নাটকীয় সমাপ্তির দিকে এখন ওভাল টেস্ট। এই টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে কঠিন এক সমীকরনের সামনে দাঁড়িয়ে দু'দল। জিততে হলে ভারতের দরকার ৯ উইকেট। ইংল্যান্ডের সেখানে দরকার ৩২৪ রান। প্রথম ইনিংসে ২৩ রানের লিড নিয়েও টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ডের চ্যালেঞ্জটা কঠিন করে দিয়েছে ভারত। চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৭৮ রান তাড়া করে জয়ের অতীত আছে ইংল্যান্ডের। ২০২২ সালে বার্মিংহাম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেট জয়ের ছবিটা তাই চোখের সামনে ভেসে উঠছে ইংল্যান্ড সমর্থকেদের। চলমান টেস্ট সিরিজে হেডিংলিতে ৩৭১ তাড়া করে ৫ উইকেটে জয়ের তরতাজা স্মৃতি থেকেও টনিক নিতে পারে ইংল্যান্ড।
ওভাল টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ইংল্যান্ড নিজেদের কাজটা কঠিন করে দিয়েছে বাজে ফিল্ডিং এবং ক্যাচ ড্রপে। একটি দুটি নয়, ৬টি ক্যাচ ইংল্যান্ড ফিল্ডারদের হাত থেকে ফসকে গেছে। যার মধ্যে স্লিপে পড়েছে ৪টি ক্যাচ। অন্য ২টি লং অন এবং গালিতে। টেস্ট ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরি (২৮৬ মিনিটে ১৪ চার, ২ ছক্কায় ১১৮) উদযাপন করেছেন জসওয়াল ভাগ্যের কৃপায়। একটি-দুটি নয়, তার তিনটি ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন ইংল্যান্ড ফিল্ডাররা।জসওয়ালের পার্টনার আকাশদ্বীপের ৬৬ রানেও আছে একবার লাইফ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে এই দুইজন ১০৭ রান যোগ করে ভারতকে লড়াইয়ে রেখেছেন। দ্বিতীয় দিন শেষে ৭৫/২ স্কোর নিয়ে কতো স্কোরই বা প্রত্যাশা করেছে ভারত ? তৃতীয় দিন ৮ উইকেটে ৩২১ রান যোগ করে ভারতের স্কোর ৩৯৬ পর্যন্ত টেনে নেয়ার পেছনে অবদান টেল এন্ডারদের। ৭ম উইকেট জুটির ৬০, ১০ম উইকেট জুটির ৩৯ রানে তা সম্ভব হয়েছে। জাদেজার ৫৩, ওয়াশিংটন সুন্দরের ৫৩ রানের ইনিংসও ইংল্যান্ডকে চতুর্থ ইনিংসে বড় পরীক্ষায় দিয়েছে ফেলে। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারি ইংল্যান্ড পেসার অ্যাটকিনসন দ্বিতীয় ইনিংসে পেয়েছেন ৩ উইকেট (৩/১২৭)। প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট শিকারি পেসার জস টং দ্বিতীয় ইনিংসে পেয়েছেন ৫ উইকেট (৫/১২৫)।
চতুর্থ ইনিংসে ৩৭৪ রানের চ্যালেঞ্জে পড়ে তৃতীয় দিনের অন্তিম সময়ে সিরাজের ইয়র্কারে ক্রাউলি বোল্ড হয়েছেন (১৪)। বেন ডাকেট আছেন ৩৪ রানে ব্যাটিংয়ে। তৃতীয় দিন শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ৫০/১।
অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে চলতি মাসে হতে যাওয়া টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ নেবে বাংলাদেশ ‘এ’ দল, নিশ্চিত ছিল আগেই। এই সফরকে সামনে রেখে সোমবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) স্কোয়াড ঘোষণা করেছে, যেখানে অধিনায়ক করা হয়েছে কিপার-ব্যাটার নুরুল হাসান সোহানকে।
টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজে ‘এ’ দল প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে বিগ ব্যাশ লিগের দুই দল মেলবোর্ন স্টার্স, অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স ছাড়াও পাকিস্তান ‘এ’, নেপাল, পার্থ স্কোর্চার্স, নর্দার্ন টেরিটরি স্ট্রাইককে। এছাড়া এই সফরে একটি চারদিনের ম্যাচেও অংশ নেবেন সোহানরা।
