পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে হারানোর দুর্দান্ত স্মৃতি নিয়েই ভারতে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। সিরিজ না জিতলেও অন্তত ভালো ক্রিকেটের প্রত্যাশা তাই সবারই ছিল। তবে দুই ম্যাচের একটির দুই সেশন বাদে প্রতিটিতেই ভারতের সামনে দাঁড়াতে পারেননি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্ট তো হেরে গেছে আদতে দুই দিনেই। এমন পারফরম্যান্সের পর দল নিয়ে একরাশ হতাশাই ফুটে উঠল নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠে। বাংলাদেশ অধিনায়কের অকপট স্বীকারোক্তি, সব বিভাগেই লড়াই করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনে ১৪৪ রানে ভারতের ৬ উইকেট তুলে দারুণ অবস্থানে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে অশ্বিন-জাদেজার ১৯৯ রানের রেকর্ড জুটিতে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভারত শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে চারদিনেই হারায় ২৮০ রানে। দ্বিতীয় টেস্টে তো অবস্থা আরও নাজুক। বৃষ্টির কারণে ওভারের হিসাবে মাত্র দিন হওয়া ম্যাচেই বাংলাদেশকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে স্বাগতিকরা জিতেছে ৭ উইকেটে। দুই ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর যথাক্রমে ২৩৩ ও ১৪৬।
ধবলধোলাই হয়ে শান্ত এমন হতশ্রী ক্রিকেটের পেছনে অজুহাত না খুঁজে মেনে নিয়েছেন তাদের ব্যর্থতা।
“দুই টেস্টেই আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি। এই পরিস্থিতিতে আমাদের ভালো ব্যাটিং করতে হবে। আপনি যদি আমাদের ব্যাটারদের দেখেন - আমরা ৩০-৪০ বল খেলে আউট হয়েছি। টেস্ট ম্যাচে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, ব্যাটসম্যানরা যখন মাঠে নামেন, তখন তাদের বড় রান করতে দেখা উচিত। (প্রথম টেস্টে) সেই সময়ে অশ্বিন ও জাদেজা যেভাবে ব্যাট করেছিল - তারা সত্যিই দারুণ ব্যাটিং করেছিল। বোলিং ইউনিট হিসেবে আমাদের সেই মুহূর্তগুলোর দিকে তাকাতে হবে। বের করতে হবে কীভাবে আমরা সেই সময়ে উইকেটগুলো নিতে পারি। সেই জুটিই ওই ম্যাচ থেকে আমাদের ছিটকে দেয়। এই টেস্টে (প্রথম ইনিংসে) মুমিনুল যেভাবে ব্যাটিং করেছে, সেটা আমদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আর মিরাজ দুই ইনিংসেই যেভাবে বোলিং করেছে, সে সত্যিই ভালো বোলিং করেছেন।”
প্রথম টেস্টে তাও কিছুটা লড়েছিল বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় টেস্টে পুরো দল তো বটেই, শান্ত নিজেও ব্যাটার হিসেবে দলকে বেশ হতাশই করেছেন। প্রথম ইনিংসে সেট হয়ে ৩১ রানে আউট হয়েছেন। আর দ্বিতীয় ইনিংসে ক্রিজে গিয়েই দল যখন ম্যাচ বাঁচাতে প্রবল চাপের মুখে, তখন রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে হন বোল্ড। পুরো দলের ব্যাটিংয়ের চিত্রটাও একই এই ম্যাচে, স্রেফ মুমিনুল হক বাদে। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার প্রথম ইনিংসে করেছেন প্রশংসা করার মত এক সেঞ্চুরি।
আর বোলারদের মধ্যে এই সিরিজে বাংলাদেশে সেরা পারফর্মার ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। দ্বিতীয় টেস্টের দুই ইনিংসেই ভারতের ব্যাটারদের আগ্রাসনের মধ্যেও নিয়েছেন ছয় উইকেট। প্রথম টেস্টেও বেশ ভালো বোলিংই করেন এই তরুণ অলরাউন্ডার।
No posts available.
