১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৫ এম
একেই হয়তো বলে নিয়তি। একটা দল যারা কিনা গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় ছিল তারাই কিনা আফ্রিকান কাপ অফ নেশন্সের চ্যাম্পিয়ন। শুধু কি তাই? এমন একজনের গোলে আইভোরি কোস্ট ফাইনালটা জিতলো যিনি কিনা বছর খানেক আগেও ছিলেন হাসপাতালের বেডে। ক্যানসারের সাথে পাঞ্জা লড়ে এসে নিজ দেশকে সেবাস্তিয়ান হলার পরালেন আফ্রিকান কাপ অব নেশন্সের মুকুট।
এর থেকে সুন্দর শেষ হয়তো কেউ চাইতো পারতো না। বিখ্যাত টিভি সিরিজ ‘ব্রেকিং বেড’ এর শেষটাও হয়তো এতটা রোমাঞ্চ ছড়ায়নি। এতোটা আবেগ ঝরায়নি। ফুটবলীয় ঈশ্বর হয়তো নিজ হাতেই এমন একটা গল্প সাজিয়েছেন। হাসিয়েছেন, আবার কাঁদিয়েছেন। একই রাতে লিখেছেন দুটি ফিরে আসার গল্প। আইভোরি কোস্টের আফকন জেতা ও এক ক্যানসার জয়ী ফুটবল যোদ্ধার। আইভোরি কোস্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়া যেন হার মানাবে কোনো রুপকথার গল্পকেও। সেই গল্পের নায়ক নিশ্চিত ভাবেই সেবাস্তিয়ান হলার। লাইমলাইটের আড়াল হয়ে যাওয়া হলার ফিরে এসেছেন আবারও আলোতে। বনে গেছেন শিরোনামের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
সেবাস্তিয়ান হলারতো একজন হার না মানা যোদ্ধা। এদিন অবশ্য চোখের পানিটা আটকে রাখতে পারেননি তিনি। ক্যানসার জয় করে ফিরে এসেও চোখে খুব একটা জল দেখা যায়নি এই স্ট্রাইকারের, তবে নিজ দেশকে এমন একটা জয় উপহার দেওয়া পর আর নিজেকে সামলাতে পারেননি। নিজেও কেঁদেছেন কাঁদিয়েছেন হাজারো সমর্থকদের।
অনেক দিন ধরেই তো নিজের সাহসী চেহারাটা দেখিয়ে আসছেন। ফাইনালে জয়ের নায়ক বনে যাওয়ার পর দেখা মিললো অন্য এক হলারের। চোখের কোণে জল নিয়ে দিয়েছেন সাক্ষাৎকার। শুনিয়েছেন নিজেদের বীরত্বের কথা,“অনেক দিন থেকেই আমরা এমন কিছুরই স্বপ্ন দেখে আসছি। ম্যাচটা আমাদের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। যেই আনন্দ এখন পুরো দেশে দেখা যাচ্ছে এটা তাদের প্রাপ্য। আশা করছি এটা মানুষের জীবনে ভালো কিছুই নিয়ে আসবে।“
অথচ এর শুরুটা ছিল পুরো ভিন্ন। গল্প হতে পারতো অন্যরকম। যেখানে স্বাগতিক আইভোরি কোস্টের গ্রুপ পর্বে টানা দুই হারে বিদায় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। দলের এমন বাজে ফর্মে চাকরি যায় দলটির হেড কোচের। এরপর অবশ্য অনেকটা ভাগ্যের ছোঁয়ায় ১৬ নম্বর দল হিসেবে তারা নিশ্চিত করে নকআউট পর্ব। সেখান থেকে একে একে সেনেগাল,মালি, ডি আর কঙ্গোকে হারিয়ে তারা জায়গা করে নেয় ফাইনালে।
যেখানে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় শক্তিশালী নাইজেরিয়াকে। যাদের বিপক্ষে তারা গ্রুপ পর্বে হারের মুখ দেখে। এদিনও শুরুটা করেছে সেই নাইজেরিয়া। তবে ফ্রাঙ্ক কেসির গোলে সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা। এরপরের গল্প পুরোটাই হলারের। যখন তাকে মাঠ থেকে তুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন কোচ তখনই নিজের ম্যাজিকটা দেখালেন। দারুণ এক গোল করে আইভোরি কোস্টকে করলেন আফকনের চ্যাম্পিয়ন।
