ফুটবল মাঠে এমন দৃশ্য অহরহই দেখা মেলে। তবে ক্রিকেটে খেলোয়াড়রা বড়জোর তর্কে লিপ্ত হন। সেই সীমানা অবশ্য অতিক্রম হল বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং দলের ম্যাচে, যেখানে হাতাহাতিতে জড়ালেন রিপন মন্ডল ও টিপেসু এনটুলি।
ঘটনাটি মিরপুরে চারদিনের ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের ১০৫তম ওভারের। প্রথম বলে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে ছক্কা মারেন রিপন। এতেই যেন মেজাজ হারিয়ে ফেলেন এনটুলি। দুই ব্যাটার যখন ক্রিজের মাঝে, তখন কিছু একটা বলতে বলতে এগিয়ে আসেন রিপনের দিকে। কাছাকাছি এসে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের মধ্যেই আগ বাড়িয়ে ধাক্কা দিতে চান এনটুলি, যা কয়েক দফায় হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন রিপন।
এরপরই এক পর্যায়ে রিপনের হেলমেট ধরে টানাটানি শুরু করেন সফরকারী দলের এনটুলি। আম্পায়ারের হস্তক্ষেপে একবার হেলমেট ছেড়ে দিলেও খানিক বাদে তারই সামনে রীতিমতো রিপনের হেলমেট ধরে জোরেশোরেই টানাটানি শুরু করেন এনটুলি। আম্পায়ার আরও এক দফায় দুজনকে সরিয়ে নেন।
তবে সেখানেই থেমে যাননি এনটুলি। এক হাত উঁচিয়ে কিছু একটা ক্রমাগত বলতে থাকেন রিপনকে। দুই আম্পায়ার ও অন্য ক্রিকেটাররা মিলে এরপর এই দুজনকে আলাদা করেন। এনটুলি অবশ্য তখনও মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না।
এই ধরনের ঘটনার পর খেলোয়াড়রা স্থির থাকতে পারেন না প্রায়ই। তবে রিপন এক্ষেত্রে ঠান্ডা মাথায় এনটুলির মুখোমুখি পরের বলেই করেন দারুণ এক ব্লক।
লাঞ্চ বিরতিতে রিপন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৪২ রানে। মাহেদির রান ১৭। ১১৪ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৮ উইকেটে ৩৪৩।
২৮ মে ২০২৫, ৯:২০ পিএম
আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পেলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তিনি স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সদ্য বিদায়ী ফারুক আহমেদের। শুক্তবার বিসিবির বোর্ড সভায় পরিচালকদের ভোটে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
শুক্রবারই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) মনোনীত কাউন্সিলর হিসেবে অনুমোদন পান আমিনুল। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমিনুলের বিসিবি সভাপতি হওয়ার প্রক্রিয়া। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে এনএসসি বাতিল করে ফারুক আহমেদের কাউন্সিলরশিপ। ফলে তিনি হারান সভাপতির পদ।
ফারুককের অপসারণের আগে থেকেই আলোচনায় ছিল বিসিবির সভাপতির পদে আমিনুলের নাম। তবে তিনি বিসিবির কাউন্সিলর না হওয়ায় পরিচালক হতে ছিল প্রক্রিয়ার কিছু জটিলতা। সেটা সমাধান হয় এনএসসির মাধ্যমেই।
এনএসসি থেকে বিসিবিতে পাঁচজন মনোনীত কাউন্সিলর থাকেন, যার দুজন পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হন। সেই কাউন্সিলরদের একজনকে সরিয়ে তার জায়গায় আমিনুলকে মনোনয়ন দেয় এনএসসি।
এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সময় পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে সরাসরি ফিরলেন দেশের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে বিসিবিতে অন্য কোনো ভূমিকায় দেখা যায়নি তাকে। এবার যোগ দিলেন বিসিবির ১৬তম সভাপতি হিসেবে।
আমিনুল বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে। তার কাজের মধ্যে রয়েছে হাই পারফরম্যান্স ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা। বিসিবির দায়িত্ব শেষে ভবিষ্যতে আবারও আইসিসিতে ফিরে যাওয়ার কথাও সম্প্রতি বলেছেন আমিনুল।
ফারুক আহমেদকে যে প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, তাতে ঘুরেফিরে আসছে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ। কারণটা খুব যৌক্তিক। ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপে জিরো টলারেন্স নীতি মানা আইসিসি যে এমন ঘটনার দায়ে নিষেধাজ্ঞার নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে এসেছিল এই দুই দেশের ওপর। বিসিবির ক্ষেত্রেও এমন কিছু হতে পারে?
সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে একটু ফিরে যাওয়া যাক ফারুকের নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে। আগের সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট নাজমুল হাসান পাপনের স্থলাভিষিক্ত তিনি হয়েছিল পরোক্ষভাবে সরকারি হস্তক্ষেপেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটা থেকে মনোনয়ন পেয়ে কাউন্সিল হয়ে বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হন ফারুক। এরপর পরিচালকরা তাকে বেছে নেন সভাপতি হিসেবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই পুরো প্রক্রিয়াটাই ছিল সরকারের সবুজ সংকেত পেয়েই।
সেই সময়েও অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, আইসিসি বুঝি এই বিষয়টিকে সরকারি হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য করে শাস্তি দেয় বিসিবিকে। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা আর হয়নি। ফলে ফারুকের নিয়োগ নিয়ে আর প্রশ্ন ওঠেনি সেই সময়ে।
তবে এরপর গত ৯ মাস বেশ কঠিন সময়ই পার করতে হয়েছে ফারুককে। বোর্ডের আকার বেশ ছোট হয়ে যাওয়ায় তাকে সহ অন্যদের নিতে হয়েছে বাড়তি দায়িত্ব। জাতীয় দলের পারফরম্যান্স ক্রমেই নিম্নগামী হওয়ার সাথে যোগ হয় দুইবার দুদকের বিসিবিতে হাজির হওয়ার মত ব্যতিক্রমী ঘটনা।
গত বিপিএল নিয়ে মাঠে ও মাঠের বাইরের নানা কেলেঙ্কারিতে বছরের শুরুতে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন ফারুক। বোর্ড পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম এক পর্যায়ে পদত্যাগের হুমকিও দেন তখন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বোর্ডের পরিচালকদের সাথে মতপার্থক্য এবং একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভিযোগও উঠে আসে।
এসব চাপ সামলে ভালোভাবে এই সময়টা পর্যন্ত দায়িত্ব সামাল দিলেও গত কয়েকদিনে বদলে যায় চিত্র। প্রথমে নিজেই জানান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয় থেকে তাকে জানানো হয়েছে যে সরকার চায় না তিনি এই দায়িত্ব আর চালিয়ে যান। তবে ফারুক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দেশের স্বার্থ ও দলের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই তিনি দায়িত্ব পালন করছেন এবং এখনই পদত্যাগের কোনো পরিকল্পনা তার নেই। আরও বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনেই তিনি বিসিবির প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। আর তাই আগের কোনো সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে এই দায়িত্ব পাওয়ার সুযোগই হতো না তার।
শুধু এখানেই না থেমে থেকে তিনি ক্ষোভ উগরে দেন বিসিবির পরিচালকদের দিকে যে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, যাতে তিনি সভাপতি হিসেবে আর কাজ চালিয়ে যেতে না পারেন। বৃহস্পতিবারই জানা যায়, নাজমুল আবেদিন সহ বিসিবির ৮ পরিচালক ফারুকের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছেন। এরপর রাত ১১টার পর প্রজ্ঞাপন দিয়ে এনএসসি জানায়, কাউন্সিলর হিসেবে ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
সরাসরি না হলেও এই ঘোষণার মাধ্যমে কার্যত বাতিল হয়ে গেছে সভাপতি হিসেবে ফারুকের নিয়োগ। এর প্রেক্ষিতে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এভাবে তাকে সরিয়ে দেওয়াটা মেনে নেওয়ার মত নয়। তিনি আইনি লড়াই করবেন এবং যেভাবে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা তিনি এরই মধ্যে আইসিসিকে জানিয়েছেন।
আর এখান থেকেই আসছে বিসিবির ওপর আইসিসির সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা আসার বিষয়টি। ক্রিকেট বোর্ডে কোনো ধরণের সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া আইসিসি এই ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি। তবে তাদের নিয়ম-কানুন ও জিম্বাবুয়ে বা শ্রীলঙ্কা বোর্ডের কথা চিন্তা করলে বিসিবির শঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে যথেষ্টই।
