একাদশে আসল বেশ কয়েকটি পরিবর্তন। তবে বড় স্কোর গড়ায় তাতে পড়ল না প্রভাব। তানজিদ হাসান তামিমের দুর্দান্ত এক ফিফটির সাথে অন্য ব্যাটারদের সম্মিলিত অবদানে দুইশ প্লাস স্কোর পেয়ে জয়ের সুবাসই পাচ্ছিল বাংলাদেশ। তবে বিশ্বাসকে সঙ্গী করে সাহসী ক্রিকেট খেলল সংযুক্ত আরব আমিরাত। অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিম খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। শেষের দিকে কিছুটা পথ হারালেও নিজের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়েই মাঠ ছাড়ল স্বাগতিকরা।
শারজাহতে দুই ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ হেরেছে ২ উইকেটে। ৫ উইকেটে ২০৫ রান তুলেছিল সফরকারীরা। ১ বল হাতে রেখেই সেই রান তাড়া করেছে আমিরাত। তাতে সিরিজে সমতা এখন ১-১ ব্যবধানে।
আরও পড়ুন
লম্বা হল বাংলাদেশ-আমিরাত সিরিজ |
![]() |
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ আগামী বুধবার একই ভেন্যুতে।
বিশাল রান তাড়ায় ঠিক আগের ম্যাচের মতোই ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে শুরু থেকেই চড়াও হন আমিরাতের ওপেনাররা। শরিফুল ইসলামের করা ইনিংসের প্রথম বলেই আসে চারের মার। দ্বিতীয় ওভারে তানভীর ইসলাম হজম করেন চার ও ছক্কা।
তানজিম হাসান সাকিবের প্রথম ওভারেও আসে ১১ রান। তবে ঝড় বয়ে যায় অভিষিক্ত নাহিদ রানার ওপর দিয়ে। গতিময় এই পেসারের এই ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ডেলিভারিটিই হয় নো বল। ফ্রি-হিটে খান ছক্কা, যেটা হয় আরেকটি নো বল। আরও দুই চার হজমে শেষ পর্যন্ত ওভারে গুনেন ১৮ রান।
ছয় ওভারে ৬৮ রান তুলে আমিরাত শিবিরে জয়ের আশা বাড়িয়ে দেন ওয়াসিম ও মুহাম্মদ জোহাইব। সিরিজে টানা দ্বিতীয় ফিফটি করার পথে ফিরতি স্পেলেও নাহিদকে বেদম মার দেন আমিরাত অধিনায়ক। তিনটি চার সহ এই দফায় নাহিদ দেন ১৪ রান।
শেষ পর্যন্ত ১০৭ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন তানভীর ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনার ৩৮ রানে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান জোহাইবকে। এরপর রাহুল চোপড়াকে ফিরিরে দেন রিশাদ হোসেন।
আরও পড়ুন
পিএসএল দিয়ে টি-টোয়েন্টি দলে ফেরার আশায় মিরাজ |
![]() |
তবে সেই চাপ সরিয়ে বড় শটের পসরা সাজিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের দিশেহারা করে ফেলেন ওয়াসিম। সাথে যোগ দেন আগের ম্যাচে ঝড়ো এক ইনিংস খেলা আসিফ খান, তানজিমকে হাঁকান টানা দুই ছক্কা।
বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচ যখন ক্রমেই ফসকে যাওয়ার পথে, সেই সময়ে ত্রাতা হিসেবে হাজির হন শরিফুল। টাইমিংয়ে গড়বর করে বিপজ্জনক ওয়াসিম ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে, যা গ্লাভসবন্দী করতে ভুল হয়নি জাকেরের। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় ওয়াসিমের মাত্র ৪২ বলে ৮২ রানের টর্নেডো ইনিংস।
নিজের তৃতীয় ওভারেই খরুচে নাহিদ দুটি চার হজম করলেও ফেরান আফিফ খানকে। দুর্দান্ত এক স্পেল করা রিশাদ তার শেষ ওভারে দেখা পান উইকেটের। নাহিদকে একটি ছক্কা মেরে ম্যাচ জমিয়ে তোলার আভাস দেওউয়া আরিয়ানশ শর্মা ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন একই বোলারের হাতে।
