বিপিএল মাতিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। চাপের মুখে নেমে প্রথম ম্যাচেই খেলেন ৬৮ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। রাতারাতি যা তারকা খ্যাতি এনে দেয় জাকের আলি অনিককে। এরপর চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও খেলছিলেন দুর্দান্ত। খেলছিলেন বলার কারণ, এই পারফরম্যান্সই তাকে এবার লঙ্কানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচেও সুযোগ করে দিয়েছে।
প্রথমবারের মত ৫০ ওভারের ক্রিকেটে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের আজকের অবস্থানে আসার পেছনে বড় অবদান ছিল তার বোন শাকিলা ববির। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি শুনিয়েছেন জাকের আলির ক্রিকেটার হওয়ার শুরুর দিনগুলোর গল্প, ক্রিকেটের প্রতি তাদের পারিবারিক ভালোবাসা সহ আরও অনেক বিষয়ে।
টি-স্পোর্টসের পাঠকদের জন্য শাকিলা ববির সেই সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল :
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি সিরিজ পুরোটাই একরকম জাকের আলি অনিকময় হয়ে গিয়েছিল। মাঠে খেলছেন জাকের, আর প্রেসবক্সে আপনি প্রতিদিন আসছেন, সবাই কথা বলছেন, মেয়ে আবার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঘুরছে আশেপাসে, পুরো ব্যাপারটা কেমন লাগছে?
শাকিলা ববি: এটা আসলেই অনেক ভালো লাগার। সত্যি বলতে এমন একটা অবস্থা যে তৈরি হবে, এটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। প্রথম ম্যাচে জাকের রান করার পর পুরো পরিবেশটাই আসলে বদলে গেছে। আমার কাছে আবহটা একদম নতুন মনে হয়েছে। উপভোগ করার মত ছিল।
প্রশ্ন: এমন একটা দিনের স্বপ্ন দেখেছেন সবসময়, বলেছেন। তবে যদি জানতে চাইনা, কোনো একটা দিন বা একটা পর্যায়ে কি কখনও মনে হয়েছিল যে হয়তা স্বপ্নটা পূরণ নাও হতে পারে?
শাকিলা ববি: না, এক মুহূর্তের জন্যও এটা আমাদের মনে হয়নি। আমার যেমন মনে হয়নি, আমার পরিবারেরও এটা মনে হয়নি। ক্রিকেটের জন্য অনিকের নিবেদন আমরা খুব কাছ থেকে দেখেছি। ও যে কি পরিমাণ ত্যাগ স্বীকার করেছে, সেটা আমরা জানি। আমার কাছে মনে হয় পরিশ্রমের ফল একটু দেরিতে হলেও পাওয়া যায়। এখানে ধৈর্য্য একটা ব্যাপার ছিল, আর অনিক বরাবরই অনেক ধৈর্য্যশীল, সব ব্যাপারেই। ওর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে একটা সময়ে ফল আসবেই। তাই আমাদের একটা বিশ্বাস ছিল যে, ও যেহেতু এত পরিশ্রম করছে, তাই এটার ফল একদিন পাবেই। দেরিতে হলেও পাবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্রিকেটারদের উঠে আসার গল্পটা বেশ কষ্টের মধ্য দিয়ে আসারই হয়। অধিকাংশ পরিবারেই ক্রিকেটার কেউ হতে চাইবে, এটা খুব সহজে নেওয়া হয়নি। আপনি ভাইকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন ক্রিকেটার হওয়ার পথে। ভাই একদিন বড় খেলোয়াড় হবেনই, এই পোক্ত বিশ্বাসটা কীভাবে জন্মেছিল আপনার?
