৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১:২৫ পিএম
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসেবে অনেকেরই রয়েছে বিশেষ পরিচিতি। তবে স্রেফ টি-টোয়েন্টি ধারাভাষ্যকার হিসেবে যদি একজনের নাম বলতে বলা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা হবে ড্যানি মরিসন। নিউজিল্যান্ডের সাবেক এই ক্রিকেটার খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় যা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, খেলা ছাড়ার পর মাইক হাতে তার চেয়ে কয়েক গুন বেশি জনপ্রিয় হয়ে গেছেন বিশ্বজুড়ে। মজার ছলে কথা বলা, অদ্ভুত বাচনভঙ্গি আর হাস্যকর সব অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ধারাভাষ্যকে তিনি দেন ভিন্ন মাত্রা। চলতি বিপিএলেও ধারাভাষ্য দিচ্ছেন মরিসন।
টি-স্পোর্টসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার মরিসন কথা বলেছেন ধারাভাষ্য, এই পেশায় ভালো করার উপায়, বিপিএল, সাকিব আল হাসান সহ নানা বিষয়ে।
পাঠকদের জন্য মরিসনের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল :
প্রশ্ন : প্রথমেই ধন্যবাদ আরও একবার বাংলাদেশে আসার জন্য। নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন মানুষ এখানে আপনাকে কতোটা আন্তরিকভাবে ভালোবাসে?
মরিসন : তা আর বলতে! ওদের ভালোবাসা আর সেলফির সিরিয়াল দেখে আমার তো মনে হয় এবারের বিপিএলের সবচেয়ে বড় তারকা বুঝি আমিই (হাসি)। সত্যি বলতে, আমি কৃতজ্ঞ সবার প্রতি। আগেও লোকেদের ভালোবাসা পেয়েছি বাংলাদেশে, তবে এবার কিছুটা আবেগী হয়ে যাচ্ছি। ধন্যবাদ বাংলাদেশ।
প্রশ্ন : আবেগের কথা বললেন। মাইক হাতে আপনি পুরোটা সময় ধরেই যেভাবে হাসি-ঠাট্টা করে যান, মজার মজার সব কথা বলেন… পেশাদার জায়গা থেকেও যদি বলি, বছরের পর বছর প্রতিদিন এই একটা কঠিন কাজ করে যাওয়া নিশ্চয় চ্যালেঞ্জিং লাগে? কারণ, লোক হাসানো দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন কাজের একটি বলেই মনে করা হয়।
মরিসন : নো মাই ফ্রেন্ড। দেখুন, আপনি যখন নিজের কাজটাকে ভালোবাসবেন, তখন সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই হয়ে যাবে। বাড়তি কিছু আর চেষ্টা করা লাগে না তখন। তবে এটাও ঠিক, আমাকে দেখলেই সবাই ধরেই নেয়, এই লোকটা এখন আমাদের হাসাবে। এই প্রত্যাশার চাপটা মাঝে মধ্যেই টের পাই।
প্রশ্ন : আপনার ইউনিক একটা ডায়লগ ডেলিভারি স্টাইল তো আছেই, সাথে এইযে একটু ভ্রু কুচকে, অঙ্গভঙ্গি দিয়ে দর্শকদের বাড়তি বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করেন, এক্ষেত্রে কি কিংবদন্তি চার্লি চ্যাপলিনের সাথে নিজের কোনো মিল পান?
মরিসন : ইউ মিন চার্লি মরিসন? (হাসি)। আমি আসলে ওভাবে দেখিনি কখনও বিষয়টা। গ্রেট চার্লি চ্যাপলিনের কথা বললেন। তার কাজের সাথে আসলে তুলনা চলে না কারোরই। ডায়লগ ছাড়া স্রেফ অঙ্গভঙ্গি দিয়েই তো তাকে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হত। সেদিক থেকে আমার কাজ তো অনেক সহজ। যখন ইচ্ছা, কথা তো বলতে পারি। এই যেমন এখন আপনার সাথে কথা বলছি কোনো অঙ্গভঙ্গি ছাড়াই।
প্রশ্ন : একজন ধারাভাষ্যকারের জন্য মৌখিক অঙ্গভঙ্গি জানাটা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?