১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম
১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৫৪ পিএম
১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৮:৫৪ পিএম
আফগানিস্তানের আরগুন জেলায় হামলায় তিন স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হওয়ায় আগামী মাসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ায় আফগানিস্তান। রশিদ খানের দল সিরিজ বয়কট করায় তাদের জায়গা নিচ্ছে জিম্বাবুয়ে। পাকিস্তানে হতে যাওয়া তিন জাতির সিরিজে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তৃতীয় দল হিসেবে যোগ দিবে জিম্বাবুয়ে।
আজ আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) এক সিরিজ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে। কারণ হিসেবে তারা দাবি করে, দেশটির উরগুন জেলায় একটি সীমান্ত-পারাপারের হামলায় তিনজন স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হয়েছেন।
এক্স ( টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে এসিবি জানায়, ‘এই হামলায় একাধিক প্রাণহানি হয়েছে, যাদের মধ্যে ছিলেন তিনজন স্থানীয় ক্রিকেটার, যারা পাকতিকা প্রদেশের রাজধানী শারানায় একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে বাড়ি ফিরছিলেন।’
এসিবি আরও জানায়, ‘এই ঘটনা আফগান ক্রীড়া সমাজ, ক্রীড়াবিদ এবং ক্রিকেট পরিবারের জন্য এক বড় ক্ষতি।’
আফগানিস্তানের বিবৃতির পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে জানিয়েছে, সিরিজটি নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে, এবং আফগানিস্তানের পরিবর্তে অন্য একটি দল অংশ নেবে। জিম্বাবুয়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে দেওয়া বিবৃতিতে পিসিবি জানিয়েছে, তারা আগেই আফগানিস্তানের ‘অংশগ্রহণে অক্ষমতা’ সম্পর্কে অবহিত ছিল।
আগামী ১৭ নভেম্বর শুরু হয়ে ২৯ নভেম্বর শেষ হবে ত্রিদেশীয় সিরিজ। পাকিস্তানের লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিতে হবে সিরিজটি। রাওয়ালপিন্ডিতে স্বাগতিক পাকিস্তান মুখোমুখি হবে জিম্বাবুয়ের। দুই দিন পর একই মাঠে জিম্বাবুয়ে খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সিরিজের বাকি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে।
প্রথম ইনিংসে বড় বড় টার্ন পেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনাররা। সেই ধারা অব্যাহত রাখলেন বাংলাদেশ স্পিনাররা। বোলারদের বাড়তি সুবিধার ম্যাচে মূল আলোচনায় মিরপুরের উইকেট। তবে ম্যাচ শেষে দুই দলই মেনে নিয়েছে, সবার জন্য একই ছিল পিচ।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেনি দুই দল। ২ বল বাকি থাকতে অল আউট হয় বাংলাদেশ। আর ৩৯ ওভারের বেশি খেলতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
স্পিনারদের দাপটের ম্যাচে বড় বিজ্ঞাপন রিশাদ। ব্যাট হাতে ১৩ বলে ২৬ রানের পর বোলিংয়ে ৩৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে তিনিই ম্যাচের সেরা।
পরে সংবাদ সম্মেলনে তাকে উত্তর দিতে উইকেট নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের। যেখানে তিনি স্পষ্ট জানান দেন, দুই দলের জন্য একই ছিল মিরপুরের পিচ।
"আসলে উইকেট ওদের জন্য যেমন ছিল, আমাদের জন্যও তেমনই ছিল। আমার মনে হয়, দুই দলের জন্যই... এর চেয়ে বাজে উইকেট কিন্তু গায়ানাতে ছিল। আমরা কিন্তু এর সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলেছি। দুই দলের জন্য কিন্তু সমান ছিল।"
এই উইকেটে বেশ ধুঁকেছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ৫১ রান করতে ৯০ বল খেলেছেন তাওহিদ হৃদয়। অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ৭৬ বলে করেন ৪৬ রান। আর নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৬৩ বলে ৩২ রান।
