৪ নভেম্বর ২০২৪, ৮:৪১ পিএম
ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের সমর্থক যারা আছেন, তাদের অনেকের মনে এই ২০২৪ সালে এসেও একটা প্রশ্ন বেশ জোরেশোরেই ঘুরপাক খাচ্ছে, রিয়াল মাদ্রিদ তারকা কি চূড়ায় যেতে পারবেন? নাকি ব্যালন ডি’অরের মত এটাও আটকে যাবে যদি, কিন্তুর ধাঁধাঁয়?
গত কয়েক বছর ধরেই প্রতিনিয়ত নিজেকে যেভাবে ছাপিয়ে যাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস, সাথে গত মৌসুমের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ধরেই নেওয়া হয়েছিল - এবারের ব্যালন ডি’অরটা উঠতে যাচ্ছে তারই হাতে। তবে শেষ সময়ে গিয়ে যেভাবে নাটকীয়ভাবে সেটা চলে গেছে ম্যানচেস্টার সিটির রদ্রির হাতে, সেটা যেকোনো ফুটবলারের জন্যই মানসিকভাবে হতে পারে বড় এক ধাক্কা।
কারণ, পুরো বিশ্বের পাশাপাশি ভিনিসিয়ুস নিজেও নিশ্চিত ছিলেন এই খেতাব জেতার ব্যাপারে। সেটাও এতোটাই যে, এল ক্লাসিকোর সময় গাভিকে বলেই দেন যে তিনি ব্যালন ডি’অর জিততে যাচ্ছেন। গুঞ্জন রয়েছে, খুব কাছের ৩০ জন বন্ধুকে নিয়ে এটি জেতার পার্টির আয়োজনও করে ফেলেছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফরওয়ার্ড। এমন নিশ্চিত থাকার পর বর্ষসেরা না হওয়াটা মানসিকভাবে একজন খেলোয়াড়কে অনেকটাই দমিয়ে দিতেই পারে।
ব্যালন ডি’অর সেদিনই ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘দরকার হলে আরও দশগুণ লড়াই করব। তারা এটার জন্য তৈরি নয়।’ আগামী মঙ্গলবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এসি মিলানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই হয়ত শুরু হবে ভিনিসিয়ুসের নিজেকে প্রমাণের নতুন লড়াই।
সাবেক ফ্ল্যামেঙ্গো যুব ফুটবল কো-অর্ডিনেটর কার্লোস নোভাল, যিনি ১০ বছর বয়স থেকে ভিনিসিয়ুসকে দেখেছেন, বিবিসি স্পোর্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের অদম্য মানসিকতা।
“বেড়ে ওঠার পথে যারাই তাকে প্রথমবারের মতো দেখছে, তখনই বুঝতে পেরেছে যে সে ভন্ন ধাতুতে গড়া। আমার মনে আছে সে কোপা ভোটোর্যান্টিমে খেলেছিল, যা অনেকটা অনূর্ধ্ব-১৫ ব্রাজিলিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মতো। সেখানে সে যেন উড়ছিল। এটা ছিল প্রায় প্রতিটি ম্যাচে দুই, তিন গোল করার মতো। সে অপ্রতিরোধ্য ছিল। একদিন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একজন স্কাউট আমাকে এসে বলল, ‘সে যা যা করছে, আমি কখনও ১৪ বছর বয়সী একটি ছেলেকে তা করতে দেখিনি। মাঠের বাইরে তার খুব ভালো যত্ন নিন, কারণ মাঠে যা করছে তাতে সে অনেকদূর যাবে।”
ভিনিসিয়ুস অনেক পথ পাড়ি দিয়েছেন, ১৪ বছর বয়সী সেই কিশোর এখন বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের একজন। তবে পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না তার জন্য।
এমনকি সেটা পারেনি সাও গনকালো, রিও ডি জেনিরোর বাইরের যে শহর মাদক গ্যাংদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সেখানে কেউই স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না। আর এই কারণেই ২০১৮ সালে অমিত প্রতিভাবান ভিনিসিয়ুস রিয়ালে যখন যোগ দেন, তখন তার কল্পনাতেও ছিল না যে তার সামনে কী কী অপেক্ষা করছে।
যেমনটা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একজন স্কাউট বলেছিলেন, মাঠের ফুটবলে রিয়ালে ক্রমেই উন্নতি করেছেন ভিনিসিয়ুস। সময়ের পরিক্রমায় হয়েছেন দলটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের একজন। তবে গত কয়েক বছর ধরে মাঠের বাইরে তাকে সামলাতে হচ্ছে ভিন্ন এক যুদ্ধ, যেখানে তিনি ভীষণ একাকী হয়ে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত স্পেনের বিভিন্ন মাঠে স্রেফ ভিনিসিয়ুসের বিরুদ্ধেই জমা হয়েছে ২১টি বর্ণবাদী ঘটনার অভিযোগ। গত মৌসুম থেকে যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় নিয়মিত চিত্র। প্রতিপক্ষের সমর্থকরা তাকে গালিগালাজ করছেন, কুশপুত্তলিকা টাঙাচ্ছেন বা এমনকি বানরের স্লোগানই দিচ্ছেন দলবেধে।
