীতিমালা আইনি চ্যালেঞ্জে টিকে যাবে। ২০২১ সালে ‘নো-ফল্ট স্ট্যান্ড-ডাউন’ নীতিমালা চ্যালেঞ্জ করে জ্যাক ডে বেলিন ব্যর্থ হয়েছিলেন, সেই নজিরও তুলে ধরা হচ্ছে।
আরথ্রিসিক্সটির সবচেয়ে বড় সম্ভাব্য স্বাক্ষর হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ব্রিসবেন ব্রংকোসের তারকা পেন হ্যাস। বিদ্রোহী লিগটি তাঁকে তিন মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব দিতে পারে। তবে ব্রংকোস নিশ্চিত— আগামী মৌসুমে হ্যাস তাদেরই জার্সি পরবেন।
লোম্যাক্স ও পাপেনহুইজন উভয়ের এজেন্ট ক্লিনটন শিফকফস্কে। দুই তারকার বিদায়ে প্যারামাটা ও মেলবোর্নের বেতনসীমায় চাপ কমেছে। স্টর্মের ক্ষেত্রে পাপেনহুইজনের ইচ্ছা–অনিশ্চয়তার মধ্যেই তা ছিল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। অন্যদিকে লোম্যাক্সকে ছেড়ে দিয়ে পরবর্তী তিন মৌসুমে ৭ লাখ ডলার করে বেতন খরচ সাশ্রয় হয়েছে ইলসের। মাত্র এক মৌসুম থাকার পরই লোম্যাক্স এনআরএল ছাড়তে আগ্রহী ছিলেন—ক্লাবও বাধা দেয়নি।
নিউজিল্যান্ড ওয়ারিয়র্সের সাবেক ড্যালি এম জয়ী রজার তুইবাসা–শেকও জানিয়েছেন আর-থ্রিসিক্সটিতে যোগদানের আগ্রহের কথা। তাঁর বর্তমান চুক্তি শেষ হবে আগামী বছর।

মাত্র ২৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন প্যারালিম্পিকে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সোনাজয়ী সাইক্লিস্ট পেইজ গ্রেকো। রোববার অ্যাডিলেডে নিজ বাসায় 'হঠাৎ শারীরিক জটিলতা' দেখা দেওয়ার পর মৃত্যু হয়েছে- এমন তথ্য জানিয়েছে সাউথ অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ।
জন্মগতভাবে সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত গ্রেকো টোকিও ২০২০ প্যারালিম্পিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম স্বর্ণ জিতেছিলেন। নারীদের সি১–৩ শ্রেণির ৩ হাজার মিটার একক পারসুটে তিনি গড়েছিলেন বিশ্ব রেকর্ডও। একই আসরে সি১–৩ রোড রেস ও টাইম ট্রায়ালে জিতেছিলেন ব্রোঞ্জ।
কন্যাকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন গ্রেকোর মা নাটালি। অস্ট্রেলিয়ার সাইক্লিং সংস্থা অসসাইক্লিং ও প্যারালিম্পিকস অস্ট্রেলিয়ার মাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তিনি।
“পেইজ আমাদের সবকিছু ছিল। তার দয়া, অধ্যবসায় আর উষ্ণতা আমাদের প্রতিটি দিন ছুঁয়ে যেত। সে আমাদের জীবনে যে আনন্দ আর গর্ব এনে গেছে, তা ভাষায় বলা যায় না। তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”
প্যারাসাইক্লিংয়ে গ্রেকোর ঝুলিতে ছিল একাধিক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা ও বিশ্বকাপ পদক।
অস্ট্রেলিয়া সাইক্লিং ও প্যারালিম্পিকস অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, গ্রেকোর পরিবার ও তার ঘনিষ্ঠজনরা যাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা পান এবং তার অবদান যথাযথভাবে স্মরণ করা যায়- সে জন্য তারা একসঙ্গে কাজ করবে।

আগামীকাল মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে শুরু হবে দ্বিতীয় নারী কাবাডি বিশ্বকাপ। তার আগে আজ প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় নারী বিশ্বকাপের ট্রফি উন্মোচন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ট্রফি উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে ছিলেন ১১টি দেশের অধিনায়ক।
স্বাগতিক বাংলাদেশসহ বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে—ভারত, চাইনিজ তাইপে, জার্মানি, ইরান, কেনিয়া, নেপাল, পোল্যান্ড, থাইল্যান্ড, উগান্ডা ও জাঞ্জিবার।
আজ চূড়ান্ত হয়েছে বিশ্বকাপের গ্রুপিং। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশ লড়বে থাইল্যান্ড, উগান্ডা, জার্মানি ও চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিপক্ষে। ‘বি’ গ্রুপে রয়েছে ইরান, নেপাল, চাইনিজ তাইপে, পোল্যান্ড, কেনিয়া ও জাঞ্জিবার।
এবারের দল নিয়ে বড় প্রত্যাশা নেই, তবে পদক মঞ্চে থাকতে চান বাংলাদেশের অধিনায়ক রুপালী আক্তার। তিনি বলেন,