রিশাদ বললেন, উইকেটের কারণেই সময় নিয়ে খেলেছেন ব্যাটাররা।
“আপনারা দেখেছেন উইকেট কী রকম ছিল। আমাদের ব্যাটাররা হয়তো বুঝতে পেরেছে, এখানে সময় নিয়ে খেললে পরে শেষটা ভালো করতে পারব। তো সেটাই পরিকল্পনা ছিল। ইনিংসটা টেনে নেওয়ার।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা এই উইকেটে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। তবে ব্যতিক্রম ছিল তাদের বোলাররা। খ্যারি পিয়েরে, রস্টোন চেজ করেন দারুণ বোলিং। উইকেটের পূর্ণ সুবিধাই নেন তারা।
পরে অবশ্য রিশাদের ঘূর্ণিতে কঠিন পরীক্ষায় ফেল করেন ব্যাটাররা। তাই মেলে ৭৪ রানের পরাজয়। ম্যাচ শেষে তাদের অধিনায়ক শাই হোপও তাই উইকেটের চ্যালেঞ্জের কথা বললেন বেশ জোর দিয়ে।
“নিঃসন্দেহে এটি স্পিন-সহায়ক উইকেট ছিল। যেখানে স্পিনারদের জন্য অনেক সুবিধা ছিল। রিশাদের ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি, সে ভালো লাইন-লেংথে বল করেছে। ব্যাটারদের জন্য ধারাবাহিকভাবে খেলা কঠিন করে তুলেছে। তবে হ্যাঁ এটি অবশ্যই স্পিনারদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে।”
রিশাদের মতো হোপও মেনে নেন, দুই দলের জন্যই সমান ছিল উইকেট।
“পিচটি এমন ছিল যেখানে আপনি ব্যাটার হিসেবে নিজেকে কখনও সেট মনে করতে পারবেন না। তো অবশ্যই কঠিন ছিল। দুই দলের জন্যই কঠিন ছিল। উইকেটের আচরণ বদলেছে বলা যাবে না। আমার মনে হয় না, উইকেট বদলেছে। বাংলাদেশি স্পিনারদের ধারাবাহিক লাইন-লেংথ আমাদের কাজ কঠিন করেছে।”
তবে একজন ব্যাটার হিসেবে কখনও এমন উইকেটে খেলার আশা করেন না ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।
“আমি শুধু বলব, উইকেটটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। একজন ব্যাটার হিসেবে আপনি কখনও এমন পিচে ব্যাট করার স্বপ্ন দেখবেন না। আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি। অবশ্যই তাদের বোলারদের কৃতিত্ব দিতে হবে। আমাদের চেয়ে ভালোভাবে কন্ডিশন কাজে লাগিয়েছে। তাদের বোলাররা আমাদের বোলারের চেয়ে ভালো করেছে। তাদের ব্যাটাররাও আমাদের চেয়ে ভালো করেছে।”
ম্যাচের প্রথম ৪৭ ওভারে নেই ছক্কা। আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৮তম ওভারে সেই খরা দূর করলেন রিশাদ হোসেন। পরে মারলেন আরও একটি ছক্কা। সব মিলিয়ে মাত্র ১৩ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে দলকে এনে দিলেন দুইশ ছাড়ানো পুঁজি।
পরে বল হাতে তিনিই দলের নায়ক। রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে ৩৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হলেন ২৩ বছর বয়সী লেগ স্পিনার। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নিজের সাফল্যের উচ্ছ্বাসে ভেসে না গিয়ে তিনি বললেন, এটিই তার কাজ।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার স্পিন সহায়ক উইকেটে ধুঁকেছেন দুই দলের ব্যাটাররাই। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম রিশাদ। স্পিনারদের স্বর্গে ১৬৫ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর ব্যাট করতে নামেন তিনি। ততক্ষণে শেষ হয়ে গেছে ৪৫ ওভার।
আরও পড়ুন
সাকিব-রাজ্জাককে টপকে মাশরাফি-রুবেলের পরই রিশাদ |
![]() |
সেখান থেকে ২০০ স্ট্রাইক রেটে ১ চার ও ২ ছক্কায় ২৬ রানের ক্যামিও খেলে দলকে দুইশ ছাড়ানোর পথ দেখিয়ে দেন রিশাদ। বল হাতে জাদু দেখানোর আগে তার ব্যাটিংই ছিল বাংলাদেশের ইনিংসের বড় বিজ্ঞাপন।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনেও তাই শুরুতেই জিজ্ঞেস করা হলো ব্যাটিংয়ে অবদান রাখা নিয়ে। উত্তরে নিজের দায়িত্ব পালন করার তৃপ্তিই শোনালেন রিশাদ।
“আসলে তেমন কিছু বলার নেই। এটা আমার কাজ। এটা আমাকে করতে হবে। সবাই স্ট্রাগল করছিল। তাই আমি চেষ্টা করেছি নিজের সেরাটা দেওয়ার। তো এটাই আমার কাজ আর কি।”
