১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১:৪৫ এম
কয়েক বছর আগেও চিত্রটা বেশ মলিন হলেও এই মূহুর্তে বাংলাদেশের ঘরোয়া লিগ বেশ ভালো অবস্থাতেই আছে। জাতীয় ক্রিকেট লিগ, যেটিকে একসময় 'পিকনিক লিগ' বলা হত, সেটিও সামগ্রিকভাবে অনেক উন্নতি করেছে। তবে এই লিগকে যে তকমাটা দেওয়া হয়েছিল একটা সময়ে, তা এখনও পোড়ায় জাকের আলি অনিককে। প্রতিটি রানের জন্য সংগ্রাম করা এই প্রতিযোগিতায় ক্রিকেটারদের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা তাকে ভীষণ কষ্ট দেয় বলেও জানিয়েছেন তরুণ এই কিপার-ব্যাটার। তবে প্রশ্ন তো থেকেই যায়, ঘরোয়াতে ভালো করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তা প্রতিফলিত করতে পারবেন জাকেররা?
একটা সময় ধরে জাতীয় লিগকে পিকনিক লিগ বলার কারণ ছিল কয়েকটিই৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্রিকেটের মান, প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব, কম পারিশ্রমিক, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও কিছু ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের নিবেদনের ঘাটতির মত গুরুতর কিছু বিষয়। একবার এমন খবরও এসেছিল যে, ম্যাচ চলাকালীন খেলোয়াড়রা নাকি বিরিয়ানি খান! স্বাভাবিকভাবেই এসব ব্যাপার যখন সামনে চলে আসে, সেই লিগকে মজা করে কেউ কেউ এটিকে পিকনিক লিগ নাম দিয়ে দেন। পরে সেটাই পেয়ে যায় ব্যাপ্তি।
এখন অবশ্য জাতীয় লিগকে নিয়ে কেউ আর এসব বলেন না। তবে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট দলে ডাক পাওয়া জাকের আলি হুট করেই সেই পিকনিক লিগ নামকরণ নিয়ে একরাশ হতাশা প্রকাশ করে ফিরিয়ে এনেছেন পুরনো স্মৃতি৷ “প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার খুবই কষ্ট লাগে যখন দেখি অনেকে বলে যে, এটা পিকনিক ক্রিকেট। এই জিনিসটা খুব কষ্ট লাগে। আমরা জানি, আমরা ক্রিকেটার হিসেবে কতোটা কষ্ট করে খেলি। তাই দয়া করে এই কথাগুলো বলবেন না। আমি এই কথায় খুব দুঃখ পাই। আমি ২০১৭ সাল থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলি। আমি জানি, আমার কতটা কষ্ট হয়। একেকটা রান করতে আমার কতটা কষ্ট হয়েছে। সবার কাছে অনুরোধ থাকবে। ক্রিকেটার হিসেবে আমরা অনেক কষ্ট করি।”
জাকেরের হতাশ হওয়াটা অবশ্য যৌক্তিকও বটে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে রাতারাতি দেশের ক্রিকেটে সেনসেশন হয়ে গেলেও লাল বলের ক্রিকেটে তিনি বেশ সফল। ২০১৬-১৭ মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। তবে আলো ছড়াচ্ছেন মূলত গত কয়েক বছর ধরে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) টানা তিন ইনিংসে সেঞ্চুরি করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন।
২০২১ সালের শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪৮ ইনিংসে ব্যাট করেছেন জাকের। চার সেঞ্চুরি ও ১৩ ফিফটিতে ৪৬.৭৯ গড়ে করেছে ১ হাজার ৯৬৫ রান। বাংলাদেশের বাস্তবতায় একজন কিপার-ব্যাটার হিসেবে পরিসংখ্যানটা ঈর্ষণীয়ই। সেই ধারায় গত মাসে বাংলাদেশ 'এ' দলের হয়ে পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ১৭২ রানের ইনিংস খেলে এবার ডাক পেয়েছেন ভারত সিরিজের টেস্ট দলে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সাড়ে সাড়ে সাত বছরের বেশি সময় প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলে, যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেই টেস্ট দলে এসেছেন জাকের। তবে তিনি যে বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ করলেন, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনার আগে জাকেরদের তো এটাও মনে রাখা উচিত, কেন জাতীয় লিগকে এই নাম দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে জাকেরের চেয়েও বেশি সময় খেলে, অভিজ্ঞ হয়ে, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে রানের পর রান করে জাতীয় দলে এসেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। ছিলেন ২০১৯ বিশ্বকাপের দলেও। খেলেছেন অন্য দুই ফরম্যাটেও। বিক্ষিপ্ত কিছু ইনিংস ছাড়া সেভাবে কখনই ধারাবাহিক হতে পারেননি। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার অনেক তফাৎ। এই পর্যায়ে রান করা কঠিন, কারণ বোলাররা বাজে বল কম দেন।