মরিসন : এটা আসলে নির্ভর করে একেকজনের ব্যক্তিত্বের ওপর। এটা যে থাকতেই হবে, তা নয়। কিংবদন্তি রিচি বেনোর কথাই যদি বলেন, আমরা তো রেডিওতে তার ওই ধারাভাষ্যই মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতাম। আমি এই পেশায় যখন আসি, তখন ভেবেছিলাম অন্যদের চেয়ে ভিন্ন কিছু না করতে পারলে হয়ত বেশিদিন টিকতে পারব না।
প্রশ্ন : এটা নিছকই আপনার বিনয়…
মরিসন : নো মাই ফ্রেন্ড। দেখুন, আমি পুরো ব্যাপারটাকে আপনাদের সামনে প্যাকেজ হিসেবে তুলে ধরি বলেই হয়ত আপনারা আমাকে পছন্দ করেন। আপনি আমাকে যদি মাইকেল হোল্ডিংয়ের মত ক্রিকেট নিয়ে বিশ্লেষণ করতে দশ মিনিট দাঁড় করিয়ে দেন, লোকেরা তাহলে টিভি বন্ধ করে দেবে। আমাকে এখনও প্রতিদিন পড়ালেখা করতে হয় এই কাজে সেরাটা দেওয়ার জন্য। সব নোট করে রেখেও প্রায়ই তালগোল পাকিয়ে ফেলি। তখনই আপনাদের বোকা বানাতে মুখের একটা অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে বসি।
প্রশ্ন : ধারাভাষ্যকারদের জন্য ইম্প্রোভাইজেশনের গুরুত্ব কতটুকু তাহলে?
মরিসন : অনেক। আপনি সব প্রস্তুতি নিয়েও সব পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন না। একটা খেলায় চার হবে, ছয় হবে, আউট হবে - এসব তো আমরা জানিই৷ তবে ক্রিকেট খেলায় প্রতিটি বলই একটা নতুন ইভেন্ট, আর তাই আপনাকে মানসিকভাবে নিজেকে সবসময় প্রস্তুত রাখতেই হবে একটা চটকদার শব্দ বা পাঞ্চ লাইন বলে পরিস্থিতিটা তুলে ধরার জন্য। আপনাকে দর্শকদের এই ধারণা দিতে হবে যে আপনি এই ইভেন্টের জন্য শতভাগ প্রস্তুত ছিলেন। কারণ, মাঠে কী হচ্ছে সেটা তারা খালি চোখেই দেখছেন। আপনার কাজ সেখানে বাড়তি কিছু যোগ করে ইভেন্টটিকে আকর্ষণীয় করে তোলা।
প্রশ্ন : হার্ষা ভোগলে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, একজন ধারাভাষ্যকারের জন্য ভুল স্বীকার করে নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি এতে একমত হবেন?
মরিসন : অবশ্যই। দেখুন, এআইও কিন্তু হরদম ভুল করছে আজকল। সেখানে একটা মানুষ তো ভুল করবেই। আপনি ধারাভাষ্য দিচ্ছেন বলেই তো আপনি সবজান্তা হয়ে গেছেন বা আপনাকে সবজান্তা হতে হবে, ব্যাপারটা এমন নয়। খেলোয়াড়ের নাম ভুল হবে, শটের নাম ভুল বলবেন - এসব তো হবেই। আপনি ভুল করলে লোকেরা কিন্তু তা নিয়ে হাসাহাসি করবে না, যদি আপনি সেটা শুধরে নেন। ভুল করেও সেটাকে ঠিক প্রমাণের চেষ্টা করলে সেটা হাস্যরসের জন্ম তো দেবেই।
প্রশ্ন : হার্ষা ভোগলের কথা আসায় প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক মনে হল। সাবেক খেলোয়াড় না হলে ধারাভাষ্যকার হওয়া যাবে না, বা তিনি ভালো করতে পারবেন না, বর্তমানে এমন চর্চা দেখা যাচ্ছে বেশ। অথচ হার্ষা ভোগলেই কিন্তু প্রমাণ, খেলাটির প্রতি নিখাদ ভালোবাসা থাকলে এই পেশায় চূড়ান্ত সফল হওয়া সম্ভব। আপনার কী মনে হয়?
মরিসন : আপনি তো উত্তরটা দিয়েই দিলেন। খেলাটির প্রতি ভালোবাসা, হ্যাঁ, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যদি ক্রিকেট খেলাটা বোঝেন, বিশ্লেষণ করতে জানেন আর নিজের মত করে সেটা উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে আপনি পেশাদার ক্রিকেটার না হয়েও এই পেশায় স্বাগতম।
প্রশ্ন : আপনার সমসাময়িক অনেকেই তিন ফরম্যাটে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। কিন্তু আপনি বলা যায় একরকম টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট হয়ে গেছেন। অনেকেই মজার ছলে বলেন, এই ফরম্যাটটির আবিষ্কার হয়েছে আপনি ধারাভাষ্য দেবেন বলেই। টেস্ট ক্রিকেটকে মিস করেন?