শেষ পর্যন্ত আইসিসি কি পদক্ষেপ নেবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একদিক থেকে দেখলে বিসিবির শাস্তি এড়ানোর একটা সুযোগ রয়েছে। আর সেটা হল বোর্ড পরিচালকদের সেই অনাস্থা চিঠি। আকরাম খান বাদে বাকি সবাই সেখানে সাক্ষর করায় এটিকেই ফারুককে সভাপতি হিসেবে সরিয়ে দেওয়ার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করতে পারবে বিসিবি। আর সেটার রেশ ধরে তার কাউন্সিলর মনোনয়ন বাতিল করে দিয়েছে এনএসসি।
আইসিসি যদি ফারুকের অপসারণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তাহলে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার এটাই আপাতত সেরা পথ খোলা বিসিবির সামনে। কারণ, অনেকটা সরকারি হস্তক্ষেপেই কাজটা হলেও এখানে বিসিবির অভ্যন্তরীণ একটা প্রক্রিয়াও অনুসরণ করা হয়েছে। ফলে নিজেদের ডিফেন্ড করতে বিসিবি সেটা সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে।
খেলোয়াড়ি জীবনে ফারুক ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৪ সালে আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বও দেন তিনি। বিসিবির প্রধান নির্বাচক হিসেবেও দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাও আছে তার।
লাহোরে সদ্য সমাপ্ত পিএসএলে পাঁচটি দল আগে ব্যাটিং করে বোর্ড জমা করেছে দুইশ বা তার বেশি রান। সেটা মাথায় রেখেই শুরু থেকে ইতিবাচক ব্যাটিং করল পাকিস্তান। মাঝের দিকে কিছুটা ছন্দপতন হলেও শাদাব আলির দারুণ এক ইনিংসে স্বাগতিকরা পেল বড় স্কোরই। তানজিদ হাসান তামিন আরও একবার দারুণ শুরু পেলেন। লিটন দাসও চেষ্টা করলেন কিছুটা। তবে দলীয়ভাবে এমন একটা রান তাড়ায় যেমন পারফরম্যান্স দরকার, সেটার আর দেখা মিলল না। তাতে সঙ্গী হল বড় হারই।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৭ রানে জিতেছে পাকিস্তান। দলটির করা ৭ উইকেটে ২০১ রানের জবাবে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ১৬৪ রানেই।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ একই ভেন্যুতে, আগামী শুক্রবার।
বল হাতে বাংলাদেশের শুরুটা হয় স্বপ্নের মতই। সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে ছন্দহীন শেখ মাহেদি হাসান প্রথম ওভারেই পান সাফল্য। অফস্ট্যাম্প লাইনের বল কাট করতে গিয়ে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক মারেন সাইয়ুম আয়ুব।
আরও পড়ুন
৩৪ জন তরুণ ক্রিকেটারের সাথে চুক্তি এইস স্পোর্টস নেটওয়ার্কের |
![]() |
পরের ওভারে ফের উইকেটের পতন। এবার ফখর জামানকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন শরিফুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে মাত্র চতুর্থ বাংলাদেশী বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৫০ উইকেট পূর্ণ হয় বাঁহাতি এই পেসারের।
শুরুর এই চাপ অবশ্য দ্রুতই কাটিয়ে ওঠে পাকিস্তান। মাহেদির করা ইনিংসের পঞ্চম ওভারে তিন বাউন্ডারি আসে সালমান আঘার ব্যাট থেকে। তবে পাওয়ার প্লেতে মূল ঝড়টা তোলেন মূলত মোহাম্মদ হারিস।
তবে বিপজ্জনক হওয়ার আগে তাকে থামাতে সমর্থ হন তানজিম হাসান সাকিব। লং অনে তানজিদ হাসান তামিমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে খেলেন ১৮ বলে ৩১ রানের ইনিংস।
এরপর দুই প্রান্ত থেকেই পেসার বা স্পিনাররা কেউই পারছিলব্যাটারদের চাপে ফেলতে। মাঝের ওভারে যিনি দলের অন্যতম ভরসা, সেই রিশাদ রান গুনেন ওভার প্রতি ১০ করে। ফিফটি করার পর শেষ পর্যন্ত সালমানকে সাজঘরের পথ দেখান হাসান (৩৪ বলে ৫৬)।
রিশাদের বলে আউট হওয়ার আগে এরপর একটি মিনি ঝড় বইয়ে দেন হাসান নাওয়াজ। টানা তিন বলে মারেন ছক্কা ও দুটি চার। ১৪ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১৩৯।
