
সাউথ আফ্রিকার সাথে টেস্টে ভুগছে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ১৫৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া টাইগাররা পিছিয়ে ৪১৬ রানের বড় ব্যবধানে। সেই ম্যাচ দেখতে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে হাজির বিসিবি প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ। সেখানে বিসিবির বড় কর্তা নিশ্চিত করেছেন সাকিব আল হাসানের আফগানিস্তানের সাথে না থাকা।
আজ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম টেস্টের লাঞ্চ বিরতিতে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ গণমাধ্যমে বলেন,
'মিরপুরে টেস্ট খেলার জন্য সাকিবকে নিয়ে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। আমাদের পক্ষে বিষয়টি সহজ ছিল না, তবে আমরা সবকিছু স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। সাকিবের এখন যে মানসিক অবস্থা এবং ক্রিকেটে ফিরতে সে নিজেই একটু সময় চেয়েছে।'
শারজায় আফগানদের সাথে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ দলের রওনা দেওয়ার কথা ৩ নভেম্বর। বিসিবি প্রেসিডেন্ট আরো যোগ করেন,
'সাকিব যদি সেখান থেকে নিজেকে প্রস্তুত মনে করেন, তবে আগামী সিরিজগুলোয় তাঁর ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে আপাতত আফগানিস্তান সিরিজে তাঁকে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। মনে হচ্ছে এই সফরটা সে মিস করবে।'
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু ৬ নভেম্বর। দ্বিতীয় ওয়ানডে ৯ নভেম্বর আর শেষটি ১১ নভেম্বরে।
No posts available.

ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে স্বাগতিকদের হোয়াইট ওয়াশের অতীত স্মৃতিটা ছিল সঙ্গে। প্রিয় ভেন্যু চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামে সর্বশেষ ৯ ম্যাচে ৭ জয়ের সুখস্মৃতি থেকেও টনিক পাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট আফগানিস্তানকে মাত্র ক'দিন আগে নিরপেক্ষ ভেন্যু সংযুক্ত আরব আমিরাতে হোয়াইট ওয়াশের আনন্দ উদযাপনের স্মৃতিটাও টাটকা। অথচ, এসব অতীত উদ্দীপ্ত করেনি লিটনের দলকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১৬ রানে হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে অবতীর্ন হওয়ার আগে এই ভেন্যুতে প্রথম ইনিংসে গড় স্কোর ছিল ১৪৯। কাকতালীয়ভাবে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৬৬ রান তাড়া করে বাংলাদেশের স্কোর ১৪৯!
মিরপুরের চেয়ে ব্যাটারদের জন্য বেটার উইকেট চট্টগ্রামে, নিকট অতীতের রেকর্ড বলছে তা। পিচের উপর ঘাসের স্তর দূর থেকে দৃশ্যমান। তা দেখে ইভেন বাউন্সের যে আভাস ছিল, ম্যাচে তা-ই দেখেছে দর্শক। অথচ, এমন একটি ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ১৬৫/৩-কে একটু বেশিই মনে হয়েছে। আবার ১৬৬ তাড়া করতে যেয়ে বাংলাদেশ ১৪৯ রানে অল আউট, এ নিয়েও অনেক প্রশ্নের অবতারণা হতে পারে।
কীভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬৫/৩ পর্যন্ত স্কোর টেনে নিয়েছে, তার নেপথ্যে বাংলাদেশের তিন পেসারের ডেথ ওভারের বোলিং! শেষ পাওয়ার প্লে-র ৩০ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যোগ করেছে উইকেটহীন ৬৪। বিশেষ করে শেষ ৩ ওভারে তাসকিন- মোস্তাফিজ- তানজিম হাসান সাকিবের খরচা ৫২ রান-কে একটু বেশিই মনে হচ্ছে।
কীভাবে এই তিন পেসারকে তাদের শেষ ওভারে পাড়া মহল্লা মানে নিয়ে এসেছেন রোভমন পাওয়েল-সাই হোপ ? এটাই প্রশ্ন। ১৭তম ওভারে মোস্তাফিজ শেষ স্পেল করতে এসে প্রথম ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দিতে পারতেন বিপিএলের ম্যাচ উইনার রোভমন পাওয়েলকে। শর্ট থার্ডম্যানে তানজিম হাসান সাকিবের হাতে দিয়েছিলেন ক্যাচ রোভমন। সেই ক্যাচটি নিতে গ্যলারি শো'র মাশুল দিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব।
শততম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচকে স্মরণীয় করে রেখেছেন রোভমন পাওয়েল। ৭ রানের মাথায় জীবন ফিরে পেয়েছেন রোভমন পাওয়েল, তখন খেলে ফেলেছেন এই বিগম্যান ১৩টি বল। পরের ১৫ বলে তার ব্যাট থেকে ১ চার, ৪ ছক্কায় এসেছে ৩৭ রান!