মরিসন : দেখুন, জীবনের একটা পর্যায়ে এসে আপনাকে কিছু জিনিস বেছে নিতেই হবে। আপনি চাইলেও সব জায়গায় নিজের সেরাটা দিতে পারবেন না। সীমাবদ্ধতার ব্যাপার আছে। তাছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে কিন্তু আমার ধারাভাষ্য আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। কুড়ি ওভারের ক্রিকেট আর পাঁচ দিন ধরে চলা একটা ম্যাচের যে বিস্তর ব্যবধান, সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। নিজের সীমাবদ্ধতা বোঝাটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। একবার ভাবুন, প্যাট কামিন্স সারাদিন বল করে পাঁচ উইকেট নিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে যাচ্ছে, তার আগে তাকে দাঁড় করিয়ে আমি মজার মজার প্রশ্ন করা শুরু করলাম। খেলোয়াড় বা দর্শক, কারো কাছেই এটা ভালো লাগবে না।
প্রশ্ন : বিপিএলে ফেরা যাক। আগেও এসেছেন এই টুর্নামেন্টে। সব মিলিয়ে কেমন লাগে বিপিএল?
মরিসন : আমার কাছে তো দুর্দান্ত লাগে। এজন্যই তো অন্যদের ডাক উপেক্ষা করে চলে এলাম বাংলাদেশে। এটা অন্যদের আবার বলবেন না (হাসি)। বাংলাদেশের যে ভেন্যুতেই যাবেন, দর্শকদের যে উদ্দীপনা দেখবেন আপনি, এটা অবিশ্বাস্য। এই দেশের মানুষ ক্রিকেটকে ভীষণ ভালোবাসে। আর তাই এখানে কাজ করার সুযোগ পেলেই সেটা লুফে নিতে চাই। এখানকার লোকেদের সরল ভালোবাসা আমাকে ভীষণচ ছুঁয়ে যায়।
প্রশ্ন : আপনার জন্মদিন উদযাপন দেখে সেটা কিছুটা আন্দাজ করা যায়। এই বিপিএলে কোনো খেলোয়াড়ের জন্মদিন নিয়েও এত মাতামাতি দেখা যায়নি।
মরিসন : যেমনটা আগেই বললাম, নিজেকে এই বিপিএলের সবচেয়ে বড় তারকা মনে হচ্ছে (হাসি)। হ্যাঁ, যেটা বললেন, এত মানুষ আমার জন্মদিন মনে রাখবে, স্টেডিয়ামে কেকও কাটবে… ভাবা যায় না আসলে। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ বিসিবির প্রতিও, তারা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে আবার বিপিএলে আসার জন্য।
প্রশ্ন : বিসিবির প্রতি আপনি কৃতজ্ঞতা জানালেন, তবে তাদেরও কী আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত? কারণ, প্রায় একই সময়ে চারটা টি-টোয়েন্টি লিগের মধ্যেও আপনি বিপিএলকে বেছে নিয়েছেন?
মরিসন : আপনি চাইলে ওভাবে দেখতে পারেন। তবে আমার কাছে পেশাদারিত্ব সবার আগে। লিগ চারটা হোক বা দশটা, সবার আগে যারা আমার সাথে যোগাযোগ করবে, তাদের সেই সম্মানটা তো আমাকে দিতেই হবে, তাই না? বিসিবির সাথে আমার সবার আগে কথা হয়েছে, তাই আমি তাদেরই প্রাধান্য দিয়েছি।
প্রশ্ন : তাহলে আপনাকে আরও প্রশ্নটা করাই যায় এই সূত্র ধরেই। বর্তমানে হরমেশাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের দেখা যাচ্ছে ছোট ছোট চুক্তি করে একেক দিন একেক লিগে খেলতে। এই বিপিএলেই যদি বলি, আন্দ্রে রাসেল, টিম ডেভিড, জেসন হোল্ডাররা বিপিএল খেলতে এলেন আগেরদিন রাতে আইএলটি২০ খেলে। আবার এই বিপিএলেই কয়েকজন খেলোয়াড়কে দেখা গেল এই লিগে আগে চুক্তিবদ্ধ হয়েও পরে তা বাতিল করে অন্য লিগে খেলতে। খেলোয়াড়দের মাঝে পেশাদারিত্ব কী দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে মনে হয়?