গত বছর তো ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে ম্যাচই বন্ধ ছিল ১০ মিনিট এসবের প্রেক্ষিতে। মেজাজ হারিয়ে দর্শকদের সাথে মাঠ থেকেই তর্কে লিপ্ত হন ভিনিসিয়ুস। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তিন ভ্যালেন্সিয়ার ভক্তকে ৮ মাসের জেল দেওয়া হয়েছে, যা স্পেনে আগে হয়নি।
এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে লিখেছিলেন, “আমি বর্ণবাদের শিকার নই। আমি বর্ণবাদীদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক। আমি চাই বর্ণবাদীরা যাতে ভয় পায়, লজ্জিত হয় এবং ছায়ায় লুকিয়ে থাকে। আর নাহলে আমি আপনাদের ধরে ফেলব।”
তবে আগের ও ভ্যালেন্সিয়ার স্টেডিয়ামের সেই ঘটনা যে ভিনিসিয়ুসকে মানসিকভাবে বেশ নাড়িয়ে দিয়েছে, সেটা বোঝা যায় ব্রাজিল জাতীয় দলের এক সংবাদ সম্মেলনে। যেখানে কথা বলতে গিয়ে চোখের জল আর আটকে রাখতে পারেননি। তাতে এটা স্পষ্ট হয়ে যায়, যতই প্রতিবাদ করুন না কেন, এই অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো তার ওপর প্রভাব ফেলছে।
তবে দমে না গিয়ে ব্যক্তিগত ও অন্যান্য পর্যায় থেকে ক্রমাগত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস। তার ক্লাব রিয়ালের অবশ্য শঙ্কা ছিল, এসবের প্রভাব না আবার মাঠের পারফরম্যান্সে পড়ে যায়। তবে সেটা আর হয়নি। উল্টো মাঠের ফুটবলেই যেন সব জবাব দেওয়ার মঞ্চ খুঁজে নেন ২৪ বছর বয়সী এই ফুটবলার।
২০২৩-২৪ মৌসুমে ভিনিসিয়ুস পার করেছেন তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৪ গোলের পাশাপাশি তার নামের পাশে ছিল ৯টি অ্যাসিস্টও। রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোর পথে ২৩ বছর ৩২৫ দিন বছর বয়সে ভেঙে দেন লিওনেল মেসির করা সবচেয়ে কম বয়সে ফাইনালে বেশি গোলের রেকর্ড। রিয়ালের লা লিগা জয়েও রাখেন বড় অবদান।
এই মৌসুমেও আছেন চেনা ছন্দে। ১৫ ম্যাচে ৮ গোল করার পাশাপাশি করিয়েছেন ৫টি গোলও। রিয়ালে শুরুর বছরগুলোতে ভিনিসিয়ুসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল তার ফিনিশিং নিয়ে। ঝড়ের গতিতে ড্রিবলিং করে ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে গোলের সামনে এগিয়ে গিয়েই খেই হারিয়ে ফেলতেন। তবে সেসব এখন অতীত। এই কাজটিতে তিনি এখন নিখুঁত, দুর্দমনীয়।
সেটা এতোটাই যে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই মৌসুমে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর ভিনিসিয়ুসকে রিয়াল কিংবদন্তি ও সহ-সভাপতি এমিলিও বুত্রাগুয়েনো তুলনা করেন পেলের সাথে, যাকে ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ফিনিশিংয়ে উন্নতি করা ভিনিসিয়ুস এর মধ্য দিয়ে ছাপ রেখেছেন তার তীব্র লড়াকু মানসিকতার। ক্লাউদিও কাকাপা, যিনি তাকে ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৫ দলের কোচিং করিয়েছেন, তিনিও যেন বিস্মিত সাবেক শিষ্যর সামর্থ্যে।
“সত্যি বলতে আমি জানতাম না যে ভিনিসিয়ুস মানসিকভাবে এতটা শক্তিশালী। কারণ, সে যা যা যা মোকাবেলা করেছেন তা সহজ নয় ; এটা ভয়াবহ ছিল। তিনি এখন অনেক লোকের সমর্থন পাচ্ছেন এবং এটি দুর্দান্ত। তবে শুরু দিনগুলতে এটা ছিল তার বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বের লড়াইয়ের মত। সে নাকি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়, এমন কিছু শুনতে হত আর সেটা ভুলে যেতে বলা হত। কিন্তু সেটা সে করেনি, লড়াই করেছে আর দেখিয়েছে যে সে কত বড় মাপের খেলোয়াড়। সে যেসবের মধ্য দিয়ে গেছে, এরপরও ফুটবল মাঠে যা যা করছে, সেটা অবিশ্বাস্য।”