নাহিদ তার স্পেল শেষ করেন চার ওভারে ৫২ রানে ২ উইকেট নিয়ে। ২০ ওভারে ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে অভিষেকে ৫০ বা তার বেশি রান দিয়েছেন ইবাদত হোসেন ও শরিফুল।
১৯তম ওভারে প্রথম বলে শরিফুল উইকেট পেলেও নার্ভ ধরে রাখতে ব্যর্থ হন এরপর। চার ও ছক্কা তো হয়ই, সাথে তার করা ওভারথ্রো থেকে বাড়তি চারটি রানও পেয়ে আমিরাত। শেষ ওভারে তাতে সমীকরণ দাঁড়ায় জয়ের জন্য মাত্র ১২ রানের।
তানজিমের করা দ্বিতীয় ডেলিভারি ছিল লো ফুলটস, মিড অনের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দেন ধ্রুব পারেশ্বর। তবে পরের বলে ঘুরে দাঁড়ান বোলার। স্লোয়ারে করে দেন বোল্ড। তবে শেষ পর্যন্ত আর তাল সামলাতে পারেননি তানজিম। প্রথমবারের মত বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয় আমিরাত।
চার পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজানো বাংলাদেশ ম্যাচটি খেলতে নামে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান পারভেজ হোসেন ইমনকে ছাড়াই। চোটের কারণে তাকে দেওয়া হয় বিশ্রাম। অধিনায়ক লিটন ওপেন করতে নেমে শুরু থেকেই ছিলেন না সাবলীল।
তবে অন্যপ্রান্তে তানজিদ ছিলেন ঠিক বিপরীত ছন্দে। প্রথম ওভারেই একটি ছক্কার পাশাপাশি তার ব্যাট থেকে আসে দুটি চার। তার সাথে তাল মিলিয়ে কিছুটা আগ্রাসন দেখিয়ে টানা দুটি বাউন্ডারি হাঁকান লিটন। ১০ রানে ধ্রুভ পারেশ্বরের বলে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
আরও পড়ুন
ইমনের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে জয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের |
![]() |
এরপর তাকে দর্শক বানিয়ে ঝড় তোলেন তানজিদ। চার-ছক্কার মহড়ায় মাত্র ২৫ বলে করে ফেলেন ফিফটি, যা তাকে জায়গা করে দেয় দারুণ এক রেকর্ডবুকে।
তানজিদ ফিফটি অর্ধশতক পূরণ করেন পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে তার আগে এই কীর্তি গড়েছেন কেবল দুজন। প্রথম জন ছিলেন নাজিমুদ্দিন, ২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। আর অন্যটি লিটনের করা, ভারতের বিপক্ষে ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপে।
এই ম্যাচে অবশ্য লিটন অধিকাংশ সময় জুড়েই খোলসবন্দী ছিলেন, রান করেছেন তবে ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছেন কয়েকবার। ৯০ রানের জুটিতে মূল অবদান রাখা তানজিদ অবশ্য প্রতিপক্ষের বোলারদের জন্য কাজটা কঠিন করেই আউট হন ৫৯ রানে। মাত্র ৩৩ বলের ইনিংসটি সাজান ৮টি চার ও ৩ ছক্কায়।
এই সিরিজ দিয়েই টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তর শুরুটা হয় উড়ন্ত। ক্রিজে গিয়েই কয়েকটি বড় শটে প্রথম ৯ বলে করে ফেলেন ২০ রান। তবে এরপর কিছুটা ধীরলয়ে এগিয়ে যায় তার ইনিংস।
প্রায় একই চিত্র ছিল লিটনের ব্যাটেও। ক্রিজেব ভালোভাবেই সেট হলেও পারেননি রানের গতি বাড়াতে। ৪০ রান করতে বল খেলে ফেলেন ৩২টি। তবে পাল্টা আক্রমণে আমিরাতের বোলারদের চাপে ফেলে দেন তাওহীদ হৃদয়। হায়দার আলিকে ছক্কার মারার পরের ওভারে চার ও ছক্কায় ওড়ান মুহাম্মদ ওয়াসিমকে।
২৭ রানে শান্তর বিদায়ের পরও তাই পথ হারায়নি বাংলাদেশের ইনিংস। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যামিও উপহার দেন জাকের আলি অনিক। মুহাম্মদ জাওয়াদুল্লাহর শিকার হওয়ার আগে তারই ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারে আদায় করেন ১৬ রান। জাকের খেলেন ৬ বলে ১৮ রানের ইনিংস।