নিয়মিত বোলারদের কঠিন এক দিনে সেই সময়ে আক্রমণে আসেন পার্টটাইম স্পিনার শামিম হোসেন। এরপর খুশদিলকেও ফিরিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম উইকেট পান তিনি। মাহেদিও অন্যপ্রান্তে শেষটা করেন ভালো। তবে খরুচে রিশাদ তার শেষ ওভারেও রান দেন অকাতরে। তরুণ এই লেগ স্পিনার চার ওভারের স্পেলে দেন ৫৫ রান।
আরও পড়ুন
ডিআরএস ছাড়াই বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ |
![]() |
শেষের দিকে শাদাব খানের মাত্র ২৬ বলে ৪৮ রানের ক্যামিওতে ২০০ রান পার করে ফেলে পাকিস্তান। এই রান তাড়া করতে শুরুটা যেমন দরকার ছিল, মোটেও তা পায়নি বাংলাদেশ।
ফাহিম আশরাফের প্রথম ওভারে চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে অবশ্য ভালো কিছুরই আভাস দিচ্ছিলেন দুই ওপেনার। তানজিদ সেই ছন্দটা ধরে রাখলেও পারভেজ হোসেন ইমন আউট হয়ে যান মাত্র চার রানেই।
দারুণ ফর্মে থাকা তানজিদ আরও একবার পাওয়ার প্লেতে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী মেলে ধরেন। আবরার আহমেদকে ওড়ান টানা দুই ছক্কায়। এরপর হাসান আলিকে টানা দুই বাউন্ডারি মারার পর অতি আগ্রাসী হতে গিয়ে ডেকে আনেন বিপদ। বোল্ড হয়ে শেষ হয় ১৭ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে সাজানো ৩১ রানের ইনিংস।
এরপর বড় এক রানের পেছনে ছোটার সময় যেমন ব্যাটিং দরকার, তার ঠিক বিপরীত ব্যাটিং করে ক্রমেই চাপ বাড়ান লিটন ও তাওহীদ হৃদয় মিলে। পাওয়ার প্লের শেষ তিন ওভারে আসেনি একটি বাউন্ডারি বা ছক্কার মার!
এই দুই ব্যাটার বিশের ঘরে যখন যান, তখনও ব্যাট করছিলেন একশ বা তার কম স্ট্রাইক রেটে। হারিস রউফকে দুই ছক্কা মেরে লিটন কিছুটা চাপ সরালেও খোলসবন্দী হয়ে থাকেন তাওহীদ। প্রথম ২০ বলে করেন মাত্র ১৬ রান!
ফলে চাপ সরাতে গিয়ে বড় শটের দিকেই ঝুঁকতে হয় লিটনকে। শাদাবকে ছক্কার মারার পরে বলে ফের আগ্রাসী শট খেলতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে থামেন ৩০ বলে ৪৮ করে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের জেগে ওঠার সিরিজ |
![]() |
বাঁহাতি স্পিনার খুশদিল এরপরই তাওহীদের সংগ্রামী ইনিংসের ইতি টানেন। তরুণ এই ব্যাটার ২২ বল খেলে করতে পারেন মোটে ১৭ রান। চার মেরে রানের খাতা খোলা শামিম আউট হন এক ডিজিটেই। তাকে অনুসরণ করেন রিশাদও। বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের সামান্যতম আশাও সেখানেই শেষ।
এরপর বাকি ছিল কেবলই বাংলাদেশের পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর লড়াই। প্রায় ১৭২ স্ট্রাইক রেটে ৩৬ রান আসে জাকের আলি অনিকের ব্যাট থেকে। বাকিরা এরপর টিকতে পারেননি বেশি। ৩.২ ওভারে ৩০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানে সেরা বোলার পেসার হাসান।
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৩৪ জন ক্রিকেটারের সাথে চুক্তি করল স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান এইস স্পোর্টস নেটওয়ার্ক। ধানমন্ডি স্পোর্টস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী চলা ট্রায়ালের মাধ্যমে এই ক্রিকেটারদের বাছাই করা হয়। এই ক্রিকেটাররা এইসের ১৩টি সহযোগী ক্লাবে খেলার সুযোগ পাবেন।
এভাবে ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে খেলোয়াড় বাছাই এবং চুক্তির প্রক্রিয়া দেশের ক্রিকেটে এই প্রথম। দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের সুযোগ দিতেই এই আয়োজন। এইস স্পোর্টস নেটওয়ার্কের অন্যতম কর্ণধার শানিয়ান তানিম বলেন,
"ছেলেদের প্রতিভা এবং আগ্রহ দেখে আমরা অভিভূত। আমাদের বিশ্বাস এখান থেকে কোন একজন ক্রিকেটার একদিন জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করবে। আমরা এই আয়োজন ভবিষ্যতে আবার করবো।"
ক্রিকেটারদের সাথে চুক্তির ব্যাপারে শানিয়ান তানিম আরও বলেন,
"আমরা এই খেলোয়াড়দের গ্রুমিং করতে চাই। শুধু খেলা না, খেলার বাইরে তাদের জীবনযাত্রা, কমিউনিকেশন স্কিলস, নৈতিকতা এসব নিয়েও কাজ করা হবে।"