আর ঠিক এই কারণেই বয়স ১৬ হওয়ার আগে থেকেই রিয়াল সহ ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলো তার পেছনে পড়েছিল। সবার আগে ভিনিসিয়ুসের দিকে নজর দিয়েছিল লিভারপুল।
২০১৭ সালের শুরুর দিকে লিভারপুলের একজন স্কাউট ব্রাজিলিয়ান এজেন্ট ফ্রেডেরিকো পেনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “আপনি কি মনে করেন ফ্ল্যামেঙ্গো এখন ভিনিসিয়ুসকে ২০ মিলিয়ন ইউরোতে বিক্রি করতে রাজি হবে? আমি এটা এখনই বাজিয়ে দেখতে চাই, কারণ আমার মনে হয় না অনূর্ধ্ব-১৭ দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপের পরে ফ্ল্যামেঙ্গো আর চুক্তি করতে রাজি হবে।”
লিভারপুলের সেই স্কাউট ঠিক ছিলেন। সেই আসরে সাত গোল করে সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ভিনিসিয়ুস। কয়েক মাস পেনা একটি ফোন কল পান, এবার সেটা ছিল রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকে। তারা ৪৫ মিলিয়ন ইউরো বাইআউট ক্লজ দিয়ে ১৮ বছর বয়সে পা দিলে তাকে ক্লাবে স্বাগত জানাতে সম্মতি দেয়।
সেই সময়ে স্প্যানিশ তো বটেই, ইউরোপিয়ান ফুটবলেও বিষয়টি হৈচৈ ফেলে দেয়। কারণ, মাত্র ১৬ বছর বয়সী একজন তরুণ ফুটবলারের জন্য এত অর্থ ব্যয় করাটা বুদ্ধিমানের কাজ কিনা, তা নিয়ে রয়ে যায় প্রশ্ন। তবে রিয়ালের এই বিনিয়োগই বলে দেয়, ওই বয়সেই নিজের মাঝে ভিন্ন কিছু যে আছে, সেটা দেখাতে পেরেছিলেন ভিনিসিয়ুস।
১৮-তে পা দেওয়ার আগ পর্যন্ত ফ্ল্যামেঙ্গোতে খেলার সময় ভিনিসিয়ুসকে মুখোমুখি হতে হয়ে প্রতিপক্ষ সমর্থকদের দুয়োর মিছিল। খেপিয়ে তুলতে তারা তাকে 'নেগুইবিনহা' বলে ডাকেন, যা ছিল আরেক আরেকজন ফ্ল্যামেঙ্গোর সাবেক খেলোয়াড় নেগুয়েবারকে নিয়ে। আর এই খেলোয়াড়টি প্রতিভার ছাপ রাখতে পারেননি পরে, যিনি এখন খেলছেন থাইল্যান্ডে। অন্যদিকে ক্লারেন্স সিডর্ফের মত অনেকে এমনটাও বলেছেন, রিয়ালে গিয়ে এক মিনিটও খেলার সুযোগ পাবেন না ভিনিসিয়ুস।
সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন জে রিকার্ডো, যিনি ছিলেন ফ্ল্যামেঙ্গোর সিনিয়রে দলে ভিনিসিয়ুসের প্রথম কোচ।
“ভিনিসিয়াস যখন আসল, তখন তাকে ঘিরে প্রচুর হাইপ ছিল, তাই এই নতুন চ্যালেঞ্জের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং আমরা সবাই যা আশা করেছিলাম, সেটা করে দেখাতে তার কিছুটা সময় লেগেছিল। কিন্তু তিনি সে তা করে দেখিয়েছে।”
মুখে হাসি নিয়ে সাম্পা নৃত্যের তালে ম্যাচের পর ম্যাচ এখন মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন ভিনিসিয়ুস। ফ্ল্যামেঙ্গো যেমন ছিল, রিয়ালেও সেটা চলছে একই গতিতে। যিনি তাকে ছোটবেলা থেকে দেখেছেন, সেই ক্লাউদিও কাকাপা তুলে ধরেছেন আরেকটি ঘটনা। যেটা তুলে ধরে মানুষ হিসেবে ভিনিসিয়ুসের সুন্দরতম দিকটি।
“আমরা ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি ক্যাম্প করছিলাম। একদিন সে এবং তার কিছু সতীর্থ আমার কাছে এসে বলল যে তারা আমাদের ডিনারের জন্য একটি সারপ্রাইজ রাখতে চায়। আমি বললাম, 'অবশ্যই, এগিয়ে যাও'৷ সেদিন ডিনারের সময় তারা একটি বাচ্চাকে একটি মোবাইল ফোন, একজোড়া স্নিকার এবং জামাকাপড় উপহার দিয়েছিল৷”
“এটা খুব আবেগপূর্ণ একটা মুহূর্ত ছিল - কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে সবাই হঠাৎ রেস্টুরেন্টে কান্নাকাটি করছিল। সেই বাচ্চাটিই স্কোয়াডের একমাত্র সদস্য ছিল যার কাছে ফোন ছিল না। আর এই কারণে সে তার বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে অক্ষম ছিল। ভিনিসিয়ুসের সেই সময়েই একটা একটি ব্যক্তিগত স্পনসরশিপ চুক্তি ছিল, তাই সেই বাচ্চাটির জন্য এটা করতে পেরেছিল। ওই বয়সে যে ছেলের হৃদয় এত বড় হতে পারে, সে অবশ্যই বিশ্বসেরা হওয়ার যোগ্য।”