১২ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হলেন রিশাদ। গত বছরের মার্চে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বল হাতে ১ উইকেটের পর ব্যাটিংয়ে ১৮ বলে ৪৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে প্রথম ম্যাচ সেরা হন তিনি।
এর বাইরেও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রায় নিয়মিতই কার্যকরী ইনিংস খেলতে দেখা যায় রিশাদকে। এই বিষয়ে তিনি বললেন, শেষ দিকে দলের জন্য বাড়তি কিছু রান করাই থাকে তার লক্ষ্য।
আরও পড়ুন
রিশাদের ৬ উইকেটে বাংলাদেশের বড় জয় |
![]() |
“যেই জায়গায় নামি, আমার দায়িত্ব হচ্ছে বাড়তি কিছু রান করা। দলের জন্য যেটা ভালো হয়। যেখানে ১৮০ রান হয়, সেখানে যদি ২১০ রানে নিয়ে যাওয়া যায়। এটা আমার জন্যও ভালো। সেটাই চেষ্টা করেছি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে।”
ব্যাটিংয়ে নামার সময় দল থেকে বার্তা কী থাকে জানতে চাইলে, নিজে উপলব্ধির কথাই বলেন রিশাদ।
“দল থেকে বার্তা বলতে, এটা আমিই বুঝি যে আমার থেকে দলের কী দরকার। তাই আমি চেষ্টা করি। আমি একটু ভালো খেললে দলেরও ভালো হয়।”
২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি কোয়ালিফাই করতে বাংলাদেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে। ওডিআই র্যাঙ্কিংয়ে ১০-এ নেমে যাওয়ায় চ্যালেঞ্জটা ক্রমে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছে। র্যাঙ্কিংয়ে এক ধাপ উপরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে র্যাঙ্কিং বাড়িয়ে নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্য পূরণের কক্ষপথে থাকতে পুরোনো কৌশলে ফিরে যেতে হয়েছে বিসিবিকে। ৪ বছর আগে মিরপুরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে র্যাঙ্কিং বাড়িয়ে নেয়ার অতীতটা অনুসরণ করেছেন অস্ট্রেলিয়ান কিউরেটর টনি হেমিং। টার্নিং উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পর্যুদস্ত করার কৌশলে তার প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন লেগ স্পিনার রিশাদ। এই লেগির ভয়ংকর বোলিংয়ে (৯-০-৩৫-৬) ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পর্যুদস্ত করেছে বাংলাদেশ। ২০৮ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়ে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে বাংলাদেশ ৭৪ রানে।
তবে প্রত্যাশিত জয়ে সিরিজ শুরু করেও আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলার উপায় নেই। সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সফরকারী দলের ব্যাটারদের জন্য তৈরি করা ফাঁদ পাতা কালোমাটির উইকেট! এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাটারদের ব্যাটিংও মিরাজের দলকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ছিল ডট বলের ছড়াছড়ি। আবুধাবিতে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জার নেপথ্যে ছিল ব্যাটারদের সীমাহীন ব্যর্থতা। বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেটের চেনা পরিবেশেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিবর্ণ ব্যাটিং!
আরও পড়ুন
রিশাদের ৬ উইকেটে বাংলাদেশের বড় জয় |
![]() |
আইসিসির সহযোগী সদস্য নেপালের কাছে ১-২ এ হেরে ঢাকায় আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিজেদের চেনা কন্ডিশনে উড়িয়ে দেয়ার হুংকারের প্রতিফলন ছিল না বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে। কালো মাটির উইকেট মিরপুরে নতুন নয়। এমন উইকেটে খেলাটা সফরকারী দলের কাছে যতোটা প্রতিকূল হওয়ার কথা, তার বিপরীতে অনুকূল বাংলাদেশ দলের। অথচ, ওযেস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের স্থায়ীত্ব পাওয়া ২৯৮ বলের ইনিংসে ১৮৩টি ডট!