মিঠুনের সেই সরল স্বীকারোক্তি নিয়ে সেই সময়ে বেশ শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তবে সাহসী সেই মন্ত্যবের জন্য তাকে বরং বাহবা দেওয়া উচিত। কারণ, মিঠুন বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের কঠিন বাস্তবতাই তুলে ধরেছেন। যা বলে দেয়, ঘরোয়াতে নিজেকে প্রমাণ করে জাতীয় দলে খেলোয়াড়দের প্রবেশের যে চর্চিত কথা আমরা বলি, সেখানে শুভঙ্করের ফাঁকি থেকেই যায়।
মিঠুন ছাড়াও বার বার তার প্রমাণ দেখিয়েছেন আরও অনেকেই। যেমন ফজলে হক রাব্বি। তিনিও ঘরোয়াতে নিজেকে প্রমাণ করেই এসেছিলেন জাতীয় দলে। তবে জিম্বাবুয়ের সাথে একটি সিরিজে তার নিদারুণ ব্যর্থতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্বলতার দিকগুলো।
জাতীয় লিগ বাদে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের কথাও যদি ধরা হয়, চিত্রটা একই। আনামুল হক বিজয় বা নাঈম শেখরা রানের ফোয়ারা বইয়ে দেন রীতিমত। তবে সেই ফর্ম দেখে জাতীয় দলে যখনই তাদের ডাকা হয়, তখন ফুটে ওঠে তাদের নানা দুর্বলতা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চতুর বোলাররা সেট-আপ করে অনায়াসেই তাদের ফেলে দেন। যেহেতু ঘরোয়াতে বোলাররা এমন কিছু করেননা, ফলে শীর্ষ বোলারদের স্কিলের পাশাপাশি মানসিক লড়াইয়েও আমাদের ঘরোয়ার পরীক্ষিত ব্যাটাররা খাবি খান।
তবে প্রসঙ্গ যেহেতু চারদিনের ম্যাচ, তাই জাকের আলি যে আক্ষেপ করেছেন সেই পিকনিক লিগ নামকরণ নিয়ে, তাই সেই কষ্ট নিজের পাশাপাশি সবাইকে ভুলিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব এখন তারই। আজ হোক বা কাল, জাকের যখনই টেস্ট খেলার সুযোগ পাবেন, তাকে মাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ঘরোয়াতে পিকনিক লিগে রান করেননি। প্রমাণ করতে হবে তিনি শতভাগ সিরিয়াস লিগে রান করেছেন, নিজেকে নিঙরে দিয়েছেন, নিবেদনের কোনো ঘাটতি রাখেনি। সংবাদ সম্মেলনে মুখের কথা নয়, ব্যাটে রান দিয়ে তখন এক ফুঁৎকারে সব উড়িয়ে দিতে পারবেন জাকের। সুযোগ ভারত সিরিজে না এলেও পরবর্তীতে পাবেন অবশ্যই। তখন ব্যাট হাতে জাতীয় লিগের মান উজ্জ্বল করতে পারবেন তো জাকের?
৭ অক্টোবর ২০২৪, ১:১৮ এম
৭ অক্টোবর ২০২৪, ১:১৩ এম
আগের ম্যাচে ব্যাটিং ও বোলিং, দুটিতেই ছিলেন ব্যর্থ। তবে পরের ম্যাচেই নিজেকে ফিরে পেলেন সাকিব আল হাসান। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্রিকেট লিগ টি-টেন এ রবিবারের ম্যাচে টেক্সাস গ্ল্যাডিয়েটরসের বিপক্ষে ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়েছেন বাংলদেশ অলরাউন্ডার। যদিও জয়ের দেখা পায়নি তার দল লস অ্যাঞ্জেলেস ওয়েভস।
সাকিব ক্রিজে গিয়েছিল ছয় নম্বর ওভারে, দলের রান তখন তিন উইকেটে ৩৯। সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার টিভ ডেভিডকে নিয়ে গড়েন বিধ্বংসী এক জুটি। মাত্র ১১ বলে ২০ রান করেন সাকিব, ইনিংস সাজান তিন চার ও এক ছক্কায়। ২০ বলে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন ডেভিড। চতুর্থ উইকেটে এই দুজন যোগ করেন ৭৭ রান, যা লস অ্যাঞ্জেলেসকে এনে দেয় ১২৬ রানের লড়িয়ে স্কোর।
বল হাতেও ওপেনিং করেন এই দুজন। দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে আসেন সাকিব। নিজের দ্বিতীয় ওভারে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার ফেরান বিপজ্জনক দাভিদ মালানকে। ১৬ বলে ৩৮ রান আসে সাবেক ইংলিশ ওপেনারের ব্যাট থেকে।
সাকিব তার তৃতীয় ও শেষ ওভারে শিকার বানান নিক কেলিকে। তিন ওভারের স্পেল শেষ করেন ২ উইকেটে ৩৭ রানে। ওভার প্রতি রান দেন ১২.৩৩ করে, যা দলের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার।