শাকিলা ববি: আমার ছোট ভাই অপু, মূলত যাকে দেখে অনিকের ক্রিকেটার হওয়ার শুরু, অপুকেই আমি অনিকের প্রথম কোচ বলব। অনিক শুরু থেকেই বল ধরা বা ব্যাটিং করার যে স্কিল ছিল, সেটা দেখে মনে হত, আরে ও তো এই বয়সেই এরকম খেলে। আর এই কারণেই পারিবারিকভাবে সবার এরকম সমর্থন দেওয়া। আর ছোট হওয়ায় সবাই ওকে একটু বেশি আদর করতাম আমরা। তাই সাপোর্টটা আরও বেশি ছিল। পরে দেখা গেল যে ও আসলেই ভালো খেলছে। ছোট থাকতে হবিগঞ্জের মাঠে যখন ও খেলত, তখনও ওর খেলা দেখতে অনেক মানুষ আসত। ওর ব্যাটিং দেখতে, ওর কিপিং দেখতে, কারণ ও উচ্চতায় ছোট, কিন্তু মারতেসে বড়দের মত।
প্রশ্ন: প্রথমদিন জাকের আলিকে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন, পরিবারের সবারও বলেছেন অবস্থাটা একই ছিল। মানে, আবেগ আপনাদেরও ছুয়ে যায়। প্রশ্নটা এখানেই, সংবাদ সম্মেলনে আপনার প্রশ্ন করা বা জাকেরর উত্তর দেওয়ায় যে পেশাদারিত্ব দেখা গেল, সেটা কিভাবে এল? সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের দুজনকেই দেখা গেছে নিরাবাগে, অথচ দিনটা আপনাদের জন্য সবচেয়ে আবেগের!
শাকিলা ববি: আমার কাছে মনে হয় জিনিসটা পারিবারিকভাবেই এসেছে। আব্বা আমাদের এই শিক্ষাটাই দিয়েছেন যে যখন যে কাজটা করবে, তখন সেটা ঠিকঠাক করতে। তখন অন্য কাজ করা যাবে না। যেমন, শৃঙ্খলার ব্যাপারটা আমরা পরিবার থেকেই শিখেছি। কারণ, আমাদের বাবা আর্মিতে ছিলেন। আমরা ঘুম থেকে ঠিক সকাল ৬টায় উঠতাম। এটা করতেই হত। খাওয়া-দাওয়া করে, দৌড়াদৌড়ি করলে দরকার হলে আবার ঘুমাও। কিন্তু নিয়ম মেনে চলতে হবে। একটা রুটিন ফলো করতে হবে। উনি এটা বলতেন। সেই ডিসিপ্লিনের ফলশ্রুতি হল এটা পেশাদারিত্বের ব্যাপারটা, আমার কাছে যা মনে হয়।
প্রশ্ন: ভাইকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন যে অনেক বড়, সেটা তাকে ক্রিকেটার বানানোর পেছনে আপনার নিবেদন, ত্যাগ স্বীকার দেখলেই বোঝা যায়। ক্যারিয়ার শেষে জাকেরের নামের পাশে আপনি কি কি অর্জন দেখতে চান? দলগত বা ব্যক্তিগত দুই দিক থেকেই?
শাকিলা ববি: ছয়টা ডিসমিসালের অনিকের কিন্তু একটা রেকর্ড আছে। এমন কিছু। অনিক কিন্তু উইকেটকিপিং খুব ভালো করে। আমি খালেদ মাসুদ পাইলটের খুব ভক্ত। উনার পর যদি কারো কিপিংয়ের ভক্ত হয়ে থাকি আমি, সেটা হল জাকের আলি অনিকের। আর সেটা অনেক আগে থেকে। ও কিপিং গ্লাভস সবচেয়ে ভালো করে। আমার কাছে মনে হয় ও উইকেটের পেছনে থাকলে বলও বেশি যায় সেখানে। ওর লাক ভালো। যেমন ঢাকা প্লাটুনের হয়ে একটি ম্যাচে, সেই ম্যাচে কিন্তু অনিক একাদশে ছিল না। (এনামুল হক) বিজয় চোটে পড়ল, তার জায়গায় নেমে অনিকের ছয়টা ডিসমিসাল হল। তাই কিপিং নিয়ে একটা আশা আছে যে ও একটা রেকর্ড করবে। আর হ্যাঁ, যদি ভালো স্কোর করতে পারে, অনেক করতে পারে, ভালো লাগবে।
প্রশ্ন: জাকের, আপনি বা আপনার ছোট ভাই অপু, ক্রিকেট এবং উইকেটকিপিংয়ের প্রতি পারিবারিকভাবে আপনাদের এই টান কীভাবে তৈরি হল?