ফিফটির দিকে এগিয়ে যাওয়া তাওহীদকে থামতে হয় পাঁচ রান দূরে থাকতে। সাঘির খানের বলে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৪ বলে ৪৫ রান করে। তবে তার এই ইনিংসে কারণেই শেষ ওভারে মাত্র চার রান বোর্ডে জমা হওয়ার পরও বাংলাদেশ পায় ২০০ পার করা স্কোর। তবে তাতেই শেষ রক্ষা আর হয়নি।
১৩ জুলাই ২০২৫, ১১:৫০ পিএম
১৩ জুলাই ২০২৫, ৯:১৩ পিএম
১৩ জুলাই ২০২৫, ৮:১১ পিএম
ডাম্বুলা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার সমর্থকের স্রোত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি লিটনদের সামনে। বরং দর্শক উপচে পড়া স্বাগতিক সমর্থকদের পিলে চমকে দিয়েছে বাংলাদেশ দল।সিরিজে বাঁচা মরার ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ রেকর্ড করে। সিরিজের প্রথম ম্যাচ পাল্লেকেলেতে বাংলাদেশ হেরেছে ৭ উইকেটে। উইকেটের ব্যবধানে ওটাই ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় জয়। ওই হারের বদলা নিয়েছে বাংলাদেশ রোববার। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২০১৮ সালে সিলেটে ৭৫ রানে। লিটন (৫০ বলে ৭৫)- শামীম পাটোয়ারির (২৭ বলে ৪৮) ব্যাটিং, রিশাদ (৩/১৮)-শরিফুলের (২/১৪)-সাইফুদ্দিনের (২/২১) বোলিংয়ে সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে ডাম্বুলায় বাংলাদেশ ৮৩ রানের বিশাল জয়ে ফিরেছে টি-টোয়েন্টি সিরিজে।
সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ পাওয়ার প্লে'র ৩০ বলে ৬২ রান যোগ করায় চ্যালেঞ্জিং পুঁজি (১৭৭/৭) পেয়েছে বাংলাদেশ।এই পুঁজি নিয়ে জয়ের জন্য দরকার ছিল বোলারদের সমন্বিত পারফমেন্স। তাসকিন-তানজিম হাসান সাকিবের পরিবর্তে শরিফুল এবং মোস্তাফিজকে ফেরানোয় অনেক দিন পর বাংলাদেশ দলের বোলিং ছড়িয়েছে আতঙ্ক। শরিফুলের প্রথম স্পেল (৩-০-১৪-২) দিয়েছে ম্যাচ জয়ের আবহ।ওই স্পেলেই ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে শ্রীলংকা নেমেছে ব্যাকফুটে (৩৭/৪)। ইনিংসের মাঝপথে লেগ স্পিনার রিশাদের একটি ওভারে নিশাঙ্কা (২৯ বলে ৩২) এবং করুনারত্নে (০) ফিরে গেলে ম্যাচটা হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। লেগ স্পিনার রিশাদের একই স্পেলেই (৩.২-০-১৮-৩) ম্যাচে দারুনভাবে ফিরেছে বাংলাদেশ।নিজের প্রথম ওভারের ২য় এবং চতুর্থ বলে ছক্কা-চার খেয়ে হতোদ্যম হননি সাইফউদ্দিন। ওই ওভারের ৫ম বলে শামীম পাটোয়ারির দারুণ ডাইরেক্ট থ্রো-তে কুশল পেরেরাকে রান আউটে ফেরত পাঠিয়ে লংকান সমর্থকদের পিলে চমকে দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে ১১ রান খরচ করা সেই সাইফুদ্দিন শেষ করেছেন ২ উইকেটে (৩-০-২১-২)।
এই ম্যাচে অধিনায়ক লিটনের বোলিং চেঞ্জ, ফিল্ড প্লেসিং সবই ছিল দারুন। তবে তার ব্যাটিংটা ছিল এক কথায় অসাধারণ। অধিনায়কের ব্যাটে রান না এলে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে দলের উপর, পাল্লেকেলেতে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৬ রানে আউট হয়ে দলের সে বিপর্যস্ত চেহারা দেখেছেন লিটন। সিরিজের আশা বাঁচিয়ে রাখার ম্যাচে নিজেকে ধরেছেন মেলে। করেছেন টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে নিজের দ্বিতীয় সেরা পারফরমেন্স (৫০ বলে ১ চার, ৫ ছক্কায় ৭৬ রান)।
