
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এখন পর্যন্ত হওয়া তিনটি ম্যাচেই আগে ব্যাটিং করা দল গড়েছে বিশাল স্কোর। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের বিধ্বংসী ফিফটিতে সেই ধারা বজায় রাখল খুলনা টাইগার্স। দুইশ ছড়ানো স্কোর পাড়ি দিতে সামান্যতম লড়াইও জমাতে ব্যর্থ হল চিটাগং কিংসের টপ অর্ডার। তবে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে নিভু নিভু জয়ের আশা জাগিয়ে তুললেন শামিম হোসেন। একাই শেষ পর্যন্ত লড়লেন মারমুখী এক ফিফটিতে, তবে সেটা যথেষ্ট হলো না জয়ের জন্য। বড় জয় দিয়েই আসর শুরু করল খুলনা।
মিরপুর বিপিএলের তৃতীয় ম্যাচে মেহেদি হাসান মিরাজের দল জিতেছে ৩৭ রানে। খুলনার দেওয়া ২০৪ রানের টার্গেটে চিটাগং ১৮.৫ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার আগে করতে পারে মোটে ১৬৬ রান।
বড় স্কোর ডিফেন্ড করতে নেমে বল হাতে খুলনার শুরুটা ছিল একটু অন্যরকমই। পাঁচটি নো বল ও দুই ওয়াইড সহ প্রথম ওভার করতে ওশানে থমাস করেন ১২টি বল! ১৮ রানের সেই ওভারেই অবশ্য নাইম ইসলামকেও ফেরান এই ক্যারিবিয়ান পেসার।
ছক্কা মেরে রানের খাতা খোলা পারভেজ হোসেন ইমন বিপদ ডেকে আনেন অতি আগ্রাসী হতে গিয়েই। আবু হায়দার রনির প্রথম শিকার হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান। পাওয়ার প্লেতে ৫৬ রান তুলতেই আরও দুই উইকেট হারিয়ে চাপের মুখে পড়ে যায় চিটাগং।
ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে ক্রমেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় দলটি। ইনিংসের মাঝের সময়ে খুলনার স্পিনারদের সামনে সংগ্রাম করতে হয়ে তাদের। তাতে ৭৪ রান তুলতেই চলে যায় ৮ উইকেট।
আর সেখান থেকেই শুরু হয় শামিমের একক লড়াই। ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই খেলতে থাকেন বড় শট। নাসুম আহমেদের এক ওভারে চার বলের মধ্যে মারেন দুটি করে চার ও ছক্কা।
এরপর শামিমের আক্রমণের মুখে পড়েন আবু হায়দার। ১৫তম ওভারের প্রথম বলটি বোলারের মাথার ওপর দিয়ে সীমানা পার করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। মাত্র ২৩ বলে করে ফেলেন ফিফটি।
শেষ পর্যন্ত আবু হায়দারের বলেই সাজঘরে ফিরতে হয় শামিমকে। তবে তার আগে খেলেন স্মরণীয় এক ইনিংস, যা কিছুটা হলেও তার দলকে যুগিয়েছিল জয়ের আশা। মাত্র ৩৮ বলে শামিম ৭৮ রান করেন ৫টি ছক্কা ও ৭টি চারের মারে। ৪৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে খুলনার সেরা বোলার আবু হায়দার।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনার নাইম শেখ প্রথম ওভারেই ছক্কা হাকিয়ে আভাস দেন আগ্রাসনের। অন্যপ্রান্তে উইলিয়াম বোসিস্টোও শুরুটা করেন ইতিবাচকভাবে। খালেদ আহমেদের প্রথম ওভারে টানা দুই ছক্কার পাশাপাশি একটি চারও মারেন নাইম।
শেষ পর্যন্ত আলিস আল ইসলামের বলে আউট হওয়ার আগে নাইমের ব্যাট থেকে আসে ৩ চার ও এক ছক্কায় ২৬ রান। খালেদকে চার ও ছয় মেরে শুরুটা ভালো পান মিরাজ। তবে এরপর আর সেভাবে এগিয়ে যেতে পারেননি খুলনা অধিনায়ক। ১০০ স্ট্রাইক রেটে করতে পারেন ১৮ রান।