শাকিলা ববি: এটা আমাদের জেনারেশন থেকে শুরু। আবার আব্বা আসলে অ্যাথলেট, উনি আর্মির মানুষ, উনি আসলে ক্রিকেট পছন্দ করতেন না। তাই উনার প্রশ্ন ছিল যে সারাদিনের খেলা এটা আবার কেমন খেলা। আমার ছোট ভাই অপু যখন ক্রিকেট খেলত, আব্বা তখন বাঁধা দিতেন যে ক্রিকেট খেলা যাবে না, খেললে ফুটবল খেলবা, ৯০ মিনিট খেলবা। উনার কথাটা ছিল এমনই। কিন্তু অনিক যখন খেলা শুরু করল, অনিক তো সবার ছোট, আর সবসময় তো ছোটদের আবদারটা রাখা হয়। অনিক বরাবরই আবদারগুলো আমার মাধ্যমে করাত। আর আব্বা আমার কথা শুনতেন, পরামর্শ বলেন আর এমনি কথাই বলেন। ক্রিকেটের সাথে সখ্যতা আসলে আমাদের জেনারেশন থেকে তৈরি। আমার ছোট ভাই অপুকে দেখে অনিক, এরপর আমি, ছোটবোন আসল।
আর কিপিংয়ের বিষয়টা হল, আমি তো মিডিয়াম পেস বোলিং করতাম। এরপর দেখলাম এতে কষ্ট হয়, হয়ে গেলাম অফ স্পিনার। একবার আমাদের দলে উইকেটকিপারের সঙ্কট হল, তখন আমি গিয়ে দাঁড়ালাম। জিনিসটা হল, আমি আর আমার ভাই যেহেতু উইকেটকিপার, তাই কিপিংয়ে আমার হাতটাও সেভাবেই যেত।
প্রশ্ন: ভাইয়ের সুবাদে গর্বিত বোন এখন সব জায়গায় পরিচিত হচ্ছেন জাকেরের বোন হিসেবে। অনুভূতিটা কেমন?
শাকিলা ববি: অনুভূতিটা আসলে খুব ভালো। আমার কাছে মনে হয় বিগত কয়েকদিনে আমার যে পরিমাণ ছবি তোলা হয়েছে, জাকের আলি অনিকের বোনের সাথে ছবি তুলবে বলে, এই জিনিসটা গত কয়েকদিনে এত শুনেছি, এটা অনেক ভালো লাগার। আবার এটা নিয়ে একটা ভয়ও আছে। যখন খারাপ করবে, তখন কিন্তু আমাকেও দোষারোপ করা হবে যে, বোন বেশি কথা বলে, তাই ভাই রান করতে পারে না। সামনে এমন দিনও আসবে, আমি এটা নিয়ে প্রস্তুত আছি।
তবে হ্যাঁ, এই অনুভূতিটা আসলেই অন্যরকম। যেমন ইএসপিএনে আমাদের ভাই-বোনকে নিয়ে নিউজ করা হয়েছে, এটা আমার জন্যে একটা বড় অর্জন। বাংলাদেশের সব মিডিয়া, আপনারা এটা কভার করেছেন। আর বিসিবি আমাকে যে সম্মানটা দিয়েছে, সেটার জন্য আমি আসলেই কৃতজ্ঞ। অনিকের অভিষেক হয়েছে, প্রথম সাক্ষাৎকারটা তারা আমাকে দিয়ে করিয়েছে। আসলেই অসাধারণ একটা অনুভূতি। আপনাদের টি-স্পোর্টসের মাহফুজ ভাইয়ের ভিডিও আমি নিয়মিত দেখি, উনি যেদিন আমার সাথে কথা বললেন, সেদিন খুব ভালো লেগেছিল।
গল টেস্টে চতুর্থ দিন বাংলাদেশ দলকে যেমনটা দেখতে চেয়েছেন সমর্থকরা, তেমনটাই দেখতে পেরেছেন। তৃতীয় দিন শেষে ৩৬৪/৪ স্কোর নিয়ে লিডের স্বপ্ন দেখেছে শ্রীলঙ্কা। অফ স্পিনার নাঈম হাসানের ভয়ংকর এক স্পেলে (৩.৩-০-৫-৩) সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ১০ রানের লিড নিয়ে দিনের শেষ দুই সেশন নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেয়ার পরীক্ষাটা ভালই দিয়েছে বাংলাদেশ টপ ও মিডল অর্ডাররা। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ান শান্ত ৫৬ এবং মুশফিক২২ রানে আছেন অবিচ্ছিন্ন। প্রথম ইনিংসে ২৬৪ রানের পার্টনারশিপে উদ্বুদ্ধ এই জুটি ইতোমধ্যে যোগ করেছেন ৪৯ রান। চতুর্থ দিন শেষে ১৮৭ রানের লিড নিয়ে গল টেস্টের চিত্রনাট্য তৈরি করেছে বাংলাদেশ।
অলৌকিক কোনো দুর্ঘটনা না হলে ড্র'র দিকে ধাবিত এখন টেস্টটি।