সূচি অনুযায়ী, আগামী ৯ আগস্ট ডারউইনে পা রাখবে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। সিরিজের প্রথম ম্যাচে তারা মাঠে নামবে ১৪ আগস্ট, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে। এরপর যথাক্রমে খেলবে নেপাল, পার্থ স্কোর্চার্স, নর্দার্ন টেরিটরি স্ট্রাইক, মেলবোর্ন স্টার্স এবং অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে। ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে এই সিরিজের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ।
এই সিরিজ শেষে আগামী ২৮ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চার দিনের ম্যাচে খেলবে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। তবে এই ম্যাচটির ভেন্যু এখনও নির্ধারিত হয়নি।
বাংলাদেশ ‘এ’ স্কোয়াড: নুরুল হাসান সোহান (অধিনায়ক), সাইফ হাসান, মোহাম্মদ নাঈম, জিসান আলম, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, ইয়াসির আলী চৌধুরী, আফিফ হোসেন, তোফায়েল আহমেদ, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, রাকিবুল হাসান, মাহফুজুর রহমান রাব্বি, নাঈম হাসান, মুসফিক হাসান, রিপন মন্ডল, হাসান মাহমুদ।
চতুর্থ ইনিংসে ৩৭৮ এবং ৩৭১ তাড়া করে জয়ের অতীত আছে ইংল্যান্ডের। দুবারের প্রতিপক্ষ ভারত। সে কারণে ওভাল টেস্টে ৪র্থ ইনিংসে ৩৭৪ রানের টার্গেটকে কঠিন মনে করেনি ইংল্যান্ড। লক্ষ্যটা যখন ৩৫ রান, হাতে ৪ উইকেট- ওভাল টেস্টের ৫ম দিনে এমন একটা পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে যখন ইংল্যান্ড, তখন ইংল্যান্ডের পক্ষে বাজি ধরার পক্ষেই থাকবে যে কেউ। তবে ক্রিকেট যে অনিশ্চয়তার খেলা, মাত্র ৪টি ভাল বল ঘুরিয়ে দিতে পারে খেলার ফলাফল, সে বিশ্বাসে বদ্ধমূল ছিলেন ভারতের দুই পেসার সিরাজ, প্রসিধ কৃঞ্চা।
২০১৮ সালের পর ইংল্যান্ডের কাছে সিরিজ হারের রেকর্ড নেই ভারতের। সেই থেকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ টেস্টের ২টিতে জয়, ১ টি ড্র করতে পেরেছে ভারত। ২০২০-২১ মৌসুমে ইংল্যান্ডের মাটি থেকে ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-২-এ ড্র'র সুখস্মৃতি আছে ভারতের। সেই অতীত থেকে প্রেরণা নিয়ে ওভালে সিরিজের শেষ টেস্ট ৬ রানে জিতে ২-২এ এবার সিরিজ ড্র করেছে ভারত।
বৃষ্টিতে ৪র্থ দিন আগেভাগে খেলা থেমে যাওয়ায় ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে ছন্দপতন হয়েছে। ৫ম দিনের দ্বিতীয় ওভারে সিরাজের ওয়াইড সুইংয়ে জেমি স্মিথ (২) স্লিপে লো ক্যাচে থেমে গেলে ম্যাচ জয়ের আবহ পায় ভারত। সিরাজ পরের ওভারে অ্যাঙ্গেল ডেলিভারিতে ওভারটনকে এলবিডাব্লুউতে দিয়েছেন ফিরিয়ে (৯)। দারুণ ইয়র্কারে জস টং (০)-কে প্রসিধ কৃঞ্চা বোল্ড করলে জয়ের সুবাস পায় ভারত। এক হাতের ইনজুরি নিয়ে অনোন্যপায় হয়ে অ্যাটকিনসনকে সাপোর্ট দিতে নেমেছিলেন ওকস। তবে অ্যাটকিনসন বিফল হয়েছেন। সিরাজকে সুইপ করতে যেয়ে বোল্ড আউটে (২৭ বলে ১৭) থেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওভাল টেস্ট জিতে সমতায় সিরিজ শেষ করেছে ভারত।