অথচ এর আগের রাস্তাটা তার জন্য ছিল অনেকটা সাত সাগর তের নদী পাড়ি দেবার মতই।
যার শুরুটা ২০২২ সালে। আয়াক্সের হয়ে দুর্দান্ত একটা মৌসুম কাটিয়ে সবার নজর কাড়েন এই স্ট্রাইকার। ২০২১/২২ মৌসুমে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের সবগুলো ম্যাচে করেন গোল। ২০২২ সালের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ১৩ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে যোগ দেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে। সেখানে গিয়ে সপ্তাহ দুয়েক বাদেই পান নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় দুসংবাদটা।
নতুন মৌসুমের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ডর্টমুন্ড ছিল সুইজারল্যান্ডে। প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামার আগে হঠাৎ কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন হলার। এরপর সেখান থেকে তার ঠিকানা হাসপাতাল। জানতে পারেন আক্রান্ত হয়েছেন ক্যান্সারে। এরপরের গল্প তো সবারই জানা। তার পুরোনো দল আয়াক্স থেকে শুরু করে অনেক ফুটবলারকেই পাশে পেয়েছিলেন তিনি।
টানা ৬ মাস লড়াই করেছেন ক্যান্সারের সাথে। মাঝেমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যেতো তার হাসপাতালে শুয়ে থাকার ছবি। এরপর তিনি ফিরেছেন। ক্যান্সারকে হার মানিয়েছেন। দমে না যাওয়ার অদম্য ইচ্ছেতেই মাঠে নেমেছিলেন। ক্যানসার যেই কষ্ট তাকে দিয়েছে সেই ক্ষোভ থেকে ‘ফা* ক্যানসার’ নিজের জুতায় এমন লেখা নিয়ে মাঠেও নেমেছিলেন। যা বেশ সাড়াই ফেলে দিয়েছিল তখন।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি আবারো যোগ দেন ডর্টমুন্ডের সাথে। আবারও শুরু করেন নিজেকে ফিরে পাওয়ার মিছিল। ফেব্রুয়ারিতে ৮ মাস পর দেখা পান নিজের প্রথম গোলের। সেখানেও আছে ফুটবল শ্রষ্ঠার এক নিদারুণ দর্শনই। ক্যানসারকে হারিয়ে যেদিন নিজের প্রথম গোলটা করলেন সেদিনটাই ছিল বিশ্ব ক্যানসার দিবস।
এরপর আস্তে আস্তে ফিরে পেতে শুরু করেন নিজেকে। সেই মৌসুমে ১৯ ম্যাচ খেলে করেন ৯ গোল। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে লিগ জেতানোর রাস্তাতে রেখেছিলেন এই ফরোয়ার্ড। ১০ বছর ধরে বুন্দেসলিগাকে নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা বায়ার্নকে টপকে লিগটা নিজেদের করেই ফেলেছিল ডর্টমুন্ড। তবে শেষ ম্যাচে এসে তারা আর মেলাতে পারেনি সমীকরণ। মাইঞ্জের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ড্র করে খুইয়ে বসে লিগ।
আর তাতে হৃদয় ভাঙে হলারের। সেই ম্যাচ হারার পর বলেছিলেন “ক্যান্সারের খবরটা শোনার পরও এতটা কষ্ট হয়নি যতটা এভাবে লিগ হারানোর পর হচ্ছে।“ সেই কষ্টটা তিনি এসে ভুললেন জাতীয় দলের জার্সিতে। নিজ দেশে এসে, বনে গেলেন দেশের নায়ক একই সাথে লিখলেন ফিরে আসার দারুণ এক গল্পও।
ক্যানসারকে যেভাবে পেছনে ফেললেন, যেভাবে নিজের অদম্য শক্তি দিয়ে ফিরে আসলেন, সেবাস্তিয়ান হলারের সেই গল্প হয়তো দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বহুদিন। তাই বলা যায় সেবাস্তিয়ান হলার, একজন ফুটবল যোদ্ধা।
২৭ জুন ২০২৫, ৬:১২ পিএম