৩৬ বলে পঞ্চাশে পা রাখা বোসিস্টো রানের চাকা কিছুটা সচল রাখার চেষ্টা করেন। তবে অন্যপ্রান্তে সেভাবে পাচ্ছিলেন না সমর্থন। শেষ পর্যন্ত কাজের কাজটা করে দেন অঙ্কন। ১৬তম ওভারে শামিম হোসেনকে টানা দুই ছক্কা মেরে ইনিংস শুরু করেন তরুণ এই ব্যাটার।
স্রেফ চার-ছক্কায় রান বের করা অঙ্কন এরপর শরিফুল ইসলামের এক ওভারেই হাঁকান তিন ছক্কা। ১৯তম ওভারে তুলে নেন ফিফটি মাত্র ১৮ বলে, যা বিপিএলের ইতিহাসে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে এখন সবচেয়ে কম বলে অর্ধশতকের রেকর্ড। আর সব মিলিয়ে অঙ্কনের ফিফটি এখন বিপিএলের চতুর্থ দ্রুততম।
অঙ্কন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৫৯ রানে। ১৮ বলের ইনিংস সাজান ৮টি চার ও ৩ ছক্কায়। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে বোসিস্টো খেলেন ৫০ বলে ৭৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। খুলনা ইনিংস শেষ করে ৪ উইকেটে ২০৩ রানে, যা শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হয় দলের জয়ের জন্য।
No posts available.
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫:১৭ পিএম
২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪:৩০ পিএম

বল হাতে দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। সুফলও দেখেছেন আইপিএল নিলামে। আইএল টি-টোয়েন্টিতে আলো ছড়ানোর পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল) অসাধারণ শুরু।
মোস্তাফিজের সঙ্গে স্পিড স্টার নাহিদ রানা, পাকিস্তান থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে পেসার ফাহিম আশরাফকে। তাতেই সোনায় সোহাগা রংপুর রাইডার্স। বাংলাদেশের কন্ডিশনে যে পেসাররাও ভয়ংকর রূপ ছড়াতে পারে, তা জানিয়ে দিয়েছে রংপুরের এই পেসত্রয়ী। শৈত্য প্রবাহে বলের মুভমেন্ট বেশি পেয়েছেন তাঁরা। তাতেই বেসামাল ফ্রাঞ্চাইজিহীন দল চট্টগ্রাম রয়্যালস। ফাহিমের ভয়ংকর বোলিংয়ের (৩.৫-০-১৭-৫) পাশে চেনারূপে বিপিএলে হাজির কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ (৪-০১২-২), তাতেই ১০২ রানে ইনিংস গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে চট্টগ্রাম রয়্যালসকে।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে নাঈম শেখ-মির্জা বেগ এর ব্যাটিং ঝড়ে ২৪ বলে ৪২। অথচ এমন শুরুর পর মাত্র ৪০ রানে ৭ উইকেট হারিয়েছে চট্টগ্রাম রয়্যালস। ফাহিমের দুটি স্পেলের (৩-০-১২-৩ ও ০.৫-০-৫-২) সঙ্গে মোস্তাফিজের শেষ দুটি স্পেলে (১-০-৬-১ ও ১-০-৫-১) তাসের ঘরের মতো উড়ে গেছে চট্টগ্রাম রয়্যালস। নিলামে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হওয়া নাঈম শেখ নিজেকে টি-টোয়েন্টি ব্যাটার প্রমাণে করেছিলেন ঝোড়ো শুরু। ২০ বলে ৭ চার, ১ ছক্কায় ৩৯ রানের ইনিংস শেষে মোস্তাফিজের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দলটির বিপদ ডেকে এনেছেন।
আরও পড়ুন
| ‘সিম্পল’ পরিকল্পনায় রংপুরের নায়ক ফাহিম |
|