ইনিংসের প্রথম দুই ওভারে পারভেজ ইমন (৩ বলে ০) এবং তানজিদ হাসান তামিম (৮ বলে ৫) ফিরে যাওয়ার পর ডাম্বুলায় ছিল অশনি সংকেত। তবে লিটনের ক্যাপ্টেনস নক, হৃদয়ের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৫ বলে ৬৯ এবং শামীম পাটোয়ারিকে নিয়ে ৫ম উইকেট জুটিতে ৫২ বলে ৭৭ রানে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। হৃদয় এদিন ফিরে পেয়েছেন ছন্দ। শানাককে এক ওভারে পর পর দুই বলে ছক্কা এবং চার মেরে দিয়েছিলেন ফিফটির পূর্বাভাস। তবে বিনুরু ফার্নান্ডোর আউটসাইড অফ ডেলিভারিতে শর্ট থার্ডম্যানে থেমেছেন তিনি (২৫ বলে ৩১)।
ব্যাট করতে নেমে লিটন প্রথম বল ফেস করেছেন কভারে সিঙ্গল নিয়ে। শুরুতে আত্মবিশ্বাসী শট পেয়েও বেশ কিছুক্ষণ ছিলেন সতর্ক। প্রথম ৭ রানে খেলেছেন তিনি ১১টি বল। এর পর ব্যাটটা করেছেন চওড়া। বিনুরু ফার্নান্ডোকে দর্শনীয় পুল শটে ছক্কায় পেয়েছেন অক্সিজেন। চার-এর চেয়ে ছক্কার আধিক্য ছিল তার ইনিংসে। ৫টি ছক্কার ২টি মেরেছেন বিনুরু ফার্নান্ডোকে। ১টি করে মেরেছেন শানাকা, থিকসানা ও জেফরিকে। ৩৯ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দ্বাদশ ফিফটি পূর্ণ করেছেন ছক্কার শটে। থিকসানাকে ডাউন দ্য উইকেটে ছক্কা মেরে ৬০ রানের মাথায় জেফরির বলে মিড অফে দিয়েছিলেন ক্যাচ। থিকসানার হাত থেকে ক্যাচ ফসকে যাওয়ায় ইনিংস টেনে নিতে পেয়েছেন ৭৬ পর্যন্ত। থিকসানার মিয এন্ড লেগ স্ট্যাম্পে পিচিং ডেলিভারিতে মিড উইকেট দিয়ে খেলতে যেয়ে থার্ডম্যানে দিয়েছেন ক্যাচ। শামীম পাটোয়ারীর সাথে ৫২ বলে ৭৭ রানের পার্টনারশিপটাই বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জিং পুঁজির জন্য সহায়ক হয়েছে। লিটনের পর ফিফটি পেতে পারতেন শামীম পাটোয়ারী। তবে করুনারত্নে এবং তুষারাকে ছক্কায় ডাম্বুলার দর্শকদের পিলে চমকে দেয়া শামীম পাটোয়ারি থেমেছেন ফিফটি থেকে ২ রান আগে। রান আউটে কাটা পড়েছেন তিনি (২৭ বলে ৫ চার, ২ ছক্কায় ৪৮)।
লিটন-হৃদয়-শামীম পাটোয়ারির ব্যাটিংয়ে যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে পেরেছে বাংলাদেশ, সেই চ্যালেঞ্জে ৮৩ রানের জয়ে সিরিজের ট্রফিতে এখন চোখ লিটনের দলের। আগামী ১৬ জুলাই প্রস্তুত প্রেমাদাসার মঞ্চ।
ব্যাট হাতে শুরুর চাপ সামাল দিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে লিটন দাস খেললেন ব্যবধান গড়ে দেওয়া ইনিংস। তাতে ভর করে শ্রীলঙ্কা চ্যালেঞ্জিং টার্গেটই দিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে রান তাড়ায় দাপুটে জয় পাওয়া স্বাগতিকরা এবার মুখথুবড়ে পড়ল। সামান্যতম লড়াই জমাতে ব্যর্থ হয়ে একশর আগেই গুটিয়ে গেল শ্রীলঙ্কার ইনিংস। আর তাতে সিরিজে টিকে রইল বাংলাদেশ।
ডাম্বুলায় সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জিতেছে ৮৩ রানে। লিটন দাসের দলের করা ৭ উইকেটে ১৭৭ রানের জবাবে মাত্র ৯৪ রানেই থামে প্রতিপক্ষের ইনিংস।
এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফেরা শরিফুল ইসলামের শুরুতেই করেন বাজিমাত। অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই কুসাল পেরেরা ক্যাচ তুলে দেন পয়েন্টে।
ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলা শামীম হোসেন ফিল্ডিংয়েও আলো ছড়ান বেশ। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে কাভার পয়েন্টে ঠেলে দৌড় শুরু করেছিলেন কুসাল মেন্ডিস, তবে শামীমের নিখুঁত থ্রো তছনছ করে দেয় স্টাম্প। ১৯ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
অন্যপ্রান্তে মুস্তাফিজুরের রহমানের বলে শূন্য রানে থাকা অবস্থায় আভিশকা ফার্নান্দো শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান। খানিক বাদে তাকে অবশ্য হতাশ করেন শরিফুল ইসলাম। ডিপ স্কয়ার লেগে শামীমের ক্যাচে শেষ হয় ৫ বলের ২ রানের ইনিংস।
যাওয়া-আসার মিছিলে এরপর যোগ দেন চারিথ আসালাঙ্কা। সাইফউদ্দিনের বাইরের ফুল লেংথ বল খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন লিটন দাসের গ্লাভসে। ৫ বল খেলে সমান ৫ রানে বিদায় নেন লঙ্কান অধিনায়ক।
এরপরই রিশাদ হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজের স্পিন ঘূর্ণিতে পথ হারায় শ্রীলঙ্কা। দাসুন শানাকা ছক্কা মারতে গিয়ে শিকার হন মিরাজের, তার আগে ১৬ বলে করেন ২০ রান।
একপ্রান্ত আগলে কিছুটা লড়াই করা পথুম নিসাঙ্কা রিশাদকে চার মারার পরের বলে স্টাম্পড হন ৩২ রানে। একই ওভারে তাকে অনুসরণ করেন চামিকা কারুনারাত্নে।
৭৩ রানে ৭ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কার ইনিংসে বাকি অংশের ইতি ঘটে খুব দ্রুতই। ১৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার রিশাদই।
এর আগে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ ইনিংসের তৃতীয় বলেই হারায় উইকেট, পারভেজ হোসেন ইমন শূন্য রানে বোল্ড হন। এরপর তানজিদ হাসান তামিমও ৫ রানে ফিরে যান।
এরপর চাপের মধ্যে দায়িত্ব নেন লিটন ও তাওহীদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেটে দুজনে গড়েন ৬৯ রানের জুটি। তাওহীদ ২৫ বলে ৩১ রান করে ফিরলেও ছন্দে থাকা লিটন ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৯ বলে। শেষ পর্যন্ত দুটি জীবন পেয়ে খেলেন ৫ ছক্কা ও ১ চারে ৭৬ রানের ইনিংস।
তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে শামীমও উপহার দেন মারমুখী ব্যাটিং। শেষ ওভারে রান আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪৮ রান।
দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ে শুরুতেই তৈরি হল চাপ। ফর্মের সাথে লড়াই করা লিটন দাস সেখান থেকেই শুরু করলেন লড়াই। রানে ফেরার ম্যাচে দলকে ভালো একটা স্কোরের ভিত গড়ে দিলেন দারুণ এক ফিফটিতে। সাথে শামীম হোসেন খেললেন ভীষণ কার্যকরী এক চল্লিশোর্ধ রানের ইনিংস। শেষ কয়েকটি ওভারে সেভাবে ঝড় তোলা না গেলেও তাই শ্রীলঙ্কাকে চ্যালেঞ্জিং টার্গেটই দিল বাংলাদেশ।
ডাম্বুলায় সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ১৭৭ রানের স্কোর দাঁড় করিয়েছে।
প্রথম ম্যাচের মতোই আরও একবার টস ভাগ্য সহায় হয়নি লিটন দাসের। তাতে টানা ম্যাচে আগে ব্যাট করতে হয় বাংলাদেশকে। প্রথম ম্যাচের হারের পর একাদশে বড়সড় বদল আনে বাংলাদেশ। দীর্ঘ বিরতির পর দলে ফিরে এক ম্যাচ খেলেই বাদ পড়েন নাঈম শেখ। আরও বাদ পড়েন তানজিম হাসান সাকিব ও তাসকিন আহমেদ। একাদশে ফেরেন জাকের আলি অনিক, মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম।
ব্যাট হাতে বাংলাদেশের শুরুটাই ছিল হতাশাজনক। ইনিংসের তৃতীয় বলে নুয়ান থুসারার এক দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত হয়ে ক্লিন বোল্ড হন পারভেজ হোসেন। রানের খাতাই খুলতে পারেননি তরুণ এই ওপেনার।
আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। স্লিপের পাশে ও গালির মাঝে এক জায়গায় ফিল্ডার রেখে সাজানো ফাঁদে পা দেন তিনি। বিনুরা ফার্নান্দোর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালান তানজিদ, কিন্তু টাইমিং হয়নি। আউটের আগে ৮ বলে ৫ রান করতে পারেন তিনি।
দ্রুত দুই ওপেনারের বিদায়ে চাপে পড়লে এরপর হাল ধরেন লিটন ও তাওহীদ। ৬ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৩৯। এরপর জুটিতে ফিফটিও করেন তারা, তবে সেজন্য বল খেলে ফেলেন ৪১টি।
একবার ভাগ্যের সহায়তাও পান লিটন। ৩০ রানে থাকা অবস্থায় জেফ্রি ভ্যান্ডারসের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে মিস করেন, কিন্তু কিপার কুশল মেন্ডিস পারেননি স্টাম্পড করতে।
ওই ওভারের পরের বলেই বাউন্ডারি মেরে ভ্যান্ডারসকে হতাশ করেন তাওহীদ। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। বিনুরা ফার্নান্দোর অফ স্টাম্পের বাইরের স্লোয়ার কাট করার চেষ্টায় ব্যাটের কানায় লেগে তুলে ক্যাচ দেন। ২৫ বলে তাওহীদের ৩১ রানে বিদায়ে ভাঙে ৬৯ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি।
পরের ওভারেই আবারও উইকেটের দেখা পায় শ্রীলঙ্কা। বিনুরার স্লোয়ারে স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১২ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে মাত্র ৮০। ক্রিজে লিটন তখন সেট হওয়ায় বড় স্কোরের আশা টিকে ছিল সফরকারীদের।
ভ্যান্ডারসের বলে আরও একবার জীবন পাওয়ার পর লিটন সেই ওভারেই স্লগ সুইপ করে ছক্কা মেরে পূর্ণ করেন তার ১২তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি। এজন্য বল খেলেন ৩৯টি। সাথে মাত্র ২৬ বলেই শামিম হোসেনের সাথে তার পঞ্চম উইকেট জুটির অর্ধশতক।
ফিফটির পর আরও আগ্রাসী হয়ে ব্যাট চালান লিটন। সমানতালে এগিয়ে যান শামিমও। শেষ পর্যন্ত ৭৬ রানে থামে লিটনের পথচলা। তবে তার আগে উপহার দেন ৫৬ বলে ৫ ছক্কা ও ১ চারে সাজানো দারুণ এক ইনিংস।
ফিফটির পথে ছিলেন শামীমও। তবে দুই রান দূরে থাকতে রান আউটে কাঁটা পড়েন তিনি। তবে তার আগে চাপের মুখে উপহার দেন ২৭ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪৮ রানের ইনিংস।
গ্লোবাল সুপার লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে গায়ানা আমাজন ওয়ারিওর্সের সাথে দারুণ জয় দিয়ে আসর শুরু করা রংপুর একদিন বাদে আবার মাঠে নামছে। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার দল হোবার্ট হারিকেন্স, যেখানে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমেছে নুরুল হাসান সোহানের দল।
শক্তিশালী গায়ানার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করা রংপুর ৫ উইকেটে ১৬২ রান করার পরও এক পর্যায়ে ছিল বেশ চাপের মুখে। তবে বল হাতে ডেথ ওভারে চমক দেখিয়ে দুর্দান্ত এক জয় তুলে নেয় রংপুর, জেতে ৮ রানে।
আরও পড়ুন
জয় দিয়েই আসর শুরু চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সের |
![]() |
হোবার্টের বিপক্ষে ম্যাচে ওই ম্যাচের একই একাদশ নিয়ে মাঠে নামছে রংপুর। ম্যাচটি সরাসরি দেখতে চোখ রাখুন টি স্পোর্টসের পর্দায়।
রংপুর রাইডার্স একাদশ :