২৭ জুন ২০২৫, ৪:৩৩ পিএম
২৭ জুন ২০২৫, ১:১৬ পিএম
গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে আর মাত্র ঘণ্টা কয়েক বাদে শুরু হবে ক্লাব বিশ্বকাপের নকআউট পর্ব। অনেকটা পথ পারি দিলেও ৩২ দলের এই টুর্নামেন্ট নিয়ে সমালোচনার মাত্রা যেন কমছেই না। মাঠের অবস্থা কিংবা বাজে আবহওয়া সব কিছুই নিয়েই হয়েছে সমালোচনা। এবার সেখানে নাম লিখিয়েছেন সাবেক লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপও। তার মতে, এই বিশ্বকাপ আয়োজন ফুটবলের সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্তগুলোরই একটি।
যদিও ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে সমালোচনা নতুন নয়। এই পরিকল্পনা সামনে আসার পর থেকেই সমালোচনা চলছে। যার মূল কারণ হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে ক্লান্ত একটি মৌসুম শেষের পর ফুটবলারদের বিশ্রাম না পাওয়ার দিকটি। ক্লপও মনে করিয়ে দিয়েছেন সে কথায়। ঠাঁসা সুচির মাঝে এমন টুর্নামেন্ট ফুটবলারদের নতুন চোটে ফেলবে বলেই মনে করছেন অনেকেই। সম্প্রতি যা বলেছেন বার্সেলোনা তারকা রাফিনিয়াও।
ক্লপও এতে দিয়েছেন সম্মতি।
“যাদের খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, তারাই এমন ধারণা নিয়ে আসে। যাদের অন্য কিছু করার নেই, কেবল তারাই এমন সব কিছু চিন্তা করে। দিন শেষে ফুটবলটাই আসল, অন্য সবকিছু পরে। সেজন্য আমার মনে হয় ক্লাব বিশ্বকাপ ফুটবলে বাস্তবায়ন হওয়া ধারণার মধ্যে সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত।”
গত ১৪ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসেছে এবারের ক্লাব বিশ্বকাপ, চলবে ১৩ জুলাইয়ের পর্যন্ত। এক মাস বাদেই মাঠে গড়াবে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগ। যা স্বভাবতই প্রভাব ফেলবে ফুটবলারদের উপর। পূর্ণ বিশ্রাম না পাওয়াটা তাদের বেশ ভালোভাবে ভোগাবে বলেই মানছেন ক্লপ।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ওয়েল্টের সঙ্গে আলাপ কালে দিয়েছেন সেই ইঙ্গিত।
“এনবিএ তারকারা বড় অঙ্কের অর্থ আয় করে প্রতি বছর। তবে তারা বছরে চার মাস বিশ্রামের সুযোগ পায়। তবে ফুটবলারদের সেটা হচ্ছে না। ক্লাব বিশ্বকাপে যারা খেলছে তারা রিকভারি করার সময়টাও পাবে না। যা তাদের শাররিক ও মানসিক চাপে ফেলবে।”
গেল মৌসুমে ফুটবলাররা বিশ্রামের সুযোগ পায়নি মোহাদেশীয় টুর্নামেন্টের কারণে, চলতি মৌসুমে ক্লাব বিশ্বকাপের আয়োজন বেঘাত ঘটিয়েছে, আগামী মৌসুমে আছে বিশ্বকাপ। তাতে ফুটবলাররা বিশ্রাম পাওয়া যেন দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সাক্ষাৎকারে সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন ক্লপ।
আপনি এই নিউজের এই লাইনে যে সময়ের এসেছেন, ঠিক সেই সময়ের মধ্যে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো কত টাকা আয় করতে পারেন? আন্দাজ করাটা একটু কঠিনই। তবে আল নাসরের সাথে নতুন চুক্তিতে পর্তুগাল তারকাকে প্রতি সেকেন্ডে ১৩ ইউরো করে গুনছে আল নাসর, খবর এমনটাই। ৪০ বছর বয়সী একজন ফুটবলারের জন্য যা অবিশ্বাস্যই বটে!