মোস্তাফিজ, ফাহিম আশরাফ, দুজনেই পাল্লা দিয়ে ডট দিয়েছেন। ফাহিমের ডট বলের সংখ্যা ১২, মোস্তাফিজের সেখানে ১১। তবে পাকিস্তানি বাঁ হাতি রিস্ট স্পিনার সুফিয়ান মুকিম ছিলেন একটু বেশি মিতব্যয়ী (৪-০-১২-১)। ২৪টি ডেলিভারির মধ্যে ১৪টি দিয়েছেন ডট। তাঁকে একটি বাউন্ডারিও মারতে পারেনি চট্টগ্রাম ব্যাটাররা। গতি দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে বল করে নিজেকে স্বরূপে হাজির করলেও মারটা খেয়েছেন নাহিদ। ১ উইকেটের বিপরীতে তার খরচা ওভারপ্রতি ১১.০০ রান।
ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে সেই ২০১২ সাল থেকে খেলছেন ইংলিশ ক্রিকেটার ডেভিড মালান। টি-টোয়েন্টিতে ১০৫০১ রান করে ঢাকায় এসে চেনা মালানই হাজির। বিপিএলে ইতোপূর্বে ৩৮ ম্যাচে ৪১.২০ গড়, ১৩৫.৯৭ স্ট্রাইক রেটে ১২৩৬ রান করা মালান এবার শুরু করেছেন ফিফটি দিয়ে। ১০৩ রানের মামুলি টার্গেট পাড়ি দিতে গিয়ে করেছেন হিসেবি ব্যাটিং।
মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর শর্ট পিচ ডেলিভারিকে আপার কাট করে উইনিং শট নিতে যেয়ে ডিপ থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন যখন (৪৮ বলে ৫ চার, ২ ছক্কায় ৫১), তখন জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে রংপুর রাইডার্স। লিটনের সঙ্গে ওপেনিং পার্টনারশিপে ৭৩ বলে ৯১ রানে বড় জয়ের পথটা সুগম করেছিলেন মালান। তবে অবধারিত ফিফটি হাতছাড়ার আক্ষেপ নিয়ে থেমেছেন লিটন দাস (৩১ বলে ৪ চার, ২ ছক্কায় ৪৭)। ৩০ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে জয় দিয়ে শুরু করেছে রংপুর রাইডার্স ১২তম সংস্করণ। হিসেব করে ভারসাম্যপূর্ণ দল গঠনের প্রতিফলন শুরুতেই পেয়েছে রংপুর রাইডার্স।

চট্টগ্রাম রয়্যালসকে ৭ উইকেটে হারিয়ে বিপিএলের দ্বাদশ আসরে পথচলা শুরু করেছে রংপুর রাইডার্স। টস জিতে বোলিং নিয়ে ফাহিম আশরাফের চমৎকার পারফরম্যান্সে চট্টগ্রামকে মাত্র ১০২ রানে গুটিয়ে দেয় তারা। পরে অনায়াসেই জিতে নেয় ম্যাচ।
বিপিএল ক্যারিয়ারে ২০ ম্যাচের মধ্যে দ্বিতীয়বার পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছেন ৩২ ছুঁইছুঁই পেস বোলিং অলরাউন্ডার ফাহিম। নিখুঁত লাইন-লেংথের সঙ্গে গতির তারতম্যে মাত্র ১৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
পরে ম্যাচ সেরার পুরস্কার গ্রহণ করে পাকিস্তানি অলরাউন্ডার বলেছেন, সিম্পল পরিকল্পনা করেই তিনি পেয়েছেন সাফল্য।
“আমাদের খুবই সিম্পল পরিকল্পনা ছিল- কন্ডিশনটা বুঝে, সেই অনুযায়ী বোলিং করো। আমরা ঠিক সেটাই করেছি। আমার বোলিংয়ে সবসময় সিম্পল প্ল্যানিং রাখি। আমার হাতে যা কিছু আছে, আমি সেগুলো করার চেষ্টা করি। এই তো।”
আরও পড়ুন
| দাপুটে জয়ে রংপুর রাইডার্সের পথচলা শুরু |
|
সারা দেশের মতো সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও সোমবার মেলেনি রোদের দেখা। কুয়াশায় ঢাকা মাঠে বৈচিত্র্য ব্যবহার করে একের পর এক উইকেট নিয়েছেন ফাহিম। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলেনেও কন্ডিশন ব্যবহার করার দিকে জোর দিয়েছেন তিনি।
