আগের ম্যাচে লো-স্কোরিং হলেও ব্যাট হাতে বাংলাদেশ ছিল প্রাণবন্ত। তবে এদিন সেটা হলো না। শুরু থেকেই কেউ পারলেন না বড় ইনিংস খেলতে। ফলে চাপ বাড়ল মিডল অর্ডারের ওপর। অন্যরা না পারলেও সেটা একাই সামাল দিলেন জাকের আলি অনিক। লড়িয়ে ফিফটিতে দলকে এনে দিলেন ফাইট করার মত এক স্কোর। এরপর বোলাররা দিলেন স্বপ্নের শুরু। তবে পাকিস্তানের হয়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ফেলেন ফাহিম আশরাফ। জমল রোমাঞ্চ। শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর হাসি হাসল বাংলাদেশ। নিশ্চিত হল ইতিহাস গড়া সিরিজ জয়।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ পেয়েছে ৮ রানের নাটকীয় জয়। জাকের আলির বীরত্বে ১৩৩ রান করার পর প্রতিপক্ষকে ১৯.২ ওভারে ১২৫ রানে অলআউট করেছে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখেই তাতে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের সিরিজ জয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ফরম্যাটে এটা বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়।
গত সোমবার মাইলস্টোনের মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার শোক স্মরণে মঙ্গলবার একদিনের শোক পালন করেছে বাংলাদেশ। সেই আবহেই মিরপুরে শুরু হয় ম্যাচ। খেলা শুরুর আগে মাঠে এক মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
আরও পড়ুন
রাসেলের বিদায়ের রাগিণী আরও শোকাতুর দলের পরাজয়ে |
![]() |
টস হেরে আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ একাদশে বাংলাদেশ আনে দুটি পরিবর্তন। বাদ পড়েন বাঁহাতি ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও পেসার তাসকিন আহমেদ। তাদের জায়গায় দলে আসেন ব্যাটার মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।
শ্রীলঙ্কা সফরে একটি টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি নাঈম। এবারও ব্যর্থ হন তিনি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মাত্র ৩ রান করে ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে। স্কুপ শটে ফাহিম আশরাফের বল উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু টাইমিং না হওয়ায় ধরা পড়েন মোহাম্মদ হারিসের গ্লাভসে।
খুব একটা সময় টিকলেন না লিটনও। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে এক ডিজিটে আউট হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ছক্কার চেষ্টায় সালমান মির্জার বলে ক্যাচ তুলে দেন ডিপ মিড উইকেটে। অহেতুক রান চুরি করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন তাওহীদ হৃদয়। সালমান মির্জার অফ স্টাম্পের বাইরের বল মিড অফে ঠেলেই রানের জন্য দৌড় দেন এই ডানহাতি ব্যাটার, তবে সালমান আগার সরাসরি থ্রোয়ে ডাইভ দিয়েও বাঁচাতে পারেননি উইকেট।
আগের ম্যাচে দারুণ এক ফিফটি করা পারভেজ হোসেন ইমন শুরুটা করেছিলেন ভালো। তবে ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি। মিড অনের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়ে টাইমিং মিস করে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে এক চার ও এক ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান।
৬ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে মাত্র ২৯। সেখান থেকে বাংলাদেশের ফেরার লড়াইয়ে রানে গতি দেন শেখ মাহেদি হাসান। খুশদিল শাহ ও মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে পরপর চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে কিছুটা চাপ সরান এই স্পিনিং অলরাউন্ডার। জাকের আলিকে নিয়ে গড়েন ৪৯ বলে ৫৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি।
শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙে মাহেদির বিদায়ে। ২৫ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় এই ফরম্যাটে নিজের সর্বোচ্চ ৩৩ রানের ইনিংস খেলে শিকার হন মোহাম্মদ নাওয়াজের। ফিনিশিং দিতে ব্যর্থ হন শামীম হোসেন। আহমেদ দানিয়েলের বলে বোল্ড হয়ে যান মাত্র ১ রানেই।
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজও জিতে নিল বাংলাদেশ |
![]() |