এক পর্যায়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত আল নাসরেই থেকে গেছেন রোনালদো। গত বৃহস্পতিবার সৌদি প্রো লিগের ক্লাবটির সাথে দুই বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করেছেন, যা চলবে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। আর এই চুক্তিতে পর্তুগাল তারকার জন্য রাখা হয়েছে চোখধাঁধানো সব বেতন-বোনাসের অর্থ।
নতুন চুক্তিতে বছরে রোনালদোর বেতন হবে ৪০০ মিলিয়ন ইউরো। মাসের হিসেবে ৩৩.৩৪ মিলিয়ন ইউরো। প্রতি দিন রোনালদো পকেটে পুরবেন ৭.৬ মিলিয়ন ইউরো। ঘন্টা হিসেবে সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকার আয় হবে ৪৬ হাজার ৩০০ ইউরো। প্রতি মিনিটে পাবেন ৭৭২ ইউরো। আর প্রতি সেকেন্ডে তার নামের পাশে যোগ হবে ১৩ ইউরো!
শুধু এখানেই থেমে নেই ৫ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী রোনালদোর প্রাপ্তির তালিকা। চুক্তিতে রাখা হয়েছে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য শর্ত, যার মধ্যে রয়েছে সাইনিং বোনাস। তাতে প্রথম বছরে পাবেন ২৪.৫ মিলিয়ন ইউরো, আর দ্বিতীয় বছর ৩৮ মিলিয়ন ইউরো। এছাড়াও ক্লাবের মালিকানার একটি অংশও রোনালদোকে দেওয়া হয়েছে বলে খবরে এসেছে।
পারফরম্যান্স বোনাসও রাখা হয়েছে রোনালদোর জন্য। সর্বোচ্চ গোলের জন্য গোল্ডেন বুট জিতলে পাবেন ৪ মিলিয়ন ইউরো। আল নাসর সৌদি প্রো লিগ জিতলে পর্তুগাল অধিনায়ক পাবেন ৮ মিলিয়ন ইউরো। আর ক্লাবটি এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টারে গেলে তিনি পাবেন ৬.৫ মিলিয়ন ইউরো।
আল নাসরের জার্সিতে প্রতিটি গোলের জন্য রোনালদো পাবেন ৮০ হাজার ইউরো। আর অ্যাসিস্ট করলেই মিলবে ৪০ হাজার ইউরো। চুক্তির দ্বিতীয় বছরের এই দুই ক্ষেত্র থেকেই অর্থের পরিমাণ বাড়বে ২০ শতাংশ করে। এছাড়া জেট বিমানে ভ্রমণের ভাতা হিসেবে দেওয়া হবে ৪ মিলিয়ন ইউরো।
স্প্যানিশ ফুটবলে রেফারিংয়ে এসেছে বড় পরিবর্তন। রেফারিদের নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের টানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত স্পেনের রেফারিং টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি লুইস মেদিনা কান্তালেখো ও ভিএআর প্রধান কার্লোস ক্লোস গোমেজকে বরখাস্ত করেছে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (আরএফইএফ)।
গত বৃহস্পতিবার আরএফইএফ-এর এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলা হয়, স্প্যানিশ ফুটবলে রেফারিং ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে তারা৷
“স্পেনের রেফারিং ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা করতে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফেডারেশন, পেশাদার ক্লাব ও রেফারিং কমিউনিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত রেফারিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত এসেছে।”
২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে রেফারিং টেকনিক্যাল কমিটির দায়িত্বে ছিলেন কান্তালেখো। আর ক্লোস গোমেজ ছিলেন ভিএআরের টিমের দায়িত্বে। তবে চলতি মৌসুমে বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য বারবার সমালোচিত হয়েছেন দুজনই। আর এতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিল রিয়ালই।