‘আমরা প্রথম বিশ্বকাপে পঞ্চম স্থানে অধিকার করেছিলাম। এবার তার চেয়েও ভালো কিছু করতে চাই।’
বিশ্বকাপ খেলেই অবসর নেবেন রুপালী। তিনি বলেন,
‘আসলে আমি দীর্ঘদিন যাবৎ কাবাডি খেলছি, ২০০৯ সাল থেকে। বিশ্বকাপের মতো আসরে অধিনায়ক হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এর আগে আমি কখনো অধিনায়কত্ব করিনি। বিশ্বকাপ দিয়েই আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানতে যাচ্ছি। সেই আসরে অধিনায়ক হতে পারাটাও বিশেষ কিছু।’
বাংলাদেশ কোচ আরদুজ্জামানও দেখাচ্ছেন আশা। তিনি বলেন,
‘সবশেষ নারী এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে থাইল্যান্ডকে আমরা হারিয়েছি। থাইল্যান্ডকে হারিয়েই আমরা পদক জিতেছি। চাইনিজ তাইপের কাছেও হেরেছি, আবার তাদেরকে হারানোর সক্ষমতাও আমাদের আছে। ভারত ছাড়া যে কোনো দলকেই হারানোর সামর্থ্য আমাদের আছে।’
আজ ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি বিনোদ কুমার তিওয়ারি, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি ও আইজিপি বাহারুল আলম, সাধারণ সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগ।

হ্যান্ডবলের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা সখীর মতো বললেও ভুল হবে না। একজন খেলোয়াড়, কোচ, রেফারি, এজেন্ট, ম্যানেজার এবং শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা- অস্থিমজ্জায় যার হ্যান্ডবল! অনেক কিছুরই স্বাদ পেয়েছেন, ৬৬ ছুঁই ছুঁই গার্ড বুটসেক এবার ইন্টারন্যাশনাল হ্যান্ডবল ফেডারেশনের (আইএইচএফ) দায়িত্ব নিতে চান।
১৯৫৯ সালে জার্মানির সোলিঙ্গেনে জন্ম বুটসেকের। ২৭ বছরে বুন্দেসলিগার সর্বকনিষ্ঠ রেফারির কীর্তি গড়েন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি মিউনিখের টিএসভি মিলবার্টশোফেনে জার্মান হ্যান্ডবলে প্রথম পেশাদার টিম ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় রেফারির পদ ছাড়েন। ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত জাতীয় দলগুলোর ম্যানেজারও ছিলেন। আন্তর্জাতিক বিচ হ্যান্ডবল বিকাশের পথিকৃৎও ছিলেন তিনি।
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ইএইচএফ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ইএইচএফ প্রফেশনাল হ্যান্ডবল বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন বুটসেক। তাঁর ভাষায, 'হ্যান্ডবল আরও বেশি কিছু পাওয়ার যোগ্য'। নির্বাচিত হলে দক্ষিণ এশিয়া এবং বাংলাদেশের হ্যান্ডবল উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চান। টি স্পোর্টসকে বললেন নির্বাচিত হলে প্রধান অগ্রাধিকার অলিম্পিক গেমসের কেন্দ্রে হ্যান্ডবলকে ধরে রাখা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন লাইছ ত্বোহা।
বিচ হ্যান্ডবলে ২০০১ সালের ওয়ার্ল্ড গেমসে জেতার পর
টি-স্পোর্টস: আইএইচএফের নতুন সভাপতির প্রধান অগ্রাধিকারগুলো কী হওয়া উচিত? আপনার কী মনে হয়?
গার্ড বুটসেক: নম্বার ওয়ান অগ্রাধিকার হলো হ্যান্ডবলের অলিম্পিক স্থিতি নিশ্চিত করা। এটি অর্জন করতে হলে আমাদের খেলাকে বিশ্বের বৃহত্তম বাজার—ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রসারণ করতে হবে। আইওসি এমন খেলাকে মূল্য দেয় যার বৈশ্বিক প্রসার শক্তিশালী এবং টিভি রেটিং ভালো। এসব অঞ্চলে দর্শকসংখ্যা বাড়ানো ছোট বাজারের তুলনায় অনেক বেশি প্রভাব ফেলবে। এটি হ্যান্ডবলকে সত্যিকারের বৈশ্বিক খেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপার।
টি-স্পোর্টস: উদীয়মান দেশগুলোতে হ্যান্ডবলের বিকাশ এবং খেলাটিকে আরও বৈশ্বিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে আপনি কী ধরনের উদ্যোগ নিতে চান?
বুটসেক: প্রাপ্যতাই মূল বিষয়। আমি তৃতীয় একটি ডিসিপ্লিন চালু করতে চাই: আরবান হ্যান্ডবল। এটি হ্যান্ডবলের সরলীকৃত রূপ—কম খেলোয়াড়, বাস্কেটবল কোর্ট, স্কুলের মাঠ এবং আউটডোর স্পেসে খেলা যায়। কম বাধা, সহজ নিয়ম এবং আরও মজা। এটি হ্যান্ডবলকে সবার জন্য, সব জায়গায় সহজলভ্য করবে।
টি স্পোর্টস: নির্বাচিত হলে হ্যান্ডবলে প্রথম কোন পরিবর্তন আনবেন?