ইব্রাহিম জাদরান, সৌম্য সরকার, কাইল মায়ার্স, আজমাতউল্লাহ ওমরজাই, ইয়াসির আলী রাব্বি, নুরুল হাসান (অধিনায়ক), ইফতেখার আহমেদ, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, রাকিবুল হাসান, তাবরেজ শামসি, খালেদ আহমেদ।
হোবার্ট হ্যারিকেনস একাদশ :
ভানুকা রাজাপাকশে, বেন ম্যাকডারমট (অধিনায়ক), ম্যাকালিস্টার রাইট, জ্যাক ডোরান, নিখিল চৌধুরী, মোহাম্মদ নবি, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, ওডিয়ান স্মিথ, উসামা মির, বিলি স্ট্যানলেক, রাফ ম্যাকমিলান।
শুরুতে দলে না থাকলেও শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকার ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে দেখা যাবে ডেভন কনওয়েকে। চোটের শিকার ফিন অ্যালেনের বদলি হিসেবে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারকে স্কোয়াডে নিয়েছে কিউইরা। যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লিগ ক্রিকেটে (এমএলসি) সান ফ্রান্সিসকো ইউনিকর্নসের হয়ে খেলতে গিয়ে পায়ে চোট পেয়েছেন অ্যালেন।
এক বছরের বেশি সময় দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি দলের বাইরে ছিলেন কনওয়ে। যদি এই সময়ে বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলেছেন বেশ। সম্প্রতি তিনিও খেলেছেন এমএলসিতে। টেক্সাস সুপার কিংসের হয়ে ৪ ম্যাচে ১২৭.৩৫ স্ট্রাইক রেটে করে ১৩৫ রান।
কনওয়ে ছাড়া নিউজিল্যান্ড দলের নতুন সংযোজন হিসেবে আরও আছেন দুই ব্যাটার মিচেল হে, টিম রবিনসন এবং অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার জেমস নিশাম।
মূলত মাইকেল ব্রেসওয়েল, মার্ক চ্যাপম্যান, গ্লেন ফিলিপস ও রাচিন রবীন্দ্র রোববারের এমএলসির ফাইনাল খেলায়, তাদের অতিরিক্ত কভার হিসেবে স্কোয়াডে যোগ করা হয়েছে এই চারজনকে।
যথারীতি নেতৃত্ব দেবেন অলরাউন্ডার মিচেল স্যান্টনার। তবে দলে নেই বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। আপাতত নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে সরিয়ে রাখা অভিজ্ঞ ব্যাটার কেন উইলিয়ামসন বর্তমানে ইংল্যান্ডে মিডলসেক্সের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলছেন। পেসার লকি ফার্গুসন আছেন বিশ্রামে আছেন। আরেক পেসার কাইল জেমিসন পরিবারের নতুন সদস্যের আগমনের অপেক্ষায় থাকায় নিয়েছেন ছুটি। এছাড়া বেন সিয়ার্স সাইড স্ট্রেইনের চোটে ছিটকে গেছেন।
আরও পড়ুন
অ্যাশেজের জন্য সাদা বলের সিরিজে বিশ্রাম নিলেন কামিন্স |
![]() |
ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ড তাদের অভিযান শুরু করবে আগামী বুধবার, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে প্রত্যেক দল একে অপরের বিপক্ষে দুইবার করে খেলবে টুর্নামেন্টে। এরপর পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দল আগামী ২৬ জুলাই ফাইনালে মুখোমুখি হবে। সবগুলো ম্যাচই হবে হারারে স্পোর্টস ক্লাবে।
ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ড স্কোয়াড :
মিচেল স্যান্টনার (অধিনায়ক), ডেভন কনওয়ে, মাইকেল ব্রেসওয়েল, মার্ক চ্যাপম্যান, জ্যাকব ডাফি, জ্যাক ফাউলকস, ম্যাট হেনরি, বেভন জ্যাকবস, অ্যাডাম মিলনে, ড্যারিল মিচেল, উইল ও'রউর্ক, গ্লেন ফিলিপস, রাচিন রবীন্দ্র, টিম সাইফার্ট, ইশ সোধি, মিচ হে, জেমস নিশাম, টিম রবিনসন।
৯ দিন আগে
৯ দিন আগে
১০ দিন আগে
২১ দিন আগে
২১ দিন আগে
২৪ দিন আগে
২৪ দিন আগে