হোপ-রোভমন অবিচ্ছিন্ন ৮৩ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দিয়েছে ম্যাচে দু'দলের ব্যবধান। ৪৬ বলে এই পার্টনারশিপে হোপের অবদান ১৮ বলে ৩৫, রোভমন পাওয়েলের ২৮ বলে ৪৪।
১ ওভারের দ্বিতীয় স্পেলে (১-০-২-২) পর পর ২টি ডেলিভারিতে ব্রান্ডন কিং (৩৬ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৩৩) এবং রাদারফোর্ডকে (১ বলে ০) ফিরিয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাসে টুইটম্বুর থাকার কথা তাসকিনের। অথচ, ১৮তম ওভারে শেষ স্পেলে খরচ করেছেন ১৫ রান।
পরের ওভারে মোস্তাফিজ ৬ষ্ঠ ডেলিভারি শর্ট পিচ করতে যেয়ে দিয়েছেন ওয়াইড। বোনাস ডেলিভারিতে রোভমন পাওয়েল মিড উইকেটের উপর দিয়ে মেরেছেন ছক্কা। শেষ ওভারে তানজিম হাসান সাকিবকে টানা বলে তিন ছক্কায় গ্যালারি ঠাসা দর্শকদের হতভম্ব করেছেন রোভমন পাওয়েল। শেষ ওভারে খরচা করেছেন তানজিম হাসান সাকিব ২২ রান।
৩ পেসার, ২ স্পিনার ফর্মূলায় একাদশ সাজিয়ে এই পাঁচ বোলারের সবাইকে ৪ ওভার করে বোলিং করিয়েছেন অধিনায়ক লিটন দাস। দুই অকেশনাল অফ স্পিনার সাইফ হাসান-শামীম পাটোয়ারীকে দিয়ে একটি ওভারও করার প্রয়োজন অনুভব করেননি তিনি।
তাসকিন ২টি উইকেট পেলেও ওভারপ্রতি ৯ রান খরচ করেছেন। তানজিম হাসান সাকিব ছিলেন অমিতব্যয়ী (৪-০-৪৭-০)। লেগ স্পিনার রিশাদ খরচ করেছেন ওভারপ্রতি ১০ রান (৪-০-৪০-১)। তবে মিতব্যয়ী বোলিং করেছেন বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম (৪-০-১৫-০)। সবচেয়ে বেশি ১৪টি ডট দিয়েছেন তিনি। মোস্তাফিজও করেছেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং (৪-০-২৪-০)। তার প্রথম দুটি স্পেল (১-০-৪-০ ও ১-০-৩-০) ছিল অসাধারণ।
১৬৬'র টার্গেটটা কঠিন করে দিয়েছে বাংলাদেশ টপ এবং মিডল অর্ডাররা ব্যাটিং পাওয়ার প্লে'র প্রথম ৬ ওভারে। স্কোরশিটে ৪২ উঠতে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচে আর ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। স্কোরশিটের চেহারা যখন ৭৭/৬, তখন তো আগাম আত্মসমর্পন করারই কথা বাংলাদেশের।
প্রথম ৬ উইকেটের প্রতিটিতেই অভিযুক্ত হবেন ব্যাটাররা। বাঁ হাতি স্পিনার আকিল হুসেইনকে ইনিংসের প্রথম ওভারে চার-ছক্কা মেরে নিজেকে বাহাদুরই মনে করেছেন তানজিদ হাসান তামিম। ইনিংসের দ্বিতীয় এবং সিলসের ২য় বলটি ছিল শর্ট পিচ, ওই ডেলিভারি দেখে পুল শটে প্রলুব্ধ হয়ে দিয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম মিড অনে ক্যাচ (৫ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ১৫)।
আকিল হাসানের দ্বিতীয় ওভারে ব্যাকফুটে ক্রস খেলতে যেয়ে অধিনায়ক লিটন রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে (৮ বলে ৫) দলের বিপদ ডেকে এনেছেন। আকিল হুসেইনের পরের ওভারে সাইফ হাসান দিয়েছেন শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ (৭ বলে ৮)। অভিজ্ঞ পেসার হোল্ডারের প্রথম ওভারের তৃতীয় ডেলিভারিটি ছিল ব্যাক অব লেন্থ। ওই ডেলিভারিতে ক্রস ব্যাটে পুল করতে যেয়ে শামীম করেছেন ভুল। দিয়েছেন শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ (৪ বলে ১)। স্পিনার খেরি পেরির আর্ম বলে সোহান কাট করতে যেয়ে হয়েছেন বোল্ড (১০ বলে ৫)।