মাঠে প্রতিপক্ষক একবিন্দু ছাড় না দেওয়া ভিনিসিয়ুস মাঠের বাইরে এভাবেই দুনিয়াটাকে দেখেন। সুন্দর, কোমল, নমনীয় এবং বিশাল মনের। আর সেই কারণেই নিশ্চিত জেতে ব্যালন ডি’অর হাতছাড়া হওয়া বা বর্ণবাদের আক্রমণ তাকে আটকে রাখতে পারবে না। কারণ তিনি জানেন, লড়াইটা ফুটবলের চেয়েও অনেক বড় জন্য। যেখানে তার দিকে তাকিয়ে, তাকে দেখে স্বপ্ন বুনছে ব্রাজিলের আজকের শিশুরা…
২৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪:৫৩ এম
কোপা দেল রের ফাইনাল শেষ হওয়ার ঠিক আগে আন্টোনিও রুডিগার যেভাবে আক্রমণ করেছিলেন রেফারিকে, তা ছিল বিস্ময়কর। রীতিমতো একটা বস্তু ছুঁড়ে মারেন রেফারিকে উদ্দেশ্য করে। এরপরও থেমে না থেকে তেড়ে যেতেও উদ্যত হয়েছিলেন রেফারির দিকে। কাজটা যে ঠিক করেননি, বুঝতে পেরেছেন রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডার। তাই চাইলেন ক্ষমাও।
ঘটনার সূত্রপাত ফাইনালের ১১৮তম মিনিটে। বার্সেলোনার বিপক্ষে ফাইনালের আগে থেকেই আলোচনায় থাকা রেফারি রিকার্ডো ডি বার্গোস বেনগোয়েটেক্সিয়ার একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে রিয়ালের ডাগআউটে। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে আগেই বদলি হিসেবে উঠে যাওয়া রুডিগার মাটি থেকে কিছু একটা কুড়িয়ে মাঠে ছুঁড়ে মারেন রেফারির দিকে, যা অল্পের জন্য তাকে আঘাত করেনি।
সাথে সাথেই রুডিগারকে লাল কার্ড দেন রেফারি। তাতে যেন আরও মেজাজ হারান তিনি। রিয়ালের খেলোয়াড় ও স্টাফদের বাধা উপেক্ষা করে পা থেকে আইস ব্যাগ খুলে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করেন রেফারির দিকে, আর কিছু বলতেও দেখা যায় তাকে। অনেক কষ্টে তাকে থামানো সম্ভব হয়।
ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়ে নিজের এমন কাণ্ডের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেছেন রুডিগার। “এই ধরনের আচরণের কোনো অজুহাত নেই। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমরা দ্বিতীয়ার্ধে খুব ভালো একটা ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু আমি আমার দলকে সাহায্য করতে পারিনি, আর শেষ বাঁশির আগে একটা ভুল করে ফেলি। রেফারি এবং অন্য যাদের আমি হতাশ করেছি, তাদের সবার কাছে আবারও ক্ষমা চাচ্ছি।”
শেষ সময়ের ওই ঘটনার আগে ও পরে রেফারির সাথে তর্কে জড়িয়ে লাল কার্ড দেখেছেন অধিনায়ক লুকাস ভাসকেস ও মিডফিল্ডার জুড বেলিংহামও।
ঘটনাবহুল ফাইনালে বার্সেলোনার কাছে রিয়াল হেরে যায় ৩-২ গোলে। পেদ্রির গোলে হান্সি ফ্লিকের দল এগিয়ে যাওয়ার পর কিলিয়ান এমবাপে ও অহেলিয়া চুয়ামেনির গোলে লিড নিয়েছিল রিয়াল। তবে ফেররান তরেস সমতা টানার পর অতিরিক্ত সময়ে জুলস কুন্দের গোলে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে বার্সেলোনা।
চলতি মৌসুমে দুটি এল ক্লাসিকোতে ছিল না কোনো প্রাণ। হেসেখেলেই জেতে বার্সেলোনা। কোপা দেল রের ফাইনালের প্রথমার্ধে এক গোল হজম করে যেন সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তবে ঘুরে দাঁড়িয়ে দুই গোল দিয়ে জয়ের আশা জাগাল লা লিগা চ্যাম্পিয়নরা। কিছুটা ছন্দ হারিয়ে ফেলা হান্সি ফ্লিকের দল সমতা টানল শুরুতে, এরপর জুলস কুন্দের শেষ সময়ের গোলে নিশ্চিত করল মৌসুমে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা।