২০১৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে চট্টগ্রামের ছেলে নিজের হোম গ্রাউন্ডে টেস্ট অভিষেকে করেছিলেন দারুণ কৃতি। টেস্ট অভিষেকে চেনা মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পেয়েছিলেন ৫ উইকেট (৫/৬১)। ২০২০সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ও ৫ উইকেটের (৫/৮২) কৃতি আছে তার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের হোম গ্রাউন্ড চট্টগ্রামে ২০২২ সালে করেছেন ক্যারিয়ারসেরা বোলিং (৬/১০৬)। অথচ, টেস্ট দলে তাইজুল-মিরাজ অপরিহার্য, ব্রাত্য সেখানে নাঈম হাসান। ৭ বছরে টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১৩টি। বিদেশের মাটিতে এর আগে একবারই কেবল সুযোগ পেয়েছেন, ২০১৯ সালে কনকাশন সাব হিসেবে পিঙ্ক বলের টেস্টে খেলার সেই সুযোগ পেলেও বল হাতে নিতে পারেননি।
অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ইনজুরিতে না পড়লে গল টেস্টে নাঈম হাসানের একাদশে থাকার সম্ভাবনা ছিল না। সেই ব্যাক আপ অফ স্পিনারই অসাধ্য সাধন করেছেন। বিদেশের মাটিতে এই প্রথম টেস্টে বল হাতে নিয়ে দেখেছেন ইনিংসে ৫ উইকেটের মুখ। চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে ৯৭ রান যোগ করে শ্রীলঙ্কা যখন লিডের সম্ভাবনা দেখেছে, তখনই নাঈম হাসান সে সম্ভাবনা নাস্যাৎ করে দিয়েছেন। লাঞ্চ ব্রেকের পর মাত্র ২০ রানে শ্রীলঙ্কার শেষ ৪ উইকেট গেছে উড়ে, সেই ৪টি উইকেটের ৩টিই নাঈমের। লাঞ্চের পর চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে সেঞ্চুরির পথে পাঁ বাড়ানো কামিন্দু মেন্ডিজকে মিডল এন্ড অফ স্ট্যাম্পে পিচিং ডেলিভারিতে ফ্লিক শটের ফাঁদে ফেলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন। ৮৭ রানে কামিন্দুকে থামিয়ে দিয়ে ৮৪ রানের পার্টনারশিপ ভেঙ্গে ওই ওভারের শেষ বলে কুইকারে বোল্ড করেছেন থারিন্দু রত্নায়েককে (০)। নিজের এক ওভার বিরতি দিয়ে টেল এন্ডার আসিথা ফার্নান্ডোকে (৪) রিভার্স সুইপের পাতা ফাঁদ ফেলে বোল্ড করেছেন।
তৃতীয় দিন নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কা ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলে চতুর্থ দিন পূর্ণ করেছেন ক্যারিয়ারের ৪র্থ ৫ উইকেট (৪৩.২-৪-১২১-৫)। পেসার হাসান মাহমুদ চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনের গর্জনে পেয়েছেন ২ উইকেট। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (১৯) এবং কুশল মেন্ডিজকে (৫) ফিরিয়ে দিয়েছেন উইকেটের পেছনে। যে দুটি উইকেটের ভাগীদার উইকেট কিপার লিটন। দুটি ক্যাচই নিয়েছেন লিটন বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে! নাঈম হাসানের ৫ উইকেটের পাশে (৫/১২১) হাসান মাহমুদের ৩ উইকেট (৩/৭৪)। তাতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয়বারের মতো প্রথম ইনিংসে লিড নিতে পেরেছে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে যে ব্যাটাররা ছিলেন অফ ফর্মে, দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের দিকে চোখ ছিল সবার। কিন্তু ওপেনার বিজয় জানিয়ে