৯৩ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশের ইনিংসকে এরপর একাই টেনে নেন জাকের আলি। বলের মেরিট বুঝে আক্রমণ শানান বোলারদের ওপর। তাতে একটু একটু করে এগিয়ে যান ফিফটির পথে। ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মারার চেষ্টায় ধরা পড়ার আগে দলকে এনে দেন সম্মানজনক একটা স্কোর। ৪৮ বলে পাঁচটি ছক্কা ও একটি চারে সাজান ৫৫ রানের ইনিংস। এই ফরম্যাটে এটা জাকের আলির তৃতীয় ফিফটি।
মিরপুরেই সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ১১০ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর সহজেই সেটা তাড়া করেছিল বাংলাদেশ। তবে এই ম্যাচে সফরকারীদের জন্য শুরুতেই কাজটা দুর্গম করে তোলেন বাংলাদেশের বোলাররা মিলে।
একদম শুরু থেকেই দুই প্রান্ত থেকে চেপে ধরেন তারা। প্রথম ওভারেই সৌভাগ্যের ছোঁয়ায় ব্রেকথ্রু পায় বাংলাদেশ। কাট করে পয়েন্টে খেলে রানের জন্য দৌড় দেন সাইম আইয়ুব, তবে সেটা পূর্ণ হওয়ার আগেই রান আউট হতে হয় তাকে। একাদশে ফেরা শরিফুল আঘাত হানেন নিজের প্রথম ওভারেই। অফ স্টাম্পের ভেতরে প্রবেশ করানো দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন মোহাম্মদ হারিস। রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি তিনি, আম্পায়ার্স কল-এ সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
মিরপুরের পিচে যেন আগুন ছড়িয়ে দিলেন শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব। মাত্র ৫ ওভারের মধ্যে ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধস নামল পাকিস্তান ব্যাটিং লাইনআপে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটিই পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানে অর্ধেক উইকেট হারানোর রেকর্ড।
এরপর ফের শরিফুলের আঘাত। লেগ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করতে গিয়ে কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ফখর জামানের ইনিংস। আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেন লিটন। সেখানে বদলে যায় সিদ্ধান্ত।
বড় ধাক্কাটা আসে পঞ্চম ওভারে। আক্রমণে এসেই দুই উইকেট নেন তানজিম হাসান সাকিব। প্রথমে অফ স্টাম্পের বাইরে খোঁচা দিয়ে কট বিহাইন্ড হন হাসান নাওয়াজ। পরের বলেই প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন মোহাম্মদ নাওয়াজ। মাত্র ১৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধস নামে পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারে।
টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানে (১৫) ৫ উইকেট হারানোর রেকর্ড এখন এটিই। আগের রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, ২০২৩ সালে (১৬ রানে ৫ উইকেট)।
বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো দলের সবচেয়ে কম রানে ৫ উইকেট হারানোর ঘটনাও এটি। আগের রেকর্ডটি ছিল পাপুয় নিউগিনির (২৪ রান, ২০২১ বিশ্বকাপ ২০২১)।
রান রেটের চাপ সামাল দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আউট হতে হয় পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগাকে, যিনি রীতিমত রান বের করতেই সংগ্রাম করছিলেন। মাহেদির বলে ছক্কা মারার চেষ্টায় লং অনে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। মাত্র ৯ রান করতে খেলেন ২৩ বল। পাকিস্তানের ইতিহাসে টি-টোয়েন্টিতে কমপক্ষে ২০ বল খেলা ব্যাটারদের মধ্যে এটাই সবচেয়ে ধীরগতির ইনিংস।
অন্য প্রান্তে রিশাদ হোসেনের ঘূর্ণিতে ক্যাচ দিয়েও জীবন পান খুশদিল শাহ। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ পয়েন্টে, তবে পারভেজ হোসেন পারেননি সহজ সেই ক্যাচ নিতে। খুশদিলের রান তখন ১২।
আরও পড়ুন
নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিসিবির আয় ১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা |
![]() |
এর কিছুক্ষণ বাদেই অবশ্য আঘাত হানে বাংলাদেশ। মাহেদির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান খুশদিল শাহ। ১৮ বলে ১৩ রান করেই ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটার। প্রবল চাপে পড়ে যাওয়া পাকিস্তানের ১২ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে মাত্র ৪৭ রান!