দায়িত্ব নিয়ে খেলার চেষ্টা ক্ষান্ত দিয়েছেন হৃদয় ২৮-এ এসে। সিলসের শ্লোয়ার ডেলিভারিটি ছিল ডাউন দ্য লেগ। ওই বলকে পুল করতে যেয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েছেন হৃদয় (২৫ বলে ২৮)।
স্কোরকার্ডের চেহারা যখন ৭৭/৬, তিন অঙ্কের নাগাল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রবল, তখন স্বীকৃত ব্যাটারদের লজ্জা দিয়েছেন দুই টেল এন্ডার তানজিম হাসান সাকিব-নাসুম আহমেদ। ৭ম উইকেট জুটিতে ২৩ বলে ৪০ রান যোগ করেছেন তারা। হোল্ডারের বাউন্সারে ছক্কা মারতে যেয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে থেমেছেন তানজিম হাসান সাকিব (২৭ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৩৩)। ফিরে যাওয়ার আগে উইন্ডিজ পেসার শেফার্ডকে পর পর ৩ বলে মেরেছেন ১ ছক্কা, ২ চার! খেরি পেরিকে চার-ছক্কায় গ্যালারি মাতানো নাসুম পেসার সিলসকে ছক্কা মারতে যেয়ে দুর্ভাগ্যক্রমে আউট হয়েছেন। লং অনের ফিল্ডার রোভমন পাওয়েল রানিং ক্যাচ নিতে যেয়ে ভারসাম্য হারানোর শংকায় কাছে থাকা ফিল্ডার হোল্ডারের হাতে বলটি ছুঁড়ে দিয়ে নাসুমকে ফিরিয়েছেন (১৩ বলে ৩ চার, ১ ছক্বায় ২০)। টেল এন্ডার লড়াই থেমেছে তাসকিনের ভুলে। শেফার্ডকে ব্যাকফুটে শাফল করে ছক্কা মারতে চেয়েছেন, পেরেছেনও। বল আছড়ে পড়েছে গ্যালারিতে। তবে তার আগে তাসকিনের (৮ বলে ১ ছক্কায় ১০) পা স্ট্যাম্পে লেগে ফেলে দিয়েছে বেলস। অদ্ভুতুড়ে হিট উইকেটও এদিন রাতে দেখেছেন চট্টগ্রামের দর্শকরা। এমন এক ম্যাচে আলোক স্বল্পতায় খেলা কিছুক্ষণ স্থগিত থেকেছে, এই দায়টা অবশ্য ক্রিকেট দল কিংবা বিসিবি নয়, দায়টা বিদ্যুত বিভাগের।
২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১২ পিএম

চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যে পাঁচ ওভারের মধ্যে ড্রেসিং রুমে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটার। দায়িত্ব নিতে হতো মিডল-অর্ডার ব্যাটারদের। কিন্তু শুরুতেই বাজে শটে বোল্ড হয়ে গেলেন শামীম হোসেন। যা একদমই পছন্দ হয়নি লিটন কুমার দাসের। ম্যাচ শেষে তাই হতাশা প্রকাশ করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
চট্টগ্রামে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। অথচ ১৬৬ রানের লক্ষ্য খুব একটা বড় ছিল না উইকেটের আচরণ বিবেচনায়। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের রভম্যান পাওয়েলও ইনিংস বিরতিতে বলেছিলেন, ৫-১০ রান কম করেছেন তারা।
কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সেটিও ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। পাঁচ ওভারের মধ্যে আউট হয়ে যান তানজিদ হাসান তামিম, লিটন ও সাইফ হাসান। পরে পাঁচ নম্বরে ক্রিজে যান শামীম। তিনিও এক ওভারের বেশি টিকতে পারেননি।
জেসন হোল্ডারের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারি অনেকটা জোর করেই পুল করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ৪ বলে ১ রান করা ব্যাটার। তার বিদায়ে পাওয়ার প্লের ভেতরে ৪ উইকেট হারিয়ে মহা বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আর জিততে পারেনি তারা।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে শুরুর ওই বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে শামীমের ব্যাটিং নিয়ে আলাদা করে বলেন লিটন।
“ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লের ভেতরে অনেক বেশি উইকেট হারিয়ে ফেলেছি। শামীমের ব্যাটিংয়ে আমি খুবই হতাশ হয়েছি, সে যেভাবে ব্যাটিং করেছে। তাকে আরও চিন্তা করতে হবে। প্রতিবার উইকেটে গিয়েই আপনি শুধু উপভোগ করতে পারবেন না। কখনও কখনও দায়িত্ব নিতে হবে। তার এটা করতে হবে।”
ক্যারিয়ারের প্রথম ৪ বছরে তেমন একটা সুযোগ পাননি শামীম। তবে চলতি বছর তার ওপর আস্থা রেখে বেশিরভাগ ম্যাচেই সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ২৩ ম্যাচের ২০ ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে ১১টিতেই দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে আউট হয়েছেন শামীম।
সব মিলিয়ে ২০ ইনিংসে মাত্র ১৬.২৫ গড়ে তার সংগ্রহ ২৬০ রান। ব্যাটিং অর্ডারে ৬-৭ নম্বরে তার কাছ থেকে মূলত চাওয়া থাকে কিছু কার্যকর ক্যামিও ইনিংসের। এই বছর সেটি তেমনভাবে করতে পারছেন না শামীম। স্ট্রাইক রেট ১২২.০৬, যা তার ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেটের চেয়ে কম।

নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দেড়শ রানের মধ্যে আটকে রাখার সম্ভাবনা জাগাল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ ওভারে সব হিসেব ওলটপালট করে দিলেন রভম্যান পাওয়েল। ৩ ছক্কায় নিলেন ২২ রান। সেখানেই হেরে গেছে বাংলাদেশ, বললেন লিটন কুমার দাস।
চট্টগ্রামে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা ছিল বেশ মন্থর। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তারা করে ৩৫ রান। দশ ওভার শেষে স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৭০ রান। সেখান থেকে বাকি ১০ ওভারে ৯৬ রান করে তারা।
এর বেশিরভাগ আসে শেষের কয়েক ওভারে। বিশেষ করে শেষ ৩ ওভারে শাই হোপ ও পাওয়েলের ঝড়ে শেষ ৩ ওভারে ৫১ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুজনের ঝড়ের ঝাপটা সবচেয়ে বেশি লাগে তানজিম হাসান সাকিবের গায়ে।
১৬তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে শর্ট থার্ড ম্যানে পাওয়েলের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন সাকিব। পরে পাওয়েলের কাছেই শেষ ওভারে টানা ৩টি ছক্কা হজম করেন পেস বোলিং এই অলরাউন্ডার। ১৯ ওভারে ১৪৩ থেকে ১৬৫ রানে শেষ হয় সফরকারীদের ইনিংস।
পরে রান তাড়ায় ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে ১৬ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে সাকিবের করা ওই ২০তম ওভারের কথা আলাদা করে বলেন লিটন।
“তারা প্রথম ১০ ওভারে ভালো ব্যাটিং করেছে। উইকেট কিছুটা মন্থর ছিল। আমরা যদি শুরুতে উইকেট নিতে পারতাম, তারা চাপে পড়ে যেত। তবু ১৯তম ওভার পর্যন্ত আমরা ম্যাচে ছিলাম। তবে এটি ক্রিকেটেরই অংশ। কেউ একজন হয়তো শেষ ওভারে বেশ কিছু ছক্কা মেরে দেবে।”
“ক্রিকেটে এমন হয়। বিষয়টা হলো, স্লগ ওভারে যে-ই বোলিং করুক, আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। পরের ম্যাচে এটিই আমাদের মূল কাজ হবে।”