‘স্বপ্নযাত্রা’ নামের এই ট্যালেন্ট হান্টের প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৭,০০০-এরও বেশি প্রতিযোগী তাদের খেলার ভিডিও জমা দেন। দীর্ঘ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার পর অভিজ্ঞ কোচরা সেই ভিডিওগুলো থেকে বেছে নেন ৪০০-এর বেশি প্রতিভাবান ক্রিকেটারকে, যারা সরাসরি এই ট্রায়ালে অংশ নেন। এদের মধ্য থেকে ২৭ মে ৯৬ জন ফাইনাল রাউন্ডের জন্য মনোনীত হন। ২৮ মে বিশেষ ট্রায়ালের মাধ্যমে ৩৪ ক্রিকেটারকে বাছাই করা হয়।
আরও পড়ুন
ঢাকায় পা রাখলেন ফাহামিদুল, অপেক্ষা জাতীয় দলে অভিষেকের |
![]() |
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। এছাড়াও ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস, হান্নান সরকার এবং জাভেদ ওমর বেলিম। তাদের উপস্থিতি তরুণ ক্রিকেটারদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করেছে।
বুধবার অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ আশিম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধানমন্ডি সোসাইটির ক্রীড়া সম্পাদক তায়েব আফজাল; অফিস সম্পাদক শরীফ সজল; এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল খান অলোক।
এইস স্পোর্টস নেটওয়ার্কের কর্ণধার ইশতিয়াক সাদেক, শানিয়ান তানিম, মেহরাব আলম চৌধুরীসহ দেশের স্বনামধন্য ক্রিকেট ব্যক্তিত্বরা ট্রায়ালে উপস্থিত থেকে তরুণ প্রতিভাদের উৎসাহ দিয়েছেন।
তাদের উপস্থিতি ও বক্তব্য তরুণ ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করেছে এবং ভবিষ্যতের জন্য আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত পিএসএলের শেষের অংশের ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) ছাড়াই হবে এই সিরিজটি।
পিএসএলের শুরু থেকে অবশ্য ছিল ডিআরএস প্রযুক্তির ব্যবহার। তবে বিপত্তি বাধে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে টুর্নামেন্ট স্থগিতের পরই। সাময়িক বিরতি দিয়ে পিএসএল আবার শুরু হওয়ার পর ফাইনাল পর্যন্ত আর দেখা যায়নি ডিআরএসের ব্যবহার।
আরও পড়ুন
বার্সায় দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি নবায়ন করতে যাচ্ছেন ‘নম্বর টেন’ ইয়ামাল |
![]() |
এর মূল কারণ এই ডিআরএস প্রযুক্তির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা টেকনিক্যাল স্টাফের আর পাকিস্তানে না ফেরা। পিএসএল শেষের পরও তারা আর পাকিস্তানে ফেরেননি বলেই খবর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের।
ফলে বুধবার রাত থেকে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তিন ম্যাচের সিরিজেও দেখা যাবে না ডিআরএস প্রযুক্তির ব্যবহার। বাংলাদেশ দলকে নাকি ইতোমধ্যেই এই ব্যাপারে অবগত করা হয়েছে।
ফলে ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এই সিরিজটি হতে যাচ্ছে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার। কারণ, দুটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যকার সিরিজে আজকাল ডিআরএস এক অপরিহার্য অংশ। এমনকি ঘরোয়া লিগেও দেখা মেলে এর ব্যবহার। সেখানে একটি আন্তর্জাতিক সিরিজে ডিআরএস না থাকাটা প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে আম্পায়ারদের অনেক সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে এলবিডব্লিউ আউট নিয়ে।
বাংলাদেশ দলের জন্য অবশ্য এটি হতে যাচ্ছে টানা দ্বিতীয় সিরিজ, যেখানে থাকবে না ডিআরএস প্রযুক্তির ব্যবহার। এর আগে চলতি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সিরিজেও ছিল একই চিত্র। সেই সিরিজে আম্পায়ারদের কয়েকটি সিদ্ধান্তই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ দলে ফাহামিদুল-সামিত, জায়গা হলো না কিউবা মিচেলের |
![]() |
পাকিস্তান সিরিজে পরিস্থিতি কেমন হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তিনটি ম্যাচই হবে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে। পরের দুটি ম্যাচ আগামী ৩০ মে ও ১ জুন।