এরপর বাংলাদেশকে চাপে ফেলে প্রতিরোধ গড়েন আব্বাস আফ্রিদি ও ফাহিম। ২৭ বলে দুজনে যোগ করেন ৪১ রান। অবশেষে নিজের শেষ ওভারে এসেই প্রথম বলে জুটির ইতি টানেন শরিফুল। স্লগ খেলতে গিয়ে বোল্ড হতে হয় তাকে, তার আগে ১৩ বলে ১৯ রান।
তবে একপ্রান্তে আগলে দলকে ম্যাচে ধরে রাখেন ফাহিম। সুযোগ বুজে মারেন বড় শট, তাতে ক্রমেই কমে আসে বল ও রানের ব্যবধান। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন হয় ২৮ রানের। রিশাদের করা ১৯তম ওভারে প্রথম পাঁচ বলেই ফাহিম তুলে নেন ১৫ রান। তবে শেষ হাসি হাসেন এই লেগ স্পিনারই। ছক্কার চেষ্টায় নিচু হয়ে যাওয়া বল খেলতে গিয়ে ক্লিন বোল্ড হয়ে গেলেন ফাহিম। তবে তার আগে খেলেন ৩২ বলে ৫১ রানের এক লড়াকু ইনিংস।
২০তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই আহমেদ দানিয়ালকে ফিরিয়ে সব রোমাঞ্চের ইতি টেনে বাংলাদেশকে জেতান মুস্তাফিজুর। ১৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার শরিফুল।
১ দিন আগে
৮ দিন আগে
১৮ দিন আগে
১৯ দিন আগে
১৯ দিন আগে
১০ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের উৎসবকে হোয়াইট ওয়াশের উৎসবে রূপ দেয়ার অপেক্ষায় ছিলেন বাংলাদেশ সমর্থকরা। ভেন্যুটা মিরপুর বলেই এমন স্বপ্ন দেখেছে দর্শক। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচকে সামনে রেখে ১০ বছর আগে এই ভেন্যুতে পাকিস্তানকে ওডিআই সিরিজে হোয়াইট ওয়াশের ছবিটাও ভেসে উঠেছে বাংলাদেশ সমর্থকদের চোখে। তবে সিরিজ জয়ের উৎসব শেষ ম্যাচে ম্লান করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সভাপতির উপস্থিতিতে ৭৪ রানের সান্ত্বনা নিয়ে দেশে ফেরার উপলক্ষ্য পেয়েছে পাকিস্তান।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে ছিল না টি-টোয়েন্টির উত্তাপ। প্রথম ম্যাচে ইনিংস টেনেটুনে ১১০ পর্যন্ত নিতে পেরেছে সফরকারী দলটি। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৪ রানের চ্যালেঞ্জে থেমেছে পাকিস্তান ১২৫-এ। উইকেট নিয়ে পাকিস্তান কোচ মাইক হেসনের অসন্তুষ্টি প্রকাশের কোনো সুযোগ শেষ ম্যাচে দেননি কিউরেটর গামিনি সিলভা। ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচ উপহার পেয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) সভাপতি স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকায় তাকে সন্তুষ্ট করতে প্রানান্ত চেষ্টা করেছে পাকিস্তান টপ অর্ডাররা। টি-টোয়েন্টির উত্তাপ দিয়ে স্কোর টেনে নিয়েছে ১৭৮/৭ পর্যন্ত।
টানা দুই জয়ে সিরিজের ট্রফি নিশ্চিত করেই যেনো মহাখুশি বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। সাইড বেঞ্চের শক্তি এদিন পরখ করতে সিরিজের শেষ ম্যাচে ৫ পরিবর্তনে প্রকারান্তরে তা জানিয়ে দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। মিরাজকে ফিরিয়ে আনার সুফল এদিন বোলিংয়ে পাওয়া যায়নি। শ্রীলঙ্কা সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে মিতব্যয়ী বোলিং থেকে এদিন টনিক নিতে পারেননি। এক ওভারে (১-০-১৪-০) থেমেছে তার বোলিং। আর এক অফ স্পিনার শেখ মেহেদীও এদিন ছিলেন অকার্যকর (৩-০-৩৬-০)। সাইফউদ্দিনের প্রত্যবর্তনটা এদিন ছিল চোখে পড়ার মতো। ১ ওভারের শেষ স্পেলটি ছিল খরুচে (১-০-১৯-০)। তবে তার প্রথম তিন স্পেল (১-০-৬-০, ১-০-২-০ ও ১-০-১-১) ছিল দারুণ মিতব্যয়ী। দুই বছর পর টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে দারুণ বোলিং করেছেন বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম (৪-০-২২-২)। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩ উইকেট পাওয়ার পর (৩/২২) এক ম্যাচ বিশ্রামে ছিলেন তাসকিন। ফিরেই নামতা গুনে তিন উইকেট শিকার করেছেন (৩/৩৮)। তার দ্বিতীয় স্পেলটি ছিল খরুচে (১-০-১৫-০)। এই ম্যাচে মার খেয়েছেন বাঁ হাতি পেসার শরিফুল (৪-০-৩৯-১)।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লে'র প্রথম ৬ ওভারে এদিন একটু বেশিই অমিতব্যয়ী বোলিং করেছে বাংলাদেশ বোলাররা। শেখ মেহেদী-শরিফুল-তাসকিনের অমিতব্যয়ী প্রথম স্পেলে ওই ৬ ওভারে উইকেটহীন ৫৭ করেছে পাকিস্তান। শাহিবজাদা ফারহান-সাইম আইয়ুব ওপেনিং পার্টনারশিপে ৪৭ বলে ৮২ রান যোগ করে বাংলাদেশ দলকে রান পাহাড়ে চাপা দেয়ার আভাস দিয়েছিলেন। ৮২ রানে এই পার্টনারশিপ থামিয়েছেন বাঁ হাতি স্পিনার নাসুম। ২ বছর পর টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ম্যাচে প্রথম ওভারেই পেয়েছেন উইকেটের দেখা। ডিপ স্কোয়ার লেগে সাইম আইয়ুব (১৫ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ২১) দিয়েছেন ক্যাচ। মিরাজকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কার চুমোয় ২৮ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ফিফটিতে ভয়ংকর রূপ ছড়িয়েছেন শাহিবজাদা ফারহান। তার উইকেটটিও পেয়েছেন নাসুম। নাসুমের লেগ স্ট্যাম্পে পিচিং ডেলিভারিতে সুইপ করতে যেয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন শাহিবজাদা ফারহান (৪১ বলে ৬ চার ৫ ছক্কায় ৬৩)।
দ্বিতীয় পাওয়ার প্লে'র ৯ ওভারে ৬৫'র বেশি রান নিতে দেয়নি বাংলাদেশ বোলাররা। শেষ পাওয়ার প্লে'র ৩০ বলে ৪৬ রানে ফেলে দিয়েছে ৩ উইকেট। মাঝে ২৬টি বলের একটিতেও পাকিস্তান ব্যাটারদের বাউন্ডারি মারতে দেয়নি বোলাররা। পুরো ইনিংসে ১২০টি বৈধ ডেলিভারির মধ্যে ৫৩টি ডট। তারপরও বাউন্ডারি এবং ছক্কার সংখ্যা কম নয়। ১২টি বাউন্ডারির পাশে সমসংখ্যক ছক্কা! তাতেই বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জটা কঠিন করে দিতে পেরেছে পাকিস্তান।
১৭৯ রানের চ্যালেঞ্জ নিতে এসে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে ব্যাকফুটে নেমে গেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে সালমান মীর্জাকে তানজিদ হাসান তামিম কাট করতে যেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে (২ বলে ০) হতাশ করেছেন। ফাহিম আশরাফের ৪র্থ ডেলিভারিতে অধিনায়ক লিটন ফ্লিক করতে যেয়ে বোল্ড হয়েছেন (৮ বলে ৮)। ফাহিম আশরাফ নিজের দ্বিতীয় ওভারের ৪র্থ বলে মিরাজ মিড অফে দিয়েছেন ক্যাচ (৮ বলে ৯)। সালমান মীর্জার ৩য় ওভারে লো বাউন্সি ডেলিভারিতে জাকের আলী অনিক বোল্ড (২ বলে ১) এবং শেখ মেহেদী সুইংয়ে বোল্ড হলে বড় হারের শঙ্কা দেখা দেয়।
সালমান মীর্জা (৩-০-১৫-৩) এবং ফাহিম আশরাফের (২-০-১৩-২) প্রথম স্পেলে স্কোরশিটে ২৯ উঠতে ৫ উইকেট হারালে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোরের শঙ্কা পর্যন্ত দেখেছে সমর্থকরা। তবে ২০১৬ সালে ইডেন গার্ডেনসে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০ রানে অল আউট হওয়ার সে লজ্জা পেতে হয়নি। ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সাইফউদ্দিনের ব্যাটিংয়ে ( ৩৪ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৩৫* ) বড় লজ্জা থেকে বেঁচে গেছে বাংলাদেশ।
অবশ্য সংক্ষিপ্ত সংস্করনের ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বনিম্ন স্কোরের অপবাদ নিয়ে শেষ হয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ২০১১ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৫/৯ ছিল এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সর্বনিম্ন স্কোর। সেই স্কোর টপকে গেছে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে করাচিতে ২০৪ রান তাড়া করতে যেয়ে ১০২ রানে হার ছিল এতোদিন এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় হার। ১৭ বছর আগের সেই হারকেও উপরে রেখেছে বাংলাদেশ।