“আমি কন্ডিশনটা ঠিকমতো বুঝে নিয়েছি এবং ঠিকভাবে সেটির বাস্তবায়ন করেছি। কন্ডিশনের চাওয়া অনুযায়ী বোলিং করেছি। এতেই সাফল্য এসেছে।”
ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামার কথাও বললেন ফাহিম।
“কন্ডিশন সবসময় বদলাতে থাকে। যেমন ধরুন আজকে কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন ছিল তাই পরিকল্পনা ভিন্ন ছিল। যদি এমন না থাকত তাহলে পরিকল্পনাও বদলে যেত। রাতের ম্যাচে আবার ভিন্ন ফ্যাক্টর চলে আসে। তাই মূল বিষয় হলো কন্ডিশন বোঝা এবং সেই অনুযায়ী সব কিছু করা।”

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে রেকর্ড গড়ে আইপিএল নিলামে ৯ কোটি ২০ লাখ রুপিতে এবার দল পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসার যদি ১৮ কোটি রুপিও পেতেন, সেটিও অবাক হওয়ার ছিল না মনে করেন তাসকিন আহমেদ।
আইপিএলের নিলামে এবার তিন দলের কাড়াকাড়ির পর মোস্তাফিজকে বিশাল অঙ্কে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ কোটি টাকার বেশি) কিনে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। নিলামে তার এই মূল্য দেখে একদমই অবাক হননি তাসকিন।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেটে খেলতে ঢাকা ক্যাপিটালসে যোগ দেওয়ার পর সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের তারকা পেসার বললেন, মোস্তাফিজের এটি প্রাপ্যই ছিল।
“এটা তো দৃশ্যমান (বাংলাদেশি পেসারদের কদর বাড়ছে)। আসলে ফিজ বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক পরীক্ষিত ও প্রমাণিত একজন প্লেয়ার। ও যদি ৯ কোটির জায়গায় ১৮ কোটিও পেত, অবাক হওয়ার কিছু হতো না। কারণ ও ডিজার্ভিং একটা ক্রিকেটার।”
আরও পড়ুন
| ধারাবাহিক বোলিংয়ে এবার রিশাদের ২ উইকেট |
|
“ও প্রমাণিত এবং আইপিএলেও অনেক ম্যাচ খেলছে, ভালো করে দেখিয়েছে। আইএল-এ তো দুর্দান্ত খেলেছে। এটা আমার কাছে সারপ্রাইজিং না। আমি মনে করি, ফিজ আরও বেশি ডিজার্ভ করে। তো আশা করছি, এভাবে যদি হতে থাকে আমাদের সব ক্রিকেটারেরই কদর বাড়বে ইনশাআল্লাহ।”
এত দিন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ব্যস্ত ছিলেন তাসকিন, মোস্তাফিজ। শারজাহ ওয়ারিয়র্সের হয়ে ৬ ইনিংসে ৯ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। আর দুবাই ক্যাপিটালসের জার্সিতে মোস্তাফিজের শিকার ৮ ইনিংসে ১৫ উইকেট।
ওই টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সে খুশি তাসকিন। এরপর এবার বিপিএল খেলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে হতে যাওয়া বিশ্বকাপের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি হয়ে যাবে মনে করেন অভিজ্ঞ এই পেসার।
“আসলে ভালোর শেষ নেই। (আইএল টি২০তে) যা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আমি প্রথমবার আইএল খেললাম। আমরা তিনজন বাংলাদেশি ছিলাম। রিশাদও বিগ ব্যাশ খেলছে। আমাদের জন্য ভালো অভিজ্ঞতা হচ্ছে।”