মরিসন : ভালো প্রশ্ন। আমি শুধু নিজের জায়গা থেকেই উত্তরটা দিতে পারি। আর সেটা হল, না আপনি দুটোর কোনোটাই করতে পারেন না। নিজে খেলোয়াড় ছিলাম বলে জানি, হোক সেটা টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডে, এরপর রিকভারি টাইম আপনার লাগবেই। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, ঘুম এসবের দরকার তো আছেই। আপনি যদি সেটা না করে নিজেকে রোবট ভাবেন আর আগেরদিন রাতে খেলে, বিমান ধরে সকালে আরেক দেশে নেমে জার্সি গায়ে চাপিয়ে নেমে পডেন, সেরাটা কীভাবে দেবেন? ক্লান্তি তো ভর করবেই আপনার ওপর। তাছাড়া দলের অন্যদের সাথে তো মিশতেও পারলেন না ওভাবে। আর চুক্তি বাতিলের ব্যাপারটা একটা দলের জন্য খুব শকিং। আপনি একটা খেলোয়াড়কে নিলেন, তাকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজালেন, মাঠে নামার আগে তাকে পেলেন না, এটা হতাশাজনক। তবে যুগ বদলে গেছে, এখন হয়ত এটাই পেশাদারিত্ব।
প্রশ্ন : এই যুগে এসে পেশাদার ক্রিকেটারদের জন্য পেশাদারিত্ব বজায় রাখাটাই কী সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ?
মরিসন : অবশ্যই। একটা সময় ছিল স্রেফ ঘরোয়া, টেস্ট আর ওয়ানডে ক্রিকেটই৷ আর এখন সারা বছরই খেলোয়াড়দের ব্যস্ত থাকতে হয় আন্তর্জাতিক বা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট নিয়ে। ফিটনেস বজায় রেখে দিনের পর দিন কাজটা চালিয়ে যাওয়া নিশ্চয় সহজ হওয়ার নয়। হয়ত এই কারণেই এখন ফ্রিল্যান্স ক্রিকেটারদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের এটার সাথে মানিয়ে নেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।
প্রশ্ন : এই মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু কিছু অনিশ্চয়তাও তৈরি হচ্ছে। আগে বোর্ডের চুক্তিতে থাকলেই মিলত অর্থ। এখন সেটার বাইরে থাকলে, চোট পেলে সেটাও সারাতে হয় নিজের অর্থেই। আবার এই বিপিএলে আমরা দেখলাম, খেলোয়াড়দের পেমেন্ট নিয়ে নানা বিতর্ক। রীতিমত ম্যাচ বয়কট করতে হয়েছে প্রাপ্য পারিশ্রমিক বুঝে পেতে। খেলোয়াড় বা একটা লিগের জন্য এগুলো নিশ্চয় ভালো ব্র্যান্ডিং নয়?
মরিসন : অবশ্যই না। আপনি প্রথমে যেটা বললেন, সেটা একজন খেলোয়াড় জেনেই কিন্তু কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে রাখে নিজেকে। তবে বিপিএলে আমি যতটুক শুনেছি, তাতে মনে হয়েছে খেলোয়াড়দের পেমেন্ট নিয়ে যা যা হয়েছে, সেটা বিপিএলের জন্য ভালো বিজ্ঞাপন নয়। এমনিতেই এখন অনেক প্রতিযোগিতা লিগগুলোর মধ্যে, এভাবে চললে ভবিষ্যতে বড় তারকারা বিপিএলের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। প্রশ্ন : একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় সাকিব আল হাসানের রাজনীতিতে নাম লেখানো বা এর রেশ ধরে তার বাংলাদেশের হয়ে খেলা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেটা কীভাবে দেখছেন?
মরিসন : কঠিন প্রশ্ন। সাকিব কেন রাজনীতিতে আসল বা বাংলাদেশে এরপর কী কী হয়েছে, আমি এসবের খুব বেশি জানি না। তবে আমি মনে করি, পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে রাজনীতি করাটা যদি তার খেলায় প্রভাব না ফেলে, তাহলে হয়ত সেটা খুব বড় সমস্যা হওয়ার কথা না। আবারও বলছি, আমি জানি না ঠিক কেন সাকিব বাংলাদেশে তার শেষ ম্যাচটা খেলতে পারল না। তবে বিপিএলে তাকে আমি মিস করেছি। আমি নিশ্চিত সমর্থকরাও তাকে মিস করেছে ভীষণ।
প্রশ্ন : এই বিপিএলে বাংলাদেশের কার খেলা মনে ধরেছে আপনার?
মরিসন : নাঈম শেখ। এবার দেখে মনে হচ্ছে ব্যাটিংয়ে সে অনেক উন্নতি করেছে। বড় বড় ছক্কা মারতে পারে এখন। বোলারদের মধ্যে তাসকিনের কথাই বলব। ওর দল প্লে-অফে খেললে হয়ত (এক আসরে) ৩০ উইকেট নিয়ে ফেলত। তবে আমি তার এই পারফরম্যান্সে অবাক না। সে যথেষ্ট অভিজ্ঞ। ১০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা একজন বোলারকে আপনি আক্রমণের নেতা হিসেবেই দেখতে চাইবেন।
প্রশ্ন : আরেক অভিজ্ঞ পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে কেমন দেখলেন?