দিলেন তিনি টেস্ট খেলতে ইচ্ছুক নন। টেস্টে ১ যুগে মাত্র ৭ টেস্ট খেলার সুযোগ নিয়ে এতোদিন নির্বাচক এবং টিম ম্যানেজমেন্টের উপর বিরক্তিবোধ এখন আর প্রকাশ করার উপায় নেই তার। গল-এ ব্যাটিং স্বর্গে প্রথম ইনিংসে ০'র পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ রানে থেমেছেন। প্রবথ জয়সুরিয়ার আউটসাইড অফ-এ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ। মুমিনুল থেমেছেন ১৪ রানে, থারিন্দুর বলে সুইপ করতে যেয়ে ব্যাট হয়ে হেলমেটে বল লেগে দিক পরিবর্তন করে শর্ট পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসের হতাশা কাটিয়ে সেঞ্চুরির পথে ছিলেন সাদমান। তবে ৬ষ্ঠ ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে পূর্ণ করতে পারেননি এই ওপেনার। শ্রীলংকা পেসার মিলান রত্নায়েকের বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে ব্যাক প্যাডে লেগেছে বলের আঘাত, এলবিডাব্লুউতে থেমেছেন সাদমান ৭৬ রানে। ১২৬ বলের মোকাবেলায় ৭টি বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি এই ইনিংসে।
চতুর্থ দিনে পিচে বল পড়ে খানিকটা নিচু বাউন্স হয়েছে। আনইভেন বাউন্সও দেখা গেছে। ৫ম দিনে স্পিনাররা ছড়াতে পারে আতঙ্ক, তেমন পূর্বাভাসই পাওয়া যাচ্ছে। তবে চতুর্থ ইনিংসে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জের আগে তৃতীয় ইনিংসে নিজেদের ব্যাটিংয়ের দিকে মনোনিবেশ করাটাই উত্তম। পঞ্চম দিনটি হোক আরও উজ্জ্বল। উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরির কৃতি গড়ুক শান্ত-মুশফিক। গল টেস্টের শেষ দিনে সেদিকেই তাকিয়ে এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে চোট নিয়ে খেলেছেন গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। সেই মঞ্চে শেষ হাসি হাসা টেম্বা বাভুমাকে আপাতত অবশ্য থাকতে হবে মাঠের বাইরেই। চোটের কারণে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার আসছে দুই টেস্টের সিরিজ থেকে ছিটকে গেছেন অধিনায়ক বাভুমা।
ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তার পরিবর্তে এই সিরিজে দলের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞ স্পিনার কেশভ মহারাজ।
বাভুমাহীন স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন ৫ নতুন মুখ। এই সিরিজে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়কেও। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে সেঞ্চুরিয়ান এইডেন মার্করাম ও অভিজ্ঞ পেসার কাগিসো রাবাদা। আর প্রথম টেস্ট না খেললেও দ্বিতীয় ম্যাচে দলে থাকবেন ফাস্ট বোলার লুংগি এনগিডি।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে দ্বিতীয় ইনিংসে রান তাড়ায় ইনিংসের শুরুতে এক রান নিতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ে বাভুমার। কয়েক দফায় মাঠেই চিকিৎসা নেওয়ার পর চালিয়ে যান অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। খুঁড়িয়ে খুড়িয়েই দলকে জেতানোর পথে খেলেন ৬৬ রানের দারুণ এক ইনিংস। ম্যাচ শেষে তিনি জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শ অমান্য করে দলের প্রয়োজনে মাঠে থাকতে চেয়েছিলেন।