বুটসেক: আমি ইন্টারন্যাশনাল হ্যান্ডবল ফেডারেশনের বর্তমান 'টাকা বাঁচানো' মানসিকতা পরিবর্তন করে 'উন্নয়নে বিনিয়োগ' করার দিকে নিয়ে যাব। উন্নয়নের জন্য সম্পদের প্রয়োজন এবং আমাদের হ্যান্ডবলের ভবিষ্যতের জন্য সাহসীভাবে বিনিয়োগ করতে হবে।
টি স্পোর্টস: বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
বুটসেক: বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ফুটবলসহ শক্তিশালী ক্রীড়া সংস্কৃতি আছে। আমার পদ্ধতি হলো সহযোগিতা—বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সঙ্গে বসে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা। তারা তাদের দেশ সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানে—আমাদের ভূমিকা হবে সহায়তা ও ক্ষমতায়ন করা, নির্দেশ দেওয়া নয়।
টি স্পোর্টস: দক্ষিণ এশিয়ায় হ্যান্ডবলে মানুষকে আরও যুক্ত করতে কী করা উচিত?
বুটসেক: হ্যান্ডবল শুরু করার প্রক্রিয়া সহজ হতে হবে। সহজ প্রবেশাধিকার, সহজ নিয়ম। এ ছাড়াও হ্যান্ডবল হলো মূল্যবোধের খেলা: ন্যায়, সম্মান, প্রতিশ্রুতি। এই মূল্যবোধ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের সাথে গভীরভাবে সংযোগ ঘটাতে পারে। আরবান হ্যান্ডবলের মতো প্রকল্পগুলো—যেগুলোর জন্য বড় অবকাঠামো লাগে না, দক্ষিণ এশিয়ায় হ্যান্ডবলকে সহজলভ্য করতে পারে।
টি স্পোর্টস: এই অঞ্চলের হ্যান্ডবলের ভবিষ্যৎ আপনি কীভাবে দেখছেন?
বুটসেক: এশিয়া বৃহত্তম মহাদেশ এবং আফ্রিকার সঙ্গে মিলিয়ে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বাজার। আইএইচএফের অবশ্যই এই অঞ্চলে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হবে—এটি কোনো বিকল্প নয়, বরং একটি কৌশলগত প্রয়োজন।
টি স্পোর্টস: বর্তমানে বিশ্ব হ্যান্ডবলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
বুটসেক: আমাদের স্বীকার করতে হবে হ্যান্ডবলও একটি ব্যবসা। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে আধুনিক কাঠামো ও পেশাদার পদ্ধতি অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে আইএইচএফে ২০ জন কর্মী আছে, যেখানে বাস্কেটবলে আছে ২০০ জন। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় থাকতে হলে এই ব্যবধান কমাতে হবে।
তিনবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন আন্দ্রে লাভেরভের সঙ্গে
বিশ্বব্যাপী হ্যান্ডবল প্রচারের অনেক উপায় আছে—বড় টুর্নামেন্টের হাইলাইট ক্লিপ বিনামূল্যে দেওয়ার মিডিয়া কৌশল, আইএইচএফের সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক উন্নতি ইত্যাদি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, এটি তরুণদের অনুপ্রাণিত করা, স্কুলে এবং ক্লাবে হ্যান্ডবল খেলতে উৎসাহিত করা—এসবের উপর নির্ভর করে।
টি স্পোর্টস: স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কীভাবে নিশ্চিত করবেন?
বুটসেক: নেতৃত্বের আমার ধারণা হলো—বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করা, যাদের স্পষ্ট দায়িত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আছে। সভাপতি একা সব সিদ্ধান্ত নেবে—এমনটা হওয়া উচিত নয়। কমিশনগুলোকে আবার সক্রিয় করতে হবে, যাতে তারা নেতৃত্ব নেয় এবং অগ্রগতি চালায়। দ অবশ্যই, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকতে হবে, যাতে সব স্টেকহোল্ডার একত্রে হ্যান্ডবলের ভবিষ্যতের জন্য সেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমার দাবি যেমন বলে: হ্যান্ডবল আরও বেশি প্রাপ্য!
টি স্পোর্টস: এই অঞ্চলের অবকাঠামো এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা উন্নয়নে আইএইচএফ কী ভূমিকা রাখতে পারে?
বুটসেক: এটি মূলত মহাদেশীয় ফেডারেশনের দায়িত্ব। আইএইচএফের ভূমিকা হলো সক্ষম করে তোলা, সহায়তা করা এবং কার্যকর যোগাযোগ রাখা। সবাইকে তাদের অংশটুকু করতে হবে—সহযোগিতা এবং স্পষ্টতা গুরুত্বপূর্ণ, তবে আমি আইএইচএফ সভাপতি হলে বিশ্বব্যাপী অনেক বেশি বিনিময় ও অবকাঠামো প্রকল্প দেখা যাবে।
আগামী ১৯ থেকে ২২ ডিসেম্বর মিশরের কায়রোতে হবে আইএইচএফ নির্বাচন কংগ্রেস।