ক্লাবটি একাধিকবার রেফারিং নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। অফিসিয়াল টিভি চ্যানেলে প্রায়ই ম্যাচ পরবর্তী প্রতিবেদনে রেফারিদের ভুল তুলে ধরেছে। এছাড়া ক্লাবের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও হারের জন্য সরাসরি রেফারিদের ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে এস্পানিওলের কাছে লা লিগায় ১-০ গোলে হারের পর ফেডারেশন ও সরকারের উচ্চ ক্রীড়া পরিষদে রীতিমতো চিঠি দিয়ে অভিযোগও জমা দেয় রিয়াল।
আরএফইএফ জানিয়েছে, আগামী ২ জুলাই নতুন রেফারিং টেকনিক্যাল কমিটির কাঠামো এবং নেতৃত্ব ঘোষণা করা হবে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে রেফারিংয়ের স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী স্প্যানিশ ফুটবল কর্তৃপক্ষ।
এক মৌসুমের বেশি হয়ে গেছে পিএসজি ছাড়ার। তবে বকেয়া বেতন-ভাতা নিয়ে এখনও ক্লাবটির সাথে আইনি লড়াই চলছে কিলিয়ান এমবাপের। রিয়াল মাদ্রিদ তারকা এবার ফরাসি ক্লাবের বিরুদ্ধে ‘মানসিক হয়রানির’ অভিযোগ দায়ের করেছেন। প্যারিসের প্রসিকিউটর অফিস গত বৃহস্পতিবার এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এমবাপের অভিযোগ, পিএসজি তার ৫৫ মিলিয়ন ইউরো বেতন বকেয়া পরিশোধ করেনি। এছাড়াও তুলে ধরেছেন ২০২৩-২৪ মৌসুমের আগে চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত জানানোর পর তাকে স্কোয়াড থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার বিষয়টি, যা ফ্রান্সে যা ‘লোফটিং’ নামে পরিচিত।
পিএসজিতে ৭ বছরের অধ্যায়ে ২৫৬ গোল করে ক্লাবের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া এমবাপে গত গ্রীষ্মেই ফ্রি এজেন্ট হিসেবে যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে। তবে সাবেক ক্লাবের সঙ্গে তার সম্পর্কের ইতি ঘটে ভীষণ বাজেভাবে মধ্য দিয়ে। রেষারেষির জেরে ক্লাব প্রেসিডেন্ট নাসের আল-খেলাইফির সাথে বন্ধ হয়ে কথাবার্তাও। আর পিএসজির জার্সিতে শেষ হোম ম্যাচে কিছু সমর্থক তাকে দুয়োও দেন।
ঘটনার সূত্রপাত ২০২২ সালে, যখন রিয়ালের নাকের ডগা থেকে এমবাপেকে ক্লাবের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক চুক্তির প্রস্তাব দিয়ে ধরে রাখে পিএসজি, যেখানে ছিল নানা বোনাস। তবে বিশ্বকাপ জয়ী এই তারকার দাবি, চুক্তির সময় যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা আর রাখেনি পিএসজি।
২০২৩ সালের জুনে এমবাপে জানিয়ে দেন, তিনি ২০২৪ সালে মেয়াদ শেষে চুক্তি নবায়ন করবেন না। ফলে পিএসজির সামনে তাকে সেই বছরই বিক্রি করা বা পরের বছর ফ্রি ট্রান্সফারে হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়। এই বিরোধ থেকে এরপর ২৬ বছর বয়সী এমবাপেকে প্রাক-মৌসুমে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর থেকে বাদ দেয় পিএসজি। শাস্তি হিসেবে ফ্রান্সে তাকে আলাদা করে অনুশীলনে পাঠানো হয়।
এমবাপেকে বিক্রি করার জন্য এমনকি দলবদলের বাজারেও উঠিয়েছিল পিএসজি। তবে সৌদি ক্লাব আল হিলালের ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এমবাপে। মৌসুমের প্রথম কয়েকটি ম্যাচে না খেললেও, পরে ক্লাবের সাথে আলোচনার পর তিনি মাঠে ফেরেন। এরপর গত বছর যোগ দেন রিয়ালে।
এরপর থেকে শুরু হয় এমবাপে ও পিএসজির বকেয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। গত এপ্রিলে ফ্রান্স ফরোয়ার্ডের আইনজীবীরা জানান, এমবাপের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে, সেটিকে কেন্দ্র করে তারা লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন। এবার সেই অভিযোগই আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ের করেছেন তারা।