সেভিয়ায় রোববার কোপা দেল রের এল ক্লাসিকো ফাইনালে রিয়ালকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়েছে বার্সেলোনা। নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ সমতায় শেষের পর অতিরিক্ত সময়ে ব্যবধান গড়ে দেন কুন্দে। এই মৌসুমে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে এটি ফ্লিকের দলের হ্যাটট্রিক জয়। এই ফাইনালের আগে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালেও রিয়ালকে হারিয়েছিল বার্সেলোনা।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে কোপা দেল রের শিরোপার জয়ীদের তালিকায় নিজেদের শীর্ষস্থান আরও মজবুত করেছে বার্সেলোনা। তারা এই প্রতিযোগিতা জিতেছে এই নিয়ে ৩২ বার। রিয়ালের নামের পাশে রয়েছে ২০টি, তারা আছে তিনে। দুইয়ে থাকা আথলেতিক বিলবাও জিতেছে ২৪ বার।
আরও পড়ুন
ফাইনাল উপভোগ করতে চান বার্সা কোচ |
![]() |
চলতি মৌসুমে এর আগে লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে খেলেছিল দুই দল। দুটিতেই ফ্লিকের দলের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি রিয়াল। উভয় ম্যাচেই বার্সেলোনার আক্রমণাত্মক ফুটবলের কাছে মার খায় লা লিগা চ্যাম্পিয়নরা। এই ম্যাচেও হয়নি তার ব্যতিক্রম।
প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণে প্রতিপক্ষকে ব্যতিব্যস্ত রাখে বার্সেলোনা। তৃতীয় মিনিটে কর্নার থেকে জুলস কুন্দের হেড চলে যায় পোষ্টের ওপর দিয়ে। ম্যাচের আগে রেফারি রিকার্ডো ডি বার্গোস বেনগোয়েটেক্সিয়াকে নিয়ে বিতর্কের কারণে বাড়তি চোখ ছিল তার দিকে। তবে সেই চাপ সামলে ম্যাচের প্রথম দিকে ভালো কিছু সিদ্ধান্তই নেন তিনি।
প্রথম দশ মিনিটে সেভাবে আক্রমণ শানাতে না পারা রিয়াল বড় ধাক্কা খায় ফেরলন্ড মন্ডির চোটে। ভঙ্গুর রক্ষণভাগে তার বদলি হিসেবে অনভিজ্ঞ ফ্রাঙ্ক গার্সিয়াকে নামান আনচেলত্তি। তবে তাতেও চিত্রে আসেনি কোনো বদল। বারবার উইং ধরে আক্রমণে উঠছিলেন ইয়ামাল, আর গতিতে হার মানাচ্ছিলেন রিয়ালের ডিফেন্ডারদের।
১৬তম মিনিটে রাফিনিয়ার ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের বক্সের ভেতর পড়ে যান ফেদেরিকো ভালভের্দে, তখন বল তার হাতে লাগলে পেনাল্টির আবেদন জানায় বার্সেলোনা। তবে রেফারি তাতে সাড়া দেননি।
২১তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে পাওয়া ক্রসে দারুণ এক হেডার লক্ষ্যেই রেখেছিলেন কুন্দে, তবে শেষ মুহূর্তে বাম হাতে ফিস্ট করে ক্লিয়ার করে রিয়ালকে বাঁচান থিবো কোর্তোয়া।
আরও পড়ুন
এফএ কাপ জিতে ‘বড় ক্ষতি’ এড়াতে চান গার্দিওলা |
![]() |
তবে এর ৭ মিনিট পর আর শেষ রক্ষা করতে পারেননি তিনি। পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পেয়ে বাঁদিক থেকে গতিতে রিয়ালের খেলোয়াড়দের নিয়ে ছেলেখেলা করা ইয়ামাল বল বাড়ান বক্সের একটু বাইরে ফাঁকায় থাকা পেদ্রির দিকে। স্প্যানিশ এই মিডফিল্ডার সময় নিয়ে খুঁজে নেন ঠিকানা।
প্রথমার্ধে রিয়ালের সেরা খেলোয়াড় জুড বেলিংহাম ৩৫তম মিনিটে দানি সেবায়োসের পাস থেকে বল জালে পাঠালেও অফসাইডে থাকায় আর মেলেনি গোল।
৪৩তম মিনিটে রাফিনিয়ার কর্নার জটলার মধ্যে ডিফ্লেকশনের পর ফিরে আসে পোস্টে লেগে। এর এক মিনিট বাদে আরেকটি কর্নার থেকেও বার্সেলোনা পেয়েছিল ভালো সুযোগ, তবে কাজে লাগাতে পারেনি।
একতরফা প্রথম ৪৫ মিনিটে রিয়াল গোলের জন্য নিতে পারে মাত্র একটি শট, সেটাও থাকেনি লক্ষ্যে। আর আক্রমণের পর আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া বার্সেলোনা ৭টি শটের চারটিই রাখে লক্ষ্যে।
বিরতিতে রদ্রিগোর জায়গায় কিলিয়ান এমবাপেকে নামায় রিয়াল। এই অর্ধের শুরুতেই ভিন্ন ছন্দে হাজির হয় দলটি। ৪৮তম মিনিটে বার্সেলোনার একজন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বলের দখল নিয়ে ডান দিকে ক্রস বাড়ান বেলিংহাম। প্রথম টাচে শট না নিয়ে কিছুটা কঠিন এঙ্গেল থেকে শট নেন ভিনিসিয়ুস, যা ফেরান ওজসিচ সেজেনি। ফিরতি বল পেয়ে ফের ব্রাজিল তারকা শট নিলে কর্নারের বিনিময়ে ক্লিয়ার করেন বার্সেলোনা গোলরক্ষক।