১১৫টি স্কোরিং শটে ২০৭/১০ স্কোরের ইনিংসে ৭৩টি সিঙ্গল, ২৩ টি ডাবল, ৩টি ট্রিপল, ১৩টি বাউন্ডারির পাশে ৩টি ছক্কা! এই হচ্ছে বাংলাদেশের ইনিংসের চিত্র।
বাঁ হাতি স্পিনার খেরি পেরিকে খেলতে কী কষ্টটাই না হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাটারদের। ১০-২-১৯-১, এমন বোলিংয়ে ৬০টি ডেলিভারির মধ্যে ৪৭টি দিয়েছেন এই উইন্ডিজ বোলার ডট! আর এক বাঁ হাতি স্পিনার গুদাকেশ মোতির ৩০টি বল ডট করেছে বাংলাদেশ ব্যাটাররা। অফ স্পিনার রোষ্টন চেজ ১০-০-৩০-২ বোলিংয়ে দিয়েছেন ৩৭টি ডট! পেসার রোমেরো শেফার্ড (৭.৪-১-৩১-১) দিয়েছেন ৩১টি ডট। শেষ স্পেলে আতঙ্ক (১-০-৮-২) ছড়ানো সফল বোলার সিলস (৭-০-৪৮-৩) সেখানে দিয়েছেন ২৩টি ডট। পেসার জাস্টিন গ্রেভসকে (৫-০-৩২-২) অবশ্য তেমন একটা পাত্তা দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাটাররা। হৃদয় এবং সোহানের শিকারী এই বোলারকে ১৩টির বেশি ডট দিতে দেয়নি ব্যাটাররা।
হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসটি বাহাবার চেয়ে বেশি ছিল বিরক্তিকর। জাস্টিন গ্রেভসকে কাট করতে যেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ৫১ রানে। ৯০ বলের এই ইনিংসে স্কোরিং শট ৩৪টি! ৩টি মাত্র বাউন্ডারি।
বাঁ হাতি স্পিনার খেরি পেরির লো বাউন্সি বলে সুইপ করতে যেয়ে শান্ত এলবিডাব্লুউ। আম্পায়ার গাজী সোহেলের নট আউট কলকে চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ আপীলে শান্তকে ফিরিয়েছেন খেরি পেরি। ৬৩ বলে ৩২ রানের ইনিংসে ডট তার ৪৩টি।
অথচ, ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে শেফার্ডের লো বাউন্সি ডেলিভারি ক্রস খেলতে যেয়ে সাইফ(৬ বলে ৩) এলবিডাব্লুউতে ফিরে যাওয়ায় কালো উইকেটের রহস্য ভেদ হতে থাকে। ওপেনিংয়ে অভিজ্ঞ কাউকে সুযোগ দিতে ৮ মাস পর সৌম্যকে ফিরিয়ে তার উপর আস্থা রাখতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে সিলস -কে খেলতে যেয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সৌম্য'র ক্যাচ ( ৮ বলে ৪) বাংলাদেশকে বড় ব্যাটিং বিপর্যয়ের আলামত দিয়েছে।
প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিয়েছে তৃতীয় জুটিতে শান্ত-হৃদয়ের ৭১ রানের পার্টনারশিপ। তবে এই পার্টনারশিপের বিপরীতে ১২১ বল খরচকে একটু বেশিই মনে হতে পারে। জানেন কী, এই জুটি টানা ৬৮ বল বাউন্ডারিহীন ছিল!