একই মাঠে বুধবার সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে নামার আগে ফিল্ডিংয়ে আরও ভালো করার তাগিদও দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
“শেষ ওভারটা ছাড়া আমরা খুব ভালো বোলিং করেছি। আমাদের কিছু ক্যাচও নিতে হতো। তারা অনেক ভালো ফিল্ডিং করেছে। বেশ কিছু দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছে।”

ওয়ানডে সিরিজ জয়ের উচ্ছ্বাস নিয়ে চট্টগ্রামে পা রাখেন সাইফ হাসানরা। তবে ফরম্যাট, উইকেট ও ভেন্যু পরিবর্তনে সঙ্গে ফলও উল্টে যায়। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৬ রানে জিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লা. লে. মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করা ক্যারিবিয়ানদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৬৫ রান। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারের দুই বল আগে ১৬ রান দূরে থেকে থামে বাংলাদেশের যাত্রা। এদিন বাংলাদেশের সাত জন ব্যাটার ক্যাচ আউটের শিকার হয়েছেন।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে তেমন সুবিধা করতে পারেননি আলিক আথানেজ ও ব্র্যান্ডন কিং। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারালেও ৩৫ রানের বেশি করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যে চতুর্থ ওভারেই ১৭ রান দেন তাসকিন আহমেদ।
পরে রিশাদ হোসেন ও তানজিম হাসান সাকিবের বলে ছক্কা মেরে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন দুই ওপেনার। তবে সফল হননি। রিশাদের বলে রিভার্স স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ২৭ বলে ৩৪ রান করা আথানেজ।
তিন নম্বরে নেমে শুরু থেকেই চমৎকার ব্যাটিং করেন শাই হোপ। তবে অন্যপ্রান্ত থেকে সমর্থন পাননি। ১৩তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে পরপর দুই বলে কিং ও শেরফান রাদারফোর্ডকে আউট করেন তাসকিন। ৩৩ রান করতে ৩৬ বল খেলেন কিং।
এরপর দলকে একাই টানেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। চতুর্থ উইকেটে তার সঙ্গে জুটি বাধেন এই ফরম্যাটে শততম ম্যাচ খেলতে নামা রভম্যান পাওয়েল। কিন্তু দ্রুত রান করতে পারেননি। এক পর্যায়ে ১৮ বলে মাত্র ৯ রানে খেলছিলেন তিনি।
১৬তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে থার্ডম্যানে পাওয়েলের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন তানজিম হাসান সাকিব। শেষ দিকে সেটিরই মাশুল দিতে হয় বাংলাদেশের। ১৯তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে ছক্কা মারেন পাওয়েল।
শেষ ওভারে সাকিবের বলেই টানা ৩টি ছক্কা মেরে দলকে ১৬০ রান পার করান অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। মুখোমুখি শেষ ১০ বলে তিনি করেন ৩৫ রান।
৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তাসকিন। এর মধ্যে ২ ওভারেই তিনি দেন ৩২ রান। কোনো উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান খরচ করেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম।