প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডকে ২৩ রানের বেশি লিড নিতে দেননি ভারতের দুই পেসার সিরাজ (৪/৮৬) এবং প্রসিধ কৃঞ্চা (৪/৬২)। দ্বিতীয় ইনিংসেও ভারতের হিরো এই দুই পেসার। ৪১তম টেস্টে ইনিংসে ৫ম বারের মতো ৫ উইকেটের মুখ দেখেছেন সিরাজ (৫/১০৪)। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন তিনি।
টেস্ট ম্যাচে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের রেকর্ডটাও তার ওভালে (৯/১৯০)। যশওয়াল (১১৮), রুট (১০৫), হ্যারি ব্রুকের (১১১) সেঞ্চুরি ওভাল টেস্টের লড়াইয়ে দিয়েছে উত্তাপ। তবে ইংল্যান্ডের দম্ভ চূর্ণ করেছেন ভারত পেসার সিরাজ চতুর্থ ইনিংসে বিধ্বংসী স্পেলে (১২.১-৩-৩৬-৩)।
মেঘলা আবহাওয়া হওয়ায় ভারতের পেসাররা বাড়তি আশার আলো নিয়েই নামলেন মাঠে। তবে দিনের প্রথম দুই বলেই তাদের বড় ধাক্কা দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকালেন জেমি ওভারটন। তবে দুই ওভারে দুই উইকেটে ম্যাচ জমালেন মোহাম্মদ সিরাজ। এরপর আরেকটি উইকেটের পতনে এক হাতে ব্যাট করতে নেমে গেলেন ক্রিস ওকস। তবে শেষ রক্ষা আর হলো না। সিরাজের ফাইফারে জয় থেকে মাত্র ৭ রান দূরে থাকতে থেমে যেতে হল তাদের। আর ভারত পেল স্মরণীয় এক জয়।
ওভালে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টে ভারত জিতেছে মাত্র ৬ রানে। ৩৬৭ রানে থেমেছে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস। ফলে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ শেষ হল ২-২ সমতায়।
আবহাওয়া মেঘলা থাকায় পঞ্চম দিনের সকালে ছিল বেশ ঠান্ডা। চারদিন খেলার পর ক্লান্ত উইকেটে ব্যাটিং কিছুটা কঠিন হওয়ার কথা। তবে ইংল্যান্ডের সামনে ছিল উইকেটে ভারী রোলার নেওয়ার সুযোগ, যা তারা কাজে লাগায়। ফলে কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা ছিল তাদের সামনে।
অন্যদিকে প্রথম দিন ম্যাচ থেকেই ছিটকে যাওয়া ক্রিস ওকস ব্যস্ত সময় কাটান ইনডোরে। সেখানে তিনি ব্যাট করেন এক হাতেই। বাঁ কাঁধে চোট পাওয়ায় তার সামনে এটা ছাড়া আর উপায়ও নেই। ইংল্যান্ডের দরকার পড়লে তিনি বাঁহাতি ব্যাটার হিসেবে নামবেন বলেই আসে খবর।
অন্যদিকে ভারতের সামনে নতুন বল নেওয়ার সুযোগ মাত্র ৩.৪ ওভার পরই। এমন রোমাঞ্চকর পরিস্থিতিতে দিনের প্রথম বলেই প্রাসিধ কৃষ্ণকে চার মেরে ইংলিশ শিবিরে ইতিবাচক আবহ তৈরি করেন ওভারটন। পরের বলে মারেন আরেকটি চার। চার বলে ৮ রান নিয়ে ম্যাচ দ্রুত শেষ করার আভাস দেয় ইংল্যান্ড।
তবে উজ্জীবিত মোহাম্মদ সিরাজ আরও একবার ভারতকে ম্যাচে ফেরান। নিজের তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে শিকার বানান ২ রান করা কিপার-ব্যাটার জেমি স্মিথকে। ওই ওভারেই যেতে পারত আরেকটি উইকেট। তবে তিন বল বাদে গাস আটকিনসন তুলে দিয়েছিলেন ক্যাচ, তবে কভার পয়েন্টে কেউ না থাকায় সুযোগ হারায় ভারত।
প্রাসিধের করা দিনের তৃতীয় ওভারে চার রান আদায় করেন আটকিনসন ও ওভারটন মিলে। তবে দ্রুতই তাদের প্রতিরোধও আটকে দেন সেই সিরাজ। কয়েকবার বিট করার পর শেষ পর্যন্ত সাজঘরের পথ দেখান ওভারটনকে। ইনসুইঙ্গারে পরাস্ত হয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। আরও উজ্জ্বল হয় ভারতের জয়ের আশা।