ক্লাব-পরিচালনা ও ফুটবল মডেল বিবেচনায় দুই ক্লাবের মধ্যে রয়েছে বিশাল তফাৎ। সাম্প্রতিক বছরগুলোর দিকে তাকালেও দেখা যায়, বার্সেলোনাকে যখন অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, সেই একই সময়ে রিয়াল মাদ্রিদ পার করছে সমস্যাহীন সময়। এছাড়াও খেলোয়াড় দলে টানা থেকে আরও নানা বিষয়ে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর রয়েছে অনেক পার্থক্য। এই কারণেই দুই ক্লাবের তুলনায় গিয়ে বার্সেলোনা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা বলেছেন, তারা রিয়ালের মত ক্ষমতার পেছনে ছুটেন না।
স্পেন ও ইউরোপের সফলতম ক্লাব রিয়াল ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা দল। অন্যদিকে অর্জনের দিক থেকে বার্সেলোনাও খুব একটা পিছিয়ে নেই। বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে দুই ক্লাবের মাঝে থাকে না খুব বড় একটা ব্যবধান। তবে ক্লাবের দর্শনের দিক থেকে রয়েছে বিশাল ভিন্নতা। রিয়াল যেমন তাদের স্কোয়াডে বরাবরই প্রাধান্য দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক তারকাদের ওপর, অন্যদিকে বার্সেলোনা নির্ভর করে আসছে একাডেমির খেলোয়াড়দের ওপর, যেখান থেকে উঠে এসেছেন মেসি-ইয়ামালের মত প্রতিভারা।
সম্প্রতি এক পডকাস্টে দুই ক্লাবের পার্থক্য প্রসঙ্গে লাপোর্তা একটা খোঁচাই দিয়েছেন রিয়ালকে।
“আমরা সবদিক থেকেই ভিন্ন দুটি ক্লাব। রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যে একটা ক্ষমতা পাওয়ার অভিপ্রায় আছে, যা আমাদের নেই। আমরা সবকিছু দেখি স্বাধীনতার দৃষ্টিকোণ থেকে। এখানে সবাই নিজ নিজ স্বার্থ দেখে। তারা তাদের পথ চলে, আর আমরা আমাদের।”
ক্লাব হিসেবে একটা লম্বা সময় ধরেই রিয়াল জনপ্রিয়তা পেয়েছে সময়ের সেরা খেলোয়াড়দের দলের টানার কারণে। আর এটা করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার ট্রান্সফার ফি-এর রেকর্ড ভেঙেছে তারা। জিনেদিন জিদান, লুইস ফিগো, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, গ্যারেথ বেল থেকে শুরু করে হালের কিলিয়ান এমবাপেদের এভাবেই দলে নিয়েছে রিয়াল। অন্যদিকে বার্সেলোনা এখনও দলের শক্তি বাড়াতে নজর দিচ্ছে তাদের বিখ্যাত ‘লা মাসিয়া’ একাডেমীর দিকেই।
যদিও গত গত এক দশকে বার্সেলোনা ফিলিপে কুতিনিয়ো, উসমান দেম্বেলে, আঁতোয়ান গ্রিজমান, নেইমার, লুইস সুয়ারেজসহ আরও কিছু খেলোয়াড়কে বড় অঙ্কের ট্রান্সফার ফি দিয়ে দলে এনেছে। কিছু খেলোয়াড়ের ফি-তো ছাড়িয়ে গেছে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর গণ্ডিও।
লাপোর্তা অবশ্য বিষয়টি এড়িয়েই যেতে চাইলেন।
“এটা কিন্তু ভালো একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যা দুই দলই উপভোগ করে। আর এটাই একে অপরকে আরও ভালো করতে উজ্জীবিত করে। তবে আমাদের মডেলগুলো কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। লা মাসিয়ার মতো একাডেমি থেকে প্রতিভা তুলে আনা ও তাদের তৈরি করার মধ্য দিয়ে আমাদের ভিত্তি তৈরি হয়। আর রিয়াল মাদ্রিদ তুলনামূলকভাবে বেশি নির্ভর করে দামী দামী খেলোয়াড় কেনার ওপর। আপনারা দেখবেন, তাদের দলে একাডেমি থেকে উঠে আসা খেলোয়াড় খুব কমই থাকে।”
৪ দিন আগে
৪ দিন আগে
৫ দিন আগে
৭ দিন আগে
৭ দিন আগে
১৪ দিন আগে
১৪ দিন আগে
১৭ দিন আগে
২৭ দিন আগে
২৮ দিন আগে
২৮ দিন আগে
২৮ দিন আগে
২৮ দিন আগে