২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে মাহিদুল অঙ্কনকে এই প্রথম ওডিআই ম্যাচে পরথ করে দেখতে পেরেছে নির্বাচকরা। অভিষেকে এই মিডল অর্ডার শুরুতে রানের জন্য ধুঁকেছেন। প্রথম ১০ রানে লেগেছে তার ৩০টি বল। ডাবল ফিগারে পৌছে যাওয়ার পর খেলেছেন স্বাভাবিক ছন্দে (৭৬ বলে ৩ চার-এ ৪৬)। রোস্টন চেজ-এর আউটসাইড অফ ডেলিভারি সুইপ করতে চেয়েছিলেন অঙ্কন। তবে পিচিংয়ের পর দারুণ টার্নিংয়ে অফ স্ট্যাম্পের বেলস ফেলে দিয়ে হাফ সেঞ্চুরি থেকে অঙ্কনকে করেছে বঞ্চিত।
আরও পড়ুন
মিরপুরের স্পিন মঞ্চে ব্যাটারদের লড়াই |
![]() |
আবুধাবি থেকে শুরু, টানা ৪র্থ ম্যাচে হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়েছে বাংলাদেশের লোয়ার অর্ডার এবং টেল এন্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের শেষ ৬ উইকেট পড়েছে মাত্র ৪৯ রানে! তারপরও বাংলাদেশ দুইশ পার করেছে রিশাদের ২০০% স্ট্রাইক রেটের ব্যাটিংয়ে ( ১৩ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ২৬)। গ্রিভসকে লং অনের উপর দিয়ে এবং সিলসকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা বাংলাদেশের স্কোর দুইশ টেনে নিতে সহায়ক হয়েছে।
২০৭/১০ স্কোর পর্যন্ত টেনে নিয়েও দুর্ভাবনা নিয়েছিল বাংলাদেশের। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে উইকেটহীন ৪৫, প্রথম উইকেট জুটির ৫১। সেখানে থেকে লেগ স্পিনার রিশাদের ব্রেক থ্রু, ক্রস খেলতে যেয়ে আথানজে (২৬ বলে ২৭) এলবিডাব্লু। রিশাদের ৬ষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে সেট ব্যাটার ব্রান্ডন কিংকে (৬০ বলে ৫ চার, ১ ছক্কায় ৪৪) চতুর্থ চেষ্টায় সোহান ক্যাচে ফিরিয়ে দেয়ার পর মিরপুরে জয়ের আবহ।
রিশাদের ৭ ওভারের ভয়ংকর স্পেলে(৭-০-২৫-৫) কোমর ভেঙ্গে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। পুরোনো বলে মোস্তাফিজের ২ ওভারের একটা স্পেল (২-০-৬-২) ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বড় ব্যবধানে হার মানতে বাধ্য করেছে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম ৫ উইকেটের (৬/৩৫) ইনিংসের রাতে রিশাদ ফিরিয়ে এনেছেন মাশরাফি-রুবেলের অতীত স্মৃতিকে। ২০০৬ সালে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে মাশরাফির আগুন বোলিং (১০-০-২৬-৬) এবং ২০১৩ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে রুবেলের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের (৫-০-২৬-৬) পরেই যে শোভা পাচ্ছে এখন রিশাদের ইনিংস (৯-০-৩৫-৬)।
এমন একটি ম্যাচে গেম চেঞ্জার রিশাদকে নয়, ২২তম ওভারে এক ক্রেজি দর্শক ফেন্সিং টপকে মাঠে ঢুকে পড়ে জড়িয়ে ধরেছেন বাঁ হাতি স্পিনার তানভিরকে। রিশাদ কিছুটা দূরে ছিলেন বলেই হয়তবা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে তানভিরের স্পর্শ পেয়েই মহাখুশি ওই দর্শক।
ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত এক দিন কাটালেন রিশাদ হোসেন। ব্যাট হাতে ১৩ বলে ২৬ রানের ক্যামিও ইনিংসের পর বোলিংয়ে তিনি পেলেন ৬টি উইকেট। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে দলকে জিতিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতলেন তরুণ এই লেগ স্পিনার।
ক্যারিয়ারের প্রথম ১১ ম্যাচে রিশাদের মোট উইকেট ছিল ১০টি। তার সেরা বোলিং ছিল ৩৭ রানে ২ উইকেট। উইন্ডিজের বিপক্ষে শনিবারের ম্যাচে তিনি নিলেন ৩৫ রানে ৬ উইকেট।
যা শুধু রিশাদেরই ক্যারিয়ার সেরা নয়, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের স্পিনারদের মধ্যেও সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড।
আরও পড়ুন
রিশাদের ৬ উইকেটে বাংলাদেশের বড় জয় |
![]() |
এর আগে ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। পরে ২০১৯ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানও ২৯ রানে নেন ৫ উইকেট।
দুই বাঁহাতি স্পিনারকে টপকে দেশের প্রথম স্পিনার হিসেবে ওয়ানডেতে ৬ উইকেট নিলেন রিশাদ।
তবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডে রিশাদের আগে আছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা ও রুবেল হোসেন। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে মাশরাফি ও ২০১৩ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে রুবেল নিয়েছিলেন ২৬ রানে ৬ উইকেট।
এছাড়া বাংলাদেশের হয়ে ৬ উইকেটের কীর্তি আছে শুধু মোস্তাফিজুর রহমানের। ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে ৪৩ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি পেসার।