ক্যারিবিয়ানদের ১৬৫ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ঝড়ের আভাস দেন তানজিদ হাসান। তার সে ঝড় থামে অল্পতেই। দ্বিতীয় ওভারে জেডন সিলসের বল স্বজোরে আঘাত করেন তানজিদ। মিড অনে পেছন দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন রোমারিও শেফার্ড। ৫ বলে ১৫ রানে ফেরেন তামিম।
ওয়ান ডাউনে নামা লিটন এলেন আর গেলেন। ইনজুরি থেকে ফিরে সেভাবে রাঙাতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। আকিল হোসেনের বলে তাঁকেই ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। পঞ্চম ওভারে দলকে আরও বিপদে ফেলেন সাইফ। আস্থার প্রতিদান দেওয়া সাইফও ছিলেন নির্বিষ।
আকিল হোসেন ফুল লেংথের বলটাকে সরে সুইপ করেছিলেন সাইফ। কিন্তু টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেছেন। শর্ট ফাইন লেগে দাঁড়ানো শেফার্ড বল মুঠোবন্দী করার জন্য যেন ওত পেতে ছিলেন। তানজিদ হাসান, লিটন দাসের পর সাইফ হাসান—দলীয় ৩৮ রানে ব্যাটিং অর্ডারের শীর্ষ ৩ ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ।
পাওয়ার প্লেতে আরও একটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শামীম হোসেন ক্রিজে নামার পর একে একে তিনটি বল মোকাবিলা করেন। বিপত্তি ঘটে চতুর্থ বলে। জেসন হোল্ডারের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মাত্র এক রান করেন। দলের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেন নুরুল হাসান সোহান। খ্যারি পিয়েরের বলে কাট করতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে আনেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। ১০ বলে তিনি করেন মাত্র ৫ রান।
নুরুল ফেরার পর তানজিদ হাসান দায়িত্ব বুঝে নেন। জাতীয় দলের পেসার চেষ্টা চালিয়ে যান উইকেটে থিতু হতে। ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে একটু স্বস্তি দেন তিনি। তাওহীদ হৃদয়ের সঙ্গে ২০ রান এবং নাসুম আহমেদের সঙ্গে ৪০ রানের জুটি গড়েন। দলীয় ১১৭ রানে তার ফেরাতে দলের সপ্তম উইকেটের পতন ঘটে। মূলত ওখানেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের স্বপ্ন। শেষ দিকে নাসুম একটু চেষ্টা করেছেন। তাতে কেবল নিজের নামের পাশে ২০ রান যোগ হয়েছে। আদতে দলের জয়ে কোনোরকম সম্ভবনা তৈরি হয়নি শেষ পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থামে ১৪৯ রানে।
সিলস-হোল্ডার সর্বোচ্চ তিনটি করে উইকেট তোলেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট ছিল আকিল হোসেনের। তিনি দুটি উইকেট তোলেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৫/৩ (আথানেজ ৩৪, কিং ৩৩, হোপ ৪৬, রাদারফোর্ড ০, পাওয়েল ৪৪; নাসুম ৪-০-১৫-০, তাসকিন ৪-০-৩৬-২, সাকিব ৪-০-৪৭-০, মোস্তাফিজ ৪-০-২৪-০, রিশাদ ৪-০-৪০-১)
বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ১৪৯ (সাইফ ৮, তামিম ১৫, লিটন ৫, হৃদয় ২৮, শামীম ১, সোহান ৫, সাকিব ৩৩, নাসুম ২০, রিশাদ ৬, তাসকিন ১০, মোস্তাফিজ ১১*; আকিল ৪-০-২২-২, সিলস ৪-০-৩২-৩, পিয়েরে ৪-০-৩৩-১, হোল্ডার ৪-০-৩১-৩, শেফার্ড ৩.৪-০-২৯-১)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬ রানে জয়ী
২৭ অক্টোবর ২০২৫, ৭:৪৯ পিএম