মরিসন : শেষ ম্যাচেও তো দারুণ বোলিং করল ফিজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে যদি বলেন, আমি তার কাছ থেকে তাসকিনের মতোই বিশেষ কিছু আশা করেছিলাম। সামনেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, বাংলাদেশের ভালো করতে হলে ফিজকে জ্বলে উঠতেই হবে।
প্রশ্ন : শেষ প্রশ্নটা এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়েই। কোন দলকে ফেভারিট মনে হচ্ছে আর বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন দেখেন?
মরিসন : কাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকেই রাখতাম ফেভারিট হিসেবে। তবে এখন আমি ভারতের সাথে সেখানে পাকিস্তান, ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রাখব। বাংলাদেশ চমকে দিতে পারে, তবে সেজন্য ফিজ, মুশি, রিয়াদের মত অভিজ্ঞদের সেরা ফর্মে থাকতেই হবে।
৫ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৯ পিএম
৫ জুলাই ২০২৫, ৬:৫১ পিএম
প্রথম ম্যাচে প্রায় একই স্কোর নিয়ে বিশাল জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহীদ হৃদয়ের সাথে তানজিম হাসান সাকিবের ক্যামিওতে আড়াইশ ছুঁইছুঁই স্কোর যখন পেল বাংলাদেশ, জয়ের আশা কিছুটা হলেও বেড়ে গেল। তবে কুসাল মেন্ডিসের ঝড়ো ফিফটিতে সফরকারীদের চাপে ফেলে দিল লঙ্কানরা। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলা তানভীর ইসলাম এলেন ত্রাতা হয়ে, পাঁচ উইকেট নিয়ে ধস নামালেন ব্যাটিং অর্ডারে। সেই চাপ সামলে একাই লড়লেন জানিথ লিয়ানাগে। তার দারুণ এক ফিফটিতে জয়ের খুব কাছাকাছিও গেলেও শেষ রক্ষা আর হলো না শ্রীলঙ্কার। সিরিজে সমতা টানল বাংলাদেশ।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জিতেছে ১৬ রানে। টস জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল ২৪৮ রানে। রান তাড়ায় ৪৮.৫ ওভারে ২৩২ রানে থামে শ্রীলঙ্কার ইনিংস।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে ওয়ানডেতে জয় খরা কাটল বাংলাদেশের। আর অধিনায়ক হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচেই জয়ের দেখা পেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আগামী ৮ জুলাই তার দল মাঠে নামবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে, সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে।
ব্যাট হাতে শেষের দিকে নেমে দারুণ এক ক্যামিও খেলা তানজিম দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশের এনে দেন সাফল্য। এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে ফেরেন ওপেনার পথুম নিশাঙ্কা। ব্যাটার রিভিউ নিলেও ‘আম্পায়ার্স কল’-এ বজায় থাকে আউটের সিদ্ধান্ত।
এরপর ধীরে ধীরে ম্যাচে ফেরে শ্রীলঙ্কা। নিশান মাদুশকাকে নিয়ে কুসল শুরু করেন আগ্রাসী ব্যাটিং, যা পাল্টা চাপে ফেলে দেয় বাংলাদেশকে। অষ্টম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামকে দুই চার ও এক ছক্কায় ওড়ান। এরপরের ওভারে ঝড় বয়ে যায় মুস্তাফিজুরের ওপর দিয়ে। বাঁহাতি এই পেসারকে টানা চারটি চার মেরে কুসল স্রেফ ২০ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। মাত্র ৩৫ বলে দ্বিতীয় উইকেটে হয় ৫০ রানের জুটি।
কুসল ও মাদুশকার ব্যাটে চড়ে এক পর্যায়ে শ্রীলঙ্কার স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৭৫। প্রথম ওভারে ১৭ রান দেওয়ার পরও তানভীরের ওপর আস্থা রাখেন মিরাজ, যার প্রতিদান তিনি দেন দুহাতে। আক্রমণে এসেই ফিরিয়ে দেন মাদুশকাকে (২৫ বলে ১৭), ভাঙেন ৬৯ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি।
এরপর বড় উইকেটটাও আসে বাঁহাতি এই স্পিনারের হাত ধরেই। বিপজ্জনক কুসলকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মাত্র ৩১ বলে ৫৬ রান করার পর। এই উইকেটে স্পিন ধরায় এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে আসা শামীম হোসেনকে আক্রমণে আনেন মিরাজ। আর পার্ট টাইম স্পিনে চমকে দেখান তিনি। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা যখন তিনি শিকার বানান, তখন লঙ্কানদের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে মাত্র ৯৯।