তবে সেই চোট থেকে এখনও সুস্থ না হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ এবার মানতেই হচ্ছে বাভুমাকে। ফলে থাকতে হবে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। আগামী শনিবার থেকে শুরু হবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের টেস্ট সিরিজ।
দক্ষিণ আফ্রিকা স্কোয়াড: ডেভিড বেডিংহ্যাম, ম্যাথু ব্রিটজকে, ডিওয়াল্ড ব্রেভিস, করবিন বোশ, টনি ডি জর্জি, জুবায়ের হামজা, কেশভ মহারাজ (অধিনায়ক), কোয়েনা মাফাকা, উইয়ান মুল্ডার, লুহান্দ্রে প্রিটোরিয়াস, লেসেগো সেনোকোয়ানে, প্রেনেলান সুব্রায়েন, কাইল ভেরেন, কডি ইউসুফ, লুংগি এনগিডি (শুধুমাত্র দ্বিতীয় টেস্ট)।
প্রথম তিন দিন যেভাবে দাপট দেখিয়েছেন ব্যাটাররা, তাতে শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল লিডের দিকেই। তবে বাঁধ সাধলেন নাঈম হাসান। তরুণ এই স্পিনারের ফাইফারে শক্ত অবস্থানে থেকেও পাঁচশ ছোঁয়া হলো না স্বাগতিকদের। ক্রমেই স্পিন ধরা উইকেটে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে কিছুটা চ্যালেঞ্জ থাকলেও শাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটিতে লিডটা বেশ বাড়িয়ে নিল বাংলাদেশ।
গল টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ১৭৭ রান, লিড ১৮৭ রানের। এর আগে শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে করতে পারে ৪৮৫ রান।
শ্রীলঙ্কা এই স্কোরে গুটিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় অবদান রেখেছেন নাঈম। ক্যারিয়ারের এর আগে কখনই বিদেশের মাটিতে পাঁচ উইকেট না পাওয়া এই অফ স্পিনার দিনের শুরু থেকেই পেয়েছেন টার্ন। সাথে নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেন্থ বজায় রেখে ব্যাটারদের চাপে রেখেছেন একপ্রান্ত থেকে। আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলাম অবশ্য সেভাবে কাজে লাগাতে পারেননি টার্ন।
এদিন নাঈমের প্রথম উইকেটে অবশ্য কৃতিত্ব বেশি পাবেন লিটন দাসই। লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারি ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ব্যাট ছুঁয়ে চোখের পলকেই চলে যায় তার গ্লাভসে। এরপর কুসাল মেন্ডিসের উইকেটেও দেখান কিপিংয়ের মুন্সিয়ানা।
হাসান মাহমুদের লেগ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়েছিলেন কুসাল, কানায় লেগে তার লেগ সাইড দিয়ে ছিল বাউন্ডারি হওয়ার পথেই। তবে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে দুর্দান্ত এক ক্যাচে তাকে বিদায় করেন লিটন।
এরপর বাংলাদেশের বোলারদের চাপে ফেলে সপ্তম উইকেটে ৮৪ রান যোগ করেন কামিন্দু মেন্দিস ও মিলান রত্নেয়েকে মিলে। ইনিংসে চমৎকার বল করা হাসান শেষ পর্যন্ত ভাঙেন এই জুটি, ৩৯ রানে রত্নেয়েকেকে বোল্ড করে।
এরপর বড় উইকেটটা পান নাঈম। সেঞ্চুরির পথে থাকা কামিন্দু (৮৭ রান) উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান তিনি। ১৫ রানে শেষ চার উইকেট হারিয়ে ৪৮৫ তেই থামে শ্রীলঙ্কার ইনিংস। ১২১ রানে ৫ উইকেট নেন নাঈম।