শুরুতে একদমই ব্যাটে-বলে করতে পারছিলেন না রভম্যান পাওয়েল। এর মাঝেই সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিলেন তানজিম হাসান সাকিব। পরে সেটিরই মাশুল দিল বাংলাদেশ। শাই হোপের সঙ্গে পাওয়েলের ঝড়ে লড়াইয়ের পুঁজি পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লা. লে. মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট ক্যারিবিয়ানদের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১৬৫ রান। অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৪৬ বলে ৮৩ রান যোগ করেছেন হোপ ও পাওয়েল।
ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে এর আগে কখনও এত বেশি রান তাড়া করে জেতেনি বাংলাদেশ। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে উইন্ডিজের করা ১৬৪ রান টপকে সহজেই জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার সেটি ছাড়িয়ে যেতে হবে তাদের।
শততম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নেমে ১ চারের সঙ্গে ৪ ছক্কায় ২৮ বলে ৪৪ রান করেন পাওয়েল। অধিনায়ক হোপের ব্যাট থেকে আসে ১ চার ও ৪ ছক্কায় ২৮ বলে ৪৬ রান।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে তেমন সুবিধা করতে পারেননি আলিক আথানেজ ও ব্র্যান্ডন কিং। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারালেও ৩৫ রানের বেশি করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যে চতুর্থ ওভারেই ১৭ রান দেন তাসকিন আহমেদ।
পরে রিশাদ হোসেন ও তানজিম হাসান সাকিবের বলে ছক্কা মেরে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন দুই ওপেনার। তবে সফল হননি। রিশাদের বলে রিভার্স স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ২৭ বলে ৩৪ রান করা আথানেজ।
তিন নম্বরে নেমে শুরু থেকেই চমৎকার ব্যাটিং করেন শাই হোপ। তবে অন্যপ্রান্ত থেকে সমর্থন পাননি। ১৩তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে পরপর দুই বলে কিং ও শেরফান রাদারফোর্ডকে আউট করেন তাসকিন। ৩৩ রান করতে ৩৬ বল খেলেন কিং।
এরপর দলকে বলা যায় একাই টানেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। চতুর্থ উইকেটে তার সঙ্গে জুটি বাধেন এই ফরম্যাটে শততম ম্যাচ খেলতে নামা রভম্যান পাওয়েল। কিন্তু দ্রুত রান করতে পারেননি। এক পর্যায়ে ১৮ বলে মাত্র ৯ রানে খেলছিলেন তিনি।
১৬তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে থার্ডম্যানে পাওয়েলের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন তানজিম হাসান সাকিব। শেষ দিকে সেটিরই মাশুল দিতে হয় বাংলাদেশের। ১৯তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে ছক্কা মারেন পাওয়েল।
শেষ ওভারে সাকিবের বলেই টানা ৩টি ছক্কা মেরে দলকে ১৬০ রান পার করান অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। মুখোমুখি শেষ ১০ বলে তিনি করেন ৩৫ রান।
৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তাসকিন। এর মধ্যে ২ ওভারেই তিনি দেন ৩২ রান। কোনো উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান খরচ করেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৫/৩ (আথানেজ ৩৪, কিং ৩৩, হোপ ৪৬*, রাদারফোর্ড ০, পাওয়েল ৪৪*; নাসুম ৪-০-১৫-০, তাসকিন ৪-০-৩৬-২, সাকিব ৪-০-৪৭-০, মোস্তাফিজ ৪-০-২৪-০, রিশাদ ৪-০-৪০-১)