পরের ওভারেই ফের উইকেট পেতে পারতেন শামীম। তবে কামিন্দু মেন্ডিসের ব্যাট ছুয়ে ক্যাচ উঠলেও তা গ্লাভসে জমাতে পারেননি জাকের আলী অনিক। বেশিক্ষণ অবশ্য টিকতে পারেননি। অন্যপ্রান্তে দারুণ বোলিং করা তানভীর খানিক বাদেই ৩৩ রান করা কামিন্দুকে ফিরিয়ে দেখা পান নিজের তৃতীয় শিকারের।
এরপর আবারও আঘাত হানেন তানভীর। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাড হয়ে ক্যাচ তুলে দেন দুনিথ ভেলালাগে। এবার সহজ ক্যাচ নেন জাকের আলী। ১৩২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
সপ্তম উইকেটে ২৪ রান যোগ করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন জানিথ লিয়ানাগে ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, যার ইতি টানেন মিরাজ। ওয়ানডেতে পাঁচ ম্যাচ পর উইকেটের দেখা পান ১৩ রান করা হাসারাঙ্গাকে ফিরিয়ে।
চাপ বজায় রেখে সুযোগ তৈরি করেছিলেন মুস্তাফিজুর। তবে ব্যাটে লেগে লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া লিয়ানাগের ক্যাচ ফেলে দেন জাকের আলি। সেই সময়ে তার রান ছিল ২৮।
নিজের স্পেলের শেষ ওভারে বাংলাদেশকে আরও একবার উল্লাসে ভাসান তানভীর। মাহেশ থিকসানাকে আউট করে পূর্ণ করেন ফাইফার। দুর্দান্ত বোলিং ফিগারে ইনিংস শেষ করেন তিনি ১০ ওভারে ২ মেডেন সহ ৩৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে।
তবে বাংলাদেশ শিবিরে ভীতি ছড়িয়ে শুরুতে জীবন পাওয়া লিয়ানাগে ম্যাচ হেলে দেন শ্রীলঙ্কার দিকে। তার একের পর এক বড় শটের সাথে যোগ হয় মিরাজদের ক্যাচ আর ফিল্ডিং মিসের মিছিল। তাতে বাড়তে থাকে রান, আর কমতে থাকে বাংলাদেশের জয়ের আশা।
ফিফটি পেরিয়ে লিয়ানাগে যখন ম্যাচ বাংলাদেশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবেন বলেই মনে হচ্ছিল, ঠিক সেই সময়েই মহাআকাঙ্ক্ষিত উইকেটটা এনে দেন মুস্তাফিজুর। আগের বলে ছক্কা হজমের পর রিটার্ন ক্যাচে লিয়ানাগেকে থামান ৭৮ রানে।
৪৯তম ওভারে আসিথার ক্যাচ নিজের বলে নিতে ব্যর্থ হন তানজিম। তবে পরের বলেই বোল্ড করেন দুসমান্থ চামিরাকে। বাংলাদেশ পায় রোমাঞ্চকর এক জয়।
এর আগে দিনের শুরুতে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। একাদশে শামীম ছাড়াও আসেন হাসান মাহমুদ। বাদ পড়েন লিটন দাস ও তাসকিন আহমেদ। শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। আগের ম্যাচে ফিফটি করা তানজিদ হাসান তামিম সাজঘরের পথ ধরেন এক ডিজিটেই।
তিনে নামা শান্ত সেট হয়েও পারেননি ইনিংস বড় করতে। তবে দারুণ গতিতে এগিয়ে যাওয়া ইমন এগিয়ে নেন বাংলাদেশের ইনিংস। তুলনায় তাওহীদ ছিলেন বেশ ধীরগতির। চল্লিশ থেকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে ফিফটিতে পা রাখেন ইমন, যা তার ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক।
তবে এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি। থামেন ৬৭ রানে। প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নামা মিরাজ দলকে হতাশ করেন আউট হন অল্পেও। ২৩ বলে ২২ রানের ইনিংসে সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন শামীম, তবে বড় শট হাঁকাতে গিয়ে ইতি ঘটে তার পথচলার।
জাকের আলী ও তাওহীদ মিলে এরপর কিছুটা ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। দলকে দুইশ পার করে তাওহীদ দেখা পান ফিফটির। তবে তিনিও বেশিক্ষণ আর টিকতে পারেননি। ৯ উইকেটে ২১৮ থেকে ২৪৮ রান পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোর টেনে নেওয়ার একক কৃতিত্ব কেবল তানজিমের। অপরাজিত থাকেন মাত্র ২১ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৩ রানে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে বলেছিলেন অনিশ্চয়তার কথা। শেষ পর্যন্ত এক বছরের জন্য স্থগিতই হয়ে গেল ভারতের সাথে বাংলাদেশের সাদা বলের সিরিজ। আগামী আগস্টে তাই বাংলাদেশে আসছেন না কোহলি-রোহিতরা।
শনিবার বিসিবি ও ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, বাংলাদেশ-ভারতের সাদা বলের দুটি সিরিজ নতুন সূচি অনুযায়ী হবে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।
আইসিসির ফিউচার ট্যুরস প্রোগ্রামে (এফটিপি) থাকা ভারতের এই সাদা বলের সিরিজের সফরে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা দুই দেশের। ঠিক কী কারণে এই বছর সিরিজটি হচ্ছে না, সেই ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি দুই দেশের বোর্ড।