এমবাপে মাঠে নামার পর থেকেই বেড়ে যায় রিয়ালের আক্রমণের ধার। ৫৫তম মিনিটে ড্রিবলিং করে বক্সে প্রবেশ করে বল বাড়ান ভিনিসিয়ুসের দিকে। তবে আরও একবার প্রথম টাচে শট না করে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন ফিফার বর্ষসেরা এই ফুটবলার।
বিরতির আগে টানা আক্রমণ করে যাওয়া বার্সেলোনা এই অর্ধের শুরু থেকে কিছুটা ব্যস্ত সময় কাটায়। আর সেটা হচ্ছিল যার কারণে, সেই এমবাপেই শেষ পর্যন্ত রিয়ালকে ম্যাচ ফেরান। বক্সের বাইরে বল নিয়ে আগুয়ান গতিতে এগিয়ে যাওয়া ফরাসি তারকাকে টেনে ফেলে দেন পেদ্রি। রিয়ালের তীব্র প্রতিবাদের মুখে স্রেফ হলুদ কার্ড পান তিনি।
এরপর ফ্রি-কিক থেকে বার্সেলোনা খেলোয়াড়দের দেয়ালের মধ্য দিয়ে বুলেট গতির এক শটে বল জালে পাঠান এমবাপেই। এই প্রথম পেশাদার ক্যারিয়ারে সরাসরি ফ্রি-কিক থেকে গোলের দেখা পেয়েছেন সাবেক পিএসজি ফরোয়ার্ড।
আরও পড়ুন
রেফারি পরিবর্তন না হলেও ফাইনালে অংশ নেবে রিয়াল |
![]() |
একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া রিয়াল খানিক বাদে পেয়েছিল দারুণ সুযোগ। বাঁদিক থেকে বল নিয়ে বক্সে প্রবেশ করে ভিনিসিয়ুস পাস দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ছয় গজে ফাঁকায় থাকা এমবাপের দিকে। তবে সেযাত্রায় বার্সেলোনা ক্লিয়ার করতে সমর্থ হয়।
প্রথমার্ধের ঠিক বিপরীত ফুটবল খেলা বার্সেলোনাকে এই দ্বিতীয়ার্ধে চেনাই ছিল দায়। একটা গোল হজমের পরও গুছিয়ে উঠতে পারেনি দলটি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লিডও নিয়ে ফেলে রিয়াল। ৭৭তম মিনিটে আর্দা গুলেরের কর্নার থেকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত এক হেডারে গোল করেন ফরাসি মিডফিল্ডার অহেলিয়া চুয়ামেনি।
৮২তম মিনিটে পেদ্রির পাস থেকে বল পেয়ে বক্সের ভেতর থেকে বাঁ পায়ের কার্লিং শট নেন ইয়ামাল, যা দারুণ ক্ষিপ্রতায় থামান কোর্তোয়া। তবে এর একটু পর তার ভুলে গোল হজম করে বসে রিয়াল। প্রায় মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বলের দখল নিতে এগিয়ে গিয়েছিলেন স্রেফ ফেররান তরেস। পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ব্যর্থ হন কোর্তোয়া, আর ডিফেন্ডার আন্টোনিও রুডিগার পারেননি ক্লিয়ারেন্স করতে।
ম্যাচের ধারার বিপরীতে গোল করে যেন প্রাণ ফিরে পায় বার্সেলোনা শিবির। নব্বই মিনিটের খেলা শেষ হওয়ার একটু আগে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন ভিনিসিয়ুস।
ম্যাচ যখন অতিরিক্ত সময়ে গড়ানোর দিকে, ঠিক তখন ইনজুরি টাইমের শেষ মিনিটে রিয়ালকে প্রায় বিপদে ফেলেই দিচ্ছিলেন রাউল আসেন্সিও। রাফিনিয়াকে ডি-বক্সের মধ্যে ফাউল করে হজম করেন পেনাল্টি। তবে ভিএআর চেকের পর ডাইভ দেওয়ার কারণে পেনাল্টি বাতিল করে রাফিনিয়াকে হলুদ কার্ড দেন রেফারি।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথম দশ মিনিট চলে আক্রমণ ও পাল্টা-আক্রমণের মধ্য দিয়ে। ১০৩তম মিনিটে বক্সের ভেতর সতীর্থের পাস পেয়ে বাঁদিক থেকে জটলার মধ্যে শট নেন তরেস, যা অল্পের জন্য থাকেনি লক্ষ্যে। যদি থাকত, খুঁজে নিত জালের ঠিকানা। কারণ, কোর্তোয়ারও চেয়ে দেখা ছাড়া আর করার ছিল না কিছুই।
১০৭তম মিনিটে আরও একবার রিয়ালের জালে বল পাঠান তরেস। তবে তিনি অফসাইডে থাকাই এই দফায় হতাশই হতে হয় বার্সেলোনাকে। এর মিনিট পাঁচেক পর দুর্দান্ত একটি সুযোগ তৈরি করেন রিয়াল মিডফিল্ডার গুলের। তার ক্রসে ঝাঁপিয়েও হেডার দিতে পারেননি বেলিংহাম।
১১৬তম মিনিটে রিয়ালের সর্বনাশ করেন লুকা মদ্রিচ। নিজেদের অর্ধে অভিজ্ঞ এই মিডফিল্ডারের ভুল পাস থেকে বক্সের বাইরে বল পেয়ে যান কুন্দে। কিছুটা এগিয়ে গিয়ে প্লেসিং শটে পরাস্ত করেন কোর্তোয়া। এর মিনিট খানেক বাদেই বার্সেলোনার বক্সে ফাউলের শিকার হন এমবাপে। শুরুতে পেনাল্টির বাঁশি বাজলেও তিনি নিজেই অফসাইড থাকায় সেটা বাতিল হয়ে যায়।
ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার ঠিক আগে উত্তেজনা দেখা দেয় রিয়ালের ডাগআউটে। বদলি হিসেবে আগেই উঠে যাওয়া রুডিগার রেফারিকে উদ্দেশ্য করে একটা বস্তু ছুড়ে মারেন। শাস্তি হিসেবে তাকে সরাসরি লাল কার্ড দেখানো হয়। এরপর যোগ হয় রিয়ালের হারের দুঃখ।
আবাহনী ও মোহামেডান ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। নব্বই দশকের সেই ঝাঁজ না থাকলেও এখন এই দুই দলের ম্যাচ দর্শকদের মাঝেও ছড়িয়ে দেয় উত্তাপ। ঘটনাবহুল এক ম্যাচে গ্যালারিতে ছড়িয়ে পড়ল উত্তেজনা, দুই দফায় থামল ম্যাচ। মাঠের খেলায়ও সমানভাবে লড়ল দুই দল। তবে শেষ পর্যন্ত গোলের দেখা পেল না কোনো দলই। তাতে সমতায় শেষ হল জমজমাট লড়াই।
শনিবার কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আবাহনী ও মোহামেডানের লিগ ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছে। এটা উপকার হয়েছে আলফাজ আহমেদের দলের, যারা ৩১ পয়েন্টে আছে শীর্ষে। আর ২৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আবাহনী।
ম্যাচের শুরুটা অবশ্য রয়েসয়েই হয়। অষ্টম মিনিটে রাফায়েল অগাস্টোর ক্রস থেকে বল পেয়ে বক্সের ভেতর থেকে দারুণ হেড নিয়েছিলেন সুমন রেজা, যা অল্পের জন্য চলে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে।
আরও পড়ুন
ফাইনাল উপভোগ করতে চান বার্সা কোচ |
![]() |
ঢিমেতালে এগিয়ে চলা ম্যাচে বিরতির আগে দশজনের দলে পরিণত হয় মোহামেডান। সুমনকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন মাহবুব আলম। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে যায় গ্যালারি। মাঠে দর্শকরা ফ্লেয়ার সহ বেশ কিছু বস্তু ছুঁড়ে মারেন তারা। ধোঁয়া ছড়িয়ে গেলে পাঁচ মিনিটের জন্য বন্ধ থাকে ম্যাচ।
তবে ফের খেলা শুরু হতেই বাঁধে গণ্ডগোল। এবার গ্যালারি থেকে শুরু হয় বোতল ছুঁড়ে মারা। মোহামেডানের খেলোয়াড়রা সমর্থকদের এসব করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করলেও তাতে সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপের পর দশ মিনিট বাদে শুরু হয় খেলা।
স্বাভাবিকভাবেই এতে কমে যায় দুই দলেরই খেলার ধার। বিরতির পর সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মোহাম্মদ ইব্রাহিমে। রাফায়েল বলের দখল নেওয়ার আগে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন গোলরক্ষক সুজন হোসেন। তবে সেটা ঠিকঠাক না হওয়ায় বল পেয়ে যান ইব্রাহিম। তবে ফাঁকা পোস্ট পেয়েও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন
এফএ কাপ জিতে ‘বড় ক্ষতি’ এড়াতে চান গার্দিওলা |
![]() |
বাকি সময়ে আবাহনী কিছু সুযোগ তৈরি করলেও আক্রমণের খেলোয়াড়দের ব্যর্থতায় জালের দেখা আর পায়নি দলটি। ফলে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ড্র নিয়েই।
মৌসুমের এমন একটা সময়ে কোপা দেল রের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলছে বার্সেলোনা, যে সময়ে তাদের প্রতিপক্ষ আছে ভীষণ চাপের মধ্যে। স্বাভাবিকভাবেই তাই কিছুটা এগিয়ে থেকেই মাঠে নামবে কাতালান ক্লাবটি। দলটির কোচ অবশ্য খেলোয়াড়দের চাপে ফেলে দিতে চান না। তিনি মনে করেন, তার দলের স্রেফ ম্যাচটা উপভোগ করা উচিত।
চলতি মৌসুমে দুইবার রিয়ালের বিপক্ষে খেলেছে বার্সেলোনা। অক্টোবরে লা লিগায় ৪-০ গোলে জয়ের পর গত জানুয়ারিতে সৌদি আরবে স্প্যানিশ সুপারকাপের ফাইনালেও ৫-২ গোলের জয় পায় দলটি। এই মুহূর্তে লা লিগায় শীর্ষে থাকা বার্সেলোনা টিকে আছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে, যেখান থেকে বিদায় নিয়েছে আগেই রিয়াল। এবারের তৃতীয় এল ক্লাসিকোতে তাই ফেভারিট ধরা হচ্ছে ইয়ামাল-পেদ্রিদের বার্সেলোনাকেই।