প্রথম ইনিংসের মত দ্বিতীয় ইনিংসেও দলকে হতাশ করেন এনামুল হক বিজয়। অভিজ্ঞ এই ওপেনার শুরু থেকেই ছিলতা জড়তাগ্রস্ত। প্রবাথ জয়াসুরিয়ার বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে করেন মাত্র ৪ রান। তবে আরেক ওপেনার শাদমান চাপ সরান ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে।
তবে এবারও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি মুমিনুল হক। অভিজ্ঞ এই ওপেনার সুইপ করতে গিয়ে ফেরেন ১৯ রানে। লিড বেশ না হওয়ায় টার্নিং উইকেটে বাংলাদেশের সামনে তখন বিপদের শঙ্গা ছিলই কিছুটা।
তবে সাবলীল ব্যাটিংয়ে সেটা সামাল দেন শাদমান ও শান্ত মিলেন। ফিফটি পারে সেঞ্চুরির পথে থাকা শাদমানকে থামতে হয় ৭৬ রানে। তবে মিলান রত্নানেয়েকের প্রথম শিকার হওয়ার আগে শান্তর সাথে যোগ করেন গুরুত্বপূর্ণ ৬৮ রান।
প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ায়ন শান্ত (৫৬*) ও মুশফিকুর রহিম (২২) মিলে অনায়াসেই পার করেন দিনের বাকি অংশ। পঞ্চম দিনে ম্যাচের ফলাফল কোন দিকে যাবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে এই জুটির ওপর।
খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার আগেই নাম লিখিয়েছিলেন কোচিংয়ে। সেই ধারায় সাবেক অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইন তার কোচিং ক্যারিয়ারে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছেন। চলতি বছরের পরের অংশে তিনটি সিরিজে অস্ট্রেলিয়া 'এ' দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।
পেইন বর্তমান বিগ ব্যাশ লিগে অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এবার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) তাকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি অস্ট্রেলিয়া ছেলেদের 'এ' দলের পাশাপাশি নারী দলের সাপোর্ট স্টাফ হিসেবেও কাজ করবেন। সাথে চালিয়ে যাবেন অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের কোচিংয়ের দায়িত্বও চালিয়ে।
আগামী জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে শ্রীলঙ্কা 'এ' দলের বিপক্ষে তিনটি ৫০ ওভারের ম্যাচ এবং দুটি চার দিনের ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দল। এই সিরিজ দিয়েই প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব শুরু করবেন পেইন।
এরপর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ভারত সফরে সাদা ও লাল বলের সিরিজে দায়িত্ব সামলাবেন তিনি। এরপর অক্টোবরের শেষের দিকে ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিপক্ষে একটি চার দিনের ম্যাচেও পেইন অস্ট্রেলিয়ার ‘এ’ দলের কোচ হিসেবে থাকবেন।
কোচিং ক্যারিয়ার ছোট হলেও এরই মধ্যে তা বেশ সমৃদ্ধই পেইনের। ২০২৩ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠের অল ফরম্যাট সিরিজে অ্যাডাম ভোগেসের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেন তিনি।