“ফিজও মাশাআল্লাহ অনেক ভালো করছে। আমি হয়তো মোটামুটি ভালো করেছি। রিশাদও ভালো করছে। এটা অবশ্যই ভবিষ্যতে... আমাদের বিপিএল আছে, এটাও খেলার পর বিশ্বকাপে যখন যাব, আমাদের একটা ভালো প্রস্তুতি হচ্ছে।”

একটু খরুচে ছিলেন ঠিক। তবে যথাসময়ে উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের ছন্দে ছেদ ঘটিয়েছেন রিশাদ হোসেন। প্রথম ম্যাচ বাদে পরের সবক’টি ম্যাচেই উইকেট নিলেন তিনি। বিগ ব্যাশে আজ বাংলাদেশি লেগ স্পিনারের শিকার দুই উইকেট। এ নিয়ে পাঁচ ম্যাচে তাঁর উইকেট হলো আটটি।
মেলবোর্ন রেনেগের্ডেসের বিপক্ষে আজ ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন রিশাদ। মোহাম্মদ রিজওয়ান ও জ্যাক ফ্রেজার ম্যাক-গুর্ককে আউট করেছেন ২৩ বছর বয়সী লেগি।
হবার্ট হারিকেন্সের হয়ে আজ রিশাদ বোলিংয়ে আসেন দলের পঞ্চম ওভারে। নিজের প্রথম ওভারে আট রান দেন তিনি। পরের ওভারে এসে তুলে নেন রিজওয়ানের উইকেট। ওই ওভারের তৃতীয় বলে রিশাদকে চার মারার পরের বলেই রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলেন পাকিস্তানের ব্যাটার।
আরও পড়ুন
| রংপুরের তোপে কাঁপছে চট্টগ্রাম |
|
তৃতীয় ওভারে বেশ খরুচে ছিলেন রিশাদ। অবশ্য ওই ওভারে একটি উইকেটও নেন হারিকেন্সের বোলার। প্রথম বলেই উইকেট পেতে পারতেন রিশাদ। তবে বাউন্ডারি লাইনে নিখিল চৌধুরির হাত ফঁসকে সেটা হয়ে যায় ছক্কা। ক্যাচ মিস করে কাঁধের চোটেও পড়েন তিনি।
তারপর তাঁর ওভারের দ্বিতীয় বলে দুই আর তৃতীয় বলে সিঙ্গেল আসে। চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকায় ম্যাক-গুর্ক। তবে রিজওয়ানকে ফেরানোর মতোই শোধ তুলতে দেনি করেননি রিশাদ। বাউন্ডারি মারার পরের বলেই ক্যাচ তুলে আউট হন গুর্কও।
দলীয় ১৪তম ওভারে নিজের ওভারের কোটা শেষ করতে আসেন রিশাদ। শেষ ওভারে একটি বাউন্ডারি হজম করলেও তার করা চারটি ডেলিভারি থেকে রান তুলতে পারেনি প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটার।

শিরোপার দাবিদার হিসেবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলতে এসে প্রথম ম্যাচেই দাপট বুঝিয়ে দিল রংপুর রাইডার্স। দুর্দান্ত বোলিং প্রদর্শনীর পর ব্যাটিংয়েও চমৎকার পারফরম্যান্সে বড় জয়ে পথচলা শুরু করল ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নরা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার চট্টগ্রাম রয়্যালসের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হারায় নুরুল হাসান সোহানের নেতৃত্বাধীন। আগে বোলিং করে চট্টগ্রামকে মাত্র ১০২ রানে গুটিয়ে দেয় তারা। পরে ১৫ ওভারে ম্যাচ জিতে নেয় রংপুর।
দলের জয়ের মূল কারিগর ফাহিম আশরাফ। চমৎকার বোলিংয়ে মাত্র ১৭ রানে ৫ উইকেট নেন ফাহিম। এটি বিপিএলে পাকিস্তানি অলরাউন্ডারের দ্বিতীয় ৫ উইকেট। এছাড়া মোস্তাফিজুর রহমানের শিকার ২ উইকেট।
রান তাড়ায় দারুণ শুরু করেন দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও দাভিদ মালান। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল, পুরো ১০ উইকেটেই জিতে যাবে রংপুর। কিন্তু মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর জোড়া আঘাতে সেটি করতে পারেনি তারা।