এদিন বিরক্তিকর ব্যাটিং করেছেন নাঈম শেখ। ১৭ বলে করেছেন মাত্র ১০ রান এই ওপেনার। আহমেদ দানিয়েলকে সিলি মিড অফে ক্যাচ দিয়ে তার আউটটিও দৃষ্টিকটু লেগেছে।
বাংলাদেশের ইনিংসের স্থায়ীত্ব ১০০ বল। এই ১০০ বলের ইনিংসে ৫০ টি ডট। ৮টি বাউন্ডারির পাশে ৩টি ছক্কা। তিনটি ছক্কার তিনটিতে বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশের ২ টেল এন্ডার সাইফউদ্দিন-শরিফুল। সাইফউদ্দিন পর পর দুটি ছক্কা মেরেছেন এক্সট্রা কভার এবং লং অনের উপর দিয়ে। শরিফুল মেরেছেন লং অনের উপর দিয়ে।
২৪ জুলাই ২০২৫, ৬:১৩ পিএম
গত ২১ জুলাই উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে একটি বিমান বিদ্ধস্ত হয়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৯জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একটি মানবিক উদ্যোগ নিয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের টিকিট বিক্রির পুরো অর্থ বিসিবি দান করবে মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা সহায়তায় এবং ‘জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের শহিদ ও আহতদের পরিবারকে।
বিসিবি এক বিবৃতিতে লিখেছে, “বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ঘোষণা করেছে যে আজ শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের টিকিট বিক্রির পুরো আয় সাম্প্রতিক জাতীয় ট্র্যাজেডিগুলোর প্রেক্ষিতে মানবিক সহায়তায় দান করা হবে।”
অন্যদিকে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম কঠিন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবেই দেখছেন, “বাংলাদেশে ক্রিকেট শুধুই একটি খেলা নয়—এটি আমাদের জাতীয় আত্মার অংশ। শোকের এই সময়ে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে। যারা তাদের প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাঁদের আর্তনাদে আমাদের হৃদয় বিদীর্ণ। বিসিবি এ ক্ষত সামাল দিতে সামান্য ভূমিকা রাখতে পেরে কৃতজ্ঞ। আমাদের প্রার্থনা ও সহানুভূতি সব সময় তাঁদের সঙ্গে থাকবে।”
এই দুর্ঘটনার পর বিসিবি সিরিজ জয়ের উৎসর্গ করে নিহত ও আহতদের স্মরণে দ্বিতীয় ম্যাচের আগে এক মিনিটের নিরবতা পালন করে এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।
তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে লিটন কুমার দাসের দল। শেষ ম্যাচটা জিতলে পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করাবে টাইগাররা। অন্যদিকে শেষ ম্যাচ জিতে নিজেদের মান বাঁচাতে মাঠে নামছে পাকিস্তান।
গত ম্যাচের একাদশ থেকে আজ পাঁচটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে পারভেজ ইমন, তাওহিদ হৃদয়, তানজিম সাকিব, মুস্তাফিজুর রহমান ও রিশাদ হোসেনকে। তাদের জায়গায় একাদশে ফিরেছেন নাঈম শেখ, তানজিদ তামিম, মেহেদী মিরাজ, সাইফউদ্দিন ও নাসুম আহমেদ।
বাংলাদেশ একাদশ:
লিটন কুমার দাস (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, নাইম শেখ, মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকের আলী অনিক, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, মো. সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদ।
পাকিস্তান একাদশ:
সালমান আলি আগা (অধিনায়ক), সাহেবজাদা ফারহান, সাইম আইয়ুব, মোহাম্মদ হ্যারিস, হাসান নওয়াজ, হুসেইন তালাত, মুহাম্মদ নওয়াজ, ফাহিম আশরাফ, আব্বাস আফ্রিদি, আহমেদ দানিয়াল ও সালমান মির্জা।