আরও রয়েছে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে সিরিজে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কোচ লকলান স্টিভেন্সের সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা। এছাড়াও গত বছর ভারত জাতীয় দলের বিপক্ষে প্রাইম মিনিস্টার একাদশের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পেইন।
২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন পেইন। আর ২০২৩ সালে অবসর নেন সব ধরণের ক্রিকেট থেকে। এরপর থেকে সক্রিয় আছেন কোচিংয়ে।
লম্বা সময় ধরে ব্যাটে নেই রানের দেখা। অভিজ্ঞতার বিচারে তবুও বারবার দলে ধরে রাখছিলেন জায়গা। শেষ পর্যন্ত খেলেছেন ওপেনার হিসেবেও। তাতেও আর শেষ রক্ষা হলো না মার্নাস লাবুশেনের। ফর্মহীনতার কারণে ডানহাতি এই ব্যাটারকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রথম টেস্টে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া পাবে না আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার স্টিভেন স্মিথকেও। চোটের কারণে খেলতে পারবেন না এই তারকা ব্যাটার। তাদের দুজনের জায়গায় প্রথম ম্যাচের দলে এসেছেন স্যাম কনস্টাস ও জশ ইংলিশ।
বার্বাডোজে আগামী ২৫ জুন শুরু হবে প্রথম টেস্ট। তার পাঁচদিন আগেই এই ঘোষণা এসেছে, যা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপে বড় পরিবর্তনেরই আভাস দিচ্ছে। সবশেষ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা ব্যাটিং অর্ডারে আসতে যাচ্ছে রদবদল।
সেই ফাইনালে অনেকটা সময় ধরেই রানের জন্য ধুঁকতে থাকা লাবুশেনকে দলে রাখা নিয়ে ছিল প্রশ্ন। তবে শেষ অবধি টিকে যান ওপেনার হিসেবে। তবে সেই ভূমিকাতেও ছন্দ ফিরে পাননি তিনি। দুই ইনিংসে করেন ১৭ ও ২২ রান। লাল বলের ক্রিকেটে গেল দুই বছর ধরেই ফর্মহীনতার মধ্যে আছেন তিনি, যা তাকে এবার দল থেকেই ছিটকে দিয়েছে।
আর স্মিথ সেই ফাইনালের তৃতীয় দিন স্লিপে টেম্বা বাভুমার একটি ক্যাচ ধরতে গিয়ে ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে আঘাত পান। সার্জারির প্রয়োজন না হলেও তাকে অন্তত ৮ সপ্তাহের জন্য স্প্লিন্ট পরতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকরা আশাবাদী, টেস্ট সিরিজের পরবর্তী অংশে তিনি দলে ফিরতে পারবেন।
লাবুশেন বাদ পড়ায় ওপেনার হিসেবে আবার দলে ফিরছেন কনস্টাস। এই ফরম্যাটে তার অভিজ্ঞতা ভারতের বিপক্ষে দুটি টেস্টে, যার প্রথমটিই ছিল তার অভিষেক। আর শুরুটা করেন ৬৫ বলে ৬০ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস দিয়ে। এরপর আর মাঠে নামা হয়নি তার।
আর মিডল স্মিথের পজিশনে চারে খেলবেন ইংলিস। কিপার-ব্যাটার হলেও এই টেস্টে তাকে দেখা যাবে স্পেশালিষ্ট ব্যাটার হিসেবেই। চলতি বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে টেস্ট অভিষেকেই করেন সেঞ্চুরি। এবার চোট সমস্যার জন্য নিজেকে প্রমাণের আরেকটি সুযোগ পাচ্ছেন ইংলিস।
৬ দিন আগে
৬ দিন আগে
৯ দিন আগে
১৯ দিন আগে
২০ দিন আগে
২০ দিন আগে
২০ দিন আগে
২০ দিন আগে
২৪ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৬ দিন আগে