এই উইকেট পতনের সময় ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে দেখা যায় ওকসকে। তিনি ডান হাতে পড়েন আর্ম গার্ড, যা নিশ্চিত করে দেয়, তিনি ব্যাট করবেন বাঁ হাতেই। এরই মাঝে জস টাংকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে দিয়েছিলেন প্রাসিধ। তবে রিভিউ নিয়ে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলতে সমর্থ হন তিনি।
তবে খানিক বাদেই দারুণ এই ইয়র্কারে তাকে ক্লিন বোল্ড করে দেন প্রাসিধ। এক হাতেই ব্যাট করতে নেমে যান ওকশ। তবে তাতে সুরক্ষা দিতে বড় শট নেওয়ার চেষ্টায় প্রতিটি বল মোকাবেলা করেন আটকিনসন। একবার লং অফে ক্যাচ দিয়েছিলেন, তবে আকাশ দ্বিপ ক্যাচ ফেলে ছক্কা বানিয়ে দেন।
এরপর টানা দুই ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল আসে ইংল্যান্ডের। তবে রান হয় মাত্র তিন। ফলে বাড়ে চাপ। একের পর এক বড় শট মারতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়া আটকিনসন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থই হন। সিরিজে এক হাজারের বেশি ডেলিভারি করা সিরাজের ইয়র্কারে বোল্ড হতে হয়। উল্লাসে মেতে ওঠে ভারত, আর হতাশাই সঙ্গী হয় ইংল্যান্ডের। ১০৪ রানে ৫ উইকেট নেন সিরাজ।
ফিল্ডিং করার সময় বাঁ কাঁধে আঘাত পেয়ে ছিটকে গিয়েছিলেন গোটা ম্যাচ থেকেই। ক্রিস ওকস তাই বোলিং তো নয়ই, এমনকি ব্যাটিংও করতে পারবেন না বলেই জানানো হয়েছিল। তবে ইংল্যান্ডের তারকা ব্যাটার জো রুট জানিয়েছেন, ভারতের বিপক্ষে চলমান টেস্টে দলের প্রয়োজন হলে এক হাতেও ব্যাট করতে প্রস্তুত অভিজ্ঞ এই পেসার।
ওকসের চোটের ব্যাপারে বিস্তারিত এখনো জানায়নি ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। ধারণা করা হচ্ছে, তার বাঁ কাঁধ ডিসলোকেট হয়েছে। ফলে এ গ্রীষ্মে তো বটেই, ২১ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া পার্থ অ্যাশেজ টেস্টেও অনিশ্চিত তার খেলার বিষয়টি। চতুর্থ দিন ওকসকে ড্রেসিংরুমে দেখা গেছে এক হাত প্লাস্টার করা অবস্থায়। এমন পরিস্থিতিতে তার ব্যাটিং করাটা প্রায় অবিশ্বাস্যই।
তবে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের ৪ উইকেট হাতে রেখে ৩৫ রান প্রয়োজন বলেই আসছে ওকসের ব্যাট করার সম্ভাবনার কথা। রুটও দিয়েছেন সেই পালে হাওয়া।
“ওকসের মতো পুরো দলের সবাই জেতার জন্য নিজেদের শরীরের সর্বোচ্চটা নিংড়ে দিয়ে লড়ছে। এটা এমন একটা সিরিজ, যেখানে আমরা সবার কাছ থেকেই সেরা নিবেদনটাই দেখতে পেয়েছি। আশা করি তাকে ব্যাট করতে হবে না, কিন্তু সে প্রস্তুত আছে। আর এখান থেকেই এই ম্যাচটা তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যাচ্ছে।”
ওকস চোট পান প্রথম দিনের শেষ পর্যায়ে একটি বাউন্ডারি আটকাতে গিয়ে। ম্যাচ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছিটকে যাওয়ার ঘোষণা এলেও, চতুর্থ দিন শেষ বেলায় সাদা পোশাক পরে প্রস্তুত হয়ে তিনি অপেক্ষায় ছিলেন শেষ ব্যাটার হিসেবে নামার জন্য। এর আগে ইনডোরে একহাতে ব্যাটিং অনুশীলনও করেছেন তিনি। ডানহাতি ব্যাটার যদি শেষ পর্যন্ত নেমেও যান, তাহলে তিনি কোন হাতে ব্যাট করবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