না আন্দ্রে রাসেল বিদায় বেলায়ও পারলেন না! জন্মস্থান কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে বিদায়ী সংবর্ধনার ম্যাচেও পারলেন না তিনি! টেস্ট সিরিজ ৩-০ তে হারের পর এবার টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ২-০ তে পিছিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যদিও সিরিজে এখনও তিন টি-টোয়েন্টি বাকি, কিন্তু সে পর্যন্ত আর অপেক্ষা করলেন না রাসেল, আর্ন্তজাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বললেন এই ফর্মাটের মহাতারকা।
আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৭২ রান করেছিল ক্যারিবীয়রা। বিদায়ী ম্যাচে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেছেন রাসেল। ২৮ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বিশাল জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বল হাতে ১৬ রান খরচ করে উইকেট পাননি রাসেল।
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজও জিতে নিল বাংলাদেশ |
![]() |
এদিন জয় পাননি রাসেল, তবে গার্ড অব অনার পেয়েছেন সতীর্থ ও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের কাছ থেকে। উপহার পেয়েছেন জ্যামাইকার পতাকায় মোড়ানো স্মারক ব্যাট ও বল। ৩৭ বছর বয়সী এই তারকা নিজের শহরে জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলতে চেয়েছিলেন, তাঁর সেই আব্দার রক্ষা করেছে ক্যারিবীয় ক্রিকেট বোর্ড।
১৪ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ৯৯, শেষ ৬ ওভারে ৭৩ রান যোগ করে তারা! টস হারা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভুগিয়েছে অ্যাডাম জাম্পার লেগস্পিন আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অফস্পিন। শাই হোপ আর শিমরোন হেটমায়ারের উইকেট তুলেছেন ম্যাক্সওয়েল, আর ব্রান্ডন কিং, রোস্টন চেইস ও শেরফানে রাদারফোর্ডকে ঘরে ফিরিয়েছেন জাম্পা। প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের পাঁচজনই এ দু’জনের শিকার। রাসেল ১৫ বলে খেলেন ৩৬ রানের ইনিংস, ছিল চারটি ছক্কা। জবাবে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটাও খুব ভাল ছিল না। ৪২ রানের মাঝেই ফিরে যান দুই ওপেনার ম্যাক্সওয়েল ও মার্শ। এরপর ১৩১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি জশ ইংলিশ ও ক্যামেরন গ্রিনের মাঝে। ইংলিশ ৭৮ ও গ্রিন ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচসেরা হন জশ ইংলিশ।
আরও পড়ুন
মিরপুরের উইকেট ‘অগ্রহণযোগ্য’, যেখানে ‘ভুল’ পাকিস্তান কোচ হেসন |
![]() |
শনিবার সেইন্ট কিটস এন্ড নেভিসে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি, এই ম্যাচ জিতলে দুই ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে নেবে সফররত অস্ট্রেলিয়া! সিরিজের বাকি অংশে আর দেখা যাবে না বিদায়ী আন্দ্রে রাসেলকে।
১৩৪ রানের চ্যালেঞ্জ দিয়ে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে কী দুর্বিষহ পরিস্থিতিতেই না পাকিস্তানকে ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ বোলাররা। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে'র ৩৬ বলে স্কোরশিটে ১৭ উঠতে ৫ উইকেট ফেলে দেয়ায় মিরপুরে সর্বনিম্ন স্কোরের রেকর্ডস বুকও ঘাটতে হয়েছে। বড় জয়ের আবহ দেয়া সেই ম্যাচটিই বাজে ফিল্ডিং-ক্যাচ ড্রপে শেষ পাওয়ার প্লে-তে জমিয়ে তুলেছে পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বাংলাদেশ বোলারদের জয় হয়েছে। ১০ বছর আগে ১ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে জয়টিই ছিল এতোদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ফরম্যাটের দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে একমাত্র জয়। মঙ্গলবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে শরিফুল (৩/১৭)-তানজিম হাসান সাকিব (২/২৩)-শেখ মেহেদীর (২/১৫) বোলিংয়ে ৮ রানে জিতে ১০ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের উৎসব করেছে বাংলাদেশ।