বিসিসিআই এক অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, দুই বোর্ডের মধ্যে আলোচনার পর এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সময়সূচির সুবিধাজনক দিকগুলো বিবেচনা করে সিরিজটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আর বিসিবি বিবৃতিতে জানিয়েছে,
“প্রতীক্ষিত এই সিরিজের জন্য ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় থাকবে বিসিবি। এই সফরের সংশোধিত সূচি যথাসময়ে জানানো হবে।”
শুরুটা আদর্শ না হলেও পারভেজ হোসেন ইমনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ইনিংসের প্রথম অংশটা ভালোই কাটল বাংলাদেশের। তবে তরুণ এই ব্যাটার পারলেন না ইনিংস বড় করতে। তাওহীদ হৃদয় কিছুটা লড়লেও অন্য ব্যাটারদের কেউই পারলেন সেভাবে অবদান রাখতে। শেষের দিকে দারুণ এক ক্যামিও খেললেন তানজিম হাসান সাকিব। আর এতে ভর করে সিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে মোটামুটি একটা টার্গেট দিতে পারল সফরকারীরা।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ২৪৮ রানে। সর্বোচ্চ ৬৭ রান এসেছেন ইমনের ব্যাট থেকে।
বাংলাদেশের জন্য শুরুটা মোটেও সুখকর হয়নি। তৃতীয় ওভারেই সাজঘরের পথ ধরেন আগের ম্যাচে ফিফটি করা তানজিদ হাসান তামিম। আসিথা ফার্নান্দোর অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারি তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে করেন মাত্র ৭ রান।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ইমন মিলে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। দ্বিতীয় উইকেটে একশ’র বেশি স্ট্রাইক রেটে ৬৩ রানের জুটি গড়েন এই দুজন, যেখানে বেশি ইতিবাচক ছিলেন ইমনই। জুটি যখন জমে উঠছিল, তখন অফ স্পিনার চারিথ আসালাঙ্কাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত, তার আগে ১৪ রান করেন ১৯ বলে।
তবে ছন্দময় ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার বোলারদের চাপে রাখেন ইমন৷ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশে পা রাখেন পরপর দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির পর অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি। ভানিন্দু হাসারাঙ্গার গুগলিতে বোল্ড হয়ে থামে তার ইনিংস। তবে তার আগে তরুণ এই ওপেনার উপহার দেন ৬৯ বলে ৬৭ রানের দারুণ এক ইনিংস।
লিটন দাস একাদশের বাইরে থাকায় প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নামেন অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে পারেননি পরিস্থিতির চাহিদা মেটাতে। ৯ রানে দুশমন্থ চামিরার শর্ট বল পুল করতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ধরা পড়েন ডানহাতি এই ব্যাটার।
তাওহীদ একপ্রান্ত আগলে ব্যাট করেন খোলসবন্দী হয়েই। অনেকদিজ পর ওয়ানডে দলে ফেরা শামীম হোসেন অবশ্য ছিলেন ইতিবাচক। ব্যাট করেন ১০০ স্ট্রাইট রেটে। তবে শর্ট বলের ট্র্যাপে তাকে ফেলেন আসিথা ফার্নান্দো। ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান ২ চার ও ১ ছক্কায় ২২ রান করে।
শামীমের আউটে চাপ আরও বাড়ে বাংলাদেশের ওপর। জাকের আলি অনিককে নিয়ে সেটা মোকাবেলা করার পথে তাওহীদ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ২৫তম ব্যাটার হিসেবে ১ হাজার রানের ক্লাবে পা রাখেন। এই মাইলফলক স্পর্শ করতে তার লেগেছে ৩৩ ইনিংস। তার চেয়ে চেয়ে কম ইনিংসে এই কীর্তি গড়েছেন কেবল দুই ব্যাটার, শাহরিয়ার নাফিস ও এনামুল হক বিজয়। দুজনেরই লেগেছিল ২৯ ইনিংস।
রয়েসয়ে খেলা জাকেরকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে আসিথা ফের চাপে ফেলেন বাংলাদেশকে। তাওহীদের ওপর তাতে দায়িত্ব বর্তায় দলকে ভালো একটা স্কোর এনে দেওয়ার। তবে তিনিও হন ব্যর্থ, যদিও ভাগ্যকে দুষতেই পারেন তিনি।
আসিথার বলে ডিপ মিড উইকেটে ঠেলে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন তাওহীদ। শুরুটা সাড়া দিলেও পরে ফিরে যান তানজিম হাসান সাকিব। মাঝপথে গিয়েই আর ক্রিজে ফেরার সুযোগই পাননি তাওহীদ। রান আউটে শেষ হয় তার ২ বাউন্ডারিতে সাজানো ৫১ রানের ইনিংস।