রান তাড়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা রুট মনে করেন, দলের জন্য ওকস শেষ বিন্দু দিয়েই লড়বেন।
“আমি এখনো তাকে অনুশীলনে দেখিনি। কাল (সোমবার) সকালে কিছু থ্রোডাউন দিলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। তবে ব্যথা যে বেশ তীব্র, তা দেখেই বোঝাই যাচ্ছে। তবুও সে মাঠে নামতে চায়, ব্যাট করতে চায়। ঠিক যেমনটা এই সিরিজে অন্যদের কাছ থেকেও আমরা দেখেছি, যেমন রিশাভ পান্তভাঙা পা নিয়েই ব্যাট করেছে। এই সিরিজটা তাই দুই দলের খেলোয়াড়দের জন্য হৃদয় দিয়ে লড়াই করার মঞ্চ হয়ে গেছে।”
দুর্দান্ত এক সিরিজে বারবার দুটি দলই ঘুরে দাঁড়িয়েছে খাদের কিনারা থেকে। জয়ের লড়াইয়ে ইংল্যান্ড ও ভারত একবিন্দু ছাড় দিতে নারাজ। সিরিজের শেষ টেস্টের শেষ দিনেও তাই দুই দলের সামনেই রয়েছে রয়েছে সুযোগ। একটু এগিয়ে থাকা ইংলিশরা জিতলেই জিতে যাবে সিরিজও। জো রুট মনে করেন, শেষ হাসি হাসবেন তারাই।
ওভালের রোমাঞ্চকর টেস্টের চতুর্থ দিনে রুট ও হ্যারি ব্রুকের সেঞ্চুরিতে ৩৭৪ রানের লক্ষ্যে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল ইংল্যান্ড। তবে শেষ সেশনের শুরুতে রুট সহ দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে আছে দলটি। চার উইকেট হাতে নিয়ে দরকার ৩৫ রান, এর মধ্যে চোট পাওয়া ক্রিস ওকস যদি ব্যাট করেনও, সেটা হবে এক হাতে। এগিয়ে থাকলেও তাই ম্যাচ জেতার জন্য তাই কিছুটা চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ডের সামনে।
রুট অবশ্য চতুর্থ দিন শেষে বেশ নির্ভার কন্ঠেই বলেছেন জয়ের কথা।
“সকালেই প্রয়োজনীয় ৩৫ রান তুলে ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেওয়ার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।”
এই ম্যাচ অবশ্য পঞ্চম দিনে গড়ানোর কথাই ছিল না। রোববার শেষ সেশনে এক ঘণ্টা খেলার পরই হঠাৎ আলোর স্বল্পতার কারণে আম্পায়াররা খেলা বন্ধ করে দেন। এরপর আবার শুরু হয় বৃষ্টি। ফলে প্রায় ২০ ওভার বাকি থাকতেই শেষ হয় দিনের খেলা। আর এটা পঞ্চম দিনের খেলা শুরুর আগে রাখতে পারে একটা প্রভাব, কারণ ‘হেভি’ রোলার ব্যবহার করা হবে যা সহজ করতে পারে ব্যাটিং। চতুর্থ দিনে এই সুবিধা পেয়েছিল ভারত তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে।
রুট তাই জয়ের ব্যাপারে একটু বেশিই আশাবাদী।
“রোববার সকালে যেভাবে রোলারের পর ব্যাটিং সহজ হয়েছিল, পঞ্চম দিন সকালে আমরাও সেটা কাজে লাগাতে চাই। এই ছয় সপ্তাহে পাঁচটি টেস্টে দারুণ সব লড়াই হয়েছে। ম্যাচের মোড় বারবার ঘুরে গেছে। এখন শেষ দিনে গিয়ে আমরা জয় ছিনিয়ে আনতে প্রস্তুত।”
ভারতের জন্য কার্যত ইংল্যান্ডের আর তিন উইকেট নিতে পারলেই ধরা দিবে দুর্দান্ত এক জয়, যা তাদের সাহায্য করবে সিরিজ ড্র করতেও। তবে সেজন্য তাদের কাজ হবে একটাই, পঞ্চম দিন ইংল্যান্ডকে কোনো সুযোগ না দিয়ে টানা উইকেট তুলে নেওয়া।
ভারতের সহকারী কোচ মর্নে মরকেল তেমন কিছুর আশাই করছেন সিরাজ-প্রাসিধদের কাছ থেকে।
“কাল সকালটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক জায়গায় বল ফেলতে পারলে, অল্প সময়েই কিছু উইকেট নেওয়া সম্ভব। ছেলেরা সেজন্য প্রস্তুত আছে। আমরা চাই আবারও কিছু রোমাঞ্চ তৈরি হোক।”