মিরপুরে ১০ বছর আগে ৩ ম্যাচের ওডিআই সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ করার ছবিটা এবার ভেসে উঠছে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। এক ম্যাচ হাতে রেখে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় নিশ্চিত করে এখন প্রতিপক্ষকে হোয়াইট ওয়াশে চোখ এখন লিটনদের।
সিরিজের প্রথম ম্যাচ হেরে মিরপুরের উইকেট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পাকিস্তান কোচ মাইক হেসন। এই ম্যাচে ও কী সে প্রশ্ন তুলবেন তিনি ? চার-ছক্কার ফরম্যাটের ক্রিকেটে বোলারদের দাপটে সে প্রশ্নও কেউ কেউ করবেন। উভয় দলের ইনিংসের শুরুর চিত্রটা ভয়াবহ।
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজও জিতে নিল বাংলাদেশ |
![]() |
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল হতাশার। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে যে দুর্যোগে পড়েছে পাকিস্তান, ৪৮ ঘন্টা পর সেই একই চিত্র দেখা গেছে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে! ১২০ টি বৈধ ডেলিভারির মধ্যে ৬১টি ডট করেছে বাংলাদেশ ব্যাটাররা। যে ইনিংসে ৬টি চারের পাশে ছক্কার সংখ্যা ৯টি। প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে ৪১ রানে পাকিস্তান হারিয়েছে ৪ উইকেট। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে সেখানে ব্যাটিং পাওয়ার প্লে'র ৩৬ বলে স্কোরশিটে ২৯ উঠতে হারিয়েছে বাংলাদেশ সমসংখ্যক উইকেট! শেষ পাওয়ার প্লে-তে ৪৭ রানে হারিয়েছে ৫ উইকেট। জাকের আলী অনিক (৪৮ বলে ৫৫) এবং শেখ মেহেদী (২৫ বলে ৩৩) ছাড়া অন্য কোনো ব্যাটার প্রত্যাশিত ব্যাটিং করতে পারেননি। সালমান মীর্জা (২/১৭), আব্বাস আফ্রিদি (২/২৩), আহমেদ দানিয়েলের (২/২৩) বোলিংয়ে বাংলাদেশ থেমেছে ১৩৩/১০-এ।
নতুন বলে সালমান মীর্জার প্রথম স্পেলে (৩-১-৯-১) ধুঁকেছে বাংলাদেশ টপ অর্ডাররা। ফাহিম আশরাফকেও সমীহ করেছে বাংলাদেশের উপরের সারির ব্যাটাররা।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ফাহিম আশরাফের শর্ট বল উইকেট কিপারের মাথার উপর দিয়ে খেলতে যেয়ে দিয়েছেন উইকেট কিপারের হাতে ক্যাচ (৭ বলে ৩)। দ্বিতীয় উইকেট জুটি ২০-এর বেশি টেনে নিতে পারেনি লিটনের ক্যাচ প্র্যাকটিস করে আসায়। সালমান মীর্জার বলে ডিপ মিড উইকেটের ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক (৯ বলে ৮)। ৪ বল পর হৃদয় রান আউটে কাটা পড়ে (৩ বলে ৯) দলকে ফেলে দিয়েছেন বিপদে। ফাহিম আশরাফকে ছক্কা মেরে বাহাদুরি দেখানো পারভেজ হোসেন ইমন মিড অফে সফট ডিসমিসাল হয়েছেন (১৪ বলে ১৩)।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-র দুঃসহ চিত্র কাটিয়ে উঠতে চেষ্ঠা করেছেন জাকের আলী অনিক-শেখ মেহেদী। ৫ম উইকেট জুটিতে ৪৯ বলে ৫৩ রান যোগ করেছেন তারা। খুশদিল শাহ এবং নেওয়াজকে ছক্কার শটে নিজেকে চেনানো শেখ মেহেদী নিজেকে নিবৃত্ত রাখতে পারেননি। নেওয়াজের বলে লং অফে দিয়েছেন ক্যাচ (২৫ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৩৩)।
শামীম পাটোয়ারীর ব্যাট এদিন গর্জে ওঠেনি। অভিষিক্ত পাকিস্তান পেসার আহমেদ দানিয়েলকে লেট কাট করতে যেয়ে বোল্ড হয়েছেন (৪ বলে ১)। টেল এন্ডার তানজিম হাসান সাকিব সালমান মীর্জাকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে যেয়ে এক্সট্রা কভারে দিয়েছেন ক্যাচ (৪ বলে ৭)। আব্বাস আফ্রিদিকে লং অফে ছক্কা মেরে রিশাদও নিজেকে নিবৃত্ত রাখতে পারেননি। পরের বলে ইয়র্কারে হয়েছেন বোল্ড (৪ বলে ৮)।