১০ বলে অপরাজিত ৩৯ রান করে টেক্সাস গ্ল্যাডিয়েটরকে ৮.৫ ওভারেই জয়ের বন্দরে নিয়ে যান জেমস ফুলার। দলটিতে খেলছেন সাবেক পাকিস্তান অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদিও। যদিও ব্যাটে বা বলে ভুলে যাওয়ার মত একটা দিনই কেটেছে তার। ১ ওভারে ২৪ রান দেওয়ার পর ব্যাট হাতে পাঁচ বলে করতে পেরেছে মাত্র ২ রান।
অবসরে গেছেন তিন তারকা ক্রিকেটার, বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে আরও কয়েকজন শীর্ষ খেলোয়াড়দের। প্রায় দ্বিতীয় সারির ভারত দলের বিপক্ষেও প্রথম টি-টোয়েন্টিতে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। স্রেফ উড়ে গেছে সফরকারীরা। এমন হারের পর অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্তর মনে হচ্ছে, সামগ্রিকভাবেই দুই দলের মাঝে পার্থক্যটা বিশাল।
এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম শক্তিশালী বেঞ্চ ভারতেরই। দলটির মূল দলের বাইরেও যারা থাকেন, তাদের অনেকেই অন্য দেশের একাদশে অনায়াসেই জায়গা করে নেবেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) কল্যাণে প্রতি বছর উঠে আসছেন নতুন নতুন প্রতিভা। ফলে ভারতের হাতে বাড়ছে দক্ষ ক্রিকেটারের সংখ্যা। বিপরীত চিত্র বাংলাদেশের, যেখানে বিশ্বকাপে ভরাডুবির পরও দলে এসেছে মাত্র তিন পরিবর্তন, যার মধ্যে একটি আবার সাকিব আল হাসানের অবসরের কারণে। অর্থাৎ, বিকল্প খেলোয়াড় খুব বেশি নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটে হেরে টি-স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন নিজেদের দুর্বলতার জায়গা। “এটা সত্য কথা যে দুই দলের অনেক পার্থক্য আছে। এবং এই জায়গায় অস্বীকার করার কিছু নেই। পার্থক্য আছে, এটা মাঠেও দেখা যায়, মাঠের বাইরেও দেখা যায়। আইপিএলের সাথে তো বিপিএলের তুলনা তো কখনই হবে না। তাই মাঠে ও মাঠের বাইরে আমাদের কীভাবে উন্নতি করতে হবে, সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। বিপিএল কীভাবে আরও ভালো করা যায়, কীভাবে আরও ক্রিকেটার এখান থেকে বের হয়ে আসতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর আমরা যারা খেলছি, তাদেরও উন্নতি করতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা এরচেয়েও ভালো দল।”
ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে ভারত ঠিক সেভাবেই খেলেছে, যেভাবে আসলে খেলা দরকার। ১২৮ রানের টার্গেট স্পর্শ করেছে ১১.৫ ওভারেই। আর এই রান করতেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন সাতে নামা মেহেদি হাসান মিরাজ। টপ অর্ডার ছিল একেবারেই ব্যর্থ, যার ফলে প্রথম ছয় ওভারে আসে মাত্র ৩৯ রান।
তবে শান্ত মনে করেন, তাদের পরিকল্পনা ঠিকই ছিল। প্রয়োজন শুধু সেটা কাজে লাগানোর। “সবার অ্যাপ্রোচ আমার ভালো লেগেছে। তবে আমাদের এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে আমরা কোন সময়ে কোন পরিস্থিতিতে কেমন শট খেলব। আমরা যে আটজন ব্যাটসম্যান খেলেছি, আমাদের সবারই এই জায়গায় খেয়াল রাখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি এই অ্যাপ্রোচে যদি আমরা সামনে খেলি, তাহলে অবশ্যই আমরা ভালো করব।”
সিরিজের প্রথম ম্যাচেই এই ধরনের হার একটা দলকে স্বাভাবিকভাবেই একটা বড় ধাক্কা দেয়। বুধবার সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে তাই বাংলাদেশকে খুব বিশেষ কিছুই করতে হবে। শান্ত বিশ্বাস রাখছেন নিজেদের সামর্থ্যে। “অবশ্যই বিশ্বাস করি আমরা কামব্যাক করতে পারি। যা বললাম, আমি বিশ্বাস করি না যে আমরা এমন দিল। আমরা এরচেয়েও ভালো দল। আশা করব পরবর্তী ম্যাচটা আরও বেশি প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ন হবে।”
৪ দিন আগে
১৪ দিন আগে
১৪ দিন আগে
১৪ দিন আগে
১৪ দিন আগে
১৮ দিন আগে
১৮ দিন আগে
১৯ দিন আগে
২২ দিন আগে
২৩ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৬ দিন আগে