আরও পড়ুন
এফএ কাপ জিতে ‘বড় ক্ষতি’ এড়াতে চান গার্দিওলা |
![]() |
তবে ফ্লিক মনে করেন, এই চাপ না নেওয়াটাই তাদের জন্য ভালো হবে।
“আমাদের এটা উপভোগ করতে হবে। আমাদের দলটা খুবই তরুণ। বিশ্বের অন্যতম সেরা দলের বিপক্ষে খেলা…এই ফাইনাল খেলাটা আমাদের জন্য একটি দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। ফাইনাল ভিন্ন ব্যাপার। এখানে কে ফেভারিট, তা বড় ব্যাপার নয়। আমরা আগামীকাল (রবিবার) ম্যাচটি ভালোভাবে শুরু করতে চাই এবং এই শিরোপা জেতার জন্য লড়াই করতে চাই।”
বার্সেলোনার জন্য এই ফাইনাল বিশেষ হতে পারে কয়েকটি কারণে। একটি হল কোপা দেল রে জয় খুলে দিবে ট্রেবল জয়ের আশা। আরেকটি হল দলের মূল গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেনের ফেরার। হাঁটুর চোটের কারণে সাত মাস পর এই ম্যাচ দিয়েই স্কোয়াডে ফিরেছেন এই জার্মান। তবে হ্যামস্ট্রিং চোটের কারণে ফাইনাল থেকে ছিটকে গেছেন লেফট-ব্যাক আলেহান্দ্রো বাল্দে এবং তারকা স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানদভস্কি।
বাল্দের জায়গায় কে খেলবেন, তা নিশ্চিত না হলেও লেভানদভস্কির পজিশনে খেলতে পারেন ই মৌসুমের কোপা দেল রে-তে পাঁচ গোল করে যৌথভাবে শীর্ষ গোলদাতা ফেররান তরেস।
ভুলে যাওয়ার এক মৌসুমে একে একে হাতছাড়া হয়েছে তিন শিরোপা, যার মধ্যে হয়েছে প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। এফএ কাপ নিয়ে তাই ম্যানচেস্টার সিটির মত একটি ক্লাবের বাড়তি মাতামাতি আর নেই। তবে অন্তত কিছু একটা জেতার সুযোগ যখন আছে, তা লুফে নিতে চান কোচ পেপ গার্দিওলা। তার মতে, একটি শিরোপা জিতলে কিছুটা হলেও তাও মান রক্ষা হবে তাদের।
প্রিমিয়ার লিগের গত চার আসরের চ্যাম্পিয়ন সিটি এই মৌসুমের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের চেয়ে ১৮ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে। মূল লড়াই এখন সেরা চারে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নিশ্চিত করা, যেই প্রতিযোগিতায় এবার বিদায় ঘটেছে শেষ ১৬ থেকেই। আর কারাবাও কাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে চতুর্থ রাউন্ড থেকে।
আরও পড়ুন
লিভারপুলের এখনও কাজ বাকি, বললেন স্লট |
![]() |
রোববার নটিংহাম ফরেস্টের বিপক্ষে এফএ কাপের সেমিফাইনালের আগে তাই গার্দিওলা বলেছেন, বড় ক্ষতি এড়াতে এই শিরোপা জেতা দরকার তাদের।
“আমাদের প্রথম ফাইনাল নিশ্চিত করতে হবে। এই মৌসুমে আমাদের অনেকগুলো ম্যাচ ভালো হয়নি। আমরা যদি এফএ কাপ জিততে পারি, তাহলে আমরা ক্লাবের বড় ক্ষতি এড়াতে পারব। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বলেন, এই মৌসুমের সবচেয়ে বড় বিষয়টি হল প্রিমিয়ার লিগের ফলাফল। তবে এফএ কাপ আমাদের পিঠ বাঁচাবে।”
প্রিমিয়ার লিগেও ফরেস্টের সাথে লড়ছে সিটি, তাদের চেয়ে মাত্র এক পয়েন্টে পিছিয়ে আছে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থানে। এরই মধ্যে ১৯৮০ সালের পর প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলা নিশ্চিত করে ফেলেছে ক্লাবটি। আর এফএ কাপের এবার সেমিতে খেলছে ১৯৯১ সালের পর এই প্রথম।
প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হলেও জেতার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী গার্দিওলা।
“এটা আমাদের হাতে রয়েছে এবং আমাদের এফএ কাপের ফাইনালে একটানা তিনবার খেলার সুযোগ রয়েছে। আশা করি আমরা ফাইনালে যেতে পারব।”
৭ দিন আগে
৭ দিন আগে
৭ দিন আগে
১০ দিন আগে
২১ দিন আগে
২৪ দিন আগে
২৫ দিন আগে
২৫ দিন আগে