দলকে একাই টেনে নিয়ে গেছেন জাকের আলী অনিক। ৩২ রানের মাথায় সালমান মীর্জার বলে খুশদিল শাহ'র হাত থেকে বেঁচে যাওয়া জাকের আলী অনিক এদিন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ফিফটি উদযাপন করেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করেছিলেন প্রথম ফিফটি (৪৩ বলে ৭২*)। মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে চারের চেয়ে ছক্কার আধিক্যের ইনিংসে (১ চার ৫ ছক্কা) ছক্কার চুমোয় ফিফটি পূর্ণ করেছেন জাকের আলী অনিক। ইনিংসের শেষ ওভারে আব্বাস আফ্রিদিকে মেরেছেন ২টি ছক্কা। সেই ওভারেই লং অনে থেমেছেন জাকের আলী (৪৮ বলে ১ চার ৫ ছক্কায় ৫৫)।
১৩৪ রানের চ্যালেঞ্জ দিয়ে পাকিস্তানকে শুরুতে ব্যাকফুটে নামিয়ে এনেছেন বাংলাদেশের দুই পেসার শরিফুল-তানজিম হাসান সাকিব। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-তে বাঁ হাতি পেসার শরিফুলের ৩ ওভারের স্পেলের (৩-০-৮-২) পাশে তানজিম হাসান সাকিবের ভয়ংকর ১ ওভার (১-০-১-২)! তাতেই স্কোরশিটে ১৭ উঠতে ৫ উইকেট হারিয়ে এলোমেলো হয়েছে পাকিস্তান।
আরও পড়ুন
মিরপুরের উইকেট ‘অগ্রহণযোগ্য’, যেখানে ‘ভুল’ পাকিস্তান কোচ হেসন |
![]() |
শুরুটা রান আউট দিয়ে। ইনিংসের ৬ ষ্ঠ বলে শেখ মেহেদীকে পয়েন্টে খেলে সাইম আইয়ুব হাফ পিচ থেকে স্ট্রাইক এন্ডে ফিরতে পারেননি। পারভেজ ইমনের থ্রো রিশাদ হয়ে লিটন রান আউটে ফিরিয়ে দিয়েছেন সাইম আইয়ুবকে (৪ বলে ১)। শরিফুল নিজের তৃতীয় বলে হারিস মোহাম্মদকে এলবিডাব্লুউতে ফিরিয়ে গোল্ডেন ডাক (১ বলে ০) এর লজ্জা দিয়েছেন।
শরিফুলের দ্বিতীয় ওভারে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচিং ডেলিভারি ফখর জামান পুল করতে যেয়ে ব্যাটে বলের আলতো স্পর্শ লেগেছে,তা আম্পায়ার তানভিরের চোখ এড়িয়ে গেলে লিটন যখন রিভিউ আপীল করেছেন, তখন রিভিউ চেক করার আগেই ফখর জামান ড্রেসিং রুমের দিকে হাঁটা শুরু করেছেন (৮ বলে ৮)।
শরিফুল ইন অ্যাকশন। ছবি-বিসিবি
বোলিং চেঞ্জে তানজিম হাসান সাকিবের হাতে বল দিয়েই ম্যাচটি হাতের মুঠোয় এনেছেন লিটন। তার তৃতীয় ডেলিভারিতে হাসান নেওয়াজ (৬ বলে ০), চতুর্থ বলে মোহাম্মদ নেওয়াজ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ। প্রথম স্পেলে (১-০-৪-০) উইকেটহীন শেখ মেহেদী দ্বিতীয় স্পেলে দেখেছেন উইকেটের মুখ। সালমান আগা (২৩ বলে ৯) সহজ ক্যাচ দিয়ে থেমেছেন।
লেগ স্পিনার রিশাদকে রিভার্স সুইপ করতে যেয়ে খুশদিল শাহ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দিয়েছিলেন ক্যাচ। পারভেজ ইমন সহজ সেই ক্যাচটি ড্রপ করেছেন। ১২ রানের মাথায় বেঁচে যাওয়া সেই খুশদিল শাহকে থামিয়েছেন শেখ মেহেদী ক্রস খেলতে যেয়ে এলবিডাব্লু হয়েছেন খুশদিল (১৮ বলে ১ বাউন্ডারিতে ১৩)।
আরও পড়ুন
পেস ত্রয়ীর গর্জনের পর ইমন ঝড়, পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ে শুরু সিরিজ |
![]() |
৮ম উইকেট জুটিতে ফাহিম আশরাফ-আব্বাস আফ্রিদি ম্যাচে ফেরার আভাস দিয়েছিলেন। ওই পার্টনারশিপকে ৪১ রানে থামিয়েছেন শরিফুল দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম বলে। তার লো বাউন্সি বলে আব্বাস আফ্রিদি হয়েছেন বোল্ড (১৩ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ১৯)।
১৫তম ওভারে রিশাদের অমিতব্যয়ী বোলিংয়ে ২০ রান এবং ১৯ তম ওভারে ১৫ খরচা শঙ্কার আলামত দিয়েছে। তবে ভয়ংকর হয়ে ওঠা ফাহিম আশরাফ ১৯তম ওভারের শেষ বলে লো বাউন্সি ডেলিভারিতে বোল্ড হলে (৩২ বলে ২ চার, ৪ ছক্কায় ৫১) ৮ রানে জিতে ১০ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের ট্রফি পুনরুদ্ধার করেছে বাংলাদেশ।