সেই সময়ে মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যাবে ২২০ রানের মধ্যেই। তবে সেটা হতে দেননি তানজিম। চোখজুড়ানো সব চার-ছক্কার বাহারে ভড়কে দেন প্রতিপক্ষকে। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার এক ওভারে দুই চারের পর এক লেগ স্পিনারের স্পেলের শেষ ওভারে হাঁকান দুই ছক্কা। তবে ৪৯তম ওভারেই মুস্তাফিজুরকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের ইতি টানেন হাসারাঙ্গা। ২১ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থেকে যান তানজিম।
ফর্মে না থেকেই জায়গা মিলেছিল প্রথম ওয়ানডের দলে। তবে সেটা কাজে লাগাতে পারেননি লিটন দাস। ফলে দ্বিতীয় ওয়ানডের দল থেকে বাদ পড়েছেন কিপার-ব্যাটার লিটন দাস। তার জায়গায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচের দলে এসেছেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার শামীম হোসেন। টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়েছে বাংলাদেশ।
এছাড়া একাদশে এসেছে আরেকটি পরিবর্তন। চার মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে ৪৭ রানে চার উইকেট পাওয়া তাসকিন আহমেদ নেই এই ম্যাচে। দলে ফিরেছেন ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদ।
ম্যাচটি শুরু বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টায়, সরাসরি দেখতে চোখ রাখুন টি স্পোর্টসের পর্দায়।
বাংলাদেশের একাদশ :
পারভেজ হোসেন ইমন, তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), জাকের আলী অনিক, তানজিম হাসান সাকিব, তানভীর ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ।
অনেকটা সময় ধরেই ছিলেন জাতীয় দলের বাইরে। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে বল হাতে ছিলেন ভালো ছন্দে। সেই সূত্রে এবার জাতীয় দলেও ফিরলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে রাখা হয়েছে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে।
চলতি মাসের তিন ম্যাচের সিরিজের জন্য শুক্রবার স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত সাইফউদ্দিন গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ দলে হয়ে পড়েছেন অনিয়মিয়। শেষবার জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করেন ২০২৪ সালের মে মাসে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে সেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার পর থেকেই ছিলেন দলের বাইরে।
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রধান কোচ সিমন্সকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ |
![]() |
এখন পর্যন্ত ৩৮টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৮.৭১ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ৪২ উইকেট। আর ব্যাট হাতে প্রায় ১১৫ স্ট্রাইক রেটে রান ২০৬।
সাইফউদ্দিনের চেয়েও দীর্ঘ বিরতি দিয়ে দলে ফিরেছেন নাঈম শেখ। ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াডে থাকা এই বাঁহাতি ওপেনার শেষবার এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছিলেন ২০২২ সালে। ৩৫ ম্যাচে ১০৩.৪৫ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ৮১৫।
এছাড়াও চোট কাটিয়ে ২০ ওভারের দলে ফিরেছেন অভিজ্ঞ পেসার তাসকিন আহমেদ। নেতৃত্বে যথারীতি থাকছেন লিটন দাস।
আগামী ১০ জুলাই ক্যান্ডিতে শুরু হবে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ। এরপর ১৩ জুলাই দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ডাম্বুলায়। আর ১৬ জুলাই সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ হবে কলম্বোতে। প্রতিটি ম্যাচই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭:৩০ টায়।
বাংলাদেশ স্কোয়াড:
লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, নাইম শেখ, তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলি অনিক, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, রিশাদ হোসেন, শেখ মাহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরীফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।