আরও পড়ুন
| দুর্দান্ত বোলিংয়ে ফাহিমের ৫ উইকেট, রংপুরের সহজ লক্ষ্য |
|
সবচেয়ে বেশি ঝড়টা বয়ে যায় মাহমুদুল হাসান জয়ের ওপর। নবম ওভারে ৩টি ছক্কার সঙ্গে একটি চার হজম করে ২৪ রান দেন খণ্ডকালীন এই অফ স্পিনার।
১৩তম ওভারে মুগ্ধর বলে বড় শট খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন লিটন। ৪ চার ও ২ ছক্কায় মাত্র ৩১ বলে ৪৭ রান করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। এরপর মাত্র ১ রান করে ফিরে যান তিন নম্বরে নামা তাওহিদ হৃদয়।
জয়ের জন্য মাত্র ২ রান বাকি থাকতে জয়ের বলে কভারে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪৮ বলে ৫১ রান করা মালান। বাকি কাজ শেষ করেন মাহমুদউল্লাহ ও খুশদিল শাহ।
এর আগে টস জিতে বোলিং করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারে গতিময় ডেলিভারিতে চট্টগ্রামের বিদেশি ওপেনার অ্যাডাম রসিংটনকে আউট করেন রংপুরের পেসার নাহিদ রানা। শর্ট ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ নেন আলিস আল ইসলাম।
এরপর পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তবে তাকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি মোস্তাফিজুর রহমান। বোল্ড হয়ে ফেরেন ২০ বলে ৩৯ রান করা বাঁহাতি ওপেনার।
দুই পেসারের পর রহস্য নিয়ে হাজির হন আলিস আল ইসলাম। তার জাদুকরী ডেলিভারিতে রানের খাতা খোলার আগেই কট বিহাইন্ড হন মাহমুদুল হাসান জয়।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন ফাহিম আশরাফ। সপ্তম ওভারে মাহফিজুল ইসলাম রবিনকে আউট করেন পাকিস্তান অলরাউন্ডার।
১১তম ওভারে মাসুদ গুরবাজকে ফেরান ফাহিম। একই ওভারে চট্টগ্রাম অধিনায়ক শেখ মেহেদি হাসানকেও আউট করেন তিনি। মাত্র ৭৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে চট্টগ্রাম।
আরও পড়ুন
| রংপুরের তোপে কাঁপছে চট্টগ্রাম |
|
নতুন স্পেলে ফিরে প্রতিপক্ষকে আরও বিপদে ফেলে দেন মোস্তাফিজ। কাটার মাস্টারের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন তিন নম্বরে নামা মির্জা বেগ (২৪ বলে ২০)।
তানভির ইসলামকে ফেরান পাকিস্তানের বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার সুফিয়ান মুকিম। আর ১৮তম ওভারে চার বলের মধ্যে আবু হায়দার রনি ও শরিফুল ইসলামকে আউট করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন ফাহিম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চট্টগ্রাম রয়্যালস: ১৭.৫ ওভারে ১০২ (নাঈম ৩৯, রসিংটন ১, মির্জা ২০, জয় ০, রবিন ১, গুরবাজ ৯, মেহেদি ১, রনি ১৩, তানভির ৬, শরিফুল ৬, মুগ্ধ ১*; নাহিদ ৩-০-৩৩-১, ফাহিম ৩.৫-০-১৭-৫, আলিস ৩-০-১৭-১, মোস্তাফিজ ৩-০-১৯-২, সুফিয়ান ৪-০-১২-১, খুশদিল ১-০-৩-০)
রংপুর রাইডার্স: ১৫ ওভারে ১০৭/৩ (মালান ৫১, লিটন ৪৭, হৃদয় ১, মাহমুদউল্লাহ ১*, খুশদিল ৬*; শরিফুল ২-০-১৬-০, মেহেদি ৪-০-২৭-০, তানভির ৪-০-২৭-০, মির্জা ১-০-২-০, জয় ২-০-৩০-১, মুগ্ধ ২-০-৫-২)
ফল: রংপুর রাইডার্স ৭ উইকেটে জয়ী